Sunday 12 September 2021

ইউক্রেন … আফগানিস্তানের পর…

১২ই সেপ্টেম্বর ২০২১

ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট দলদিমির জেলেনস্কি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে বিচলিত করেছে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সাথে থাকবে, সেব্যাপারে তারা নিশ্চিত হতে পারছে না। আর বাইডেন প্রশাসনের নীতি পাল্টাবার কারণে ইউক্রেন আরও বেশি সন্দিহান হয়েছে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের ব্যাপারে। এরূপ অবস্থায় ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নগামী প্রভাবকে কিছুটা হলেও প্রতিস্থাপিত করার জন্যে অন্যান্য শক্তিদের সুযোগ সৃষ্টি হবে; যার মাঝে ব্রিটেন এবং তুরস্ক অন্যতম।


ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেনস্কি ওয়াশিংটনে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ করে এসেছেন। অনেকেই এতে ইউক্রেনের নিরাপত্তায় যুক্তরাষ্ট্রের সহায়তার ব্যাপারে আশা দেখলেও এই সফর ছিল সমস্যায় পরিপূর্ণ। বাইডেন জেলেনস্কিকে বলেন যে, গত বছরের ৪’শ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তার পর এবছর আরও ৬০ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র। ‘বিবিসি’ বলছে যে, দুই বছর আগে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জেলেনস্কির কাছে শর্ত দিয়েছিলেন যে, যদি ইউক্রেন সরকার ঘোষণা দেয় যে, মার্কিন প্রেসিডেন্সিয়াল নির্বাচনে প্রার্থী জো বাইডেনের বিরুদ্ধে তদন্ত চলছে, তাহলে জেলেনস্কি ট্রাম্পের সাথে দেখা করতে পারবেন এবং সামরিক সহায়তা পাবেন। জেলেনস্কি ট্রাম্পের কথা না শুনলেও বাইডেনের দেখা পাওয়াটা জেলেনস্কির জন্যে মোটেও সহজ হয়নি। জেলেনস্কির সফরে বাইডেনের সাথে সাক্ষাৎ দুইবার পিছাতে হয়েছিল; কারণ বাইডেন মার্কিনীদের কাবুল ছেড়ে আসার শেষ মুহুর্তটা তদারকি করতে ব্যস্ত ছিলেন। জেলেনস্কি ‘বিশ্ব এবং যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে কঠিন সময়ে’ তাকে সাক্ষাৎ দেবার জন্যে বাইডেনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। ‘বিবিসি’ বলছে যে, অন্যান্য বিশ্ব নেতার মতো জেলেনস্কিও দুশ্চিন্তায় রয়েছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের আফগানিস্তান ছেড়ে আসাটা বিশ্বব্যাপী মার্কিনীদের দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কি বার্তা বহণ করবে। আর কতটাই বা বিশ্বাস করা যায় যে, যুক্তরাষ্ট্র তার বন্ধুদের রক্ষা করবে?

জেলেনস্কির যুক্তরাষ্ট্র গমনের আগেই মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ব্রুকিংস ইন্সটিটিউশন’এর সিনিয়র ফেলো স্টিভেন পাইফার এক লেখায় বলেন যে, ইউক্রেনের উচিৎ যুক্তিযুক্ত আশা নিয়ে ওয়াশিংটন যাওয়া। তিনি বলছেন যে, বাস্তবতা হলো, ন্যাটো রাশিয়াকে এড়িয়ে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না। তাই ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্যপদ পাবার ব্যাপারে আশা করলে ভুল করবে। ন্যাটো সদস্যপদ পাবার জন্যে যেসকল শর্ত রয়েছে, সেগুলি ইউক্রেন পূরণ করতে থাকুক। পরবর্তীতে যখন একটা সুযোগ সৃষ্টি হবে, তখন ইউক্রেন সদস্যপদের দাবি তুলতে পারবে। কিয়েভের নেতৃত্বকে বুঝতে হবে যে, ওয়াশিংটনের সাথে বার্লিন বা ব্রাসেলসের দ্বন্দ্ব ইউক্রেনের জন্যে ভালো হবে না। যদিও রাশিয়া থেকে জার্মানি পর্যন্ত বল্টিক সাগরের তলদেশ দিয়ে তৈরি হওয়া ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইনের কারণে ইউক্রেনই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে যাচ্ছে। বরং ইউক্রেন বলতে পারে যে, ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনকে রাশিয়া যেন ইউক্রেনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে না পারে, সেই লক্ষ্য যুক্তরাষ্ট্র এবং জার্মানি যেন ইউক্রেনের পক্ষে থাকে। ইউক্রেনের জ্বালানি নিরাপত্তা নিরসনে তারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনা চালিয়ে যেতে পারে। আর ইউক্রেনের বাজার উন্মুক্তকরণ, আইনের শাসন কায়েম, ব্যবসায়ীদের প্রভাব কর্তন এবং দুর্নীতি দমনের ব্যাপারে যথেষ্ট প্রতিশ্রুতি নিয়ে আসতে পারলেই জেলেনস্কি যুক্তরাষ্ট্রে তার সমর্থক পাবেন।

 

রুশ আমেরিকান সাংবাদিক ভ্লাদিস্লাভ দাভিদজন ‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলছেন যে, এই সাক্ষাৎ এসেছে যুক্তরাষ্ট্র গুরুত্বের দিক থেকে জার্মানিকে ইউক্রেনের উপর স্থান দেবার পর। ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ গ্যাস পাইপলাইন তৈরির উপর বাইডেন প্রশাসন আর কোন নিষেধাজ্ঞা না দেবার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইউক্রেনকে বাইপাস করে তৈরি করা এই পাইপলাইন ইউক্রেনের জন্যে অনেক বড় ইস্যু। এতে ইউক্রেনের জ্বালানি নিরাপত্তা ব্যহত হবে। তবে যে ব্যাপারটা নিয়ে ইউক্রেনিয়ানরা সবচাইতে বেশি চিন্তিত তা হলো আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের চলে আসার ব্যাপারটা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্কের ক্ষেত্রে কি বয়ে আনবে। আফগানিস্তান থেকে সরে আসার সময় বাইডেন আফগানদের উপরেই দোষ দিয়েছিলেন, যে আফগানরা নিজেদের জনগণকে রক্ষা করার জন্যে যুদ্ধ করেনি। ইউক্রেনিয়ানরা এই ব্যাপারটা ভালো চোখে দেখেনি।

দাভিদজন বলছেন যে, ট্রাম্প প্রশাসনের নীতি নিয়ে অনেকেই বিরক্তি প্রকাশ করলেও বাইডেন প্রশাসনের শুরুতেই আফগানিস্তান থেকে অপরিকল্পিতভাবে সরে আসাটা অনেক বড় একটা পররাষ্ট্রনীতির ব্যর্থতা। ইউক্রেনে অনেকেই মনে করছেন যে, যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বগুলি থেকে অব্যাহতি নিয়ে রাশিয়ার সাথে সংঘাত কমিয়ে ফেলতে চাইছে; যাতে করে তার মূল প্রতিদ্বন্দ্বী চীনকে মোকাবিলা করা সহজ হয়। ওয়াশিংটনের সিদ্ধান্তের ব্যাপারে সন্দিহানরা ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেবার ব্যাপারে ন্যাটোর দুর্বল বক্তব্যকে তুলে ধরছেন। প্যারিস এবং বার্লিনকে পক্ষে না পেয়ে বাইডেন প্রশাসন ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগদান করার ব্যাপারটা নিয়ে এগুতে চাইছে না। কারণ ইউক্রেনের ন্যাটোতে যোগ দেয়াটা রাশিয়া হুমকি হিসেবে দেখতে পারে। গত জুনে বাইডেন এবং পুতিনের শীর্ষ বৈঠকের ঠিক আগে আগে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের জন্যে ১’শ মিলিয়ন ডলারের সামরিক সহায়তা স্থগিত করে। ওয়াশিংটন বলছে যে, মার্কিন সহায়তা পাবার জন্যে যেসকল সংস্কার করার শর্ত দেয়া হয়েছিল, সেগুলি পূরণে ইউক্রেন যথেষ্ট যত্নবান নয়। অপরদিকে ইউক্রেনিয়ানরা মনে করছে যে, দেশের একটা অংশ যখন অন্য দেশের দখলে রয়েছে আর সেখানে কয়েক হাজার ইউক্রেনিয়ান যুদ্ধে নিহত হয়েছে, তখন তাদের কাছে জাতীয় নিরাপত্তা দূর্নীতির চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

‘বিবিসি’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ওবামা প্রশাসনের ভাইস প্রেসিডেন্ট থাকার সময়ে বাইডেন ইউক্রেনের সার্বভৌমত্ব রক্ষার ব্যাপারে শক্ত ভূমিকা নিয়েছিলেন। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হবার পর তার সিদ্ধান্তগুলির ব্যাপারে ভলদিমির জেলেনস্কি সাবধানে পা ফেলবেন। বাইডেন বলেছেন যে, আফগানিস্তান থেকে সরে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র তার ভবিষ্যতের হুমকিগুলি মোকাবিলা করায় মনোযোগী হতে পারবে; যার মাঝে রয়েছে রাশিয়া। তবে জেলেনস্কি ফিরে গিয়ে দেখতে চাইবেন যে, কার্যক্ষেত্রে তা কতটুকু। ইউক্রেনের পত্রিকা ‘ইউক্রেনস্কা প্রাভদা’ এক সম্পাদকীয়তে বলছে যে, যেই ট্রাম্পের বিরুদ্ধে কথা উঠেছিল যে, তিনি রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক ভালো করতে চাইছিলেন, সেই ট্রাম্পের কাছ থেকেই বর্তমানের চাইতে বেশি সমর্থন পেয়েছে ইউক্রেন।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘জেমসটাউন ফাউন্ডেশন’এর এক লেখায় পূর্ব ইউরোপ বিশ্লেষক ভ্লাদিমির সকর বলছেন যে, আগে থেকেই মানা করে দেয়া থাকলেও জেলেনস্কি ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদের ইস্যুটা বাইডেনের সাথে আলোচনায় তুলেছেন। এবং পরবর্তীতে ইউক্রেনের মিডিয়াকে তিনি বলেন যে, তিনি যথেষ্ট সময় নিয়ে ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ পাবার জন্যে শর্তসমূহ নিয়ে কথা বলেছেন। জেলেনস্কি ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনের ব্যাপারেও কথা বলেছেন; এবং তিনি বলেছেন যে, এই পাইপলাইনের ব্যাপারে মার্কিন সরকারের নীতি তাদের নিজেদের অন্যান্য নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। জেলেনস্কি তার জনগণকে বলেছেন যে, বাইডেন তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইনকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করলে যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর অবরোধ আরোপ করবে। কিন্তু মার্কিন দিক থেকে এব্যাপারে কোন নিশ্চয়তা আসেনি। হয়তো এটা দুই দেশের মাঝে আরও একটা ভুলবোঝাবুঝি। কিয়েভকে প্রমাণ করতে হবে যে, ইউক্রেনকে সমর্থন দেয়াটা ইউরো আটলান্টিক স্বার্থের জন্যে অত্যাবশ্যকীয়; এবং ইউক্রেন নিজে যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বন্ধু হবার জন্যে যথেষ্ট শক্তিশালী।

ইউক্রেনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের শর্তযুক্ত সহায়তা কিয়েভের নেতৃত্বকে যুক্তরাষ্ট্রের বিকল্প খুঁজতে অনুপ্রাণিত করবে। গত বছর অক্টোবরে ব্রিটেন ইউক্রেনের সাথে রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি করে। এই চুক্তির মাধ্যমে দুই দেশ নিয়মিতভাবে কৌশলগত আলোচনায় বসবে এবং ব্রিটেন থেকে ইউক্রেনে রপ্তানির ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের অর্থায়ন করার সুযোগ থাকবে। এরপর গত জুন মাসে ব্রিটেন ইউক্রেনের নৌবাহিনীর উন্নয়নে সহায়তা দেবার জন্যে এক চুক্তি করে। প্রায় একই সময়ে ব্রিটিশ রয়াল নেভির একটা যুদ্ধজাহাজ রাশিয়ার দখলকৃত ক্রিমিয়ার কাছাকাছি রুশ নৌবাহিনীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে একটা স্বল্প সময়ের উত্তেজনাও তৈরি করতে সক্ষম হয়। ব্রিটেন ছাড়াও ইউক্রেনের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করছে তুরস্ক। গত ৭ই সেপ্টেম্বর তুরস্কের ‘আরএমকে ম্যারিন’ শিপইয়ার্ডে ইউক্রেনের নৌবাহিনীর জন্যে একটা কর্ভেট তৈরি করা শুরু হয়। ইউক্রেনের নৌবাহিনী প্রধান রিয়ার এডমিরাল ওলেকসি নাইঝপাপা সেই অনুষ্ঠানে বলেন যে, তুরস্কের সাথে সকল চুক্তি নির্ধারিত সময়ের মাঝে বা নির্ধারিত সময়ের আগেই শেষ হয়েছে। উদারহরণস্বরূপ তিনি তুরস্কের ‘বায়রাকতার টিবি ২’ মনুষ্যবিহীন বিমান ড্রোনের কথা উল্লেখ করেন; যেগুলি বর্তমানে ইউক্রেনের রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করছে। ২০২০ সালের অক্টোবরে খবরে প্রকাশ করা হয় যে, ইউক্রেন তুরস্কের কাছ থেকে ৪৮টা ড্রোন কেনার পরিকল্পনা করছে। এর মাত্র কয়েক মাস পরেই এবছরের এপ্রিলে ‘বায়রাকতার টিবি ২’ ড্রোন ইউক্রেনের পূর্বের ডনবাস অঞ্চলে পরীক্ষামূলকভাবে উড়তে থাকে। আর জুলাই মাসে ইউক্রেনের নৌবাহিনী প্রথম ড্রোনগুলির ডেলিভারি হাতে পায়। এভাবে নিরাপত্তা ইস্যুতে অতি দ্রুত ডেলিভারি দেয়ার মাধ্যমে তুরস্ক ইউক্রেনের গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত সহযোগী হবার চেষ্টা করছে। ইউক্রেনের সামরিক কর্মকর্তারাও তাদের কথায় সেই ব্যাপারটাকেই তুলে ধরছেন।

ভলদিমির জেলেনস্কি যেসব ইস্যুকে ওয়াশিংটন নিয়ে যেতে চাইছিলেন, সেসব কোন ইস্যুই বাইডেন প্রশাসন আলোচনা করতে চাইছিলো না। ‘নর্ড স্ট্রিম ২’ পাইপলাইন ইস্যু ওয়াশিটনের কাছে বার্লিনকে বন্ধু হিসেবে ধরে রাখার ইস্যু। আবার ন্যাটোকে কার্যকর রাখার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্স এবং জার্মানির ইচ্ছাকে এড়িয়ে যেতে পারছে না। তাই ইউক্রেনের ন্যাটো সদস্যপদ সোনার হরিণই থেকে যাচ্ছে। তদুপরি ন্যাটো সদস্যপদ পাবার নিশ্চয়তা না দিলেও যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনের সংস্কারের উপর চাপ দিচ্ছে, যা কিনা কিয়েভের নেতৃত্বকে অবাক করছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার সিদ্ধান্ত ইউক্রেনকে বিচলিত করেছে এবং ভবিষ্যতে যুক্তরাষ্ট্র যে ইউক্রেনের সাথে থাকবে, সেব্যাপারে তারা নিশ্চিত হতে পারছে না। আর বাইডেন প্রশাসনের নীতি পাল্টাবার কারণে ইউক্রেন আরও বেশি সন্দিহান হয়েছে ওয়াশিংটনের দীর্ঘমেয়াদি সমর্থনের ব্যাপারে। এরূপ অবস্থায় ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নগামী প্রভাবকে কিছুটা হলেও প্রতিস্থাপিত করার জন্যে অন্যান্য শক্তিদের সুযোগ সৃষ্টি হবে; যার মাঝে ব্রিটেন এবং তুরস্ক অন্যতম।

2 comments:

  1. ২০১৬ সালে তুরস্কে একটা ব্যর্থ অভ্যুত্থান ঘটে। এই ব্যর্থ অভ্যুত্থান তুরস্কের অভ্যন্তরীণ, বৈদেশিক এবং সামরিক নীতিতে কিরুপ ঝাকুনি দেয়। এবং এই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের প্রভাব বা ফলাফল বর্তমানে কোথায় পরিলক্ষিত হচ্ছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আলোচনার সাথে সমন্বয় করে প্রশ্ন করবেন বলে আশা করবো।

      যাই হোক, তুরস্কের সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থান তুরস্ককে বড় পরিবর্তনগুলির জন্যে তৈরি করেছে। বিশেষ করে তুরস্ক বুঝতে পেরেছে যে, যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘমেয়াদে তুরস্কের বিপক্ষেই যাবে। ঐ সময়ের পর থেকেই তুরস্ক গুরুত্বপূর্ণ সামরিক প্রযুক্তিগুলি নিজেরা ডেভেলপ করতে শুরু করে। তুরস্কের বিমান বাহিনীর 'এফ ১৬' বিমানগুলি সেই ব্যর্থ অভ্যুত্থানের সময় টার্গেট করা যায়নি তুরস্কের ন্যাটো সদস্যপদের জন্যে। একারণেই তুরস্ক রাশিয়া থেকে 'এস ৪০০' বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা কিনেছে। যদিও তুরস্ক জানতো যে, এর ফলে তাকে 'এফ ৩৫' হারাতে হবে।

      তুরস্ক সেই পথেই এগুচ্ছে, যেই পথে এগুলে যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের সাথে সংঘাত অপরিহার্য। আপাততঃ তুরস্ক এখনও চিন্তাগত দিক থেকে বাস্তববাদিতার চারিদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। বাস্তবতাকে মেনে নিয়েই সে এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক প্রযুক্তি থেকে বঞ্চিত হতে চাইছে না। কিন্তু খুব বেশি সময় নেই, যখন তুরস্ক তার 'এফ ১৬' বিমানগুলিকে নিজেদের প্রযুক্তি দিতে আপগ্রেড করতে বাধ্য হবে।

      Delete