Tuesday, 5 September 2017

অবাধ্য মিয়ানমার, আর নিম্নগামী বাংলাদেশ…

২৩শে জুলাই ২০১৭। আরব সাগরে নৌ-মহড়ায় তুর্কী জাহাজ 'গিরেসুন' এবং পাকিস্তানী জাহাজ 'সাইফ'। তুরস্কের এরদোগান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে ফোন করেছেন; কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগেই ২৯শে জুন ২০১৭-তে তুরস্ক আরব সাগরে Combined Task Force 151- নামের মাল্টিন্যাশনাল ম্যারিটাইম ফোর্সের কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছে চার মাসের জন্যে (পঞ্চম বারের মতো)। তুরস্কের এরদোগানের জন্যে আরব সাগর টহল দেয়াটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে মিয়ানমারের মুসলিমদের রক্ষা করাটা অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়।
০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭


রোহিঙ্গাদের আর্তনাদ আর এরদোগানের মায়াকান্না...

মিয়ানমারের মুসলিমদের আর্তনাদ যেমন মানুষ সহ্য করতে পারছে না, ঠিক তেমনি মিয়ানমারের ধৃষ্টতাও সহ্য করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। মিয়ানমারকে একের পর এক সুযোগ দিয়ে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, যেখানে মিয়ানমার বেয়াড়া পশুর মতো আচরণ করছে। অবশ্য যেহেতু সেই সুযোগ মিয়ানমারকে বাংলাদেশ এবং মুসলিম বিশ্বের অনান্য দেশগুলির নেতৃত্বরাই দিয়েছেন, তাই কাকে দোষারোপ করা দরকার সে নিয়ে আলোচনা হতে পারে। এ দোষারোপের সংস্কৃতির মাঝেই কিছু লোক চাইছে “কিছু তো করেছি” বলে ভালো সাজতে এবং রাজনৈতিক সুবিধা নিতে। তুরস্ক, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া এক্ষেত্রে উদাহরণ হিসেবে চলে আসবে। তুরস্কের এরদোগান বাংলাদেশের প্রেসিডেন্টকে ফোন করেছেন; কিন্তু মাত্র কিছুদিন আগেই ২৯শে জুন ২০১৭-তে তুরস্ক আরব সাগরে Combined Task Force 151- নামের মাল্টিন্যাশনাল ম্যারিটাইম ফোর্সের কমান্ডার নিযুক্ত হয়েছে চার মাসের জন্যে (পঞ্চম বারের মতো)। তুরস্কের এরদোগানের জন্যে আরব সাগর টহল দেয়াটা যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে মিয়ানমারের মুসলিমদের রক্ষা করাটা অবশ্যই বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। অবশ্য সেটা খুব সহজেই বোঝা যাবে তুরস্কের সীমান্তে সিরিয়া-ইরাকের ধ্বংসের কাহিনী দেখে। এরদোগান চেয়ে চেয়ে লাখো মুসলিমের সমাধি দেয়া দেখেছেন। বিশাল সামরিক বাহিনী ঘরে পুষে রেখে এই হত্যাকান্ড দেখা মানে এতে অংশগ্রহণ করা। অবশ্য তিনি সিরিয়াতে সরাসরিও অংশগ্রহণ করেছেন। আলেপ্পোর যুদ্ধটা হঠাত শেষ হওয়ার পেছনে এরদোগানের অবদান যথেষ্ট। ‘অপারেশন ইউফ্রেটিস শিল্ড’-এর নাম করে আলেপ্পো থেকে আসাদ-বিরোধীদের একটা বড় অংশকে এরদোগান বের করে নিয়ে আসেন; আর ঐ সময়েই আলেপ্পোর দখল নেয় আসাদ-বাহিনী। মুখে আসাদের বিরুদ্ধাচরণ করে তিনি আসাদের সাথেই হাতে-হাত মিলিয়ে কাজ করেছেন; মুসলিম নিধনে সহায়তা দিয়েছেন। বাংলাদেশের ব্যাপারে এরদোগানের কাছে একটা বিশেষ রাজনৈতিক দলের কয়েকটা যুদ্ধপরাধীকে বাঁচানোর জন্যে ফোন কল করাটা রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরাসরি দরকারি সহায়তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। এই এরদোগানের কাছ থেকে আশা করা যায় কতটুকু?

তুরস্ক বাংলাদেশকে বলছে যে বাংলাদেশ মিয়ানমারের মুসলিমদের থাকার ব্যবস্থা করে দিক; তুরস্ক তাদের জন্যে অর্থ সরবরাহ করবে। অবশ্য এরদোগানের এমন ভালো সাজার ইতিহাস তো রয়েছেই। সিরিয়ার মানুষের পক্ষে যুদ্ধ না করে তিনি যুদ্ধ চলতে দিয়েছেন এবং যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পালিয়ে আসা মানুষদের জন্যে শরণার্থী শিবির তৈরি করে নিজে ভালো সাজার চেষ্টা করেছেন। আসলে ইরাক-সিরিয়ার মুসলিমদের মতো মিয়ানমারের মুসলিমদেরও দরকার নেই শরণার্থী শিবিরের; তাদের দরকার একজন অভিভাবকের, যিনি দায়িত্ব নেবেন মুসলিমদের এবং শত্রুর মুখের উপরে বলবেন – “আমার মুসলিম ভাইদের গায়ে আর একটা আচর লাগলে আমি তোমার হাত কেটে ফেলবো”। এরদোগান সেই নেতা হবার মতো ব্যক্তিত্ব দেখাতে পারেননি। তুরস্কের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় অভ্যুত্থান প্রচেষ্টাকারীদের পক্ষে তুরস্কের মার্কিন বিমান ঘাঁটি থেকে এফ-১৬ যুদ্ধ বিমান ওড়ার পরেও এরদোগান আমেরিকাকে সবচাইতে বড় শত্রু হিসেবে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হয়েছেন। ২০১০ সালে গাজায় ইস্রাইলী অভিযানের সময়ে ইস্রাইলের আক্রমণে কয়েকজন তুর্কী সৈন্য নিহত হন। এরদোগান তাদের জন্যে শুধুমাত্র “হিরোস ফিউনেরাল” দিয়েছেন! ছয় বছর পরে ইস্রাইলের সাথে আবারও সম্পর্ক স্বাভাবিক করে নিয়েছেন। এই এরদোগানের কাছ থেকে আশা করা কঠিন যে তিনি ফোন দেবেন মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্টকে এবং বলবেন যে, ‘তোমরা তোমাদের নৌবাহিনী থেকে দু’টা করে ফ্রিগেট এবং বিমান বাহিনী থেকে ৪টা করে ফাইটার জেট বাংলাদেশে পাঠাও। আমি আরব সাগর থেকে তুরস্কের নৌবাহিনীর জাহাজ বঙ্গোপসাগরে পাঠাচ্ছি; সাথে পাকিস্তানের নৌবাহিনীর দু’টা জাহাজ পাঠানোর ব্যবস্থা করছি। আর আমি বাংলাদেশকে বলে দিচ্ছি আমাদের এই অভিযানে সর্বোচ্চ সহযোগিতা করার জন্যে’। সিরিয়ার মানুষের দিক থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া এবং ইস্রাইলকে বন্ধু মনে করা এরদোগান এই ফোন কল করতে পারবেন?
  
ম্যানিলাতে অং সান সু কি-র সাথে মিলিত হয়েছিলেন ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট উইদোদো। ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্ক তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। মন্ত্রীদের এই সফর কি শুধু তাদের দেশের মানুষগুলিকে এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ঠান্ডা রাখার উদ্দেশ্যে, না সঠিক কোন পদক্ষেপ নেবার উদ্দেশ্যে? ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগের দফায়ও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তবে তার তখনকার সফর যে লোক দেখানোই ছিল, তা এই সমস্যার পূণরাবৃত্তি দেখলেই বোঝা যায়। এবারও কি সেই লোক দেখানো সফর? তুরস্কের ক্ষেত্রেও কি তা-ই? মুসলিম দেশগুলির মানুষের মাঝে যখন প্রচন্ড ক্রোধের সৃষ্টি হচ্ছে, তখন উনারা কি সেকুলার গণতন্ত্রের “পুরষ্কৃত” কন্যা অং সান সু কি-র সাথে চা-নাস্তা খেয়েই সময় পার করবেন?



সবাই আসছেন অং সান সু কি-র সাথে চা-নাস্তা খেতে...

তুরস্ক-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-পাকিস্তানের মানুষ এবং সেসব দেশের রাষ্ট্রীয় পদের লোকজন কিন্তু মিয়ানমারের মুসলিমদের এই অবস্থা সহ্য করতে পারছেন না। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। এই অবস্থায় ইন্দোনেশিয়া এবং তুরস্ক তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বাংলাদেশে পাঠাচ্ছে। মন্ত্রীদের এই সফর কি শুধু তাদের দেশের মানুষগুলিকে এবং সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ঠান্ডা রাখার উদ্দেশ্যে, না সঠিক কোন পদক্ষেপ নেবার উদ্দেশ্যে? ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী এর আগের দফায়ও বাংলাদেশে এসেছিলেন। তবে তার তখনকার সফর যে লোক দেখানোই ছিল, তা এই সমস্যার পূণরাবৃত্তি দেখলেই বোঝা যায়। এবারও কি সেই লোক দেখানো সফর? তুরস্কের ক্ষেত্রেও কি তা-ই? মুসলিম দেশগুলির মানুষের মাঝে যখন প্রচন্ড ক্রোধের সৃষ্টি হচ্ছে, তখন উনারা কি সেকুলার গণতন্ত্রের “পুরষ্কৃত” কন্যা অং সান সু কি-র সাথে চা-নাস্তা খেয়েই সময় পার করবেন?

মিয়ানমারের সমস্যার সমাধানে মিয়ানমারের ভূরাজনীতি বোঝাটা গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমার চীনের বলয়েই ছিল বহুকাল। তবে অং সান সু কি-র মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের মিয়ানমারে প্রবেশ। এর পর থেকেই চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের টানাপোড়েন শুরু। রাখাইনের উপকূলে Kyaukpyu বন্দরে চীন তৈরি করেছে গভীর সমুদ্রবন্দর, যেখানে মধ্যপ্রাচ্য থেকে জাহাজে করে আসা তেল ডাউনলোড হচ্ছে। সেখান থেকে হাজার মাইলের পাইপলাইন দিয়ে সেই তেল পৌঁছে যাচ্ছে চীনের মূল ভুখন্ডে। একইসাথে গ্যাস পাইপলাইনও তৈরি করা হয়েছে। এই পাইলাইনের মাধ্যমে চীন স্ট্র্যাটেজিক মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করতে চাইছে। পাকিস্তানে গোয়াদর পোর্ট তৈরি করেও চীন একই সুবিধা চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র চীনের এই প্রচেষ্টাকে বাধা দিচ্ছে। আর এই কাজে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে ভারত। গোয়াদর পোর্ট পাকিস্তানের বালুচিস্তানে অবস্থিত, যেখানে ভারত বিচ্ছিন্নতাকামীদের সহায়তা দিচ্ছে। বিচ্ছিন্নতাকামীরা চীনা ইঞ্জিনিয়ারদের মেরে ফেলছে। তবে মিয়ানমারে ভারত আরও একটা কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে- বাংলাদেশকে ব্যালান্স করে রাখা, বা ব্যস্ত রাখা। ভারত মিয়ানমারের নৌবাহিনীর ফ্রিগেটগুলির জন্যে অত্যাধুনিক রাডার, সোনার এবং টর্পেডো সরবরাহ করেছে। প্রশ্ন হলো, নৌবাহিনী কেন? কারণ মিয়ানমারের নৌবাহিনী বাংলাদেশের বাণিজ্য রুটের উপরে চলাচলের সুযোগ পাবে। এই কাজে মিয়ানমারকে আরও কার্যক্ষম করে তুলতে ভারত তাদের নিয়মিত ট্রেনিং দিচ্ছে।

তবে একটা ব্যাপার ভুলে গেলে চলবে না যে মিয়ানমারে চীন-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র সকলেরই অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক উদ্দেশ্য রয়েছে। তাই তারা কেউই মিয়ানমারকে ছেড়ে দিতে চায় না; প্রভাব রাখতে চায়। তাদের পূঁজিবাদী লক্ষ্যের আড়ালে পড়ে যাচ্ছে মিয়ানমারের মুসলিমদের নিধনের গল্প। তারা কেউই মিয়ানমারের মুসলিমদের বাঁচাতে আসবে না; বরং তারা বাংলাদেশকে বলবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশের মাঝে থাকার জায়গা করে দিতে, যাতে তারা আরাম-আয়েশে মিয়ানমারে তাদের ব্যবসার প্রসার ঘটাতে পারে। তাদের জন্যে অর্থই সবকিছু, তাই তারা বাংলাদেশকে শধু অর্থই সাধবেন। ঠিক এরদোগানের তুরস্কের মতোই।

সময় নষ্ট করার যতো পদ্ধতি...

অনেক ধরনের সমাধান দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। এই সমাধানগুলির সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে হলে এগুলির চিন্তার ভিত্তি নিয়ে কথা বলতে হবে।

১। রোহিঙ্গাদের স্বাধীন দেশ দেয়া হোকঃ

এই চিন্তাখানা এসেছে এই মনে করে যে এরকম একটা ছোট্ট দেশ তৈরি হলেও সেটা “স্বাধীন” হতে পারে। আর এখানে আরও ধরে নেয়া হচ্ছে যে যুক্তরাষ্ট্র-নিয়ন্ত্রিত বিশ্ব-ব্যবস্থা থেকে অনুমতি না নিলে একটা দেশ “স্বাধীন” হবে না। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্র এবং তার মিত্রদের কাছ থেকে “স্বীকৃতি” পেতে হবে। বলাই বাহুল্য যে এই দেশগুলি রোহিঙ্গাদের উপরে অত্যাচার রোধে কিছুই করেনি। আর যে প্রশ্নটা করা হবে না তা হলো, এভাবে তৈরি হওয়া নতুন একটা দেশকে স্বীকৃতি দেয়া দেশের (যুক্তরাষ্ট্রের) দাসত্ব মেনে নিয়েই চলতে হবে। দেশটা যুক্তরাষ্ট্রের উপরে পুরোপুরি নির্ভর করবে, এবং মিয়ানমারের প্রতিবেশী হওয়ায় দেশটাকে প্রতিরক্ষার জন্যে সর্বদা যুক্তরাষ্ট্রের মুখাপেক্ষী থাকতে হবে।

২। রোহিঙ্গা বিদ্রোহীদের অস্ত্র সহায়তা দেয়া হোকঃ

এই চিন্তাখানা ধরে নিচ্ছে যে রোহিঙ্গা “মুক্তিযোদ্ধা”রা বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের মতোই যুদ্ধ করে দেশ “স্বাধীন” করে ফেলবে। এক্ষেত্রে সেই উপরের প্রশ্নখানারই পূণরাবৃত্তি হচ্ছে – “স্বাধীন” বলতে কি বোঝাচ্ছি আমরা? যুক্তরাষ্ট্রের “স্বীকৃতি” নিয়ে “স্বাধীন”?

আর যদি যুক্তরাষ্ট্র-সমর্থিত নয় এমন কোন বিদ্রোহীদের অস্ত্র সরবরাহ দেয়া হয়, তবে কিন্তু বাংলাদেশকে “সন্ত্রাসী রাষ্ট্র” তকমা দেয়া হবে এবং “সন্ত্রাস তাড়ানো”র নাম করে ড্রোন হামলার শুরু হবে। বুঝতে বাকি থাকে না যে এই ড্রোন হামলা ভারতের মাটি থেকেই হবে।

আর একই সময়ে একই মন্ত্রে দীক্ষিত হয়ে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারত-সমর্থিত কিছু লোক স্বাধীনতা দাবি করতে থাকবে, যাদেরকে অস্ত্র দিতে ভারতের দুই মিনিটও অপেক্ষা করতে হবে না। তখন “ব্লু ইকনমি”, “ডিজিটাল বাংলাদেশ”, “ফোর্সেস গোল-২০৩০” এগুলি বাদ দিয়ে “বাংলাদেশের বিভাজন” ঠেকাতে পুরোপুরি মনোনিবেশ করতে হবে।

৩। মিয়ানমারের উপরে আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টিঃ

এই চিন্তাখানার অসারতা প্রমাণ করার দরকার কতটুকু রয়েছে, সেটা নিয়ে বরং কথা হতে পারে। আলোচনার পর আলোচনা হয়েছে মিয়ানমার সরকারের সাথে। কয়েক দশক পেরিয়ে গেলেও কোন সমাধান আসেনি। যে পশ্চিমা আন্তর্জাতিক চাপের কথা বলা হচ্ছে, তা কখনোই কাজ করেনি – একথা সবারই জানা। যে জাতিসংঘের কথা বলা হচ্ছে, সে জাতিসংঘের ব্যর্থতার তালিকা এতো বড় হয়েছে যে সেটা এখন নাম-সর্বস্ম প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র নিজেই সর্বদা তার নিজের তৈরি করা এই প্রতিষ্ঠানকে পাশ কাটিয়ে কাজ করছে। ২০০৩ সালে ব্যাপক-ধ্বংসী অস্ত্রের নাম করে ইরাক দখল করার চাইতে আর কোন ভালো উদাহরণ হয়তো দেয়া যাবে না। জাতিসঙ্ঘ কি করতে পেরেছিল ইরাকের লাখো মানুষের জন্যে, যারা পরবর্তীতে যুদ্ধে নিহত হয়? দক্ষিণ চীন সাগরের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে আন্তর্জাতিক আদালতের রায় মেনে চলতে বলছে, অথচ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই আন্তর্জাতিক আদালতের অংশ হতে স্বাক্ষর করেনি! অর্থাৎ আন্তর্জাতিক আদালতের আইন তার নিজের উপরে প্রযোজ্য নয়। ‘মিয়ানমারের উপরে আন্তর্জাতিক চাপ’ – এটা একটা মরীচিকা মাত্র। সময় নষ্ট করার একটা পদ্ধতি।

৪। যা আলোচনা করা হবে নাঃ

যে চিন্তাখানা আলোচনায় আসবে না তা হলো মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বাংলাদেশের সামরিক অভিযান। এই অভিযানে পুরো আরাকান মুক্ত করার মাধ্যমে রোহিঙ্গাদেরকে নিজেদের ভিটেমাটিতে পূনস্থাপন করা। এই চিন্তাখানা আসবে না শুধু এই কারণে নয় যে বাংলাদেশ এটা করতে পারে না, বর্তমান বিশ্ব-ব্যবস্থায় বাংলাদেশ সেই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই অনুমতি চাইবে এই কাজটা করা জন্যে। অথচ এই সমাধানের চাইতে ভালো সমাধান নেই। মার্কিন-নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার পরিবর্তন হলেই এটা সম্ভব।


সমাধান সামরিক……

বাংলাদেশ আহ্বান করলে তুরস্ক-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে সাড়া দেবেই; নেতৃত্ব যা-ই চাক না কেন। মিয়ানমারকে ভীতি প্রদর্শন করতে হলে দরকার মুসলিম দেশগুলির একত্রে সামরিক পদক্ষেপ। বঙ্গোপসাগরে জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ হতে পারে মিয়ানমার এবং তার পৃষ্ঠপোষকদের ভীতি প্রদর্শনের পথ। তবে যেহেতু এই এক্সারসাইজ সর্বদা চলবে না, তাই বাংলাদেশকে ডিটারেন্ট হিসেবে সামরিক বাহিনীকে ডেভেলপ করতে হবে। সাবমেরিন ফ্লীট গড়ে তোলা ছাড়াও বিমান বাহিনীকে উন্নত করাটা এখন ফরয কাজ হয়ে গেছে। আর কতো বছর বাংলাদেশের মানুষকে অপেক্ষে করতে হবে পরবর্তী ফাইটার বিমান অর্ডার করার জন্যে? কোন বিমান কেনা হবে, এটার উপরে বছরের পর বছর নষ্ট করে এক হাস্যকর পরিস্থিতির উদ্ভব করা হয়েছে। এখন মিয়ানমার এক দিনে তিনবার বাংলাদেশের আকাশ-সীমা ভেদ করে গেলেও বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কিছু শব্দ করে বিমান ওড়ানো ছাড়া কিছু করার সক্ষমতা থাকছে না। এই শব্দে মিয়ানমার ভয় তো পাবেই না, বরং আরও নতুন উদ্যমে মুসলিম খেদাও অন্দোলনে নামবে।
 
২০১৭ সালের বাংলাদেশ সমরাস্ত্র প্রদর্শনীতে JF-17 Thunder ফাইটারের রেপ্লিকা। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে ভারতের জন্যে  হুমকি তৈরি করতে পারে JF-17 ফাইটার জেট। এই ফাইটার জেট দুনিয়ার সবচাইতে মারাত্মক ফাইটার জেট নয়। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এই বিমানের অন্তর্ভুক্তি দিল্লীতে যে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করবে, তা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয়ের চাইতে বহুগুণে বেশি শক্তিশালী হবে।


মিয়ানমারের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে হলে মিয়ানমারের পৃষ্ঠপোষকদের উপরেও চাপ প্রয়োগ করতে হবে। এই চাপ তৈরি করতে ভূরাজনৈতিক হিসেব কষতে হবে। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক সুপারপাওয়ারের জন্যে সর্বদাই বিপদের ডাক দেয়। তাই বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের কথা উঠলেই জামায়াত-ই-ইসলামী এবং ভারতপন্থীরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে। আর এভাবে তারা উভয়েই ভারতের (এবং যুক্তরাষ্ট্রের) বন্ধুরূপে কাজ করে। ভারত আর যুক্তরাষ্ট্রের সাজানো খেলায় পানি ঢেলে দেয়ার উপায় হলো পাকিস্তান থেকে অস্ত্র ক্রয়। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পাকিস্তানে তৈরি K-8W ট্রেইনার বিমান ব্যবহার করছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ব্যবহার করছে ‘বাখতার শিকান’ (রেড এরো-৮) এন্টি-ট্যাঙ্ক মিসাইল। বিমান বাহিনী পাকিস্তানে তৈরি কমান্ড সেন্টারও ব্যবহার করেছে। তবে এগুলি কোনটাই ভূরাজনৈতিক দিক থেকে ভারতের জন্যে হুমকি-স্বরূপ হয়নি। এই হুমকি তৈরি করতে পারে JF-17 Thunder ফাইটার জেট। এই ফাইটার জেট দুনিয়ার সবচাইতে মারাত্মক ফাইটার জেট নয়। কিন্তু বাংলাদেশ বিমান বাহিনীতে এই বিমানের অন্তর্ভুক্তি দিল্লীতে যে ভূমিকম্পের সৃষ্টি করবে, তা বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয়ের চাইতে বহুগুণে বেশি শক্তিশালী হবে। এই ফাইটারকে ব্যাপকভাবে উন্নত করতে সহায়তা করছে চীন, তুরস্ক, এবং সম্ভবতঃ দক্ষিণ আফ্রিকা-সহ আরও কিছু দেশ। এই বিমান চালিত হচ্ছে রাশিয়ায় তৈরি বিখ্যাত RD-93 ইঞ্জিন দ্বারা, যা কিনা MiG-29 ফাইটারে ব্যবহৃত হয়। ভ্লাদিমির পুতিন পাকিস্তানকে ভূরাজনৈতিক দিক থেকে কত বড় সহায়তা দিয়েছে এই ইঞ্জিনই তার প্রমাণ। এই বিমানের কোন অংশের জন্যেই পাকিস্তানকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে দায়বদ্ধ হতে হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে এই ফাইটার জেট একটা ভূরাজনৈতিক বিভীষিকাময় অধ্যায়। বাংলাদেশের এই মুহুর্তে ২ থেকে ৩ স্কোয়াড্রন ফাইটার জেট দরকার; যাকে বলে “হট-ট্রান্সফার”! ফ্যাক্টরিতে তৈরি করে নয়, বরং অলরেডি তৈরি বিমানের লাইন থেকে এই সরবরাহ হতে হবে। যদি কেউ এর আগে কখনো ঢাকায় বসে দিল্লীতে বাজ পড়ার শব্দ না পেয়ে থাকেন, তবে এই ঘটনার সাথে সাথে সেটা শুনতে পাবেন। এই ঘটনাই পারবে মিয়ানমারকে থামাতে।

বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই ভূরাজনীতিতে অনেক স্টেশন মিস করেছে। দোকলাম ইস্যুতে বাংলাদেশের উচিত ছিল কথা বলা। একটা বিবৃতিই যথেষ্ট ছিল এক্ষেত্রে। বাংলাদেশ যদি বলতো যে বাংলাদেশের সীমানার এতো কাছে সামরিক কর্মকান্ডে বাংলাদেশ উদ্বিগ্ন, এবং ভারত-চীনকে বাংলাদেশ ঢাকায় বসে সমস্যার সমাধান খুঁজতে বলতো – বাংলাদেশের অবস্থান তখন বিশ্বে কোথায় থাকতো সেটা কল্পনাও করা সম্ভব নয়। কিন্তু ভারত কি মনে করবে – এধরনের নিম্নমানের চিন্তায় ডুবে গিয়ে এই সুযোগ হাতছাড়া করা হয়। এখন সেই একই নিম্নমানের কূটনীতির উপরে ভর করে মিয়ানমারকে আস্কারা দেয়া হচ্ছে। যেখানে বাংলাদেশ ইতোমধ্যে আইওরা সামিটে যা দেখিয়েছে এবং কসোভোকে স্বীকৃতি দিয়ে যে প্রভাব তৈরি করার সক্ষমতা দেখিয়েছে, সেখানে কোন যুক্তিতে বাংলাদেশ মিয়ানমারকে ঠান্ডা করতে পারবে না, এটা বোধগম্য নয়। একুশ শতকে বাংলাদেশের অবস্থান মিয়ানমারের সাথে তুলনীয় হতে পারে না। কিন্তু ভূরাজনীতি না বুঝে নিম্নমানের কূটনীতির উপরে ভর করে মিয়ানমার-ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের কাছে মাথা নত করে, আর বাকি দুনিয়া থেকে রোহিঙ্গাদের জন্যে ভিক্ষাবৃত্তি করে বাংলাদেশের অবস্থান নিম্নগামী হতে বাধ্য।

10 comments:

  1. যেসব দেশ রোহিংগা নিয়ে প্রতিবাদ করছে এগুলা যদি নাটক হয়, তাহলে রোহিংগা সমস্যার কি কোনো সমাধান হবে না ???
    আর ইরাক, সিরিয়া, আরাকানের পর কি এবার বাংলাদেশের মুসলমানদের বলি হওয়ার পালা আসছে ???

    ReplyDelete
    Replies
    1. যতবার প্রতিবাদ হবে, ততোবারই "কিছু একটা করে" সকলকে ঠান্ডা করে দেয়া হবে। অলরেডি সেটা তো করা হয়েছেই একাধিকবার। সমস্যার সমাধান কি হয়েছে?

      ভূরাজনীতি না বুঝে এরকম নিম্নমানের কূটনীতি যে কত বড় আত্মঘাতী কাজ হবে, সেটা এখনো অনেকেই বুঝতে পারছেন না। আর বাংলাদেশ যে টার্গেটে রয়েছে ২০০৩ সালের পর থেকে, তা জানাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এর আগের পোস্টগুলি সময় করে পড়ে নেবেন আশা করি। অনেক কিছুই পরিষ্কার হবে।

      এই পোস্ট থেকে শুরু করতে পারেনঃ
      http://koushol.blogspot.com/2015/08/mahan-bangladesh.html

      Delete
  2. ইহা নিম্নগামী পরাষ্ট্রনীতি বলাটা ঠিক নয় কারন এ মুহুর্তে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে যে অবস্থানে আছে তা খুবই সুক্ষভাবে ট্যাকল দিতে হবে। তাই বেস্ট অপশন আমি মনে করি যে এ মুহুর্তে বাংলাদেশের মানুষদের প্রতিবাদ করতে হবে জোরেসরে, তাতে ফটকাটা কাজে লাগবে।

    আর হাসিনার গেম প্ল্যানিং তো আছেই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. কতবার মিয়ানমার বাংলাদেশের আকাশ-সীমা লঙ্ঘন করার পরে আপনি মনে করবেন যে বেশি হয়ে গেছে? কত রোহিঙ্গার কবর দেয়ার পরে আপনি বলবেন যে অনেক বেশি মেরে ফেলেছে? কত শরণার্থী আশ্রয় দেয়ার পরে আপনি বলবেন যে এদের প্রকৃত স্থান আরাকানে?

      প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অনেক সূক্ষ্ম কাজ করে উদাহরণ সৃষ্টি করেছেন। তবে তার উপদেষ্টারা যদি সঠিক সময়ে উপরে উল্লিখিত সামরিক পদক্ষেপগুলি নেবার কথা বলতেন, তাহলে হয়তো বহু মানুষের প্রাণ বাঁচানো যেতো এবং বাংলাদেশের ইজ্জতও বাঁচতো।

      মার্কিন-ইন্ধনপ্রাপ্ত জামাত-ই-ইসলামী এবং ভারত-পন্থীদের কামড়া-কামড়ি উপেক্ষা করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কক্সবাজার টারমাকে এখন কয়েক স্কোয়াড্রন JF-17 যুদ্ধবিমান প্রস্তুত থাকলে আজকের এই জঘন্য পরিস্থিতি এড়ানো যেতো।

      Delete
    2. আকাশসীমা মিয়ানমার লঙ্ঘন করেছে বলে কথা হচ্ছে, তা ভারত যে কতবার বাংলার আকাশে ড্রোন পাঠাইছে তা তো আল্লাহ জানে, তখন কথাগুলা হয়না। ভারত এখন সবচে বেশী চিন্তিত সন্ত্রাসবাদ নিয়ে, যার কারনে পাঞ্জাব, সেভেন সিস্টার্স (বাংলাদেশ তো তাদের কাছে অস্টম) হারানোর আশঙ্কা আছে। আর তার সঙ্গে আছে বাংলাদেশ আর পাকিস্তানের সমর শক্তির উন্নয়ন। বাংলাদেশ এমন একটা পর্যায়ে আছে যে না চাইলেও তাকে বাফার স্টেট হয়েই থাকা লাগবে, আদতে মিয়ানমার কিন্তু দক্ষিন ও দক্ষিন পুর্ব এশিয়াতে শক্তিশালী রাস্ট্র হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চায় যেখানে তাকে সাহায্য করছে আমেরিকা আর ভারত। চীন হতে আগেই প্রযুক্তি নিয়ে তারা ঘরোয়া ভাবে সমরাস্ত্র বানাচ্ছে। আর পরোক্ষভাবে চীনের সমর্থন তো আছেই। এক কথায় বলা যায় সব কিছুই বাংলাদেশের বিপক্ষে। সেক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো বিষয় মিয়ানমারের বিষয়ে যদি বাংলাদেশের মানুষ স্বতস্ফুর্ত প্রতিবাদ জানায় তাহলে সংসদ বাধ্য হবে এ বিষয়ে প্রতিবাদ করার। তখন চীন, রাশীয়া চাইবে বাংলাদেশকে হাতে রাখতে, ভারত কি করবে জানিনা কারন তারা মুখে বলে একটা করে আরেকটা, যা এক কথায় মোনাফেকী। চীন বুঝে ব্যবসা এবং এর বাহিরে তারা যাবেই না যেন যুক্ত্ররাস্ট্র চায় বিশ্ব ক্ষমতায় টিকে থাকা। অন্যদিকে রাশিয়া হল আরেক চীজ, চুপ করে ঘপ্টি মেরে বসে থাকবে সুযোগ বুঝে মারবে টান কারন তারা ১৯৯০ এর থেকে শিক্ষা নিয়েছে। এক্ষেত্রে আপনি হাসিনা আর পুতিন কে পাশাপাশি রাখতে পারেন। এখন সামরিক বিষয় নিয়ে আমি কিছু বলতে চাই তবে তখনই যখন আমি নিরাপদ পরিবেশ পাবো তা বলার জন্য। তাই আপাতত যা বলেছি তা দিয়ে একটু বুঝে নিন।

      Delete
    3. বর্তমান পরিস্থিতি বোঝার জন্যে এই এলাকার ভূরাজনীতি বোঝাটা খুব জরুরি। আপনি এই ব্লগের আগের কিছু লেখা পড়ে নিলে আপনার কিছুটা সুবিধা হতে পারে। নিচের লিঙ্কটা দিয়ে শুরু করতে পারেন -
      http://koushol.blogspot.com/2015/08/mahan-bangladesh.html

      Delete
    4. ধন্যবাদ আপনার সাজেশনের জন্য। আমি আপনার সব লিখা আগেই পড়েছি, কোনোটাই বাদ নাই, আর আলফ্রেড মাহানের বইখানা আমার পড়া হয়েছে।

      Delete
  3. টারমার্কে জেএফ-১৭ দের বিকল্প কি কিছু নেই?
    দুই বিপরীতের কার্যকলাপ কি ভাবে চলমান বিশৃঙ্খলাকে মদদ দিচ্ছে সম্প্রসারিত ব্যাখ্যা আশা করছি।
    মিয়ানমারের প্রতিক্রিয়ার প্রতিক্রিয়া হিসেবে বর্তমানে আমাদের অবস্থান কি?

    ReplyDelete
  4. আবারো চমৎকার এনালাইসিস।

    ReplyDelete
  5. আবারো চমৎকার এনালাইসিস।

    ReplyDelete