Thursday, 9 June 2016

বিংশ শতকে যুক্তরাষ্ট্রে রাস্তা তৈরির সাথে আমাদের সম্পর্ক কোথায়?



০৯ জুন ২০১৬


এক মার্কিন লেখকের বইয়ে পড়ছিলাম, ‘প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর মোটরগাড়ি শিল্পের উন্নতির সাথেসাথে যুক্তরাষ্ট্রের জেলাগুলির মাঝে দূরত্ব কমে গেল’। এই বাক্যটি থেকে আমরা কি কি পাই? চলুন এক ধরনের ভাব সম্প্রসারণের চেষ্টা করা যাক।

প্রথমতঃ যুক্তরাষ্ট্র রাস্তার উপরে নির্ভরশীল দেশ। মোটরগাড়ির ব্যাপক প্রসারের পর থেকেই দূরত্ব কমেছে যুক্তরাষ্ট্রে। মোটরগাড়ি যেহেতু রাস্তা দিয়ে চলে, তাই সেখানে একইসাথে কয়েক লক্ষ কিলোমিটার পাকা রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল। তার মানে দেশটির বিশালত্বের কারণে যে দূরত্ব, তা কমানোর জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে রাস্তা তৈরি করতে হয়েছিল। রেল আরও আগে থেকেই ছিল বটে, কিন্তু একথার মানে দাঁড়ায় যে রেল দেশের সকল স্থানকে যুক্ত করতে পারেনি, যেটা রাস্তা করেছিল। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থায় রাস্তার গুরুত্ব বাড়তে থাকে প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে এবং রাস্তার উপরেই সেদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থার নির্ভরশীলতা তৈরি হলো ওই সময় থেকেই।

দ্বিতীয়তঃ রেল যুক্তরাষ্ট্রের যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ওঠায়নি। যেহেতু কথাটা প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরের সময় নিয়ে, তার মানে দাঁড়াচ্ছে যে এর কিছুদিন আগেও, ঊনিশ শতকেও (যখন গাড়ির প্রচলন হয়নি তেমন) সেদেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা বেশ খারাপই ছিল। রাজ্যগুলি এবং জেলাগুলিকে একত্রিত করার খুব সহজ একটা উপায় ছিল না তাদের কাছে। এটা বুঝতে খুব একটা পরিশ্রম করতে হয় না, শুধু ম্যাপে যুক্তরাষ্ট্রের বিশাল আকৃতির দিকে তাকালেই বোঝা যায়।

http://static2.tripoto.com/media/filter/medium/img/15546/TripDocument/indian_railway_passengers.jpg
ভারতে রেল ডেভেলপ করলেও পাকিস্তানে একেবারেই করেনি। পাকিস্তানে ডেভেলপ করেছিল রাস্তা আর গাড়ির বাজার।

তৃতীয়তঃ যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভারতে কিন্তু রাস্তা তৈরি হয়নি; তৈরি হয়েছে রেল। যুক্তরাষ্ট্র থেকে বের হয়ে আমাদের কাছাকাছি আসা যাক – একেবারে ভারতীয় উপমহাদেশে। ভারতে এখনও পৃথিবীর সবচাইতে বিশাল রেল নেটওয়ার্কগুলির একটি রয়েছে। এটা কি ১৯৪৭ সালে স্বাধীনতার পরে তৈরি হয়েছিল? হয়তো অনেকটা তা-ই; কিন্তু এর মূল যে ব্রিটিশ আমলে গাঁড়া হয়েছে, সেটা কারো দ্বিমত থাকার কথা নয়। ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া রেল নেটওয়ার্ক আমরা বাংলাদেশেও দেখি। ১৯৪৭ সালে যা রেল নেটওয়ার্ক ছিল, তার থেকে আমরা কিন্তু খুব কমই বাড়িয়েছি। আমরা বলি যে সেটা আমরা বাড়াতে পারিনি, কিন্তু আসলে বাড়াতে পারিনি, নাকি বাড়াইনি, সেটা একটু পরই আলোচনা করবো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর কি ভারত গাড়ি দিয়ে ছেয়ে গিয়েছিল? অবশ্যই না; কারণ এটা ছিল ব্রিটিশ উপনিবেশ; এখানকার ‘দাস’দের মাঝে কয়জন গাড়ি কিনতে পারবে? ঠিক! তার মানে এখানে গাড়ির বাজার তেমন একটা ছিল না। প্রাইভেট কার তো খুব কম সংখ্যক হবে; ট্রাক-বাস কি সমস্যা করলো তাহলে? ট্রাক-বাস-সহ অন্যান্য গাড়ির বাজার এখানে থাকলে কি ব্রিটেনের লাভ হতো না? সেখানেই আসল প্রশ্ন। ব্রিটেনে তৈরি পণ্য কিন্তু ভারতেই বিক্রি হতো। কাজেই ব্রিটেনে গাড়ি তৈরির বড় শিল্প থাকলে সেই পণ্য ব্রিটেন এখানে বিক্রি করে লাভ করবে না – এটা কিভাবে হয়? আসলে নিজেদের দেশে গাড়ির শিল্প তেমন গড়ে না ওঠায় ব্রিটিশরা তাদের ভারতীয় উপনিবেশে গাড়ির বাজার ‘ডেভেলপ’ করেনি। যুক্তরাষ্ট্রের মতোই বিশাল হওয়া সত্ত্বেও ভারতে কিন্তু যোগাযোগের ব্যাপারে গাড়ি বিরাট ভূমিকা পালন করেনি। ব্রিটিশরা ‘কম খরচের’ রেলকেই এখানে জারি রেখেছিল। তবে সবচাইতে কম খরচের নৌপথকে ধ্বংস করতে কিন্তু ভুলে যায়নি, যা নিয়ে এর আগেই অনেক লিখেছি

চতুর্থতঃ ভারতের মতো পাকিস্তানে কিন্তু রেল ডেভেলপ করেনি। ১৯৪৭ সালে ভারতীয় উপমহাদেশ ভাগ হয়ে যাবার পরেও নতুন দেশ ভারতে কিন্তু রেলের ব্যবহার কমেনি একবিন্দু, বরং সেই গুরুত্ব এখনও জারি আছে। তাহলে পাকিস্তান কি দোষ করলো? সেখানে কেন রেল গুরুত্বপূর্ণ হলো না? পূর্ব বাংলায় না হয় নদীর সংখ্যা বেশি ছিল, কিন্তু এই যুক্তি তো পশ্চিম পাকিস্তানের ক্ষেত্রে সাজে না? সেখানে কেন রেল পাত্তা পেল না? কেন আজও পাকিস্তানে ৯৬% পরিবহণ রাস্তা দিয়ে হয় এবং কেন মাত্র ৪% রেল দিয়ে হয়? যেখানে আমরা জানি যে রেল কতটা সাশ্রয়ী।

https://s-media-cache-ak0.pinimg.com/736x/7d/ed/2b/7ded2bfc2906f0de3c8770b57e10037e.jpg
১৯৬১ সালে ব্রিটেনের রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ পাকিস্তানে আসেন। আইয়ূব খান রাণীকে রাস্তায় ঘোরান ঠিকই, কিন্তু সেটা তিনি করেন যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি ক্যাডিলাক গাড়িতে করে। বুঝতে বাকি থাকেনা যে দুনিয়ার চাবির হাতবদল হয়েছে।

পঞ্চমতঃ পাকিস্তানে মার্কিন গাড়ি বাজার পেয়েছিল; ভারতে পায়নি। ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পরে ভারতে গাড়ি তৈরি হলো ব্রিটিশ ডিজাইনের Ambassador, আর পাকিস্তানে পাওয়া গেল মার্কিন ডিজাইনের যত গাড়ি সম্ভব সব। ব্রিটিশ ডিজাইনের গাড়ি কিন্তু ভারতেই তৈরি হতে লাগলো; ব্রিটিশরা ভারতে গাড়ি বিক্রির ব্যবসা তেমন করতে পারেনি। অন্যদিকে পাকিস্তানের কথা কিন্তু আলাদা। তারা ভারতের মতোই ব্রিটিশ উপনিবেশ হওয়া সত্ত্বেও গাড়ি তৈরি করা দূরে থাক, তাদের রাস্তা আমদানি করা মার্কিন গাড়ি দিয়ে ভরে গেল। এটা কি কোন কাকতালীয় ব্যাপার ছিল? অবশ্যই না।

ষষ্ঠতঃ পাকিস্তান অর্থনৈতিকভাবে ১৯৪৭ সালের পর ব্রিটেন থেকে পুরোপুরি ছিন্ন হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের তূলার উপরে নির্ভর করে ব্রিটিশ টেক্সটাইল শিল্প গড়ে উঠেছিল, যার বাজার ছিল ভারতে। আবার ভারতীয় উপমহাদেশে (প্রধানত পূর্ব বাংলায়) উতপাদিত পাটের উপরে নির্ভর করে ব্রিটেনের ডান্ডি অঞ্চলে গড়ে উঠেছিল পাটের শিল্প। পশ্চিম বাংলায়ও পাটের শিল্প গড়ে উঠেছিল পূর্ব বাংলার পাটের উপরে নির্ভর করে। ১৯৪৭ সালের পর থেকে ব্রিটেন এই এলাকায় তার কাপড়ের ব্যবসার অনেকটাই হারায়। পাকিস্তান আমলে পশ্চিম পাকিস্তানে গড়ে ওঠে তূলা-সূতা-টেক্সটাইল শিল্প আর পূর্ব বাংলায় গড়ে ওঠে পাটের শিল্প সাথে কিছু টেক্সটাইলও। এর ফলশ্রুতিতে ব্রিটেনে ডান্ডির পাটের কারখানাগুলি বন্ধ হয়ে যায়। ভারতীয় উপমহাদেশের পাকিস্তান অংশের সাথে ব্রিটেনের অর্থনৈতিক যোগাযোগের ভিত্তি ধ্বংস হয়ে যায় এভাবে। অর্থাৎ পাকিস্তান ব্রিটেন থেকে পুরোপুরি আলাদা হয়ে যায়, কিন্তু সেটা কিন্তু ভারতের ক্ষেত্রে পুরোপুরিভাবে ঘটেনি।

সপ্তমতঃ ভারত ভাগের সাথে সাথে ব্রিটেন তার ভারতীয় ব্যবসা আরেকজনের কাছে হারায়। ১৯৪৭ সালের আগে পাকিস্তানের (যুক্ত পাকিস্তানের) মানুষ রান্না করার সময় তেল ব্যবহার করতো না? অবশ্যই করতো। সেটা কি সয়াবিন তেল ছিল? সেখানেই প্রশ্ন। পাকিস্তান আমলেই এদেশে খাবার তেলের ব্যবহারে ব্যাপক পরিবর্তন আসতে থাকে। বলাই বাহুল্য যে সয়াবিন তেল যুক্তরাষ্ট্রের পণ্য। ব্রিটিশদের কিন্তু কোন খাবার তেলের ব্যবসা ছিল না। উপরে বলেছি যে তাদের ব্যবসা ছিল টেক্সটাইল আর পাটের। ঊনিশ শতক পর্যন্ত ব্রিটিশদের আরও কয়েকটি ব্যবসা ছিল – ইন্ডিগো (নীল), গানপাউডার এবং আফিম। ইন্ডিগো এবং গানপাউডারের ব্যবসা জার্মানদের শিল্পের কারণে ধ্বংস হয়ে যায়; আর আফিম আস্তে আস্তে মরে যায় বাজার ধরে না রাখতে পারার কারণে। বলাই বাহুল্য যে এই সবগুলি বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দু ছিল ভারতীয় উপমহাদেশ। ভারতকে ছেড়ে যাবার সাথে সাথে ব্রিটেনের সবগুলি প্রধান ব্যবসাই প্রতিদ্বন্দ্বীদের হাতে চলে যায়। পাকিস্তান তৈরির সাথে সাথে মারা যায় ব্রিটেনের শেষ ব্যবসা দু’টি – টেক্সটাইল এবং পাট। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মাঝ দিয়ে ব্রিটিশ সাম্রাজের পতন হয় শুধু উপনিবেশগুলি হারাবার সাথে সাথে নয়, উপনিবেশের সাথে যেসব ব্যবসা ব্রিটেনকে শক্তিশালী দেশ হিসেবে দুই শতক দুনিয়া শাসন করতে সাহায্য করেছিল, সেগুলোও। চাবি চলে গেল আরেকজনের কাছে।

অষ্টমতঃ ১৯৪৭ সালে পাকিস্তান নতুন প্রভূ বেছে নেয়; ভারত আগের প্রভূর হাত ধরে থাকে। উপরের আলোচনা থেকে পরিষ্কার যে পাকিস্তান ব্রিটেনের শেষ প্রতিপত্তিগুলি ধ্বংস করতে মার্কিনীদের সহায়তা করেছে এবং মার্কিনীদের বিভিন্ন পণ্যের – যেমন সয়াবিন তেল, গাড়ি, ইলেকট্রনিক্স পণ্য, ইত্যাদির বাজার হিসেবে নিজেকে উপস্থাপিত করেছে। মার্কিন বন্ধু রাষ্ট্রগুলিও এখানে বাজার দখল করে ব্রিটেনকে তাড়িয়েছে। জাপান, পশ্চিম জার্মানি, হল্যান্ড, ইত্যাদি দেশগুলিকে যুক্তরাষ্ট্র এখানে ব্যবসা করার সুযোগ করে দিয়েছে। অর্থাৎ এক প্রভূর প্রস্থানের সাথেসাথে আরেক প্রভূর কাছে নিজেকে সঁপে দিয়েছে। এই কাজটা করেছে পাকিস্তানের শাসকবর্গ, আর নীরবে মেনে নিয়েছে দেশের জনগণ। পাকিস্তানের যে ঘটনাগুলির বর্ণনা দিলাম, সেগুলি ভারতে হয়নি, কারণ ভারত ব্রিটেনের হাত তখনও ছাড়েনি। পাকিস্তানের মুসলিম লীগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ঢুকে পড়তে পেরেছিল, সেটা কিন্তু ভারতের কংগ্রেসের ক্ষেত্রে ঘটেনি। ভারতের স্বাধীনতার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কতটা আগ্রহী ছিল, সেটা ১৯৪১ সাল থেকে চার্চিল আর রুজভেল্টের চিঠিগুলি দেখলেই বোঝা যায়। যুক্তরাষ্ট্রের সাহায্যের উপরেই তখন নির্ভর করছিল যে ব্রিটেন হিটলারের হাত থেকে রক্ষা পাবে কিনা। ব্রিটেনকে মার্কিন সাহায্যের শর্ত হিসেবে উপনিবেশগুলি ছেড়ে দিতে হয়েছিল। এভাবেই ১৯৪৫-এর পর থেকে বহু দেশের জন্ম হয় এবং সকলেই মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জাতিসংঘের সদস্য হয়ে নতুন প্রভূর কাছে নতি স্বীকার করে। এভাবেই দুনিয়ার চাবি হাতবদল হয়।

নবমতঃ যুক্তরাষ্ট্র পূর্ব বাংলা তথা বাংলাদেশে গাড়ির বাজার তৈরি করতে হিমসিম খেয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানে তার গাড়ির বাজার তৈরি করতে পেরেছিল কারণ তারা একইসাথে পাকিস্তানের নেতৃত্বকে রেল নেটওয়ার্ক ডেভেলপ করা থেকে বিরত রাখতে পেরেছিল। পূর্ব বাংলা ছিল এক অদ্ভূত জায়গা। এখানে অলি-গলি পাকস্থলি সকল জায়গায় ছিল পানি – নদী-নালা-খাল-বিল-হাওড় ইত্যাদি। এখানে রাস্তা বানানো যেমন কঠিন, নৌকা দিয়ে যাতায়াতও তেমনি সহজ। এখানেই যুক্তরাষ্ট্রের গাড়ির বাজার ধরা খেয়ে যায়। আকারে ছোট হওয়ার কারণেও এখানে গাড়ির বাজার বড় করাটা ছিল কঠিন। পশ্চিম পাকিস্তান সেই তুলনায় বিরাট (এবং মরুপ্রায়) হওয়ায় সেখানে গাড়ির বাজারের সম্ভাবনা ছিল অনেক ভালো। গাড়ির বাজার ডেভেলপ করা তো গেল এক কথা, কিন্তু আরেকটা ব্যাপার থাকে সেই ম্যারিটাইম দিকটা নিয়ে, সেটা নিয়ে এর আগেই কথা বলেছি; যার কারণে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র উভয়েই নদী-কেন্দ্রিক কোনকিছুই পূর্ববাংলায় ডেভেলপ হতে দেয়নি। এর আগে এক লেখায় বিখ্যাত ভূরাজনীতিবিদ জর্জ ফ্রীডম্যানের উল্লেখ করে বলেছি যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেখানেই ম্যারিটাইম দেশ তৈরির আভাস দেখবে, সেখানেই সে হস্তক্ষেপ করে সেখানে সবকিছু ভন্ডুল করে দেবে।
http://d30fl32nd2baj9.cloudfront.net/media/2015/11/24/traffic-police-road-repair.jpg/ALTERNATES/w640/traffic-police-road-repair.jpg
পানির দেশে রাস্তা তৈরি এবং মেরামত কঠিন হলেও রাস্তা তৈরির মাঝেই উন্নতি লুক্কায়িত আছে - এই কথাটাই আমাদের মনের মাঝে গেঁথে দেয়া হয়েছে অতি সযতনে! এর সাথে সাথে তৈরি হয়েছে গাড়ির বাজার, তেলের বাজার এবং গুডবাই হয়েছে পশ্চিমাদের ভীতি - ম্যারিটাইম শক্তির আবির্ভাবের সম্ভাবনা। দাসত্বের শৃংখল এভাবেই পায়ে পড়ানো হয়!

দশমতঃ যোগাযোগের ক্ষেত্রে মার্কিনীরা এদেশের মানুষের চিন্তায় পরিবর্তন আনার চেষ্টা করে। এখানে মোটামুটি ধরে নেয়া যায় যে বাংলাদেশে রাস্তা তৈরির সংস্কৃতি এসেছে পাকিস্তান থেকে। কিছু কথার প্রচলন করা হয়েছে, যেমন – “এত্ত ব্যাকওয়ার্ড জায়গা; নৌকা দিয়ে যেতে হয়”। পাকিস্তানের মতো মরু এলাকার মানুষেরাই এই ‘চিন্তা’র বাহক হবার জন্যে ছিল পারফেক্ট! আর বাংলাদেশ হবার পরে এদেশেও সেই একই মার্কিন ‘চিন্তা’ এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হয় – “রাস্তাঘাট (আসলে শুধুই রাস্তা, ঘাট নয়) তৈরির মাধ্যমেই উন্নতি সম্ভব”। এদেশে মার্কিন এবং ১৯৬০-১৯৭০-এর দশক থেকে মার্কিন নিয়ন্ত্রিত জাপানে তৈরি গাড়ি দিয়ে ভরে যায়। রাস্তা না থাকলে গাড়ি বিক্রি কি করে সম্ভব?

শেষতঃ ‘চিন্তা’ না থাকলে দাসত্ব বরণ নিশ্চিত! আমরা একটা মাত্র বাক্য দিয়ে শুরু করেছিলাম এই লেখা, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের সমাজ-অর্থনীতির একটা ঐতিহাসিক বর্ণনা দেয়া হয়েছিল। সেখান থেকে মোটামুটিভাবে আমরা বিংশ শতকে বিশ্ব-নিয়ন্ত্রণের চাবি হস্তান্তর থেকে শুরু করে এদেশে মার্কিন প্রভাব এবং আমাদের নতুন প্রভূর আনুগত্য স্বীকারের কাহিনী পর্যন্ত স্বল্প পরিসরে আলোচনা করলাম। যে ভাব সম্প্রসারণের কথা বলেছিলাম, সেটা আসলে কি? এটাই হচ্ছে ‘চিন্তা’। এই ‘চিন্তা’টাকে একটু এক্সারসাইজ করলে ওই একই বাক্য থেকে আরও অনেক কিছুই বের করা সম্ভব। এটাই ‘চিন্তা’। এই ‘চিন্তা’র আবার একটা শক্ত ভিত্তি লাগে, নাহলে এটা মানুষকে ঘোরাতে থাকে এবং কোন উদ্দেশ্যই বাস্তবায়ন করতে দেয় না। ‘চিন্তা’ থাকা মানেই শক্তিশালী হওয়া, আর না থাকা মানে অন্যের দাসত্ব স্বীকার করে নেয়া।

Thought is Power.


No comments:

Post a Comment