১৩ জুলাই ২০১৬
গুলশান ৭৯ পশ্চিমাদের সভ্যতার ক্ষয়িষ্ণুতাকেই উপরে তুলে ধরছে
এদেশের মিডিয়া যে অন্য কারুর দখলে, সেটা আগের লেখাতেই লিখেছি। যদিও কিছু মানুষ এখনও সেই দখলীকৃত মিডিয়ায় আলোচিত বিষয়গুলিকেই ফোকাস করার যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তদুপরি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরের সময়ে বিশেষ কিছু প্রভাবশালী সাংবাদিকের সাথে বিশেষ বৈঠক করাটা এদেশের মিডিয়া কাদের দখলে, সেটা আরেকবার দেখিয়ে দেয়। গুলশান ৭৯ নম্বরের ঘটনা বিশ্বরাজনীতির যে ব্যাপারগুলি আমাদের কাছে এতদিন পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল না, সেগুলিই এখন দিনের মতো পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এদেশের মানুষকে একটা ঘোরের মাঝে রেখে দেয়া হয়েছিল এতকাল, তারপরেও পশ্চিমারা বাংলাদেশকে হুমকি হিসেবে দেখেছে। তারা বুঝতে পারছিল যে বেশিদিন এই ঘোর টিকবে না। তাই তারা সরাসরি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা তৈরি করেছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে যে ভুলটা তারা করেছে তা হলো ওই Trojan Horse-টাই তারা ব্যবহার করেছে, যেটা তারা নিজেদের বলে ব্র্যান্ডিং করতে ভুলেনি। সবার সামনে একেবারে উন্মুক্ত হয়ে গেল যে শস্যের মাঝেই ছিল ভূত। এর আগে মসজিদ-মাদ্রাসাতে আমেরিকার উপস্থিতি প্রমাণ করাটা বেশ কঠিন ছিল; অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইতো না। কিন্তু এখন বার্গার-পিতজা, দামী ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্ট, আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ, রিয়েলিটি শো – এগুলির মাঝে যখন জঙ্গী রিক্রুটাররা ঘোরাঘুরি করছে, তখন তারা কি একবারও জিহ্বা কামড় দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি? তার মানে কি তারা বোঝেননি যে কতবড় ভুল তারা করেছেন?? এটাকে পশ্চিমাদের intellectual decline বলতেই হবে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে এধরনের অপেশাদারী ভুল তারা করেনি কখনো। অবশ্য বার্গার-ফেসবুক-সমকামিতা-আত্মকেন্দ্রীকতা-কে কেন্দ্র করে বেশিদিন একটা জাতির intellectual leadership ধরে রাখা কঠিন। এসব সস্তা লাইফস্টাইলের উপরে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র যে সত্তর বছর তাদের নেতৃত্ব রেখেছে, সেটাই বরং একটা কাকতালীয় ব্যাপার।
জঙ্গী রিক্রুটদের বাঁচানো হচ্ছে যেভাবে…
যাই হোক, এদেশের মিডিয়াতে অথর্ব কিছু লোককে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা চর্বিত চর্বন চাবিয়ে যান; যারা কয়েক বছর আগেও ওই একইভাবে অর্থহীন কথা বলে মানুষের সময় নষ্ট করেছেন, আজও করছেন। অর্থাৎ তারা কত কোটি মানুষের কত কোটি মহামূল্যবান ঘন্টা সময় নষ্ট করেছেন, তা যদি আমরা হিসাব করি তাহলে মোটামুটি একটা ধারণা তো করা যেত যে সেটা এই দেশের অর্থনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতি করেছে। যা লাভ অর্থনীতির হয়েছে তা হলো ওই লোকগুলির সংসার চলেছে, তারা তাদের উপার্জনকে ব্যাবহার করে বাজারে কিছু কেনাকাটা করেছে। তবে যখন আমরা দেখবো যে তাদের পুরো কর্মকান্ডই অন্য কিছু দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি, তখন বোঝা যাবে যে আমরা দুধ-কলা দিয়ে শুধু সাপই পুষে যাচ্ছি। এরাই আজ একেবারে নগ্নভাবে মার্কিন সহায়তা নেয়ার ওকালতি করে চলেছেন। জঙ্গী রিক্রুটাররা যেসব স্থান থেকে জঙ্গীদের রিক্রুট করেছে, সেসব স্থানকে সার্ভেইল্যান্সে আনার কথা না বলে এরা মসজিদে সার্ভেইল্যান্সের কথা বলছেন। কি উদ্ভট কথা!! যে ব্যক্তি বলিউডের মহিলা ‘সেলেব্রিটি’র হাত ধরে স্টেজে উঠে নেচেছে, যে ব্যক্তি রিয়েলিটি শো-তে পার্ফরমেন্স দেখিয়েছে, যে ব্যক্তি যুবসমাজের কাম বাসনায় সুড়সুড়ি দেয়া মডেলকে বিয়ে করেছে, যে ব্যাক্তি বিদেশী লাইফস্টাইল ছাড়া কিছুই নেয়নি, সে মসজিদ পর্যন্ত কি করে গেল সেটা জিজ্ঞেস না করেই আপনি মসজিদের পিছনে লাগলেন কেন?? তারমানে এটা কি বোঝা যাচ্ছে না যে মসজিদকে টার্গেট করাই উদ্দেশ্য ছিল? অর্থাৎ ইসলামকে টার্গেটই সকল কিছুর মূলে। এ-তো অত্যন্ত সস্তা চিন্তা থেকে আসা হে! শুধু তা-ই নয়, সংস্কৃতির ইতিহাসের কথা টেনে কেউ কেউ সমাধান দিচ্ছেন; আর সেই সংস্কৃতির মাঝে দেখাচ্ছেন সমকামিদের ‘রংধনু’ সংস্কৃতি, যা কিনা একটা বিশেষ দেশের দূতাবাস টাকাপয়সা দিয়ে সরাসরি সাপোর্ট দেয়। এসব হাস্যকর প্ল্যানিং-এর চেয়ে ভালো কিছু কি তারা আজ জন্ম দিতে অক্ষম?
সেই Trojan Horse-এর সাথে যে এই এজেন্টরাও এসেছেন; তাই তারা সেটার বিরুদ্ধে কথা বলেন না। জঙ্গী রিক্রুটার নাকি অনলাইনে ব্রেইনওয়াশ করছে!! কি আশ্চর্য কথা এটা! ফেইসবুকে একটা অপরিচিত মানুষ কিছু মেসেজ দিবে তাকে আর সে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে যাবে? এটা কি হলিউডের কোন Zombie মুভির স্ক্রিপ্ট পেয়েছেন নাকি তারা? এগুলি কথা বলে তারা যেসব হাই-এন্ড posh আড্ডার আসরে জঙ্গী রিক্রুট করা হচ্ছে সেগুলি বাদ দিতে বলছেন। সংস্কৃতির নামে বিদেশী এজেন্টদের ঘোরাফিরা করা যায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে বলছেন। জঙ্গীদের ট্রেনিং কে দিল? অস্ত্র কোত্থেকে আসলো? লজিস্টিক সাপোর্ট কে দিল? পাসপোর্টে ভিসা কে লাগালো? এগুলি কি ভুতে এসে দিয়ে গেল?? তাহলে এগুলি নিয়ে কথা না বলে কেন এদেশের মুসলিম পরিবারগুলিকে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে? এ-তো সেই ৬৪ জেলায় জঙ্গী হামলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেই হামলার পর পর মানুষ মসজিদে যেতেই ভয় পেত। শোলাকিয়ার হামলা তো দেখিয়ে দিচ্ছে যে মুসলিমরাই এদের টার্গেট। ভয় দেখিয়ে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কি বিশ্রী অপচেষ্টা এটা। রিক্রুট করার নোংড়া স্থানগুলিকে সার্ভেইল্যান্সে না এনে মানুষের উপাসনালয়গুলিকে সার্ভেইল্যান্সে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে!
ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে কেন?
বিশিষ্ট মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ হেনরি কিসিঞ্জার শেষ বয়সে এসে এখনও চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ নতুন জেনারেশন তার মতো চিন্তাবিদের জন্ম দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার ২০১৪ সালে লেখা ‘World Order’ বইতে তিনি বর্তমান বিশ্বের পুরো ব্যবস্থাকেই প্রশ্ন করে ছেড়েছেন। এমন তিনটি ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন করেছেন, যার উত্তর দিতে অনেকেই চুল ছিড়ে ফেলবেন। তিনি প্রশ্ন করছেন –
১. রাষ্ট্র-ব্যাবস্থা নিয়ে চিন্তা করার আগে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে! কারণ একুশ শতকে বহু রাষ্ট্রকেই টিকিয়ে রাখা কঠিন হচ্ছে; তাদের মানচিত্র এবং জনগোষ্ঠীর পরিচয় নিয়ে টান পড়েছে। একেকটি দেশের মানচিত্র আঁকার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে আজ। অনেক রাষ্ট্রই আজ নামমাত্র রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই যেখানে থাকছে না, সেখানে কার সাথে কোথায় কিভাবে আলোচনা হবে?
২. পুরো বিশ্বের অর্থনীতি চলে এক ব্যবস্থায়, অথচ রাষ্ট্র বহু। রাষ্ট্র অনেক কেন? কারণ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আলাদা। তাহলে তো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও তারা সকলেই চাইবে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী চালাতে। এভাবে তো দুনিয়া বেশিদিন চলবে না!
৩. শক্তিশালী দেশগুলি একত্রে বসে বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছে না। কি বলছেন এসব? সারা বছর জুড়ে কত্তো কত মিটিং হচ্ছে! কিন্তু সেই মিটিং-এ তারা তো শুধুমাত্র আজকের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে; দীর্ঘমেয়াদী কোন কথাই তারা বলছে না। অর্থাৎ বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে কথা বলার কোন প্ল্যাটফর্মই নেই আজ! কোন কিছুই কাজ করছে না যে!
এই তিন প্রশ্ন বর্তমানের পুরো বিশ্বব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিয়ে বিরাট প্রশ্ন জুড়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশের তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবি’রা টেলিভিশনের টক-মিষ্টি শো-তে ক্ষয়িষ্ণু (decaying) পশ্চিমা আদর্শের গীত গেয়ে সময় নষ্ট না করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে হেনরি কিসিঞ্জার সাহেবকে শান্তিতে মরতে দেবেন? বেচারা বহু বয়স পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের চিন্তার ভার নিতে গিয়ে অনেক কষ্ট করছেন।
যে নিজের সমস্যারই সমাধান দিতে পারছে না, সে কি করে আমাদের সমস্যার সমাধান দেবে?
ব্রেক্সিটের পর ইইউ ভেঙ্গে যাবার মুখে অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্রই এখন ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে। স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হতে চাইছে। এরপর লাইনে দাঁড়াবে ইটালি এবং স্পেন। এরও পেছনে অনেক দেশের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রও থাকতে পারে। দেশগুলি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের মানুষ মনে করেছে যে বাকি ইউরোপের মানুষ এসে তাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে। অথচ ইইউ থেকে বের হলে যে তাদের পুরো দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে, সেটা তারা চিন্তাই করেনি। ব্যক্তি-স্বার্থকে অন্য সকল কিছুর উপরে স্থান দেবার অনন্য দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করছে তারা। সেই স্বার্থপর সমাজে সকলের স্বার্থ রক্ষার্থে সমাজ-বিরোধী বহু কর্মকান্ডও আজ আইনত সিদ্ধ! হলিউডের মুভিতে নাহয় সুপার হিরোরা এসে সমাজ-বিরোধী কর্মকান্ড থেকে শহরকে এবং দেশকে রক্ষা করে। কিন্তু তারা তো জানে যে বাস্তব দুনিয়াতে সেটা সম্ভব নয়; আকাশের দিকে চেয়ে থাকলেই কোন সুপারহিরো নেমে আসবে না। টিভি স্ক্রীন থেকে বের হয়ে এসে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের কালো-সাদা দ্বন্দ্ব থামাবে না। হলিউডকে নকল করে বলিউডে বানানো ‘কৃষ’ বা ‘রা-ওয়ান’ সুপারহিরোরা আজকে দিল্লীর নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। কল্পনা দিয়ে সভ্যতা টিকিয়ে রাখা যায় না। কাজেই টিভির স্ক্রীন ভরিয়ে রাখা ওইসব পশ্চিমা এজেন্টরা যে আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, তা আজ যে কেউ বুঝবে।
কিসিঞ্জার মেনে নিচ্ছেন যে বিশ্বের সমস্যা এখন আকাশচুম্বী, সেটার সমাধান পশ্চিমারা দিতে পারছে না। “A quarter century of political and economic crisis perceived as produced or least abetted by Western admonitions and practices along with imploding regional orders, sectarian bloodbaths, terrorism and wars ended on terms short of victory has thrown into question the optimistic assumptions of the immediate post-Cold War era that the spread of democracy and free markets would automatically create a just, peaceful and inclusive world.” অর্থাৎ পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিশ্বের সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। “ A countervailing impetus has risen on several parts of the world to construct bulwarks against what are now seen as the crisis inducing policies of the developed West, including aspects of globalization.” বাকি বিশ্বে যে পশ্চিমাদের নীতিকে এমনকি বিশ্বায়নকেও আগ্রাসী হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেটাও তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন। যখন পশ্চিমারা নিজেরাই স্বীকার নিচ্ছেন যে তারা সমস্যার সমাধান দিতে অক্ষম, তখনও আমাদের দেশের এজেন্টরা পশ্চিমাদের গীতই গেয়ে যাচ্ছেন!
বাংলাদেশের ভয় তাদের ঘুম নষ্ট করছে
বাংলাদেশের শক্তিশালী ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিরাট মুসলিম জনসংখ্যা ভারত, তথা তার প্রভু যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়েছে। সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই বাকি মুসলিম বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তারা প্রজেক্ট শুরু করেছে। আমাদের জন্যে এটা বুঝতে পারাটা খুব একটা কঠিন হবার কথা নয়, কারণ সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তান-ইয়েমেন-সোমালিয়া-মালি-লিবিয়া আমাদের সামনে জ্বলজ্যান্ত উদাহারণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সারা পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে “Lily Pad” (পদ্ম পাতা) নামের এক কনসেপ্টে সাজাচ্ছে। পদ্ম পাতার উপরে একটা পাখি বা একটা ব্যাং বা একটা পোকা দাঁড়াতে পারে। এই চিন্তার উপরেই সেই কনসেপ্ট। বাংলাদেশকেও ওই ব্যবস্থার মাঝে আনার চেষ্টা চলছে। আশা করি সেটা নিয়ে লিখবো কখনো। এই পুরো চেষ্টায় ইস্রাইলের প্রবেশ topping on cake-এর মতো কাজ করেছে। ভারতের মাটিতে ইস্রাইলী গোয়েন্দা সংস্থার অফিস থাকার পরেও আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা ভারতকে দেখতে পাননি। কিছু তথাকথিত রাজনৈতিক দল আবার ইস্রাইলকে দেখলেও যুক্তরাষ্ট্রকে কোথাও দেখতে পায় না। ভারত এবং ইস্রাইলের বিরুদ্ধে হাল্কা কথা বলেই তারা ক্ষান্ত থাকেন, যা দিয়ে সেসব দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে না কোনদিন। আর ভারতের অস্তিত্ব যে বাংলাদেশ টিকিয়ে রেখেছে, সেটা নিয়ে তো এর আগেই লিখেছি। তারা ভারত-ইস্রাইলকে নিয়েই বেশি মাথা ঘামায়; এই দেশ দু’টির পশ্চিমা জন্মদাতাদের নিয়ে নয়। মোট কথা দাদামশাইকে ছেড়ে দিয়ে তারা বাপকে নিয়েই কথা বলেন; তা-ও আবার দোয়া করেন যেন বাপ আবার হার্ট এটাক না করে! কারণ হার্ট এটাকের সেই ভয় তাদের সত্যিকার অর্থে আছে বলেই ইসলামের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র তারা আজ করছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ গণহারে আজ ইসলামে দিক্ষীত হচ্ছে। ভারতেও একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা রাজনীতিকের পরিবারের সদস্যরাও ইসলাম নিয়ে নিচ্ছে। এ তো গেল যারা জানিয়ে মুসলিম হচ্ছেন তাদের কথা। যারা না জানিয়ে হচ্ছেন, তাদের হিসেব তো কারো কাছেই নেই! তারা তো তাদের সমাজের সমস্যার চিত্র দেখতেই পাচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের মাঝেই বরং জন্মগতভাবে ইসলাম পাবার এক অবান্তর গরিমা কাজ করছে, যার ভারে আমরা নিজেরা কার সামনে নত হয়ে যাচ্ছি, সেটা খেয়ালই করছি না। ডিভোর্স, পারিবারিক কলহ, ব্যাভিচার, মাদক, বেশ্যাবৃত্তি, সমকামিতা, ইত্যাদি অনাচারের কবলে নিপতিত সেকুলার সমাজ moral দিক থেকে দুর্বল থাকে। তাই এদেরকে একবার ধাক্কা দিলেই তার সামনের পুরো দুনিয়া তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়ে। পশ্চিমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই এলিট সেকুলারদেরকে টার্গেট করেই। তারা জানে যে ইসলামের পথে গেলে এরা পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে intellectual leadership নিয়ে নেবে। তাই সেই সুযোগ এদেরকে না দিয়ে বরং ফুসলিয়ে জঙ্গী বানিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে দেবার ব্যবস্থা করছে। পশ্চিমারা তাদের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যেই এদেশের সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে বৈঠক করে ঢাকায়, কোলকাতায়, আগ্রা-দিল্লীতে।
পশ্চিমা সভ্যতা আজ ধ্বংসোন্মুখে পতিত। এই ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতাকে এখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এদের এজেন্টদের অবস্থা তাদের আব্বুদের চাইতে ভালো হবে না। যারা সমস্যার সমাধান দেয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কি নিতে পারি আজ? বরং সামনের দিনগুলিতে তাদেরকে গভীর কূপ থেকে উদ্ধার করতে আমাদেরই দড়ি ছাড়তে হতে পারে।
গুলশান ৭৯ পশ্চিমাদের সভ্যতার ক্ষয়িষ্ণুতাকেই উপরে তুলে ধরছে
এদেশের মিডিয়া যে অন্য কারুর দখলে, সেটা আগের লেখাতেই লিখেছি। যদিও কিছু মানুষ এখনও সেই দখলীকৃত মিডিয়ায় আলোচিত বিষয়গুলিকেই ফোকাস করার যারপরনাই চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন, তদুপরি মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের উচ্চপদস্থ কূটনীতিকের বাংলাদেশ সফরের সময়ে বিশেষ কিছু প্রভাবশালী সাংবাদিকের সাথে বিশেষ বৈঠক করাটা এদেশের মিডিয়া কাদের দখলে, সেটা আরেকবার দেখিয়ে দেয়। গুলশান ৭৯ নম্বরের ঘটনা বিশ্বরাজনীতির যে ব্যাপারগুলি আমাদের কাছে এতদিন পুরোপুরি পরিষ্কার ছিল না, সেগুলিই এখন দিনের মতো পরিষ্কার করে দিচ্ছে। এদেশের মানুষকে একটা ঘোরের মাঝে রেখে দেয়া হয়েছিল এতকাল, তারপরেও পশ্চিমারা বাংলাদেশকে হুমকি হিসেবে দেখেছে। তারা বুঝতে পারছিল যে বেশিদিন এই ঘোর টিকবে না। তাই তারা সরাসরি হস্তক্ষেপের ব্যবস্থা তৈরি করেছে। কিন্তু এটা করতে গিয়ে যে ভুলটা তারা করেছে তা হলো ওই Trojan Horse-টাই তারা ব্যবহার করেছে, যেটা তারা নিজেদের বলে ব্র্যান্ডিং করতে ভুলেনি। সবার সামনে একেবারে উন্মুক্ত হয়ে গেল যে শস্যের মাঝেই ছিল ভূত। এর আগে মসজিদ-মাদ্রাসাতে আমেরিকার উপস্থিতি প্রমাণ করাটা বেশ কঠিন ছিল; অনেকেই বিশ্বাস করতে চাইতো না। কিন্তু এখন বার্গার-পিতজা, দামী ব্র্যান্ডেড রেস্টুরেন্ট, আন্তর্জাতিক স্কলারশিপ, রিয়েলিটি শো – এগুলির মাঝে যখন জঙ্গী রিক্রুটাররা ঘোরাঘুরি করছে, তখন তারা কি একবারও জিহ্বা কামড় দেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি? তার মানে কি তারা বোঝেননি যে কতবড় ভুল তারা করেছেন?? এটাকে পশ্চিমাদের intellectual decline বলতেই হবে। ঠান্ডা যুদ্ধের সময়ে এধরনের অপেশাদারী ভুল তারা করেনি কখনো। অবশ্য বার্গার-ফেসবুক-সমকামিতা-আত্মকেন্দ্রীকতা-কে কেন্দ্র করে বেশিদিন একটা জাতির intellectual leadership ধরে রাখা কঠিন। এসব সস্তা লাইফস্টাইলের উপরে ভিত্তি করে যুক্তরাষ্ট্র যে সত্তর বছর তাদের নেতৃত্ব রেখেছে, সেটাই বরং একটা কাকতালীয় ব্যাপার।
জঙ্গী রিক্রুটদের বাঁচানো হচ্ছে যেভাবে…
যাই হোক, এদেশের মিডিয়াতে অথর্ব কিছু লোককে দেখা যায় ঘন্টার পর ঘন্টা চর্বিত চর্বন চাবিয়ে যান; যারা কয়েক বছর আগেও ওই একইভাবে অর্থহীন কথা বলে মানুষের সময় নষ্ট করেছেন, আজও করছেন। অর্থাৎ তারা কত কোটি মানুষের কত কোটি মহামূল্যবান ঘন্টা সময় নষ্ট করেছেন, তা যদি আমরা হিসাব করি তাহলে মোটামুটি একটা ধারণা তো করা যেত যে সেটা এই দেশের অর্থনৈতিকভাবে কতটা ক্ষতি করেছে। যা লাভ অর্থনীতির হয়েছে তা হলো ওই লোকগুলির সংসার চলেছে, তারা তাদের উপার্জনকে ব্যাবহার করে বাজারে কিছু কেনাকাটা করেছে। তবে যখন আমরা দেখবো যে তাদের পুরো কর্মকান্ডই অন্য কিছু দেশের স্বার্থ সংরক্ষণ করা ছাড়া আর কিছুই করেনি, তখন বোঝা যাবে যে আমরা দুধ-কলা দিয়ে শুধু সাপই পুষে যাচ্ছি। এরাই আজ একেবারে নগ্নভাবে মার্কিন সহায়তা নেয়ার ওকালতি করে চলেছেন। জঙ্গী রিক্রুটাররা যেসব স্থান থেকে জঙ্গীদের রিক্রুট করেছে, সেসব স্থানকে সার্ভেইল্যান্সে আনার কথা না বলে এরা মসজিদে সার্ভেইল্যান্সের কথা বলছেন। কি উদ্ভট কথা!! যে ব্যক্তি বলিউডের মহিলা ‘সেলেব্রিটি’র হাত ধরে স্টেজে উঠে নেচেছে, যে ব্যক্তি রিয়েলিটি শো-তে পার্ফরমেন্স দেখিয়েছে, যে ব্যক্তি যুবসমাজের কাম বাসনায় সুড়সুড়ি দেয়া মডেলকে বিয়ে করেছে, যে ব্যাক্তি বিদেশী লাইফস্টাইল ছাড়া কিছুই নেয়নি, সে মসজিদ পর্যন্ত কি করে গেল সেটা জিজ্ঞেস না করেই আপনি মসজিদের পিছনে লাগলেন কেন?? তারমানে এটা কি বোঝা যাচ্ছে না যে মসজিদকে টার্গেট করাই উদ্দেশ্য ছিল? অর্থাৎ ইসলামকে টার্গেটই সকল কিছুর মূলে। এ-তো অত্যন্ত সস্তা চিন্তা থেকে আসা হে! শুধু তা-ই নয়, সংস্কৃতির ইতিহাসের কথা টেনে কেউ কেউ সমাধান দিচ্ছেন; আর সেই সংস্কৃতির মাঝে দেখাচ্ছেন সমকামিদের ‘রংধনু’ সংস্কৃতি, যা কিনা একটা বিশেষ দেশের দূতাবাস টাকাপয়সা দিয়ে সরাসরি সাপোর্ট দেয়। এসব হাস্যকর প্ল্যানিং-এর চেয়ে ভালো কিছু কি তারা আজ জন্ম দিতে অক্ষম?
সেই Trojan Horse-এর সাথে যে এই এজেন্টরাও এসেছেন; তাই তারা সেটার বিরুদ্ধে কথা বলেন না। জঙ্গী রিক্রুটার নাকি অনলাইনে ব্রেইনওয়াশ করছে!! কি আশ্চর্য কথা এটা! ফেইসবুকে একটা অপরিচিত মানুষ কিছু মেসেজ দিবে তাকে আর সে ৩৬০ ডিগ্রী ঘুরে যাবে? এটা কি হলিউডের কোন Zombie মুভির স্ক্রিপ্ট পেয়েছেন নাকি তারা? এগুলি কথা বলে তারা যেসব হাই-এন্ড posh আড্ডার আসরে জঙ্গী রিক্রুট করা হচ্ছে সেগুলি বাদ দিতে বলছেন। সংস্কৃতির নামে বিদেশী এজেন্টদের ঘোরাফিরা করা যায়গাগুলি এড়িয়ে যেতে বলছেন। জঙ্গীদের ট্রেনিং কে দিল? অস্ত্র কোত্থেকে আসলো? লজিস্টিক সাপোর্ট কে দিল? পাসপোর্টে ভিসা কে লাগালো? এগুলি কি ভুতে এসে দিয়ে গেল?? তাহলে এগুলি নিয়ে কথা না বলে কেন এদেশের মুসলিম পরিবারগুলিকে চাপের মুখে ফেলা হচ্ছে? এ-তো সেই ৬৪ জেলায় জঙ্গী হামলার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সেই হামলার পর পর মানুষ মসজিদে যেতেই ভয় পেত। শোলাকিয়ার হামলা তো দেখিয়ে দিচ্ছে যে মুসলিমরাই এদের টার্গেট। ভয় দেখিয়ে মানুষকে ইসলাম থেকে দূরে সরিয়ে রাখার কি বিশ্রী অপচেষ্টা এটা। রিক্রুট করার নোংড়া স্থানগুলিকে সার্ভেইল্যান্সে না এনে মানুষের উপাসনালয়গুলিকে সার্ভেইল্যান্সে আনার ব্যবস্থা করা হচ্ছে!
হেনরি কিসিঞ্জারের মতো লোক যখন পশ্চি্মা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার ব্যর্থতার কথা বলতে ভুল করছেন না, তখন আমাদের দেশের পশ্চিমা এজেন্টরা এখনো পশ্চিমে আলো দেখে চলেছেন! |
ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতাকে উদাহরণ হিসেবে দেখানো হচ্ছে কেন?
বিশিষ্ট মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ হেনরি কিসিঞ্জার শেষ বয়সে এসে এখনও চালিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, কারণ নতুন জেনারেশন তার মতো চিন্তাবিদের জন্ম দিতে ব্যর্থ হচ্ছে। তার ২০১৪ সালে লেখা ‘World Order’ বইতে তিনি বর্তমান বিশ্বের পুরো ব্যবস্থাকেই প্রশ্ন করে ছেড়েছেন। এমন তিনটি ব্যাপারে তিনি প্রশ্ন করেছেন, যার উত্তর দিতে অনেকেই চুল ছিড়ে ফেলবেন। তিনি প্রশ্ন করছেন –
১. রাষ্ট্র-ব্যাবস্থা নিয়ে চিন্তা করার আগে রাষ্ট্রের সংজ্ঞা নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে! কারণ একুশ শতকে বহু রাষ্ট্রকেই টিকিয়ে রাখা কঠিন হচ্ছে; তাদের মানচিত্র এবং জনগোষ্ঠীর পরিচয় নিয়ে টান পড়েছে। একেকটি দেশের মানচিত্র আঁকার ভিত্তি নিয়েই প্রশ্ন উঠছে আজ। অনেক রাষ্ট্রই আজ নামমাত্র রাষ্ট্র। রাষ্ট্রই যেখানে থাকছে না, সেখানে কার সাথে কোথায় কিভাবে আলোচনা হবে?
২. পুরো বিশ্বের অর্থনীতি চলে এক ব্যবস্থায়, অথচ রাষ্ট্র বহু। রাষ্ট্র অনেক কেন? কারণ তাদের রাজনৈতিক স্বার্থ আলাদা। তাহলে তো অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকেও তারা সকলেই চাইবে নিজেদের স্বার্থ অনুযায়ী চালাতে। এভাবে তো দুনিয়া বেশিদিন চলবে না!
৩. শক্তিশালী দেশগুলি একত্রে বসে বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে কথা বলছে না। কি বলছেন এসব? সারা বছর জুড়ে কত্তো কত মিটিং হচ্ছে! কিন্তু সেই মিটিং-এ তারা তো শুধুমাত্র আজকের সমস্যা নিয়ে কথা বলতেই সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে; দীর্ঘমেয়াদী কোন কথাই তারা বলছে না। অর্থাৎ বিশ্বব্যবস্থাকে টিকিয়ে রাখার জন্যে কথা বলার কোন প্ল্যাটফর্মই নেই আজ! কোন কিছুই কাজ করছে না যে!
এই তিন প্রশ্ন বর্তমানের পুরো বিশ্বব্যবস্থার স্থায়িত্ব নিয়ে বিরাট প্রশ্ন জুড়ে দিচ্ছে। আমাদের দেশের তথাকথিত ‘বুদ্ধিজীবি’রা টেলিভিশনের টক-মিষ্টি শো-তে ক্ষয়িষ্ণু (decaying) পশ্চিমা আদর্শের গীত গেয়ে সময় নষ্ট না করে এই প্রশ্নগুলির উত্তর খুঁজে হেনরি কিসিঞ্জার সাহেবকে শান্তিতে মরতে দেবেন? বেচারা বহু বয়স পর্যন্ত পশ্চিমা বিশ্বের চিন্তার ভার নিতে গিয়ে অনেক কষ্ট করছেন।
যে নিজের সমস্যারই সমাধান দিতে পারছে না, সে কি করে আমাদের সমস্যার সমাধান দেবে?
ব্রেক্সিটের পর ইইউ ভেঙ্গে যাবার মুখে অনেক পশ্চিমা রাষ্ট্রই এখন ভাঙ্গনের মুখে পড়ছে। স্কটল্যান্ড যুক্তরাজ্য থেকে আলাদা হতে চাইছে। এরপর লাইনে দাঁড়াবে ইটালি এবং স্পেন। এরও পেছনে অনেক দেশের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রও থাকতে পারে। দেশগুলি ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র হয়ে যাচ্ছে। ইংল্যান্ডের মানুষ মনে করেছে যে বাকি ইউরোপের মানুষ এসে তাদের চাকরি খেয়ে ফেলবে। অথচ ইইউ থেকে বের হলে যে তাদের পুরো দেশের অর্থনীতি ক্ষতির মুখে পড়বে, সেটা তারা চিন্তাই করেনি। ব্যক্তি-স্বার্থকে অন্য সকল কিছুর উপরে স্থান দেবার অনন্য দৃষ্টান্ত প্রতিষ্ঠা করছে তারা। সেই স্বার্থপর সমাজে সকলের স্বার্থ রক্ষার্থে সমাজ-বিরোধী বহু কর্মকান্ডও আজ আইনত সিদ্ধ! হলিউডের মুভিতে নাহয় সুপার হিরোরা এসে সমাজ-বিরোধী কর্মকান্ড থেকে শহরকে এবং দেশকে রক্ষা করে। কিন্তু তারা তো জানে যে বাস্তব দুনিয়াতে সেটা সম্ভব নয়; আকাশের দিকে চেয়ে থাকলেই কোন সুপারহিরো নেমে আসবে না। টিভি স্ক্রীন থেকে বের হয়ে এসে কেউ যুক্তরাষ্ট্রের কালো-সাদা দ্বন্দ্ব থামাবে না। হলিউডকে নকল করে বলিউডে বানানো ‘কৃষ’ বা ‘রা-ওয়ান’ সুপারহিরোরা আজকে দিল্লীর নারীদের নিরাপত্তা দিতে পারবে না। কল্পনা দিয়ে সভ্যতা টিকিয়ে রাখা যায় না। কাজেই টিভির স্ক্রীন ভরিয়ে রাখা ওইসব পশ্চিমা এজেন্টরা যে আমাদের সমস্যার সমাধান দিতে পারবে না, তা আজ যে কেউ বুঝবে।
কিসিঞ্জার মেনে নিচ্ছেন যে বিশ্বের সমস্যা এখন আকাশচুম্বী, সেটার সমাধান পশ্চিমারা দিতে পারছে না। “A quarter century of political and economic crisis perceived as produced or least abetted by Western admonitions and practices along with imploding regional orders, sectarian bloodbaths, terrorism and wars ended on terms short of victory has thrown into question the optimistic assumptions of the immediate post-Cold War era that the spread of democracy and free markets would automatically create a just, peaceful and inclusive world.” অর্থাৎ পশ্চিমা গণতন্ত্র এবং মুক্ত বাজার অর্থনীতি বিশ্বের সমস্যার সমাধান দিতে পারেনি। “ A countervailing impetus has risen on several parts of the world to construct bulwarks against what are now seen as the crisis inducing policies of the developed West, including aspects of globalization.” বাকি বিশ্বে যে পশ্চিমাদের নীতিকে এমনকি বিশ্বায়নকেও আগ্রাসী হিসেবে দেখা হচ্ছে, সেটাও তিনি স্বীকার করে নিচ্ছেন। যখন পশ্চিমারা নিজেরাই স্বীকার নিচ্ছেন যে তারা সমস্যার সমাধান দিতে অক্ষম, তখনও আমাদের দেশের এজেন্টরা পশ্চিমাদের গীতই গেয়ে যাচ্ছেন!
বাংলাদেশের ভয় তাদের ঘুম নষ্ট করছে
বাংলাদেশের শক্তিশালী ভৌগোলিক অবস্থান এবং বিরাট মুসলিম জনসংখ্যা ভারত, তথা তার প্রভু যুক্তরাষ্ট্রকে ভাবিয়েছে। সেই ভাবনাকে সামনে রেখেই বাকি মুসলিম বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও তারা প্রজেক্ট শুরু করেছে। আমাদের জন্যে এটা বুঝতে পারাটা খুব একটা কঠিন হবার কথা নয়, কারণ সিরিয়া-ইরাক-আফগানিস্তান-ইয়েমেন-সোমালিয়া-মালি-লিবিয়া আমাদের সামনে জ্বলজ্যান্ত উদাহারণ হিসেবে দাঁড়িয়ে আছে। সারা পৃথিবীতে যুক্তরাষ্ট্র তার নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে “Lily Pad” (পদ্ম পাতা) নামের এক কনসেপ্টে সাজাচ্ছে। পদ্ম পাতার উপরে একটা পাখি বা একটা ব্যাং বা একটা পোকা দাঁড়াতে পারে। এই চিন্তার উপরেই সেই কনসেপ্ট। বাংলাদেশকেও ওই ব্যবস্থার মাঝে আনার চেষ্টা চলছে। আশা করি সেটা নিয়ে লিখবো কখনো। এই পুরো চেষ্টায় ইস্রাইলের প্রবেশ topping on cake-এর মতো কাজ করেছে। ভারতের মাটিতে ইস্রাইলী গোয়েন্দা সংস্থার অফিস থাকার পরেও আমাদের দেশের বুদ্ধিজীবিরা ভারতকে দেখতে পাননি। কিছু তথাকথিত রাজনৈতিক দল আবার ইস্রাইলকে দেখলেও যুক্তরাষ্ট্রকে কোথাও দেখতে পায় না। ভারত এবং ইস্রাইলের বিরুদ্ধে হাল্কা কথা বলেই তারা ক্ষান্ত থাকেন, যা দিয়ে সেসব দেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হবে না কোনদিন। আর ভারতের অস্তিত্ব যে বাংলাদেশ টিকিয়ে রেখেছে, সেটা নিয়ে তো এর আগেই লিখেছি। তারা ভারত-ইস্রাইলকে নিয়েই বেশি মাথা ঘামায়; এই দেশ দু’টির পশ্চিমা জন্মদাতাদের নিয়ে নয়। মোট কথা দাদামশাইকে ছেড়ে দিয়ে তারা বাপকে নিয়েই কথা বলেন; তা-ও আবার দোয়া করেন যেন বাপ আবার হার্ট এটাক না করে! কারণ হার্ট এটাকের সেই ভয় তাদের সত্যিকার অর্থে আছে বলেই ইসলামের বিরুদ্ধে এত ষড়যন্ত্র তারা আজ করছে।
পশ্চিমা বিশ্বের মানুষ গণহারে আজ ইসলামে দিক্ষীত হচ্ছে। ভারতেও একই অবস্থা। গুরুত্বপূর্ণ পশ্চিমা রাজনীতিকের পরিবারের সদস্যরাও ইসলাম নিয়ে নিচ্ছে। এ তো গেল যারা জানিয়ে মুসলিম হচ্ছেন তাদের কথা। যারা না জানিয়ে হচ্ছেন, তাদের হিসেব তো কারো কাছেই নেই! তারা তো তাদের সমাজের সমস্যার চিত্র দেখতেই পাচ্ছে প্রতিদিন। আমাদের মাঝেই বরং জন্মগতভাবে ইসলাম পাবার এক অবান্তর গরিমা কাজ করছে, যার ভারে আমরা নিজেরা কার সামনে নত হয়ে যাচ্ছি, সেটা খেয়ালই করছি না। ডিভোর্স, পারিবারিক কলহ, ব্যাভিচার, মাদক, বেশ্যাবৃত্তি, সমকামিতা, ইত্যাদি অনাচারের কবলে নিপতিত সেকুলার সমাজ moral দিক থেকে দুর্বল থাকে। তাই এদেরকে একবার ধাক্কা দিলেই তার সামনের পুরো দুনিয়া তাসের ঘরের মতো ধ্বসে পড়ে। পশ্চিমাদের রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত এই এলিট সেকুলারদেরকে টার্গেট করেই। তারা জানে যে ইসলামের পথে গেলে এরা পশ্চিমা বিশ্বের কাছ থেকে intellectual leadership নিয়ে নেবে। তাই সেই সুযোগ এদেরকে না দিয়ে বরং ফুসলিয়ে জঙ্গী বানিয়ে হাতে অস্ত্র তুলে দেবার ব্যবস্থা করছে। পশ্চিমারা তাদের এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্যেই এদেশের সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবিদের নিয়ে বৈঠক করে ঢাকায়, কোলকাতায়, আগ্রা-দিল্লীতে।
পশ্চিমা সভ্যতা আজ ধ্বংসোন্মুখে পতিত। এই ক্ষয়িষ্ণু সভ্যতাকে এখন লাইফ সাপোর্টে রাখা হয়েছে। এদের এজেন্টদের অবস্থা তাদের আব্বুদের চাইতে ভালো হবে না। যারা সমস্যার সমাধান দেয়ার ক্ষমতা হারিয়েছে, তাদের কাছ থেকে আমরা কি নিতে পারি আজ? বরং সামনের দিনগুলিতে তাদেরকে গভীর কূপ থেকে উদ্ধার করতে আমাদেরই দড়ি ছাড়তে হতে পারে।
No comments:
Post a Comment