Sunday 21 September 2014

ডিফেন্স জার্নালিজমঃ আমরা কোথায়?

২২ সেপ্টেম্বর ২০১৪

সামরিক বাহিনীর কাছাকাছি গিয়ে সাংবাদিকতা করতে হলে বাহিনীর আস্থা অর্জন করতে হবে। আস্থার অভাব থাকলে খবরের একটা গুরুত্বপূর্ণ উতস সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর তাতে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে জবাবদিহিতা।




বাংলাদেশের সাংবাদিকতায় অনেক কিছুই পরিবর্তন হয়েছে; অনেক ভালো কিছু হয়েছে; আবার অনেক খারাপ কিছুও চোখের সামনে চলে আসছে। আমি সবার পা মাড়ানোর চেষ্টায় যাবো না; শুধু একদিকেই যাবো - প্রতিরক্ষা ও জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক সাংবাদিকতা। এই বিষয়টাতে আসলে এখনো দেশে কোন ভালো সাংবাদিকের আগমণ ঘটেনি। এটা খুবই স্পেশালাইজড একটা বিষয়, তাই খুব সহজে এক্ষেত্রে ভালো লোক চলে আসবে, এটা চিন্তা করাটাও খুব একটা সমিচীন নয়। তবে এখানে একটা বড় ব্যাপার হলো দূরদৃষ্টি। খোলামনে সামনে দেখতে পারার ক্ষমতা কিন্তু অনেক কিছুকেই পালটে দিতে পারে। সবচেয়ে বড় যে পরিবর্তন এটা দিতে পারে, তা হলো শেখার আগ্রহ। মায়ের পেট থেকে বের হয়েই কেউ কোন বিষয়ে এক্সপার্ট হয়ে যায় না; শিখতে শিখতেই হয়। আমার মনে হয় এই শেখার আগ্রহতেও ঘাটতি রয়েছে এই ধরনের সাংবাদিকতায়। যারা এসব বিষয়ে লিখছেন বা রিপোর্ট করছেন, তাদের লেখা দেখে মনে হয় যে কেউ জোর করে তাদের সেগুলি লেখাচ্ছে। নিজের ইচ্ছা না থাকলে কোন কিছু নিয়েই ভালো কোন পর্যায়ে পোঁছানো সম্ভব নয়। তেমনই কয়েকটি সাংবাদিকতার উদাহরণ নিয়ে আজকের এই লেখা। তাহলে এই লেখার সাথে জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক কি? বিরাট সম্পর্ক! বহু মানুষ এইসব লেখা পড়ে প্রভাবিত হবে। আর যদি বি-গ্রেডের লেখা পড়ে কেউ প্রভাবিত হয়, আর সেটা যদি জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক কোন লেখা হয়, তাহলে সেটা আসলেই চিন্তিত হবার বিষয়। 

কাটতির অপব্যবহার!

সেদিন একটা বিশাল কাটতির পত্রিকার প্রথম পাতায় দেখলাম বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন ক্রয় নিয়ে লেখা হয়েছে। এরকম রিপোর্ট আমরা এর আগেও বেশ কিছু দেখেছি। রিপোর্টটির ভাষ্য ছিল কিছুটা সামরিক বাহিনী বিমুখ। সেটা কি খারাপ কিছু? বিমুখ হতেই পারে; কেউ হয়তো যুদ্ধাস্ত্র কেনাটা পছন্দ না-ই করতে পারেন। তাতে সমস্যা দেখি না। দুনিয়ার সব যায়গাতেই এধরণের মানুষ রয়েছে। তবে এক্ষেত্রে ব্যাপারটা কিছুটা অন্যদিক থেকে দেখতে হবে। পত্রিকার প্রথম পাতায় কোনরকম একটা রিপোর্ট করলে কিছু বলতেই হয়। রিপোর্ট কতটুকু দায়সাড়া ছিল, সেটার প্রমাণ মেলে একটা ছোট্ট তথ্য থেকে। রিপোর্টে লেখা হয়েছে যে নৌবাহিনী সাবমেরিন পাচ্ছে ২০১৮ সালে। কিন্তু অল্প একটু গুগল সার্চ করলেই তো সে জানতে পারতো যে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মন্ত্রী, উপদেষ্টা এবং নৌবাহিনী প্রধান আলাদা আলাদাভাবে ২০১৪ সালেই বলেছেন যে আমরা সাবমেরিন পেতে যাচ্ছি ২০১৫ সালে। রিপোর্টে সবথেকে বেশি প্রাধান্য পেয়েছে সাবমেরিনের বয়স - ২৪ বছর এবং এর মূল্য - ১৫০০ কোটি টাকা। আর একইসাথে সাবমেরিন কেনাটা জরুরি কিনা সেটা প্রশ্ন করা হয়েছে। আর এই প্রশ্নের উত্তর উদ্ঘাটন করতে উদ্ভট সব সাক্ষাতকারের আবির্ভাব ঘটেছে, যেখানে বীজ বপন করা হয়েছে সন্দেহের। বিষয়টা সম্পর্কে জানেন এমন কোন লোকের সাথে কথা বলা হয়নি, অথবা বলা হয়েছে যে সেটা সম্ভব হয়নি। রিপোর্টার সাবমেরিন কি ও কেন - সেটা আসলেই জানেন না। এবং সেটার উত্তর খোঁজার খুব একটা ইচ্ছেও তার ছিল বলে মনে হয়নি। (সাবমেরিন কেন দরকার সেটা আগের একটা পোস্টে লিখেছি, তাই আজকে আর লিখছি না।) তাই একটা ভাসা-ভাসা ধারণা নিয়ে রিপোর্ট শুরু করে ওভাবেই শেষ করেছেন তিনি। এখানে উল্লেক্ষ্য যে এর আগেও আমরা এধরনের দায়সাড়া রিপোর্ট দেখেছি। আরেকটি ইংরেজি পত্রিকায় লেখা হয়েছিল যে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর সাবমেরিন চীন বা আমেরিকা থেকে আসার সম্ভাবনা রয়েছে। আমেরিকা থেকে হতেই পারে। কিন্তু এখানে বাগড়া হলো 'অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন। এর মানে কি? এর মানে হচ্ছে যেটি অলরেডি তৈরি এবং ব্যবহারে আছে; মানে নতুন করে বানাতে হবে না। একটা নতুন সাবমেরিন বানাতে ৪-৫ বছর লেগে যাবে এবং দামও বেশি হবে। একটা অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন এখনই পাওয়া যাবে। এখানে যে ব্যাপারটা রিপোর্টার একেবারেই জানেন না তা হচ্ছে গত ৫০ বছরে আমেরিকা পারমাণবিক সাবমেরিন ছাড়া আর কোন সাবমেরিন বানায়নি। তাহলে বাংলাদেশ কি আমেরিকার কাছে তাদের পারমাণবিক অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিন আশা করছিলো?? ঠিক এই ব্যাপারটাই পত্রিকার অনলাইন ভার্সনে আমি তুলে ধরার পরে তারা উত্তর দিলেন যে তারা অফ দ্যা শেলফ' সাবমেরিনের কথা বলেছেন, নিউক্লিয়ার সাবমেরিনের কথা বলেননি। পরিষ্কার বোঝা গেল যে পত্রিকার সংশ্লিষ্টদের অফ দ্যা শেলফ'-এর অর্থ জানা নেই! কাজেই আমার পরবর্তী কমেন্টের কোন উত্তর তাদের কাছে ছিল না। 

জাতীয় নিরাপত্তার বিষয়গুলি নিয়ে কোন ধরনের আগ্রহ না থাকলে সেক্ষেত্রে সাংবাদিকতার কোন মানেই হয় না। কোন বিষয়ে আগ্রহ না থাকলে সেই বিষয়ে বেশিদূর যাওয়া কোনদিনই সম্ভব নয়।


মৃত্যুঞ্জয় মজুমদার

এই পত্রিকাগুলিকে বারংবার লেখা হচ্ছে যে জাতীয় নিরাপত্তার কথা বলে সামরিক বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সাথে কেউ কথা বলছেন না। তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে এই একই সামরিক সদস্যরা কি করে বিদেশী ডিফেন্স ম্যাগাজিনে বহুল তথ্য দিয়ে সাক্ষাতকার দিচ্ছেন? সমস্যাটা তাহলে অবশ্যই জাতীয় নিরাপত্তার নয়; অন্য কোথাও। একটা উদাহরণ দিই। আমেরিকার প্রেসিডেন্ট যখন হোয়াইট হাউজ-এ সাংবাদিক সন্মেলনে কথা বলেন, তখন তিনি প্রত্যেক সাংবাদিককে নাম ধরে ডাকেন। অর্থাৎ মার্কিন রাষ্ট্রপতির সাথে ওই সাংবাদিকদের একটা ভালো সম্পর্ক হয়ে গেছে। এই সম্পর্কের সূত্র ধরেই তারা প্রেসিডেন্টের সাথে বারংবার কথা বলতে পারবেন। তারা জানেন কি করে একটা সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হয়। তারা এ-ও জানেন যে এই সম্পর্কে একবার চির ধরলে তাদের সংবাদ পাবার একটা গুরুত্বপূর্ণ স্থান তাদের জন্যে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যাবে। আমাদের দেশে সামরিক বাহিনীর লোকেদের সাথে সাংবাদিকদের সেই সম্পর্কটা হয়নি। সম্পর্কোন্নয়নে কারুরই শক্ত ভূমিকা ছিল না কখনো। আর এই ধরনের বি-গ্রেডের রিপোর্টের কারণে এই সম্পর্ক যদি উন্নতির পথে যাওয়া শুরুও করে, তবু মুখ থুবড়ে পড়বে। যে মানুষটা আপনার বিষয় সম্পর্কে বিন্দুমাত্র জ্ঞান রাখেন না এবং অসংলগ্ন প্রশ্ন করে আপনাকে বিব্রত করার চেষ্টায় থাকবেন তার সাথে আপনি কখনোই কথা বলতে চাইবেন না। আন্তর্জাতিক ডিফেন্স জার্নালিস্ট মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারকে নৌবাহিনী প্রধান সাক্ষাত দিয়েছেন কিছুদিন আগেই, যেখানে তিনি নৌবাহিনীর বর্তমান অবস্থা থেকে শুরু করে ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়েও বিষদ আলোচনা করেছেন। আসলে মজুমদার নিজের যোগ্যতা প্রমাণ করেছেন বলেই নৌবাহিনী প্রধান তাকে সময় দিয়েছেন; গভীরে গিয়ে আলোচনা করেছেন, যদিও তিনি বাংলাদেশী নন। তিনি এমন কিছু তথ্য তার সাথে শেয়ার করেননি যাতে বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তা বিঘ্নিত হতে পারে। এই ধরনের সাক্ষাতকার নেওয়ার মতো যোগ্যতা আমাদের দেশের বর্তমান কোনো সাংবাদিকের নেই। 

সামরিক বাহিনীর সাথে বেসামরিক মানুষের পার্থক্য আসলে খুব বেশি কিছু নয়। উভয়েই রক্তমাংসের মানুষ। সেতুবন্ধন খুব বেশি দূরে কখনোই ছিল না। শুধু ইচ্ছার অভাব।


আসলেই কি এতটাই দূরত্ব?

এখানে মার খেয়ে যাচ্ছে জবাবদিহিতা। ডিফেন্সের বড় বড় কেনাকাটার ব্যাপারে স্বচ্ছতা থাকছে না। আমাদের নেই কোন প্রতিরক্ষা নীতি। কাজেই কোন জিনিসটা কেন কেনা হচ্ছে, সেটার কোন আলোচনা নেই। আমাদের পার্শবর্তী ভারতে সাবমেরিন ফ্লিটের ভবিষ্যত নিয়ে আলোচনার ঝড় বইছেতারা সবাই চাচ্ছেন দেশের প্রতিরক্ষা জোরদার হোক; তাই সবাই মতামত দিতে চাচ্ছেন। এভাবে তাদের জবাবদিহিতা বাড়ছে। অপরদিকে আমাদের দেশে ডিফেন্স সাংবাদিকতার প্রসার না হওয়ায় আমরা আরও পিছিয়ে যাচ্ছি। সাংবাদিকের প্রথম প্রশ্নই যদি হয় টাকা-পয়সা নিয়ে, তাহলে তারা যে পিছিয়ে যাবেন সেটা বলে দিতে হবে না। প্রথম প্রশ্ন শুনেই তারা দরজা বন্ধ করে দিচ্ছেন। আমার বহু বছরের বাজার গবেষণার অভিজ্ঞতায় বলতে পারি যে একটা মানুষকে যদি তার আয় বা টাকা-পয়সা সম্পর্কে কোন কথা জিজ্ঞেস করতে হয়, তাহলে সেটা করতে হয় সবশেষে; কারণ সেখানেই ইন্টারভিউ বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর বদ্ধ দুয়ারের দু'পাশে বসে সম্পর্ক হয় না। কিন্তু দেশের স্বার্থে এইক্ষেত্রে সম্পর্ক প্রতিষ্ঠা ছাড়া গত্যন্তর নেই। আমরা আজকাল মাঝে মধ্যে সামরিক বাহিনীর পদস্থ কর্মকর্তাদেরকে টেলিভিশনের টক শো-তেও দেখেছি। সিভিলিয়ান পোষাকে তাদেরকে আসলেই অন্যান্য সাধারন মানুষের মতনই লেগেছে। দেশের উচ্চ-শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলিতে আজকাল অনেক সামরিক অফিসারদের দেখা যায়। তাদের সাথে ব্যক্তিগতভাবে আমার আলাপও হয়েছে। প্রতিবারই আমার মনে হয়েছে যে তারা আমাদেরই মতো রক্তমাংসের মানুষ। আমরা যেভাবে চিন্তাভাবনা করি, তারাও একই রকম। সামরিক বাহিনী মানেই ব্যারাকের বাইরের দুনিয়া থেকে আলাদা - এটা আজকাল একেবারেই বলা যাবে না। এটা ইন্টারনেটের যুগ। অনেকেই সামরিক বাহিনীর সদস্যদের ব্যারাকের বাইরে দেখতে চান না; আবার এও অভিযোগ করেন যে তারা বেসামরিক মানুষকে বোঝেন না এবং সুযোগ পেলেই ছোট করে দেখার চেষ্টায় থাকেন। কিন্তু যদি তা-ই হবে, তাহলে সামরিক বাহিনীর অফিসাররা বিজনেস ডিগ্রী নিয়ে চাকুরি ছেড়ে বেসরকারি দুনিয়ায় যাবার প্রচেষ্টায় থাকতেন না। তারা যদি 'সুপেরিয়র'ই হতেন, তাহলে তারা বেসামরিক 'ইনফেরিয়র' জীবনে যাবার চেষ্টায় রত থাকতেন না। ঐ যে বলেছি, তারাও রক্ত-মাংসের মানুষ; তারাও তাদের ক্যারিয়ার নিয়ে ভাবেন; তাদের সন্তানদের কোন স্কুলে পড়াবেন সেটা নিয়ে ভাবেন; ভবিষ্যত নিয়ে ভাবেন। সামরিক আর বেসামরিক এই দুনিয়ার মাঝে ব্রিজ তৈরিটা খুব কঠিন নয়। এখানে বহু কাঠ-খড় পুড়িয়ে পদ্মা ব্রিজ বানাতে হবে না; ছোট্ট একটা কালভার্টই যথেষ্ট।


আমাদের মৃত্যুঞ্জয় কোথায়?

দেশের জন্যেই সামরিক বাহিনী - এটা সকলেরই অনুধাবন করাটা জরুরি। দেশের মানুষ যেমন তাদের কষ্টার্জিত অর্থের বিনিময়ে টিকিয়ে রাখছে এই বাহিনী, ঠিক তেমনি এই দেশের মানুষের কষ্টার্জিত স্বাধীনতাকে টিকিয়ে রাখার গুরু দায়িত্ব পড়েছে এই বাহিনীর উপরেই। একে অপরকে ছাড়া চলতে পারে না। এই চিরসত্যগুলিকে মনে করিয়ে দেবার জন্যেই দরকার জবাবদিহিতা। আর তাতেই দেশের মানুষ আর সামরিক বাহিনীর মাঝে তৈরি হবে সেই সেতু, যেই সেতুর প্রকৃতপক্ষে কোন দরকারই পড়তো না যদি আমাদের রাজনীতিকেরা গত ৪৩ বছর ধরে ঠিক কাজটি করতেন। এখন আর পেছনে ফিরে যাবার সময় নেই। বিশ্বের উন্নত দেশগুলির মতো আমরাও চাই সামরিক আর বেসামরিক সমাজের মাঝে কোন বিভক্তি না থাকুক। এই বিভক্তি সবসময়ই দেশকে করেছে দুর্বল; আন্তর্জাতিক প্রতিদ্বন্দীদের সুযোগ দিয়েছে আমাদের ঘাড়ের উপরে চড়ে বসতে। তাদের এই অশুভ প্রয়াসকে সমূলে উতপাটনের জন্যেই আমাদের এই সেতু তৈরি করতে হবে। এই সেতুর নির্মাতা হতে হবে এমন একজন (বা একাধিক) যিনি সবাইকে অন্তত সন্মান করতে জানেন। বেসামরিক নাগরিকদের অধিকার বুঝতে পারাটাও হতে হবে তার বাধ্যতামূলক যোগ্যতা। আর সামরিক বিষয়ে জ্ঞান থাকাটা হবে তার অতিরিক্ত যোগ্যতা। আমরা দেখতে চাই যে আমাদের বাহিনী প্রধানেরা মৃত্যুঞ্জয় মজুমদারদের সাক্ষাতকার দেবার চাইতে আমাদের দেশের সাংবাদিকদের সাক্ষাতকার দিতেই যেন বেশি সাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।

No comments:

Post a Comment