Tuesday 31 July 2018

একটা বিমান বাহিনী কিভাবে তৈরি হয়?

হিটলার ইয়ুথ-এর ছেলেরা বিমানের মডেল বহন করছে। জার্মানিতে দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝে পাইলট ট্রেনিং-এর এক বিরাট প্রকল্প নেয়া হয়, যার নেতৃত্ব দেয় হিটলার ইয়ুথ-এর ফ্লাইং ডিভিশন। এদের ট্রেনিং-এর কারণে পরবর্তীতে খুব তাড়াতাড়ি জার্মান বিমান বাহিনীর ভিত গড়ে ফেলা সম্ভব হয়েছিল। 
০১ অগাস্ট ২০১৮




একটা বিমান বাহিনী তৈরি হয় তিনটা জিনিসের যোগসূত্রে – ম্যান, মেশিন এবং ডকট্রাইন। রাষ্ট্রের বিমান বাহিনী এই তিনের সমন্বয় ঘটাবে সেই রাষ্ট্রের চিন্তার উপরে ভিত্তি করে। এই পুরো ব্যাপারটার সবচাইতে ভালো উদাহরণ হিসেবে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কয়েকটা বিমান বাহিনীর ভিত কি করে গঠন করা হয়েছিল, তা আলোচনায় আনা যেতে পারে।

পাইলট ট্রেনিং-এর ভিত গড়ে দেয়া হয় যেভাবে

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর অনেক আগ থেকেই জার্মানরা অল্প বয়সের ছেলেদের (১৪ বছর থেকে শুরু) মাঝে আকাশে ওড়ার অভিজ্ঞতা দিতে থাকে। ১৯৩৩ সালে এডলফ হিটলার ক্ষমতায় আসীন হবার পর নাজি পার্টির ‘হিটলার ইয়ুথ’ উইং-কে আরও শক্তিশালী করা হয়। হিটলার ইয়ুথের একটা ফ্লাইং ডিভিশন তৈরি করা হয়, যারা অল্প বয়সের ছেলের রিক্রুট করে গ্লাইডার ডিজাইন ও তৈরি করা এবং গ্লাইডারের মাধ্যমে ফ্লাইং ট্রেনিং দিতো (প্রথম বিশ্বযুদ্ধের ভার্সাই চুক্তি অনুযায়ী জার্মানির কোন বিমান বাহিনী রাখা নিষেধ ছিল, কিন্তু গ্লাইডারের ব্যাপারে কোন নিষেধ ছিল না) এবং বেসিক এরোনটিক্যাল ট্রেনিং-ও দিতো। দুই বিশ্বযুদ্ধের মাঝামাঝি সময়ে সারা জার্মানি জুড়ে বহু গ্লাইডার ক্লাব গড়ে ওঠে। ১৯৩২ সালে নাজি পার্টিরও একটা ফ্লাইং কোর (ন্যাশনাল সোশালিস্ট ফ্লাইং কোর বা এনএসএফকে) তৈরি করা হয়। ১৯৩৫ সালে হিটলার অফিশিয়ালি ভার্সাই চুক্তির অবমাননা করে জার্মান বিমান বাহিনী বা লুফতওয়াফে-এর গোড়াপত্তনের ঘোষণা দেবার সময় জার্মানদের কাছে ইতোমধ্যেই অনেক যুবকের একটা পুল রেডি হয়ে ছিল, যাদের বেশ সহজেই ট্রেনিং-এ নিয়ে নেয়া যেতো। পাইলট ট্রেনিং-এর সময় কমে গিয়েছিল তাদের।এনএসএফকেসরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় অনেক ধরনের ইভেন্টের আয়োজন করে অল্প বয়সের ছেলের মাঝেফ্লাইং-এর একটা সংস্কৃতি তৈরি করার উদ্দেশ্যে, যেমন – বিমানের মডেলের ফ্লাইট প্রতিযোগিতা (যাদের বয়স একটু কম ছিল), গ্লাইডার ফ্লাইটের প্রতিযোগিতা (যাদের বয়স একটু বেশি ছিল), ইত্যাদি। ‘ফ্লাইং ডে’ নামের কিছু ইভেন্টও চলতো। ১৯৩৬ সালের এরকম এক ইভেন্টে ১,৫৫০ জন ছেলে অংশগ্রহণ করেছিল। প্রতিযোগিতাতে দেখা হতো যে কার তৈরি মডেল বিমান কতদূর পর্যন্ত উড়তে পারে। এদের অনেককেই লুফতওয়াফের বিমান তৈরির কারখানায় নিয়ে যাওয়া হয়; অনেককে বিমান বাহিনীর বিমানে চড়ার অভিজ্ঞতা দেয়া হয়।এনএসএফকে-এর কার্যকলাপের কারণে জার্মানি যখন ১৯৪০ সালে ব্রিটেনের সাথে আকাশযুদ্ধে (ব্যাটল অব ব্রিটেন) অবতীর্ণ হয়, তখন জার্মানদের ভালো পাইলটের অভাব হয়নি।
   
  
 
জার্মান বিমান বাহিনীর ডাইভ বম্বার জুঙ্কার্স-৮৭ 'স্টুকা'। এধরনের বিমান শুধু জার্মানরাই তৈরি করেছিল। জার্মান বিমান বাহিনীর ডকট্রাইন ছিল সেনাবাহিনীকে সহায়তা দেয়া, যাতে সেনাবাহিনী ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নিয়ে সারা ইউরোপ দখল করতে পারে। একারণে জার্মান বিমানগুলি ছিল স্বল্প পাল্লার এবং অপেক্ষাকৃত হাল্কা।  

বিমান বাহিনীর দাপ্তরিক ভিত (ডকট্রাইন)

১৯৩৩ সালের মার্চে হিটলার ‘এয়ার মিনিস্ট্রি’ গঠন করে হেরমান গোরিং-কে এর দায়িত্বে দেন; তার ডেপুটি করা হয় এরহার্ড মিলচ-কে। গোরিং প্রথম বিশ্বযুদ্ধে জার্মান বিমান বাহিনীর প্রথিতযশা পাইলট ছিলেন। এয়ার মিনিস্ট্রির মূল কাজ ছিল জার্মান বিমান বাহিনীর প্রতিষ্ঠা এবং এর জন্যে দরকারি সকলকিছু করা। নতুন বিমান ডিজাইন এবং তৈরি করার দায়িত্বও ছিল এই মিনিস্ট্রির। সকল বিমানের ডিজাইন করা হয়েছিল বেসামরিক বিমানের নাম করে।

এখানে ডকট্রাইনাল কিছু ব্যাপার আলোচনা না করলেই নয়।

- জার্মান বিমান বাহিনীর বেশিরভাগ লোক এসেছিল সেনাবাহিনী থেকে। তাই তাদের চিন্তায় সেনাবাহিনীর সহায়তাটা ছিল প্রবল। জার্মান বিমানগুলি ছিল যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীর ট্যাঙ্কের সহায়ক মাত্র। জার্মানরা দুই ইঞ্জিনের উপরে বিমান তেমন একটা তৈরি করতো না, যেগুলি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বেশি ভেতরে বোমা ফেলার জন্যে যেতো না। এর পেছনে মূল চিন্তাটা ছিল ভার্সাই চুক্তির প্রতিশোধ নেয়া এবং সেনাবাহিনীর মাধ্যমে পুরো ইউরোপ দখল করে বিশ্বের সবচাইতে শক্তিধর জাতি হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। ইউরোপের পুরো স্থলভাগের কর্তৃত্ব নেয়াই ছিল মূল উদ্দেশ্য।

- অপরদিকে ব্রিটিশ-মার্কিনিরা স্ট্রাটেজিক বম্বিং নিয়ে চিন্তা করেছিলো। তারা কয়েক হাজার মাইল দূরে জার্মান অর্থনৈতিক এবং ইন্ডাস্ট্রিয়াল গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটে বোমা ফেলার উদ্দেশ্যে বিমান ডিজাইন করেছিল। তাই তাদের ল্যাঙ্কাসটার, স্টার্লিং, বি-১৭, বি-২৪ বোমারু বিমানগুলি ছিল চার ইঞ্জিনের এবং অনেক বড়; তাদের পি-৫১, পি-৪৭ ও পি-৩৮ ফাইটারগুলিকেও বেশি তেল বহণ করে বোমারু বিমানের সাথে বহুদূর যাবার জন্যে ডিজাইন করা হয়েছিল।

- তবে ব্রিটিশ-মার্কিন এই ডকট্রাইন ১৯৪১ সালের পরে কার্যকারিতা পেয়েছিল। অন্যদিকে জার্মানরা যুদ্ধ শুরুর আগেই তাদের ডকট্রাইন তৈরি করে ফেলেছিল এবং তাদের বিমানগুলি সেভাবেই ডিজাইন করেছিল।

- জার্মান বিমান বাহিনীর মেশারস্মিট-১০৯ ও ফকে-উলফ-১৯০ ফাইটার এবং হাইঙ্কেল-১১১, জুঙ্কার্স-৮৮ ও ডর্নিয়ার-১৭ বম্বারগুলি ছিল স্বল্প-পাল্লার। তাদের একটা গুরুত্বপূর্ণ বিমান ছিল জুঙ্কার্স-৮৭ ‘স্টুকা’, যা ডাইভ-বম্বিং-এর জন্যে ব্যবহৃত হতো। মিত্রবাহিনীর এমন কোন বিমানই ছিল না।

- ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্সে আবার ‘ডে হাভিলান্ড মসকিটো’ এবং ‘ব্রিস্টল বিউফাইটার’এর মতো দুই ইঞ্জিনের বিমানকে দ্রুতগামী বোমারু বিমান হিসেবে ব্যবহার করেছিলো, যা কিনা নিচু দিয়ে উড়ে টার্গেটের উপরে হামলা করতো। দ্রুত সকলের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বোমা ফেলে দ্রুত প্রস্থান করাই ছিল এগুলির কাজ। কাজটা ছিল চোরাগুপ্তা ধরনের। 
  

মার্কিন বিমান বাহিনীর বি-১৭ স্ট্র্যাটেজিক বম্বার। মার্কিন ডকট্রাইন ছিল দূরপাল্লার ভারী বোমারু বিমানের সাহায্যে জার্মান অর্থনৈতিক এবং শিল্পের কাঠামোকে ধ্বংস করা, যাতে করে যুদ্ধ শেষে দুনিয়ার ক্ষমতায় পশ্চিমাদের হাতেই থেকে যায়। 



- আবার ব্রিটিশ বিমান বাহিনী জার্মানিতে বোমা ফেলতো রাতের বেলা; কোন ফাইটার এসকর্ট ছাড়া। অন্যদিকে আমেরিকানরা দিনের বেলায় বোমা ফেলতো ফাইটার এসকর্ট সহ। দিনের বেলায় বোমা ফেলতে যে শক্তির দরকার, তা রয়াল এয়ার ফোর্স যোগাড় করতে পারেনি। তাই তারা রাতের অন্ধকারের আড়ালেই কাজ করতে চেয়েছে। অন্যদিকে আমেরিকানরা যেহেতু নতুন সুপারপাওয়ার হবার পথে, তাই তারা দিনের বেলায় শক্তি প্রদর্শনের দিকেই বেশি আগ্রহী ছিল।

- সোভিয়েতরা তৈরি করেছিল ৩৬ হাজার ইলিউশিন-২/ইলিউশিন-১০ ‘স্টুরমোভিক’ ট্যাঙ্ক ডেস্ট্রয়ার, যা জার্মান আর্মার্ড ফর্মেশনকে যুদ্ধক্ষেত্রে হারাবার জন্যে তৈরি করা হয়েছিল। বিশাল স্থলবাহিনী ব্যবহার করেই তার পূর্ব ইউরোপসহ জার্মানি নিজেদের দখলে নিয়ে সেখানে কমিউনিজম প্রতিষ্ঠা করেছিল।

- জাপানি মিতসুবিসি এ৪এম, জি৪এম, জি৩এম এবং অন্যান্য বেশিরভাগ বিমান ছিল হাল্কা গড়নের, তবে যেন প্রচুর তেল নিতে পারে। প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপগুলির দূরত্বকে মাথায় রেখে এগুলি ডিজাইন করা হয়েছিল। তাই এগুলি হাল্কা অস্ত্র বহণ করতো এবং তেমন একটা গুলি হজম করতে পারতো না। তবে সিঙ্গাপুরের কাছে রয়াল নেভির দুইটা ব্যাটলশিপকে জাপানি বিমান যখন ডুবিয়ে দেয়, তখন জাপানিদের দূর-পাল্লার বিমান বানাবার ডকট্রাইনের সাফল্যই কিন্তু সামনে আসছিলো। তবে সেটা পরবর্তীতে আরও শক্তিশালী মার্কিন বিমানের সামনে ভস্ম হয়ে যায়।

- জার্মান বিমান বাহিনী এবং সোভিয়েত বিমান বাহিনী তৈরি হয়েছিলো যুদ্ধক্ষেত্রে সেনাবাহিনীকে জেতানোর জন্যে। জাপানি বিমানগুলিকে ডিজাইন করা হয়েছিল প্রশান্ত মহাসাগরে জাপানের কৌশলগত খনিজগুলিকে আয়ত্বে আনার চিন্তা থেকে। অন্যদিকে ব্রিটিশ-মার্কিন বিমান বাহিনী তৈরি হয়েছিল জার্মানির অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিকে পঙ্গু করে দেবার জন্যে, যাতে পরবর্তীতে বিশ্ব-কর্তৃত্ব পশ্চিমাদের হাতেই থাকে। আর ব্রিটিশ-মার্কিনীদের পার্থক্য ছিল দিবা-রাত্রে। আমেরিকানরা দিনের আলোতে শক্তি প্রদর্শনের মাধ্যমে জানিয়ে দিল যে ব্রিটিশদের আজ যুদ্ধ জিততে রাতের অন্ধকারের আশ্রয় লাগে; কারণ ব্রিটিশ সামাজ্যে আজ আর সূর্য ওঠেনা! সূর্য এখন আমেরিকানদের!

বিশ্বযুদ্ধের মাঝে বিমান বাহিনীগুলির ভিত গড়তে গিয়ে এই ডকট্রাইন ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। রাষ্ট্রগুলি তাদের চিন্তাকে এই ডকট্রাইনের মাধ্যমে প্রকাশ করে। যার চিন্তা যেমন হবে, তার বিমানের ডিজাইনও তেমনই হবে। আর তার পাইলটদের ট্রেনিং-ও তেমনই হবে।

জার্মান বিমান বাহিনীর ট্রেনিং প্রসেস

যুদ্ধেরপ্রথম কয়েক বছরে (১৯৪২-এর আগ পর্যন্ত) জার্মান পাইলটদের ট্রেনিং ছিল নিম্নরূপ-

- ৬ মাসের জন্যে রিক্রুট ট্রেনিং ডিপো (ফ্লিজার এরসাতজ আবটাইলুং)-এ পাঠানো হতো। অনান্য বিমান বাহিনীর বুট-ক্যাম্পের মতো এটা। এখানে শারীরিকভাবে প্রস্তুত করা ছাড়াও আকাশযুদ্ধের উপরে কিছু লেকচার দেয়া হতো।

- এরপর দুই মাসের জন্যে পাইলটদের ‘ফ্লুগান ওয়ার্টার কোম্পানি’ নামের ইউনিটে পাঠানো হতো, যেখানে সাধারণ এরোনটিক্যাল বিষয়ের উপরে শেখানো হতো।

- এরপর পাইলটদের প্রাথমিক বা এলিমেন্টারি ফ্লাইং স্কুল (এ/বি শুলে)-এ পাঠানো হতো, যেখানে ক্লেম-৩৫, ফকে উলফ-৪৪ এবং বুকার-১৩১ প্রশিক্ষণ বিমানে ওড়া শেখানো হতো। এরোডাইনামিক্স, এরোনটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং, এলিমেন্টারি ন্যাভিগেশন, মিটিওরোলজি, ফ্লাইং প্রসিজার এবং মোর্স রিসিভিং-এর উপরে ট্রেনিং নেবার পরে ‘এ২’ লাইসেন্স দেয়া হতো।

- আর ‘বি’ লাইসেন্স পাবার জন্যে পাইলটদের হাইয়ার পার্ফরমেন্স বিমানে যেমন – আরাদো-৬৬, গোথা-১৪৫, আরাদো-৭৬, জুঙ্কার ডব্লিউ-৩৩ ও ডব্লিউ-৪৪ ভারি বিমান, দুই ইঞ্জিনের ফকে উলফ এফডব্লিউ-৫৮ অথবা পুরোনো বিমান, যেমন হাইঙ্কেল-৫১, আরাদো-৬৫ বা হেনশেল-১২৩ বিমানে ট্রেনিং দেয়ার জন্যে পাঠানো হতো। ১০০ থেকে ১৫০ ঘন্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতার পর ‘বি-২’ ট্রেনিং শেষে পাইলটদের পাইলটস লাইসেন্স এবং পাইলটস উইং দেয়া হতো।

- ফাইটার এবং ডাইভ বম্বার ট্রেনিং-এর জন্যে এই লাইসেন্স পাবার পর ঐ স্পেশালিস্ট ইউনিটে পাঠানো হতো। দুই ইঞ্জিনের

- ফাইটার, বম্বার এবং রেকনাইসেন্স বিমানে ট্রেনিং-এর জন্যেও আলাদা স্পেশালিস্ট ইউনিটে পাঠানো হতো। এসব স্কুলে ছয় মাসের ট্রেনিং-এ ৫০ থেকে ৬০ ঘন্টা ওড়ার পরে ‘সি’ বা এডভান্সড পাইলটস লাইসেন্স দেয়া হতো। বম্বার পাইলটদের অপারেশনাল বিমানের পুরোনো ভার্সনে (হাইঙ্কেল-১১১, জুঙ্কার্স-৫২, জুঙ্কার্স-৮৬, ডর্নিয়ার-১৭) ট্রেনিং দেয়া হতো। এই ট্রেনিং শেষে পাইলটরা দিনে বা রাতে মোটামুটি দক্ষতার সাথে বিমান চালাতে পারতো, ইন্সট্রুমেন্ট ফ্লাইং-এ অল্প কিছু ট্রেনিং হতো তার এবং ভালো আবহাওয়ায় সিম্পল ক্রস-কান্ট্রি ন্যাভিগেশন ফ্লাইট চালাতে পারতো।

- ‘সি’ স্কুলের পরে দুই ইঞ্জিনের ফাইটার পাইলটদের স্পেশালিস্ট ইউনিটে পাঠানো হতো এবং বাকিরা বম্বার ও রেকনাইস্যান্স ইউনিটে যেতো, যেখানে আরও ৫০ থেক ৬০ ঘন্টা ওড়ার প্রশিক্ষণ পেতো সে। স্পেশালিস্ট ট্রেনিং-এ লেটেস্ট ডিজাইনের বিমানে কম্বাইন্ড ক্রু ট্রেনিং দেয়া হতো এবংরাতের বেলায় ও খারাপ আবহাওয়ায় ন্যাভিগেশন ট্রেনিং-এ বেশি গুরুত্ব নিয়ে শিক্ষা পেতো।

- স্পেশালিস্ট ট্রেনিং-এর পর ক্রুরা একত্রেই থাকতো এবং একত্রে তাদের কোন অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হতো। কিছু পাইলটকে অবজার্ভার ট্রেনিং-এ আরও নয় মাসের জন্যে পাঠানো হতো, যেখানে তারা ব্লাইন্ড ফ্লাইং এবং ন্যাভিগেশনে আরও স্পেশালিস্ট হয়ে উঠতো। এরা বোমারু বিমান বা রেকনাইস্যান্স বিমানের ক্যাপ্টেন হতো। যুদ্ধের মাঝে ১৯৪২ সালের পর থেকে অবজার্ভার ট্রেনিং-এর গুরুত্ব কমতে কমতে ১৯৪৪ সাল নাগাদ ৫ মাসের ট্রেনিং-এ এসে ঠেকে।

- স্পেশালিস্ট ট্রেনিং শেষে পাইলটদের বিভিন্ন অপারেশনাল গ্রুপের অধীনে অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিটে (এরগেনজুং সাইনহাইটেন) দেয়া হতো। এখানে তারা ঐ ইউনিটের অপারেশনাল ট্যাকটিক্যাল মেথডগুলি শিখতো।



প্রথম দিন থেকে এই অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিটে আসতে একজন ফাইটার বা ডাইভ বম্বার পাইলটের ১৩ মাসের মতো সময় লাগতো, যার মাঝে তার ১০০ থেকে ১৫০ ঘন্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা হতো। আর বম্বার ও রেকনাইস্যান্স পাইলটের লাগতো ২০ মাস সময়, যার মাঝে তার ২২০ থেকে ২৭০ ঘন্টা ওড়ার অভিজ্ঞতা লাগতো। ১৯৪২ সালের আগ পর্যন্ত লুফতওয়াফের এই ট্রেনিং প্রসেসই ছিল। ১৯৪২ সাল থেকে সোভিয়েত ফ্রন্টের চাপে পুরো ট্রেনিং প্রসেসই ভেঙ্গে পড়ে।
   
  
জার্মান বিমান বাহিনীর সেরা পাইলটের অভাব ছিল না। বহু পাইলটের নামের পাশে প্রচুর 'কিল' যোগ হয়েছিল। এর মূল কারণ ছিল - যুদ্ধের শুরুতে জার্মান বিমান বাহিনীর ট্রেনিং এবং বিমানের মান অপেক্ষাকৃত ভালো থাকা এবং সুনির্দিষ্ট ডকট্রাইন অনুযায়ী অপারেট করা। জার্মানরা অনেক আগ থেকেই তাদের ট্রেনিং অপারেশন চালাবার ফলে যুদ্ধের শুরুর দিকে ভালো পাইলটের অভাব হয়নি তাদের। 
 

জার্মান ট্রেনিং-এর অবনতি এবং ধ্বংস

১৯৪১ সালের ২২শে জুন জার্মানরা সোভিয়েত ইউনিয়নে হামলা করে। প্রথম ছয় মাসে তারা ২,২০০ পাইলট হারায়। এর পরে ১৯৪২ সালের প্রথম ছয় মাসেও প্রায় একই সংখ্যক পাইলট হারায় তারা। এর মাঝে আবার সোভিয়েত ফ্রন্টে জার্মান সেনাবাহিনীর কিছু ইউনিট আটকে পড়ার কারণে তাদেরকে আকাশ থেকে সাপ্লাই দিতে দুই ইঞ্জিনের ট্রেনিং প্রোগ্রাম থেকে বিমান এবং প্রশিক্ষকদের রুশ ফ্রন্টে পাঠানো হয়। এরপর থেকে যুদ্ধে চাপে সেই বিমান এবং প্রশিক্ষকদের আর ফেরত আনা সম্ভব হয়নি। আর রুশ ফ্রন্টে যুদ্ধের কারণে যখন জ্বালানি তেলের সরবরাহের উপরে চাপ পড়ে, তখন ট্রেনিং ইউনিটেই জ্বালানি তেলের বরাদ্দ কমানো হয় সবচাইতে বেশি। এসময় আধাআধি ট্রেনিংপ্রাপ্ত ‘এ’ এবং ‘বি’ টাইপের লাইসেন্সধারী পাইলটের একটা আধিক্য তৈরি হয় এবং অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিটে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পাইলটের ক্রাইসিস দেখা দেয়। ১৯৪২ সালের জুলাই-এ পাইলট ট্রেনিং-এর ডিরেক্টর জেনারেল কুয়েল লুফতওয়াফের প্রধান রাইখমার্শাল হেরমান গোরিং-এর কাছে গিয়ে আসছে মহাবিপদের কথা উল্লেখ করেন। তিনি বলেন যে, ‘সি’ টাইপের ট্রেনিং-এর অবস্থা শোচনীয় অবস্থায় ঠেকেছে। গোরিং শর্টকাট সমাধান খুঁজতে গিয়ে পুরো ‘সি’ টাইপ ট্রেনিং প্রোগ্রাম-ই বাদ দিয়ে দেন এবং এই ট্রেনিং নেবার জন্যে পাইলটদের সরাসরি অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিটে পাঠিয়ে দিতে বলেন। কিন্তু অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিটে ‘সি’ টাইপের ট্রেনিং দেবার জন্যে যথেষ্ট বিমান এবং প্রশিক্ষক না থাকায় তাদের অবস্থাও শোচনীয় হয়ে ওঠে। অপারেশনাল ট্রেনিং ইউনিট এই চাপ নিতে না পেরে অপারেশনাল গ্রুপের কাছে ট্রেনিং-এর জন্যে পাইলট পাঠাতে থাকে। ফলশ্রুতিতে মারাত্মক এক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়, যেখানে বম্বার এবং রেকনাইস্যান্স পাইলটদের পার্ফরমেন্স খুব খারাপ হয়ে যেতে থাকে।

১৯৪৪ সালের শুরুতে জার্মান অপারেশনাল ফাইটার ইউনিটগুলিতে মাত্র ১৬০ ঘন্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা নিয়েই পাইলটরা যোগদান করতে থাকে। অথচঃ ঐ একই সময়ে ব্রিটিশ রয়াল এয়ার ফোর্স এবং আমেরিকার আর্মি এয়ার ফোর্সে ফাইটার পাইলট হতে দ্বিগুণেরও বেশি ঘন্টা উড্ডয়নের প্রয়োজন হতো। ১৯৪৪-এর প্রথম ৬ মাসে জার্মান ফাইটারের ইন্টারসেপ্টর ইউনিটিগুলি ২,০০০-এরও বেশি পাইলট হারায়। দিনের বেলায় মার্কিন বোমারু বিমানের সাথে আসা পি-৫১ ফাইটারগুলি জার্মান বিমান বাহিনীর যেকোন ফাইটারের চাইতে ভালো ছিল। এর উপরে মার্কিন পাইলটের মান তখন যথেষ্ট ভালো। অন্যদিকে জার্মান পাইলটদের ট্রেনিং-এর অবস্থা দিনকে দিন আরও খারাপ হচ্ছিল। ১৯৪৪-এর মাঝামাঝি সময়ে ‘বি’ ট্রেনিং ইউনিটগুলি বাদ দিয়ে দেয়া হয় এবং সকল পাইলটকে মাত্র ১১২ ঘন্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতাসহ অপারেশনাল ইউনিটে পাঠানো হতে থাকে। আর ঐ বছরের সেপ্টেম্বর নাগাদ জ্বালানি স্বল্পতায় এলিমেন্টারি এবং স্পেশালিস্ট ট্রেনিং প্রসেস বাদ দিয়ে সকলকে ফ্রন্টলাইনে পাঠিয়ে দেয়া হয়।

হিটলার ইয়ুথ ফ্লাইটের শেষ দিনগুলি

হিটলার ইয়ুথের ফ্লাইং ডিভিশনের সদস্যদের ১৯৪৩ সাল থেকে বিমান-ধ্বংসী কামান চালাতে নিয়োগ দেয়া হয়; তাদের সাথে বহু বেসামরিক নাগরিককেও এই ট্রেনিং দেয়া হয়, কারণ সামরিক ট্রেনিংপ্রাপ্ত সকলকেই তখন যুদ্ধক্ষেত্রে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছিল। যেসব ছেলেরা বয়সে একটু বড় ছিল, তারা কামান চালনা করতো, আর কম বয়সের ছেলেরা ফিজিক্যাল কমিউনিকেশন (কুরিয়ার) এবং সার্চলাইট চালনার কাজ করতো। বোমা হামলায় যোগাযোগ ধ্বংস হওয়াটা অস্বাভাবিক ছিল না। তখন এই ছেলেরাই যোগাযোগ সচল রাখতো। আকাশে মার্কিন বিমান বাহিনীর নতুন ডিজাইনের ফাইটারের (পি-৫১, পি-৪৭ এবং পি-৩৮) কাছে জার্মান ফাইটারগুলি হেরে যাচ্ছিল। তখন এই কম বয়সীদের বাহিনীর চালনা করা বিমান-ধ্বংসী কামানগুলি অনেক গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল। যুদ্ধে একেবারে শেষের দিকে মেশারস্মিট এমই-২৬২ এবং হাইঙ্কেল এইচই-১৬২ নামের জেট ফাইটারগুলি তৈরি করা শুরু হয়েছিল। হাইঙ্কেল-১৬২-এর নাম দেয়া হয়েছি ‘পিপলস ফাইটার’ (ভোকস যাগের), এবং এই বিমান চালনার জন্যে অল্প বয়সের ছেলের ট্রেনিং দেয়া শুরু করা হয়েছিল। হাইঙ্কেলের বিমানটা যথেষ্ট ভালো একটা ফাইটার হলেও মাত্র ৩২০টা ফাইটার যুদ্ধের মোড় ঘোরানোর জন্যে যথেষ্ট ছিল না। আর তখন জার্মান বিমান বাহিনীর পাইলটের মান ছিল একেবারেই নিম্নমানের। তদুপরি, অনেক ক্ষেত্রেই বিমান পাওয়া গেলেও চালানোর পাইলট পাওয়া যায়নি! অর্থাৎ ম্যান এবং মেশিনের মাঝে সমন্বয় ভেঙ্গে পড়েছিল।
    
  
মার্কিন বিমান বাহিনীর পাইলট ক্যাপ্টেন ফ্রেড ক্রিশ্চেনসেন (১৯৪৪)। তার পি-৪৭ বিমানে অঙ্কিত ২২টা স্বস্তিকার মানে হলো তিনি ২২টা জার্মান বিমান ভূপাতিত করেছেন। মার্কিনীরা তাদের সবচাইতে ভালো পাইলটদের দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসতো নতুন পাইলট ট্রেনিং দেবার উদ্দেশ্যে। অন্যদিকে জার্মান পাইলটদের সর্বোত্তমরা শেষ পর্যন্ত যুদ্ধ করে মৃত্যুবরণ করেছিল। তাদের অভিজ্ঞতা নতুনদের মাঝে খুব কমই গিয়েছিল।  
 

জার্মান পাইলটের মান

জার্মান ফাইটার পাইলটদের একটা নাম হয়ে গিয়েছিল ‘কিল’-এর সংখ্যার জন্যে। ২,৫০০ পাইলট কমপক্ষে ৫টা বিমান ভূপাতিত করার দাবি করে। ১০০টার বেশি বিমান ভূপাতিত করার পাইলটের সংখ্যা ছিল ১০৩। ৪০ থেকে ১০০ ‘কিল’-এর দাবি ছিল ৩৬০ জন পাইলটের। ২০ থেকে ৪০ ‘কিল’এর দাবি ছিল ৫০০ জন পাইলটের। ৪৫৩ জন ফাইটার (দিনের বেলার ফাইটার) পাইলটকে ‘নাইটস ক্রস অব দ্যা আয়রন ক্রস’ পুরষ্কার দেয়া হয়েছিল; আরও ৮৫ জন নাইট ফাইটার পাইলট (১৪ জন ক্রু-সহ) একই সন্মান পেয়েছিল। যুদ্ধের শুরুতে এটাই ছিল জার্মানির সর্বোচ্চ সামরিক সন্মান। জার্মান বিমান বাহিনী যুদ্ধে মোট ৭০ হাজার বিমান ভূপাতিত করার দাবি করে; যার মাঝে ৪৫ হাজার ছিল সোভিয়েত, আর ২৫ হাজার ছিল ব্রিটিশ-মার্কিন। ১৮ হাজার ৬০০-এর মতো জার্মান পাইলট যুদ্ধে মৃত্যুবরণ করে। 

জার্মান বিমান বাহিনীর সাথে রয়াল এয়ার ফোর্স এবং মার্কিন বিমান বাহিনীর ট্রেনিং-এর দৈর্ঘ্যের একটা তুলনাচিত্র। যেখানে যুদ্ধের শুরুতে ১৯৪২ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত জার্মানরা ব্রিটিশ এবং মার্কিন ট্রেনিং-এর চাইতে বেশি লম্বা ট্রেনিং নিতো, সেখানে পুরো চিত্রই পাল্টে যায় ১৯৪২-৪৩ সালে। যুদ্ধের শেষের দিকে জার্মানরা ভালো বিমান তৈরি করতে পারলেও সেগুলি চালাবার মতো পাইলটই তাদের ছিলনা। 


জার্মান পাইলটদের ‘কিল’এর এই দাবি পশ্চিমা ঐতিহাসিকেরা অনেকেই প্রশ্ন করেছেন। তবে এর স্বপক্ষে যুক্তিও রয়েছে যথেষ্ট। প্রথমতঃ যুদ্ধের প্রথম দিকে জার্মান পাইলটের মান ছিল অন্যদের চাইতে অনেক ভালো, কারণ তারা অনেক আগ থেকেই পাইলট তৈরি করে আসছিল। যেমন যুদ্ধের শুরুতে প্রচন্ড চাপের মুখে ব্রিটেনের রয়াল এয়ার ফোর্সের পাইলটেরা মাত্র ১৬০ ঘন্টা উড্ডয়নের অভিজ্ঞতা নিয়েই জার্মান বিমান বাহিনীকে মোকাবিলা করতে গিয়েছিল। ১৯৪১ সালের পর থেকে এই ট্রেনিং-কে ৩২০ ঘন্টার উপরে নিয়ে যাওয়া হয়। যুদ্ধের প্রথম দিকে রুশ বিমান বাহিনীর ট্রেনিং-এর অবস্থাও ছিল খুবই খারাপ।দ্বিতীয়তঃ পরিকল্পনা অনুযায়ী যুদ্ধপ্রস্তুতির কারণে জার্মান বিমান বাহিনী যুদ্ধের শুরুতে বেশ ভালো মানের ফাইটার তৈরি করতে পেরেছিল। অন্যদিকে অন্য দেশগুলি ছিল একেবারেই প্রস্তুতিহীন; তাই তাদের শুরুর দিকের বিমানগুলি ছিল নিম্নমানের। তৃতীয়তঃ যেখানে ব্রিটিশ-আমেরিকান সেরা পাইলটদেরকে দেশে ফেরত নিয়ে আসা হতো নতুন পাইলটদের ট্রেনিং দেবার জন্যে, সেখানে জার্মান বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠ পাইলটদেরকে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যস্ত রাখা হয়েছিল তারা মারা যাবার আগ পর্যন্ত। ব্রিটিশ-মার্কিন পাইলটেরা তাদের অভিজ্ঞতা নতুনদের মাঝে বিতরণ করে পাইলট তৈরিতে সহায়তা করেছিল। অন্যদিকে জার্মান পাইলটদের অভিজ্ঞতা নতুনদের মাঝে ততটা যায়নি।

জার্মান বিমান বাহিনীর ডকট্রাইনগত সমস্যা

জার্মান পাইলট ট্রেনিং এবং বিমান নির্মান শিল্প তাদের রাষ্ট্রের চিন্তার সাথে সাংঘর্ষিক ছিল। কারণ তাদের চিন্তায় যেখানে সেনাবাহিনী দ্বারা সারা ইউরোপ দখলের দিকে লক্ষ্যস্থির ছিল, সেখানে অনেকগুলি শক্তিশালী রাষ্ট্রের সাথে একত্রে যুদ্ধ করতে পারার মতো ট্রেনিং কাঠামো তাদের থাকা দরকার ছিল। কিন্তু সেটা ছিল শুধুই স্বপ্ন। রাশিয়া, ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের সম্মিলিত জনবল, খনিজ সম্পদ, ভূমি, শিল্প এবং অর্থনৈতিক শক্তির সাথে পেরে ওঠা জার্মানির একার পক্ষে কখনোই সম্ভব ছিলনা। তাই সকলের সাথে একত্রে লড়তে গিয়ে তাদের ট্রেনিং কাঠামো এবং বিমান নির্মাণ শিল্প ভেঙ্গে পড়েছিল। একইসাথে এতগুলি ফ্রন্টে একত্রে যুদ্ধ করার জন্যে দরকারি খনিজ সম্পদের জোগান তারা দিতে অক্ষম ছিল।
     
 
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় ব্রিটেনের মাটিতে পাইলট ট্রেনিং-এর জন্যে যথেষ্ট এয়ারফিল্ড এবং ট্রেনিং বিমান না থাকায় বেশিরভাগ পাইলট ট্রেনিং-এর আয়োজন করা হয় ব্রিটেনের বাইরে। ঐ এলাকাগুলি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে অনেক দূরে থাকায় পাইলটরা তেমন কোন চাপ ছাড়াই ট্রেনিং নিতে পেরেছিল। ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সালের মাঝে পাইলট ট্রেনিং এতটাই সাফল্যজনক ছিল যে, ১৯৪৪ সাল থেকে পাইলট ট্রেনিং কমিয়ে দেয়া হয়েছিল! 
  

ব্রিটিশ অভিজ্ঞতা

যুদ্ধের প্রথম দিকে ব্রিটিশরা জার্মানদের সাথে পেরে উঠছিল না একেবারেই। তারা তাদের পাইলট ট্রেনিং-এর জন্যে ৯টা দেশের উপরে নির্ভর করেছিল। পাইলট ট্রেনিং-এর জন্যে যথেষ্ট সংখ্যক এয়ারফিল্ড ব্রিটেনে ছিল না। এরপরেও ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৫-এর মাঝে মোট ১৫৩টা ফ্লাইং স্কুলে ১৪,৪০০ পাইলটকে ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল ব্রিটেনে। মোট ট্রেনিংপ্রাপ্ত ১ লক্ষ ১০ হাজার ৬০০ পাইলটের মাঝে এই সংখ্যা মাত্র ১৩%। সর্বোচ্চ সংখ্যক ট্রেনিং দেয়া হয়েছিল কানাডার ৯২টা স্কুলে– ৫৪,১০০, যা কিনা মোট ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলটের ৪৯%। যুক্তরাষ্ট্রে ট্রেনিং পেয়েছিল ১১,৮০০ জন (১১%), অস্ট্রেলিয়াতে ট্রেনিং পেয়েছিল ১০,৫০০ জন (৯%), দক্ষিণ আফ্রিকা এবং রোডেশিয়াতে মোট ১৪,৮০০ জন (১৩%), নিউজিল্যান্ডে ৪,২০০ জন (৪%), ভারতে ৭০০ জন এবং মধ্যপ্রাচ্যে ১০০ জন। ব্রিটেনের সাহায্যকারী এই দেশ/অঞ্চলগুলি যুদ্ধক্ষেত্র থেকে দূরে ছিল বিধায় সেখানে পাইলটরা মোটামুটি শান্তিতেই ট্রেনিং নিতে পেরেছে। এভাবে ট্রেনিং নেবার জন্যে যথেষ্ট ভালো ফ্লাইং কন্ডিশনও ব্রিটিশরা পেয়েছিল; কাজেই ট্রেনিং-এ আবহাওয়ার কারণে সময়ক্ষেপণ ছিল কম। অন্যদিকে জার্মান পাইলটরা মিত্রবাহিনীর বোমারু বিমানের হামলার মাঝেই ট্রেনিং নিচ্ছিল।

ব্রিটেনের আকাশে যখন জার্মান বিমান হামলা করছিল (ব্যাটল অব ব্রিটেন), তখন ব্রিটিশদের পাইলটের ব্যাপক ঘাটতি ছিল; চাপের মুখে পাইলটের মানও ছিল অতি সাধারণ। কিন্তু ১৯৪৩ সাল থেকে ট্রেনিংপ্রাপ্ত পাইলটের সারপ্লাস পরিলক্ষিত হচ্ছিল। বিমানের মান ভালো হচ্ছিল, আর ভালো বিমান চালাতে পাইলটের ট্রেনিং-এর মানও ভালো হতে হতো। যুদ্ধের প্রথমে পরিলক্ষিত ক্ষতির চাইতে পরবর্তীতে ক্ষতির পরিমাণ কমতে থাকে; কাজেই বদলি পাইলটের দরকারও আস্তে আস্তে কমতে থাকে। এমতাবস্থায় ১৯৪৪ সালের শুরু থেকে পাইলট ট্রেনিং-এর হার কমিয়েই দেয়া হয়! অর্থাৎ যুদ্ধ জেতার জন্যে যথেষ্ট সংখ্যক ভালো পাইলট ১৯৪১ থেকে ১৯৪৩ সালের মাঝেই তৈরি করে ফেলা সম্ভব হয়েছিল! শেষের দেড় বছর শুধু যুদ্ধ শেষ করতে ব্যবহৃত হচ্ছিল।

ব্রিটেনের কোন হিটলার ইয়ুথ ছিল না; তবে ব্রিটিশরা যুদ্ধ প্রস্তুতিও বন্ধ করেনি একেবারে। রয়াল এয়ার ফোর্সের রেগুলার পাইলটরা দুই বছরের ট্রেনিং পেতো আরএএফ কলেজে। এছাড়াও আরও বেশি সংখ্যক পাইলট তৈরি হতো এক বছরের শর্ট সার্ভিস ট্রেনিং-এর মাধ্যমে। এদের ট্রেনিং হতো ফ্লাইং ট্রেনিং স্কুলে। ১৯২৫ সাল থেকে আরও একট নতুত ধাপে পাইলট ট্রেনিং শুরু হয় – স্পেশাল রিজার্ভ স্কোয়াড্রন এবং অক্সিলারি স্কোয়াড্রন। এদেরকে সপ্তাহান্তে পার্ট টাইম ট্রেনিং দেয়া হতো। তবে ১৯৩৪ থেকে ১৯৩৯-এর মাঝে এই প্রোগ্রামগুলিকে ত্বরান্বিত করা হয়। ১৯৩৬ সালে ট্রেনিং কমান্ড এবং আরএএফ ভলান্টিয়ার রিজার্ভ গঠন করা হয়। এরা বেসামরিক ফ্লাইং স্কুলগুলিতে ট্রেনিং নিতো। ছুটির দিনে এরা বিমান ওড়াতো এবং সন্ধ্যায় অনান্য ক্লাসে প্রশিক্ষণ নিতো। এদেরকে পরবর্তীতে বিমান বাহিনীতে নেয়া অনেক সহজ হয়ে গিয়েছিল। তারপরেও যুদ্ধ শুরুর সময় (১৯৩৯ সালে) যথেষ্ট এয়ারফিল্ড, ট্রেনিং বিমান এবং প্রশিক্ষকের অভাবে বেশি সংখ্যক পাইলট তৈরি করা যাচ্ছিলো না। তবে এই কাঠামোটাই ১৯৪১ সাল থেকে ব্যবহার করে পাইলট ট্রেনিং-এ ব্যাপক সাফল্য পাওয়া গিয়েছিল।
   
 
শ্রীলঙ্কা বিমান বাহিনীর এফ-৭ যুদ্ধবিমান। দেশটির গৃহযুদ্ধের শুরুতে বিমান বাহিনীতে পাইলট ছিল ৪০ জনেরও কম। এমতাবস্থায় নতুন বিমান কিনলেও তা চালাবার জন্যে পাইলট ছিল না তাদের। তাই অনেক ক্ষেত্রেই বিদেশী ভাড়া করা পাইলট দিয়ে চালাতে হয়েছিল তাদের। 
 

আরও কিছু উদাহরণ

১৯৮০-এর দিকে মধ্য আফ্রিকার দেশ শাদ (কেউ কেউ বলে চাদ) ব্রিটেন-ফ্রান্স-যুক্তরাষ্ট্রের ধস্তাধস্তির মাঝে পড়ে গৃহযুদ্ধে পতিত হয়। তখন শাদের একনায়ক ইদ্রিস দেবি, যিনি ফরাসীদের কাছে পাইলট ট্রেনিং নেবার কারণে বিমান বাহিনীর গুরুত্ব বুঝতেন। তিনি শাদের বিমান বাহিনী তৈরি করার লক্ষ্যে আগানো শুরু করেন। কিন্তু যেহেতু নিজের দেশের কোন পাইলটই নেই, তাই ভাড়াটে পাইলট দিয়েই তিনি শাদের বিমান বাহিনী তৈরি করেন। আজও শাদের বিমান বাহিনী বিদেশী পাইলটের উপরে বেশ নির্ভরশীল।

শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শুরুর সময়ে শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনীতে তেমন কোন সংখ্যক পাইলটই ছিল না। তাই বিদেশী ভাড়া করা পাইলটের উপরেই নির্ভর করতে হয়েছে তাদের। ১৯৮৫ সালে যখন শ্রীলঙ্কা ইতালি থেকে Siai Marchetti বিমান কেনে, তখনও তাদের মোট পাইলটের সংখ্যা ছিল ৪০-এরও কম। এই সংখ্যক পাইলট দিয়েই তাদের এটাক এয়ারক্রাফট, পরিবহণ বিমান এবং হেলিকপ্টার অপারেট করতে হয়েছিল।

১৯৭১ সালে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর ‘কিলো ফ্লাইট’ তৈরি করতে বাংলাদেশের হাতে ছিল ৩ জন বিমান বাহিনীর পাইলট এবং ৬ জন বেসামরিক পাইলট। এই সবগুলি উদাহরণেই একটা ব্যাপার নিশ্চিত, আর তা হলো – পাইলটের স্বল্পতা এতটাই ছিল যে, আরও বেশি সংখ্যক বিমান পেলেও সেগুলি ব্যবহার করা সম্ভব ছিল না।

আর এই তিন উদাহরণের প্রত্যেকটাই অন্য দেশে তৈরি বিমানের উপরে নির্ভরশীল ছিল বিধায় ঐ দেশগুলি দ্বারাই নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।

এই দীর্ঘ আলোচনাকে সংক্ষেপে বলতে গেলে –

- একটা বিমান বাহিনীকে গড়তে গেলে প্রথমেই তার ডকট্রাইন স্থির করতে হবে, যা কিনা সেই রাষ্ট্রের চিন্তার উপরে নির্ভরশীল। সেই চিন্তাটা যেমন, তার বিমানের ডিজাইন, ফর্মেশন এবং ট্রেনিং হবে তেমনি।

- ট্রেনিং এমন একটা ব্যাপার, যার একটা দফারফা না করে কোন যুদ্ধ করাটা বোকামি। পাইলট তৈরি করতে সময় লাগে। সেটা হিসেবে না এনে যুদ্ধে গেলে আধাআধি প্রশিক্ষণপ্রাপ্তদের উপরে নির্ভর করতে হতে পারে। এদের হাতে ভালো অস্ত্র দিলেও এর উপযুক্ত ব্যবহার নিশ্চিত হবে না।

- যথেষ্ট সংখ্যক ও নিরাপদ এয়ারফিল্ড এবং এয়ারস্পেস ছাড়া ভালো ট্রেনিং-এর আশা করা যায় না।

- অভিজ্ঞদের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগাতে হবে নতুনদের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে। অভিজ্ঞদের ভালো যোদ্ধা হিসেবে ব্যবহার করে কিছু সাফল্য পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদে যুদ্ধ হারতে হতে পারে।

- ট্রেনিং অনেক অল্প বয়সে শুরু করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ। অল্প বয়সের ছেলেদের মানসপটে পাইলট হবার আকাংক্ষা যে ভালোমতো তৈরি করতে পারবে, তার বিমান বাহিনী ততো শক্তিশালী হবে।

- বেসামরিক জনগণের পাইলট ট্রেনিং-এ ভূমিকা থাকলেও রাষ্ট্রের পৃষ্ঠপোষকতাই হবে মূল বিষয়। রাষ্ট্রের চিন্তা বিমান বাহিনীর ডকট্রাইন এবং ট্রেনিং প্রসেসে প্রতিফলিত হবে।

- অন্য দেশের তৈরি বিমানের উপরে নির্ভরশীল হতে হলে ঐ দেশের ডকট্রাইনই মেনে চলতে হবে; এভাবে নিজেদের ডকট্রাইন হবে স্বল্প মেয়াদী, যাকে ডকট্রাইন বলাটাই ভুল হবে

12 comments:

  1. আপনার কোনো এক পোস্টে দেখলাম যে আপনি বলেছিলেন যে যত দ্রুত সম্ভব বাংলাদেশ যেন JF 17/ J 10 খরিদ করে। এতে কি আপনার এই লিখার সাথে সাংঘর্ষিক???

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা ডকট্রাইনের সাথে সাংঘর্ষিক নয়। ডকট্রাইন বুঝতে পারলে এটা বোঝা খুব সহজ যে, কেন জেএফ-১৭ বিমানের কথা বলে হয়েছিল এবং জে-১০ বিমানের কথা বলা হয়নি। ডকট্রাইন বুঝতে পারলে জেএফ-১৭ এবং জে-১০-এর মাঝে কনফিউশন হবার কথা নয়।

      http://koushol.blogspot.com/2017/09/unchained-myanmar-drowning-bangladesh.html

      Delete
    2. আপনি যে কারনে জে এফ ১৭ কিনার কথা বলেছেন সেটা স্ট্র্যাটেজিক কিন্তু আপনার এই আর্টিকাল অনুযায়ী যদি জে এফ ১৭ কিনে তবে সেক্ষত্রে ঐ পাকিস্তান বা চীনের ডক্ট্রিন পালন করতে হবে।

      Delete
    3. জেএফ-১৭ কেন এবং কিভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, তার সাথে এমন কিছু ফ্যাক্টর জড়িত, যা পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। পাকিস্তান রুশ আরডি-৯৩ ইঞ্জিন ব্যবহার করেছে এই বিমানে, যা কিনা মিগ-২৯-এ ব্যবহৃত হয়। রাশিয়া যেসব কারণে পাকিস্তানের কাছে এই ইঞ্জিন সরবরাহ করেছে, তার সবটা রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে নেই। এই বিমানের রাডার হচ্ছে চীনা কেএলজে-৭। তবে বিমানটাকে এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, পরবর্তীতে যেকোন রাডার ফিট করা যাবে। এসব ফ্যাক্টর চীনের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। আবার এর এভিওনিক্স এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে যে, যেকোন সেন্সর বা অস্ত্র বেশ সহজে এর সাথে যুক্ত করা যাবে। আর এই সকল কারণে এই বিমান যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণের বাইরে। মোটকথা স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা ছাড়া এই বিমানের প্রোডাকশন আটকাতে পারবে না কেউ। এর যেকোন কিছুই বাইপাস করা সম্ভব।

      ডকট্রাইন হয় আদর্শিক চিন্তার অধীনে ভূরাজনৈতিক আউটলুকের উপরে; জাতিগত চিন্তার উপরে ভিত্তি করে নয়। নাহলে হিটলারের লুফতওয়াফের মতোই অবস্থা হবে; অর্থাৎ স্বল্পমেয়াদী।

      Delete
    4. আমি পারতপক্ষে জে ১০ পছন্দ করি। কারন জে এফ ১৭ এর ব্লক ১ এ কিছু ফল্ট আছে, ব্লক ২ এখনো ডেভেলপমেন্ট পর্যায়ে। সূত্রমতে ব্লক ৩ এর অস্ত্বিত নেই। সেক্ষেত্রে জে ১০ কিছু সাপোর্ট দিতে পারে। তবে বঙ্গবন্ধু এরোনটিক্যাল যেহেতু যুদ্ধবিমান বানানোর পরিকল্পনা আছে, সেক্ষেত্রে জে এফ ১৭ এর প্রযুক্তি নিয়ে কাজ করতে পারে, তাহলে সুবিধামত এক্সেসরিস ফিট করা যাবে। আর যেহেতু বাংলাদেশ যুদ্ধবিমানের জন্য চীন আর রাশিয়ার উপর নির্ভরশীল, তাই এ মুহুর্তে অন স্পট জে ১০ ডেলিভারী দিলে খারাপ নয়, পরে সুবিধামত সময়ে উপযুক্ত বিমান কিনতে পারে। আর বঙ্গবন্ধু এরোনটিকাল জে এফ ১৭ এর উপর ভিত্তি করে সুবিধামত এক্সেসরিস ইন্সটল করে তাদের ফ্লীট বাড়াতে পারে।

      Delete
    5. শুধুমাত্র বিমানের টেকনিক্যাল কোয়ালিটির উপরে বিমানের টাইপ নির্ধারন করা যায় না। এতে আরেকজনের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যই হাসিল হবে শুধু। জে-১০ কেনা যেতে পারে, কিন্তু সেটা হতে হবে বাংলাদেশের টার্মস-এ, যা এই মুহুর্তে নিশ্চিত করাটা কঠিন। চীন বাংলাদেশের বন্ধু হলেও চীনের উদ্দেশ্য বাস্তবায়ন বাংলাদেশের উদ্দেশ্য নয়। শ্রীলঙ্কা এবং পাকিস্তান থেকে বাংলাদেশ শিখতে পারে।

      Delete
    6. সে জন্য ই তো এ ব্যাপারে বলা, কারন চীন বাংলাদেশের কাছে জে ১০ বিক্রি করতে মরিয়া। বাংলাদেশ এই সুযোগ নিতে পারে চীনকে এ কথা বলে যে আমরা রাজী কিন্তু আমাদের শর্তানুযায়ী দিতে হবে।

      আরেকটা ব্যাপার পরে জানতে পারলাম, বঙ্গবন্ধু এরোনটিকাল মুলত দুইধরনের বিমান বানাতে যাচ্ছে,

      ১) ইন্টারমিডিয়েট জেট। এজন্য তারা কে এল ৮ ইভালুয়েট করেছে।
      ২) এম আর সি এ এর ক্ষেত্রে শুনলাম জে এফ ১৭ ইভালুয়েট করছে। সেটা হলে পরে আপনার আলোচিত ফ্যাক্টর অনুযায়ী কাজ হলেই হয়।

      এক্ষেত্রে আমি মনে করি, বাংলাদেশের উচিত ড্রোন এর ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া। কারন ফাইটার জেট সাধারনত মেইন্টেইন কস্ট বেশী, সেক্ষত্রে যদিওবা আমাদের জেট কম থাকে তবে এটাক কাম সারভালেন্স ড্রোন দিয়ে কিছুটা ঘাটতি পূরন করা যেতে পারে, মূলত ৫%, কারন ড্রোণ বা UCAV তো আর আকাশে ডগফাইট করতে পারবেনা। দেশেই এই ধরনের UCAV প্রস্তুত করা যেতেত পারে, মানে উচিত।

      Delete
    7. জে-১০ বাংলাদেশের টার্মস-এ করাটা কঠিন হবে বলেই ওটাকে হিসেবে রাখিনি। চীন ছাড়া এই বিমান আর কেউই ব্যবহার করে না। এই বিমানের এপ্লিকেশন খুবই লিমিটেড হবে।

      ড্রোন পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার, কারণ এটা C4ISR-এর অংশ।

      Delete
    8. "ড্রোন পুরোপুরি ভিন্ন ব্যাপার, কারণ এটা C4ISR-এর অংশ।"

      details jananur onurudh roilo

      Delete
    9. ড্রোন যুদ্ধবিমানের ক্যাটাগরিতে এখনও পুরোপুরিভাবে আসেনি, যদিও কিছু ক্ষেত্রে আর্মড ড্রোন, স্টেলথ ড্রোন এবং রিফুয়েলিং ড্রোন-এর দেখা পাওয়া যাচ্ছে। ড্রোন এখনও জেট ইঞ্জিনের ফাইটার বিমানের সমকক্ষ হয়নি। জেট ফাইটারের সাথে পাল্লা দিতে যা যা দরকার, ড্রোন সেগুলি এখনও দেখাতে পারেনি। তাই এটি এখনও মূলতঃ C4ISR-এর অংশ। বর্তমান আলোচনায় একারণেই ড্রোনের বিষয়টা রাখিনি। তবে ভবিষ্যতে কোন লেখায় হয়তো থাকবে ইনশাআল্লাহ।

      Delete
  2. C4ISR ki? Details jananur onurudh roilo.

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা প্রযুক্তি যুগের একটা টার্ম, যা কিনা কিছু শব্দের সংক্ষেপ। তবে এখানে প্রতি নিয়ত নতুন নতুন শব্দ যোগ হচ্ছে। এক সময় এটা ছিল C2, এরপর হলো C3, এরপর C4, এরপর C4ISR । এখন মার্কিনীরা বলছে C4ISTAR । এখানে দু'টা লিঙ্ক দিলাম যেখানে আরও বিস্তারিত পাবেন।

      "C4ISR stands for command, control, communications, computers, intelligence, surveillance and reconnaissance. It is a phrase used mainly within the military and armed forces sector. When referring to C4ISR, military personnel know that the subject matter is to do with any one of the 'Cs' - Command, Communications, Control, Computers - hence the term C4, and ISR simply stands for Intelligence, Surveillance and Reconnaissance. In this category you can source suppliers providing C4ISR products and services, including radio and communications systems, satellites, command and control systems, communication systems, computing services, data services, display systems, electronics, headphones/headsets, information, intelligence and research, intercom systems, microwave receivers, navigation/mapping, radar, radio equipment, satellite systems, secure data transmission, signature management, surveillance technology, telecoms, telemetry systems, transceivers. visual systems, wiring and fittings."

      https://www.copybook.com/c4isr

      https://en.wikipedia.org/wiki/Command_and_control#Derivative_terms

      Delete