১২ মার্চ ২০১৭
এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কার নাম বললে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো বলবে যে ব্যাটসম্যানদের দোষে শ্রীলঙ্কার কাছে শেষ দিনে টেস্ট ম্যাচটা হেরে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গুরুত্ব কি বাংলাদেশের কাছে এতোটুকুই? নারিকেলের মতো দেখতে সেই দ্বীপটিকে ভূগোল বইতে পড়েছে কতোজন? আজকাল ভূগোল সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান দেখতে আশ্চর্য না হয়ে পারাই যায় না। তবে ক্রিকেটের কারণেই হোক, বা অন্য কোন কারণেই হোক, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে চিন্তা এদেশের মানুষকে করতেই হবে। একুশ শতকে এসে ভারত মহাসাগরে একটি শক্তিশালী, কিন্তু দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে ভূগোল-জ্ঞান জরুরি। খুব বেশি একটা মানুষের হয়তো জানা নেই যে এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কায় খরা চলছে (যদিও গলে টেস্ট ম্যাচ খেলার মাঝে এক সেশন বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়েছিল)। গত অক্টোবর মাস থেকেই এই খরা চলছে এবং এটা গত চার দশকের মাঝে সবচাইতে বাজে খরা। আসুখ-বিসুখের মাঝ দিয়ে স্রষ্টা যেমন মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন, ঠিক তেমনি আশেপাশের মানুষকেও রুগীর সেবার মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। প্রতিবেশী অসুস্থ থাকলে তার সেবা করা, বা নূন্যপক্ষে খোঁজ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ; কারণ এই হিসেব একসময় স্রষ্টার কাছে মানুষকে দিতে হবে। ঠিক এই ব্যাপারটাই খাটে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলে মন ভালো রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর চার দশকে সবচাইতে খারাপ খরার সময় দেশটিতে যখন খাবারের সঙ্কট চলছে (চালের মূল্য কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ রূপি), তখন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বৃষ্টি না হওয়ায় হাইড্রো-পাওয়ারের উৎপাদন কমে গিয়েছে অনেকে, যেখানে দেশটি মোট বিদ্যুতের ৪০% আসে হাইড্রো থেকে। ঘাটতি পোষাতে তেলের আমদানি বাড়ছে; ফলে দেশটির সরকার বাজেট ঘাটতি পোষাতে হিমসিম খাচ্ছে।
একইভাবে বলা যায় ভারত মহাসাগরের অপর দেশ মাদাগাস্কারের। এটা হলিউডের মুভির নাম নয়; আফ্রিকার উপকূলের একটি বড় দ্বীপদেশের নাম। দেশটি সাইক্লোন “এনাও”-এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। ৫০ জনের মতো নিহত হওয়া ছাড়াও ১৮০ জন আহত হয়েছে, ৫৩ হাজার মানুষ হয়েছে ঘরবিহীন, ১ লক্ষ ৭৬ হাজার মানুষ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। দুই কোটি ৪৪ লক্ষ জনসংখ্যার দেশটির জিডিপি ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা কিনা বাংলাদেশের জিডিপির ২২ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। দরিদ্র এই দেশটির উপর দিয়ে এরকম দুর্যোগের পরে তাদের অনেক সাহায্যের দরকার। আফ্রিকার অনেক দেশের সাহায্যে বাংলাদেশ সহায়তা দিয়েছে; মোতায়েন করেছে শান্তিরক্ষীদের। ঠিক তেমনই এক অবস্থা আবারও হাজির হয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
মাত্র ক’দিন আগেই আইওআরএ-এর শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেলো ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। ঐ সংস্থার উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যগুলির মাঝে একটি হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একে অপরকে সহায়তা দেয়া। সেখানে একত্রে সবাই মিলে কথা বলে আসার পর সেটাই কাজে করে দেখাবার পালা। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া – সকলেরই এখন দায়িত্ব বর্তাচ্ছে ভারত মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলির জনগণের দরকারের সময়ে এগিয়ে আসা। এটা একটা মানবিক দায়িত্ব, যেটা করতে পারলে পুরষ্কার আসবে স্বয়ং স্রষ্টার কাছ থেকেই। শ্রীলংকা এবং মাদাগাস্কার তাকিয়ে আছে তাদের প্রকৃত বন্ধুদের দিকে; উপনিবেশ বসাতে আসা শক্তির দিকে নয়। বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া এই মানবিক কাজ করতে গেলে প্রথমেই বাধা আসবে ভারতের কাছ থেকে। কারণ ভারত আফ্রিকার দেশগুলিকে দেখে তার নব্য উপনিবেশ হিসেবে (যেমনটি সে করতে চেয়েছিল বাংলাদেশকেও)। যুক্তরাষ্ট্রও থাকবে ভারতের পক্ষেই। দিল্লী-ওয়াশিংটনের চোখ রাঙ্গানি স্রষ্টার ক্রোধের কাছে কিছুই নয়। দিল্লী শুধু কিছু সময়ই নষ্ট করতে পারবে, এর চাইতে বেশি কিছু নয়। বঙ্গোপসাগরে শুধু সাবমেরিন ভাসালেই চলবে না। প্রমাণ দিতে হবে যে সাবমেরিনের মালিকেরা সাবমেরিন চালাবার যোগ্যতা রাখে। এই যোগ্যতা ইঞ্জিনিয়ারিং যোগ্যতা নয়; দায়িত্বশীলতার যোগ্যতা। একুশ শতকে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রই হবে শক্তিশালী।
শ্রীলঙ্কার সাথে ক্রিকেট খেলে মন ভালো রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর চার দশকে সবচাইতে খারাপ খরার সময় দেশটিতে যখন খাবারের সঙ্কট চলছে (চালের মূল্য কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ রূপি), তখন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? |
এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কার নাম বললে বেশিরভাগ মানুষই হয়তো বলবে যে ব্যাটসম্যানদের দোষে শ্রীলঙ্কার কাছে শেষ দিনে টেস্ট ম্যাচটা হেরে গেল বাংলাদেশ। কিন্তু শ্রীলঙ্কার গুরুত্ব কি বাংলাদেশের কাছে এতোটুকুই? নারিকেলের মতো দেখতে সেই দ্বীপটিকে ভূগোল বইতে পড়েছে কতোজন? আজকাল ভূগোল সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান দেখতে আশ্চর্য না হয়ে পারাই যায় না। তবে ক্রিকেটের কারণেই হোক, বা অন্য কোন কারণেই হোক, শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে চিন্তা এদেশের মানুষকে করতেই হবে। একুশ শতকে এসে ভারত মহাসাগরে একটি শক্তিশালী, কিন্তু দায়িত্বশীল রাষ্ট্রে পরিণত হতে হলে ভূগোল-জ্ঞান জরুরি। খুব বেশি একটা মানুষের হয়তো জানা নেই যে এই মুহুর্তে শ্রীলঙ্কায় খরা চলছে (যদিও গলে টেস্ট ম্যাচ খেলার মাঝে এক সেশন বৃষ্টির কারণে পরিত্যাক্ত হয়েছিল)। গত অক্টোবর মাস থেকেই এই খরা চলছে এবং এটা গত চার দশকের মাঝে সবচাইতে বাজে খরা। আসুখ-বিসুখের মাঝ দিয়ে স্রষ্টা যেমন মানুষকে পরীক্ষা করে থাকেন, ঠিক তেমনি আশেপাশের মানুষকেও রুগীর সেবার মাধ্যমে পরীক্ষা করে থাকেন। প্রতিবেশী অসুস্থ থাকলে তার সেবা করা, বা নূন্যপক্ষে খোঁজ নেয়া গুরুত্বপূর্ণ কাজ; কারণ এই হিসেব একসময় স্রষ্টার কাছে মানুষকে দিতে হবে। ঠিক এই ব্যাপারটাই খাটে শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রেও। তাদের সাথে ক্রিকেট খেলে মন ভালো রাখাটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ, আর চার দশকে সবচাইতে খারাপ খরার সময় দেশটিতে যখন খাবারের সঙ্কট চলছে (চালের মূল্য কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ৯০ রূপি), তখন তাদের প্রতি সাহায্যের হাত বাড়ানোটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ? বৃষ্টি না হওয়ায় হাইড্রো-পাওয়ারের উৎপাদন কমে গিয়েছে অনেকে, যেখানে দেশটি মোট বিদ্যুতের ৪০% আসে হাইড্রো থেকে। ঘাটতি পোষাতে তেলের আমদানি বাড়ছে; ফলে দেশটির সরকার বাজেট ঘাটতি পোষাতে হিমসিম খাচ্ছে।
মাদাগাস্কারের। দেশটি সাইক্লোন “এনাও”-এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। ৫০ জনের মতো নিহত হওয়া ছাড়াও ১৮০ জন আহত হয়েছে, ৫৩ হাজার মানুষ হয়েছে ঘরবিহীন, ১ লক্ষ ৭৬ হাজার মানুষ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। দরিদ্র এই দেশটির উপর দিয়ে এরকম দুর্যোগের পরে তাদের অনেক সাহায্যের দরকার। আফ্রিকার অনেক দেশের সাহায্যে বাংলাদেশ সহায়তা দিয়েছে; মোতায়েন করেছে শান্তিরক্ষীদের। ঠিক তেমনই এক অবস্থা আবারও হাজির হয়েছে বাংলাদেশের সামনে। |
একইভাবে বলা যায় ভারত মহাসাগরের অপর দেশ মাদাগাস্কারের। এটা হলিউডের মুভির নাম নয়; আফ্রিকার উপকূলের একটি বড় দ্বীপদেশের নাম। দেশটি সাইক্লোন “এনাও”-এর আঘাতে লন্ডভন্ড হয়ে গিয়েছে। ৫০ জনের মতো নিহত হওয়া ছাড়াও ১৮০ জন আহত হয়েছে, ৫৩ হাজার মানুষ হয়েছে ঘরবিহীন, ১ লক্ষ ৭৬ হাজার মানুষ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। দুই কোটি ৪৪ লক্ষ জনসংখ্যার দেশটির জিডিপি ১০ বিলিয়ন ডলারেরও কম, যা কিনা বাংলাদেশের জিডিপির ২২ ভাগের এক ভাগের চেয়েও কম। দরিদ্র এই দেশটির উপর দিয়ে এরকম দুর্যোগের পরে তাদের অনেক সাহায্যের দরকার। আফ্রিকার অনেক দেশের সাহায্যে বাংলাদেশ সহায়তা দিয়েছে; মোতায়েন করেছে শান্তিরক্ষীদের। ঠিক তেমনই এক অবস্থা আবারও হাজির হয়েছে বাংলাদেশের সামনে।
মাত্র ক’দিন আগেই আইওআরএ-এর শীর্ষ বৈঠক হয়ে গেলো ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায়। ঐ সংস্থার উল্লেখযোগ্য লক্ষ্যগুলির মাঝে একটি হলো দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় একে অপরকে সহায়তা দেয়া। সেখানে একত্রে সবাই মিলে কথা বলে আসার পর সেটাই কাজে করে দেখাবার পালা। বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া – সকলেরই এখন দায়িত্ব বর্তাচ্ছে ভারত মহাসাগরের অপেক্ষাকৃত দুর্বল রাষ্ট্রগুলির জনগণের দরকারের সময়ে এগিয়ে আসা। এটা একটা মানবিক দায়িত্ব, যেটা করতে পারলে পুরষ্কার আসবে স্বয়ং স্রষ্টার কাছ থেকেই। শ্রীলংকা এবং মাদাগাস্কার তাকিয়ে আছে তাদের প্রকৃত বন্ধুদের দিকে; উপনিবেশ বসাতে আসা শক্তির দিকে নয়। বাংলাদেশ-ইন্দোনেশিয়া-মালয়েশিয়া এই মানবিক কাজ করতে গেলে প্রথমেই বাধা আসবে ভারতের কাছ থেকে। কারণ ভারত আফ্রিকার দেশগুলিকে দেখে তার নব্য উপনিবেশ হিসেবে (যেমনটি সে করতে চেয়েছিল বাংলাদেশকেও)। যুক্তরাষ্ট্রও থাকবে ভারতের পক্ষেই। দিল্লী-ওয়াশিংটনের চোখ রাঙ্গানি স্রষ্টার ক্রোধের কাছে কিছুই নয়। দিল্লী শুধু কিছু সময়ই নষ্ট করতে পারবে, এর চাইতে বেশি কিছু নয়। বঙ্গোপসাগরে শুধু সাবমেরিন ভাসালেই চলবে না। প্রমাণ দিতে হবে যে সাবমেরিনের মালিকেরা সাবমেরিন চালাবার যোগ্যতা রাখে। এই যোগ্যতা ইঞ্জিনিয়ারিং যোগ্যতা নয়; দায়িত্বশীলতার যোগ্যতা। একুশ শতকে দায়িত্বশীল রাষ্ট্রই হবে শক্তিশালী।
বন্ধুরা তাকিয়ে আছে কিন্ত আমরা কতটা হাত বাড়াচ্ছি বা প্রস্তত আছি বাড়াতে?
ReplyDeleteসেটা চিন্তা করাটাই তো আসল ব্যাপার...
Delete