Thursday, 16 February 2017

ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম এবং মিয়ানমারের গণতন্ত্র

১৬ই ফেব্রুয়ারী ২০১৭
১৬৪৮ সালে ইউরোপ ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Thirty Years’ War) থেকে বাঁচে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির (Peace of Westphalia) মাধ্যমে। এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপারে ইউরোপের দেশগুলি ঐকমত্যে পৌঁছে। এর মাঝে একটি ছিল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। একটি দেশ অপর দেশের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। আর এই পুরো ব্যাপারটিকে তদারকি করবে তৎকালীন ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলি, যারা নিজেদের মাঝে একটি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ (Balance of Power) রাখবে, যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধ এড়াবে। ১৯৯০ সাল পর্যন্ত এই 'ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম' মোটামুটি কাজ করেছে, অর্থাৎ শক্তিশালী দেশগুলির স্বার্থের দেখভাল করেছে। কিন্তু এর পর থেকে এটি ঠিকমতো কাজ করছে না।


ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম আসলে কি?

১৬৪৮ সালে ইউরোপ ত্রিশ বর্ষব্যাপী যুদ্ধ (Thirty Years’ War) থেকে বাঁচে ওয়েস্টফালিয়ার চুক্তির (Peace of Westphalia) মাধ্যমে। এই চুক্তির মাধ্যমে যুদ্ধ বন্ধ হওয়া ছাড়াও আরও কিছু ব্যাপারে ইউরোপের দেশগুলি ঐকমত্যে পৌঁছে। এর মাঝে একটি ছিল রাষ্ট্রের সার্বভৌমত্ব। একটি দেশ অপর দেশের সার্বভৌমত্ব স্বীকার করে নেবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলাবে না। আর এই পুরো ব্যাপারটিকে তদারকি করবে তৎকালীন ইউরোপের শক্তিধর দেশগুলি, যারা নিজেদের মাঝে একটি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’ (Balance of Power) রাখবে, যার মাধ্যমে তারা যুদ্ধ এড়াবে। তবে সমস্যা হলো যুদ্ধ এড়ানো সম্ভব হয়নি; কারণ সবাই সবার স্বার্থ নিয়ে ব্যাতিব্যস্ত। শক্তিশালী দেশগুলি ওয়েস্টফালিয়ার নীতিগুলি নিজেদের উপরে প্রযোজ্য হতে দেয়নি। জোর যার, মুল্লুক তার – এই পদ্ধতিতেই চলেছে। নীতিগুলি মানতে বাধ্য ছিল শুধু ছোট দেশগুলি, যারা সবসময়ই বড় কোন শক্তির সাথে থাকতে বাধ্য হতো। ছোট দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখার ১৬৪৮ সালের এই নিয়মখানাই পরবর্তীকালে ঔপনিবেশিক আমলে সারা বিশ্বে প্রতিষ্ঠিত করা হয়। ছোট কোন দেশ অন্য দেশের ভেতর নাক গলাতে পারবে না, যদি না সেখানে বড় কোন শক্তির ইন্ধন থাকে। যেমন – কোরিয়ার যুদ্ধে কমিউনিস্ট উত্তর কোরিয়া এবং ভিয়েতনাম যুদ্ধে কমিউনিস্ট উত্তর ভিয়েতনামকে ইন্ধন যুগিয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং চীন। ঊনিশ শতকে ব্রিটেন, ফ্রান্স, রাশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার সাথে শক্তিশালী রাষ্ট্র হিসেবে নাম লেখায় জার্মানি। উসমানিয়া খিলাফত তখন দুর্বল হলেও তাদের প্রভাব ছিল যথেষ্ট। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী সাম্রাজ্য এবং উসমানিয়া খিলাফতের পতন হয়; আর রাশিয়ার স্থানে জন্ম নেয় নতুন আদর্শিক শক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত শক্তিশালী দেশগুলি ছিল ব্রিটেন, ফ্রান্স, সোভিয়েত ইউনিয়ন, জার্মানি এবং ইতালি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর এটা মূলত হয়ে যায় যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়া। আর ১৯৯০ সাল থেকে শুধু যুক্তরাষ্ট্র। শক্তিশালী দেশগুলি ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’এর মাধ্যমে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমকে ধরে রাখছিল। কিন্তু ১৯৯০ সালের পর থেকে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনে দুনিয়ার ব্যালান্স পরিবর্তন হয়ে যায়।

  

২০১৭-এর জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেবার ঠিক আগে আগে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান ডিরেক্ট ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল’ বা এনআইসি (National Intelligence Council) একটি রিপোর্ট বের করে। এখানে বলা হচ্ছে যে আগামী পাঁচ বছরের মাঝেই দুনিয়ার উপরে মার্কিন শাসনের অবসান ঘটতে আসতে যাচ্ছে এবং দুনিয়াটা এখন যে নিয়মে চলছে, সে নিয়ম কেউ আর মানবে না, বা নতুন কোন নিয়ম সেটার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে, যা কিনা মার্কিনীদের তৈরি নয়। পাঁচ বছর যে কতটা অল্প সময়, তার একটা ধারণ পাওয়া যাবে এভাবে – কেউ যদি ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বলে যে ২০১৬-এর ডিসেম্বরের মাঝে দুনিয়ায় মার্কিন কর্তৃত্ব থাকবে না, তাহলে কেমন অদ্ভূত শোনাতো ব্যাপারটা।

বর্তমান সময়ে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম কাজ করছে না বলে লিখেছেন মার্কিন আদর্শিক চিন্তাবিদ হেনরি কিসিঞ্জার। তিনি বলছেন যে দুনিয়ার ব্যবস্থাটাই (World Order) এখন সংকটের মাঝে পড়েছে। কিসিঞ্জারের কথার রেশ পাওয়া যায় সাম্প্রতিক মার্কিন গোয়েন্দা রিপোর্টে। ২০১৭-এর জানুয়ারীতে ডোনাল্ড ট্রাম্পের শপথ নেবার ঠিক আগে আগে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স কমিউনিটির প্রধান ডিরেক্ট ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স-এর উপদেষ্টা পরিষদ ‘ন্যাশনাল ইন্টেলিজেন্স কাউন্সিল’ বা এনআইসি (National Intelligence Council) একটি রিপোর্ট বের করে। ‘Global Trend: Paradox of Progress’ নামের এই রিপোর্টে বলা হয়,

“The next five years will see rising tensions within and between countries. Global growth will slow, just as increasingly complex global challenges impend. An ever-widening range of states, organizations, and empowered individuals will shape geopolitics. For better and worse, the emerging global landscape is drawing to a close and era of American dominance following the Cold War. So, too, perhaps is the rules-based international order that emerged after World War II. It will be much harder to cooperate internationally and govern in ways publics expect. Veto players will threaten to block collaboration at every turn, while information “echo chambers” will reinforce countless competing realities, undermining shared understandings of world events.”

অর্থাৎ এখানে বলা হচ্ছে যে আগামী পাঁচ বছরের মাঝেই দুনিয়ার উপরে মার্কিন শাসনের অবসান ঘটতে আসতে যাচ্ছে এবং দুনিয়াটা এখন যে নিয়মে চলছে, সে নিয়ম কেউ আর মানবে না, বা নতুন কোন নিয়ম সেটার স্থলাভিষিক্ত হতে যাচ্ছে, যা কিনা মার্কিনীদের তৈরি নয়। পাঁচ বছর যে কতটা অল্প সময়, তার একটা ধারণ পাওয়া যাবে এভাবে – কেউ যদি ২০১২ সালের জানুয়ারীতে বলে যে ২০১৬-এর ডিসেম্বরের মাঝে দুনিয়ায় মার্কিন কর্তৃত্ব থাকবে না, তাহলে কেমন অদ্ভূত শোনাতো ব্যাপারটা। এনআইসি-এর রিপোর্টে আরও বলা হয়,

“Underlying this crisis in cooperation will be local, national and international differences about the proper role of government across an array of issues ranging from the economy to the environment, religion, security, and the rights of individuals. Debates over moral boundaries – to whom is owed what – will become more pronounced, while divergence in values and interests among states will threaten international security.”

অর্থাৎ কেউ কারও কথা শুনবে না; সকলে সকলের স্বার্থ দেখতে শুরু করবে।
  
ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের ভবিষ্যৎ কি?

আজ পৃথিবীব্যাপী মার্কিন শক্তি কমার [১] সাথে সাথে মার্কিন নিয়মের ব্যাত্যয় ঘটছে। ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের সার্বভৌমত্ব এখন প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে বারংবার। গণতন্ত্র রক্ষার নামে এখন এক দেশের সৈন্য অন্য দেশে ঢুকে পড়ছে খুব সহজেই। এখন সেখানে আর মার্কিন সেনার দরকার হচ্ছে না। তবে এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো –

১। অস্ত্রের মুখে গণতন্ত্রকে প্রতিষ্ঠা করতে হচ্ছে। [২] গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গিয়ে চরমতম মানবাধিকার লঙ্ঘনকেও গিলে ফেলতে হচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শ এখন দুর্বল থেকে দুর্বলতর হচ্ছে।

২। অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলির কাছে অন্য দেশের সীমানায় ঢোকাটা স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ ‘ব্যালান্স অব পাওয়ার’এর চিন্তাটি এখন নেই। এভাবে ছোট দেশগুলিও প্রভাব খাটানোর উপায় পেয়ে যাচ্ছে, যা তারা সময়-সুযোগমত ব্যবহার করছে।

৩। গণতন্ত্রকে অবস্থান দিতে হচ্ছে সার্বভৌমত্বের উপরে। গণতন্ত্রকে বাঁচাতে গিয়ে সার্বভৌমত্বকে ভূলুন্ঠিত করতে হচ্ছে। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শকে বাঁচাতে গিয়ে ভূরাজনৈতিক ব্যালান্সের (ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম) চিন্তাটি ছোট হয়ে আসছে। তাহলে আদর্শ যদি সামনের দিনগুলিতে আরও দুর্বল হয়ে যায়, তাহলে ভূরাজনৈতিক ব্যালান্সের সাথে তো আদর্শও যাবে।

ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে মিয়ানমারের মুসলিমদের ইস্যুটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সুতরাং সেটা সেই দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয়। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ মিয়ানমার সরকারের অনুমতি ছাড়া ঐ দেশের নির্যাতিত মুসলিমদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যায়নি, এবং তারা বলেছে যে তারা মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অর্থাৎ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সেখানে আবার মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি লঙ্ঘন না করার কথা বলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারংবার কথা বলছে; বাংলাদেশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে।

কেইস স্টাডি – মিয়ানমারের অত্যাচারিত মুসলিমরা
২০১৭ সালে মার্কিন দুনিয়ার নিয়মগুলি ভাঙ্গার কাহিনী দেখা যাবে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর অত্যাচারের পর পার্শ্ববর্তী দেশগুলির হস্তক্ষেপ।

১। এখানে কেউ বলবেন যে মানবাধিকারের পক্ষে দাঁড়ানোটা ঐ দেশগুলির দায়িত্ব ছিল। কিন্তু তাহলে তো এটাও বলা যায় যে ব্যাপারটা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়, সুতরাং সেটা সেই দেশের সার্বভৌমত্বের বিষয় (ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম)। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ মিয়ানমার সরকারের অনুমতি ছাড়া ঐ দেশের নির্যাতিত মুসলিমদের কাছে ত্রাণ নিয়ে যায়নি, এবং তারা বলেছে যে তারা মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। অর্থাৎ মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে সেখানে আবার মিয়ানমারের সার্বভৌমত্বকে পুরোপুরি লঙ্ঘন না করার কথা বলা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়াও মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বারংবার কথা বলছে; বাংলাদেশে তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে পাঠিয়েছে।

২। এই ত্রাণবাহী জাহাজের প্রভাবে মিয়ানমারের মুসলিমদের উপর অত্যাচার বন্ধ হবার সম্ভাবনা ক্ষীণ। অর্থাৎ এখানে মানবাধিকারকেও প্রাধান্য দেয়া হলো না। আবার মিয়ানমারে সিঙ্গাপুর, চীন, থাইল্যান্ড, ভারত, ভিয়েতনামের মতো অনেক দেশ বিপুল বিনিয়োগ করছে; তাই তারাও চাইবে না যে মিয়ানমারের মানবাধিকার নিয়ে বেশি উচ্চবাচ্য হোক। অর্থাৎ পশ্চিমা আদর্শের একটি ভিত্তিকে (বাজার অর্থনীতি) তুলে ধরা হচ্ছে আরেকটির (মানবাধিকার) উপর।

৩। তারও উপরে রয়েছে গণতন্ত্র। মিয়ানমারে বিনিয়োগ শুরু হয়েছে তথাকথিত গণতন্ত্রের বাতাস বয়ে যাবার কারণেই। অং সান সু-চি-কে নোবেল প্রাইজ দেয়া হয়েছে তো মিয়ানমারে গণতন্ত্র আনার জন্যেই। সেখানে নির্বাচন হচ্ছে; সু-চি-কে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান দেয়া হয়েছে। পুরষ্কারস্বরূপ মার্কিনীরা মিয়ানমারের উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা সরিয়ে নিয়েছে এবং সেখানে ব্যাপক বিনিয়োগ হচ্ছে। সু-চি ভোটের জন্যে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ। তাই মিয়ানমারে যখন মুসলিম-বিরোধী চেতনা দানা বাঁধছে, তখন সু-চি যে ভোট হারাবার ভয়ে মুসলিমদের পক্ষ নেবেন না, সেটাই স্বাভাবিক। আর পশ্চিমারাও গণতন্ত্র রক্ষার জন্যে মুসলিমদের উপর অত্যাচারের বিরুদ্ধে কিছু বাক্যবাণ ছাড়া আর কিছুই ছুঁড়বে না। ড্রোন থেকে ছোঁড়া হেলফায়ার মিসাইলগুলি তো গণতন্ত্র আর বাজার অর্থনীতিকে রক্ষার জন্যই, নয় কি?


 
মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনীতি ঐ দেশগুলির ক্ষেপে যাওয়া মুসলিমদের ঠান্ডা করার জন্যে; মিয়ানমারকে ভয় দেখাবার জন্যে নয়। ভয় দেখাতে চাইলে হয়তো মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সাথে ‘লাইভ-ফায়ারিং জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ’ করে তারপর মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে যৌথভাবে ত্রাণ পাঠাবার কথা বলতো। ত্রাণবাহী জাহাজটির সাথে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চারটা যুদ্ধজাহাজ এবং ৮টা যুদ্ধবিমান আসতো এবং সেগুলিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এসকর্ট করে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসতো – তাহলেই বোঝা যেতো কে কার কথা শোনে। মিয়ানমার যদি বুঝতে পারতো যে এই ভীতি প্রদর্শন শুধু ফাঁকা বুলি নয়; এরা দরকার হলে সামরিক অভিযানেও পিছপা হবে না, তাহলে মিয়ানমার সরকার সত্যিকারের ভয় পেতো।

মিয়ানমারের যা প্রাপ্য ছিল...

মিয়ানমারে যে পরিমাণ বিনিয়োগ হচ্ছে, তাতে মিয়ানমারের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের কোন ব্যবস্থা নেবার প্রশ্নই আসে না। সেখানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, তাই সেখানে কোন ড্রোন হামলা হবে না। গণতন্ত্র এবং বাজার অর্থনীতি স্থান পাবে মানবাধিকারের উপরে, যদিও সবগুলিকেই পশ্চিমারা তাদের আদর্শে ভিত্তি বলে থাকে। মালয়েশিয়ার ত্রাণবাহী জাহাজ এবং ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কূটনীতি ঐ দেশগুলির ক্ষেপে যাওয়া মুসলিমদের ঠান্ডা করার জন্যে; মিয়ানমারকে ভয় দেখাবার জন্যে নয়। ভয় দেখাতে চাইলে হয়তো মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সাথে ‘লাইভ-ফায়ারিং জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ’ করে তারপর মিয়ানমারের সিতওয়ে বন্দরে যৌথভাবে ত্রাণ পাঠাবার কথা বলতো। ত্রাণবাহী জাহাজটির সাথে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার চারটা যুদ্ধজাহাজ এবং ৮টা যুদ্ধবিমান আসতো এবং সেগুলিকে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী এসকর্ট করে বঙ্গোপসাগরে নিয়ে আসতো – তাহলেই বোঝা যেতো কে কার কথা শোনে। মিয়ানমার যদি বুঝতে পারতো যে এই ভীতি প্রদর্শন শুধু ফাঁকা বুলি নয়; এরা দরকার হলে সামরিক অভিযানেও পিছপা হবে না, তাহলে মিয়ানমার সরকার সত্যিকারের ভয় পেতো। ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারে ত্রাণের জাহাজ পাঠানোতে মিয়ানমারের সার্বভৌমত্ব লংঘন হয়েছে সন্দেহ নেই। কিন্তু যে ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম এখন ধূলায় মিশাচ্ছে, সেটাকে আঁকড়ে ধরে থেকে কার স্বার্থকে তুলে ধরা হচ্ছে? রাষ্ট্রের শক্তি শুধু পেশীতে নয়; চিন্তা-চেতনায়। সেই চিন্তা-চেতনাকে বাস্তবায়ন করা, রক্ষা করা এবং ছড়িয়ে দেয়াটাই রাষ্ট্রের লক্ষ্য। একটা রাষ্ট্রের এহেন লক্ষ্য শত্রুর মনে ভীতির সঞ্চার করে। মিয়ানমার সেই ভয় পায়নি বলেই তারা সেখানের মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে পার পেয়ে যাচ্ছে।



[১] ‘ওবামার যুদ্ধগুলো লড়বে কে?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৯ জানুয়ারী ২০১৭

‘প্রশ্নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ০১ সেপ্টেম্বর ২০১৬

‘যুক্তরাষ্ট্র কি নিজের যঙ্গেই যুদ্ধরত?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭

[২] ‘পশ্চিম আফ্রিকার সাম্প্রতিক ভূরাজনীতি’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ২৬ জানুয়ারী ২০১৭

No comments:

Post a Comment