Monday 7 February 2022

মধ্যপ্রাচ্যের ক্ষুদ্র দেশ কাতারের বড় কূটনৈতিক কর্মকান্ডের উদ্দেশ্য কি?

০৮ই ফেব্রুয়ারি ২০২২

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে ওয়াশিংটনে বৈঠক করছেন কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানি। কাতারের বিশাল হাইড্রোকার্বন সম্পদকে ব্যবহার করে পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখছে। ইউরোপে কাতারের এলএনজি সরবরাহ করে রুশ গ্যাসকে প্রতিস্থাপন করার বাইডেনের পরিকল্পনাও এরই অংশ। ছোট্ট কাতারের বিরাট আকারের কূটনৈতিক কর্মকান্ডও মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে। তবে অর্ধশতাব্দী আগে সূক্ষ্ম ব্রিটিশ পরিকল্পনায় তৈরি কাতারের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ ব্রিটেনেরও প্রভাব বৃদ্ধি।

 
গত ২৭শে জানুয়ারি মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কাতারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, কাতার এবং তুরস্ক আফগানিস্তানের ক্ষমতাসীন তালিবান সরকারের সাথে কাবুল বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনার ব্যাপারে একটা সমঝোতায় পৌঁছেছে। এর চারদিন পর ৩১শে জানুয়ারি কাতার বলে যে, তাদের সাথে তালিবান সরকারের এক সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে, যার মাধ্যমে আফগানিস্তান থেকে যারা চলে যেতে চায়, তাদের জন্যে নতুন করে কাতার এয়ারওয়াজের চার্টার করা বিমানের ফ্লাইট চালু করা হবে। আফগানিস্তান থেকে মার্কিনীদের পলায়নের পর থেকে কয়েক মাস ধরে তালিবানদের সাথে সমঝোতা না হওয়ায় এই ফ্লাইট বন্ধ ছিল। এই চুক্তির ফলে আফগানিস্তানে আটকে পড়া হাজারো পশ্চিমা নাগরিক এবং আফগানিস্তানে মার্কিন বাহিনীকে সহায়তা দেওয়া হাজারো আফগানদেরকে দেশ থেকে সরিয়ে ফেলা যাবে। কাতারের উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুলরহমান আল থানি ওয়াশিংটনে মার্কিন মিডিয়া ‘এক্সিওস’এর সাথে এক সাক্ষাতে এই কথাগুলি প্রকাশ করেন। উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী কাতারের আমির শেখ তামিম বিন হামাদ আল থানির সাথে ওয়াশিংটন সফর করছিলেন। শেখ তামিম হলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের প্রশাসনের সময়ে ওয়াশিংটন সফর করা মধ্যপ্রাচ্যের প্রথম নেতা। সফরকালে বাইডেন কাতারকে ন্যাটোর বাইরে ১৭টা প্রধান মিত্র দেশের মাঝে একটা বলে ঘোষণা দেন। ‘আল মনিটর’ বলছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রনীতিকে এগিয়ে নিতে কাতারের বড় ভূমিকার জন্যেই প্রেসিডেন্ট বাইডেন কাতারকে এই সন্মাননা দিয়েছেন। এর মাঝে কাতারের সবচাইতে বড় ভূমিকা ছিল আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পলায়নের সময় দোহার সমর্থন। মার্কিনীদের সাথে তালিবানদের আলোচনার মূল মাধ্যমই ছিল কাতার। নিজেদের আকারের তুলনায় কাতারের বিশাল কূটনৈতিক কর্মকান্ডের কারণে দেশটা নাম সাম্প্রতিক সময়ে বিভিন্ন ভূরাজনৈতিক আলোচনায় উঠে আসছে।

গত ২২শে জানুয়ারি বার্তাসংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’ মার্কিন কর্মকর্তাদের বরাত দিয়ে বলে যে, বাইডেন শেখ তামিমকে ওয়াশিংটনে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এই আমন্ত্রণের একটা গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য ছিল ইউক্রেনে রাশিয়ার সামরিক হামলা হলে পশ্চিমা অবরোধের মুখে রাশিয়া যদি ইউরোপে গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করে দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের জ্বালানি সমস্যাকে কিভাবে মোকাবিলা করবে। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, মার্কিন সরকারের জ্যেষ্ঠ উপদেষ্টা আমোস হোকস্টাইন প্রধানতম তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজি উৎপাদনকারী কোম্পানি এবং দেশের সাথে আলোচনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন। কাতার হলো বিশ্বের সবচাইতে বড় এলএনজি উৎপাদনকারী দেশগুলির একটা। তবে দেশটার বেশিরভাগ এলএনজিই পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে রপ্তানি হয়ে থাকে। অপরদিকে ইইউএর দেশগুলি তাদের ৪০ শতাংশ গ্যাসের সরবরাহের জন্যে রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল; যেকারণে ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের দেশগুলিকে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার বিরুদ্ধে একত্রিত করতে পারছে না।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘মিডলইস্ট ইন্সটিটিউট’এর এক লেখায় ‘কাতার ইউনিভার্সিটি’র এসোসিয়েট প্রফেসর নিকোলে কোজানভ বলছেন যে, বাইডেনের এবং তামিমের পরিকল্পনা সফল হলে কাতার ইউরোপের গ্যাসের বাজারে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান নিতে পারে; যার ফলশ্রুতিতে কাতার অনেক ক্ষেত্রেই রাশিয়াকে প্রতিস্থাপিত করতে পারবে। ২০২১এর শেষের দিকে ব্রিটেনের জ্বালানি সংকটের সময় কাতার পূর্ব এশিয়ায় এলএনজি পাঠানো স্থগিত করে ব্রিটেনকে সহায়তা দেয়। এর ফলে ব্রিটেন কাতারকে সন্মাননা জানিয়ে ‘দুর্যোগের সময়ের সরবরাহকারী’ বলে আখ্যা দেয় এবং একটা গোপন চুক্তি করে। ওয়াশিংটনের সাথে কাতারের সখ্যতা বাড়লে তা কাতারকে বাড়তি নিরাপত্তা দেবে। প্রায় তিন বছর ধরে কাতারকে সৌদি আরবের নেতৃত্বে থাকা মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি অবরোধ দিয়ে রেখেছিল; যা কিনা কাতারকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ট করতে অনুপ্রাণিত করবে।

 
অতি ক্ষুদ্র কাতারকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে ব্রিটেন একটা পশ্চিমা নির্ভরশীল রাষ্ট্র জন্ম দিয়েছিল। এখনও দেশটার বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকেরা কাজ করছে। ব্রিটেনে কাতারের বিশাল বিনিয়োগও রয়েছে। ছোট্ট দেশটার উপর অপর পশ্চিমা বন্ধু সৌদি আরবের হুমকির কারণে কাতার সর্বদাই পশ্চিমা সামরিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল।

২০০৩ সালে ইরাক আক্রমণের সময় মার্কিনীরা মধ্যপ্রাচ্যে তাদের প্রধান সামরিক ঘাঁটি সৌদি আরবের ‘প্রিন্স সুলতান এয়ার বেইস’ থেকে কাতারের আল উদাইদ বিমান ঘাঁটিতে সরিয়ে নেয়। যুক্তরাষ্ট্রকে এই ঘাঁটি দেয়ার মাধ্যমে কাতার তার বড় প্রতিবেশী সৌদি আরব থেকে নিজেকে রক্ষা করে। তবে কাতারের এই চিন্তা নতুন নয়। ঊনিশ শতক থেকেই কাতারের আল থানি পরিবার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলের আগ্রাসন থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে ব্রিটেনকে আলিঙ্গন করে। ১৯১৬ থেকে কাতারের নিরাপত্তা ছিল ব্রিটেনের হাতে। ১৯৭১ সালে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে কাতারের ঘোষণা দেয় ব্রিটেন। সেসময় থেকে নিজের নিরাপত্তা নিশ্চিতে সবসময়ই ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল রয়েছে কাতার। মাত্র ৩ লক্ষ জনগণের কাতারের পক্ষে নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ একটা অবাস্তব চিন্তাই বটে। সামরিক বাহিনী এবং সরকারি বহু কাজে বিদেশীদের উপর নির্ভর করে কাতার। দেশটায় ২৩ লক্ষ মানুষের বিশাল এক বিদেশী কর্মীদল কাজ করে, যারা সেদেশের নাগরিকদেরকে সংখ্যালঘিষ্ঠ করে ফেলেছে। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘চ্যাটহ্যাম হাউজ’এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, নিজের নিরাপত্তাহীনতাকে কাটাতেই কাতার বাস্তবতাকে পুঁজি করে তার কূটনৈতিক কর্মকান্ডকে প্রাধান্য দিয়েছে; যাতে করে পশ্চিমাদের কাছে কাতারের গুরুত্ব অনেক বেশি থাকে। একারণেই মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকার বিভিন্ন সংঘাতে কাতার মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা নিয়েছে। অনেকেই মনে করেন যে, কাতার তার নিরাপত্তা নিশ্চিতে বিভিন্ন স্থানে জঙ্গীগোষ্ঠীকে সমর্থন দিয়েছে। তবে কাতার জঙ্গীগোষ্ঠীদের সাথে সম্পর্ক রাখার কারণেই মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা নিতে পেরেছে। উদাহরণ হিসেবে তালিবানের সাথে আলোচনায় কাতারের মধ্যস্ততা উল্লেখযোগ্য।

অতি ক্ষুদ্র কাতারকে আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার মাধ্যমে ব্রিটেন একটা পশ্চিমা নির্ভরশীল রাষ্ট্র জন্ম দিয়েছিল। এখনও দেশটার বহু গুরুত্বপূর্ণ পদে ব্রিটেন এবং অন্যান্য দেশের নাগরিকেরা কাজ করছে। ব্রিটেনে কাতারের বিশাল বিনিয়োগও রয়েছে। ছোট্ট দেশটার উপর অপর পশ্চিমা বন্ধু সৌদি আরবের হুমকির কারণে কাতার সর্বদাই পশ্চিমা সামরিক সহায়তার উপর নির্ভরশীল। এলএনজি রপ্তানি করে অর্জিত বিপুল অর্থ পশ্চিমা অস্ত্র কেনায় ব্যবহৃত হলেও সেগুলি চালনা করার মতো জনবল কাতারের নেই। স্বল্প জনসংখ্যার কারণে কাতারকে তার সামরিক এবং সরকারি জনবলের অনেকটাই বাইরে থেকে নিয়ে আসতে হয়। আবার কাতারের বিশাল হাইড্রোকার্বন সম্পদকে ব্যবহার করে পশ্চিমারা বিশ্বব্যাপী জ্বালানি বাজারের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখছে। ইউরোপে কাতারের এলএনজি সরবরাহ করে রুশ গ্যাসকে প্রতিস্থাপন করার বাইডেনের পরিকল্পনাও এরই অংশ। ছোট্ট কাতারের বিরাট আকারের কূটনৈতিক কর্মকান্ডও মধ্যপ্রাচ্য, আফ্রিকা এবং আফগানিস্তানে পশ্চিমাদের স্বার্থকেই রক্ষা করেছে। তবে অর্ধশতাব্দী আগে সূক্ষ্ম ব্রিটিশ পরিকল্পনায় তৈরি কাতারের গুরুত্ব বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ ব্রিটেনেরও প্রভাব বৃদ্ধি।

4 comments:

  1. তাহলে কাতার হল পুরোপুরি ভাবে পশ্চিমা আদর্শিক দেশগুলির স্যাটেলাইট / ভ্যাসাল স্টেট?
    পূর্বে ব্রিটেন, বর্তমানে ইউএস ভবিষ্যতে হয়ত গ্লোবাল ব্রিটেন এর স্বার্থ রক্ষা করে চলছে/চলবে!
    কিন্তু কাতার বিভিন্ন জঙ্গি গোষ্ঠীর সংগে যোগাযোগ ও আছে, তাহলে কি বলা যায় যে এরা কিছুটা হলেও স্বাধীন চিন্তা ধারী?

    কাতারের আফগানিস্তানে মূল উদ্দেশ্য কি?
    মাষ্টারদের স্বার্থ রক্ষা? নাকি নিজের স্বার্থ চরিতার্থ করা?, যদি থাকে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা সুন্দর প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ!

      কাতার মূলতঃ ব্রিটিশ অনুসারী; প্রথম থেকে এখনও তাই। তারা ব্রিটিশ চিন্তাধারাকে ধারণ করেই আল জাজিরার অফিসের পাশেই মার্কিন ঘাঁটি তৈরি করতে দিয়েছে। একইসাথে তারা ইরানের সাথে সম্পর্ক রেখেছে; হামাসকে অর্থায়ন করেছে; নিজেরা ওয়াহাবি হয়েও লিবিয়ার যুদ্ধে মুসলিম ব্রাদারহুডপন্থীদের সহায়তা দিয়েছে; সোমালিয়াতে অর্থায়ন করেছে; সিরিয়াতেও জড়িয়েছে; আর আফগানিস্তানতো রয়েছেই। তুরস্ককে কাতারে সামরিক ঘাঁটি করতে দিয়েছে। এর কোনটাই আদর্শিক ভিত্তি থেকে করা হয়নি; সবগুলিই বাস্তবতা-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত। বাস্তবতা পরিবর্তিত হলে সিদ্ধান্তও পরিবর্তিত হয়ে গেছে। যেমন নিজেদের দেশে মুসলিম ব্রাদারহুডকে অফিস করতে দিয়েছে; কিন্তু সেখান থেকে সৌদি আরব বা বাহরাইনে তাদেরকে অপারেট করতে দেয়নি। মিশররের ব্রাদারহুডপন্থী মুরসির সরকারকে সমর্থন দিয়েছে; কিন্তু অভ্যুত্থানের পর সিসির সামরিক সরকারকে সরাসরি মেনে নিয়েছে। এখন আবারও সৌদি আরব এবং আমিরাতের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে ফেলেছে। অস্ত্র কেনার ব্যাপারেও শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল থাকেনি।

      ব্রিটিশরাই কাতারের এহেন ভূমিকা ঠিক করে দিয়েছে। ১৯৬১ সালে কুয়েত ব্যতীত বাহরাইন, কাতার এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের জন্ম ১৯৭১ সালে। সবগুলি দেশই ছোট এবং সমুদ্রঘেঁষা। ব্রিটিশরা এই বন্দর অঞ্চলগুলিকে আলাদা রাষ্ট্র বানিয়ে সেগুলিকে সৌদি আরব, ইরাক এবং ইরানের মতো বড় রাষ্ট্রের হুমকির মাঝে রেখেছে; যাতে তারা সবসময়ই বাইরের সমর্থনের উপর নির্ভরশীল থাকে। তবে আরও নির্দিষ্ট করে বলতে গেলে রাষ্ট্রগুলি নয়, বরং তাদের নেতৃত্বে থাকা পরিবারগুলি নিজেদের রক্ষা করতে পশ্চিমাদের উপর নির্ভর করেছে। তারা কোথায় কি কাজ করবে, সবকিছুই পশ্চিমা উপদেশের উপর নির্ভর করেছে।

      আফগানিস্তানেও কাতার ব্রিটিশ স্বার্থকেই তুলে ধরেছে। তালিবানদের বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন করার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কাতারের মূল্য বহুগুণে বেড়ে গেছে। এখানে দেশটার আকার মোটেই মূখ্য ভূমিকা পালন করেনি। আফগানিস্তান থেকে আসা বিমানগুলি কাতারেই অবতরণ করেছে; সেখানে লাখখানেক মানুষকে স্বল্প সময়ের জন্যে থাকতে দিয়েছে; যার অনুমতি অন্য কোন দেশই দেয়নি। এই কাজগুলির জন্যে তারা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক কাছে চলে গেছে। এভাবে তারা সুপারপাওয়ারের সাথে একটা বারগেইনিং অবস্থানে গেছে। এর সুবিধা ব্রিটিশরাই পাবে।

      Delete
    2. ধন্যবাদ।
      সৌদি-আরব আমিরাত আর কাতার, এদের সকলেরই মাস্টার ইউএস/ব্রিটিশরা।
      অথচ কাতার যেখানে "জংগী" দের সাপোর্ট দেয়, সেখানে সৌদি গংরা দেয়না।
      এই বিষয়টি একটু বলবেন।

      আর কুয়েতকে কি সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে ইরাক শক্তিশালী না হয়ে ওঠে?

      মধ্যপ্রাচ্যে, প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর দেশগুলি যে গজিয়ে ওঠে/সৃষ্টি করা হয়(যেমন-সাইক্সপিকো চুক্তি), এর প্রভাব চল্মান বিশ্ব(অ)ব্যবস্থা বজায় রাখতে কতটা ভুমিকা গ্রহন করেছে?

      Delete
    3. সৌদিরা ওসামা বিন লাদেনকে আফগানিস্তানে যুদ্ধ করার জন্যে সহায়তা দিয়েছে। পরবর্তীতে বিন লাদেন যখন সৌদি সরকারের বিরুদ্ধে চলে যায়, তখন সেই সৌদিদের শত্রুতে পরিণত হয়। সিরিয়াতে সৌদিরা অনেক গ্রুপকে অর্থ ও সামরিক সহায়তা দিয়েছে সিআইএএর সহায়তায়। সেই গ্রুপগুলির অনেকগুলিই এখন জঙ্গী গোষ্ঠী বলে অনেকের কাছেই পরিচিত। ইয়েমেনের হুথি বিদ্রোহীদেরকেও যুক্তরাষ্ট্র জঙ্গী আখ্যা দিয়েছিল। বাইডেন এসে সেটা উঠিয়েও নিয়েছিলেন। তিনি এখন আবার বলছেন যে, হুথিদেরকে আবারও সন্ত্রাসী বলবেন। কাজেই এসব সংজ্ঞার মাঝে ঘুরপাক খাওয়াটা অযৌক্তিক।

      মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলি ব্রিটেন তৈরি করেছে তাদের নিজস্ব উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের উদ্দেশ্যে। ছোট রাষ্ট্রগুলি সর্বদাই পশ্চিমের উপর নির্ভরশীল থাকবে। আর বড় রাষ্ট্রগুলিকে আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী সীমানা মেনে চলতে বাধ্য করা হবে। এই বাধ্যবাধকতা নিশ্চিত করতে মধ্যপ্রাচ্যে পশ্চিমা সামরিক শক্তি মোতায়েন থাকবে। এটাই হলো আন্তর্জাতিক ব্যবস্থা। ব্রিটেন এটা ডিজাইন করেছে।

      কুয়েতকে ইরাক কয়েকবার হামলার পরিকল্পনা করেছিল। সেসময় ব্রিটেন কুয়েতকে রক্ষার ছুতোয় পারস্য উপসাগরে, বিশেষ করে বাহরাইন ও ইয়েমেনে সামরিক শক্তি মোতায়েন রেখেছিল। ১৯৭১ সালে ব্রিটেনের প্রস্থানের পর যুক্তরাষ্ট্র পারস্য উপসাগরের নিয়ন্ত্রণ নেয়। ১৯৭৯ সাল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের পারস্য উপসাগরে সামরিক শক্তি মোতায়েনের ছুতো ছিল ইরান। আর ১৯৯০ সাল থেকে ছুতো হয়ে যায় ইরাক। ২০০১ সাল থেকে ছুতো হয়ে যায় আল কায়েদা। ২০১৪ সাল থেকে ছুতো হয় আইসিস। ২০১৭ সালের পর থেকে এই ছুতো আবারও ইরান। তবে চীনের চাপে এখন এই ছুতোর উপর যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্ব কম দিতে চাইছে। অত্র অঞ্চলের দেশগুলির সম্পদকে ব্যবহার করেই কাজ সারতে চাইছে। নতুন করে আবার সামরিক শক্তি মোতায়েনের পক্ষপাতি নয় তারা। স্বল্প খরচে প্রভাব ধরে রাখার চেষ্টা আরকি। তবে সেটা এখন সকলেই বুঝে ফেলেছে।

      যুক্তরাষ্ট্র যখন মধ্যপ্রাচ্য থেকে নিজের শক্তি সরিয়ে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করছে, তখন ব্রিটেন পারস্য উপসাগরে আবারও স্থায়ীভাবে ফিরে এসেছে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্থানে মধ্যপ্রাচ্যের উত্তেজনাকে ব্রিটেন একটা সুযোগ হিসেবে দেখছে। সে এই এলাকার রাজনীতিকে নতুন করে সাজাতে চাইছে। আরব-ইস্রাইলি সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ, তুরস্ক-সৌদি আরব এবং সৌদি-কাতার সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণ এরই অংশ।

      Delete