Friday 12 March 2021

ভারতকে আবারও নিজ ছায়াতলে আনতে চাইছে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’

১২ই মার্চ ২০২১
চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ‘ভীতি’কে ব্যবহার করেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে। ঔপনিবেশিক সময় থেকেই ভারত এবং চীনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্রিটেনের কাছে কখনোই কমেনি। একারণেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চীন এবং ভারত উভয়কেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। ইইউ থেকে বের হয়ে যাবার সাথেসাথেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়ন অন্বেষণ করা থেকে তারা যে এক চুলও নড়েনি, তা পরিষ্কার। 


সারা বিশ্বে যখন করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিনের উৎপাদন ও প্রাপ্যতা নিয়ে আলোচনা চলছে, তখন শক্তিশালী দেশগুলি ভ্যাকসিনকে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বৃদ্ধির হাতিহার হিসেবে দেখছে। পূর্ব ইউরোপ, দক্ষিণ আমেরিকা এবং আফ্রিকাতে যখন পশ্চিমা দেশগুলি ভ্যাকসিন সরবরাহ করতে হিমসিম খাচ্ছে, তখন চীন এবং রাশিয়া এই সুযোগে প্রভাব বাড়িয়ে নিচ্ছে বলে মনে করছেন অনেক পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা। তবে ব্রিটেনের ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ঠান্ডা যুদ্ধের মতোই রাশিয়া এবং চীনের ভীতিকে জিইয়ে রেখে পশ্চিমারা শক্তিশালী একটা প্রত্যুত্তর দিতে চাইছে। নিজেদের মেডিক্যাল গর্বকে ধরে রাখতে পশ্চিমা দেশগুলিকে দ্রুত কাজ করতে হবে। তবে একইসাথে বলা হচ্ছে যে, ব্রিটেনের উচিৎ তাদের ভ্যাকসিনের সফলতাকে ভূরাজনৈতিক সফলতাতে রূপান্তরিত করা। উদাহরণস্বরূপ বলা হচ্ছে যে, ভারতের সাথে ব্রিটেনের একটা মুক্ত বাণিজ্য চুক্তি দুই দেশের বাণিজ্যকে ১’শ ৪০ বিলিয়ন ডলারে নিয়ে যেতে পারে, যা বর্তমানে ৩২ বিলিয়ন ডলারের মতো।

ব্রিটেনের প্রভাবশালী ‘স্পেকট্যাটর’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ঠান্ডা যুদ্ধ যখন তুঙ্গে ছিল, তখন বিশ্বের প্রায় শ’খানেক উন্নয়নশীল রাষ্ট্র জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনে নাম লেখায়; যারা যুক্তরাষ্ট্র বা সোভিয়েত ইউনিয়ন, কারুর পক্ষেই যাবার পক্ষপাতি ছিল না। তখন উভয় সুপারপাওয়ারই চেষ্টা করেছে এই দেশগুলিকে নিজেদের বলয়ে নিয়ে আসতে; বর্তমানেও সেটাই হচ্ছে। ঠান্ডা যুদ্ধের পর ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতায় চীন এবং রাশিয়াও চাইছে মাঝামাঝি থাকা এই দেশগুলিকে নিজেদের পক্ষে নিয়ে আসতে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমে আসে। চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিন কূটনীতি এরই অংশ। অপরদিকে ব্রিটেন আন্তর্জাতিকভাবে ভ্যাকসিনের প্রসার ঘটাতে ভারতকে ব্যবহার করছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ভারতের ‘সেরাম ইন্সটিটিউট’ প্রকৃতপক্ষে ব্রিটেনের অক্সফোর্ডের ডেভেলপ করা ভ্যাকসিনই তৈরি করছে। ব্রিটেন যখন নিজের তৈরি ভ্যাকসিন দিয়ে নিজস্ব জনগণকে রক্ষা করছে, তখন ব্রিটিশ ‘আশীর্বাদে’ ভারত দুনিয়াব্যাপী ভ্যাকসিন ছড়িয়ে দিচ্ছে। তবে লেখায় আরও বলা হচ্ছে যে, আসন্ন ‘ডি১০’ শীর্ষ বৈঠকে ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্রকে প্রমাণ করতে হবে যে, পশ্চিমাদের বন্ধুত্ব চীনের বন্ধুত্বের চাইতেও বেশি দামি।

‘ডি১০’ হলো অর্থনৈতিকভাবে উন্নত সাতটা দেশ ‘জি৭’এর একটা সম্প্রসারণ। ‘জি৭’এর দেশগুলি হলো যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ফ্রান্স, জার্মানি, ইতালি, কানাডা ও জাপান। এর সাথে ‘ডি১০’এর অধীনে যুক্ত করা হচ্ছে অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া এবং ভারতকে। ব্রিটেন চাইছে ২০২১ সালে ‘জি৭’ শীর্ষ বৈঠককে ‘ডি১০’ বৈঠকে রূপান্তরিত করতে। অনেকেই বলা শুরু করেছেন যে, ‘জি৭’ একটা পুরোনো চিন্তা; তাই এটাকে ‘ডি১০’এর মাধ্যমে প্রতিস্থাপিত করা উচিৎ। ‘ওয়াশিংটন পোস্ট’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ‘ডি১০’এর চিন্তাটা নতুন নয়। ২০০৮ সালে মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এর এশ জৈন এবং মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের প্রাক্তন পলিসি প্ল্যানিং ডিরেক্টর ডেভিড গর্ডন ‘ডি১০’এর ব্যাপারে কথা বলা শুরু করেন। তারা বলছিলেন যে, এখন এমন একটা সময়ে এসেছে, যখন পশ্চিমা লিবারাল আদর্শের দেশগুলি নিজেদের নেতৃত্ব ধরে রাখতে পারছে না। এমতাবস্থায় এই দেশগুলির উচিৎ একত্রে বসে কৌশল নির্ধারণ করা। এশ জৈন বর্তমানে ‘আটলান্টিক কাউন্সিল’এ ‘ডি১০ স্ট্র্যাটেজি ফোরাম’ দেখাশুনা করছেন; যার উদ্দেশ্য হলো এই দেশগুলির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা এবং বিশ্লেষকদের একত্রে নিয়ে এসে নীতি বিষয়ক কথাবার্তা চালিয়ে নেয়া।

‘ফরেন পলিসি’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’এর ফেলো এরিক ব্র্যাটেনবার্গ এবং ব্রিটিশ সাংবাদিক বেন জুডাহ বলছেন যে, এখন সময় এসেছে ‘জি৭’কে পিছনে ফেলে ‘ডি১০’কে নিয়ে এগিয়ে যাওয়া। তারা বলছেন যে, ‘ডি১০’ কোন চীন বিরোধী সংস্থা নয়। বরং এটা হলো পশ্চিমা গণতান্ত্রিক শাসনের প্রতি হুমকিস্বরূপ দু’টা বিশেষ সমস্যাকে সমাধানের একটা উপায়। এর মাঝে একটা হলো ‘ফাইভ জি’ বা পঞ্চম জেনারেশনের প্রযুক্তি; আরেকটা হলো অতি গুরুত্বপূর্ণ পণ্যের সাপ্লাই চেইন। এই উভয় সমস্যাই পশ্চিমা গণতান্ত্রিক দেশগুলির কেউ একা সমাধান করতে পারবে না। অপরপক্ষে ‘ডি১০’এর মাধ্যমে এই সমস্যাগুলিকে সমাধানে বেশ দ্রুত কাজ করা সম্ভব। এর মাধ্যমে ট্রান্স আটলান্টিক এবং ট্রান্স প্যাসিফিকের গণতান্ত্রিক দেশগুলিকে একটা কাঠামোর মাঝে এনে গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুগুলিকে কেন্দ্র করে দ্রুত কর্মমুখী একটা সমাধানে দিকে এগুনোর মাধ্যমে একাধারে যেমন সংস্থাটাকে একটা আলোচনা সভা বানিয়ে ফেলা থেকে বাঁচা যাবে, তেমনি চীনের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র ব্যবস্থা নেয়াকেও কঠিন করে ফেলা যাবে। তারা বলছেন যে, গণতান্ত্রিক দেশগুলির মাঝে সেতু তৈরি করার ক্ষেত্রে ব্রিটেনের গুরুত্ব যথেষ্ট। তারা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, ১৯৪৯ সালে ন্যাটো তৈরির সময় ব্রিটিশ সামরিক অফিসার হেস্টিংস ইসমে বলেছিলেন যে, ন্যাটোর দরকার রয়েছে সোভিয়েত ইউনিয়নকে বাইরে রাখতে, যুক্তরাষ্ট্রকে ভিতরে রাখতে, এবং জার্মানিকে দমিয়ে রাখতে। তেমনি ব্র্যাটেনবার্গ এবং জুডাহ বলছেন যে, ‘ডি১০’এর দরকার রয়েছে চীনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে, ভারতে কাছে রাখতে, এবং যুক্তরাষ্ট্রকে দৃঢ় রাখতে। তাদের কথায়, ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তাটা এখনও একটা কঙ্কাল; লন্ডনের জন্যে ‘ডি১০’ হলো এই কংকালের উপর পেশী যুক্ত করার একটা সোনালী সুযোগ।

চীন এবং রাশিয়ার ভ্যাকসিনের ‘ভীতি’কে ব্যবহার করেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ নিজেদের অবস্থানকে শক্তিশালী করতে চাইছে। ঔপনিবেশিক সময় থেকেই ভারত এবং চীনের অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্রিটেনের কাছে কখনোই কমেনি। একারণেই ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চীন এবং ভারত উভয়কেই নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চাইছে। বিশেষ করে ব্রেক্সিটের পর ভারত এবং চীনের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কের ব্যাপারে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারছে ব্রিটেন। ‘ফাইভ জি’ প্রযুক্তি এবং সাপ্লাই চেইনকে আলোচনায় এনে ব্রিটেন চীনের বিকল্প তৈরি নয়, বরং চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। অপরপক্ষে অক্সফোর্ডের ভ্যাকসিনের উৎপাদনে ভারতকে অংশীদার করে এবং ‘ডি১০’ গঠনের মাধ্যমে ভারতকে একটা বড় আন্তর্জাতিক প্ল্যাটফর্মের অংশ করে নিয়ে ব্রিটেন ভারতকে আবারও নিজের ছায়াতলে আনতে চাইছে। একইসাথে ব্রিটেন চাইছে চীনকে নিয়ন্ত্রণের খেলায় যুক্তরাষ্ট্র যেন একচ্ছত্রভাবে সিদ্ধান্ত না নিতে পারে। ইইউ থেকে বের হয়ে যাবার সাথেসাথেই করোনাভাইরাসের সংক্রমণে ব্রিটেনের অর্থনীতির ব্যাপক ক্ষতি হলেও ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়ন অন্বেষণ করা থেকে তারা যে এক চুলও নড়েনি, তা পরিষ্কার।

9 comments:

  1. গ্লোবাল ব্রিটেন কতটুকু সফল হতে পারবে বলে মনে করেন? বর্ত্মানে লিবেরাল ডেমোক্রেটিক সিস্টেমে ভেঙে পড়ছে, সঙ্গে কলোনিয়াল ইউকের তৈরি করা দেশ গুলির সীমানা গুলিও,বিশেষ করে মধ্যপ্রাচ্যে!

    ভারতে, বিজেপি আরএসএস এর হিন্দু রাস্ট্র- অখন্ড ভারত পরিকল্পনা কি গ্লোবাল ব্রিটেন এর সঙ্গে কি সাংঘর্ষিক?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্রিটেনের নিজস্ব সম্পদ খুবই কম। তাই তারা সর্বদাই অন্যের সম্পদের উপর নির্ভর করে নিজেদের সাম্রাজ্য গড়েছে। মুক্ত বাণিজ্যই হলো ব্রিটেনের এই সাম্রাজ্য গড়ার চাবি। আর সাম্রাজ্যের মূলে রয়েছে পুঁজিবাদী সেকুলার আদর্শ। সাম্রাজ্যকে টিকিয়ে রাখতেই তারা বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী সেকুলার আদর্শকে ছড়িয়েছে। পুঁজিবাদী আদর্শ টিকে থাকলেও এর নেতৃত্ব তারা হারায় যুক্তরাষ্ট্রের কাছে। বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী আদর্শের নেতৃত্ব পুনরায় ফিরে পাবার জন্যেই ব্রিটেন 'গ্লোবাল ব্রিটেন'এর চিন্তার আবির্ভাব ঘটিয়েছে।

      ব্রিটিশ সাধারণ জনগণ 'গ্লোবাল ব্রিটেন' নিয়ে চিন্তা করে না। তাই তাদের মাঝে এই চিন্তার বাস্তবতাটাই প্রশ্নবিদ্ধ। আবার পুঁজিবাদী আদর্শই যখন নিম্নগামী, তখন সেই আদর্শকে বিশ্বব্যাপী প্রতিষ্ঠিত করার জন্যে নিজেদের জীবনের মোহ ত্যাগ করাটা কঠিন। কারণ পুঁজিবাদী আদর্শই জীবনের প্রতি মোহ তৈরি করে।

      ভারতের বিজেপি সরকারের মূল সমর্থক হলো যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু যখন যুক্তরাষ্ট্রের নিজেরই অবস্থাই নিম্নগামী, তখন ভারতের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে টানাপোড়েন হওয়াটাই স্বাভাবিক। ব্রিটেন এই সুযোগটাই নিচ্ছে। দুই শতক ভারতের শাসনে থাকার পর ১৯৪৭ পরবর্তী ভারতেও কংগ্রেস সরকারের মাধ্যমে ব্রিটেন তার প্রভাব ধরে রেখেছিল।

      ভূরাজনীতিতে ব্রিটেন পুরোনো খেলোয়াড়। পশ্চিমা দুনিয়ার মাঝে ব্রিটেনই পুঁজিবাদী আদর্শের চ্যাম্পিয়ন। তাদের মতো ধূর্ত জাতি দুনিয়াতে দু'টা নেই। একারণেই তারা এত লম্বা সময় দুনিয়ার নেতৃত্ব দিয়েছে। বর্তমান দুনিয়ার বেশিরভাগ নিয়মই ব্রিটেনের তৈরি - এটা অনেকেই ভুলে যায়।

      Delete
  2. মুসলিমরা কি পাড়বে আর্দশ প্রতিষ্টা করার জন্য জীবনের মোহ ত্যাগ করতে। আগে একবার তো পেড়েছে আবার পারবে। ভাই আপনার লেখাগুলো অসাধারন। আপনার ব্লগের বেশির ভাগ লেখাই আলহামদুলিল্লাহ পড়েছি। আসলেই পশ্চিমা দখলকৃত মিডিয়ার যত সব অবাস্তব কথা। সবই যেন অবাস্তবতা

    ReplyDelete
    Replies
    1. পারবে কি না পারবে সেটা অন্য প্রশ্ন। যে ব্যাপারটা পশ্চিমাদের ভাবায় তা হলো মুসলিমরা তাদের নবী (সাঃ)কে অনুসরণ করতে চায়। আর সেটা করলেই কিন্তু পশ্চিমাদের বিপদ হবে। কারণ রাসূল (সাঃ) একটা অতি শক্তিশালী রাস্ট্রের ভিত গড়ে দিয়েছিলেন; যার কারণে মরক্কো থেকে ইন্দোনেশিয়া পর্যন্ত এখনও বেশিরভাগ জনগণ মুসলিম। যদিও মুসলিমদের সকল এলাকাই এখন সেকুলার আদর্শে শাসিত হচ্ছে, তথাপি রাসূল (সাঃ)কে অনুসরণ করার একটা প্রবণতা থাকায় মুসলিমদেরকে পশ্চিমারা বিশ্বাস করে না।

      ইউরোপ প্রায় ১৩'শ বছর মুসলিমদের মোকাবিলা করেছে নিজেদের সীমানায়। এরপর বাকি দুনিয়াতেও মুসলিমদের তারা শত্রু হিসেবে পেয়েছে যখন তারা উপনিবেশের মাধ্যমে নিজেদের সেকুলার আদর্শকে বিশ্বে ছড়িয়েছে। এই ইতিহাসগুলি তাদের রাতের ঘুম নষ্ট করে। একারণেই তারা সর্বদা ইসলামকে নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকে। ইসলামকে বাজেভাবে উপস্থাপন করার সকল চেষ্টাই তারা করেছে সেই লক্ষ্যে।

      তবে সারকথা হলো, মুসলিমরাই শুধু নয়, দুনিয়াব্যাপী সকলেই এখন পশ্চিমা আদর্শের প্রতি আকর্ষণ হারিয়ে ফেলছে। মানুষের দৈনন্দিন সমস্যার সমধান সেকুলার আদর্শ থেকে পাওয়া যাচ্ছে না। পেলেও তা নিয়ে মানুষ শান্তি পাচ্ছে না। করোনাভাইরাসের মহামারির মাঝে এই ব্যাপারটা বড় পরিসরে সামনে চলে এসেছে। যেকারণে বিকল্প খোঁজার যে প্রসেস শুরু হয়েছে, তা থামবে না। বিকল্প হিসেবে মুসলিমরা যে রাসূল (সাঃ)এর দেখানো পথের দিকেই যাবে, সেবিষয়ে পশ্চিমারা নিশ্চিত ছিল। একারণেই তারা আইসিসএর মতো ভুয়া প্রতিষ্ঠানের জন্ম দিয়ে ইসলামকে বাজেভাবে দুনিয়ার কাছে উপস্থাপন করতে চেয়েছে।

      Delete
  3. স্যার আপনার কথা মত samuel hanginton এর the clash of civilizations পড়লাম তিনি বলছেন ইসলাম হল একটি সভ্যতা যা কিনা পশ্চিমের বেচে থাকা চার সংশয়ে ফেলেছে পাচ নাম্বার বার কি হবে

    ReplyDelete
  4. শোনা যাচ্ছে যে বাংলাদেশ যুদ্ধ বিমান হিসেবে টাইফুন কিনতে পারে, যা দ্বারা বুঝা যাচ্ছে বাংলাদেশ পরোক্ষভাবে উতপাদক দেশের ডক্ট্রিন মেনে চলবে। এক্ষত্রে ভারত যদি গ্লোবাল ব্রিটেনের অন্যতম অংশীদার হয় তবে কি বাংলাদেশকে ভারতের ছায়ায় চলতে হবে????

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্রিটেন বা অন্য যেকোন আদর্শিক দেশের কাছ থেকে অতি গুরুত্বপূর্ণ সরঞ্জাম কেনার অর্থই হলো তাদের শর্ত মেনে চলা। এটা যদি যুদ্ধাস্ত্র হয়, তবে সেখানে গুরুত্ব হয় আরও বেশি।

      ব্রিটেন যে ভারতকে শতভাগ নিজের পক্ষে নিয়ে আসতে পারবে, তা নিশ্চিত করে বলা যায় না। তবে তারা চেষ্টার ত্রুটি করবে করবে না। দুইশত বছরের ঔপনিবেশিক শাসন এবং তার পরবর্তী অর্ধশতকের ব্রিটিশ সমর্থিত শাসনের ভিত বেশ খানিকটা শক্ত। তবে এর মাঝে পাকিস্তান (মূলতঃ) এবং বাংলাদেশের (কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ) কয়েক দশকের উত্থানের কারণে ভারতকে একমাত্র ব্রিটিশ প্রভাবে আনা কঠিন। ভারতে অনেকগুলি প্রদেশ রয়েছে। আর প্রত্যেকটা প্রদেশের আলাদা সরকার রয়েছে; যারা অনেক ক্ষেত্রেই কেন্দ্রীয় সরকারকে মেনে চলে না। ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি বেশ জটিল। দেশটার উপর একচ্ছত্র কারো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আগে যেমন কঠিন ছিল, এখন আরও বেশি কঠিন। এই অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণেই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে, ব্রিটেন ভারতের পরররাষ্ট্রনীতিকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।

      Delete
    2. সেটা তো ভবিষ্যৎ এর যদি কিন্তু এর বিষয়। আমি নির্দিষ্টভাবে উত্তর চাচ্ছি যে যদি হয়েই থাকে তবে কি বাংলাদেশকে ভারতের ছায়ায় চলতে হবে????

      Delete
    3. "দেশটার উপর একচ্ছত্র কারো নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা আগে যেমন কঠিন ছিল, এখন আরও বেশি কঠিন। এই অভ্যন্তরীণ জটিলতার কারণেই নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না যে, ব্রিটেন ভারতের পরররাষ্ট্রনীতিকে কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।"

      আশা করি এই কথাগুলি থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, ভারতের উপর একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তার কারুর পক্ষেই যেখানে সম্ভব হচ্ছে না, সেখানে ভারত কোন একটা দেশের ঝান্ডা বহণ করবে, সেটাও হলফ করে বলা যায় না। শুধুমাত্র এটা বলা যায় যে, যেসব বিষয়ে ব্রিটেন এবং আমেরিকা একমত সেসব বিষয়েই ভারত প্রভাব বিস্তার করতে পারবে। বাকিগুলি নয়।

      Delete