Wednesday 26 May 2021

গাজা যুদ্ধ ... ইস্রাইলের নিরাপত্তাহীনতা বাড়ালো হামাসের বিজয়

২৬শে মে ২০২১
হামাসের কাছে থাকা মোট রকেটের সংখ্যা নিরূপণ যেমন ইস্রাইলের নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, তেমনি ‘আয়রন ডোম’এর উপর নির্ভরশীল থাকার সত্ত্বেও এবং রাজনৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য ব্যাপক বিমান হামলায় শতশত ফিলিস্তিনি হত্যার পরেও ইস্রাইলিদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া এবং হতাহত পুরোপুরি বন্ধ না করতে পারা ইস্রাইলের দুর্বলতা তুলে ধরে। এবারের গাজার যুদ্ধ বলে দিচ্ছে যে, মান্ধাতার প্রযুক্তির ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইস্রাইলের যুদ্ধ জেতা শুধু কঠিনই নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে ইস্রাইলকে আশেপাশের দেশগুলির সহযোগিতার উপরেই বেশি নির্ভরশীল হতে হবে। অর্থাৎ নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই ইস্রাইল তার আশেপাশের দেশগুলির সাথে সম্পর্কোন্নয়নে এগুবে।


গাজা যুদ্ধের সময় ভিডিও ছড়াতে থাকে, যেখানে দেখা যাচ্ছিল যে, রাতের আকাশে একদিক থেকে উড়ছে ফিলিস্তিনি গ্রুপ হামাসের রকেট; আর অপর দিক থেকে উড়ছে ইস্রাইলের প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র, যা কিনা ‘আয়রন ডোম’ নামের একটা ব্যবস্থার অংশ। যুদ্ধ শেষ হবার আগেই প্রশ্ন উঠেছে যে, এই ‘আয়রন ডোম’এর কর্মক্ষমতা আসলে কতটুকু। এই ব্যবস্থার সক্ষমতার উপর ইস্রাইলের আকাশ প্রতিরক্ষাই ব্যবস্থাই শুধু নির্ভর করছে না, ইস্রাইলের আশেপাশের দেশগুলি ইস্রাইলের বিরুদ্ধে প্রক্সি যুদ্ধ করার ব্যাপারে কতটা আশাবাদী হতে পারে, তাও নির্ভর করবে। সে হিসেবে এর ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট।

ইস্রাইলি পত্রিকা ‘জেরুজালেম পোস্ট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘আয়রন ডোম’এর দুর্বলতা সবসময়েই ছিল। এর আগের যুদ্ধগুলিতে ‘আয়র ডোম’ হামাসের ৮৫ থেকে ৯০ শতাংশ রকেট ধ্বংস করতে পেরেছিল। তবে ইস্রাইলি ইন্টেলিজেন্সের কর্মকর্তারা সর্বদাই জানতেন যে, লেবাননের হিযবুল্লাহ মিলিশিয়াদের সক্ষমতা রয়েছে দিনে এক হাজার রকেট ছোঁড়ার। সেটা করতে পারলে নিশ্চিতভাবেই ‘আয়রন ডোম’এর সক্ষমতার সীমা পরিসীমা পরীক্ষা হয়ে যাবে। শুধু তাই নয়, ইস্রাইলি হিসেবে হিযবুল্লাহর হাতে রয়েছে দেড় লক্ষাধিক রকেট; যার মাধ্যমে তারা অনির্দিষ্ট সময়ের জন্যে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে পারবে। অপরদিকে ২০১৪ সালের গাজা যুদ্ধে হামাস ৫০ দিনে ৪ হাজার রকেট ছুঁড়েছিল। একদিনে সর্বোচ্চ দু’শ রকেট ছুঁড়েছিল তারা। আর এক’শর বেশি রকেট তারা ছুঁড়তে পেরেছিল খুব বেশি হলে দুই সপ্তাহ। কিন্তু এবারের যুদ্ধে হামাস কয়েক মিনিটের মাঝে শতাধিক রকেট ছুঁড়তে পেরেছে; যা এর আগে শোনা যায়নি। তদুপরি হামাসের কাছে কতগুলি রকেট রয়েছে, সেটার উপরেই নির্ভর করবে যে, যুদ্ধ কতদিন স্থায়ী হতে পারে। কাজেই সবচাইতে বড় প্রশ্ন হলো, হামাসের রকেটের সংখ্যার ব্যাপারে ইস্রাইলের ইন্টেলিজেন্সের ধারণা সঠিক কিনা। আর একারণেই ইস্রাইলের হিসেব কষতে হবে যে, তারা হামাস বা হিযবুল্লাহর বিরুদ্ধে একটা যুদ্ধ কতদিন চালিয়ে নিতে সক্ষম হবে। অথবা কত দ্রুত তাদেরকে সেনাবাহিনী প্রেরণ করতে হবে রকেট হামলা থামাতে। কারণ ইস্রাইলের ব্যাপক বিমান হামলা হামাসের রকেট হামলা থামাতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে।


 
‘ফোর্বস’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, এই যুদ্ধ হচ্ছে সর্বশেষ প্রযুক্তির বিরুদ্ধে মান্ধাতার প্রযুক্তির। দশ বছর আগে ‘আয়রন ডোম’ ডেভেলপ করেছিল ‘রাফায়েল এডভান্সড ডিফেন্স সিস্টেমস’। এতে রয়েছে বেশকিছু রাডার রয়েছে; যেগুলি প্রতিপক্ষের রকেট দেখা মাত্রই স্বয়ংক্রিয়ভাবে মনুষ্যবিহীন লঞ্চার থেকে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে সেগুলিকে ধ্বংস করার লক্ষ্যে। এই ব্যবস্থা স্বয়ংক্রিয়ভাবে সিদ্ধান্ত নেয় যে, কোন রকেটগুলি ইস্রাইলের জনবসতিতে আঘাত হানতে পারে, এবং সেই হিসেবে সেগুলি ধ্বংসে ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া হয়। একটা লঞ্চারে ২০টা করে ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্র থাকে। একেকটা ক্ষেপনাস্ত্রের পাল্লা ৪০ কিঃমিঃ এবং মূল্য ২০ হাজার ডলার থেকে ১ লক্ষ ডলারের মাঝে। অপরদিকে হামাসের রকেটগুলি স্টিল এবং এলুমিনিয়ামের পাইপের সাথে স্টিলের পাখা জুড়ে দিয়ে তৈরি করা হচ্ছে। এই রকেটের জ্বালানি হলো রাসায়নিক সার এবং গলানো চিনি। রকেটের ওয়ারহেডগুলিও বাড়িতে তৈরি করা। বেশিরভাগ রকেটই স্বল্পপাল্লার ‘কাসাম’। রকেটগুলি ধাতুর কাঠামো থেকে ছোঁড়া হয় এবং এদের কোন গাইড্যান্স সিস্টেম নেই। এগুলির ওজন ৩৬ কেজি থেকে ৯০ কেজি পর্যন্ত এবং পাল্লা ৩ কিঃমিঃ থেকে ৩২ কিঃমিঃ পর্যন্ত। দু’জন ব্যক্তিই এগুলি ছোঁড়ার জন্যে যথেষ্ট। এগুলির খরচ মাত্র কয়েক’শ ডলারের বেশি নয়। এই রকেটগুলির সক্ষমতা নেই বড় ধরনের কোন ক্ষয়ক্ষতি করার; বরং এগুলির উদ্দেশ্য হলো ইস্রাইলকে অনিরাপদ করা এবং ইস্রাইলিদের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যাহত করে তাদেরকে লুকাতে বাধ্য করা। তবে এবারে হামাসের উদ্দেশ্য ছিল ‘আয়রন ডোম’এর সর্বোচ্চ সক্ষমতা বের করা এবং পুরো ব্যবস্থাকে ব্যাতিব্যস্ত করে ফেলা। ‘তামির’ ক্ষেপণাস্ত্র ইউনিটের ক্ষেপণাস্ত্র ফুরিয়ে গেলে হতাহতের সংখ্যা বেরে যাবার সম্ভাবনা দেখা দেবে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘র‍্যান্ড কর্পোরেশন’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘আয়রন ডোম’এর প্রধান দুর্বলতা হলো, অতি কম সক্ষমতার রকেট ধ্বংস করতে অতি উচ্চ সক্ষমতার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, হামাসের একটা রকেট খুব বড় কোন ক্ষতি করার সক্ষমতা না রাখলেও ইস্রাইলিরা এর প্রত্যুত্তরে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালাচ্ছে; যেটাকে তাদের এবং যুক্তরাষ্ট্রকে ন্যায়সংগত প্রমাণ করতে হচ্ছে। ১৩ জন ইস্রাইলিকে হত্যার বিপরীতে ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়ে ২’শ ৪৮ জন ফিলিস্তিনিকে হত্যা করাকে রাজনৈতিকভাবে সমর্থন করা কঠিন। এছাড়াও রকেট উৎক্ষেপণ বন্ধ করতেও ইস্রাইলকে ফিলিস্তিনিদের উপর ব্যাপক বিমান হামলা, এমনকি সেনাবাহিনীর হামলা করতে হচ্ছে। আবার ‘আয়রন ডোম’এর ফাঁকফোঁকড় দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া রকেট যদি ইস্রাইলিদের হতাহতের কারণ হয়, তাহলে সেটাও ইস্রাইলের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্যে চ্যালেঞ্জ।

‘আল জাজিরা’র এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, যুদ্ধের এক পর্যায়ে হামাস মাত্র ৩০ মিনিটের মাঝে ৭০টা রকেট নিক্ষেপ করেছিল। একসময় হামাস পাঁচ মিনিটে ১’শ ৩৭টা রকেট ছোঁড়ার দাবিও করে। বেশিরভাগ রকেট স্বল্পপাল্লার হলেও কিছু রকেট ৭৫ কিঃমিঃ দূরে তেল আভিভেও পৌঁছেছে; যা ইস্রাইলিদের বিচলিত করেছে। ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’ বলছে যে, পুরো যুদ্ধে হামাস ৩ হাজার ৭’শর বেশি রকেট ছুঁড়েছে। তবে রকেটের সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় ৯০ শতাংশ রকেট ধ্বংস করা গেলেও বাকি ১০ শতাংশও কিন্তু সংখ্যার দিক থেকে একেবারে কম নয়। ইস্রাইলের আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বীরা এবারের যুদ্ধের দিকে যে কড়া নজর রেখেছে, তা নিশ্চিত। হামাসের কাছে থাকা মোট রকেটের সংখ্যা নিরূপণ যেমন ইস্রাইলের নিরাপত্তার চ্যালেঞ্জ, তেমনি ‘আয়রন ডোম’এর উপর নির্ভরশীল থাকার সত্ত্বেও এবং রাজনৈতিকভাবে অসমর্থনযোগ্য ব্যাপক বিমান হামলায় শতশত ফিলিস্তিনি হত্যার পরেও ইস্রাইলিদের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক না হওয়া এবং হতাহত পুরোপুরি বন্ধ না করতে পারা ইস্রাইলের দুর্বলতা তুলে ধরে। এবারের গাজার যুদ্ধ বলে দিচ্ছে যে, মান্ধাতার প্রযুক্তির ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে ইস্রাইলের যুদ্ধ জেতা শুধু কঠিনই নয়, বরং যুদ্ধ প্রতিরোধ করতে ইস্রাইলকে আশেপাশের দেশগুলির সহযোগিতার উপরেই বেশি নির্ভরশীল হতে হবে। অর্থাৎ নিজের নিরাপত্তার স্বার্থেই ইস্রাইল তার আশেপাশের দেশগুলির সাথে সম্পর্কোন্নয়নে এগুবে।

12 comments:

  1. টু স্টেট সলুউশন বাস্তবে কতটা feasible?

    আর এটা কি ফিলিস্তিনি ইস্যুর স্থায়ি সমাধান হতে পারে?
    এক্ষেত্রে হামাস কতটা নির্নয়ী ভুমিকা নিতে পারে যেহেতু পি.এ পুরোপুরি ভাবে, বলা যায় তাদের ইস্রাএলি/ইউ.এস দের কুক্ষিগত।

    ReplyDelete
    Replies
    1. একটা উদাহরণ দিলে ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে আশা রাখি।

      আপনি একটা সমস্যা তৈরি করলেন। তারপর বললেন যে, সমাধান যা-ই হোক না কেন, আমি যেটা বলবো, সেটাই ফাইনাল।

      ফিলিস্তিন সমস্যাটা হলো ঠিক এরকম। ব্রিটেন উসমানি খিলাফত ধ্বংস করে তাদের এলাকাগুলি ভেঙ্গে ফেলে অনেকগুলি সেকুলার রাষ্ট্র তৈরি করেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর। এর মাঝে একটা হলো ইস্রাইল। এখানকার সকল সমস্যার উৎপত্তিই সেখানে। ইস্রাইল তৈরি করাটাই ছিল এই অঞ্চলের জন্যে একটা অভিশাপ। উদ্দেশ্য? উদ্দেশ্য হলো যাতে মুসলিমরা সারাজীবন ইস্রাইল নামের এই বিষফোঁড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে। ইস্রাইল হলো এই সমস্যার কারণ। আর এখন পশ্চিমারা ট-স্টেট সলিউশনের কথা বলার মানে কি? তারাই তো সমস্যার সৃষ্টিকারী! সমস্যা যেখানে ইস্রাইল, সেখানে ইস্রাইলকে রেখে এই সমস্যার সমাধান কি করে সম্ভব? এর আগের ১১'শ বছরে যে সমস্যাগুলি হয়নি, ইস্রাইলের জন্মের পর থেকে সেই সমস্যাগুলিই তৈরি হয়েছে। এটা পশ্চিমাদের তৈরি করা সমস্যা। তারা ইহুদিদের হত্যা করে আবার তারাই মুসলিমদের মাঝে ইহুদিদের জন্যে একটা রাষ্ট্র, এবং মুসলিমদের জন্যে একটা বিষফোঁড়া তৈরি করে দিয়েছে।

      সমাধান একটাই। যতক্ষণ পর্যন্ত মুসলিম সেনাবাহিনী সালাহউদ্দিন আয়ুবীর পথ ধরে জেরুজালেম অধিকার না করবে, ততদিন এই সমস্যার সমাধান হবে না।

      Delete
    2. যেটা এই ভু-রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে অসম্ভব বলেই মনে হচ্ছে!
      একমাত্র আল্লাহ্ ইচ্ছা হলেই, তিনি বিজয়ের পরিস্থিতির সৃষ্টি করবেন।

      যদি ধরে নিই যে, কিছু মিরাকল না ঘটে তবে ইসরায়েলের কাঙ্ক্ষিত ইচ্ছা পুরনে কোনো বাধা থাকবে না।

      Delete
    3. কোনটা অবস্তব, সেটা বিশ্লেষণ সাপেক্ষ। এবং কোন বিশ্লেষণই নিশ্চিত নয়। কারণ একমাত্র আল্লাহই জানেন কোনটা ঠিক। তবে বিশ্লেষনও নির্ভর করে তথ্যের সাথে ভিউপয়েন্টের সমন্বয়ের উপর। ভিউপয়েন্টের কারণে অনেক কিছুই অবস্তব বলে মনে নাও হতে পারে। আবার ভিউপয়েন্টের কারণে অনেক সহজ ব্যাপারও কঠিন মনে হতে পারে। ভিউপয়েন্টই ঠিক করে দেবে যে, কোন তথ্য গুরুত্বপূর্ণ, আর কোনটা অগুরুত্বপূর্ণ।

      ইতিহাসের দিকে তাকালেই অনেক অবাস্তব ব্যাপারকেই বাস্তব ইতিহাস হিসেবে দেখতে পাবেন। সেগুলি না ঘটলে মানুষের কাছে মিরাকল হিসেবেই রয়ে যেতো। যাই হোক, ভূরাজনীতি ব্যাপারটাই এমন। খুব অল্প সময়ের মাঝেই অনেক কিছু বদলে যেতে পারে; আবার অনেক অদ্ভুত ব্যাপারও স্বাভাবিকভাবেই ঘটে যেতে পারে।

      Delete
    4. ধন্যবাদ।

      Delete
  2. আচ্ছা,বাইডেন প্রশাসনের কাছে, এই সময়ে দাঁড়িয়ে মধ্যপ্রাচ্যে এই বিষফোঁড়া কতটা প্রয়োজনীয়?
    যদি আমেরিকা সহ পশ্চিমা বিশ্ব যদি❗ ইস্রাএলকে সমর্থন দেওয়া বন্ধ কপ্রে দেয়,, তবে এই স্টেটকি টিকে থাকতে পারবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইস্রাইল একটা কৃত্রিম রাষ্ট্র। যারা এই কৃত্রিম রাষ্ট্র তৈরি করেছে, তাদের একটা বিশেষ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্যেই ইস্রাইলের জন্ম। এই ইস্রাইল ততদিনই টিকবে, যতদিন সেই লক্ষ্য অটুট থাকবে, অথবা লক্ষ্য নির্ধারণ করা শক্তিগুলির পতন ঘটোবে বা তাদের শক্তি ভীষণভাবে খর্বিত হবে।

      ব্রিটেন যখন ইস্রাইলের জন্ম দেয়, তখন চিন্তাটা ছিল মুসলিম দুনিয়ার মাঝে একটা বিষফোঁড়া তৈরি করা, যাতে মুসলিমরা সারাজীবন এই বিষফোঁড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে এবং দুনিয়ার অন্য কোনদিকে খেয়াল করতে না পারে। এই অন্যদিক মূলতঃ পশ্চিমাদের দুনিয়া নিয়ন্ত্রণের বিভিন্ন পরিকল্পনা। মুসলিমরা এই অন্যদিক নিয়ে কখনোই চিন্তা করেনা। বরং তারা পশ্চিমাদের বন্ধু ভেবেই বসে আছে।

      পশ্চিমের চিন্তা এখন অধঃপতিত - এই ব্লগের বহু লেখায় এবং আমার বইগুলিতে এই ব্যাপারগুলি যথেষ্ট বিস্তারিতভাবে আলোচিত হয়েছে। এমতাবস্থায় এটা প্রায় নিশ্চিতভাবেই বলা যায় যে, ইস্রাইল প্রচন্ড ভীতির মাঝে পড়েছে। কারণ তাদের জন্মদাতা এবং পৃষ্ঠপোষকেরা যদি দুর্বল হয়ে যায় এবং ইস্রাইলকে দরকারমতো যথেষ্ট সহায়তা দিতে ব্যর্থ হয়, তাহলে ইস্রাইল অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। প্রকৃতপক্ষে সেটাই হয়েছে এখন। ওবামা এবং বাইডেন প্রশাসনের ইরানের সাথে পারমাণবিক চুক্তির দিকে অগ্রসর হওয়াটা ইস্রাইলের জন্যে নিরাপত্তাহীনতা তৈরি করেছে। ইস্রাইল এখন আর যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরি নির্ভর করতে পারছে না; যা ১৯৬৭ সাল থেকে তারা করে আসছে (এর আগ পর্যন্ত ব্রিটেনের উপর নির্ভর করেছে)।

      এই পরিস্থিতিই মূলতঃ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের স্যাটেলাইট রাষ্ট্রগুলিকে ভাবিয়ে তুলেছে। তুরস্ক, সৌদি আরব, আমিরাত - এরা সকলেই ইস্রাইলের মতোই চিন্তা করছে নিজেদের বাঁচাবার জন্যে। সকলেই নিজের স্বার্থ অনুযায়ী চলতে গেলে পুরো অঞ্চল যে সমস্যায় পতিত হবে, তা নিশ্চিত। সেটাই হয়েছে ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়াতে। জঙ্গলের নিয়মে চলছে বিশ্ব - সারভাইভাল অব দ্যা ফিটেস্ট।

      Delete
  3. বর্ত্মানে ফিলিস্তিনিরা যেই বিষফোঁড়ার বিরুদ্ধে লড়াই করছে, তার জন্মই হয়েছিল যার হাতে, তার কাছেই ফিলিস্তিনিরা বিচার চাইছে?! এটা তারা ভালোভাবেই জানে। তবু তারা বিচারের আশায় মত্ত।

    যেই আদর্শিক শক্তি তাদেরই এই অবস্থা করেছে, সেই শক্তি এখন দুর্বল। তারা অন্য আদর্শিক শক্তির মাধ্যমে, তাদের জয় ছিনিয়ে আনতে পারে। তাতে হয়ত তারা বিজয় পাবে বা নিশ্চিহ্ন হবে। কিন্তু প্রতিদিন মরার থেকে একদিনেই মরা ভাল। এই বিষয়টি বোঝা সত্ত্বেও, কেন তারা ওই ভাবে লড়াই করতে চাইছে না। এই বিষয়টি আমার কাছে এখনো পরিষ্কার নয়।

    ফিলিস্তিনি রেজিসটেন্ট গ্রুপ গুলির আদর্শই বা কি কি? তাদের কর্মপদ্ধতি কেমন? ফিলিস্তিনি জনগন কি এখনো হেরে যাওয়া দলেই থেকে যেতে চাইছে?
    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. শুধু ফিলিস্তিন নয়, সারা দুনিয়ার সকল রাষ্ট্রই পশ্চিমা চিন্তা দ্বারা পরিচালিত; সকল মুসলিম দেশও তা-ই। একারণেই মুসলিমরা পশ্চিমাদের প্রেসক্রিপশন দেয়া 'টু স্টেট সলিউশন'এর সমর্থন করে। কিন্তু সমস্যা হলো, এই সমাধানের অর্থ হলো ইস্রাইলের অস্তিত্বকে মেনে নেয়া; যা মুসলিমদের স্বার্থের পুরোপুরি বিরোধী এবং পশ্চিমা স্বার্থের বাস্তবায়ন। ইস্রাইলকে বৈধতা দান করে কোন সমাধান আসলে সমাধান নয়; সেটা হলো পশ্চিমা স্বার্থের বাস্তবায়ন।

      ফিলিস্তিনি গ্রুপগুলি বাকি মুসলিম বিশ্বের মতোই চিন্তাগত উতকর্ষতায় এখনও আগাতে পারেনি। তবে ইস্রাইলের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে তাদের সশস্ত্র বিপ্লবের বিরুদ্ধে কিছু বলার অধিকার বাকি মুসলিম বিশ্বের নেই। কারণ যখন গাজায় বোমা পড়ছে, তখন মুসলিম বিশ্বের লাখ লাখ সৈন্য ব্যারাকে বসে আছে। মুসলিম বিশ্ব এই মুহুর্তে আদর্শিক চিন্তার মাঝে নেই। তবে একটা জনমত আছে, যা কিনা বলে দেয় যে, আদর্শিক দিকে ধাবিত হবার সম্ভাবনা যথেষ্ট। এটা পশ্চিমারাও জানে।

      Delete
  4. ধন্যবাদ।
    তাহলে এটা পরিষ্কার যে, ফিলিস্তিনি রেজিস্টেন্ট গ্রুপ গুলো আদর্শিক ব্যাপারে এখনো এগোতে পারেনি। তাদেরকেই ধরে আছে, যারা তাদের ডুবিয়েছে।

    এই হ্যাংওভার থেকে আর বেরোতে পারছে না। মুসলিম বিশ্বে পশ্চিমা স্যাটেলাইট স্টেটের শাসনাধীন মুসলিম্রাও বিশেষ কোনো সাহায্য করছে পারেছেন । কি করুন অবস্থা।

    ReplyDelete
    Replies
    1. স্যাটেলাইট হয়ে প্রিন্সিপালের বিরুদ্ধে কিভাবে যাবে তারা? যদি প্রিন্সিপাল বিপদে পড়ে বা ধ্বংসোন্মুখে পতিত হয়, তখন অবশ্য মানুষের চিন্তার দুয়ার খোলার একটা সম্ভাবনা বেড়ে যেতে পারে। পশ্চিমা দুনিয়ার নিম্নগামীতার কারণেই এই বিষয়গুলি এখন আলোচিত হচ্ছে।

      Delete
  5. ধন্যবাদ।

    ReplyDelete