Wednesday, 29 June 2016

জার্মান জাতির একত্রীকরণ আর বাংলার মানচিত্রের “বাস্তবতা”

২৯শে জুন ২০১৬
১৭০০ সালের শুরুতে ইউরোপ। প্রুশিয়ার জন্ম হয়েছে মাত্র। জার্মানির জন্ম অতে আরও দেড়'শ বছর বাকি।


আজকে জার্মান একত্রীকরণ নিয়ে কিছু গীত গাইবো; বিংশ শতকের পূণ-একত্রীকরণ নয়, ঊনিশ শতকের একত্রীকরণের গীত। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন যখন ভেঙ্গে যাচ্ছে, তখন সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ আলোচনা হবে জার্মানির কি হবে? ব্রিটেনের কি হবে, অভিবাসীদের কি হবে, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া এবং বাকিরা কি ভোটাভুটিতে যাবে কিনা – এগুলি ছোট প্রশ্ন। আসল প্রশ্ন হলো ইউরোপ যে ভেঙ্গে যাচ্ছে, তাতে সবচাইতে বড় সমস্যায় পড়বে কারা? তারাই সমস্যায় পড়বে যারা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নকে ব্যবহার করে তাদের হাই-টেক পণ্যের সবচাইতে বড় বাজার গড়ে তুলেছে। এটা আর কোন দেশ নয় – জার্মানি। ১৮৭০ থেকে ইউরোপের সবকিছুই জার্মানিকে ঘিরে। তাই আজকে আমাদের দেখা প্রয়োজন জার্মানি কি করে জন্ম নিল। আর একই সাথে আমাদের দেখতে হবে – জার্মানির জন্ম আমাদের কি শিক্ষা দেয়?

ন্যাপোলিয়ন – জার্মান জাতীয়তাবাদের উস্কানিদাতা

জার্মান জাতিকে একত্রিত করার পেছনে সবচাইতে বড় ক্রেডিট অবশ্যই দিতে হবে ন্যাপোলিয়ন বোনাপার্টকে। ন্যাপোলিয়নের উত্থানের আগে জার্মান জাতি পুরোটাই ছিল Holy Roman Empire-এর অধীনে, যার নেতৃত্ব ছিল আস্ট্রিয়া রাজ্যের বংশানুক্রমিক Hapsburg রাজাদের হাতে। জার্মানি বলতে ছিল কয়েক’শ ছোট বড় রাজ্যের এক জগাখিচুরি। এদের মাঝে সবচাইতে বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ ছিল প্রুশিয়া, যার অষ্টম শতাব্দীর শুরুতে জন্ম হয়, আর সেই শতাব্দীর দ্বিতীয় অংশ জুড়ে ফ্রেডরিক দ্যা গ্রেটের (ক্ষমতায় ছিলেন ১৭৪০-১৭৮৬) সুযোগ্য নেতৃত্বে ধীরে ধীরে বড় হতে থাকে। দু’টো বড় বড় যুদ্ধ – অস্ট্রিয়ার উত্তরাধিকারের যুদ্ধ (১৭৪০-১৭৪৮) এবং সপ্তবর্ষব্যাপী যুদ্ধ (১৭৫৬-১৭৬৩) এই নতুন দেশটির উপর দিয়ে যায়। ইউরোপের অন্যান্য শক্তিগুলি এই যুদ্ধগুলির মাঝে প্রুশিয়াকে পিষে ফেলতে চাইলেও প্রুশিয়া ঠিকই দাঁড়িয়ে থাকে। ন্যাপোলিয়ন ক্ষমতায় এসে ১৮০৬ সালে অস্ট্রিয়া এবং প্রুশিয়াকে যুদ্ধে হারিয়ে পুরো Holy Roman Empire-ই বাতিল করে দেন। জার্মান রাজ্যগুলিকে ভাগ ভাগ করে ন্যাপোলিয়ন এই অঞ্চলের ‘Divide and Rule’ নীতিকে নতুন রূপ দেন। কিন্তু তিনি প্রুশিয়াকে ভেঙ্গে ফেলেননি। ন্যাপোলিয়নের প্রধান শত্রু ব্রিটিশরাও ওই মুহুর্তে হয়তো চেয়েছিল যে প্রুশিয়া এক থাকুক, যাতে প্রুশিয়াকে পরবর্তীতে ন্যাপোলিয়নকে আটকানোর কাজে লাগানো যায়। ব্রিটিশ বা ফ্রেঞ্চদের কেউই হয়তো কিছুটা ধারণা করলেও পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি যে প্রুশিয়া পরবর্তীতে ইউরোপের ‘জার্মান প্রবলেম’কে আরও কঠিন করবে। নাহলে প্রুশিয়াকে তারা হয়তো এক থাকতে দিতেন না।

Holy Roman Empire ভেঙ্গে দেবার ফলে জার্মান রাজ্যগুলি তাদের অভিভাবক হারায়, আর ফ্রেঞ্চ অধীনে থাকার স্বাদ পেতে শুরু করে। অধীনতা তাদের এর আগেও ছিল; যখন তারা ছোট ছোট রাজ্যে বিভক্ত থাকার কারণে ইউরোপের অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলির খেলার গুটি হিসেবে কাজ করেছে। কিন্তু সেটা ছিল Intellectual Subjugation, যেটা অনেক জার্মানই টের পাননি। ন্যাপোলিয়নের দখলদারিত্ব জার্মানদের একেবারে অন্তরে আঘাত করলো, যা জন্ম দিল ‘জার্মান জাতীয়তা’র। এসময়েই জার্মান জনগণের মাঝে জাতিগত ক্ষোভ প্রকাশ পেতে থাকে। তবে এই ক্ষোভকে পুঁজি করে কেউ নেতৃত্ব দেবার মতো অবস্থা তৈরি হয়নি তখনও। ১৮০৬-০৭ সালে ন্যাপোলিয়ন জার্মানদের ব্যবহার করে পোল্যান্ডের সাথে যুদ্ধ করেন। ১৮১২ সালে ন্যাপোলিয়ন রাশিয়া আক্রমণ করেন আর সেই আক্রমণ শেষ হয় বিরাট এক বিপর্যয়ের মাঝ দিয়ে। ন্যাপোলিয়নের সাথে রাশিয়াতে যুদ্ধ করতে গিয়েছিল ১২৫,০০০ জার্মান সৈন্য। ন্যাপোলিয়নের পক্ষে যুদ্ধ করতে গিয়ে এই বিপর্যয় জার্মানদের মাঝে প্রচন্ড ক্ষোভের জন্ম দেয়। এসময়েই জার্মানদের উপর থেকে ন্যাপোলিয়নের গ্রিপ ছুটে যেতে থাকে। ১৮১৩ সালে ন্যাপোলিয়ন শেষ চেষ্টা করেন জার্মানদেরকে তার অধীনে নিয়ে আসার। লাইপজিগের যুদ্ধে ন্যাপোলিয়ন অস্ট্রিয়া রাশিয়া প্রুশিয়া স্যাক্সনি এবং সুইডেনের সন্মিলিত বিশাল বাহিনীর কাছে পরাজিত হয়ে রাইন নদীর পূর্ব তীর ত্যাগ করতে বাধ্য হন। ওই যুদ্ধে প্রুশিয়ান এবং জার্মান সৈন্যরা যে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে, তাতে তাদের জাতীয়তাবোধ উজ্জীবিত হয়। ১৮১৪-১৫ সালে ন্যাপোলিয়নের সাথে শেষ যুদ্ধগুলিতেও প্রুশিয়ান-জার্মানরা বিরাট ভূমিকা রাখে। ওয়াটারলু-র যুদ্ধে ন্যাপোলিয়ন শেষবারের মতো পরাজিত হন; সেই যুদ্ধে প্রুশিয়ার জেনারেল গেবহার্ড ভন ব্লুশারের ভূমিকা জার্মানদের বীরগাঁথা হয়ে দাঁড়ায়।

ব্রিটেন-ফ্রান্স-অস্ট্রিয়া-রাশিয়ার হাতে জিম্মি জার্মানরা

কিন্তু ন্যাপোলিয়ন পরবর্তী ইউরোপে ব্রিটেন ফ্রান্স অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া এক চুক্তির মাধ্যমে (কংগ্রেস অব ভিয়েনা, ১৮১৫) ইউরোপকে তাদের নিজের মাঝে Sphere of Influence হিসেবে ভাগ করে নেন। একেক শক্তির নিজস্ব প্রভাব খাটানোর কিছু এলাকা থাকবে, যেখানে অন্যরা নাক গলাবে না। এভাবে প্রুশিয়া সহ বেশিরভাগ জার্মান রাজ্যকে অস্ট্রিয়া-হাঙ্গেরী রাজের অধীনে এনে ‘জার্মান কনফেডারেশন’ গড়ে তোলা হলো। ফলশ্রুতিতে জার্মানরা আবারও অস্ট্রিয়ার রাজার অধীন হলো। মাঝ দিয়ে প্রুশিয়ার যে উত্থান হচ্ছিল, তাকে চাপানোর চেষ্টা চললো। ন্যাপোলিয়নের সময়ে যে ‘জার্মান জাতীয়তা’র জন্ম হয়েছিল, তা ইউরোপের শক্তিশালী দেশগুলির সহায়তায় ক্ষমতায় থাকা রাজন্যবর্গ গায়ের জোরে থামানো চেষ্টা করলো। এই জোর খাটানোর প্রবণতা জার্মানদের জাতীয়তাকে আরও উস্কে দেয়। আর এসময়েই আবারও প্রুশিয়ার উত্থান শুরু হয়। প্রুশিয়ার অর্থমন্ত্রী কাউন্ট ভন বুলাউ বাকি জার্মান রাজ্যগুলির সাথে ১৮১৮ সালে একটা ‘কাস্টমস ইউনিয়ন’ (Zollverein, জলভেরাইন) করলেন, যার মাধ্যমে জার্মান রাজ্যগুলির মাঝে বাণিজ্য এবং যাতায়াতের বাধাগুলি একেবারেই দূর করে ফেলা হলো। বলাই বাহুল্য যে এই চুক্তির মাঝে অস্ট্রিয়াকে রাখা হয়নি। আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো ইউরোপের শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলি তখন এর গুরুত্ব বুঝতে ব্যর্থ হয়েছিল।

লোহার দৈত্যের অংশগুলি জোড়া লাগছে…

ন্যাপোলিয়নের সময় পর্যন্ত জার্মান রাজ্যগুলির মাঝে দিয়ে বেশ কিছু ভালো রাস্তা গিয়েছিল; যার মূল উদ্দেশ্য ছিল জার্মান ভূমির মাঝ দিয়ে সৈন্য প্রবাহের সুবিধা করা। ন্যাপোলিয়নের পর এই রাস্তাগুলির খুব একটা উন্নত হয়নি। তবুও শক্ত রাস্তা ১৮১৬ সালে ৩,৮০০ কিঃমিঃ থেকে ১৮৫২ সালে ১৬,৬০০ কিঃমিঃ-এ উন্নীত হয়। তবে রাস্তার আর এক বিকল্প হাজির হয়, যা কিনা কাস্টমস ইউনিয়নকে সঠিকভাবে কাজ করার সুযোগ করে দেয়, যা হচ্ছে – রেলওয়ে। ১৮৩৫ সালে জার্মান রাজ্যগুলিতে রেলওয়ে ছিল ৬ কিঃমিঃ, যা ১৮৩৮ সালে হয় ১৪১ কিঃমিঃ; আর ১৮৪০ সালে হয় ৪৬২ কিঃমিঃ; ১৮৬০ সালে হয় ১১,১৫৭ কিঃমিঃ। এই সময়টা ছিল শিল্পোন্নয়নের সময়। জার্মান রাজ্যগুলির সকল গুরুত্বপূর্ণ শহর এবং শিল্পাঞ্চলগুলি রেলওয়ের মাধ্যমে যুক্ত করে ফেলা হলো। রাইন, দানিয়ুব, এলব, ওডার, ওয়েজার, ইত্যাদি গুরুত্বপূর্ণ নদীপথগুলিকে খালের মাধ্যমে সংযোগ করে আরও উন্নত করা হলো। নদীপথে সমুদ্রের সাথে শিল্পাঞ্চলগুলির যেমন যোগাযোগ সহজ ছিল, তার সাথে রেলওয়ে যুক্ত হবার সাথেসাথে অভ্যন্তরীণ যোগাযোগের ব্যাপক উন্নতি হলো। দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি হতে থাকলো রাজ্যগুলির; আর একে অন্যের সাথে আর্থসামাজিকভাবে আরও কাছাকাছি আসতে লাগলো। জার্মান সাহিত্যিকরা জাতীয়তাবাদী কবিতা ও গান লিখতে থাকলেন। রাইনল্যান্ডকে ফ্রান্সের হাত থেকে মুক্ত রাখার জন্যে কবিতা রচিত হলো। জার্মান শহরগুলির মাঝে ভ্রমণ বেড়ে গেল। ট্রাভেল গাইড লেখা হলো – কি করে জার্মানির কোথায় ট্রাভেল করা যায়; কোথায় কোন পূরাকীর্তি এবং দর্শনীয় স্থান রয়েছে; কোথায় কোন গুণী ব্যাক্তির কবর রয়েছে, ইত্যাদি। জার্মান একত্রীকরণের গ্রাউন্ডওয়ার্ক এভাবেই হলো। তবে এখানে প্রুশিয়া যে নেতৃত্ব দিচ্ছিলো, সেটা বলাই বাহুল্য। জার্মানরা প্রুশিয়ার কাছাকাছি আসতে থাকলো, আর অস্ট্রিয়ার মাল্টি-কালচারাল পরিচয় থেকে দূরে যেতে থাকলো। এবার শুধু রাজনৈতিক একত্রীকরণের বাকি।
ন্যাপোলিয়নের পতনের পরে ভিয়েনা কনভেনশনের অধীনে 'জার্মান কনফেডারেশন', যা জার্মানদেরকে অস্ট্রিয়ার নিয়ন্ত্রণে রেখে দিয়েছিল। এটাই ছিল জার্মান জনসাধারণের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া "বাস্তবতা", যাকে অনেকেই "অপরিবর্তনীয়" বলে ভাবতো। কিন্তু অতি অল্প সময়েই সেই "বাস্তবতা"র পরিবর্তন হয়েছিল। মানচিত্র - হলুদ অংশ অস্ট্রিয়া, নীল অংশ প্রুশিয়া এবং ধূসর অংশ জার্মান রাজন্যবর্গ।


পরাশক্তিদের ভীতির “বাস্তবতা”য় পিছিয়ে যাওয়া…

১৮১৭ সালের ওয়ারটবুর্গ র‌্যালি এবং ১৮৩২ সালের হামবাক ফেস্টিভাল জার্মান জাতীয়তা উস্কে দেয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু রাজন্যবর্গের চাপের মুখে এই আন্দোলনগুলি মুখ থুবরে পরে। ১৮৪৮-৪৯ সালে এই আন্দোলন বেশ শক্তিশালী হয়। ১৮৪৯ সালে ফ্রাঙ্কফুর্টের নতুন পার্লামেন্ট নতুন একটা সংবিধান রচনা করতে সক্ষম হয় এবং জার্মানদের নেতৃত্ব দেয়ার জন্যে প্রুশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিক উইলিয়ামকে অনুরোধ করে। কিন্তু ফ্রেডরিক উইলিয়াম অনেক কথা ভেবে নেতৃত্ব নিলেন না। মুখে তিনি বললেন যে সব জার্মান প্রিন্সদের অনুমতি ছাড়া তিনি ক্ষমতা নিতে পারেন না, কিন্তু অন্তরে তার ভয় ছিল যে জার্মানদের নেতৃত্ব নিতে গেলে অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া ক্ষেপে যাবে। ১৮১৫ সালের ভিয়েনা কংগ্রেসে জার্মানদের উপরে অস্ট্রিয়ার রাজের যে Sphere of Influence জারি রাখার কথা বলা হয়েছিল, সেটার নিশ্চয়তাদানকারী ছিল রাশিয়া। অর্থাৎ বৃহত শক্তিদের তুষ্ট করতেই ১৮৪৯ সালে জার্মানরা এক হতে পারলো না। ভিয়েনা কংগ্রেসের ওই Sphere of Influence যে ভিত্তির উপরে প্রতিষ্ঠিত ছিল, তার একটা মূল স্তম্ভ ছিল জার্মানদের আর ইটালিয়ানদের বিভক্ত রাখা। ফ্রাঙ্কফুর্ট পার্লামেন্টের কিছু কার্যকলাপের মাঝে কেউ কেউ পরবর্তীতে বিংশ শতকের জার্মান জাতীয়তাবাদের শেকড় খুঁজে পেয়েছিলেন। সেটা অবশ্য আরেক কাহিনী।

যাহোক, ফ্রেডরিক উইলিয়াম পুরোপুরি দমে যাননি। তিনি ‘এরফুর্ট ইউনিয়ন’ নামে একটা ফেডারেশন তৈরি করতে চাইলেন যেটাতে অস্ট্রিয়াকে বাদ দিয়ে সব জার্মান রাজ্যগুলিকে নিয়ে একটা ফেডারেশন গঠন করা হবে। এই চেষ্টার কথা শুনে অস্ট্রিয়া এবং রাশিয়া চাপ দিল এবং ১৮৫০ সালে ওলমুতজ নামে এক শহরে বসে ফ্রেডরিক উইলিয়ামকে এই চিন্তা বাদ দিতে বাধ্য করলো। জার্মানরা অনেকেই এই চুক্তিকে ‘ওলমুতজের অপমান’ বলে ডাকে। তবে এরফুর্ট আর ওলমুতজের চুক্তিগুলি সবাইকে বুঝিয়ে দিল যে জার্মানদের আর আলাদা করে রাখা সম্ভব হবে না; জার্মান একত্রীকরণ এখন শুধু সময়ের ব্যাপার মাত্র।
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/72/BismarckRoonMoltke.jpg
বিসমার্ক, ভন রুন এবং ভন মল্টকা - এই তিনজন প্রুশিয়ান স্টেটসম্যান জার্মান একত্রীকরণে বিরাট ভূমিকা রেখেছিলেন। ১৮৫৭ থেকে ১৮৭১ সালের মাঝে ইউরোপের ততকালীন বাস্তবতাকে চ্যালেঞ্জ করে তারা ইউরোপের তথা বিশ্বের ইতিহাসে বিরাট পরিবর্তন সাধন করেন।


১৮৫৭-১৮৭১ - পরাশক্তিদের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগে “বাস্তবতা” পরিবর্তন

ইউরোপের রাজনীতি তখন নিয়ন্ত্রণ করতো ব্রিটেন, ফ্রান্স, অস্ট্রিয়া আর রাশিয়া। ১৮৫৪-৫৫ সালের ক্রিমিয়ার যুদ্ধ আর ১৮৫৯ সালের ইটালিয়ান যুদ্ধ (ইটালির দ্বিতীয় স্বাধীনতা যুদ্ধ) ইউরোপের নেতৃত্বে থাকা এই দেশগুলির সম্পর্কের অবনতি ঘটায়। এই বিশৃংখলার সময়টাতেই প্রুশিয়ায় কিছু বড় পরিবর্তন সাধিত হয়, যা কিনা জার্মানির ফাউন্ডেশন গড়ে দেয়। ১৮৫৭ সালে প্রুশিয়ার রাজা চতুর্থ ফ্রেডরিক উইলিয়ামের স্ট্রোক হয়, যার কারণে তিনি দেশ চালাতে অক্ষম হয়ে পড়েন। তার স্থানে আসেন তার ভাই, যিনি নাম নেন রাজা প্রথম উইলহেলম। নতুন রাজা তিনটি গুরুত্বপূর্ণ নিয়োগ দেন – ১৮৫৭ সালে হেলমুথ ভন মল্টকা-কে তিনি প্রুশিয়ান আর্মির চীফ অব জেনারেল স্টাফ নিয়োগ করেন, যিনি প্রুশিয়ান আর্মির অপারেশনাল কর্মকান্ড পুরোপুরি পরিবর্তন করে ফেলেন; ১৮৫৯ সালে আলব্রেখট ভন রুন-কে নিয়োগ দেন যুদ্ধ মন্ত্রী হিসেবে, যিনি প্রুশিয়ান আর্মির ম্যানেজমেন্টে বিরাট পরিবর্তন আনেন; আর সর্বশেষ ১৮৬২ সালে নিয়োগ দেন অটো ভন বিসমার্ক-কে মিনিস্টার-প্রেসিডেন্ত হিসেবে (প্রধানমন্ত্রী), যিনি কূটনীতির মাধ্যমে তিনটি যুদ্ধের সূচনা করেন, যা কিনা জার্মান সাম্রাজ্যের জন্ম দেয় ১৮৭১ সালে। ১৮৫০ সালের পর থেকে ইউরোপের ততকালীন পরাশক্তিরা সত্যিকার অর্থেই ঘুমাচ্ছিল।

বিসমার্ক কূটনীতির মাধ্যমে তিনটি যুদ্ধের জন্ম দেন এবং জার্মানরা ভন রুন-এর মিলিটারি মডার্ননাইজেশন এবং মল্টকা-র উন্নততর স্ট্র্যাটেজির কারণে তিনটিতেই জয়লাভ করে। Bolt Action রাইফেল প্রুশিয়ান সৈন্যদের হাতে দেয়া হয়, যা বাকি ইউরোপের Muzzle-Loading রাইফেলের তুলনায় অনেক বেশি এগিয়ে ছিল। শিল্পোন্নয়নের সাথে সাথে প্রযুক্তিগত দিক থেকে প্রুশিয়ান আর্মি হয়ে ওঠে ইউরোপের সেরা। –

- ১৮৬৪ সালে ডেনমার্কের সাথে প্রুশিয়া এবং অস্ট্রিয়ার যুদ্ধ হয়। এর মাধ্যমে স্ক্লেসউইগ এবং হোলস্টাইন রাজ্যদু’টি প্রুশিয়া এবং অস্ট্রিয়া ডেনমার্কের কাছ তেকে দখল করে নেয়।

- ১৮৬৬ সালে স্ক্লেসউইগ এবং হোলস্টাইন প্রদেশ নিয়ে বিসমার্ক অস্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধের জন্ম দেন। এই যুদ্ধে প্রুশিয়া জয়ী হয়ে দু’টো প্রদেশই লাভ করে। এই যুদ্ধে হেরে অস্ট্রিয়া চিরকালের জন্যে জার্মান রাজ্যগুলিকে হারায়। যুদ্ধের সময়ে বেশিরভাগ জার্মানরা বিসমার্কের আগ্রাসী নীতির বিরোধিতা করে যুদ্ধ থেকে দূরে থাকে।

- ১৮৬৬ সালের যুদ্ধের সময় ফ্রান্স চেয়ে চেয়ে দেখছিল এবং দাঁতে দাঁত চেপে বসেছিল। ১৮৭০ সালে বিসমার্ক এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি করলেন যে ফ্রান্স নিজেই প্রুশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধ বাঁধিয়ে দিল। এর ফলে সব জার্মানরা একত্রিত হয়ে প্রুশিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। প্রুশিয়ার নেতৃত্বে জার্মান সৈন্যরা ফ্রান্সকে সম্পূর্ণরূপে পরাজিত করে রাজধানী প্যারিস দখল করে ফেলে।

- ১৮৭১ সালের ১৮ই জানুয়ারী ফ্রান্সের ভার্সাই প্যালেসে সগৌরবে জার্মান সাম্রাজ্যের ঘোষণা দেয়া হয়। ফ্রান্সের উপরে জার্মান বিজয়ের ফলশ্রুতিতে ফ্রান্সে রাজতন্ত্রের পতন হয়ে তৃতীয় ফ্রেঞ্চ রিপাবলিকের গোড়াপত্তন হয়। অর্থাৎ ফ্রান্সের “বাস্তবতা”ও পরিবর্তিত হয়ে যায়।

জার্মান অর্থনীতি ইউরোপের অন্যান্য দেশের জন্যে হুমকি তৈরি করে শুরু থেকেই। ব্রিটেন দু’টা পণ্যের উপরে নির্ভর করে বিরাট অর্থের পাহাড় গড়েছিল, যেগুলি জার্মানির শিল্প বিপ্লবের কারণে পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে যায়; এর একটি হলো নীল (Indigo) আর আরেকটি হলো গানপাউডার। ব্রিটেনের জন্যে এই দু’টোই আসতো তাদের ভারতীয় উপনিবেশ থেকে। ব্রিটেন এবং ফ্রান্স তাদের উপনিবেশে জোরপূর্বক বিক্রি করার জন্যে পণ্য তৈরি করতো; তাই তাদের পণ্যের মান ছিল খুবই নিম্ন। অন্যদিকে জার্মানির উপনিবেশ ছিল না প্রথমে (পরেও খুব কমই ছিল), তাই জার্মান পণ্য প্রথম থেকেই ছিল অত্যন্ত উন্নতমানের। জার্মানদের প্রযুক্তিগত উতকর্ষ সেই থেকেই জানান দিচ্ছিলো যে তারা ইউরোপে বিরাট এক পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে। আর শত শত বছর ধরে শক্তিধর দেশগুলির স্বার্থে বিভক্ত থেকে জার্মানদের মাঝে যে কঠিন জাতীয়তা জন্ম নিয়েছিল, সেটার ফলাফল ইউরোপ কেন, পুরো দুনিয়ার জন্যেই ভালো হয়নি। শত বছরের শোষণ এবং বঞ্চনাকে জার্মানরা কড়ায়-গন্ডায় উঠিয়ে নিতে চেয়েছে বারংবার। আর প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পরপর এই চেষ্টাকে ব্রিটেন-ফ্রান্স যখন পুরোপুরি হত্যা করতে চেয়েছিল, তখন সেটা আরও বেশি উগ্র হয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের জন্ম দেয়।
https://upload.wikimedia.org/wikipedia/commons/7/7c/Napoleon_III_Otto_von_Bismarck_%28Detail%29.jpg
১৮৭০ সাল। ফ্রান্সের রাজা তৃতীয় ন্যাপোলিয়ন (বাঁয়ে) বিসমার্কের কাছে তার তরবারি তুলে দিয়েছেন আত্মসমর্পণের প্রতীক হিসেবে। ১৮১৫ সালেও যেখানে জার্মানদের টিকিটাও ছিল না, সেখানে ১৮৭০ সালে প্যারিস তাদের দখলে। মাত্র ৫৫ বছরে ইউরোপের "বাস্তবতা" পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে যায়, যা কিনা অনেকেই একসময় মনে করতো "অপরিবর্তনীয়"।

“বাস্তবতা” পরিবর্তনে কত বছর লাগে?

ন্যাপোলিয়নের পরাজয় ১৮১৫ সালে। তখনও জার্মান জাতির একত্রিত হবার চিন্তা আঁতুর ঘরেই ছিল। এমনকি ১৮৫০ সালেও জার্মান একত্রীকরণের চেষ্টা করতে গিয়ে বেশিরভাগ মানুষই মনে করেছিল যে বৃহত শক্তিদের চোখকে ফাঁকি দিয়ে একত্রীকরণ সম্ভব হবে না। এমনকি ১৮৬৬ সালে অস্ট্রিয়ার সাথে যুদ্ধেও বেশিরভাগ জার্মান মনে করেছিল যে প্রুশিয়ার সাথে তাদের যাওয়াটা ঠিক হবে না। কতবড় ভুল ছিল এই হিসেবে! মাত্র চার বছরের মাথায় ১৮৭০ সালে প্যারিস ছিল জার্মানদের দখলে আর পরের বছর জানুয়ারীতে ইউরোপের সবচাইতে শক্তিশালী দেশ হিসেবে জার্মানির আবির্ভাব। জার্মানির কারণে শুধু ইউরোপ নয়, বিশ্ব রাজনীতি পরিবর্তিত হয়েছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মান আক্রমণে ফ্রান্স-ব্রিটেন বিধ্বস্ত হবার পরে দুনিয়ার কর্তৃত্ব আমেরিকার হাতে চলে যায় – যা কিনা বর্তমানের ইতিহাস গড়েছিল। জার্মানির জন্ম তাই ততটাই গুরুত্বপূর্ণ; জার্মানির জন্ম ইতিহাসের একটা গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, যা কিনা ততকালীন বিশ্বের “বাস্তবতা”কে পরিবর্তন করে ফেলেছিল। এই “বাস্তবতা”র পরিবর্তন হতে কত সময় লেগেছিল? সেটাই একটু হিসেব কষা যাক।

১৮১৫ সাল থেকে ১৮৭১ হলো মাত্র ৫৫ বছর; আর ১৮৫০ থেকে ১৮৭১ হলো মাত্র ২১ বছর; আর ১৮৬৬ সাল থেকে ১৯৭০ সাল মাত্র ৪ বছর! ইতিহাস পরলে বোঝা যায় যে এই সময় কতটা ছোট। ভারত এবং পাকিস্তানের বয়স ৬৯ বছর; বাংলাদেশের বয়স ৪৫ বছর। তাহলে এই সময়গুলির সাথে আমরা যখন জার্মান একত্রীকরণের পুরো প্রসেসখানার তুলনা করি, তখন যেটা বুঝি তা হলো অত্যন্ত অল্প সময়ে বাস্তবতা পরিবর্তন হয়ে যেতে পারে। মাত্র ৫৫ বছরে; মানে একজন মানুষের জীবদ্দশাতেই ইউরোপের মানচিত্র এবং ব্যালান্স অব পাওয়ার পুরোপুরি পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। কি মনে করছেন – ১৮৭১ সাল বহু আগের কথা? আজকের দুনিয়া আলাদা? আজকের দুনিয়ার “বাস্তবতা” আলাদা? একটু চিন্তা করে দেখুন তো – চেকোশ্লোভাকিয়া নামে একটা দেশ ছিল না? সেটা আজ কোথায়? যুগোশ্লাভিয়া নামের দেশটা কোথায়? কসভো নামে তো কোন দেশই কিছুদিন আগেও ছিল না। এরিত্রিয়া, সাউথ সুদান, ইস্ট তিমর? কত তাড়াতাড়ি মানচিত্র পরিবর্তিত হয়ে যায়; পট পালটে যায় চোখের পলকে, যদিও সবাই আমরা মনে করি আজ যেটা আছে এটাই থাকবে – হয়তো চিরকালই থাকবে। খুব ভালোভাবেই জানি যে চিরকাল না থাকাটাই স্বাভাবিক; থাকলেই বরং অস্বাভাবিক। তারপরেও সেটাই ভাবতে থাকি; কেন ভাবি সেটাও জানি না; এই ভাবাভাবির কোন ভিত্তিও তো নেই। কিন্তু কেন এই ভিত্তিহীন চিন্তা? কেন এটা ভাবি যে যেটা আজ আছে, সেটা কালও থাকবে? পরশুও থাকবে? এর পরের দিনও? আমাদের বাপ-দাদারা কি জন্মসূত্রে বাংলাদেশী? না-তো! ১৯৭১ সালের আগে তো বাংলাদেশই ছিল না। তারা তো পাকিস্তান বা ব্রিটেনের নাগরিক – জন্মসূত্রে!! কি আশ্চর্য চিন্তাহীন আমাদের এই অবস্থান তাই না? অথচ আমরা এই চিন্তাহীন অবস্থানে থেকেই মনে করতে থাকি যে আমরা অনেক বুদ্ধি রাখি এবং আমরা “মডার্ন” এবং “এগিয়ে যাচ্ছি”। এটাই হচ্ছে আমাদের “বাস্তবতা”, যাকে আমরা এতটাই ভালোবাসি যে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সেটা নিয়েই পড়ে থাকি।

আমাদের “বাস্তবতা”কে আমরা চ্যালেঞ্জ করি না কেন?

জার্মান জাতীয়তাবাদের গুণগান গাওয়া এই লেখার উদ্দেশ্য নয়। বরং এই ঘটনাপ্রবাহ আমাদের যা বলে তা হলো – “বাস্তবতা” হলো মানুষের মনের সৃষ্টি, যা সে নিজের জন্যে তৈরি করেনা; তৈরি করে অন্যের জন্য, যাকে সে নিয়ন্ত্রণ করতে চায়। “বাস্তবতা”র “অপরিবর্তনীয়তা”কে পুঁজি করেই নিয়ন্ত্রকেরা নিয়ন্ত্রণে থাকে। যতক্ষণ জনগণ “বাস্তবতা”কে “অপরিবর্তনীয়” মনে করে, ততোদিন সে এই “বাস্তবতা”র ঘোর থেকে বের হতে পারে না। নিয়ন্ত্রিত জনগণ যখন “বাস্তবতা”কে চ্যালেঞ্জ করে, তখন সেটা দৌড়ে পালায় এবং পরিবর্তন সাধিত হয়। দাসত্বের শৃংখল-মুক্ত হতে প্রথম কাজই হলো “বাস্তবতা”কে চ্যালেঞ্জ করা; “বাস্তবতা”র সাথে আপোষ করা নয়।

বাংলাদেশের মানচিত্র তৈরি হয়েছিল কবে? ১৯৭১ সালে? না তো! তাহলে বাংলাদেশের জন্ম কি মানচিত্র ছাড়াই হয়েছিল? তা-ও তো না। তাহলে দেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়ে পতাকার মাঝে যে মানচিত্রটি ছিল, সেটা কোন দেশের মানচিত্র? তাহলে দেশের জন্মের আগেই দেশের মানচিত্রের জন্ম? সেটা কি করে সম্ভব? সেটাও সম্ভব, যদি আমরা মেনে নিয়ে থাকি যে বাংলাদেশের মানচিত্র হলো সেই দেশের মানচিত্র, যে দেশ থেকে বাংলাদেশ বিভক্ত হয়ে জন্ম নিয়েছিল – তার মানে পাকিস্তান। তাহলে ১৯৭১ সালে আমরা পতাকার মাঝে যে দেশের মানচিত্র রেখেছিলাম সেটা কি পাকিস্তানের মানচিত্র ছিল? সেই মানচিত্র এঁকেছিলেন কে? মাউন্টব্যাটেন এবং র‌্যাডক্লিফ। এঁনারাই পাকিস্তানের মানচিত্র বানিয়েছিলেন, যে মানচিত্র আমরা বাংলাদেশের পতাকার মাঝেও রেখেছিলাম। বলাই বাহুল্য যে ১৮৭১ সালে জার্মানির জন্ম হলেও জার্মানির মানচিত্র কিন্তু বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। পোল্যান্ডের মানচিত্র বহুবার পরিবর্তন হয়েছে; অস্ট্রিয়ারও তাই; ইটালিরও তাই। মধ্যপ্রাচ্যের মানচিত্র বহুবার পরিবর্তন হয়েছে। জার্মান মানচিত্র শেষ পরিবর্তন হয়েছিল ১৯৮৯ সালে জার্মানির পূণ-একত্রীকরণের সময়ে। এর অর্থ হলো একটা দেশের জন্মের সাথে এর রাজনৈতিক মানচিত্র সারাজীবনের জন্যে fixed না-ও হয়ে যেতে পারে। রাজনৈতিক মানচিত্র মাটি-বালু-পানির উপরে কল্পিত কিছু দাগ মাত্র – এগুলি মহাকাশে স্যাটেলাইট থেকে দেখা যায় না কোনদিনই।

“বাস্তবতা”কে চালেঞ্জ করার মাঝেই মুক্তি…

ঠিক এই ভয়টাই দিল্লীতে গুরুত্বপূর্ণ কিছু লোক পেয়ে থাকেন, যখন বাংলাদেশের সুবোধ শিশুরা মানচিত্র অংকন প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে গিয়ে বাংলাদেশের মানচিত্রকে বেশ হৃষ্টপুষ্ট করে এঁকে ফেলে। আমাদের কাছে এটা নিতান্তই শিশুতোষ ভুল হলেও দিল্লীর চিন্তাবিদদের তখন হার্ট এটাক হয়ে যায়। তারা এর মাঝে ভারতের integrity এবং অস্তিত্বের হুমকি দেখেন। বাংলাদেশের বাইরে ভারতই একমাত্র দেশ যাদের বাংলাদেশের মানচিত্র আঁকতে হয়; বাংলাদেশের মানচিত্র না আঁকলে ভারতের মানচিত্র আঁকা হয় না। আর এটাই আসল বাস্তবতা – যা আমরা দেখি না। আমরা শুধু দেখি সেটাই, যা আমাদের মুখে তুলে দেয়া হয়।

আমাদের নিজেদের intellectual subjugation-এর যে কথা এর আগে বলেছি, সেটা থেকে বের হবার পথে “বাস্তবতা”কে চ্যালেঞ্জ করতেই হবে। আর সেখানেই রয়েছে মুক্তি।

2 comments:

  1. লেখাটা পড়ে ভাল লাগল। খুব সুন্দরভাবে বুঝিয়েছেন বাস্তবতার নিয়ন্ত্রণ চাইলে আমরা বদলে দিয়ে আমাদের হাতেই আনতে পারি। বেঙ্গলি ইউনিফিকেশন বা বঙ্গীয়/বাঙ্গালী একত্রীকরণ আমি পুরোদমে সমর্থন করলেও ভাবতাম 'বাস্তবতা' এটা কখনই অ্যালাও করবে না। ইতিহাস আমার প্রিয় একটি বিষয় কিন্তু ইতিহাস পড়ে কখনও এভাবে চিন্তা করে দেখিনি যে আধুনিক যুগের এই 'বাস্তবতাকে' চ্যালেঞ্জ করেই অল্প সময়েই বদলে ফেলা সম্ভব। হু, একদিন পশ্চিম বাংলা আর বাংলাদেশ আলাদা দেশ নয়, বরং হয়তো আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরাকে সঙ্গে নিয়ে এক দেশ হবে।

    ReplyDelete
  2. মারাত্মক কিছু যুক্তি যা খণ্ডানো অত্যন্ত কঠিন।

    যাইহোক, লেখক আহমেদ শরীফকে (অথবা আহমদ) অসংখ্য ধন্যবাদ এবং কৃতজ্ঞতা জানাই আমাদেরকে এমন একটি অতিপ্রয়োজনীয় ও অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ একটি তথ্যবহুল লিখা উপহার দেবার জন্য।

    জনাব লেখক,
    আপনি সত্যিই অসাধারণ।

    ReplyDelete