Monday, 11 September 2017

বাংলাদেশের সামরিক বাজেট নিয়ে নতুন করে চিন্তা করার সময় এসেছে

মিয়ানমারের সামরিক প্যারেডে শোভা পাচ্ছে রাশিয়ায় তৈরি শক্তিশালী Kvadrat-M (Buk-M1) মিডিয়াম-রেঞ্জ এয়ার-ডিফেন্স মিসাইল। যুগের পর যুগ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-সমর্থিত সুশীলদের কথা শুনে সামরিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী পত্রিকা প্রতিদিনের খবরে তথাকথিত "সুশীল সমাজ"এর কিছু লোককে প্রতিদিন হাইলাইট করেছে। "খবর" বলে প্রকাশিত ঐসব বিবৃতি ঔপনিবেশিকদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই করেনি। এই ঔপনিবেশিক এজেন্টদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে বাংলাদেশের সাথে তার প্রতিবেশী দেশগুলির সামরিক দিক থেকে বিরাট অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি হয়েছে।


১১ সেপ্টেম্বর ২০১৭


  
ঔপনিবেশিক এজেন্টদের সামরিক বাহিনী-বিরোধী প্রপাগান্ডা 

যুগের পর যুগ যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-সমর্থিত সুশীলদের কথা শুনে সামরিক দিক থেকে পিছিয়ে পড়েছে বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী পত্রিকা প্রতিদিনের খবরে তথাকথিত "সুশীল সমাজ"এর কিছু লোককে প্রতিদিন হাইলাইট করেছে। "খবর" বলে প্রকাশিত ঐসব বিবৃতি ঔপনিবেশিকদের রাজনৈতিক এজেন্ডা বাস্তবায়ন ছাড়া আর কিছুই করেনি। বিশেষ করে নির্বাচনের সময়ে এই লোকগুলিকে দিয়ে মানুষের আবেগ যেদিকে যায় এমন সব কথাবার্তা বলিয়ে এদের পক্ষে বড় একটা সমর্থক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। সময় সুযোগমত এরা সর্বদা বাংলাদেশের সামরিক শক্তি তৈরিতে বাধা দিয়েছে। যেকোন সামরিক উন্নয়ন পদক্ষেপকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায় বলে উপস্থাপন করেছে, এবং সন্তর্পণে প্রতিবেশী দেশ ভারত বা মিয়ানমারের সামরিক শক্তির উন্নয়নের ব্যাপারগুলিকে এড়িয়ে গিয়েছে। এরা তৈরি করেছে সামরিক-বেসামরিক বিভেদ। সমাজের প্রভাবশালী মহলের মাঝ থেকে কেউ যেন সামরিক বাহিনী সদস্য হয়ে না যায়, তারা সেটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছে। এমন একটা চিন্তা দেয়ার চেষ্টা করেছে যে 'ভালো ঘরের ছেলেপেলার মিলিটারিতে কেন যাবে'!!

বাংলাদেশের ক্যান্টনমেন্টগুলি জায়গা নষ্ট করছে বলে একজন তথাকথিত মানবাধিকারকর্মী সাংবাদিক সন্মেলন করে বলেন যে, "বাংলাদেশে জমির দাম সাংঘাতিক। জমি তো সোনার চেয়েও দামি বাংলাদেশে।... এতো বিশাল জমি তাদের আবাসনের জন্য কেন দরকার? হাজার হাজার একর জমি তারা নিয়ে নিয়েছে তাদের বাসস্থানের জন্য। - কেন?" তাদের কথায়, সেনানিবাস প্রতিষ্ঠার নামে একের পর এক বসত ভিটা, কৃষিজমি, বনভূমি, জলাধার বেআইনিভাবে বেহাত হচ্ছে। দেশের প্রতিরক্ষার উন্নয়নের চাইতে দেশের সেকুলার সাংস্কৃতিক উন্নয়ন (নাচ-গান-কবিতা আবৃত্তি) তাদের কাছে সর্বদাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ ঠেকেছে। আরেক দল আবার পরিবেশ আন্দোলনের নাম করে জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন প্রজেক্টের উন্নয়ন কর্মকান্ডকে (বিদ্যুৎকেন্দ্র, স্ট্র্যাটেজিক শিল্পকারখানা) বাধাগ্রস্ত করতে "পরিবেশ দূষণ"এর নামে আদালতে মামলা করে কাজের স্থগিতাদেশ নিয়ে এসেছে। আবার সামরিক ক্রয়ের কথা শুনলেই পত্রিকায় এর বিরুদ্ধে বিবৃত দিয়েছে এরা। "স্বচ্ছতার অভাব"এর কথা বলে সামরিক ক্রয় বাধাগ্রস্ত করতে চেয়েছে বারংবার। তথাকথিত দূর্নীতি-বিরোধী সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়েছে যে "সামরিক খাতে বাংলাদেশের দুর্নীতির ঝুঁকি রয়েছে। জাতীয় নিরাপত্তা-সম্পর্কিত গোপন বিষয়গুলো সম্পর্কে সংসদে যেমন কোনো তথ্য প্রকাশ করা হয় না, তেমনি নিরাপত্তা খাতের বার্ষিক হিসাবের নিরীক্ষা প্রতিবেদন নিয়েও কোনো বিতর্কের প্রমাণ মেলে না।"

এজেন্টরা বাংলাদেশকে ঘোরের মাঝে রেখে দুর্বল করেছে

এই ঔপনিবেশিক এজেন্টদের রাষ্ট্রবিরোধী কর্মকান্ডের কারণে বাংলাদেশের সাথে তার প্রতিবেশী দেশগুলির সামরিক দিক থেকে বিরাট অসামঞ্জস্যতার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ধারও অনেক কমে গেছে। কূটনৈতিক ভাষার পেছনে সামরিক শক্তি যে প্রচ্ছন্ন হুমকি বহণ করে, সেটা অন্য কিছুতে সম্ভব নয়। বাংলাদেশ যে এক্ষেত্রে তার প্রতিবেশীদের থেকে পিছিয়ে আছে, তা সীমান্ত হত্যা, সীমান্ত প্রহরার বাহিনীর মাঝে গোলা বিনিময়, সমুদ্র ও আকাশাসীমা লংঘন, ইত্যাদি ঘটনায় মোটামুটি পরিষ্কার। মিয়ানমারের সাথে রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুদের নিয়ে সাম্প্রতিক উত্তেজনাকে মিয়ানমার গুরুত্ব দেয়নি একেবারেই। একে তো মিয়ানমার যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে, অন্যদিকে চীন এবং রাশিয়াও যে কিছু বলবে না, সেটা মিয়ানমার জানে। একইসাথে তারা এটাও টের পেয়েছে যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী মিয়ানমারকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করবে না। যেকারণে রাখাইনে সামরিক অভিযান তারা চালিয়েই গেছে।
  


নিজ দেশে তৈরি মিয়ানমার নৌবাহিনীর অত্যাধুনিক ফ্রিগেট 'সিন-ফায়ু-সিন'। নৌবাহিনীর স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিক থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশের চাইতে বহু বছর এগিয়ে আছে। যতদিনে বাংলাদেশ ৫০মিটারের পদ্মা-ক্লাসের প্যাট্রোল বোট তৈরি শুরু করেছে, ততোদিনে মিয়ানমার ১০৬মিটার স্টেলথ ফ্রিগেট তৈরিতে বেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশে তৈরি 'দুর্জয়'-ক্লাসের জাহাজগুলি এখনো অপারেশনাল হয়নি; অথচ মিয়ানমারের স্টেলথ ফ্রিগেটগুলি অলরেডি কমিশন্ড হয়ে গেছে।


মিয়ানমার নৌবাহিনী - বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশকে সরাসরি চ্যালেঞ্জ করেছে

মিয়ানমারের সামরিক উন্নয়ন তাদের নেতৃত্বের আত্মবিশ্বাস বাড়িয়ে দিয়েছে। ইতোমধ্যেই মিয়ানমার তার সামরিক ইন্ডাস্ট্রিকে বেশ ভালোই উন্নয়ন করেছে। নিজেদের সামরিক গাড়ি বানানো ছাড়াও নৌবাহিনীর জন্যে ফ্রিগেট, কর্ভেট, ওপিভি, মিসাইল বোট, টর্পেডো বোট এবং ল্যান্ডিং ক্রাফট তৈরি করছে তারা। '৯০-এর দশকের শুরুতে যখন দ্বিতীয়বারের মতো রোহিঙ্গা সমস্যা শুরু হয়, তখনই তারা বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে ব্যালান্স করার নিমিত্তে যুদ্ধজাহাজ তৈরি শুরু করে। ১৯৯৬ সাল থেকে ২০১২ সালের মাঝে তারা ৪৫ মিটার লম্বা ২০টি যুদ্ধজাহাজ তৈরি করেছে যেগুলির ১১টি সজ্জিত হয়েছে চীনে তৈরি সি-৮০২ সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল দিয়ে। শুধু তা-ই নয়, এগুলির অনেকগুলিরই নিজস্ব বিমান-প্রতিরক্ষা রয়েছে। 'ইগলা' সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দেখা যায় এগুলির অনেকগুলির উপরেই।

মিয়ানমার ‘আনাওইয়াহতার’-ক্লাসের ৭৭ মিটার লম্বা দু'টা কর্ভেটও বেশ আগেই তৈরি করেছে। পরে সেগুলিকে আরও উন্নত করেছে; মিসাইল-সজ্জিত করেছে সেগুলি। তাদের বানানো ফ্রিগেট 'অং জে ইয়া', ‘কায়ান সিথথার’ এবং 'সিন-ফায়ু-সিন' আর ৪৯ মিটার লম্বা মিসাইল বোটের ডিজাইন দেখলে বিশ্বাস করা দুষ্কর যে সেগুলি মিয়ানমারের মত তৃতীয় বিশ্বের একটা দেশে তৈরি। ৮০মিটার লম্বা লেটেস্ট কর্ভেট 'তাবিনশয়েতি' এবং নতুন তৈরি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেলও লেটেস্ট ডিজাইন ফলো করেছে। এগুলির প্রায় সকল জাহাজেই জাহাজ-ধ্বংসী সারফেস-টু-সারফেস মিসাইল বসানো হয়েছে। শুধু ১৭টা মিসাইল বোটেই বসানো রয়েছে ৫৬টা সি-৮০২ মিসাইল। ৫টা ফ্রিগেটে ৪০টা, ৩টা কর্ভেটে ১২টা মিসাইল এবং ৪৯মিটারের মিসাইল বোটে আরও ৪টা; মোট কমপক্ষে ১১২টা মিসাইল। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর ৪টা গাইডেড-মিসাইল ফ্রিগেট বহন করে ৩২টা মিসাইল; ৬টা কর্ভেট-এলপিসি বহন করে ২৪টা মিসাইল; আর পুরোনো ৯টা মিসাইল বোট বহন করে ২৬টা মিসাইল; মোট ৮২টা মিসাইল। বলা বাহুল্য যে নৌবাহিনীর স্বয়ংসম্পূর্ণতার দিক থেকে মিয়ানমার বাংলাদেশের চাইতে বহু বছর এগিয়ে আছে। যতদিনে বাংলাদেশ ৫০মিটারের পদ্মা-ক্লাসের প্যাট্রোল বোট তৈরি শুরু করেছে, ততোদিনে মিয়ানমার ১০৬মিটার স্টেলথ ফ্রিগেট তৈরিতে বেশ অনেকদূর এগিয়ে গেছে। বাংলাদেশে তৈরি 'দুর্জয়'-ক্লাসের জাহাজগুলি এখনো অপারেশনাল হয়নি; অথচ মিয়ানমারের স্টেলথ ফ্রিগেটগুলি অলরেডি কমিশন্ড হয়ে গেছে। মিয়ানমার চীনের কাছ থেকেও টাইপ ০৫৩-এর দু'টা ফ্রিগেট কিনেছে। মিসাইল বোট এবং অনান্য বোটও কিনেছে। এখন ভারত চাইছে মিয়ানমারের কাছে অফশোর প্যাট্রোল বোট বিক্রি করতে। মিয়ানমার সাবমেরিন কেনার চেষ্টাতেও আছে। আর সেটা কিনে ফেললে বাংলাদেশের আর কোন এডভান্টেজ থাকছে না মিয়ানমার নৌবাহিনীর সাথে।
   






মিয়ানমারের বিমান প্রতিরক্ষা বাংলাদেশ বিমান বাহিনীকে দূরে রাখবে 

বিমান প্রতিরক্ষায় মিয়ানমার আরও বেশি এগিয়ে বাংলাদেশ থেকে। বাংলাদেশের সবে-ধন নীলমণি ৮টা মিগ-২৯ বিমান মিয়ানমারের ৩১টা মিগের সাথে কতটা প্রতিযোগিতা দিতে সক্ষম হবে, তা নিয়ে যে কেউ আলোচনা করবেন। মিয়ানমার আকাশ-প্রতিরক্ষার জন্যে মিডিয়াম রেঞ্জের (৩০ থেকে ৫০কিঃমিঃ) রুশ Pechora-2M (S-125/SA-3), রাশিয়ার Kvadrat-M (Buk-M1) এবং চীনের KS-1/HQ-12 বিমান-ধ্বংসী সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল মোতায়েন করেছে। শর্ট রেঞ্জের Igla-S (SA-24) মিসাইল দিয়েও ভরিয়ে ফেলেছে সেনাবাহিনী। ২০০০ সালের শুরুতেই মিয়ানমার Myanmar Integrated Air Defence System (MIADS) প্রতিষ্ঠা করে। ২০১০ সালে সারাদেশে অপটিক্যাল ফাইবার নেটওয়ের্কের সাথে যুক্ত হয় এই এয়ার ডিফেন্স সিস্টেম, যার ফলে মিয়ানমারের সকল বিমানবন্দর, বিমান ইউনিট, রাডার ইউনিট, এয়ার ডিফেন্স মিসাইল এবং আর্টিলারি-সহ বিমান প্রতিরক্ষার সকল কিছু একটা সিস্টেমের অন্তর্গত হয়।

মিয়ানমার যদিও বহুকাল যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মাঝে ছিল, তদুপরি সে কিন্তু তার বিমান প্রতিরক্ষাকে কেবল সাম্প্রতিক সময়েই উন্নত করেছে; এবং এখনও উন্নত করে যাচ্ছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি বেশ মডার্ন এবং মোবাইল। যেকোন সময়ে দরকারে যেকোন স্থানে মোতায়েন করা যায়।  মিয়ানমারের এই বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিপক্ষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটারগুলিকে পাঠালে কয়েকটা বিমান হারানোটা অসম্ভব কিছু ছিল না। তখন বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার দুর্বলতার সর্বোচ্চ অবস্থা সকলের কাছে বেরিয়ে যেতো।  


২০১৫ সালের এই ছবিতে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর চীনে তৈরি মিডিয়াম-রেঞ্জের KS-1/HQ-12 বিমান-ধ্বংসী সারফেস-টু-এয়ার মিসাইল দেখা যাচ্ছে। মিয়ানমার যদিও বহুকাল যুক্তরাষ্ট্রের হুমকির মাঝে ছিল, তদুপরি সে কিন্তু তার বিমান প্রতিরক্ষাকে কেবল সাম্প্রতিক সময়েই উন্নত করেছে; এবং এখনও উন্নত করে যাচ্ছে। এয়ার ডিফেন্স সিস্টেমগুলি বেশ মডার্ন এবং মোবাইল। যেকোন সময়ে দরকারে যেকোন স্থানে মোতায়েন করা যায়।  মিয়ানমারের এই বিমান-প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিপক্ষে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ফাইটারগুলিকে পাঠালে কয়েকটা বিমান হারানোটা অসম্ভব কিছু ছিল না। তখন বাংলাদেশের আকাশ প্রতিরক্ষার দুর্বলতার সর্বোচ্চ অবস্থা সকলের কাছে বেরিয়ে যেতো। 


মিয়ানমার সেনাবাহিনী - পুরোপুরি ডিফেন্সিভ

মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেশ ভালো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বহু বছর মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে তাদের অভিজ্ঞতা কম হয়নি। তবে তাদের পুরো সেনাবাহিনীই মোটামুটিভাবে কাউন্টার ইনসার্জেন্সিতে এক্সপার্ট; এবং ওটাই তারা পারে। 

৩০০-এর বেশি লাইট ইনফ্যান্ট্রি ব্যাটালিয়ন রয়েছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীতে, যার একেকটার সদস্যসংখ্যা ৫০০-এর মতো। ১৪টা রিজিওনাল কমান্ড এবং ১০টা লাইট ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন (১০টা ব্যাটালিয়নে একটা ডিভিশন) অধীনে এই ব্যাটালিয়নগুলি সারাদেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে। দেশকে বহু খন্ডে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়া থেকে বাঁচানোই এদের উদ্দেশ্য। আশেপাশের দেশে অপারেশন চালাবার মতো সক্ষমতা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর নেই। তাদের বাহিনী পুরোপুরিই ডিফেন্সিভ। এক অঞ্চল থেকে অন্য অঞ্চলে সৈন্য পাঠানোটা নির্ভর করবে একেক অঞ্চলের বিচ্ছন্নতাবাদীদের সাথে যুদ্ধের অবস্থার প্রেক্ষিতে।

সাম্প্রতিক সময়ে এর বাইরে তারা যে সক্ষমতাগুলি অর্জন করেছে তার মধ্যে মূল হলো আর্টিলারি, সাঁজোয়া ইউনিট এবং এয়ার ডিফেন্স। এগুলি ইনসার্জেন্সিতে যতটা না বেশি ব্যবহৃত হবে, তার চাইতে বেশি ব্যবহৃত হবে আশেপাশের প্রতিবেশীদের ভয় দেখিয়ে দূরে রাখতে। একসময় শুধুমাত্র চীনের ছত্রছায়ায় থাকার সময়ে মিয়ানমার সবসময়েই ভয়ে থাকতো যে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো কখনো তাদের উপরে সামরিক হামলা করে বসবে। তবে অং সান সু কি-র ক্ষমতায় আসার পর থেকে মিয়ানমারের সেই ভয়টুকু নেই। তবে আশেপাশের দেশগুলির (চীন, থাইল্যান্ড, ভারত) ইন্ধনপ্রাপ্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীরা রয়েই গেছে। তাদের রয়েছে বিশাল সুগঠিত সামরিক বাহিনী। এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করতে গিয়েই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী হয়েছে এক্সপার্ট। তবে বাইরের যেকোন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।

প্রায় ৪৫০-এর মতো ট্যাঙ্ক মিয়ানমারের সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে সক্ষম। এর মাঝে ৫০টা চীনের MBT-2000, ১২০টার মতো ইউক্রেনের T-72S, ৮০টার মতো চীনা Type 69-II, ১৬০এর মতো চীনা Type 59D, এবং ৫০টার মতো চীনা Type 63 লাইট ট্যাঙ্ক। এর সাথে রয়েছে হাজার খানেকের মতো আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার, ১৮০-২০০-এর মতো সেলফ-প্রপেল্ড আর্টিলারি এবং একটা বড় সংখ্যক টানা আর্টিলারি। সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে মিয়ানমার সেনাবাহিনী সফলভাবে এই আর্টিলারির ব্যাপক ব্যবহার করেছে।
  

মিয়ানমার সেনাবাহিনীর T-72S ট্যাঙ্ক। মিয়ানমারের সেনাবাহিনী বেশ ভালো অভিজ্ঞতাসম্পন্ন। বহু বছর মিয়ানমারের বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর সাথে যুদ্ধ করতে করতে তাদের অভিজ্ঞতা কম হয়নি। তবে তাদের পুরো সেনাবাহিনীই মোটামুটিভাবে কাউন্টার ইনসার্জেন্সিতে এক্সপার্ট; এবং ওটাই তারা পারে। তবে বাইরের যেকোন সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে কঠিন প্রতিরোধ গড়ার ক্ষমতা তাদের রয়েছে।


মিয়ানমারের দুর্বল ভূকৌশলগত অবস্থান - বাংলাদেশ কিছুই করতে পারলো না!

মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে অভ্যন্তরীণ বিচ্ছিন্নতাবাদীদের থেকে দেশ বাঁচাতে ডিফেন্সিভ-ভাবে তৈরি করা হয়েছে। আর ভৌগোলিকভাবে দুর্বল অবস্থানে থাকায় আরাকানে খুব একটা সহজে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর সেনা মোতায়েন সম্ভব নয়। তবে আরাকানকে ধরে রাখার যথেষ্ট সক্ষমতা মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর আছে, যদি অন্য সার্ভিসগুলি তাদের ঠিকমতো সহায়তা করে।

অন্যদিকে মিয়ানমারের বিমান প্রতিরক্ষার বেশিরভাগটাই মিয়ানমারের পক্ষে আরাকান এবং এর আশেপাশে মোতায়েন করা সম্ভব; কারণ এগুলি বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে কমই ব্যবহৃত হয়। মিয়ানমার নৌবাহিনীর বেলাতেও একই কথা। এই অবস্থানে পরিবর্তন আসতে পারে যদি মিয়ানমারের দক্ষিণে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে দাঁড়ায়। তাহলে মিয়ানমার তার বিমান এবং নৌবাহিনীর পুরোটা একত্রে মোতায়েন করতে সক্ষম হবে না।

তবে মূল কথা হলো, মিয়ানমার অত্যন্ত দুর্বল ভূকৌশলগত অবস্থানে থেকেও বাংলাদেশ মিয়ানমারকে কোন রকম ভীতি প্রদর্শন করতেই সক্ষম হলো না। মিয়ানমার জানে যে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর পক্ষে মিয়ানমারকে চ্যালেঞ্জ করা সম্ভব নয়। আর একইসাথে কূটনৈতিক অঙ্গনে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত-চীন-রাশিয়া সকলেই মিয়ানমারকে সমর্থন দিয়েছে। রোহিঙ্গাদের প্রায় সকলকেই সমূলে উৎপাটন করার দৃশ্য তথাকথিত বিশ্ব-নেতৃত্ব উপভোগ করেছে। বাংলাদেশের নাকের ডগা দিয়ে নরেন্দ্র মোদি মিয়ানমার গিয়ে স্ট্র্যাটেজিক চুক্তি করে আসলেন। আর তুরস্কের এরদোগান কৌশলগত দিক থেকে কোন সমর্থন না দিয়ে তার পত্নীর চোখের পানিতে তার কর্মসম্পাদন করলেন। পাকিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের এজেন্টরা বাংলাদেশকে যুদ্ধবিমান না দিয়ে দিলেন মিয়ানমারকে! ইন্দোনেশিয়া যুদ্ধজাহাজ না পাঠিয়ে পাঠালো পররাষ্ট্রমন্ত্রীকে, আর মালয়েশিয়া পাঠালো শুধুমাত্র ত্রাণ।
   

চোখের পানি, ত্রাণসামগ্রী, আর "মানবতার আহ্বান"এ মিয়ানমার চাপ বোধ করবে না। জাতিসংঘে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আর চীন-রাশিয়ার মারামারি দেখার সময় নেই কারুর। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের কূটনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মালদ্বীপের মতো হতে পারে না। সুশীলদের "চাপে" প্রতি বছর দুই ফোঁটা করে সামরিক বাজেট বৃদ্ধির দিন শেষ! 'ব্লু ইকনমি', 'ম্যারিটাইম নেশন', ফোর্সেস গোল-২০৩০' - এগুলি বাকওয়াজ হয়ে থাকবে, যদি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যকে কাপড় খুলে লুঙ্গি পড়িয়ে অপমান করা হয় বা ১৭ বার কোন বাধা ছাড়াই আকাশসীমা লঙ্গন করা হয়। ভিক্ষাবৃত্তি আর অপমান হজম করা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমরশক্তির উন্নয়নের চাইতে বেশি আকর্ষণীয় হলো কবে থেকে?


সুশীলদের শান্তিপূর্ণ নীতি পরিহার করার সময়ে এসেছে 

চোখের পানি, ত্রাণসামগ্রী, আর "মানবতার আহ্বান"এ মিয়ানমার চাপ বোধ করবে না। জাতিসংঘে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ভারত আর চীন-রাশিয়ার মারামারি দেখার সময় নেই কারুর। এখন সময় এসেছে বাংলাদেশের কূটনীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনার। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রনীতি মালদ্বীপের মতো হতে পারে না। বাংলাদেশ তার নিজের পররাষ্ট্রনীতির ফলকে ভারত-চীনের হাতেও তুলে দিতে পারে না। যুক্তরাষ্ট্রের ক্রীড়ণক হয়ে সকলের দ্বারে দ্বারে ভিক্ষাবৃত্তিও করতে পারে না। তবে তার সামরিক শক্তিকে সত্যিকার অর্থে বলীয়ান করে সারা বিশ্বকে তার অবস্থান জানান দিতে পারে। সুশীলদের "চাপে" প্রতি বছর দুই ফোঁটা করে সামরিক বাজেট বৃদ্ধির দিন শেষ! এভাবে এগুলে ভারত খুব সহজেই মিয়ানমারকে দিয়েই বাংলাদেশকে ব্যালান্স করে রাখবে চিরকাল। 'ব্লু ইকনমি', 'ম্যারিটাইম নেশন', ফোর্সেস গোল-২০৩০' - এগুলি বাকওয়াজ হয়ে থাকবে, যদি বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীর সদস্যকে কাপড় খুলে লুঙ্গি পড়িয়ে অপমান করা হয় বা ১৭ বার কোন বাধা ছাড়াই আকাশসীমা লঙ্গন করা হয়। ভিক্ষাবৃত্তি আর অপমান হজম করা বাংলাদেশের মানুষের কাছে সমরশক্তির উন্নয়নের চাইতে বেশি আকর্ষণীয় হলো কবে থেকে?

8 comments:

  1. চিন্তার বিষয়!!!!

    ReplyDelete
  2. মায়ানমার তাদের সামরিক শক্তি বাড়াতে গিয়ে তাদের দেশকে অনেক দিক দিয়ে পিছিয়ে রেখেছে৷

    ReplyDelete
    Replies
    1. মিয়ানমারকে পিছিয়ে রেখেছে শক্তিশালী দেশগুলি - মূলত চীন এবং যুক্তরাষ্ট্র। মিয়ানমার চীনের সীমান্তে অবস্থিত, তাই চীন সেখানে তার প্রভাব রাখতে সবরকম প্রচেষ্টা চালাবে। আর যুক্তরাষ্ট্র চাইবে চীনের সীমান্তে হানা দিতে; ঠিক আফগানিস্তানে যেমন রাশিয়ার সাথে প্রথমে ব্রিটিশ এবং পরে মার্কিনীদের সংঘাত হয়েছে।

      মিয়ানমারে এই দুই শক্তিশালী রাষ্ট্রের দ্বন্দ্ব মিয়ানমারকে জাতিগত যুদ্ধের কেন্দ্রে পরিণত করেছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠনগুলিকে সামরিক, অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিচ্ছে চীন, থাইল্যান্ড এবং ভারত। আর দেশকে একত্রে ধরে রাখতে মিয়ানমারকে সামরিক দিকে বেশি চিন্তা করতে হয়েছে। আর চীন তার প্রভাব ধরে রাখার জন্যে মিয়ানমারের সামরিক সরকারকে অস্ত্র এবং রাজনৈতিক সহায়তা দিয়েছে এতকাল। এখন ভারতও মিয়ানমারে অস্ত্র বিক্রি করছে অং সান সু কি-কে বন্ধু ধরে। মিয়ানমার কার কার সাথে সম্পর্ক রাখবে, সেটাও নির্ধারিত হচ্ছে চীন-যুক্তরাষ্ট্রের এই দ্বন্দ্বে দ্বারা। একটা রাষ্ট্র অন্য রাষ্ট্রের দ্বারা এমনভাবে বাঁধা থাকলে সেই দেশ কি করে এগুবে? কাজেই সামরিক শক্তি নয়, বরং চীন-মার্কিন ভূরাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে মিয়ানমারের এই অবস্থা।

      Delete
  3. সাবেক বিডিয়ার মহাপরিচালক বলেছেন, রোহিংগাদের ট্রেনিং, অস্ত্র দিয়ে আরাকানে যুদ্ধ করতে পাঠিয়ে আরাকান স্বাধীন করার ব্যবস্থা করা এবং পরবর্তীতে আরাকান বাংলাদেশের সংযুক্ত করা৷
    এ ব্যাপারে আপনার মত কি ??? আপনি কি ওনার সাথে একমত ???

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধরনের সমাধান দেয়া হচ্ছে বিভিন্ন দিক থেকে। এই সমাধানগুলির সুবিধা-অসুবিধা বুঝতে হলে এগুলির চিন্তার ভিত্তি নিয়ে কথা বলতে হবে। আপনার কমেন্টের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা এর আগের আরেকটা পোস্টে আলোচনা করা হয়েচে, যা আপনি দেখে নিতে পারেনঃ
      http://koushol.blogspot.com/2017/09/unchained-myanmar-drowning-bangladesh.html

      Delete
  4. চায়নার সাহায্য নিয়ে উওর কোরিয়ার মত মিয়ানমারও হয়ত একদিন পারমানবিক বোমা বানাবে আর আমরা মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হবো!!

    ReplyDelete
    Replies
    1. বার্মা ইতিমধ্যেই নিজেস্ব পারমানবিক বোমা ও মিসাইল কর্মসূচী নিয়ে বহুদুর অগ্রসর হয়ে গেছে। তার প্রতিবেশী রাস্ট্রসমূহ এমনকি পাশ্চাত্য দেশসমূহ ও এ ব্যপারে অবগত। কিন্তু বার্মার এইসব কর্মসূচী তাদেরকে উদ্বিগ্ন করে না কারন স্বার্থের কাছে সবকিছুই মাটি।

      বাংলাদেশকে মোকাবেলা করতে হবে একইসাথে বার্মা, চীন, ভারত, রাশিয়া ও যুক্তরাস্ট্রকে। সুতরং আমাদেরকে গায়ের জোরের চেয়ে কৌশলে কাজ করতে হবে যাতে সাপ ও মরে এবং লাঠি ও না ভাংগে। আমাদের কুটনৈতিকরা বা পলিসি প্রনয়নকারীরা কেরানীর কাজে যতটা পাদদর্শী ঠিক ততটাই আনকোড়া ২০ শতকের কৌশলগত ভূ-রাজনৈতিক চ্যালন্জ মোকাবেলার করার ক্ষেত্রে। তারা দূরদৃষ্টিসম্পন্ন নন এবং এক্ষেত্রে গবেষনায় তেমন হয় না।

      আমাদের নিজেদের শক্তিমত্ত্বার জায়গা চিহ্নিত করার পাশাপাশি শত্রুশিবিরের দূর্বলতার জায়গাগুলি ও খুজে বের করতে হবে। সেইসব মাথায় রেখেই আমাদের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা করতে হবে। খন্ডিত আরাকান নয় বরং আমাদের পুরা আরাকান নিয়েই পরিকল্পনা করতে হবে। আমাদের গোয়েন্দা সামর্থ্যকে আধুনিক প্রযুক্তির সুবিধা দিয়ে ঢেলে সাজাতে হবে।

      Delete