মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সহিংসতা শুরু হয়েছে। জাতিগত এই সহিংসতাকে ঔপনিবেশিক শক্তিরা জিইয়ে রাখছে এই এলাকাকে (বঙ্গোপসাগর এলাকা) নিয়ন্ত্রণে রাখতে। পরাশক্তি কখনোই চায় না যে বঙ্গোপসাগরে কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের আবির্ভাব হয়ে তার নিজের নিয়ন্ত্রণে থাকা কৌশলগত ব্যালান্সকে পরিবর্তন করে দেবে। ঠিক যখনই পরাশক্তি তার নিয়ন্ত্রণ হারাতে শুরু করে, ঠিক সেসময়েই সে কোন না কোন ঝামেলা পাকিয়ে তার নিয়ন্ত্রণ পূণপ্রতিষ্ঠা করতে চায়। মিয়ানমারের এই সমস্যাটাও ঠিক তেমনই। কিছুদিন পরপরই সেখানে জাতিগত সমস্যা শুরু হয়। এক্ষেত্রে সমস্যা শুরু হওয়াটা যতটা গুরুত্বপূর্ণ, তার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ হলো কখন এই সমস্যার আবির্ভাব হচ্ছে। মিয়ানমারের সরকার যে পরাশক্তির প্ররোচনায় রাখাইনে জাতিগত সমস্যা জিইয়ে রাখছে, তা বুঝতে বাকি থাকে না। এই কার্যকলাপে মিয়ানমারকে সমর্থন দিচ্ছে ভারত, যে কিনা এখন ভারত মহাসাগরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কৌশলগত মিত্র। সিকিম-ভুটান সীমান্তে চীনের রাস্তা নির্মাণে ভারতের বাধা দেয়া এবং এর ফলশ্রুতিতে ভারত-চীনের উত্তেজনা এবং বঙ্গোপসাগরে ভারত-মার্কিন নৌ-মহড়া “এক্সারসাইজ মালাবার-২০১৭” এই এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের তৎপরতার পরিচয় দেয়। তবে একইসাথে এই কর্মকান্ডগুলি বলে দিচ্ছে যে পরাশক্তি তার নিজ দেশে যে অস্থিরতায় রয়েছে, সেই একই অস্থিরতায় সে রয়েছে বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে তার নিয়ন্ত্রণ হারানো নিয়ে।
তবে এখানে শুধু পরাশক্তির কথা বললেই হবে না, মিয়ানমারের কথাও আলোচনা আসা উচিৎ। মিয়ানমারের সরকার হয়তো ভুলে যাচ্ছে যে তাদের কৌশলগত অবস্থান তাদের এধরনের প্রক্সি-যুদ্ধকে সমর্থন করে না। একটু খুঁটিয়ে দেখলেই বোঝা যাবে যে মিয়ানমার একখানা তাসের ঘরের উপরে দাঁড়িয়ে থেকে নৃত্য করছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমারের ভৌগোলিক সীমানার দিকে তাকালেই বোঝা যাবে যে মিয়ানমারের রাখাইন মিয়ানমারের বাকি অংশের সাথে যতটা না সংযুক্ত, তার চাইতে বেশি ভালোভাবে সংযুক্ত বাংলাদেশের চট্টগ্রামের সাথে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের মংডু শহরের সাথে মিয়ানমারের বাকি অংশের যোগাযোগের মূল মাধ্যম হলো মংডু-বুথিডুয়াং সড়ক। এই সড়ক গিয়েছে সুউচ্চ আরাকান পর্বতের মাঝ দিয়ে এবং কিছু স্থানে পাহাড় কেটে তৈরি করা টানেলের মাঝ দিয়ে। এই টানেল কোন কারণে বন্ধ হয়ে গেলে মংডুর সাথে যোগাযোগ রক্ষা করা মিয়ানমারের পক্ষে খুবই কঠিন হবে। শুধু তা-ই নয়, বুথিডুয়াং হয়ে যে রাস্তাটা কালাদান নদীর অববাহিকা বেয়ে দক্ষিণে চলে গিয়ে বাকি মিয়ানমারের সাথে যুক্ত হয়েছে, সেই রাস্তা থমকে দাঁড়িয়েছে সিতওয়ের উত্তরে বিরাট এক নদীর তীরে। মায়ু নদীর ঐ মোহনাতে কোন সেতু নেই, যা দিয়ে সহজে যানবাহন পার করা সম্ভব। আবার মংডু থেকে সমুদ্রের তীর ঘেঁষে দক্ষিণের রাস্তাটাও ঐ একই স্থানে এসে মায়ু নদীর মোহনায় থমকে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ বাংলাদেশের সাথে সীমান্ত এলাকায় সৈন্য সমাবেশ করতে মিয়ানমারের যে লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্কের উপরে নির্ভর করতে হয়, তা অন্যন্ত দুর্বল এবং অনাকাংক্ষিত পরিস্থিতি মোকাবিলায় একেবারেই অপ্রতুল।
রাখাইনের সিতওয়ে বন্দরের একপাশে যেমন মায়ু নদী, অন্যপাশে রয়েছে কালাদান নদী। কালাদান নদী ব্যবহার করে ভারত তার বিচ্ছন্নতাকামী মিজোরাম এবং মণিপুর রাজ্যের লাগাম টেনে রাখতে চাইছে। কোলকাতা থেকে পরিবহণ জাহাজ বঙ্গোপসাগর পাড়ি দিয়ে কালাদান নদী হয়ে উত্তরে যাবে এবং একটা পর্যায়ে মালামাল ল্যান্ড করাবার পরে ট্রাকে করে সেগুলি মিজোরামে নেয়া হবে। এভাবেই সিতওয়ের আশেপাশের এই নদী-বেষ্টিত অঞ্চলটা মিয়ানমারের জন্যে যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি ভারতের জন্যেও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। এই পুরো অঞ্চলটাই নদীর উপরে নির্ভরশীল এবং এই অঞ্চলের সাথে মিয়ানমারের বাকি অংশের যোগাযোগ ব্যবস্থা যারপরনাই খারাপ। সিতওয়ে বন্দর নৌ-অবরোধে পড়লে মিয়ানমারের পক্ষে মংডু ধরে রাখা প্রায় অসম্ভব। অথচ গোটা-দুই সাবমেরিনের মাধ্যমেই সিতওয়ে বন্দরের আশেপাশের এই এলাকাকে অবরোধে ফেলে দেয়া যায়। আর এরকম পরিস্থিতিতে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর পক্ষেও এই এলাকা নিয়ন্ত্রণে রাখাটা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। তার উপরে বাংলাদেশ-মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়ার মতো রাষ্ট্রগুলি মিয়ানমারের রাখাইন নীতির যেখানে ঘোর বিরোধী, সেখানে এই তিন দেশের নৌশক্তির কাছে মিয়ানমারকে অসহায়ই বলতে হবে। এই অসহায়ত্ব থেকে উদ্ধার পেতে মিয়ানমারকে আবারও তাদেরই (যুক্তরাষ্ট্র-ভারত) সরণাপন্ন হতে হবে, যারা রাখাইনের সমস্যা জিইয়ে রাখায় প্ররোচনা দিচ্ছে।
মংডু-বুথিডুয়াং রাস্তাখানি নিয়ে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে ব্রিটিশদের সাথে জাপানি সেনাদের যে যুদ্ধ হয়েছিল, তাতে এটা অন্ততঃ পরিষ্কার যে বিশাল উঁচু আরাকান পর্বত পাড়ি দিয়ে রাখাইন ধরে রাখাটা মিয়ানমারের পক্ষে চাট্টিখানি কথা নয়। কারণ মংডু মিয়ানমারের অভ্যন্তরের চাইতে বাংলাদেশের সীমানা থেকেই বরং বেশি কাছে অবস্থিত। মিয়ানমারকে দিয়ে রাখাইনে সমস্যা সৃষ্টি করার সময়ে মিয়ানমার সরকারকে কেউ পরামর্শ দেয়নি যে কতটা দুর্বল কৌশলগত অবস্থানে থেকে মিয়ানমার রাখাইনে এই নৃশংসতা চালিয়ে নিচ্ছে। তাদের বোঝা উচিত ছিল যে এই প্রক্সি একশনে তাদের লাভ তো কিছু হবেই না, বরং তাদের রক্তকে ব্যবহার করে মার্কিন-ভারতীয় গোয়েন্দারা নিজেদের কাজ হাসিল করে নেবে।
তার উপরে মিয়ানমার সরকার ভেবে দেখেছে কি, যে সিতওয়ে বন্দরে অবরোধের মুখে পড়ে এবং মংডুর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পুরো রাখাইনই যদি তাদের হাতছাড়া হবার উপক্রম হয়, তাহলে মিয়ানমারের কাচিন এবং কারেন বিদ্রোহীরা কি করবে? চীনের ভূমিকাই বা তখন কি হবে? রাখাইনে সমস্যা জিইয়ে রাখলে রাখাইন হারাবার সাথে সাথে মিয়ানমার নামের দেশটারই যে অস্তিত্ব থাকবে না, তা কি মিয়ানমার সরকার ভেবে দেখেছে? আশেপাশের শক্তিরা তখন মিয়ানমারকে ছিঁড়ে খাবে। মিয়ানমার সরকার ভারত-মার্কিন ক্রীড়নক হয়ে কাজ করছে এবং নিজেদের বিপদ ডেকে আনছে – এটা বোঝাবার মতো লোক সম্ভবত নে পি ডাউ-তে নেই।
ওদের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, বাংলাদেশের কোনো সরকার-ই ওদের সাথে লড়ার ঝুঁকিটা নিবে না। আর এই কথাটা ওরা খুব ভালো করেই জানে।
ReplyDeleteওদের ঠিক এই চিন্তাটাই হচ্ছে এই লেখার বিষয়বস্তু। কোন সরকার তাদের সাথে লড়বে না - এই চিন্তাখানা তাদের নিজেদের না; বরং যারা তাদের ঘাড়ে ধরে খারাপ কাজ করাচ্ছে, তাদের কাছ থেকে আসা। ঐসব কাজ করার জন্যেই তারা সর্বদা ঐ শক্তিগুলির কাছে দায়বদ্ধ থাকে এবং তাদের কথা শুনে চলে। মিয়ানমারের নিজের বুঝতে হবে যে বাইরের শক্তি তাদের অর্বাচীন জাতীয়তাবোধকে ব্যবহার করছে দূরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।
Deleteবাংলাদেশের কোনো সরকার-ই ওদের সাথে না লড়ার কারণ কি ??
Deleteকোন সরকারই যুক্তরাষ্ট্রের ইচ্ছার বিরুদ্ধে যেতে চায়নি এবং আকইসাথে ভারত-মার্কিন দালাল সুশীলদের কথা শুনে সামরিক বাহিনীকে শক্তিশালী করা থেকে বিরত থেকেছে।
Deleteআমরা কি রাখাইনের স্বাধীনতাকামীদের সাহায্য করতে পারি না??????
ReplyDeleteআপনার প্রশ্নের জন্যে ধন্যবাদ।
Deleteরাখাইনে স্বাধীনতার নাম করে জঙ্গিবাদ উস্কে দিচ্ছে মার্কিন ইন্টেলিজেন্স; আর তাদের সহায়তা দিচ্ছে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্স। মিয়ানমারের উপকূলে আরও একটা নতুন দেশ তৈরি করাটা বাংলাদেশের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য নয়। বরং এটা পরাশক্তির উদ্দেশ্য - যাতে বঙ্গোপসাগরে কোন শক্তিশালী রাষ্ট্রের জন্ম না হয়, সেটা নিশ্চিত করা। মিয়ানমারে সমস্যা লেগে থাকলে বাংলাদেশকে সর্বদা এখানে জড়িয়ে থাকতে হবে, যা একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র গড়ার পরিপন্থী। মিয়ানমারের মুসলিমদের দরকার একটা শক্তিশালী অভিভাবক, যে কিনা তাদের কথা চিন্তা করা ছাড়াও সুপারপাওয়ারের দুরভিসন্ধিমূলক উদ্দেশ্যকে নস্যাৎ করে দেবে। তাদেরকে আলাদা দেশ দিলে সেই দেশটা সারাজীবন অন্যের দাস হয়ে চলবে; বিশেষ করে তার দাস হয়ে চলবে, যে কিনা তাকে তথাকথিত "স্বাধীনতা" পাবার জন্যে উস্কে দিয়েছিল - যুক্তরাষ্ট্র। এভাবে যুক্তরাষ্ট্রের হাত ধরে স্বাধীনতা আসলে দাসত্ব; স্বাধীনতা নয়।
আশা করি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন।
চাইনা সেক্ষেত্রে কি ভূমিকা নেবে?
Deleteনিচের কমেন্টে আশা করি আপনার উত্তর পাবেন।
Deleteস্বাধীনতাকামীদের সাহায্য করা যদি জঙ্গিবাদে উস্কানি হয়, তবে এভাবে অনবরত কিছুদিন পর পর এই মানুষগুলোর উপরে অত্যাচারের মানে কি ? আপনার আগের একটা পোস্ট এই দেখেছিলাম যে মায়ানমার সামরিক দিক দিয়ে অনেক বেশী শক্তিশালী বাংলাদেশ থেকে। এই পোস্টে আপনি উল্লেখ করলেন যে, কিভাবে রাস্তা আটকিয়ে দিয়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সুবিধা নিতে পারে যেকোন যুদ্ধে। এমন উভয় সঙ্কটে এরূপ পরিস্থিতে থেকে উত্তরণের উপায় কি ? মানুষগুলোর উপর অত্যাচার কিভাবে বন্ধ করা যায় ? এর মানে কি আরাকান স্বাধীন রাষ্ট্র বাদে একমাত্র বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দ্বারা ইনভেশনকেই কি একমাত্রও সমাধান বলে মনে করেন ?
ReplyDeleteস্বাধীনতা অর্থ কি? রাখাইন যদি "স্বাধীন" হয়ে যায়, তবে কি আসলেই সে স্বাধীনভাবে তার রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক, সামরিক কর্মকান্ড সম্পাদন করতে পারবে? নাকি পশ্চিমা দেশগুলি এবং বৃহৎ প্রতিবেশী ভারতের উপরে নির্ভরশীল হতে বাধ্য হবে? রাখাইনের স্বাধীনতা তারাই চাইছেন যারা বাংলাদেশ এবং মিয়ানমারের মাঝে রাখাইন নামের আরেকটা দেশ তৈরি করে বাংলাদেশকে চিরকালের জন্যে মিয়ানমারের সাথে লাগিয়ে রাখার চিন্তা করছেন।
Deleteরাখাইনের মুসলিমদের স্বাধীনতা বা আলাদা দেশের দরকার নেই; তাদের দরকার অভিভাবকের। তারা বাংলাদেশের দিকে তাকায় অভিভাবক হিসেবে। বাংলাদেশকেও সেই মেসেজটাই মিয়ানমার সরকারকে দিতে হবে। "তুমি এদের গায়ে হাত তুললে তোমাকে আমি পঙ্গু করে দেবো" - এধরনের শক্ত বার্তা যেতে হবে মিয়ানমারের কাছে। মিয়ানমারের মুসলিমদের দায়িত্ব নেয়া মানে এ-ই নয় যে তাদের ভরণপোষণ বাংলাদেশ সরকারকে দিতে হবে। বরং এর অর্থ হচ্ছে মিয়ানমার সরকারকে এই মানুষগুলিকে সঠিক অধিকার দিতে বাধ্য করা।
আর হিসেব অনেকটাই পাল্টে গেছে গত কয়েক বছরে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ একটা রাষ্ট্র হতে চলেছে। আফ্রিকা, ইউরোপ এবং এশিয়াতে, এমনকি দক্ষিণ আমেরিকাতেও বাংলাদেশের পদদ্ধনি শুনতে পাচ্ছে মানুষ। এই ব্লগের আগের লেখাগুলি পড়লে এই ব্যাপারগুলি অজানা থাকার কথা নয়।
আর সবকিছু সামরিক দিক থেকে মোকাবিলা করা না গেলেও সামরিক শক্তি একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার, যা কিনা অনেকেই সমীহ করে চলে। বাংলাদেশ এটা বুঝতে পারছে, এবং সেই রাস্তাতেই এগুচ্ছে।
এমনকি দক্ষিণ আমেরিকাতেও বাংলাদেশের পদদ্ধনি শুনতে পাচ্ছে মানুষ।
Deleteki vhabe?give some reference
আর্জেন্টিনা থেকে বাংলাদেশের সয়াবিন আসে। ব্রাজিল থেকে আমাদের ৮৬% চিনি আমদানি হয়। চিলি থেকে আসে কপারের একটা অংশ, যা দিয়ে এদেশের সকল প্রকার ইলেকট্রিক্যাল তার এবং যন্ত্রপাতি তৈরি হয়। বাংলাদেশের ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ড ইকুয়েডরে জাহাজ রপ্তানি করেছে। রাজিলের নৌবাহিনীর সাথে আমাদের নৌবাহিনী বেশ কয়েক বছর ধরে লেবাননের উপকূলে কাজ করছে। এতদিনে ব্রাজিলের নৌবাহিনীর প্রায় সবাই বাংলাদেশ নৌবাহিনীর নাম জেনে গেছে। কাজেই যেদিন ব্রাজিলের কোন বন্দরে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজের ফ্লোটিলা শুভেচ্ছা সফরে যাবে, সেদিন সেখানে তারা পুরোনো অনেক বন্ধুকেই খুঁজে পাবে।
Deleteএর আগে ল্যাটিন আমেরিকা নিয়ে লেখাগুলি পড়তে পারেন।
http://koushol.blogspot.com/2016/10/argentia-messi-bangla-tiger.html
আর ল্যাটিন আমেরিকার অবস্থান দুনিয়ার ভূরাজনীতিতে কেন বেশি গুরুত্ব বহণ করেনা, সেটা বুঝতে এই লেখাগুলি পড়তে পারেন।
http://koushol.blogspot.com/2018/07/venezuela-colombia-ecuador-flag-similar.html
http://koushol.blogspot.com/2018/07/how-brazil-created-by-british.html
যদ্দূর জানি মিয়ানমারকে আমেরিকা ভারতের চাইতেও বেশি সাপোর্ট দিয়ে যাচ্ছে চীন। মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কোনো রেজ্যুলেশন পাশ হতে পারেনি শুধুই চীন এমনকি রাশিয়ার কারণে।ভারতও মিয়ানমারকে সাপোর্ট দিচ্ছে তা ঠিক।যেমন আমেরিকাও। কিন্তু সবার চাইতে চীনকেই অগ্রগামী মনে হচ্ছে।
ReplyDeleteআপনার এনালিসিস হচ্ছে পত্রিকার এনালিসিসের উপরে ভিত্তি করে; ভূরাজনৈতিক এনালিসিস-এর উপরে ভিত্তি করে নয়।
Deleteভারত এখন মিয়ানমারের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ সামরিক সাপ্লাইয়ার। সে মিয়ানমারের নৌবাহিনীকে ডেভেলপ করে যাচ্ছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে লাগানোর উদ্দেশ্যে। মিয়ানমার নৌবাহিনীর ফ্রিগেটের সোনার, রাডার এবং টর্পেডো ভারত দিচ্ছে। নিচের লিঙ্কগুলি দেখবেন দয়া করে।
http://thediplomat.com/2013/10/myanmar-to-import-india-developed-submarine-sonar-systems/
http://www.stopwapenhandel.org/node/1767
http://www.mizzima.com/news-domestic-regional/india-supply-lightweight-torpedoes-myanmar
মিয়ানমারের অভ্যন্তরে চীন তার প্রভাব রাখতে চাইবে। তাই সে তাকে অন্যান্য সমরাস্ত্র সরবরাহ করে যাবে, যা কিনা মিয়ানমারের বিদ্রোহী গ্রুপগুলির সাথে যুদ্ধ চালিয়ে যাবার জন্যে দরকার। চীন সেখানে তার ভূরাজনৈতিক খেলা খেলবে, যা বাংলাদেশকে প্রভাবিত করবে না। তবে মিয়ানমারের নৌশক্তি বৃদ্ধি বাংলাদেশকে সরাসরি প্রভাবিত করবে।
আর সর্বশেষে - অং সান সু কি হলেন মার্কিন-ভারতের দালাল। সুতরাং সু কি মিয়ানমারে থাকার সময় এটা মনে করার কারণ নেই যে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী আগের মতোই আছে। কারণ তারা ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের চাপে নতি স্বীকার করে সু কি-কে বেশকিছু ক্ষমতা হস্তান্তর করেছে এবং সামরিক বাহিনীতে সু কি-এর সমর্থক লোকদের স্থান দিয়েছে। মনে রাখবেন - সু কি-এর বাবাও কিন্তু মিয়ানমার শাসন করেছেন লৌহ-হস্তে।
আপনার লেখা গুলো বরাবরই আমার কৌতূহল মিটিয়ে থাকে। এটিও তাঁর ব্যাতিক্রম নয়।
ReplyDeleteএই লেখাটি পড়ে কয়েকটা প্রশ্ন আসছে আমার কাছে। যেমন
১)মার্কিনিদের এখানে যে স্বার্থ তা আসলে কি ধরণের?
২)ভারতের ঠিক কোন ধরণের স্বার্থ হাসিল হবে?
৩) এ ক্ষেত্রে চাইনার ভূমিকা কেন কোন কারণে মায়ানমারের পক্ষে যাবে?
৪) আলটিমেটলি কি এই গ্যাঞ্জাম স্বাধীনতা আন্দোলনের দিকে এগিয়ে যাবে?
৫) সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের ভূমিকা কি হতে পারে?
৬) মিয়ানমারকে উস্কানি দেবার পরেও ইন্ডিয়া কি প্রকাশ্যে বাংলাদেশ বা রেহিঙ্গাদের সমর্থন দেবে?
৭) কোন ভাবে বাংলাদেশ কি রেহিঙ্গাদের পক্ষে তাঁদের স্বাধীনতাতে সামরিক সমর্থন দিতে বাধ্য হবে?
৮) সম্ভাব্য যুদ্ধের ক্ষেত্রে তা কি বাংলাদেশের সীমানাতে পৌঁছতে পারে?
৯) ভারত কি সেই ক্ষেত্রে বাংলাদেশে যুদ্ধের রণাঙ্গন হিসাবে ব্যাবহার করবে?
১০) যুদ্ধের অজুহাতে সংসদ কি তাঁর মেয়াদের পরেও অতিরিক্ত সময় অবস্থান করবে বা ক্ষমতা দীর্ঘায়িত করার স্বার্থে কি আওয়ামীলীগ এই ফাঁদে পা দেবে?
১১) বাংলাদেশের হিল ট্রাকের পাহাড়ি স্বাধীনতাকামীরা সে ক্ষেত্রে কি ধরণের অবস্থান নেবে?
১২) উলফাকে নিষ্কৃয় করার বিনিময়ে বাংলাদেশ কেন ভারতের কাছ থেকে শান্তি বাহিনীকে নিষ্ক্রিয় করার দাবী আদায় করলো না ?
১২) ইসরাইলের কথিত সেকেন্ড জিউস ল্যান্ড সেটার কোন গুরুত্ব কি আছে এক্ষেত্রে?
১৩) রেহিংগাদের অঞ্চলের সাথে মূল মায়ানমারের দূরত্ব , মায়ানমারের দূর্বল জাইগা। কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে ক্রয় করা বার্মার টর্পেড কি এই সুযোগে আমাদের সাবমেরিনকে আঘাত করবে না? ( ওদের টর্পেড ভারত মূলত আমাদের সাবমেরিন ক্রয়ের পর মিয়ানমারকে প্রদান করে বাংলাদেশকে কৌশলে হুমকি দিল বলে আমার ধারণা।
১৪) কাপ্তাই জলবিদ্যুৎ প্রকল্প ও কাপ্তাই বাঁধ এবং চট্টগ্রাম বন্দরকে মায়ানমারের মিসাইল/ টর্পেড বা এই জাতীয় কোন দূরপাল্লার অস্ত্র দিয়ে আঘাত করা কি তুলনা মূলক সহজ নয়? বা হটাত একটা এয়ার এ্যটাকে আমাদের এই স্থাপনা গুলো ধ্বংস হবার সম্ভবনা কত টুকু? মায়ানমারের মাথামোটা জেনারেলরা এই দুটি স্থাপনা ধ্বংস করে দিতে আগে পিছে ভবিষ্যৎ নিয়ে ভাববে না নিশ্চিত।
এই পয়েন্ট গুলো যদি একটু বুঝিয়ে বলেন !
ধন্যবাদ
আপনার কমেন্টের জন্যে অনেক ধন্যবাদ।
Deleteপুরো ব্যাপারটা পরিষ্কার হবে যদি ভূরাজনৈতিক ব্যাপারগুলি পরিষ্কার হয়। সেটা পরিষ্কার না হলে অনেক প্রশ্ন আসতেই থাকবে।
এর আগের পোস্টগুলিতে বিস্তারতি রয়েছে যে কেন সুপারপাওয়ার বঙ্গোপসাগর, তথা দুনিয়ার কোথাও শক্তিশালী কোন রাষ্ট্রের আবির্ভাব দেখতে চায় না। এরধরনের শক্তিশালী রাষ্ট্রের আবির্ভাব ঠেকাবার প্রধানতম পদ্ধতি হলো ঝামেলা পাকিয়ে ব্যস্ত রাখা। যেটা সর্বদা একটা distraction-রূপে কাজ করে। বাংলাদেশের আশেপাশের সমস্যাগুলির উদ্দেশ্য একই - যেমন মিয়ানমারের সাথে সমস্যা, নেপাল মদেশী আন্দোলনের সমস্যা (এবং কাঠমুন্ডূ পর্যন্ত চীনের রাস্তা নির্মাণ), দোকলামে চীনের রাস্তা নির্মাণ নিয়ে সমস্যা, ইত্যাদি। এগুলি প্রত্যেকটা সমস্যাই বাংলাদেশকে বেকায়দায় ফেলবে এবং স্বাভাবিক উন্নয়ন ব্যাহত করবে। অর্থাৎ একটা শক্তিশালী রাষ্ট্র তৈরি হতে বাধা দেবে।
মিয়ানমারের মুসলিমদের দরকার অভিভাবক; স্বাধীনতা নয়; আশ্রয় নয়। স্বাধীনতা আর আশ্রয়ের কথা বলতে চায় শুরু তারাই, যারা এই সমস্যার সূত্রপাত ঘটিয়েছে (বিদেশী ইন্টেলিজেন্স)। স্বাধীনতা আর আশ্রয় - উভয়ই বাংলাদেশের জন্যে সমস্যা ডেকে আনবে। স্বাধীনতার কথা বললে বাংলাদেশের মাঝেও কিছুদিন পর ভারত-সমর্থিত কিছু গোষ্ঠী স্বাধীনতার কথা বলতে থাকবে।
সবচাইতে কাছের মুসলিম প্রতিবেশী হওয়ায় বাংলাদেশকেই এই মানুষগুলির দায়িত্ব নিতে হবে। এই নির্যাতিত মানুষগুলিকে আশ্রয় দেয়াটা সমাধান নয়। মনে রাখবেন যে প্যালেস্টাইনে বর্তমানে পঞ্চাশোর্ধ মানুষ রয়েছে যাদের জন্ম হয়েছে শরণার্থী শিবিরে - আমরা অবশ্যই সেটা চাই না। এই মানুষগুলিকে ভিটেমাটি-ছাড়া করা হয়েছে চরম অন্যায়ভাবে। তাদের দরকার অভিভাবক, যে দায়িত্ব নিয়ে মিয়ানমার সরকারকে বাধ্য করবে তাদের ন্যায্য সুবিধা দিতে। এই বাধ্য করার জন্যেই মিয়ানমারকে ভয় দেখাতে হবে। মিয়ানমারকে ভয় দেখাতে হলে তার পিছনের কলকাঠি-নাড়া ভূতগুলিকে (যাদের ইন্টেলিজেন্স বারংবার মিয়ানমারের পুলিশ-মিলিটারি হত্যা করে স্টেজ থেকে পালিয়ে যাচ্ছে) ভয় দেখাতে হবে। মিয়ানমারকে ব্যাক-আপ দিচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত। এদেরকে নিবৃত করার পদ্ধতি কি তাহলে?
পাকিস্তানের কাছ থেকে ২-৩ স্কোয়াড্রন JF-17 ফাইটার বিমান ইমার্জেন্সি বেসিসে ট্রান্সফার (অফ-দ্যা-শেলফ) করে নিয়ে আসা। তখন দেখা যাবে যে মিয়ানমার-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র কে কি করে। চীন এবং তুরস্কের কাছ থেকে অফ-দ্যা-শেলফ সাবমেরিন নিয়ে আসুন। মালয়েশিয়া-ইন্দোনেশিয়া-তুরস্ক-পাকিস্তানকে সাথে নিয়ে বঙ্গোপসাগরে 'লাইভ-ফায়ারিং' জয়েন্ট মিলিটারি এক্সারসাইজ করা দরকার।
রাখাইনের উপকূল থেকে তেলের পাইপলাইন কুনমিং পর্যন্ত গিয়েছে, যা কিনা স্ট্র্যাটেজিক মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করেছে। চীন রাখাইনে সমস্যা চাইবে না। বিশেষ করে বাংলাদেশ না চাইলে তো নয়-ই। যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত এই পাইপলাইনকে নিরাপত্তা সমস্যায় ফেলতে চাচ্ছে। চীন বাধা দেবে না।
মিয়ানমার-ভারত-যুক্তরাষ্ট্র ভয় পেলে আপনার বাকি দুশ্চিন্তাগুলি আপনাকে ভাবাবে না।
থ্যাংক্স ভাই, চোখ খুলে দেবার জন্য। আপনার এই কমেন্টটি এবং পোষ্টটি আমি ফেবুতে আমার ওয়ালে দেবো। এবং অবশ্যই কার্টেসি সহ। ফেবুতে যদি আপনি থেকে থাকেন, প্লিজ আমাকে একটু এড করে নেবেন। আপনার এক্টিভিটি মিস করতে চাই না।
ReplyDeleteধন্যবাদ আবারো। চমৎকার ভাবে চোখ খুলে দেবার জন্য।