Monday 12 December 2022

বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের নিরপেক্ষ নীতি চাপের মাঝে?

১৩ই ডিসেম্বর ২০২২
 
বাংলাদেশের সামরিক মহড়াগুলিকে আরও বাস্তবধর্মী করা হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বীপ (মহেষখালি, সন্দ্বীপ, দুবলার চর, সেন্ট মার্টিন) শত্রুর হাতে দখল হয়ে যাওয়া এবং সেগুলি পুনরূদ্ধার করা; অথবা শত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে কম্বাইন্ড অপারেশন; এসল্ট রিভার ক্রসিং অপারেশন; শহর এলাকায় শত্রুর আক্রমণ রক্ষায় মহড়া; যুদ্ধক্ষেত্রে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলিকে মহড়ার মাঝে অন্তর্ভুক্ত করা; ইত্যাদি। ২০২১-২২এর শীতকালীন মহড়ায় সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী পর্যায়ে বাস্তবমুখী লজিস্টিকস যুক্ত করেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রসদ সরবরাহের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নৌ ও আকাশপথের ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

গ্রেট পাওয়ার প্রতিযোগিতায় যুক্তরাষ্ট্র যখন বাকি দুনিয়াকে চীন এবং রাশিয়ার বিপক্ষে নিতে চাইছে, তখন কিছু দেশ, সংস্থা এবং ব্যক্তি পশ্চিমা কোয়ালিশনের সিদ্ধান্তগুলিকে নিজেদের স্বার্থের পরিপন্থী হিসেবে দেখছে। আত্মকেন্দ্রিক পশ্চিমা চিন্তাগুলি এখন এমন এক পর্যায়ে চলে গেছে যে, সকলেই এখন নিজের স্বার্থ রক্ষার্থে ব্যস্ত; আদর্শকে রক্ষার কাজ এখন কারুর কাজ নয়। অন্ততঃ আফগানিস্তান থেকে মার্কিন বাহিনীর পলায়ন সেই ব্যাপারটাকেই আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে। নিজস্ব স্বার্থ রক্ষার এই যুগে দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ চাইছে কোন কৌশলগত জোটে যোগ না দিয়ে নিজস্ব অবস্থান ধরে রাখতে। ব্যাপারটা ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ব্রিটিশ কমনওয়েলথের কিছু দেশের জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের মতোই। সেবারের মতো এবারও যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তার নিজের স্বার্থ বাস্তবায়নে দুনিয়ার সকল দেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করতে। আর সেবারের মতো এবারও কিছু দেশ তাদের নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাচ্ছে; বাংলাদেশ এমনই একটা দেশ। এই ভূরাজনৈতিক খেলায় বাংলাদেশের প্রতিবেশী দেশ মিয়ানমার ও ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের সাথে সংমিশ্রিত হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের গ্রেট পাওয়ার প্রতিযোগিতা। ভারত এক্ষেত্রে চীনের সাথে দ্বন্দ্বে জড়ালেও বাংলাদেশ নিরপেক্ষ থাকতে চাইছে। বাংলাদেশের এই নিরপেক্ষ নীতি কিভাবে কাজ করছে? আর সেটা ধরে রাখার সক্ষমতা বাংলাদেশের কতটুকু রয়েছে?

মিয়ানমারের সামরিকীকরণ

নভেম্বরের প্রথম সপ্তাহে মিয়ানমারের একটা মনিটরিং গ্রুপ বলে যে, মিয়ানমার রাশিয়া থেকে প্রথম ব্যাচের অত্যাধুনিক ‘সুখোই-৩০’ ফাইটার বিমানের ডেলিভারি পেয়েছে। রুশ মিডিয়ার বরাত দিয়ে ‘ব্যাংকক পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০১৮ সালে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত অং সান সু কিএর সরকার ক্ষমতায় থাকার সময়েই মিয়ানমার রাশিয়া থেকে ৬টা বিমান অর্ডার করেছিল। এছাড়াও গত নভেম্বর মাসে মিয়ানমার বিমান বাহিনী চীন থেকে প্রথম ব্যাচের ৪টা ‘এফটিসি-২০০০জি’ ফাইটার বিমানের ডেলিভারি পেয়েছে। ব্রিটিশ সামরিক ম্যাগাজিন ‘জেনস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, এই বিমানগুলি খুব সম্ভবতঃ লাইট এটাক বিমান হিসেবে বর্তমানের ‘কে-৮’ বিমানগুলিকে প্রতিস্থাপন করবে। এর আগে ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে মিয়ানমার বিমান বাহিনী একসাথে ২টা চীন ও পাকিস্তানে নির্মিত ‘জেএফ-১৭’ ফাইটার বিমান, ৬টা রুশ নির্মিত ‘ইয়াকোভলেভ-১৩০’ এডভান্সড প্রশিক্ষণ ও লাইট এটাক বিমান এবং দু’টা রুশ নির্মিত ‘এমআই-৩৫পি’ এটাক হেলিকপ্টার অন্তর্ভুক্ত করে।

সুইডেনের ‘স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পীস রিসার্চ ইন্সটিটউট’ বা ‘সিপরি’র তথ্য অনুযায়ী মিয়ানমার মোট ১৬টা ‘জেএফ-১৭’ বিমান কিনেছে চীন থেকে। এর সাথে তারা ৬০টা ‘পিএল-১২’ ও ১’শটা ‘পিএল-৫ই’ আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ৩০টা ‘সি-৮০২একে’ জাহাজ ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র কিনেছে। এই বিমানগুলি মিয়ানমারের বিমান বাহিনীর সক্ষমতাকে বহুগুণে বাড়িয়ে দিয়েছে। ‘ফ্লাইট গ্লোবাল’এর হিসেবে এই বিমানগুলি ডেলিভারি পাবার আগেই মিয়ানমারের বিমান বাহিনীতে ৩১টা ‘মিগ-২৯’ যুদ্ধবিমান এবং ২৭টা ‘এফ-৭’ যুদ্ধবিমান ছিল। এর বিপরীতে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর কাছে রয়েছে ৮টা ‘মিগ-২৯’ এবং ৪৭টা ‘এফ-৭’ যুদ্ধবিমান। এই বিমানগুলির সাথে ব্যবহারের জন্যে মিয়ানমার গত এক দশকে রাশিয়া থেকে ৮০টা ‘আর-২৭’ মধ্যম পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২’শ ২৫টা ‘আর-৭৩’ স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রও কিনেছে। অর্থাৎ শুধুমাত্র সংখ্যার হিসেবে বলতে গেলেও মিয়ানমার বাংলাদেশ বিমান বাহিনী থেকে বেশ অনেকটাই এগিয়ে রয়েছে।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে স্বল্প পাল্লার কাঁধের উপর থেকে ছোঁড়া বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র 'কিউডব্লিউ-১৮এ'। এগুলির মাধ্যমে শত্রুর বিমান ও হেলিকপ্টারের জন্যে নিচু দিয়ে ওড়া অসম্ভব করে ফেলা যায়; যা ইউক্রেন যুদ্ধে প্রমাণিত। তবে এই কৌশলকে বাস্তবায়ন করতে হলে যে মধ্যম উচ্চতার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন, তা এখনও অফিশিয়ালি ডেলিভারি পায়নি বাংলাদেশ। মধ্য উচ্চতায় শত্রুর বিমান ঘায়েল করতে পারার সক্ষমতা বাংলাদেশের আকাশসীমানাকেও শত্রুর জন্যে মাইনফিল্ড বানিয়ে ফেলবে।

বাংলাদেশের প্রত্যুত্তর এবং ভারত ইস্যু

ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে কক্সবাজারের রামু সেনানিবাসে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে চীনে নির্মিত ‘ভিটি-৫’ লাইট ট্যাংক এবং ‘কিউডব্লিউ-১৮এ’ স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এই অনুষ্ঠানগুলিকে মিয়ানমারের সাম্প্রতিক সামরিকীকরণের প্রত্যুত্তর বলা সম্ভব নয়। বাংলাদেশের এই পদক্ষেপগুলি মূলতঃ প্রতিরক্ষামূলক। কারণ একদিকে ‘ভিটি-৫’ ট্যাংকের কাজ হবে মিয়ানমারের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখা। আর ‘কিউডব্লিউ-১৮এ’ ক্ষেপণাস্ত্রের কাজ হবে বাংলাদেশের আকাশ সীমানার ভেতরে খুব নিচু দিয়ে ওড়া বিমান বা হেলিকপ্টারকে ভূপাতিত করা। অর্থাৎ নিজেদের ভূমি এবং আকাশসীমায় আক্রমণকারী সেনা ও বিমানের বিরুদ্ধে এগুলি কার্যকর হবে। একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে, বাংলাদেশ মিয়ানমারের প্রত্যুত্তর দিচ্ছে না। বরং এখানে বাংলাদেশ চাইছে যত কম খরচে মিয়ানমার সীমান্তকে রক্ষা করতে পারে। এক্ষেত্রে সহায়তা দেবে কক্সবাজার অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি। সেখানে সামরিক অপারেশন চালাবার মতো স্থলভাগ খুবই সংকীর্ণ; একদিকে পাহাড় এবং অপরদিকে সমুদ্র।

বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে তাদের শক্তিকে মজুত করছে অন্যদিকে। সাম্প্রতিক সময়ে অনেকগুলি দেশই বাংলাদেশের ২০১৭ সালের মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফট ক্রয়ের টেন্ডারের ভিত্তিতে তাদের বিমানগুলিকে বিক্রি করতে আগ্রহ দেখিয়েছে; লবিংও করেছে। এর মাঝে রয়েছে ব্রিটিশ ‘ইউরোফাইটার টাইফুন’, ফরাসি ‘রাফাল’ এবং মার্কিন ‘এফ-১৬’। এটাক হেলিকপ্টার ক্রয়ের টেন্ডারেও যথেষ্ট আগ্রহ দেখিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র; যারা তাদের ‘এএইচ-৬৪ এপাচি’ হেলিকপ্টার অফার করেছিল। কিন্তু সাড়ে পাঁচ বছর পেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশ মাল্টিরোল কমব্যাট এয়ারক্রাফটের ব্যাপারে কোন ঘোষণাই দেয়নি। অফিশিয়ালি কিছু না বলা হলেও যে ব্যাপারটা এখানে স্পষ্ট, তা হলো এই যুদ্ধবিমানের সাথে কি কি শর্ত আসবে, তা বাংলাদেশকে খুশি করেনি। পশ্চিমারা উঁচু মানের সামরিক হার্ডওয়্যার বিক্রি করার সময়ে যথেষ্ট শর্ত আরোপ করে। এর ফলে অনেক ক্ষেত্রেই তাদের কাছ থেকে অতি চড়া মূল্যে কেনা অস্ত্রগুলি শো-কেসে সাজানো ফুলদানির মতো হয়ে যায়। পাকিস্তান, সৌদি আরব, তুরস্ক এবং অন্যান্য দেশ এই উদাহরণের মাঝে পড়বে। এই যুদ্ধবিমানগুলির কার্যক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো এগুলির সাথে ব্যবহৃত অস্ত্রসস্ত্র। এই অস্ত্রগুলি প্রতিটা বিমানের সাথে ব্যবহারের আগে আলাদাভাবে সফওয়্যার আপগ্রেড করতে হয়। প্রতিটার জন্যে আলাদা রাজনৈতিক অনুমতির প্রয়োজন হয়।

রাজনৈতিক অনুমতি আসে সেসব দেশের পার্লামেন্ট বা সরকারের কাছ থেকে। অনুমতি না আসলে এই বিমানগুলি অতি সাধারণ অস্ত্র বহণে বাধ্য হয়। তখন এই বিমানগুলির সাথে পুরোনো মডেলের যুদ্ধবিমানের কোন পার্থক্যই থাকে না। মার্কিন যুদ্ধবিমানের প্রযুক্তি ব্যবহারের জন্যে অতি সংবেদনশীল চুক্তিতে স্বাক্ষর করতে হয়; যেগুলির শর্ত একটা সার্বভৌম রাষ্ট্রের পক্ষে মানা কঠিন। শুধুমাত্র ভূরাজনৈতিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের একেবারে সমান্তরালে না হলে এসকল চুক্তি স্বাক্ষর করা কঠিন। এহেন চুক্তিতে স্বাক্ষর করা দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রের শুধু খুব কাছের বন্ধুই নয়; তারা প্রতিরক্ষার দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের উপর যথেষ্টই নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র নির্ধারণ করে দেয় যে, তাদের সরবরাহকৃত অস্ত্র কোন দেশের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যাবে। এখানেই সমস্যা! বাংলাদেশ অনেক ক্ষেত্রেই নিশ্চিত যে, পশ্চিমা দেশ থেকে কেনা অস্ত্র বাংলাদেশ মিয়ানমারের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে পারবে। কিন্তু বাংলাদেশ যদি ভারতের বিরুদ্ধে সেই অস্ত্র ব্যবহার করতে যায়, তাহলে কি সেই অনুমতি সরবরাহকারী দেশের কাছ থেকে মিলবে? যদি ভবিষ্যতে ভারতের সাথে বাংলাদেশের যুদ্ধে অবতীর্ণ হতে হয়, তাহলে কয়েক বিলিয়ন ডলার খরচে কেনা এই যুদ্ধবিমানগুলি খেলনা হয়ে যাবে না তো? এই উত্তর পাওয়া যাবে সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কের দিকে তাকালে।

 
চীনের সাথে ভারতের সীমান্ত বিরোধ বহু বছর ধরেই। হিমালয়ের পাদদেশে চীনের সাথে দ্বন্দ্বে ভারত যখন বাংলাদেশকে পাশে চাইছিল, তখন নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশ তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে উদ্যত হয়; যার মাঝে ছিল কূটনৈতিকভাবে বিশ্বে নতুন কৌশলগত বন্ধু খোঁজা এবং নিজেদের সমরশক্তিকে বৃদ্ধি করা।


ভারত-চীন দ্বন্দ্বে বাংলাদেশের অবস্থান

করোনা মহামারির লকডাউন চলার সময়েই ২০২০এর অগাস্টে ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলা হঠাৎ ঢাকা সফরে আসেন। পরদিন ঢাকায় ভারতের দূতাবাস থেকে বলা হয় যে, তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাৎ করেছেন। কিন্তু বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এই বিষয়ে অফিশিয়ালি কিছুই বলা হয়নি। তবে ভারতীয় মিডিয়াতে আলোচনা শুরু হয় যে, ভারতের সাথে চীনের উত্তেজনা চলার মাঝে শ্রিংলার সফরের মাধ্যমে ভারত হয়তো বাংলাদেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করতে চাইছে। কারণ সাম্প্রতিক সময়ে ভারতে উগ্রপন্থী হিন্দুত্ববাদী সরকারের ধর্মীয় নীতি বাস্তবায়নের কারণে প্রতিবেশী দেশ হিসেবে বাংলাদেশ খুবই অস্বস্তিকর পরিস্থিতিতে পড়েছে। ঢাকার পক্ষ থেকে এব্যাপারে বিভিন্নভাবে ভারতকে বার্তাও দেয়া হয়েছে; যদিও অফিশিয়ালি বাংলাদেশ সরকার সর্বদাই বলেছে যে, সেগুলি ভারতের অভ্যন্তরীণ ব্যাপার।

শ্রিংলার ঢাকা সফরের তিন সপ্তাহের মাঝেই সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশ সরকার তাদের কূটনীতিকে নতুন পথে ধাবিত করে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী একেএ মোমেন তুরস্কের রাজধানী আঙ্কারা সফরে যান। সফরের মাঝে ঢাকা থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আঙ্কারাতে নতুন দূতাবাস ভবন উদ্ভোধন করেন। আঙ্কারার অনুষ্ঠানে তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত কাভুসোগলুও যোগদান করেন। তুরস্ক এই সুযোগটা হাতছাড়া করেনি। পরের ডিসেম্বরেই কাভুসোগলু ঢাকা সফর করে বাংলাদেশের কাছে অস্ত্র বিক্রয়ের ইচ্ছা ব্যক্ত করেন। তুরস্কের সাথে পাকিস্তানের কৌশলগত সম্পর্ক এবং সেই একই সূত্রে ভারতের সাথে সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে ঢাকা-আঙ্কারা সম্পর্কোন্নয়নের গুরুত্ব ছিল খুবই গুরুত্ববহ। বিশেষ করে হিমালয়ের পাদদেশে চীনের সাথে দ্বন্দ্বে ভারত যখন বাংলাদেশকে পাশে চাইছিল, তখন নিজেদের নিরপেক্ষ অবস্থান ধরে রাখতে বাংলাদেশ তাদের ভূরাজনৈতিক অবস্থানকে আরও শক্তিশালী করতে উদ্যত হয়; যার মাঝে ছিল কূটনৈতিকভাবে বিশ্বে নতুন কৌশলগত বন্ধু খোঁজা এবং নিজেদের সমরশক্তিকে বৃদ্ধি করা। কাভুসোগলুর ঢাকা সফরের ছয় মাসের মাঝেই বাংলাদেশ সেনাবাহিনী তুরস্কে নির্মিত ‘টি-৩০০ কাসিরগা’ নামের ৩০০ মিঃমিঃ মাল্টিপল রকেট লঞ্চারের ডেলিভারি পায়। ১’শ ২০ কিঃমিঃ পাল্লার এই রকেট বাংলাদেশকে নতুন এক সামরিক সক্ষমতা দেয়। বাংলাদেশের ভৌগোলিক আকৃতি এবং অবস্থানের কারণে এই পাল্লার রকেট দেশটাকে কৌশলগত শক্তি দিয়েছে। এগুলির মাধ্যমে দেশের সীমানার ভেতরে অবস্থান করেই আঞ্চলিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত যোগাযোগ পথ এবং সামরিক বিমান ঘাঁটির উপরে নিখুঁতভাবে হামলা করা সম্ভব।

বাংলাদেশের সাথে ভারতের সম্পর্কটা কতটা সন্দেহের ভিতের উপরে, তার প্রমাণ পাওয়া যায় যখন ২০১৭ সালে চীন থেকে বাংলাদেশের সাবমেরিন ক্রয়ের পর ভারত মিয়ানমারের কাছে সাবমেরিন খোঁজার জন্যে সোনার এবং সাবমেরিন ধ্বংসী টর্পেডো বিক্রি করে। এরপর ২০১৯ সালে ভারতীয় নৌবাহিনী থেকে অবসরে যাওয়া একটা রুশ নির্মিত ‘কিলো-ক্লাস’এর সাবমেরিন মিয়ানমারকে দান করার সিদ্ধান্ত নেয় ভারত। সেই সাবমেরিন মিয়ানমারের হাতে পৌঁছায় ২০২০ সালের অক্টোবরে। ভারতীয় ম্যাগাজিন ‘স্বরাজ্য’এর এক লেখায় বেশ খোলাখুলিভাবেই বলা হয় যে, বঙ্গোপসাগরে, তথা বাংলাদেশে চীনের প্রভাবকে ব্যালান্স করতেই ভারত মিয়ানমারকে সাবমেরিন দিয়েছে।

মিয়ানমার ভারতীয় সাবমেরিন হাতে পাবার কয়েকদিনের মাঝেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮শে অক্টোবর বরিশালে সেনাবাহিনীর ৭ম পদাতিক ডিভিশনের এক অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি যোগদানের মাধ্যমে ঘোষণা দেন যে, বাংলাদেশ ‘কোনও ধরণের সংঘাতে’ জড়াতে চায় না। তবে ‘আক্রান্ত’ হলে সেটা মোকাবিলা করার মতো শক্তি অর্জন করতে চায় বাংলাদেশ। শেখ হাসিনার কথাগুলি বেশ পরিষ্কারভাবেই জানিয়ে দেয় যে, বাংলাদেশ আঞ্চলিক কোন সংঘাতে নিরপেক্ষ থাকতে ইচ্ছুক। আর কথাগুলি বলার জন্যে প্রধানমন্ত্রী যখন সামরিক অনুষ্ঠানকে বেছে নিয়েছেন, তখন বুঝতে বাকি থাকে না যে, বাংলাদেশ তার নিরপেক্ষ নীতি বাস্তবায়নে প্রয়োজনে সামরিক সংঘাতের জন্যেও প্রস্তুত রয়েছে।

 
ভারতে অনেকেই মনে করছেন যে, চীনের সাথে যেকোন সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ যুদ্ধে চীনারা ভারতের পূর্বের সাতটা রাজ্যকে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা করে ফেলতে চাইবে। সেই লক্ষ্যে এই রাজ্যগুলিকে ভারতের সাথে যুক্ত করা মাত্র ২২ কিঃমিঃ প্রশস্ত ‘শিলিগুড়ি করিডোর’কে চীনারা টার্গেট করতে পারে। ভারতীয়রা চাইছে বাংলাদেশ তাদের নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে এসে ভারতকে সরাসরি বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে ট্রানজিট দিক; যার মাঝে সামরিক সাপ্লাইও থাকবে।

বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক ট্রানজিট

ভারতে অনেকেই মনে করছেন যে, চীনের সাথে যেকোন সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ যুদ্ধে চীনারা ভারতের পূর্বের সাতটা রাজ্যকে ভারতের মূল ভূখন্ড থেকে আলাদা করে ফেলতে চাইবে। সেই লক্ষ্যে এই রাজ্যগুলিকে ভারতের সাথে যুক্ত করা মাত্র ২২ কিঃমিঃ প্রশস্ত ‘শিলিগুড়ি করিডোর’কে চীনারা টার্গেট করতে পারে। অস্ট্রেলিয়ার থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘লোয়ি ইন্সটিটিউট’এর এক লেখায়ও এই আশংকাটাই প্রকাশ করা হয়। এই করিডোরকে অনেকেই কৌশলগত ‘চিকেন নেক’ বলে আখ্যা দিয়ে থাকেন। করিডোরের মাঝ দিয়ে যাওয়া রাস্তা, রেলপথ এবং সেতুগুলির উপরেই নির্ভর করছে ভারতের পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলির রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের এঁকে দেয়া এই সীমানার উপরেই দোদুল্যমান বিশাল ভারতের রাজনৈতিক অস্তিত্ব। আর এর মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে বাংলাদেশ; যার ভৌগোলিক সীমানার কারণেই ভারতকে সাত রাজ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে ‘চিকেন নেক’এর উপরে নির্ভর করতে হচ্ছে। ভারতীয়রা চাইছে বাংলাদেশ তাদের নিরপেক্ষ নীতি থেকে সরে এসে ভারতকে সরাসরি বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে ট্রানজিট দিক; যার মাঝে সামরিক সাপ্লাইও থাকবে। ‘দ্যা টাইমস অব ইন্ডিয়া’র এক লেখায় ভারতীয় সেনাবাহিনীর সাবেক কর্নেল মহিন্দর পাল সিং এই ট্রানজিনের ব্যাপারটাকেই চীনের হুমকির বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় পদক্ষেপ বলে আখ্যা দেন। ভারতের হিলি থেকে বাংলাদেশের গাইবান্ধা হয়ে যমুনা নদী পার হয়ে জামালপুরের উপর দিয়ে ভারতের মেঘালয়ের তুরা পর্যন্ত এই ট্রানজিট রাস্তা চলবে। অর্থাৎ পুরো বৃহত্তর রংপুর ও দিনাজপুর এলাকার দক্ষিণ দিয়ে যাবে এই পথ। ‘চিকেন নেক’ থেকে বেশ খানিকটা দূরে থাকবে বলে এই রাস্তার নিরাপত্তা হবে অপেক্ষাকৃত অনেক বেশি। যুদ্ধের সময়ে ভারত এই রাস্তা দিয়ে পূর্বের সাত রাজ্যে সৈন্য ও রসদ পাঠাবে। আর বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে যাওয়ায় এই রাস্তার উপর চীনারা আক্রমণ নাও করতে পারে।

দিল্লী এবং ওয়াশিংটনের নীতি

ভারতের কাছে এই সামরিক ট্রানজিট যতটাই গুরুত্বপূর্ণ মনে হোক না কেন, দিল্লীর নীতিনির্ধারকেরা চিন্তা করেননি যে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে ভারতীয় সেনার উপস্থিতি বাংলাদেশের মানুষ কিভাবে দেখবে। অথবা ভারতকে এই ট্রানজিট প্রদান করার পর ঢাকায় কোন সরকারের পক্ষে ক্ষমতায় টিকে থাকা সম্ভব কিনা। এছাড়াও চীনের সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্কের কোন বাস্তবিক বিকল্প না আছে দিল্লীর কাছে; না আছে ওয়াশিংটনের কাছে। ওয়াশিংটনের কাছে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করাটা বাংলাদেশের জনগণের মতামতের চাইতে অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কাজেই চীনের সাথে সম্ভাব্য ভবিষ্যৎ সংঘাতে দিল্লীকে সামরিক ট্রানজিট প্রদান করতে ওয়াশিংটন ঢাকার উপরে সর্বোচ্চ চাপ সৃষ্টি করবে। শুধু তাই নয়, ভারতের সাথে সংঘাতে চীনকে যাতে কোন দেশ কোন রকম সহায়তা দিতে না পারে, সেদিকে যুক্তরাষ্ট্র সকল চেষ্টা করবে। বিশেষ করে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ যেন ভারতকে সমর্থন দেয়, সেব্যাপারে ওয়াশিংটন সোচ্চার হবে। ওয়াশিংটন চাইবে এই সংঘাতে পাকিস্তান নিরপেক্ষ থাকুক এবং বাংলাদেশ সরাসরি ভারতের পক্ষ নিক। তবে এহেন নীতির সাফল্য কতটুকু হবে, তা বলা মুস্কিল। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে রাশিয়াকে পুরোপুরিভাবে একঘরে করে ফেলতে ব্যর্থ হয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। চীনের ক্ষেত্রে এই প্রচেষ্টা আরও বেশি সমস্যা পড়বে; কারণ গোটা বিশ্বের অর্থনীতির উপরে চীনের প্রভাব রাশিয়ার চাইতে বহুগুণে বেশি।

বাংলাদেশের সাথে মিয়ানমারের সংঘাত; ভারতের সুবিধা কেন?

ভূরাজনৈতিক কারণেই বাংলাদেশ যে তাদের সামরিক সক্ষমতা বাড়াবে, তা বোঝাই যাচ্ছিলো গত কয়েক বছর ধরে। ২০১৭ সাল থেকে হিমালয়ের পাদদেশে ভারত-চীন উত্তেজনা; একই বছর মিয়ানমার থেকে সাড়ে ১১ লক্ষ মুসলিম জনগণকে উৎখাত করে বাংলাদেশে প্রেরণ; বঙ্গোপসাগরে ‘কোয়াড’ বা ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-জাপান-অস্ট্রেলিয়ার বার্ষিক সামরিক মহড়া; ভারতে হিন্দুত্ববাদী সরকারের মুসলিমদের উপরে দমনপীরন; ইত্যাদি ইস্যু বাংলাদেশকে সার্বভৌমত্ব রক্ষার প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করতে বাধ্য করেছে। বিশেষ করে মিয়ানমারের সাথে ছোটখাটো একপ্রকারের অস্ত্র প্রতিযোগিতা চলছিল ১৯৯০এর দশক থেকে; যদিও তা মিডিয়াতে তেমন প্রাধান্য পায়নি। ২০১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর দমনপীড়নের পর থেকে অনেকেই মিয়ানমারের সাথে সামরিক সংঘাতে জড়াবার জন্যে বলতে থাকেন। কিন্তু এখানে ভারতের উদ্দেশ্য তারা আমলে নিতে চাননি; যদিও সেটা গোপন ছিল না।

সেসময়ে বাংলাদেশের সামরিক সক্ষমতা কতটুকু ছিল, তা ছিল প্রশ্নবিদ্ধ। চট্টগ্রাম বিভাগে সেনাবাহিনীর ২৪তম পদাতিক ডিভিশনের সবগুলি ইউনিট পার্বত্য চট্টগ্রামে মোতায়েন ছিল। কক্সবাজারের রামুতে ১০ম পদাতিক ডিভিশন স্থাপন করা হলেও সেই ডিভিশনের সক্ষমতা তখনও খুব বেশি ছিল না। বিশেষ করে ট্যাংকের ক্ষেত্রে ঘাটতি ছিল। বগুড়ার ১১তম পদাতিক ডিভিশন এবং সাভারের ৯ম পদাতিক ডিভিশন থেকে লম্বা পথ পাড়ি দিয়ে টেকনাফে ট্যাংক মোতায়েন করতে হয়েছিল। এই পরিস্থিতির মোটামুটি সমাধান হয়েছে চীন থেকে ‘ভিটি-৫’ ট্যাংক আমদানি করার পর থেকে। ট্যাঙ্কগুলি মিয়ানমারের আক্রমণ (যা বেশ অবাস্তব) থেকে বাংলাদেশকে বাঁচালেও মিয়ানমারের সাথে সম্ভাব্য সংঘাত এড়াতে তা যথেষ্ট নয়। কারণ মিয়ানমারের হাতে এমন অনেক অস্ত্রই রয়েছে, যেগুলির মাধ্যমে বাংলাদেশের অভ্যন্তরে সেনা না পাঠিয়েও যুদ্ধ করা সম্ভব। আর এই সক্ষমতা মিয়ানমার বেশ দ্রুততার সাথে যোগাড় করতে পেরেছে; যা এখনও ক্রমবর্ধমান। এই সক্ষমতার মূলে রয়েছে মিয়ানমারের নৌবাহিনী এবং বিমানবাহিনী।

হিমালয়ের পাদদেশে ভারত-চীনের সম্ভাব্য সংঘাতের মাঝে ভারত যদি বাংলাদেশের কাছে সামরিক ট্রানজিট দাবি করে না পায়, তাহলে বাংলাদেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করার জন্যে মিয়ানমার বড় ভূমিকা রাখতে পারে। উত্তর এবং দক্ষিণে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধ এড়াবার জন্যেই বাংলাদেশ বাধ্য হতে পারে ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের দাবি মেনে নিয়ে ভারতের সামরিক কলামগুলিকে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে যেতে দিতে। তবে সেই সিদ্ধান্ত নেবার পর ঢাকার রাজনৈতিক পরিস্থিতি হবে টালমাটাল।

 
বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর রুশ নির্মিত ট্যাংক বিধ্বংসী 'মেটিস এম-১'। দেশের কিছু অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, যেখানে বড় আকারের সেনা আগ্রাসনের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করা হচ্ছে। সবচাইতে বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের ক্ষেত্রে। উদ্দেশ্য হলো, শত্রুর জন্যে পুরো জায়গাটাই একটা মাইনফিল্ড বানিয়ে ফেলা এবং চরমতম ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখীন করা। ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া যে ধরণের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে পড়েছে, সেটা এরকমই একটা উদাহরণ।

বাংলাদেশ নিজেকে রক্ষা করার পন্থা খুঁজছে

প্রথমতঃ বাংলাদেশ তার কূটনৈতিক তৎপরতা যথেষ্ট বাড়িয়েছে। উদ্দেশ্য হলো, সম্ভাব্য যেকোন সংঘাতের মাঝে নিজের রাজনৈতিক সমর্থন বাড়ানো এবং সামরিক বাণিজ্যের প্রসার। বিশেষ করে সামরিক সরঞ্জাম উৎপাদন করে এবং পশ্চিমা বিধিনিষেধ উপেক্ষা করে সামরিক সরঞ্জাম রপ্তানি করতে সক্ষম, এরূপ দেশের সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করেছে বাংলাদেশ। পশ্চিমা যন্ত্রাংশ নেই, এরূপ যুদ্ধাস্ত্রের প্রতি বাংলাদেশের আগ্রহ তাকে বহুদূর নিয়ে গিয়েছে। রাশিয়া, চীন, তুরস্ক এখানে প্রথম সাড়িতে থাকলেও সার্বিয়া, স্লোভেনিয়া, চেক রিপাবলিক, বেলারুশ, দক্ষিণ আফ্রিকা, ব্রাজিল, ইত্যাদি দেশ এই তালিকায় যুক্ত হয়েছে। অস্ত্র অবরোধের মাঝে পড়ার সম্ভাবনা অপেক্ষাকৃত কম মনে করেই ইউরোপিয় দেশ ইতালি, ফ্রান্স ও স্পেন থেকেও অস্ত্র কিনেছে বাংলাদেশ; যার মাঝে প্রযুক্তিগতভাবে সংবেদনশীল দূরপাল্লার রাডার এবং ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার সামগ্রীও রয়েছে।

দ্বিতীয়তঃ
বাংলাদেশ সামরিক উৎপাদন সক্ষমতা বৃদ্ধি করছে। বিশেষ করে গোলাবারুদ নিজস্ব কারখানায় প্রস্তুত করার উপর জোর দিয়েছে; যাতে করে যথেষ্ট সময়ের জন্যে যুদ্ধ চালিয়ে নেয়া সম্ভব হয়। এর মাঝে ১০৫ মিঃমিঃ ও ১৫৫ মিঃমিঃ আর্টিলারির গোলাবারুদ ছাড়াও রয়েছে স্বল্প পাল্লার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র। ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র উৎপাদনের দিকেও এগুচ্ছে বাংলাদেশ। বিমান বাহিনীর বিমানগুলিকে প্রযুক্তি হস্তান্তর ও নিজস্ব গবেষণার মাধ্যমে ‘প্রিসিশন গাইডেড মিউনিশন’ বা ‘পিজিএম’এর জন্যে উপযোগী করে তোলা হয়েছে।

তৃতীয়তঃ সামরিক আগ্রাসন ঠেকাতে প্রচুর গোলাবারুদ যোগাড় করা ছাড়াও যতদূর সম্ভব গোপনীয়তা রক্ষা করার উপর জোর দিয়েছে। নিজস্ব পরিবহণ বিমান ব্যবহার করতে পারাটা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ একটা ইস্যু। তদুপরি সাম্প্রতিক সময়ে গ্রিসে একটা দুর্ঘটনার কারণে অস্ত্র বাণিজ্য জনসন্মুখে চলে আসে।

চতুর্থতঃ সামরিক সক্ষমতার ব্যাপারে গোপনীয়তা বৃদ্ধি করেছে। একইসাথে শত্রুকে ভুল তথ্য দেয়ার ব্যাপারে মনোযোগী হয়েছে; যাতে করে শত্রুরা সামরিক সক্ষমতার সঠিক পরিমাপ করতে না পারে। সামরিক ইন্টেলিজেন্সের সক্ষমতাও বৃদ্ধি করা হচ্ছে।

পঞ্চমতঃ সামরিক মহড়া আরও বাস্তবধর্মী করা হচ্ছে। বিশেষ করে সমুদ্র উপকূলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু দ্বীপ (মহেষখালি, সন্দ্বীপ, দুবলার চর, সেন্ট মার্টিন) শত্রুর হাতে দখল হয়ে যাওয়া এবং সেগুলি পুনরূদ্ধার করা; অথবা শত্রুর আক্রমণ ঠেকাতে কম্বাইন্ড অপারেশন; এসল্ট রিভার ক্রসিং অপারেশন; শহর এলাকায় শত্রুর আক্রমণ রক্ষায় মহড়া; যুদ্ধক্ষেত্রে সাম্প্রতিক পরিবর্তনগুলিকে মহড়ার মাঝে অন্তর্ভুক্ত করা; ইত্যাদি। ২০২১-২২এর শীতকালীন মহড়ায় সেনাবাহিনী প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী পর্যায়ে বাস্তবমুখী লজিস্টিকস যুক্ত করেছে। সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনী এক স্থান থেকে অন্য স্থানে রসদ সরবরাহের কৌশলগত সক্ষমতা বৃদ্ধিতে নৌ ও আকাশপথের ব্যবহারে বিশেষ গুরুত্ব দিচ্ছে।

ষষ্ঠতঃ সামরিক মহড়া এখন পুরো জাতীয় প্রতিরক্ষার অংশ। তাই সামরিক ছাড়াও অন্যান্য বাহিনীকেও প্রতিরক্ষার অন্তর্ভূক্ত করা হচ্ছে। এর মাঝে রয়েছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ বা বিজিবিএর সক্ষমতা বৃদ্ধি। তাদেরকে ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এবং মাইন দিয়ে সজ্জিত করা। একইসাথে তাদেরকে সামরিক মহড়ার অংশ করা; যেখানে তাদের ভূমিকা হবে বাইরের আগ্রাসন প্রতিরোধ করা। ২০২০ সাল থেকে বিজিবি সেনাবাহিনীর সাথে মহড়ায় সরাসরি অংশ নিচ্ছে।

 
বর্তমানে থাকা সামরিক সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার করতে চাইছে বাংলাদেশ। বিদেশ থেকে নতুন অস্ত্র খুব একটা না কিনতে পারলেও বাংলাদেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের সক্ষমতা এমনভাবে বৃদ্ধি করছে, যাতে করে তা সংখ্যার দিক থেকে দুর্বলতাকে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারে। ‘মিগ-২৯’ বিমানগুলিকে জাহাজ ধ্বংসী সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বহণে সক্ষম করা ছাড়াও এগুলিকে এবং ‘ইয়াকোভলেভ-১৩০’ বিমানগুলিকে টিভি গাইডেড বোমা বহণে সক্ষম করা এবং একইসাথে এগুলিতে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে।

সপ্তমতঃ বর্তমানে থাকা সামরিক সক্ষমতার সর্বোচ্চ ব্যবহার। বাংলাদেশ বিদেশ থেকে নতুন অস্ত্র খুব একটা না কিনতে পারলেও কিছু গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের সক্ষমতা এমনভাবে বৃদ্ধি করছে, যাতে করে তা সংখ্যার দিক থেকে দুর্বলতাকে কিছুটা হলেও কাটিয়ে উঠতে পারে। যেমন, চীনা ও তুর্কিদের সহায়তায় ‘এফ-৭’ বিমানগুলিকে আকাশ থেকে ভূমির টার্গেটে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে সক্ষম করে তোলা হয়েছে। এছাড়াও ‘মিগ-২৯’ বিমানগুলিকে জাহাজ ধ্বংসী সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বহণে সক্ষম করা ছাড়াও এগুলিকে এবং ‘ইয়াকোভলেভ-১৩০’ বিমানগুলিকে টিভি গাইডেড বোমা বহণে সক্ষম করা এবং একইসাথে এগুলিতে শত্রুর ক্ষেপণাস্ত্র থেকে নিজেকে রক্ষা করার সক্ষমতা তৈরি করা হয়েছে। নৌবাহিনীর পুরোনো যুদ্ধজাহাজগুলিকে নতুন ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রে সজ্জিত করার প্রচেষ্টাও চলছে। উপকূলীয় অঞ্চলকে শত্রুর জাহাজের জন্যে বিপজ্জনক করে ফেলা, যাতে করে তারা যেকোন প্রকারের উভচর অপারেশন করতে এলে মারাত্মক ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখীন হয়।

অষ্টমতঃ দেশের কিছু অঞ্চল, বিশেষ করে উত্তরাঞ্চল, যেখানে বড় আকারের সেনা আগ্রাসনের সম্ভাবনা বেশি, সেখানে যুদ্ধ সক্ষমতা বাড়াতে বিনিয়োগ করা। সবচাইতে বড় বিনিয়োগ করা হয়েছে ট্যাংক বিধ্বংসী অস্ত্রের ক্ষেত্রে। ‘মেটিস এম-১’, ‘পিএফ-৯৮’, ‘আলকোটান-১০০’এর মতো ট্যাংক বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের ভান্ডার গড়ে তোলা হচ্ছে। এর সাথে অন্যান্য প্রকারের সাঁজোয়া যান ও সামরিক গাড়ি ধ্বংস করার জন্যে উপযুক্ত অস্ত্র যেমন রকেট প্রপেল্ড গ্রেনেড, অটোম্যাটিক গ্রেনেড লঞ্চার, আরমার পিয়ার্সিং বুলেট, ইত্যাদি যুক্ত হচ্ছে। ১০৫ মিঃমিঃ আর্টিলারিগুলিকে ট্যাংক বিধ্বংসী সক্ষমতা দেয়া হচ্ছে; যাতে করে এগুলিকে ‘এমবুশ’ ট্যাকটিকসএ ব্যবহার করা যায়। ট্যাংক বিধ্বংসী মাইন ব্যবহারে জোর দেয়া হচ্ছে; যা কিনা শত্রুর ট্যাংক ফর্মেশনের গতি বহুলাংশে কমিয়ে দেবে এবং তাদেরকে নির্দিষ্ট কিছু পথে যেতে বাধ্য করবে। উদ্দেশ্য হলো, শত্রুর জন্যে পুরো জায়গাটাই একটা মাইনফিল্ড বানিয়ে ফেলা এবং চরমতম ক্ষয়ক্ষতির সন্মুখীন করা। ইউক্রেন আক্রমণে রাশিয়া যে ধরণের ক্ষয়ক্ষতির মাঝে পড়েছে, সেটা এরকমই একটা উদাহরণ।

নবমতঃ স্বল্প পাল্লার কাঁধের উপর থেকে ছোঁড়া বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের মজুত বৃদ্ধি করা ছাড়াও নিজস্ব উৎপাদন বৃদ্ধি করা। এর মাধ্যমে শত্রুর বিমান ও হেলিকপ্টারের জন্যে নিচু দিয়ে ওড়া অসম্ভব করে ফেলা যায়; যা ইউক্রেন যুদ্ধে প্রমাণিত। তবে এই কৌশলকে বাস্তবায়ন করতে হলে যে মধ্যম উচ্চতার বিমান বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রের প্রয়োজন, তা এখনও অফিশিয়ালি ডেলিভারি পায়নি বাংলাদেশ। মধ্য উচ্চতায় শত্রুর বিমান ঘায়েল করতে পারার সক্ষমতা বাংলাদেশের আকাশসীমানাকেও শত্রুর জন্যে মাইনফিল্ড বানিয়ে ফেলবে।

দশমতঃ এমন কিছু ডিটারেন্ট তৈরি করা, যার মাধ্যমে শত্রুর নিজস্ব ক্ষয়ক্ষতি বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়া সম্ভব। এর মাঝে রয়েছে শত্রুর ঘাঁটির উপরে দূরপাল্লার হামলা। বিমান বাহিনীর বিমানে লেজার, জিপিএস ও আইএনএস গাইডেড বোমা, রানওয়ে ধ্বংস করার জন্যে বোমা, বড় টার্গেট (যেমন সেতু, রেলওয়ে জংশন, কমান্ড সেন্টার, ইত্যাদি) ধ্বংস করার জন্যে দূরপাল্লার আর্টিলারি এবং স্বল্প পাল্লার ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, স্পেশাল ফোর্সের মাধ্যমে ডীপ পেনেট্রেশন স্ট্রাইক, ড্রোনের মাধ্যমে হামলা, শত্রুর অভ্যন্তরীণ কোন্দল ব্যবহারে ইন্টেলিজেন্সের কার্যক্রম, ইত্যাদি।

এছাড়াও বাংলাদেশের একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য হলো মিয়ানমারের সাথে যেকোন মূল্যে সামরিক সংঘাত এড়ানো। এতে করে বাংলাদেশ যেমন একইসাথে দুই ফ্রন্টে যুদ্ধে জড়ানো থেকে বিরত থাকতে সক্ষম হবে, তেমনি চীনের সাথে অস্ত্র বাণিজ্যের পথটা খোলা থাকবে। কারণ চীনের সাথে বাংলাদেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ অস্ত্রের চালানগুলি মিয়ানমারের উপর দিয়েই আসে।

বাংলাদেশ তার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার দিক দিয়েও যথেষ্ট মনোযোগী হয়েছে; বিশেষ করে পার্বত্য চট্টগ্রাম এলাকার নিরাপত্তা জোরদার ও সেখানে নতুন করে সহিংসতাকে উস্কে দেয়ার চেষ্টা প্রতিহত করতে চাইছে। বিভিন্ন ইস্যুতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে দেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ভারতের হস্তক্ষেপের সুযোগ তৈরি করার ব্যাপারেও রাষ্ট্র তার দৃষ্টি সজাগ রাখছে। মানবাধিকার এবং শরণার্থীদের অধিকারের নাম করে পশ্চিমা দেশগুলি যেন চাপ সৃষ্টি করতে না পারে, সেদিকেও যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হচ্ছে রাষ্ট্রকে। তবে অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক কোন্দলে ইন্ধন যুগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করার সুযোগ বাইরের শক্তিগুলি যে নেবে, সেটা পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার একটা অংশ। এখানে বাংলাদেশের সাফল্য সীমিতই থাকবে; কারণ এটা শুধুমাত্র পশ্চিমা আদর্শের বিপরীত কোন আদর্শই মোকাবিলা করতে সক্ষম।

বাংলাদেশের প্রচেষ্টা কি যথেষ্ট?

আপাতঃদৃষ্টিতে বাংলাদেশের নিজেকে রক্ষা করার প্রচেষ্টা যথেষ্ট নয়। কারণ এতে করে রাষ্ট্রের অর্থনীতি এবং অবকাঠামোর মারাত্মক ক্ষতিসাধন হবে; এবং শত্রুকে দেশের সীমানা থেকে পুরোপুরিভাবে বের করে দেয়া সম্ভব হবে কিনা, তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে। বিশেষ করে এরূপ আগ্রাসনে পশ্চিমা সমর্থন থাকলে বাংলাদেশ তার কিছু অতি গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত এলাকা শত্রুর কাছে হারাবে। যুদ্ধবিরতি বাস্তবায়ন করতে গেলে সেই অঞ্চলগুলিকে শত্রুর হাতে ছেড়ে দিতে হবে। এতকাল বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পের মতো রপ্তানিমুখী শিল্প গড়েছে; আর এখন ভারি শিল্প না থাকার কারণে সার্বভৌমত্ম রক্ষার সংকটে পড়েছে। নিজস্ব ভারি শিল্প থাকলে আজকে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদেরকে অস্ত্রের জন্যে সকলের দ্বারে দ্বারে ঘুরতে হতো না। বাংলাদেশ তার জিডিপি গড়েছে; কিন্তু সেটা রক্ষা করার জন্যে পশ্চিমা দেশগুলির উপরে নির্ভর করেছে। এখন সেই দেশগুলিই বাংলাদেশকে তাদের স্বার্থে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে চাইছে।

বাংলাদেশের সামনে সম্ভবতঃ সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ পথ হলো এমন কিছু কৌশলগত পার্টনারশিপ গঠনের দিকে আগানো, যা কিনা ভারতের সাথে সম্ভাব্য সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রাঙানোকে উপেক্ষা করতে সক্ষম। এক্ষেত্রে তুরস্ক, পাকিস্তান এবং সৌদি আরবের কথা শুরুতেই আসলেও এই দেশগুলিও ঐতিহাসিকভাবেই চিন্তাগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিপক্ষে যেতে অক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। তবে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে যথেষ্ট প্রচেষ্টা এই রাষ্ট্রগুলির অফিশিয়াল এবং আনঅফিশিয়াল অবস্থানকে পরিবর্তন করতে সক্ষম হতে পারে; যদিও সেটার শতভাগ নিশ্চয়তা কেউই দিতে পারবে না। পূঁজিবাদী চিন্তার জের ধরে প্রতিটা দেশই হয়তো তাদের জাতীয়তাবাদী স্বার্থকে অন্য যেকোন কিছুর উপর স্থান দেবে। তবে এক্ষেত্রে বন্ধু হতে পারে পশ্চিমা পুঁজিবাদী আদর্শের ক্ষয়িষ্ণু অবস্থা। পশ্চিমা আদর্শের দুর্বলতার ফলশ্রুতিতেই বিশ্বব্যাপী বহু আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদী শক্তির আবির্ভাব হয়েছে। পশ্চিমা নিয়মকানুনকে বাইপাস করেই অনেক রাষ্ট্র, সংস্থা এবং ব্যক্তি এমন সব কর্মকান্ড করতে পারছে, যা একসময় চিন্তা করাই অসম্ভব ছিল। একইসাথে আদর্শিক দৈন্যতার কারণেই পশ্চিমা আদর্শের ঝান্ডাবাহী যুক্তরাষ্ট্র নিজেই নানা অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক সমস্যার মাঝে পতিত হয়েছে। হয়তো পুঁজিবাদের এই ক্রান্তিলগ্নই হতে পারে বাংলাদেশের নিরপেক্ষতা বজায় রাখার সবচাইতে বড় বন্ধু। তবে কাজটা মোটেই সহজ নয়।




সূত্রঃ

‘যেকোনও হুমকি মোকাবিলায় সেনাবাহিনীকে সতর্ক থাকার নির্দেশ প্রধানমন্ত্রীর’, বাংলা ট্রিবিউন, ২৮শে অক্টোবর ২০২০
‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সাক্ষাৎ নিয়ে কেন লুকোচুরি’, বিবিসি বাংলা, ২১শে অগাস্ট ২০২০
‘কাল তুরস্ক যাচ্ছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী’, কালেরকন্ঠ, ১২ই সেপ্টেম্বর ২০২০
‘আঙ্কারায় বাংলাদেশের দূতাবাস কমপ্লেক্সের উদ্বোধন’, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ১৪ই সেপ্টেম্বর ২০২০
‘বাংলাদেশে সমরাস্ত্র রপ্তানিতে আগ্রহী তুরস্ক’, দ্যা বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড, ২৩শে ডিসেম্বর ২০২০
‘Explained: Why India Is Giving A Submarine To Myanmar Despite Itself Facing Shortage’, in Swarajya Magazine, 16 October 2020
‘India gifts a submarine to Myanmar, gains edge over China’ in Hindustan Times, 21 October 2020
‘Bangladesh Army inducts new 300 mm MRLs’ in Janes, 21 June 2021
‘Taking it to next level, India readies submarine for Myanmar’ in The Economic Times, 30 July 2019
‘What if China wrings India’s ‘Chicken’s Neck’ – the Siliguri corridor? Here are some countermeasures’ by Col. Mohinder Pal Singh, in The Times of India, 09 October 2019
‘Twisting India’s Chicken’s Neck’ by Syed Fazal-e-Haider, in The Interpreter, The Lowy Institute, 15 July 2020
‘Myanmar Air Force inducts new FTC-2000Gs’ in Janes, 09 December 2022
‘Myanmar takes delivery of Russian fighter jets’ in Bangkok Post, 04 November 2022
‘Myanmar Air Force commissions 10 new aircraft to boost counter-insurgency capabilities’ in Janes, 17 Decemer 2019
‘World Air Forces directory 2022’ in Flight Global (https://www.flightglobal.com/reports/world-air-forces-directory-2022/146695.article)
‘লাইট ট্যাংক ভিটি-৫ কিউডব্লিউ ১৮ এ মিসাইল সিস্টেমের অন্তর্ভুক্তিকরণ অনুষ্ঠানে সেনা প্রধান’, ইত্তেফাক, ০৬ ডিসেম্বর ২০২২
‘BAF floats tender to purchase 8 fighters’, in New Age, 07 March 2017
‘France keen to sell weapons to Bangladesh’ in New Age, 01 November 2021
‘Many countries keen to sell weapons to Bangladesh’ in New Age, 24 September 2021
‘Purchase of US defence hardware: Dhaka, Washington closing in on deal’ in The Financial Express, 18 October 2019
‘Türkiye wants to enhance defense cooperation with Bangladesh: Envoy’, in Daily Sabah, 16 November 2022
‘Bangladesh Supplies TEBER Guidance Kit From Turkiye’, in Turkish Defence News
‘বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ৫০ বছর পূর্তি’, সময় টিভি, ১৪ই জানুয়ারি ২০২২ (https://www.youtube.com/watch?v=Eg4KrHxT5RI)
‘আধুনিক সমরাস্ত্রে চ্যালেঞ্জিং অনুশীলন সেনাবাহিনীর’, যুগান্তর, ১৮ই জানুয়ারি ২০২২
‘এবছর থেকে শীতকালীন মহড়া শুরু করেছে বিজিবি’, যমুনা টিভি, ১৩ই জানুয়ারি ২০২০ (https://www.youtube.com/watch?v=jPdQ2ezInRY)
‘যুদ্ধ প্রশিক্ষন মহড়ায় অন্যরকম সেনাবাহিনী দেখলো গ্রামবাসি’, সংবাদ, ১৪ই জানুয়ারি ২০২২
‘বাংলাদেশের জন্য ১১ টন অস্ত্র বহনকারী বিমান গ্রিসে বিধ্বস্ত, বলছেন সার্বিয়ার প্রতিরক্ষামন্ত্রী’, বিবিসি বাংলা, ১৭ই জুলাই ২০২২
‘স্পেন ও যুক্তরাজ্য সফর শেষে দেশে ফিরলেন সেনাপ্রধান’, যুগান্তর, ০৪ঠা অগাস্ট ২০২২
‘বিজিবির জন্য এন্টি ট্যাংক গাইডেড মিসাইল ক্রয় করা হচ্ছে’, সাম্প্রতিক, ০২রা নভেম্বর ২০১৯
‘বিজিবিতে এন্টি গাইডেড উইপন সংযোজন করা হয়েছে’, কালের কন্ঠ, ১৭ই জুলাই ২০২১

16 comments:

  1. Lack of offensive weapons and capable heavy industries will deeply weaken the total defense strategy. No wars in the world have positive history in favour of total defenders. Deep penetration capabilities shall be enforced or compensated heavily but in last five years are total waste if you exclude these chinese tanks and turkish rocket launchers!

    ReplyDelete
    Replies
    1. Right you are! ... The point to note here is dependency on the West starting from economy to defence, which has prevented Bangladesh from developing her own heavy industries... Such thoughts have made the state weak... India, on the other hand, is an extremely weak state, which is vulnerable to ideological moves by other powers... That's why the US had been able to use India to forward it's strategy of containing China... With this kind of games being played two yards from home, Bangladesh can hardly sleep in peace... It's no wonder that authorities here have started to scamper after anything they can get their hands on... Decades of neglect on defence industry is now demanding not superficial, but fundamental changes...

      Delete
    2. "India, on the other hand, is an extremely weak state, which is vulnerable to ideological moves by other powers.."

      স্যার, আমার কিন্তু এরকম মনে হচ্ছে না। এই মুহুর্তে ইউ এস নেতৃত্বে পশ্চিমারা দুর্বল, যেমন টা, রাশিয়া- ইউক্রেন এ ব্যাপারে ইন্ডিয়াকে নিজেদের মত করে ইউস করতে পারেনি, এই মত অবস্থায় ইন্ডিয়া কিন্তু তার শক্তি প্রদর্শন করতে বাংলাদেশকে নিজের বলয়ে রাখতে বল প্রয়োগ করতে পিছুপা হবে না, বলে আমার মনে হয়। যদি বল প্র‍য়োগ করে তবে পশ্চিমারা বাধা দেবে বলে মনে হয় না। আর চায়না এই ঝামেলায় পড়তে চাইবে বলে মনে হয়না।

      Delete
    3. একটা ব্যাপারকে আপনি কিভাবে বিশ্লেষণ করবেন, তা নির্ভর করছে আপনার দৃষ্টিভঙ্গির উপর। দৃষ্টিভঙ্গি আপনাকে বিভিন্ন বিষয়ের সংজ্ঞা দেবে, যার মাধ্যমে আপনি একপ্রকারের মাপকাঠি পাবেন। একটা রাষ্ট্র সবল না দুর্বল, তা আপনি সেই মাপকাঠির মাধ্যমে বুঝতে পারবেন।

      এখানে যে মাপকাঠিতে ভারতের দুর্বলতার কথা বলা হয়েছে, সেটা হলো ভারতের সৃষ্টিগত দুর্বলতা (বহু রাষ্ট্রের স্তূপ) এবং চিন্তাগত অসারতা। চিন্তাগত দিক থেকে ভারতের কোন উদ্দেশ্য নেই। এতবড় একটা রাষ্ট্র, অথচ তার দুনিয়াতে তুলনামূলকভাবে কোন প্রভাব নেই। অথচ এত ছোট দেশ ব্রিটেন দুনিয়া শাসন করেছে দু'শ বছর। এটা হলো চিন্তার দিক থেকে এগিয়ে থাকার কারণে। ভারতের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা ব্রিটেনের ঠিক উল্টো। ব্রিটিশরাই ভারতের বাউন্ডারি এমনভাবে এঁকেছে যে, সে যতদিন বাঁচবে, ততদিন আশেপাশের সকলের সাথে সমস্যা করবে। এভাবে পশ্চিমা আদর্শিক রাষ্ট্রগুলি ভারতকে নিয়ে খেলতে পারবে; ঠিক যেমনটা যুক্তরাষ্ট্র খেলছে এখন।

      ভারতের সামরিক নীতি যুক্তরাষ্ট্র কিভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে, তা বুঝতে এই লেখাটা পড়তে পারেন -
      https://koushol.blogspot.com/2020/06/Future-india-china-border-tension.html

      একই ইস্যুতে এগুলিও পড়তে পারেন -
      https://koushol.blogspot.com/2020/07/what-us-gain-from-india-china-conflict.html

      ভারতের সমস্যাতে দক্ষিণ এশিয়ার বাকি দেশগুলি সমর্থন না দেয়ায় ভারত যে কতবড় বিপদে রয়েছে, তা নিয়ে পড়ুন -
      https://koushol.blogspot.com/2020/06/biggest-challenge-for-india-since-birth.html

      Delete
  2. ভালো লেখা। কিন্তু...

    * যুগোস্লাভিয়া আর ইন্দোনেশিয়া ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্য ছিল কবে?
    * কাভুসোগলু লোকটা কে?
    * কৌশলগত বন্ধু জিনিসটা কী?
    * ২০১৭ সালে সাড়ে ১১ লক্ষ 'মুসলিম জনগণ' কোথা থেকে এলো? হিন্দু রোহিঙ্গারা কই গেল?
    * ভারতের কথায় মিয়ানমার কেন বাংলাদেশকে আক্রমণ করতে যাবে?
    * সামরিক ইন্টেলিজেন্সের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে – কে বললো?

    ReplyDelete
    Replies
    1. - যুগোস্লাভিয়া দেশটা তৈরির কাহিনী দেখলেই বুঝতে পারবেন। এই দেশটা তৈরিতে ব্রিটিশদের যথেষ্ট শক্ত হাত ছিল। ইন্দোনেশিয়ার বাউন্ডারিও তৈরি করেছে ব্রিটিশরা; যদিও ইন্দোনেশিয়া ছিল ডাচ কলোনি। ডাচদেরকে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে তৈরি করার পিছনে ইংলিশদের অবদান সর্বোচ্চ। একসময় ডাচ এবং ইংলিশ রাজা একই ব্যক্তি ছিলেন। ডাচরা ব্রিটিশদের চিন্তাটাই ফলো করেছে বেশিরভাগ সময়। ইন্দোনেশিয়া তৈরির আগেই এখানকার বাউন্ডারিগুলি তৈরি করেছিল ব্রিটিশরা। বিশেষ করে বোর্নিও দ্বীপকে কয়েক ভাগে ভাগ করার পিছনে ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য ছিল। এখানকার সুলতানদের মাঝে সেন্ট্রাল ছিল ব্রুনাইএর সুলতান; যার সাথে বাকি সুলতানদের (বেশিরভাগই বর্তমান ইন্দোনেশিয়াতে) বৈবাহিক সম্পর্কও ছিল। ব্রিটিশরা ব্রুনাইকে নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে পুরো এলাকার নিয়ন্ত্রণ নেয়। আর এই একই হিসেবে দ্বীপটাকে টুকরা টুকরা করে দুই জনের মাঝে ভাগাভাগি করে নেয়। সেই ভাগাভাগি এখনও রয়েছে; কেউ পরিবর্তন করেনি। ব্রিটিশরা পুরো দুনিয়ার বেশিরভাগ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠাতা; এবং একারণেই এই রাষ্ট্রগুলির বেশিরভাগের চরিত্র ব্রিটিশ চিন্তার সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সকলকে আক্ষরিক অর্থে কমনওয়েলথের অংশ হওয়া বাধ্যতামূলক নয়। তবে এর পিছনে মূল চিন্তা ছিল মার্কিন এবং সোভিয়েত লাইনের বাইরে তৃতীয় একটা লাইন ফলো করা; যেটা প্রকৃতপক্ষে ব্রিটিশ লাইন।

      - কাভুসোগলুর পরিচয় লেখায় থাকা সত্ত্বেও জিজ্ঞেস করছেন কেন?

      - কৌশলগত বন্ধুর অর্থ হলো সেখানে নিরাপত্তার সহযোগিতা থাকবে; গোপন বিষয়াদি আদান-প্রদান হবে; একজন অপরজনকে বিপদে সহায়তা দেবে।

      - শরণার্থী নিয়ে আপনার জানার আগ্রহ থাকলে গুগল ব্যবহার করুন। লেখার মূল বিষয় নিয়ে প্রশ্ন থাকলে করুন।

      - ভারতের কারণে বাংলাদেশকে দুর্বল অবস্থানে পেলে মিয়ানমার কেন সেন্ট মার্টিন নেয়ার চেষ্টা করবে না? আপনি মিয়ানমারের সেনানায়ক হলে কি করতেন?

      - কিছু ব্যাপার রয়েছে যেগুলি প্রশ্ন করা বা না করাটা ম্যাচুরিটির ব্যাপার। বুঝে নিন।

      Delete
    2. আপনার উত্তর বেশ এগ্রেসিভ।

      যুগোস্লাভিয়া আর ইন্দোনেশিয়া কখনো ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্য ছিল না। ইনি জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনকে ব্রিটিশ কমনওয়েলথের সদস্যদের সংগঠন বলে চালাতে গেছেন। এরপর যখন বলা হয়েছে তখন আজগুবি সব যুক্তি দাঁড় করিয়েছে। স্নায়ুযুদ্ধের সময় ব্রিটিশ লাইন বলে কিছু ছিল না, ব্রিটেন আপাদমস্তক যুক্তরাষ্ট্রের অনুগামী ছিল।

      নামটা চাভুসোলু, কাভুসোগলু না। ব্যাসিক তুর্কি উচ্চারণ জানা থাকা উচিত।

      কৌশলগত বন্ধু বলে কোনো শব্দ হয় না। কৌশলগত অংশীদার (strategic partner) হয়। আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে 'মিত্র' শব্দটার ব্যবহার হয়, 'বন্ধু' না।

      ২০১৬–২০১৭ সালে ৭.৫ লক্ষ রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছিল, ১১ লক্ষ না। বাকি ৪ লক্ষ আগে থেকেই বাংলাদেশে ছিল। রোহিঙ্গা শব্দটা ব্যবহার না করে 'মুসলিম জনগণ' বলাটা হাস্যকর, কারণ রোহিঙ্গাদের মধ্যে মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ সবই আছে, আর মুসলিম রোহিঙ্গাদের পাশাপাশি হিন্দু রোহিঙ্গারাও শরণার্থী হয়ে এসেছিল।

      আপনি বলেছেন, ভারতের কথামতো মিয়ানমার বাংলাদেশ আক্রমণ করতে পারে, ভারতের 'কারণে' না। রিপ্লাইয়ের সময় কথা ঘুরিয়েছেন। সেটা কোন পরিস্থিতিতে? যখন ভারত আর চীনের যুদ্ধ হচ্ছে আর ভারত বাংলাদেশি ভূখণ্ড ব্যবহার করছে।
      চীনের মিত্র মিয়ানমার কোন দুঃখে চীন–ভারত যুদ্ধের সময় ভারতের কথামতো কাজ করতে যাবে?

      Delete
    3. দেখুন, আলোচনার বাইরে গিয়ে যুগোশ্লাভিয়া, চাভুসোগলু উচ্চারণ বা কৌশলগত মিত্র বা বন্ধুর টারমিনোলজি নিয়ে কথা আপনার কমেন্ট থেকেই এসেছে। যাই হোক, এসকল বিষয় নিয়ে কথা বলে আলোচনাকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে নিয়ে যাওয়াটা এই আর্টিকেলের উদ্দেশ্য নয়।

      আপনি এই লেখার সাথে দ্বিমত পোষণ করতেই পারেন। সেই অধিকার আপনার রয়েছে; কিন্তু আলোচনাকে ভিন্ন পথে নিয়ে যাওয়াটা অনুচিত।

      মিয়ানমার নিয়ে খুব বেশি কথা বলার উদ্দেশ্য এখানে না থাকলেও এটা বলতেই হয় যে, মিয়ানমার তার নৌবাহিনীর জাহাজগুলিকে চীনাদের সহায়তায় তৈরি করলেও সেই জাহাজগুলিতে ভারতীয় (ইউরোপিয় প্রযুক্তির) দূরপাল্লার রাডার, সাবমেরিন খোঁজার জন্যে সোনার এবং টর্পেডো কিনেছে। এগুলি ভারতের কাছ থেকে সাবমেরিন কেনার বাইরেই হয়েছে। মিয়ানমার ভারতকে কালাদান প্রকল্পও বাস্তবায়ন করতে দিয়েছে। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে ভারতীয়রা সামরিক অপারেশনও চালিয়েছে - মিয়ানমার কিছুই বলেনি। মিয়ানমার যদি শুধুমাত্র চীনেরই আজ্ঞাবহ হতো, তাহলে তারা ভারতের কাছ থেকে এত সামরিক এবং অর্থনৈতিক সহায়তা কেন নিয়েছে? তারা জাপান, সিঙ্গাপুর থেকেই বা কেন এত বিনিয়োগ নিয়েছে? তারা কি জানে না যে, জাপান চীনের প্রতিযোগী এবং যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু রাষ্ট্র? তারা কি জানে না চীনের সাথে ভারতের দ্বন্দ্ব রয়েছে? জাপানই বা কেন মিয়ানমারের মানবাধিকার ইস্যুকে আমলে না নিয়ে মিয়ানমারে বিনিয়োগ করেছে? এগুলি সবগুলিই ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যের অংশ; যেগুলি আবার যুক্তরাষ্ট্রের অঞ্চলিক কৌশলের অংশ (কারণ জাপান যুক্তরাষ্ট্রের অত্যন্ত কাছের বন্ধু এবং কৌশলগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল)।

      মিয়ানমারের অভ্যন্তরে গণহত্যা চালাবার আগে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বেশকিছু সদস্যকে হত্যা করা হয়েছিল; যেই হত্যাকারীদেরকে কখনোই খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীও সেই হত্যাকারীদের খুঁজে বের করার জন্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন - যাতে করে এটা পরিষ্কার করা সম্ভব হয় যে, মিয়ানমারের অভ্যন্তরে সমস্যা সৃষ্টি করে লক্ষ লক্ষ শরণার্থীকে বাংলাদেশে পাঠাবার পিছনে বিদেশী হাত রয়েছে। এছাড়াও বাংলাদেশ সরকার কেন অং সান সু কি ক্ষমতাচ্যুত হবার পরেও মিয়ানমারের সাথে প্রায় একইরকম সম্পর্ক রেখে চলেছে? এগুলির ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট হিসেবে ধরেই কোন একটা বিষয়ের বিশ্লেষণ বাঞ্ছনীয়।

      Delete
  3. বর্তমান সময়ে রাজনৈতিক পরিস্থিতি / অস্থিরতা সৃষ্টি করে কি বাংলাদেশ সরকারের নিরপেক্ষ নীতি পরিবর্তন এ যুক্তরাষ্ট্র সহ চিন বিরোধী দেশগুলি হাত রয়েছে?
    কিংবা
    জনগনের ইচ্ছায় এরকম পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে?

    বাইরে থেকে বর্তমান সরকার যথেষ্ট ভারত প্রেমি বলে মনে হয়। কিনতু আপনার লেখা থেকে অন্য কিছুর আভাস পাওয়া যাচ্ছে।

    বাংলাদেশ সরকার কি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা উন্নতিতে চিনের সাহায্য নিচ্ছে?
    মাল্টিরোল ফাইটার প্লেন নিতে ইউরোপ যাচ্ছে কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার সব কথার উত্তর দেয়া সম্ভব নয়। লেখার গভীরতা অনুধাবন করতে হলে কিছু ব্যাপার প্রশ্ন না করে বুঝে নিতে হবে। মনে রাখবেন যে, শুধুমাত্র আপনি একাই এই লেখাগুলি পড়ছেন না।

      এখানে কিছু ব্যাপারকে বিশেষভাবে দেখতে হবে -

      ১। বাংলাদেশে অত্র অঞ্চলের সবচাইতে বড় সাবমেরিন ঘাঁটি তৈরি হচ্ছে। এটা কে কিভাবে দেখবে (শুধুমাত্র ভারত নয়) এবং কিভাবে এর প্রত্যুত্তর দেবে, সেটার ভূরাজনৈতিক ফলাফল সুদূরপ্রসারী। কারণ সাবমেরিন একটা কৌশলগত অস্ত্র; যা নৌপথের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা যেকোন বৃহৎ শক্তির ঘুম হারাম করতে সক্ষম।

      ২। বাংলাদেশের অর্থনীতি পশ্চিমে রপ্তানি করার উপরে অনেকখানি নির্ভরশীল; যদিও নিজেদের মৌলিক চাহিদা (অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান) পূরণের জন্যে ততটা নির্ভরশীল নয়। তবে পশ্চিমা সংস্থাগুলির (আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, ডব্লিউটিও, জাতিসংঘ, মানবাধিকার সংস্থা, ইত্যাদি) মাধ্যমে বাংলাদেশের উপরে পশ্চিমারা চাপ সৃষ্টি করতে সক্ষম।

      ৩। বাংলাদেশ ইউরোপ এবং যুক্তরাষ্ট্রকে একচোখে দেখে না। রাজনৈতিকভাবে কেউ ইউরোপ (মূলতঃ ব্রিটেন) অথবা কেউ যুক্তরাষ্ট্রকে কাছের বলে মনে করে। এর মাঝে যারা ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নে আগ্রহী, তারা চীনের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে লাগাম টানতে ইচ্ছুক। ইউরোপ-পন্থীরা সেব্যাপারে অপেক্ষাকৃত রয়েসয়ে চলতে ইচ্ছুক; অর্থাৎ চীনের সাথে সম্পর্কে লাগাম টানতে ইচ্ছুক নয়; আবার চীনের উপরে পুরোপুরিভাবে নির্ভর করতেও ইচ্ছুক নয়।

      ৩। মুসলিম দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক আলাদা। কারণ এখানে সরকারের বাইরেও রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন চ্যানেলে সম্পর্ক রয়েছে। তবে মুসলিম দেশগুলির মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলির উপরে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব যথেষ্ট বেশি; যেমন - তুরস্ক, সৌদি আরব এবং পাকিস্তান। যদিও সাম্প্রতিক সময়ে এই দেশগুলির সাথে ওয়াশিংটনের সম্পর্কে শীতকাল বয়েছে, তথাপি এই দেশগুলির ক্ষমতাসীনরা যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া চিন্তা করতে শেখেনি।

      এই ব্যাপারগুলি থেকে আপনার উত্তরগুলি খুঁজে নিতে হবে। যে ব্যাপারটা না বললেই নয় তা হলো, ভারত দুনিয়ার সুপারপাওয়ার নয়; ভারত দুনিয়ার কোনকিছুই নিয়ন্ত্রণ করে না।

      Delete
  4. বাংলাদেশ যে ভূরাজনৈতিক খেলার ফাদে পড়েছে তা দেখাই যাচ্ছে। বিষেশ সুত্র বলছে যে চিনকে সোনাদিয়াতে বন্দর করতে না দেয়ায় চীন বার্মাকে গভীর বন্দর এর টোপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে পাঠিয়েছে। সেটাই যদি হয় তবে সরকার প্রধান বিষয়টা অনুধাবন করতে পারেন রাখাইনে পুলিশ মারার পিছনে কে ছিল। বাংলাদেশ আসলে যে খেলার মধ্যে পড়েছে সেখানে বাংলাদেশের এখন দক্ষিন এশিয়ার ইস্রাইল হওয়া ছাড়া উপায় নাই যাহা তো দিবাস্বপ্ন বৈ কিছুই না। যে দেশে দুর্নিতী, টাকা পাচার, ডলার সংকট, বিনিয়োগের অভাব ছাড়াও সামজিক নিরাপত্তার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে ভুগছে, সেখানে বাংলাদেশের ভবিষ্যত কি দাঁড়াবে তা বুঝা মুশকিল। আর ভারত তার টিকটিকি (এজেন্ট) দিয়ে কি করছে তা তো বলার অপেক্ষা রাখে না। ভারত তো ইমপ্লায়েড একশন দিয়ে বাংলাদেশ দখল করে ফেলতেছে যাহা ভয়ংকর বটে। মিয়ানমার তো ভারতের সাথে আতাত করে সি এইচ টি আর কক্সবাজার নিয়ে নিবে। বাঙালি জাতির অরাধ্য একক রাস্ট্র যাহা পশ্চিমবঙ্গ থেকে আসাম, মিজো পর্যন্ত চিন্তা করতে হবে বাঙ্গালিদের, নাহলে নিস্তার নাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা ভূরাজনৈতিক হিসেবের প্রথমেই আসবে শক্তিশালী দেখগুলির চিন্তাগত অবস্থান; তারা কে কি চায় এবং কে কতটা শক্তিশালী। এখানে প্রথমেই আসবে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের কথা। কারণ এরা বর্তমান দুনিয়ার সকল নিয়মকানুন তৈরি করেছে। আপনি কি করতে পারবেন কি পারবেন না, তা নির্ভর করছে এই আইনকানুনগুলি কতটা শক্তভাবে বাস্তবায়িত রয়েছে; অথবা অন্য কথায় শক্তিশালী দেশগুলি এই আইনগুলি বাস্তবায়নে কতটা সক্ষম, সেটার উপরে। এই আইনগুলি বাস্তবায়নে এই শক্তিশালী দেশগুলি অন্যান্য দেশগুলিকে বাধ্য করে।

      উদাহরণস্বরূপ, যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন বিশ্বের প্রায় সকল দেশকে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে সহযোগিতা করতে বাধ্য করেছিল। প্রতিটা দেশ তাদের বিমানবন্দর, সমুদ্রবন্দর, ইন্টেলিজেন্স, স্পেশাল ফোর্স, প্যারামিলিটারি, কোস্ট গার্ডএর ব্যবস্থাপনা, এমনকি তাদের পার্লামেন্টের আইন তৈরিকেও তাদের ইচ্ছামতো বাস্তবায়নে বাধ্য হয়েছিল। তারা বহু দেশে নিয়মিত ড্রোন হামলা করেছে; বাকিদেরকে হুমকি দিয়েছে। যেকোন দেশের আকাশসীমা তাদের জন্যে খুলে দিতে বাধ্য করেছে। নতুন করে সন্ত্রাসবিরোধী আইন তৈরিতে বাধ্য করেছে। বিমানবন্দর এবং সমুদ্রবন্দরে তাদের লোকজন এবং যন্ত্রপাতি নিয়োগ দিতে বাধ্য হয়েছে।

      এগুলি কিছু উদাহরণমাত্র। পশ্চিমা এই দেশগুলি বহু দেশে সরকার পরিবর্তন করেছে; নিজেদের পছন্দমতো সরকার বসিয়েছে; কে নির্বাচনে অংশ নেবে সেটা নির্ধারণ করে দিয়েছে; এমনকি বহু ক্ষেত্রে তাদের পক্ষের সামরিক সরকার ক্ষমতা নেবার পরে তাদের পক্ষে কথা বলেছে। উল্টোদিকে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা পায়নি বলে অনেক দেশের উপরে অবরোধ দিয়েছে। তাদেরকে পশ্চিমা নিয়ম মানতে বাধ্য করেছে। বহু দেশের মাঝে সাবভার্সন চালিয়েছে; রাষ্ট্রবিরোধীদের ইন্ধন যুগিয়েছে; বিদ্রোহী দল তৈরি করে তাদেরকে অস্ত্র, ট্রেনিং দিয়েছে, তাদের নেতাদেরকে মিডিয়া কভারেজ দিয়েছে। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষকে ব্যাকিং দিয়ে দুই দেশের মাঝে সংঘাতের সৃষ্টিও করেছে। একপক্ষকে বলেছে এরা খারাপ; তাই এদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করো। আর অপর পক্ষকে বলেছে এরা উমুকের পক্ষ হয়ে দালালি করছে, তাই ওরা তোমাদের শত্রু। এই কথাগুলি বলার জন্যে তারা সেই দেশে থাকা তাদের এজেন্টগুলিকেই ব্যবহার করেছে।

      এই পশ্চিমা দেশগুলি পৃথিবীর সকল দেশকে তাদের এজেন্টদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এমনকি অন্যান্য দেশের এজেন্টদেরকে এরা তাদের পক্ষে কাজে লাগায়। পৃথিবীর অনেক বড় এবং তথাকথিত শক্তিশালী দেশও তাদের ইচ্ছা বাস্তবায়ন করে। একটু চিন্তা করে দেখুন তো, যুক্তরাষ্ট্র কেন 'এস-৪০০' কেনার জন্যে তুরস্কের উপরে অবরোধ দিলো; আর ভারতের উপরে অবরোধ দিলো না? কেন যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে রাশিয়ার সাথে বাণিজ্য চালিয়ে নেবার পরেও যুক্তরাষ্ট্র ভারতের উপরে কোন প্রকারের অবরোধ দিলো না? অথচ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের যন্ত্রাংশ আনার ব্যাপারে বাংলাদেশের উপরে চাপ সৃষ্টি করলো? একই রুশ জাহাজ যখন ভারতের কোচিন বন্দরে গেলো, তখন কেনো যুক্তরাষ্ট্র কিছুই বললো না?

      অনেক কিছুই আমাদের প্রশ্ন এড়িয়ে যাবে যদি আমরা বিশ্ব ব্যবস্থা কারা তৈরি করেছে, আর কারা নিয়ন্ত্রণ করছে, তাদেরকে বাদ দিয়ে ছোট ছোট বিষয় নিয়ে কথা বলি।

      Delete
  5. বাংলাদেশ তো ভারতের সাথে ট্রানজিট আর ট্রানশিপমেন্ট চুক্তি করে রাখছে, ইহাতে সমস্যা আসন্ন কিনা যুদ্ধকালিন সময়? আর বাংলাদেশ ইস্পাত ও প্রকৌশল কর্পোরেশন তো উদ্যোগ নিলে আগেই ভারী শিল্প গড়ে তুলতে পারত, এতদিনে হয়তোবা আমরা নিজেরাই প্রয়োজনীয় ভারী সরঞ্জাম, মিলিটারী গ্রেড গাড়ী, এপিসি, এম্বুলেন্স, ইত্যাদি উতপাদনে সক্ষম হতাম, এখানে আমাদের মূল ব্যররথতার কারণ কি এবং তা কাটিয়ে উঠতে কি কি করতে হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট চুক্তির বেশকিছু সীমাবদ্ধতা রয়েছে ভারতের জন্যে। সেগুলি মূলতঃ বাণিজ্যিক। কিন্তু যুদ্ধকালীন সময়ে শুধুমাত্র বাণিজ্যিক চুক্তি তাদের জন্যে যথেষ্ট হবে না। যেমন, বাণিজ্যিক চুক্তিতে ভারত কি পণ্য নেবে, সেগুলি বলা থাকবে এবং শিপমেন্ট অনেকাংশেই বাংলাদেশের লজিস্টিক সক্ষমতার সাথে সামঞ্জস্য থাকতে হবে। আবার এই চুক্তিগুলিতে যেধরনের পরিবহণ ব্যবহারের কথা বলা হয়েছে, সেগুলি সামরিক ক্ষেত্রে অনেকক্ষেত্রেই নিতান্তই তুচ্ছ। যেমন, ভারি সামরিক যানবাহন নেবার মতো কোন পরিবহণ চুক্তির মাঝে নেই - রেলপথ বা নৌপথে সেগুলি নেয়া সম্ভব নয়; আর বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে রাস্তা ব্যবহার করে ভারতীয় সেনাবাহিনীর সেনাসদস্যসহ সামরিক গাড়ি নেয়া তো ... বুঝতেই পারছেন।

      আর দ্বিতীয় প্রশ্নে আপনি বাংলাদেশের ভারি শিল্পের কথা বলেছেন। আইএমএফ, বিশ্বব্যাংক, জাইকা, এডিবি'র কাছ থেকে ঋণ নিয়ে প্রকল্প চালিয়ে একইসাথে সামরিক শিল্পের পিছনে বিনিয়োগ করতে চাইছেন। পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলি বলবে যে, তাদের দেয়া অর্থ আপনি সামরিক শিল্প তৈরিতে ব্যবহার করছেন; যেমনটা তারা পাকিস্তানকে বলেছে এবং পাকিস্তানের সামরিক বাজেট কমাতে বলেছে। বর্তমান বিশ্বব্যবস্থায় আপনি পশ্চিমা দাতা সংস্থাগুলির চোখ রাঙ্গানোকে উপেক্ষা করে অস্ত্র তৈরিতে মনোনিবেশ করতে পারবেন না। বিশেষ করে সেই অস্ত্র যদি পশ্চিমাদের কোন বন্ধু রাষ্ট্রের (যেমন ভারত) বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হবার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে পশ্চিমারা কোন অবস্থাতেই চাইবে না যে, আপনি সামরিক শিল্প গড়ে তোলার সক্ষমতা অর্জন করে ফেলেন। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ বা পাকিস্তানের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি ভারতের জন্যে হুমকি; এবং তা চীনকে পরোক্ষভাবে সহায়তা দেবে। যেকারণে যুক্তরাষ্ট্র কোন অবস্থাতেই চাইবে না যে, ভারত দক্ষিণ এশিয়াতে বাংলাদেশ এবং পাকিস্তানের কারণে চীনকে মোকাবিলা করতে ব্যর্থ হোক।

      যুক্তরাষ্ট্রের সাথে তাইওয়ান ইস্যুতে চীনের সামরিক দ্বন্দ্ব শুরু হলে যুক্তরাষ্ট্র প্রথমেই চাইবে ভারত যাতে চীনের যথেষ্ট পরিমাণ সামরিক শক্তিকে হিমালয়ের পাদদেশে আটকে রাখতে পারে; এতে চীনের সামরিক শক্তি বিভক্ত হবে এবং চীন যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে কিছুটা হলেও কম শক্তি মোতায়েন করতে বাধ্য হবে।

      Delete
  6. আমি বুঝে উঠতে পারছি না যে এমন কি কৌশলগত অস্ত্র বাংলাদেশে আছে যা দিয়ে সে পরাশক্তিদের সাথে টেক্কা দিবে। বিমানবাহিনীর অবস্থা নাই বললাম। নৌবাহিনী না হয় পুরাতন জাহাজ নতুন অস্ত্রে সজ্জিত করবে, কিন্তু ফাক তো থেকেই যায়। নৌবাহিনীর এন্টি সাবমেরিন ওয়ারফেয়ার তো একপ্রকার নাই বললে চলে। আধুনিক নৌসমরকে কেন্দ্র করে যে ধরনের আধুনিক যুদ্ধজাহাজ আসছে তার কিছুই নাই। ১৯৮০ বা ৯০ দশকের জাহাজ আর চিন্তাভাবনা নিয়ে নৌবাহিনী কতদূর এগুতে পারবে যুদ্ধকালীন সময় তা বলা মুশকিল। সেনাবাহিনীর কাছেই বা টাইগার মিসাইল ছাড়া কি আছে? দূরপাল্লার সমরাস্ত্র নাই। আর এন্ড ডি তেও আগ্রহ দেখিনা। কৌশলগত সমরাস্ত্র উতপাদনের ইচ্ছা দেখিনা। এম আর সি এর ব্যাখ্যা না হয় পেলাম, হাই পার্ফরমেন্স ফ্রিগেটে তো এম আর সি এর মত কাহিনী হওয়ার কথা না। ফ্রিগেট বাদ দিলেও বাংলাদেশের কাছে ছোট যুদ্ধযান থেকে শুরু করে কর্ভেট পর্যন্ত প্রযুক্তি থাকার কথা। সেগুলোর উপর ভিত্তি করে তো নতুন এক জাহাজ উতপাদনে নিতে পারে৷ এত বেশি বিদেশ নির্ভরতা মানে বিদেশি ডক্টিনে ভরসা করা যা মোটেও ভাল বিষয় নয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. জ্বি। আপনার কথা ঠিক, যে বাংলাদেশ নিজের সামরিক শিল্প বা কৌশলগত অস্ত্র ডেভেলপ করতে সক্ষম হয়নি। তবে এর জন্যে কিছু ব্যাপারকে অবশ্যই বাদ দিয়ে চিন্তা করা যাবে না।

      প্রথমতঃ বাংলাদেশ পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থার অংশ। পশ্চিমারা কে কতটুকু অস্ত্র পাবে, তা অনেকটাই নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। বিশেষ করে যেসব দেশ পশ্চিমাদের উপর বাণিজ্যিক ও আর্থিকভাবে নির্ভরশীল, তাদের উপরে পশ্চিমাদের নিয়মতান্ত্রিক নিয়ন্ত্রণ অনেক বেশি থাকে। তারা বাণিজ্য ও আর্থিক সুবিধাদি দেয়ার শর্ত হিসেবে অনেক কিছু নিয়ন্ত্রণ করার সুযোগ পায়।

      দ্বিতীয়তঃ পশ্চিমারা সাধারণতঃ মুসলিম দেশগুলির নিজস্ব সামরিক সক্ষমতা নিয়ন্ত্রণ করে। কারণ তারা ভয় পায় যে, সেই দেশগুলিকে কোন একসময় পশ্চিমা আদর্শের পরিপন্থী কোন সরকার ক্ষমতায় চলে আসতে পারে। তারা অস্ত্র বিক্রি করে ঠিকই, কিন্তু অস্ত্রের সোর্স কোড দেয় না বা অথবা দন্তহীন অস্ত্র বিক্রি করে। যেমন, যুদ্ধবিমান দেয়, কিন্তু যুদ্ধবিমানের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেপণাস্ত্র বা বোমা বা প্রযুক্তি সরবরাহ করে না।

      তৃতীয়তঃ তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলির সরকারগুলি পশ্চিমাদের স্বার্থরক্ষা করতে না পারলে ক্ষমতায় যেতে পারে না, বা ক্ষমতায় টিকে থাকা কঠিন হয়ে যায়। এজন্যে তারা পশ্চিমাদের তুষ্ট করতেই ব্যস্ত থাকে। রাজনৈতিক কারণেই তারা কৌশলগত কোন প্রকল্প হাতে নিতে ভয় পায়। গত দুই দশক বা এর কিছু বেশি সময়ে এর কিছু ব্যতিক্রম থাকলেও সাধারণতঃ এই নিয়মেই বিশ্বকে নিয়ন্ত্রণ করে পশ্চিমারা।

      চতুর্থতঃ পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থায় কিছু আন্তর্জাতিক আইন রয়েছে; যেগুলি পশ্চিমারা বাকি সকল দেশকে মেনে চলতে বাধ্য করে। এর মাঝে রয়েছে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, পারমাণবিক অস্ত্র, কেমিক্যাল ও জীবাণু অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ। এগুলির প্রযুক্তি এক দেশ অন্য দেশকে দিতে পারবে না। যেমন, 'এমটিসিআর' আইন অনুযায়ী ৩০০ কিঃমিঃএর বেশি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র রপ্তানি করা যাবে না; সেটা ব্যালিস্টিক, ক্রুজ বা জাহাজ ধ্বংসী যে ধরণের ক্ষেপণাস্ত্রই হোক না কেন। এধরণের ক্ষেপণাস্ত্র যারা ডেভেলপ করেছে, তাদেরকে পশ্চিমারা একঘরে করার চেষ্টা করেছে এবং এরফলে তাদের উপর অর্থনৈতিক অবরোধ দিয়েছে। চীন ও রাশিয়াও এই আইন মেনে চলে। রাশিয়া ভারতের কাছে জাহাজ ধ্বংসী সুপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র বিক্রি করেছে ঠিকই, কিন্তু এর পাল্লা ৩০০ কিঃমিঃএর কম করে তবেই বিক্রি করেছে; যদিও রুশ সার্ভিসে সেটার পাল্লা ৫০০ কিঃমিঃএর বেশি।

      এছাড়াও পশ্চিমারা বিভিন্ন প্রকল্পের ছুতোতে সর্বদা বিভিন্ন দেশের উপর নজরদারি করে। যেমন, বাংলাদেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্পের উপরে বিশ্বব্যাংক দুই দশকের উপরে তথ্য সংগ্রহ করছে সেক্টরের উন্নয়নের জন্যে। সেক্টরের উন্নয়নে তারা একটা পয়সাও দেয়নি; কিন্তু নিয়মিত তথ্য সংগ্রহ করেছে; এখনও করছে। তারা চায় না যে, এই সেক্টর রাষ্ট্রের সাথে কাজ করুক, অথবা এই সেক্টর কৌশলগত দিক থেকে রাষ্ট্রের কাজে লাগুক।

      ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প যাতে ডেভেলপ না করে, সেটা বিভিন্ন সেক্টরে তাদের নিজেদের লোকের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণ করে। বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ পানির পাম্প, ভটভটি, ইঞ্জিন নৌকা, জেনারেটর, কারখানার প্রসেস ডিজেল ইঞ্জিন এবং ইলেকট্রিক মোটর দিয়ে চলে। অথচ এত চাহিদা থাকার পরেও কোন দেশীয় কোম্পানি ডিজেল ইঞ্জিন অথবা ইলেকট্রিক মোটর তৈরি করেনা। এগুলির চাইতে অনেক বেশি জটিল ইলেকট্রিক ট্রান্সফর্মার কিন্তু বাংলাদেশে তৈরি হয়; অথচ সব মোটর আমদানি করা হয় লাখ লাখ ডলার ব্যয় করে।

      আইএমএফ-এর মতো সংস্থাগুলি নিশ্চিত করে যাতে করে এই দেশ আমদানি নির্ভর থাকে; বিশেষ করে কৌশলগত দিক থেকে। নিজেদের জ্বালানি ব্যবহার না করে বাইরে থেকে জ্বালানি আমদানি করা; নিজেদের কৃষিকে ভর্তুকি সুবিধা না দিয়ে ঋণের অর্থ দিয়ে ভারত ও অন্যান্য দেশ থেকে কৃষিজ দ্রব্য আমদানি করা; নিজেদের ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প ডেভেলপ না করে বিদেশ থেকে যন্ত্র আমদানি করা - এগুলি আইএমএফ-এর মতো পশ্চিমা সংস্থাগুলির প্রেসক্রিপশন। এই বিশ্বব্যবস্থার অধীনে থাকলে এগুলি বাইপাস করা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। আশা করি ব্যাপারটা বুঝতে পেরেছেন।

      Delete