Tuesday 14 September 2021

গণতন্ত্রের ‘পোস্টারচাইল্ড’ আবি আহমেদ কি ইথিওপিয়াকে জোড়া লাগাবেন বা ভাংবেন?

১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২১

ছবিঃ জাতিগত নিধনের যে নীতি নিয়ে আবি এগিয়েছেন, তাতে ইথিওপিয়া রাষ্ট্রের ভিতটাকেই তিনি নড়বড়ে করে ফেলেছেন। উভয় পক্ষই এখন সামরিক সমাধানের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি কোন প্রকারে সেখানে যুদ্ধবিরতি হয়ও, ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের স্মৃতিগুলি ভুলে গিয়ে তারা এগুতে পারবে কি?


ইথিওপিয়ার গৃহযুদ্ধ এখন নতুন দিকে মোড় নিয়েছে। ২০২০এর নভেম্বরে শুরু হওয়া এই গৃহযুদ্ধ খুব তাড়াতাড়িই শেষ হবে বলে আশা করেছিলেন ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট আবি আহমেদ। কিন্তু সেটা তো হয়ই নি, বরং তিগ্রেরা নিজেদের অঞ্চল পুনরাধিকার করে আশেপাশের আমহারা এবং আফার অঞ্চলেও ঢুকে পড়েছে। এর উপর তিগ্রেরা এখন একা নয়। তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে দেশটার সবচাইতে বড় জাতি অরোমো। ‘অরোমো লিবারেশন আর্মি’র প্রধান কুমসা দিরিবা বলছেন যে, তাদের মাঝে একটা ব্যাপারে ঐকমত্য হয়েছে; আর তা হলো তারা একই শত্রুর মোকাবিলা করছে। বার্তা সংস্থা ‘ব্লুমবার্গ’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, আবি আহমেদ ইথিওপিয়ার রাজধানীতে ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার যে চেষ্টা করছিলেন, তা পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে। দেশটার অনেক অঞ্চলই এখন বিকেন্দ্রীকরণ চাইছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পশ্চিমা কূটনীতিবিদ বলছেন যে, এই সংঘাত দেশটার অস্তিত্বকেই বিপন্ন করতে যাচ্ছে।

১০ মাস পরেও যুদ্ধ শেষ হবার লক্ষণ নেই

‘ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইসিস গ্রুপ’এর উইলিয়াম ডেভিসন ‘আল জাজিরা’র সাথে এক সাক্ষাতে বলছেন যে, তিগ্রেরা চাইছে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের শর্তে আলোচনায় বসতে এবং একটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠন করতে। অরোমোরা সংখ্যাগরিষ্ঠ হবার কারণে তিগ্রেদের সাথে তাদের যুক্ত হবার গুরুত্ব অনেক। তবে তারা তিগ্রেদের মতো সামরিকভাবে সক্ষম কিনা, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে একটা ব্যাপার নিশ্চিত, তা হচ্ছে এই যুদ্ধের শেষ কোথায়, তা কেউই বলতে পারছে না।

অগাস্টে আবি আহমেদ একদিনের ঝটিকে সফরে তুরস্ক ঘুরে এসেছেন। তুর্কি প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগানের সাথে দেখা করে প্রতিরক্ষা এবং আর্থায়ন বিষয়ে দু’টা চুক্তি স্বাক্ষর করেন। চুক্তির সকলকিছু প্রকাশ করা না হলেও অনেকেই ধরে নিচ্ছেন যে, আবি হয়তো তুর্কি ড্রোন কেনার জন্যেই আঙ্কারা গিয়েছিলেন। ডাচ সামরিক বিশ্লেষণধর্মী ওয়েবসাইট ‘ওরিক্স’ বলছে যে, ইতোমধ্যেই ইথিওপিয়াতে ইরান এবং ইস্রাইলের অস্ত্র দেখা গিয়েছে। হয়তো সেখানে তুরস্কের ড্রোনের আবির্ভাব সময়ের ব্যাপার মাত্র।

ইথিওপিয়ার স্থিতিশীলতা পার্শ্ববর্তী সোমালিয়ার জন্যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ সোমালিয়াও ইথিওপিয়ার মতো ফেডারেল রাষ্ট্র। সোমালিয়াতে রয়েছে তুরস্কের বিরাট সামরিক ঘাঁটি। তুর্কিরা সোমালি সেনাদের ট্রেনিং দিচ্ছে। একারণে ‘হর্ন অব আফ্রিকা’য় স্থিতিশীলতা তুরস্কের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ। তুর্কিরা উভয় দেশেই ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। তুর্কি ড্রোনগুলি এর আগে সিরিয়া, লিবিয়া এবং আজেরবাইজানে যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন সম্ভব করেছিল। হয়তো ইথিওপিয়াতেও সেই প্রচেষ্টাই করবে তারা।

 

যুদ্ধ কিভাবে শেষ হতে পারে?

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর এক লেখায় প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিবিদ চার্লস এ রে মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আবি আহমেদ ১০ই অগাস্ট সাধারণ জনগণকে দলে দলে সামরিক বাহিনীতে যোগ দেয়ার আবেদন জানান। এই ঘোষণা শান্তি প্রতিষ্ঠার পক্ষে কাজ করে না। এর আগে তার সরকার জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত একতরফাভাবে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করে। কিন্তু তিগ্রেরা সেটাকে আমলে নেয়নি। আবি আহমেদ তিগ্রে অঞ্চলে কোনরূপ মানবিক সাহায্য যেতে দিচ্ছেন না। এতে যুদ্ধপিড়ীত অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছাবার যে প্রতিশ্রুতি তিনি দিয়েছিলেন, তা তিনি নিজেই ভাংছেন। আবিএর সরকার মনে করছে যে, ত্রাণের সাথে তিগ্রে অঞ্চলে অস্ত্রও পৌঁছে যাবে। ইথিওপিয়াতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত অরেলিয়া ব্রাজীল এবং ডেভিড শিনএর সাথে কথা বলে এবং অন্যান্য কূটনীতিবিদদের বক্তব্য শুনে তিনি ইথিওপিয়ার যুদ্ধ বন্ধের একটা ফর্মূলা দেবার চেষ্টা করেছেন। তিনি বলছেন যে, কেন্দ্রীয় সরকারের উচিৎ হবে তিগ্রে অঞ্চলে ত্রাণ পৌঁছতে দেয়া এবং বাণিজ্যিক কর্মকান্ড পুনরায় শুরু করার ব্যবস্থা নেয়া। যদি সরকার এটা বাস্তবায়ন করে, তাহলে তিগ্রেদের উচিৎ হবে আফার অঞ্চল থেকে সরে আসা এবং সামরিক কর্মকান্ড থামিয়ে দেয়া। অন্যান্য আঞ্চলিক মিলিশিয়াদেরও উচিৎ হবে যুদ্ধ বন্ধ করে আলোচনায় বসা। একইসাথে এরিত্রিয়ারও উচিৎ হবে ইথিওপিয়ার অভ্যন্তর থেকে তাদের সেনাবাহিনী সরিয়ে নেয়া। চার্লস রেএর প্রস্তাবগুলি আপাত দৃষ্টিতে ভালো মনে হলেও দুই পক্ষকে রাজি করানোর কাজটা কে করবে, তা নিশ্চিত নয়। আবি আহমেদ একসময় মার্কিন সরকারি সহায়তা সংস্থা ‘ইউএসএআইডি’এর প্রধান সামানথা পাওয়ারের সাথে দেখা করতে পর্যন্ত রাজি হননি। প্রকৃতপক্ষে এই যুদ্ধের গতিপথ জাতিগত নিধন ছাড়া আর কোনদিকেই যায়নি; যা সেখানকার জনগণের উপর অবর্নণীয় নির্যাতন নিয়ে এসেছে।

‘আল জাজিরা’র সাথে কথা বলতে গিয়ে মানবাধিকার সংস্থা ‘এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল’এর জেষ্ঠ্য উপদেষ্টা ডোনাটেলা রোভেরা তিগ্রে যুদ্ধে মারাত্মক মানবাধিকার লংঘনের ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরেন। তিনি বলেন যে, এই ঘটনা যুদ্ধের প্রথম দিন থেকেই চলছে এবং উভয় পক্ষই যৌন নির্যাতনকে একটা এজেন্ডা নিয়ে লড়ছে। শত্রু জাতির সর্বোচ্চ ক্ষতি এবং অপমান করাই যেন এখানে মূল উদ্দেশ্য হিসেবে দেখা দিয়েছে। তিনি আক্ষেপ করে বলেন যে, নয় মাসের যুদ্ধের পরেও আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় যখন কথাসর্বস্বই থাকছে, তখন তা বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে মারাত্মক একটা উদাহরণ তৈরি করছে। ‘ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন’এর সিনিয়র রিসার্চ ফেলো মার্টিন প্লাউট মন্তব্য করছেন যে, তিগ্রেতে মানবাধিকার লঙ্ঘনের ব্যাপারগুলি কয়েকজন কমান্ডো বা অবাধ্য ইউনিটের উপর চাপিয়ে দিলে ভুল করা হবে। এই অপরাধগুলি এতটাই ব্যাপক যে, এটা বুঝতে বাকি থাকে না যে, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কাছ থেকে অনুমতিক্রমেই এই কর্মকান্ড চালানো হচ্ছে। তিনি গণহত্যার কর্মকান্ডের জন্যে ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট আবি আহমেদ এবং এরিত্রিয়ার প্রেসিডেন্ট ইসাইয়াস আফওয়ের্কিকে সরাসরি দায়ী করেন। তিনি বলেন যে, যৌন নিপীড়ণকে একটা কৌশল ধরে নিয়ে এগুচ্ছে ইথিওপিয়া সরকার। গত নভেম্বরে যুদ্ধ শুরু হবার কিছুদিন পরেই ‘ইউএস ইন্সটিটিউট অব পিস’এর ভবিষ্যৎবাণীকে টেনে এনে তিনি বলেন যে, নয় মাস পর মনে হচ্ছে যে, রাষ্ট্র হিসেবে ইথিওপিয়ার স্থায়িত্ব নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে। এটা নিশ্চিত না হলেও এটা এখন একটা সম্ভাবনা।

 
ছবিঃ ডিসেম্বর ২০১৯। গণতন্ত্রের ‘পোস্টারচাইল্ড’ আবি আহমেদ নোবেল পুরষ্কার নিচ্ছেন। অনেক আগে থেকেই আবি আহমেদের কলঙ্কগুলি বোঝা যাচ্ছিলো, কিন্তু পশ্চিমারা হয় সেগুলি দেখেনি অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে। পশ্চিমারা তাকে খোলা চেক দিয়েছে এবং এরপর চুপ করে থেকেছে। কারণ তাকে দিয়ে বিভিন্ন আদর্শিক প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল পুরো আফ্রিকার জন্যে পশ্চিমা গণতন্ত্রের একটা উদাহরণ তৈরি করার জন্যে।


গণতন্ত্রের ‘পোস্টারচাইল্ড’

‘সিএনএন’এর এক প্রতিবেদনে বিশ্লেষণ করার চেষ্টা করা হচ্ছে যে, পশ্চিমারা কিভাবে আবি আহমেদকে ভুল বুঝে নোবেল পুরষ্কার দিয়েছে এবং সারা বিশ্বের কাছে উদাহরণ হিসেবে উপস্থাপন করেছে। ২০১৮ সালের জুলাই মাসে লস এঞ্জেলেসএর ‘ইউনিভার্সিটি অব সাউদার্ন ক্যালিফোর্নিয়া’র বাস্কেটবল স্টেডিয়ামে আবি আহমেদকে বিশাল সংবর্ধনা দেয়া হয়েছিল। সেই সংবর্ধনার আয়োজনের দায়িত্ব পড়েছিল ইথিওপিয়ার কূটনীতিক বেরহানে কিদানেমারিয়ামএর উপর। তিনি দুই দশক আগে থেকে আবি আহমেদকে চেনেন, যখন আবি ইথিওপিয়ার সামরিক ইন্টেলিজেন্সে কাজ করতেন। তবে কিদানেমারিয়ামের আরেকটা পরিচয় হলো তিনি একজন তিগ্রে। তিনি লস এঞ্জেলেসএর অনুষ্ঠানের শুরুতে স্টেজে উঠেছিলেন আবিএর ওঠার আগে। তখন গ্যালারি থেকে চিৎকার করে বলা হয় ‘তিগ্রেয়ান তুমি পোডিয়াম থেকে নেমে যাও’। তাকে আরও কিছু গালাগাল শুনতে হয়। কিন্তু আবি আহমেদ পোডিয়ামে উঠে এই গালাগালের ব্যাপারে কোন কিছুই বলেননি। কিদানেমারিয়াম মধ্যাহ্ন ভোজের সময় যখন আবিকে জিজ্ঞেস করেন যে, আবি কেন এই গালাগালের প্রতিবাদ করলেন না, তখন আবি বলেন যে, ‘এখানে তো শুদ্ধ করার কোনকিছু ছিল না’।

‘সিএনএন’ বলছে যে, অনেক আগে থেকেই আবি আহমেদের সমস্যাগুলি বোঝা যাচ্ছিলো, কিন্তু পশ্চিমারা হয় সেগুলি দেখেনি অথবা ইচ্ছাকৃতভাবে এড়িয়ে গেছে। পশ্চিমারা তাকে খোলা চেক দিয়েছে এবং এরপর চুপ করে থেকেছে। ‘আদ্দিস স্ট্যান্ডার্ড’এর প্রধান সম্পাদক সেদালে লেমা বলছেন যে, নোবেল পুরষ্কার পাবার পর আবি মনে করেছিলেন যে, তিনি যা ইচ্ছা তাই করতে পারবেন। আবিকে নোবেল পুরষ্কার দেবার ক’দিন পরে লেমা এক লেখায় বলেন যে, যে কাজটার জন্যে তাকে নোবেল পুরষ্কার দেয়া হয়েছে, অর্থাৎ এরিত্রিয়ার সাথে শান্তি চুক্তি স্বাক্ষর করা, সেই কাজটা তিগ্রেয়ানদেরকে কোণঠাসা করে ফেলেছে। ‘তিগ্রেয়ান পিপলস লিবারেশন ফ্রন্ট’ বা ‘টিপিএলএফ’ তিন দশক কঠোর হস্তে ইথিওপিয়া শাসন করেছিল; যাদের পরে আবিএর উত্থান হয়। ‘টিপিএলএফ’এর নেতৃত্বে ইথিওপিয়া এরিত্রিয়ার সাথে বহুবছর যুদ্ধ করেছে। আবি ক্ষমতায় এসেই ‘টিপিএলএফ’এর ক্ষমতা কর্তন করা শুরু করেন। বিভিন্ন অঞ্চলের জনগণ সায়ত্বশাসন চাইতে শুরু করলে আবি কঠোর ভূমিকা নিতে থাকেন। যুদ্ধের মাঝেই আবি আহমেদ নির্বাচন ডেকে বিরাট জয় পান; গুরুত্বপূর্ণ বিরোধী দলগুলি নির্বাচনে অংশ নেয়া থেকে বিরত থাকে। অনেকেই বলছেন যে, আবি এমন একটা পরিস্থিতি পেয়েছেন, যা তার নিয়ন্ত্রণের বাইরে। তিনি সেই পরিস্থিতিকে পাশ কাটিয়ে কোনকিছুই করতে পারবেন না। তাই যেসকল সংস্কারের কথা তিনি বলেছেন, সেগুলির বাস্তবায়ন কতটা বাস্তব, তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে।

কেন আবি?

আবি আহমেদের আগে অনেকেই ইথিওপিয়াতে যুদ্ধ করেছেন। কিন্তু তিনিই প্রথম ব্যক্তি, যিনি শান্তি প্রতিষ্ঠার প্রতিশ্রুতি নিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন। পশ্চিমাদের খুশি করার জন্যে সকল কিছুই তিনি বলেছেন। বিনিময়ে সেই সন্মানও তাকে পশ্চিমারা দিয়েছে। গণতন্ত্রের ‘পোস্টারচাইল্ড’ আবি আহমেদের কলঙ্কগুলি পশ্চিমারা খুব সন্তর্পণে এড়িয়ে গেছে। কারণ তাকে দিয়ে বিভিন্ন আদর্শিক প্রকল্প তারা বাস্তবায়ন করতে চেয়েছিল পুরো আফ্রিকার জন্যে পশ্চিমা গণতন্ত্রের একটা উদাহরণ তৈরি করার জন্যে। কিন্তু জাতিগত সংঘাতের পটভূমিকে তারা পুরোপুরিভাবে ভুলে গিয়েছে; যা কিনা আদর্শিক সংস্কার বাস্তবায়নকে প্রথম দিন থেকেই অবাস্তব করে ফেলেছিল। তথাপি কৌশলগতভাবে অতি গুরুত্বপূর্ণ ‘হর্ন অফ আফ্রিকা’ অঞ্চলের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশ হিসেবে ইথিওপিয়ার নিয়ন্ত্রণ পশ্চিমা দেশগুলির জন্যে অপরিহার্য। গ্রেট পাওয়ার প্রতিযোগিতার মাঝে আবিএর অধীনে একটা পশ্চিমা ধাঁচের সরকার সর্বদা পশ্চিমাদের স্বার্থই দেখবে; এটাই ছিল কৌশলগত চিন্তা। আর তাই দশ মাস ধরে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে গণহত্যা এবং যৌন নির্যাতন করার পরেও পশ্চিমারা কথাসর্বস্বই থেকেছে। আবিএর দেয়া অবরোধে তিগ্রেতে চলছে দুর্ভিক্ষ। গণতন্ত্রের ‘পোস্টারচাইল্ড’ আবি আহমেদের জন্যে পশ্চিমাদের এই নিরবতাই যেন সর্বোচ্চ সন্মান!

কিন্তু যুদ্ধের বাস্তবতা আবিকে সামরিক সহায়তার জন্যে দ্বারে দ্বারে নিচ্ছে; কারণ যত সহজে তিনি এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানবেন বলে মনে করেছিলেন, তা তার ধারেকাছেও ছিল না। সামরিক সহায়তা দেবার ক্ষেত্রে ইরান, ইস্রাইল এবং তুরস্কের নাম আসছে এক্ষেত্রে। কিন্তু সেই সহায়তাগুলি কি যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করার জন্যে যথেষ্ট হবে? তবে জাতিগত নিধনের যে নীতি নিয়ে আবি এগিয়েছেন, তাতে ইথিওপিয়া রাষ্ট্রের ভিতটাকেই তিনি নড়বড়ে করে ফেলেছেন। উভয় পক্ষই এখন সামরিক সমাধানের দিকে এগুচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হলো, যদি কোন প্রকারে সেখানে যুদ্ধবিরতি হয়ও, ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের স্মৃতিগুলি ভুলে গিয়ে তারা এগুতে পারবে কি?

No comments:

Post a Comment