Thursday 24 March 2022

ইউক্রেনের আকাশে তুর্কি ড্রোনগুলি কতটুকু সফল?

২৪শে মার্চ ২০২২

রুশ অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কমদামি ধীরগতির ড্রোনের সফলতা দেখিয়ে দেয় যে, কোনকিছুই অজেয় নয়। তুর্কি ড্রোনের সফলতা নিশ্চিত করলো যে, সামনের দিনগুলিতে ইউক্রেনের আকাশে আরও বিভিন্ন আকারের এবং ধরণের ড্রোন দেখা যাবে; যার মাঝে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি সুইসাইড ড্রোনও থাকবে।

 
ইউক্রেন যুদ্ধের শুরু থেকেই বেশকিছু ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে ছড়িয়ে পড়েছে, যেখানে আকাশ থেকে দেখা যাচ্ছে যে, ভূমিতে বেশকিছু গাড়ির ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। এই ভিডিও ফুটেজগুলি ইউক্রেনের বিমান বাহিনীর ড্রোন থেকে তোলা। তুরস্কের সরবরাহ করা ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোনগুলি ইউক্রেনের জন্যে অনলাইন প্রচারণার হাতিয়ার হয়ে দাঁড়িয়েছে। তুরস্কে ইউক্রেনের রাষ্ট্রদূত ভাসিল বোদনার সোশাল মিডিয়াতে এরকমই একটা ভিডিও শেয়ার করেন এবং শিরোনামে লেখেন ‘মাশাআল্লাহ’! এছাড়াও ইউক্রেনিয়ানরা ‘বায়রাকতার’ নামে একটা গান রচনা করেছে। এই গানের ভিডিওতে ড্রোনের ফুটেজ ব্যবহার করা হয়েছে। গানটা ইউক্রেন রেডিওতেও প্রচার করা হয়েছে। তবে এই ড্রোনগুলি প্রকৃতপক্ষে কতটুকু কার্যকর, তা নিয়ে প্রশ্ন করছেন অনেকেই।

ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট’ বা ‘রুসি’র বিশ্লেষক জ্যাক ওয়াটলিং ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’কে বলছেন যে, তুর্কি ড্রোনগুলির ইউক্রেনে সাফল্য পাবার কোন অর্থই নেই। কারণ এই ড্রোনগুলি মধ্যম উচ্চতায় উড্ডয়ন করে, এদের ইলোকট্রোম্যাগনেটিক সিগনেচার যথেষ্ট বড় এবং এগুলির রাডার ক্রস সেকসেনও যথেষ্ট বড়। রুশদের বেশ শক্তিশালী একটা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা রয়েছে, যা এই ড্রোনগুলিকে সহজেই ভূপাতিত করার কথা। এছাড়াও ইউক্রেনের ভূমিও বেশ সমতল; যেখানে পাহাড় বা অন্য কোন ভৌগোলিক বাধা না থাকার কারণে রাডারের হাত থেকে বাঁচা সম্ভব নয়। তার ধারণা রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেদের প্রস্তুতি শেষ করার আগেই এই ড্রোনগুলি আকাশে উড়ে সাফল্য পেয়েছে। তিনি বলছেন যে, ইউক্রেনের বিমান বাহিনী তুর্কি ড্রোনগুলিকে বেশ নিচু দিয়ে ওড়াচ্ছে; এরপর আক্রমণের ঠিক আগে উপড়ে উঠে সুবিধাজনক টার্গেটে হামলা করছে। তবে সামনের দিনগুলিতে রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা নিজেদের শৃংখলা খুঁজে পেলে এই ড্রোনগুলির ওড়ার জায়গা সীমিত হয়ে আসবে। ইউক্রেনের বিমান বাহিনীকেও আরও সাবধান হতে হবে যে, তারা কোথায় কখন এই ড্রোনগুলিকে ব্যবহার করবে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘ফরেন পলিসি রিসার্চ ইন্সটিটিউট’এর ডিরেক্টর আরন স্টাইন বলছেন যে, যতক্ষণ পর্যন্ত এই ড্রোনগুলি উড়তে থাকবে, ততক্ষণ এগুলির একটা প্রচারণা মূল্য থাকবে। হাই ডেফিনিশনে বিমান হামলা দেখা যাবার কারণে এই ড্রোন ফুটেজগুলি আকর্ষণ ক্ষমতা বেশি। ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ২০১৯ সালে তুর্কি কোম্পানি ‘বায়কার’ তাদের ড্রোনগুলি ইউক্রেনের কাছে বিক্রি শুরু করে। ২০২১ সালের মাঝামাঝি এগুলির ডেলিভারি শুরু হয়। সেবছর অগাস্ট মাসে রাজধানী কিয়েভের রাস্তায় প্যারেডে ড্রোনগুলি প্রদর্শিত হয়। এর আগে সিরিয়া, লিবিয়া এবং ককেশাসের নাগোর্নো কারাবাখে এই ‘বায়রাকতার টিবি-২’ ড্রোনগুলি ব্যাপক সাফল্য পেয়েছিল। কিন্তু সেসব যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিপক্ষের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন ছিল। এবার ইউক্রেনের যুদ্ধে ব্যাপারটা পুরোপুরিভাবে আলাদা। রাশিয়া একটা বড় শক্তি এবং তাদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা যথেষ্ট শক্তিশালী বলেই সকলে মনে করেন। একারণেই পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা ইউক্রেনে ড্রোনগুলির সাফল্য দেখে বুঝে উঠতে পারছেন না যে ব্যাপারটা কি করে সম্ভব হচ্ছে। যুদ্ধ শুরু হবার পর ৩রা মার্চ ইউক্রেন সরকার ঘোষণা দেয় যে, তারা তুরস্ক থেকে ড্রোনের নতুন একটা চালান পেয়েছে। তবে তারা ড্রোনের সংখ্যা বলেননি। তুর্কি কর্মকর্তারা রুশদের রক্তচক্ষু এড়াতে ঘোষণা দেন যে, একটা তুর্কি বেসরকারি কোম্পানি চুক্তি অনুযায়ী ডেলিভারি দিয়েছে। আর এরকম ড্রোন শুধু ইউক্রেন নয়, দুনিয়ার অনেক দেশেই বিক্রি করেছে তুর্কিরা। সঠিক সংখ্যা জানা না থাকলেও অনেকেই বলছেন যে, ২০ থেকে ৫০টার মতো ‘বায়রাকতার’ ড্রোন তুর্কিরা এপর্যন্ত ইউক্রেনকে সরবরাহ করেছে।

 
অগাস্ট ২০২১। কিয়েভের রাস্তায় তুর্কি 'বায়রাকতার টিবি-২' ড্রোন। অন্ততঃ শক্তিশালী রুশ বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে পশ্চিমারা যখন ইউক্রেনকে কোন বিমান দিচ্ছে না, তখন এই ড্রোনগুলিই রুশদের উপরে বিমান হামলার স্বাদ দিচ্ছে এবং ইউক্রেনিয়ানদের অনলাইন প্রচারণার কেন্দ্রে থাকছে। যে ব্যাপারটা নিশ্চিত তা হলো, পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এই ড্রোনগুলি যে ইউক্রেনে কোনরূপ সাফল্য পেতে পারে, সেটা বিশ্বাসই করেননি।

মার্কিন মিডিয়া ‘এনবিসি’র সাথে কথা বলতে গিয়ে ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং ড্রোন যুদ্ধের উপর বইএর লেখক ডেভিড হ্যাম্বলিং বলছেন যে, এই ড্রোনগুলি প্রথম বিশ্বযুদ্ধের বিমানের মতো। মাত্র ১’শ ১০ হর্সপাওয়ারের ইঞ্জিনচালিত এই ড্রোনগুলি অতি সহজেই টার্গেট করতে পারার কথা। সবচাইতে অবাক ব্যাপার হলো ড্রোনের ফুটেজে দেখা যাচ্ছে যে, রুশ বিমানধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র এই ড্রোনগুলি ধ্বংস করে ফেলছে! অথচ এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাগুলিই ড্রোন ভূপাতিত করার সবচাইতে ভালো অস্ত্র হবার কথা ছিল। এছাড়াও রুশ ইলেকট্রনিক জ্যামিং ব্যবস্থাও বেশ ভালো। সেগুলিও তো এই ড্রোনগুলিকে অকার্যকর করে ফেলার কথা। তিনি বলছেন যে, পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা খুব সম্ভবতঃ রুশ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার সক্ষমতাকে বড় করে দেখেছেন। হ্যাম্বলিং বলছেন যে, আর কিছু না হোক, অন্ততঃ রুশ ফাইটার বিমান দিয়েও তো এই ড্রোনগুলিকে ভূপাতিত করা যেতো। হয় রুশরা নিজেদের কাজে ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে; অথবা ইউক্রেনিয়রা নতুন কোন ট্যাকটিকস খুঁজে পেয়েছে কার্যকর হামলার জন্যে।

সুইজারল্যান্ডের ‘ইটিএইচ জুরিখ’ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক মাউরো গিলি ‘আল জাজিরা’কে বলছেন যে, যেহেতু এহেন ড্রোনগুলিকে বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সহজেই টার্গেট করতে পারে, তাই এগুলিকে রক্ষা করার জন্যে ইলেকট্রনিক জ্যামারের সমন্বয়ে কাজ করাটা জরুরি। লিবিয়াতে অবশ্য রুশরা বেশকিছু তুর্কি ড্রোন ভূপাতিত করেছিল। ইউক্রেনে এদের সাফল্য বলে দিচ্ছে যে, হয়তো রুশরা বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সাথে না নিয়ে এগুচ্ছে। এটা অসম্ভব নয়, কারণ রুশরা বেশ বড় রকমের লজিস্টিক্যাল সমস্যার মাঝে রয়েছে। অথবা এমনও হতে পারে যে, ইউক্রেনিয়ানরা অত্যাধুনিক ইলেকট্রনিক জ্যামার হাতে পেয়েছে।

এই ড্রোনগুলি পুরো যুদ্ধকে কতটা প্রভাবিত করবে, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। তবে ড্রোনগুলি আন্তর্জাতিক অস্ত্রের বাজারে তুরস্কের অবস্থানকে আরও উপরে উঠিয়েছে। একেকটা তুর্কি ‘বায়রাকতার’ ড্রোনের মূল্য প্রায় ২ মিলিয়ন ডলার; যা আকাশে ওড়া যেকোন বিমানের মূল্যের তুলনায় কিছুই নয়। অন্ততঃ শক্তিশালী রুশ বিমান বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্যে পশ্চিমারা যখন ইউক্রেনকে কোন বিমান দিচ্ছে না, তখন এই ড্রোনগুলিই রুশদের উপরে বিমান হামলার স্বাদ দিচ্ছে এবং ইউক্রেনিয়ানদের অনলাইন প্রচারণার কেন্দ্রে থাকছে। যে ব্যাপারটা নিশ্চিত তা হলো, পশ্চিমা বিশ্লেষকেরা এই ড্রোনগুলি যে ইউক্রেনে কোনরূপ সাফল্য পেতে পারে, সেটা বিশ্বাসই করেননি। রুশ অত্যাধুনিক বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কমদামি ধীরগতির ড্রোনের সফলতা দেখিয়ে দেয় যে, কোনকিছুই অজেয় নয়। তুর্কি ড্রোনের সফলতা নিশ্চিত করলো যে, সামনের দিনগুলিতে ইউক্রেনের আকাশে আরও বিভিন্ন আকারের এবং ধরণের ড্রোন দেখা যাবে; যার মাঝে ক্ষুদ্র এবং মাঝারি সুইসাইড ড্রোনও থাকবে।

7 comments:

  1. 1. ইউক্রেনে (ফলস ফ্ল্যাগ এটাক হিসাবে) জীবাণু/রাসায়নিক হামলা হলে রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে ন্যাটো কি সর্বাত্মকভাবে জড়িত হয়ে পড়বে?

    ২. বর্তমানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ইউরোপে অবস্থান করছেন। রুশ-ইউক্রেন যুদ্ধে মার্কিন প্রেসিডেন্ট বর্তমানে কিকি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছেন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. রুশরা ইউক্রেনে নিজেদের পক্ষে রাজনৈতিক একটা ফলাফল চাইছে, যাতে করে তারা যুদ্ধ শেষ করে তাদের সেনাদেরকে দেশে ফেরত নিয়ে যেতে পারে। জীবাণু বা রাসায়নিক হামলা এক্ষেত্রে অবান্তর প্রশ্ন। ন্যাটো সদস্য দেশ জার্মানি রাশিয়ার কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ গ্যাস আমদানি করতে করতে রাশিয়ায় সামরিক হামলা করবে - এটা একটা দ্বিবাস্বপ্ন।

      মার্কিন প্রেসিডেন্টের সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ হলো বিশ্বব্যবস্থাকে কোনমতে টিকিয়ে রাখা। যুক্তরাষ্ট্র কি জার্মানিকে রুশ গ্যাস আমদানি করতে দেবে? ভারতকে রাশিয়া থেকে অস্ত্রের স্পেয়ার পার্ট আমদানি করতে দেবে? মিশরকে রাশিয়া থেকে গম আমদানি করতে দেবে? যদি যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার উপর অবরোধ বাস্তবায়ন করতে গিয়ে দুনিয়ার একটা বড় অংশ দেশকে অবরোধ বাইপাস করতে দেয়, তাহলে মার্কিন বিশ্বব্যবস্থার শেষ সম্বলটাও (মার্কিন ডলার) আর অবশিষ্ট থাকবে না।

      Delete
    2. ধন্যবাদ। কিন্তু আমেরিকা এখনও এক নাম্বার সুপার পাওয়ার। সর্বোত্তম বিমান বাহিনী আছে। ১১ টা ক্যারিয়ার আছে, মহাকাশ ফোর্স আছে, সুপার কম্পিউটার আছে। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে মেধা নিজের দেশে নিয়ে গবেষণায় নিয়োজিত করে। কিন্তু আমেরিকা এখন গ্লোবাল অরডার মেইনটেইন করতে যেয়ে হিমসিম খাচ্ছে কেন?
      রিজিওনাল শক্তিগুলো খুব দ্রুত উপরে উঠে আসছে পাশাপাশি আমেরিকাকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিচ্ছে। আমেরিকার সামর্থ কমছে কেন??

      Delete
    3. একটা দেশ সুপারপাওয়ার হয় কিভাবে? তার কয়টা যুদ্ধজাহাজ থাকলে বা কয়টা পারমাণবিক অস্ত্র বা কম্পিউটার থাকলে তাকে সুপারপাওয়ার বলবেন? ব্রিটেনের সামরিক শক্তি কতটা ছিল? ইউরোপের কোন দেশের চাইতে ব্রিটেনের সেনাবাহিনী বড় ছিল? তাহলে তারা দু'শ বছর কিভাবে সুপারপাওয়ার ছিল? দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশের বাউন্ডারি লাইন এবং তাদের সংবিধান ব্রিটিশদের প্রভাবে লেখা কেন? কেন পৃথিবীর বহু দেশ এখনও ব্রিটিশ আইন দিয়ে দেশ চালায়?

      সোভিয়েত ইউনিয়নের তো অস্ত্র কম ছিল না। তাদের পারমাণবিক অস্ত্র, বিমান, ট্যাংক, আর্টিলারি, পারমাণবিক সাবমেরিন তো আমেরিকার চাইতে বেশি ছিল সর্বদাই। তাহলে সারা বিশ্ব কেন সোভিয়েত আইন দিয়ে চললো না? কেন তারা মার্কিন শাসন মেনে নিল (যদিও অনেক আইন এখনও ব্রিটিশদের তৈরি করা)?

      এই প্রশ্নগুলির উত্তর হলো আদর্শ বা আইডিওলজি। ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটালিস্ট আইডিওলজি দিয়ে দুনিয়া শাসন করেছে এবং এখনও করছে। তারা এই আইডিওলজির ধারক ও বাহক। দুনিয়া যতদিন ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেমে চলবে, ততদিন ব্রিটেন অথবা যুক্তরাষ্ট্র থাকবে দুনিয়ার ক্যাপ্টেন। সোভিয়েত ইউনিয়নের ছিল কাউন্টার আইডিওলজি - সোশালিজম বা সমাজতন্ত্র। সেটা চার দশকের ঠান্ডা যুদ্ধে ক্যাপিটালিজমের সাথে জিততে পারেনি বলেই দুনিয়ার মানুষ সোশালিজমকে নেতৃত্ব দেয়নি। যেহেতু সোশালিজমের নেতৃত্ব ছিল সোভিয়েত ইউনিয়নের হাতে, কাজেই সোশালিজম জিততে পারলে সোভিয়েত ইউনিয়নই দুনিয়ার নেতৃত্বে থাকতো। আর যেহেতু সোভিয়েত ইউনিয়ন ভেঙ্গে পড়েছে, তাই সোশালিজমেরও এখন আর মা-বাপ নাই।

      ক্যাপিটালিজমের আসল মা হলো ব্রিটেন; যে সারা দুনিয়াতে এই আদর্শকে ছড়িয়ে দিয়েছে কলোনি স্থাপনের মাধ্যমে। ব্রিটেনের কারণেই দুনিয়ার মানুষ ক্যাপিটালিজমকে তাদের জীবনব্যবস্থা হিসেবে নিয়েছে; অন্য কারুর জন্যে নয়। যুক্তরাষ্ট্র ক্যাপিটালিজমকে দুনিয়াকে ছড়ায়নি; তবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর ব্রিটেনের কাছ থেকে নেতৃত্ব দখল করে নিয়ে সোভিয়েত ইউনিয়নের আদর্শের আক্রমণ থেকে নিজেদের আদর্শকে রক্ষা করেছে। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র হলো বর্তমান দুনিয়ার আদর্শের নেতা।

      যাই হোক, যুক্তরাষ্ট্র গত কয়েক দশক ধরে নিম্নগামী তার আদর্শের নিম্নগামিতার কারণে। যুক্তরাষ্ট্র যখন নিজেই তার আদর্শকে ধূলিস্মাত করে সারা দুনিয়াতে মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে; গণতন্ত্রের নাম করে দেশ দখল করেছে এবং অপরদিকে একনায়কদের নিজেদের বন্ধু বানিয়েছে, তখন তাদের বিশ্বাসযোগ্যতা থাকে না।

      একটা জীবনব্যবস্থা যখন মানুষের সমস্যার সমাধান দিতে ব্যর্থ হয়, তখন মানুষ সেটার বিকল্প খুঁজবে। মানুষের মাঝে হতাশার জন্ম দিয়েছে ক্যাপিটালিজম; আত্মহত্যার সংখ্যা এখন মারাত্মক। অল্প কিছু ধনীর হাতে সকল সম্পদ এবং ক্ষমতা চলে গেছে। মানুষ হয়েছে আত্মকেন্দ্রিক। বিয়ে করছে না মানুষ; করলেও বিচ্ছেদ হচ্ছে সাথেসাথেই। নারীর অধিকারের নাম করে কোটি কোটি নারীকে ধর্ষণ করা হচ্ছে; করা হয়েছে পণ্য। একটা আইফোনের জন্যে মানুষ আত্মহত্যা করছে। করোনার কারণে যত ক্ষতি হয়েছে, তার চাইতে বেশি ক্ষতি হয়েছে লকডাউনের মত অবাস্তব সমাধানে। অথচ কেউ স্বীকার করেনি যে এই সমাধান ভুল ছিল।

      মোটকথা, ক্যাপিটালিজম এখন মৃতপ্রায়। একারণেই যুক্তরাষ্ট্রেরও অবস্থা খারাপ। তার সামরিক শক্তি দুনিয়াকে নিয়ন্ত্রণ করতে যথেষ্ট হচ্ছে না। গায়ের জোরে দুনিয়া নিয়ন্ত্রণ করা যায় না; মানুষের নেতৃত্ব নিতে হলে তাকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বোঝাতে হবে যে, তার সমাধানই মানুষের জীবনের সমস্যাগুলির সমাধান দিতে পারবে।

      আপনি নিচের বইগুলি একটা একটা করে পড়ে দেখতে পারেন; আশা করি বুঝতে পারবেন।

      'মার্কিন দুনিয়ায় পরিবর্তনের হাওয়া'
      'যুক্তরাষ্ট্রের পর...'
      'ভূরাজনৈতিক ভূমিকম্প ২০২০'
      'নয়া বিশ্ব অব্যবস্থা'
      'আফগানিস্তানের পর...'

      রকমারি ডট কমের লিঙ্ক -
      https://www.rokomari.com/book/publisher/8896/dreams-publications

      Delete
  2. অনেক ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. ধন্যবাদ।
    অন্য প্রসঙ্গে জিজ্ঞাস্য কিছু জিনিস আছে-
    -
    পেট্রোডলার যেটি ইউএস সহ দুনিয়ার রিজার্ভ কারেন্সি, সেটি কি এই যুদ্ধের মাধ্যমে বিপুল ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে?
    আর WSJ রিপোর্ট করেছে যে সৌদি ইউয়ানে তেল বিক্রি করতে চাচ্ছে। এই কারন গুলো কি পেট্রোডলারের সিস্টেম এর অবসান ঘটাবে?

    যদি ঘটায়, সেটা কি আরেক কারন হবে লিব্রাল বিশ্বব্যবস্থা পতনে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. মার্কিন ডলার মধ্যপ্রাচ্যের হাইড্রোকার্বনের জন্যে পেমেন্ট কারেন্সি কি কারণে? কারণ মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হাইড্রোকার্বনের দেশ সৌদি আরবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব স্থাপিত হয়েছিল। অর্থাৎ সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের কথা শুনেছে এবং সেই অনুযায়ী সে তার বিক্রি করা তেলের জন্যে মার্কিন ডলারে পেমেন্ট দাবি করেছে। এরফলে রাতারাতি বিশ্বব্যাপী ডলারের চাহিদা তৈরি হয়েছিল। কারণ ডলার না থাকলে কেউই তেল কিনে পেমেন্ট দিতে পারবে না। এই পুরো ব্যাপারটাই সম্ভব হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক প্রভাবের কারণে। যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে নিজেদের সামরিক শক্তি মোতায়েন শুরু করেছিল আরও পরে; প্রাচ্য ১৯৭০এর দশকের শেষের দিকে, যখন ইরানে মার্কিন সমর্থিত শাহএর সরকারকে সড়িয়ে বর্তমান সরকার ক্ষমতা নেয়।

      সেসময় যুক্তরাষ্ট্র তেলের জন্যে মধ্যপ্রাচ্যের উপর ব্যাপক নির্ভরশীল ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে তার তেল আমদানি একেবারেই কমিয়ে দিয়েছে। উল্টো যুক্তরাষ্ট্র এখন তেল রপ্তানিকারক দেশ হয়ে সৌদি আরবের সাথে আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতা করছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যে থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার বেশিরভাগ সামরিক শক্তি সড়িয়ে নিয়েছে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করার উদ্দেশ্যে। এমতাবস্থায় মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব ভীষণভাবে কমে গেছে। এর প্রভাব যে তেলের বাজারে পড়বে, সেট সময়ের ব্যাপার মাত্র। এখন চীন, জাপান, কোরিয়া, ভারতের মতো এশিয় দেশ মধ্যপ্রাচ্যের তেলের প্রধান ক্রেতা। এমনকি ইউরোপও এখন নিজেদের তেলের অনেকটাই নিজেরা উৎপাদন করে থাকে।

      এমতাবস্থায় সৌদি আরব নিজের স্বার্থেই এশিয় দেশগুলির সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্ক স্বাভাবিক রাখতে চাইবে। সৌদিদের অর্থনীতি তেল বিক্রির অর্থের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। এখন চীন যদি সৌদি আরবের সাথে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যকে এগিয়ে নিতে ইউয়ান দিয়ে বাণিজ্য করার প্রস্তাব দেয়, সেটা সৌদি আরব ফেলে নাও দিতে পারে; কারণ চীন সৌদি আরবের সবচাইতে বড় ক্রেতা। এখানে ইউক্রেন যুদ্ধ বড় কোন কারণ না হলেও সেটা একটা বাস্তবতা হিসেবে সামনে আসতে পারে; যেহেতু সৌদিদের এই অবস্থার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিই দায়ী।

      Delete