২১শে অক্টোবর ২০১৭
সুদানের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি...
আড়াই বছর আগে মধ্যপ্রাচ্যের সবচাইতে বড় প্রতিরক্ষা এক্সিবিটে (IDEX-2015) নিজেদের তৈরি করা সমরাস্ত্র নিয়ে আসে সুদান। ২০১৭ সালের ইভেন্টেও সুদান অংশগ্রহণ করে। সুদানের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (MIC)-এর তৈরি করা যেসব অস্ত্র ডিস্প্লে করা হয়, তার মাঝে রয়েছে -
১। 122 মিমি সেলফ-প্রপেল্ড হাউইটজার 'Khalifa & Khalifa-2'
২। 4x4 আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার 'Amir'
৩। 120 মিমি সেলফ-প্রপেল্ড মর্টার (tracked)
৪। 107mmx12 মাল্টিপল রকেট লঞ্চার (4x4) 'Taka'
৫। 4x4 আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার 'Sarsar & Sarsar-2'
৬। 4x4 Nissan লাইট ট্রাক (technical) with 12.7mm HMG
৭। 4x4 লাইট ট্রাক (technical) with 122mm MRL 'Zataka-2'
৮। আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার (tracked) with ATGM 'Khatim-3 & 4'
৯। ফাস্ট প্যাট্রোল বোট
এর বাইরেও সুদান যেসব সমরাস্ত্র তৈরি করে থাকে তার মাঝে রয়েছে -
১। Sub-machine gun 'Tihraga'
২। Type 80 7.62mm machine gun 'Mokhtar'
৩। Type 85 12.7mm heavy machine gun 'Khawad'
৪। MG3 7.62mm machine gun 'Karar'
৫। RPG-7 antitank weapon 'Sinar'
৬। 100mm ফিল্ড গান 'Nijoumi'
৭। 122mm howitzer 'Mahdi'
এবং আরও অনেক কিছু। লিস্ট অনেক বড়!
এবার একটু সমালোচনা করা যাক। সুদানের সমরাস্ত্রের অনেক কিছুই পুরোনো অস্ত্রের কপি। বাকিগুলি লাইসেন্স নিয়ে তৈরি করা অথবা লাইসেন্স ছাড়াই তৈরি করা। সুদান এগুলি তৈরি করতে পেরেছে সুদানের উপরে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞার ফলে। প্রকৃতপক্ষে বাধ্য হয়েছে নিজেরা তৈরি করতে। তবে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে এখানে রাশিয়া, ইউক্রেন, চীন, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান এবং আরও অনেকে সুদানকে টেকনিক্যাল সহায়তা দিয়েছে। সকলেই ব্যবসা করে নিয়েছে সেখানে। অর্থাৎ সামরিক প্রযুক্তি সুদান পেয়েছে - সহজেই হোক অথবা কষ্ট করেই হোক।
সুদানের 4x4 আর্মার্ড পার্সোনেল ক্যারিয়ার 'Sarsar-2'। বাংলাদেশ কি সুদানের সমালোচনা করবে, নাকি তাদের কাছ থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের মান-ইজ্জত বাঁচাবে (যা কিনা এখন মিয়ানমারের হাতে হারাতে বসেছে)? |
সুদান থেকে বাংলাদেশ শিখবে, নাকি সমালোচনাই করবে?
কিন্তু আলোচনার বিষয় হচ্ছে সুদানের মতো একটা দেশ তার ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপ করে ফেলতে পারলো, আর বাংলাদেশ এখনো মনে করছে যে বিশ্বের সবচাইতে উন্নতমানের আন্ডারওয়্যার তৈরি করতে পারলে সবচাইতে বেশি ডলার আয় করা যাবে, কারণ সেখানে ভ্যালু এডিশন বেশি! সুদানের জিডিপি ১১৬ বিলিয়ন ডলার, যা বাংলাদেশের অর্ধেকের মতো। জনসংখ্যা ৪ কোটির কিছু কম, অর্থাৎ বাংলাদেশের চার ভাগের এক ভাগও নয়। তবে এটা কি ঠিক নয় যে, বাংলাদেশের কাছে যদি সুদানের মতো একটা ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি থাকতো, তাহলে মিয়ানমার বাংলাদেশকে কিছুটা হলেও বেশি ভয় করতো?
রোহিঙ্গা সমস্যা দেখিয়ে দিচ্ছে যে কলোনিয়াল চিন্তা থেকে বের হতে কতটা কষ্ট করতে হচ্ছে বাংলাদেশের। এই দেশের সকল রাস্তা তৈরি করা হয়েছিল এমন একটা চিন্তা করে যে - এই জাতি কোনদিনও দাঁড়াতে পারবে না, তাই এদের চওড়া রাস্তা দেবার দরকার নেই; রিক্সার রাস্তা হলেই হবে। এদের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রির দরকার নেই; বাইরের দেশের উপরে নির্ভর করলেই চলবে। যখন কোন নিরাপত্তা ইস্যু হবে, তখন সে দৌড়ে যাবে বড় দেশগুলির কাছে; দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করবে সাহায্যের জন্যে।
পশ্চিমারা যখন সুদানকে ভেঙ্গে ফেলার চেষ্টা শুরু করে, তখনই সুদানের ডিফেন্স ইন্ডাস্ট্রি ডেভেলপ করা শুরু হয়। ১৯৯৩ সালে সুদানের মিলিটারি ইন্ডাস্ট্রি কর্পোরেশন (MIC)-এর জন্ম। বাংলাদেশের ঘোর কবে ভাংবে? রোহিঙ্গা সমস্যা কি কিছু শেখায়নি বাংলাদেশকে? নাকি এর চাইতেও বড় কোন ঘটনার জন্যে বসে রয়েছে সবাই?
No comments:
Post a Comment