Wednesday, 15 March 2017

বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক কোন দিকে যাচ্ছে?

১৫ মার্চ ২০১৭
http://i.ndtvimg.com/mt/2015-01/barackObama_NarendraModi_hug_650_afp.jpg
সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ভারত ধীরে ধীরে আবারও পশ্চিমমুখী হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় থেকে এই প্রসেস শুরু হলেও মূল কাজ শুরু হয় নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে। বারাক ওবামাকে অতি-উতসাহে জড়িয়ে ধরে মোদি সারা বিশ্বে কাছে সেই বার্তাটাই দিয়েছিলেন। ২০১৭ সালে মার্কিনীরা দুর্বল হয়ে যাবার পরে ভারত “প্রভুহীনতা”য় ভুগছে। মার্কিনীরা ভারতকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি সত্যি, তবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে জর্জরিত থাকা এবং একটির পর একটি ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ দেয়ার পর থেকে দিল্লী চিন্তায় রয়েছে। মার্কিন ক্রীড়নকে পরিণত হবার পরপরই ভারতের এহেন প্রভুহীনতা এমন এক বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে, যা ভারতকে তার দুর্বলতাগুলিকে আরও বেশি প্রকাশ করতে বাধ্য করছে।


বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মূল্যায়ন করতে গেলে ভারতের বাস্তবতার দিকে তাকাতে হবে প্রথমেই, যেগুলি ভারতের পররাষ্ট্রনীতিকে প্রভাবিত করতে প্রতিনিয়ত। এর মাঝেই লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের সূত্র।

ভারতের দৌর্বল্য

ভারত দুর্বল দেশ। আকৃতিতে বৃহৎ হলেও ব্রিটিশরা জানতে যে একত্রে রাখা হলে এই দেশ সবসময় দুর্বল এবং পশ্চিমের অনুগত থাকবে। এতো ভাষা, জাতি, বর্ণ, এলাকাভিত্তিক জাতীয়তা, আদর্শিক বিভেদ, এমনকি রাজ্যে-রাজ্যে দ্বন্দ্ব পেরিয়ে ভারতের পক্ষে যে একটি শক্তিশালী রাষ্ট্র হওয়া সম্ভব ছিল না, সেটা ব্রিটিশরা জানতো। ১৯৭০-এর দশকে অবশ্য ব্রিটিশদের এই চিন্তাটাই তাদের জন্যে সমস্যার জন্ম দিয়েছিল। ব্রিটিশরা দুর্বল হয়ে পড়ার পরে কিছু সময়ের জন্যে ভারতে সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রভাব বেড়ে গিয়েছিল। তবে সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর থেকে ভারত ধীরে ধীরে আবারও পশ্চিমমুখী হতে শুরু করে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটনের সময় থেকে এই প্রসেস শুরু হলেও মূল কাজ শুরু হয় নরেন্দ্র মোদি ক্ষমতায় আসার পর থেকে। বারাক ওবামাকে অতি-উতসাহে জড়িয়ে ধরে মোদি সারা বিশ্বে কাছে সেই বার্তাটাই দিয়েছিলেন। বিশ্ব জেনেছিল যে এখন থেকে মার্কিনীরা ভারতের সবচাইতে কাছের বন্ধু। কিন্তু বাস্তবতার দিকে তাকালেই বোঝা যায় যে এই সম্পর্ক সমধিকারের ভিত্তিতে নয়; ঠিক যেমনটি ছিল ব্রিটিশদের সাথে ভারতের সম্পর্ক। ভারত কি কি বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ‘সহায়তা’ পাবে, সেটার চাবি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই। এভাবে ভারতের পররাষ্ট্রনীতিতে প্রভাব বিস্তারের সুযোগও মার্কিনীরা পেয়ে যায়। চীনকে ব্যালান্স করতে ভারতের সামরিক শক্তিকে ব্যবহার করা শুরু করে যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু ১৯৭০-এর দশকে যেমন ব্রিটিশদের দুর্বল হয়ে যাবার পরে ভারত সোভিয়েত ইউনিয়নের কোলের শিশুতে পরিণত হয়, ঠিক একইভাবে ২০১৭ সালে মার্কিনীরা দুর্বল হয়ে যাবার পরে ভারত “প্রভুহীনতা”য় ভুগছে। মার্কিনীরা ভারতকে পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি সত্যি, তবে নতুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের অভ্যন্তরীণ সমস্যা নিয়ে জর্জরিত থাকা এবং একটির পর একটি ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ দেয়ার পর থেকে দিল্লী চিন্তায় রয়েছে। মার্কিন ক্রীড়নকে পরিণত হবার পরপরই ভারতের এহেন প্রভুহীনতা এমন এক বাস্তবতার জন্ম দিয়েছে, যা ভারতকে তার দুর্বলতাগুলিকে আরও বেশি প্রকাশ করতে বাধ্য করছে।

ভারত কেন আগ্রাসী?

ভারতের আগ্রাসী মনোভাবকে অনেকেই বিরাট করে দেখলেও সেই আগ্রাসী মনোভাবের কারণ সম্পর্কে সকলে চিন্তা করেন না। অভ্যন্তরীণভাবে দুর্বল হওয়ায় এবং তার এই দুর্বলতার সূত্র আশেপাশের দেশগুলিতে প্রোথিত থাকায় ভারত সবসময়ই নিরাপত্তাহীনতায় ভোগে। দেশের মানুষকে “ভারতীয় জাতীয়তাবাদ”এ অভ্যস্ত করতে দেশটির নেতৃত্ব আজও কঠিন সংগ্রাম করে যাচ্ছে। কিন্তু বারংবার ঐ একই অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলি মাথাচাড়া দিয়ে উঠে ভারতীয় জাতীয়তাবাদকে ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছে। আর এই অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাহীনতাই ভারতের প্রতিবেশী দেশগুলির সাথে পররাষ্ট্রনীতি ঠিক করে দিচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় ১৯৭১ সালের বাংলাদেশের আবির্ভাবের কথা। সসময় ভারতের অনেকগুলি ভয় একত্রে এসে একেবারে জাপটে ধরেছিল চারদিক থেকে। প্রথমতঃ বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর হিন্দুদের উপরে অত্যাচার এবং তার কারণে মারাত্মক শরণার্থী সমস্যায় ভারতের অভ্যন্তরে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছিল। দ্বিতীয়তঃ পশ্চিমবঙ্গের বাঙ্গালীরা মনে করছিল বাংলাদেশের বাঙ্গালীদের সাথে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে যুদ্ধ করাটা তাদের নৈতিক দায়িত্ব, যা কিনা পশ্চিমবঙ্গের “ভারতীয় পরিচয়” নিয়েই টান দিয়েছিল। তৃতীয়তঃ ভারতের অভ্যন্তরের বাম আন্দোলনগুলি বাংলাদেশের অভ্যন্তরের বাম আন্দোলনগুলির সাথে এক হয়ে যদি সীমানা মুছে ফেলার চেষ্টা করে, তবে তো ভারতের অস্তিত্বই বিপন্ন হয়ে পড়বে। চতুর্থতঃ কোটিখানেক শরণার্থীর চাপে ভারত অর্থনৈতিক যে চাপের মুখে পড়বে, তা ভারতের কোমড় ভেঙ্গে দেয়ার জন্যে যথেষ্ট হতে পারতো। পঞ্চমতঃ কোটিখানেক শরণার্থী ভারতের অভ্যন্তরে আইনশৃংখলা পরিস্থিতিকে নাড়িয়ে দিয়েছিল। ভারতের পূর্বের রাজ্যগুলির মানুষেরা কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের মানুষের মতো বাঙ্গালী শরণার্থীদের বরণ করেনি। তাদের ধারণা ছিল তারা বুঝি বাঙ্গালী জোয়ারে ভেসে যাচ্ছে।

বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মাঝ দিয়ে ভারতের যে দৌর্বল্য প্রকাশ পেয়েছিল, তা সচেতন মানুষদের চোখ এড়িয়ে যায়নি। ভারত যত দ্রুত সম্ভব যুদ্ধ শেষ করতে চেয়েছিল এই সমস্যাগুলি থেকে পরিত্রাণ পাবার জন্যেই। মজার ব্যাপার হলো, ভারত এই সমস্যাগুলি থেকে পুরোপুরিভাবে বের হতে পেরেছে কিনা, তা আজও কেউ হলফ করে বলতে পারেন না।
http://images.indianexpress.com/2016/06/1971-1.jpg
১৯৭১ সালের বাংলাদেশের আবির্ভাবের সময় ভারতের অনেকগুলি ভয় একত্রে এসে একেবারে জাপটে ধরেছিল চারদিক থেকে। সচেতন মহলের কাছে ভারতের দৌর্বল্য প্রকাশ হয়ে গিয়েছিল তখন। মজার ব্যাপার হলো, ভারত এই সমস্যাগুলি থেকে পুরোপুরিভাবে বের হতে পেরেছে কিনা, তা আজও কেউ হলফ করে বলতে পারেন না।


ইন্ডিয়া ইজ ডিভাইডেড

শুধু বাংলা নয়, ভারতের এরূপ সমস্যা পুরো ভারত জুড়েই। ১৯৪৭ সালে হায়দ্রাবাদ ভারতের সাথে যোগ না দিয়ে নিজামের অধীনে একটি মুসলিম রাজ্য হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে চেয়েছিল। ১৯৪৮ সালে ভারত সরকার লাখো মুসলিমকে হত্যার মাধ্যমে এই রাজ্য দখল করে নেয়, যাতে অন্ততঃ পাকিস্তানের সাথে যেন এই রাজ্য যুক্ত হতে না পারে, অথবা পাকিস্তানের প্রভাবে যেন তারা না থাকে। পরবর্তীতে হায়দ্রাবাদের স্বাধীনতার চেতনার পূণরুত্থান যাতে না হয়, সেজন্য রাজ্যটিকে ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করে চারটি আলাদা রাজ্যের (কেরালা, অন্ধ্র প্রদেশ, তামিলনাড়ু এবং মধ্যপ্রদেশ) মাঝে বিরতণ করে দেয়া হয়। ভাষার ভিত্তিতে ভাগ করতে গিয়ে আরেক সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল। শ্রীলংকার গৃহযুদ্ধের সময় ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মতো একিরূপ চিন্তা করতে হয়েছিল তামিলনাড়ুকে নিয়ে। শ্রীলঙ্কার তামিলদের জন্যে স্বায়ত্বশাসন সমর্থন করলেও এলটিটিই-এর স্বাধীন তামিল রাষ্ট্রের ঘোর বিরোধী ছিল ভারত। কারণ তাতে ভারতের ছয় কোটি তামিলের নিজস্ব রাষ্ট্র গড়ার ইচ্ছার পূণর্জাগরণ হতে পারতো। এলটিটিই-এর ইচ্ছের বিরুদ্ধে যাবার কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীকে প্রাণও দিতে হয়েছিল। এরপরে সিকিম ও কাশ্মীরের কথা তো বহুল আলোচিত। ভারতের দক্ষিণ থেকে পশ্চিমের বিরাট এক এলাকায় রয়েছে মাওবাদী গেরিলাদের সশস্ত্র বিদ্রোহ, যা কিনা নেপালের সাথে যুক্ত হবার ভয় ভারতের। ভারতের উত্তর-পূর্বের ‘সেভেন সিস্টার্স’ তো মাত্র ১৫ মাইলের শিলিগুঁড়ি করিডোরের উপরে নির্ভরশীল। এই করিডোরের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই ভারত সিকিম দখল করেছিল। আর উত্তর-পূর্বের সেই রাজ্যগুলিতেও রয়েছে ভয়াবহ সশস্ত্র বিদ্রোহ, যা দমন করতে ভারতের সেনাবাহিনীর কয়েকটি ডিভিশন সর্বদা মোতায়েন রাখতে হচ্ছে। এমনকি মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতের সামরিক অভিযানও চলেছে বিদ্রোহী দমন করতে। আবার পূর্ব-পাঞ্জাবের সিকদের একবারের বিদ্রোহ দমন করার পরে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীরই প্রাণ গেছে।

এর উপরে আবার রয়েছে রাজনৈতিক বিরোধ। কেন্দ্রের সরকার যদি এক দলের হয় আর রাজ্যের সরকার যদি আরেক দলের হয়, তাহলে রাষ্ট্রের উদ্দেশ্য যায় ভেস্তে। এছাড়াও ভারতে রয়েছে আন্তরাজ্য কলহ। পানি নিয়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলির মাঝে রয়েছে বিরোধ। পশ্চিমবঙ্গে ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে বিহারে বন্যা হয়েছে, তা এই দুই রাজ্যের সম্পর্ককে করেছে কন্টকময়। মোটকথা রাজ্যগুলির স্বার্থকে উপরে তুলে ধরতে গিয়ে রাষ্ট্রের স্বার্থই ভূলুন্ঠিত হয়ে যাচ্ছে অহরহ।

ভারতের বিশ কোটি মানুষ এখনও দুই বেলা খেতে পারে না। পৃথিবীর সবচাইতে বেশি মানুষ এই দেশে বসবাস করে, যারা খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ভারতের বড় শহরগুলির উঁচু দালানগুলি দেশটির আসল ছবি দেখায় না। দেশটিতে বিত্ত, ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তা, রাজনীতি এবং আদর্শের দ্বন্দ্ব ছাড়াও রয়েছে বর্ণগত বৈষম্য। এটা পরিষ্কারভাবেই বলা যায় যে ভারত অত্যন্ত দুর্বল একটি দেশ, যা আকারে বিরাট হলেও এর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুপারপাওয়ার রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ভারতের নিরাপত্তাজনিত ভয় দেশটির নেতৃত্বকে বারংবার আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ করিয়েছে। অথচ প্রতিবারেই ভারত আপাতদৃষ্টিতে নিজের স্বার্থ বাস্তবায়ন করলেও প্রকৃতপক্ষে সে সুপারপাওয়ারের স্বার্থই বাস্তবায়িত করেছে।


বৈষম্যের রাষ্ট্র ভারত

ভারতের বিশ কোটি মানুষ এখনও দুই বেলা খেতে পারে না। পৃথিবীর সবচাইতে বেশি মানুষ এই দেশে বসবাস করে, যারা খোলা স্থানে মলমূত্র ত্যাগ করছে। ভারতের বড় শহরগুলির উঁচু দালানগুলি দেশটির আসল ছবি দেখায় না। দেশটিতে বিত্ত, ধর্ম, ভাষা, জাতীয়তা, রাজনীতি এবং আদর্শের দ্বন্দ্ব ছাড়াও রয়েছে বর্ণগত বৈষম্য। হিন্দু ধর্মে বর্ণপ্রথা একুশ শতকে এসেও তৈরি করছে নানা জটিলতার। দলিত সম্প্রদায়, প্যাটেল সম্প্রদায়, ইত্যাদি সমস্যা নিয়মিতই আসছে মিডিয়াতে। সাম্প্রদায়িক এই সমস্যা নিয়ে দেশটির সামরিক নেতৃত্বও উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, কারণ দেশটির সামরিক বাহিনীকে এক হিসেবে ধরে রাখার চেষ্টাটাই তখন প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যেতে পারে। দেশটিতে অভিবাসী আফ্রিকার কালো মানুষদের উপর যখন অত্যাচার চালানো হয়, তখন বোঝা যায় যে ভারতের সমাজে বর্ণবাদের প্রথা কতটা গভীরে প্রোথিত। এর মাঝে আবার মুক্ত বাজার অর্থনীতে ঢুকে ভারতের মিডিয়ায় যৌনতাকে যেভাবে বাজারজাত করা হয়েছে, তাতে সমাজে নারীর অধিকার ভূলুন্ঠিত হয়েছে এবং ধর্ষনের এক সংস্কৃতির জন্ম দিয়েছে। সেনাবাহিনীতে জওয়ানরা ফেসবুক ব্যবহার করে তাদের উপরে চালু রাখা বৈষম্যের কাহিনী প্রচার করতে শুরু করেছে।

এটা পরিষ্কারভাবেই বলা যায় যে ভারত অত্যন্ত দুর্বল একটি দেশ, যা আকারে বিরাট হলেও এর অভ্যন্তরীণ দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে সুপারপাওয়ার রাষ্ট্র তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে। ভারতের নিরাপত্তাজনিত ভয় দেশটির নেতৃত্বকে বারংবার আগ্রাসী ভূমিকায় অবতীর্ণ করিয়েছে। অথচ প্রতিবারেই ভারত আপাতদৃষ্টিতে নিজের স্বার্থ বাস্তবায়ন করলেও প্রকৃতপক্ষে সে সুপারপাওয়ারের স্বার্থই বাস্তবায়িত করেছে। সুপারপাওয়ারের লক্ষ্য থেকে ভারত কখনোই বের হতে পারেনি; পারবেও না। এমতাবস্থায় বর্তমান সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্র যখন ভারতকে নিজের উপরে ছেড়ে দিচ্ছে, তখন ভারত বিচলিত হবেই; এটাই স্বাভাবিক। ভারতের অভ্যন্তরীণ সমস্যাগুলিকে কাজে লাগিয়ে সুপারপাওয়ার ভারতকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, কিন্তু কখনো ভেঙ্গে ফেলতে চায়নি। একারণেই ভারত বেঁচে আছে। ভারত তার অস্তিত্বের জন্যে পুরোপুরি নির্ভরশীল তার প্রতিবেশী দেশগুলির উপরে, যাতে তারা ভারতের বিরুদ্ধে কোন Subversion-এ লিপ্ত না হয়। ভারতের প্রতিবেশীরাও নিজেদের স্বার্থেই ভারতকে একত্রিত দেখতে চেয়েছে। বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়।

ভারতের দুর্বল থেকে দুর্বলতর অবস্থান এখন বাংলাদেশের সচেতন মহলে আলোচিত হচ্ছে। গত বছর ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাক্ষাতকারের সময় পত্রিকার সাংবাদিক শেখ হাসিনার ভারত সফরের নিশ্চয়তা আদায় করতে একই প্রশ্ন ঘুরিয়ে তিনবার জিজ্ঞেস করেছিলেন। বাংলাদেশ যতটা না চাচ্ছে যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত সফর করুন, তার চাইতে বহুগুণে বেশি করে সেটা চাইছে ভারত। বিশেষ করে চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং-এর সফর, বাংলাদেশের সাবমেরিন কেনা এবং শেখ হাসিনার দু-দু’বার ভারত সফর বাতিলের পর ভারতের কাছে দরদাম করার কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। ভারত বাংলাদেশের কাছে যা যা চেয়েছিল, তার সবই এতদিনে দিয়ে দেয়া হয়েছে; বিনিময়ে ভারত কিছুই ফেরত দেয়নি (সীমান্তে বিএসএফ-এর গুলিতে বহু লাশ ছাড়া)। উল্টো, বাংলাদেশ-বিরোধী কর্মকান্ডকে ভারত নিজের ভূখন্ডে অবাধে হতে দিয়েছে। এমতাবস্থায় ‘ভারতের চাপে’ কোন চুক্তি হতে যাচ্ছে – এধরনের কোন আলোচনা প্রকৃতই অর্থহীন। ভারত মহাসাগরের ভূরাজনীতি এখন বাংলাদেশের পক্ষে; ভারতের পক্ষে নয়। কাজেই ভারত বাংলাদেশের কাছ থেকে ততটুকুই আশা করতে পারে, যতটুকু বাংলাদেশ তাকে দিতে ইচ্ছুক।

1 comment: