গত ৫ই ফেব্রুয়ারি হোয়াইট হাউজে ইস্রাইলি প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহুর সাথে বৈঠকের পর এক যৌথ সংবাদ সন্মেলনে কথা বলতে গিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন যে, বিশ্বের বিভিন্ন রাষ্ট্র, যাদের অন্তরে মানুষের জন্যে ভালোবাসা রয়েছে, তারা গাজার ১৮ লক্ষ মানুষের বসবাসের জন্যে ব্যবস্থা তৈরি করতে পারে। এটা একটা বা অনেক স্থানেও হতে পারে। তবে সেখানে মানুষ শান্তিতে এবং আরামে থাকতে পারবে। এই মুহুর্তে ফিলিস্তিনিরা আবারও গাজায় ফেরত যেতে চায়, কারণ তাদের যাবার আর কোন বিকল্প স্থান নেই। গাজা এখন একটা ধ্বংসস্তূপ; যেখানে সকল বাড়ি ধ্বংসপ্রাপ্ত। এই কর্মকান্ডের অর্থায়ন করতে পারে পার্শ্ববর্তী সেসকল রাষ্ট্র, যাদের প্রচুর সম্পদ রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবে এবং মালিকানা নেবে। যুক্তরাষ্ট্র গাজা থেকে সকল বিস্ফোরক সরিয়ে ফেলবে এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবন সরিয়ে পুরো এলাকা সমান করে সেখানে অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রতিষ্ঠা করবে; যেখানে অত্র অঞ্চলের বহু মানুষের থাকার ব্যবস্থা হবে এবং কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হবে। গাজার জনগণ যদি গাজায় ফেরত যায়, তাহলে সেখানকার অবস্থা আগের মতোই থেকে যাবে। ট্রাম্পের এই বক্তব্যের পরপরই বিশ্বজুড়ে ধিক্কার শুরু হয়ে গেছে। শুধুমাত্র ইস্রাইল সরকার ট্রাম্পের কথার প্রশংসা করেছে। হোয়াইট হাউজ মুখপাত্র ক্যারোলাইন লীভিট সাংবাদিকদের বলেন যে, এই মুহুর্তে গাজা বসবাসযোগ্য নয়। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প গাজার পুনর্নির্মাণের কথা বলেছেন। লীভিট এবং মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব মারকো রুবিও যখন ট্রাম্পের কথার ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে হিমসিম খাচ্ছিলেন, তখন ৬ই ফেব্রুয়ারি ট্রাম্প আবারও বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্র কোন মার্কিন সেনা না পাঠিয়েই গাজার নিয়ন্ত্রণ নিতে পারবে। তিনি সোশাল মিডিয়া 'ট্রুথ সোশাল'এর এক বার্তায় বলেন যে, এই অঞ্চলে ফিলিস্তিনিদেরকে আরও নিরাপদ এবং সুন্দর স্থানে থাকার ব্যবস্থা করা যাবে। ট্রাম্প প্রশাসনের কর্মকর্তারা যখন বলছেন যে, গাজা থেকে ফিলিস্তিনিদেরকে অস্থায়ীভাবে সরিয়ে নেয়া হবে, তখন তার পরিকল্পনার ব্যাপারটা পরিষ্কার করতে ১০ই ফেব্রুয়ারি মার্কিন মিডিয়া 'ফক্স নিউজ'এর সাথে এক সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন যে, গাজা থেকে চলে যাওয়া ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফেরত আসার আর কোন অধিকার থাকবে না।
‘সিএনএন'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, গাজার অধিবাসীদের সাথে তারা কথা বলে বুঝতে পেরেছেন যে, ফিলিস্তিনিরা গাজা ছেড়ে যেতে চান না। রিজিক আবু-সিত্তা নামের একজন ফিলিস্তিনি বৃদ্ধা বলছেন যে, তার সকল সন্তানদের বাড়িঘর ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। তার নিজের অর্ধ-ধ্বংসপ্রাপ্ত বাড়ির ভেতর এখন বৃষ্টির পানি এবং ঠান্ডা বাতাস ঢুকছে। কিন্তু এরপরেও তিনি গাজা ছেড়ে যেতে চান না; যদি তাকে তাঁবুতে থাকতে হয়, তাহলেও তিনি গাজায় থাকবেন। এমনকি তারা যদি তাকে থাকার জন্যে প্রাসাদও দেয়, তাহলেও তিনি গাজা ছেড়ে যাবেন না। সামি রামাদান নামের আরেকজন বৃদ্ধ বলছেন যে, তিনি তার নিজের জমিতে মৃত্যুবরণ করতে চান। তিনি গাজায় জন্মেছেন; এখানেই পড়াশোনা করেছেন; এখানেই সারা জীবন কাটিয়েছে; তিনি এখানেই বিয়ে করেছেন এবং তার সন্তানরাও এখানেই জন্ম নিয়েছে। তিনি বলছেন যে, যা কিছুই ঘটুক না কেন, তিনি কখনোই এই ভূমি ছেড়ে যাবেন না। 'ডয়েচে ভেলে'কে গাজার একজন মহিলা বলেন যে, গাজা ছেড়ে যাওয়ার চাইতে এখানে মারা যাওয়া উত্তম। কারণ গাজা ছেড়ে গেলে তাদের দেশ, ভূমি এবং বাড়ি কোনটাই থাকবে না।
ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কেয়ার স্টারমার সরাসরি ট্রাম্পের সমালোচনা করেনি। ব্রিটিশ পার্লামেন্টে তিনি বলেন যে, গাজার অধিবাসীদের অধিকার রয়েছে তাদের বাড়িতে ফেরত যাবার এবং তাদের বাড়িঘর নতুন করে তৈরি করার। ব্রিটিশদের উচিৎ 'টু-স্টেট সলিউশন'এর বাস্তবায়নে গাজার অধিবাসীদের সহায়তা প্রদান করা। অপরদিকে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শোলজ এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে বলেন যে, গাজার অধিবাসীদেরকে অন্যত্র সরিয়ে নেয়াটা কিছুতেই মেনে নেয়া যায় না এবং এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন। এক যৌথ বিবৃতিতে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ এবং মিশরের প্রেসিডেন্ট আব্দেল ফাত্তাহ এল-সিসি বলেন যে, গাজা বা পশ্চিম তীরের বাসিন্দাদের জোরপূর্বক স্থানান্তর মেনে নেয়া যায় না। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লঙ্ঘন এবং 'টু-স্টেট সলিউশন'এর জন্যে বাধা। এবং একইসাথে এটা মিশর ও জর্দানের জন্যে প্রধান অস্থিতিশীলতার শক্তি হিসেবে কাজ কবে। ফরাসি পররাষ্ট্র দপ্তর থেকেও একইরকম বার্তা দেয়া হয় এবং সেই বার্তাতেও ট্রাম্পের সরাসরি সমালোচনা করা হয়নি।
‘টু-স্টেট সলিউশন'এর ভবিষ্যৎ কি?
'ডয়েচে ভেলে'র সাথে সাক্ষাতে ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদ মুস্তফা বারঘুতি বলছেন যে, ট্রাম্প কোন খরচ না দিয়েই গাজার ভূমি চুরি করতে চাইছেন। এবং একইসাথে তিনি খুব সম্ভবতঃ গাজার ৫৪ বিলিয়ন ডলার সমমূল্যের গ্যাসফিল্ড দখল করার স্বপ্ন দেখছেন। যখন ট্রাম্প বলছেন যে, গাজা বসবাসযোগ্য নয়, তখন প্রশ্ন করতে হবে যে, কে গাজাকে বসবাসের অনুপযোগী করলো? এবং কোন অস্ত্র দ্বারা গাজাকে ধ্বংস করা হয়েছে? আমেরিকার সরবরাহকৃত ৮৬ হাজার টন বোমার আঘাতে ইস্রাইলিরা সবচাইতে অমানুষিকভাবে গাজাকে ধ্বংস করেছে। ১৯৪৮ সালে ইস্রাইল ফিলিস্তিনের ৭০ শতাংশ জনগণকে ঘরছাড়া করলেও ফিলিস্তিনিরা তাদের ভূমি ছেড়ে যায়নি। এবং ইস্রাইল কখনোই বাস্তুচ্যুত ফিলিস্তিনিদেরকে তাদের বাড়িঘরে ফেরত যেতে দেয়নি। তারা ৯২০টা সামরিক চেকপয়েন্টের মাধ্যমে পশ্চিম তীরের জনগণের চলাচলে বিঘ্ন ঘটাচ্ছে। কাজেই যখন ইস্রাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু বলছেন যে, গাজাবাসীদের যারা চলে যেতে চান, তার চলে যেতে পারেন; আর যারা পরে ফেরত আসতে চান, তারা ফেরত আসতে পারবে, তিনি সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা বলছেন। তিনি চাইছেন যে, ফিলিস্তিনিরা চলে যাক এবং আর কখনো ফেরত না আসুক। কারণ তিনি নিজেই বলেছেন যে, তিনি ফিলিস্তিনের সীমানা নিয়ন্ত্রণ করবেন। যদি গাজাবাসীদের জন্যে ইস্রাইলের দরদই থাকতো, তাহলে তারা গাজায় মানবিক ত্রাণ যেতে বাধা দিতো না। তারা গাজার অভ্যন্তরে ডাক্তার এবং মেডিক্যাল সরঞ্জামও যেতে দিচ্ছে না। নেতানিয়াহু সর্বদাই মিথ্যা কথা বলেন এবং এখনও বলছেন।
মুস্তফা বারঘুতি আরও বলছেন যে, ইস্রাইলের প্রতি পক্ষপাতের কারণে বাইডেনের সময়েও যুক্তরাষ্ট্র মধ্যস্ততাকারী হতে পারেনি; এখনও সেটা সম্ভব নয়। রাজনৈতিক, সামরিক, প্রযুক্তিগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র ইস্রাইলের সবচাইতে বড় সমর্থক; যেকারণে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে মধ্যস্ততাকারী হওয়া সম্ভব নয়। এই মুহুর্তে ফিলিস্তিনের জন্যে দু'টা সমাধান রয়েছে - প্রথমতঃ ৭৩ লক্ষ ফিলিস্তিনি এবং ৭১ লক্ষ ইস্রাইলিকে একত্রে একটা গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র তৈরি করা; অথবা দ্বিতীয়তঃ 'টু-স্টেট সলিউশন' বা দু'টা রাষ্ট্র তৈরি করা; যেখানে ইস্রাইল এবং ফিলিস্তিন নামে দু'টা রাষ্ট্র তৈরি করা হবে। ইস্রাইলিরা এই দু'টা অপশনই ত্যাগ করেছে। বরং ট্রাম্পের প্রস্তাব হলো সেটাই যেটা নেতানিয়াহু বলছেন; আর তা হলো ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জাতিগত নিধন। এটা আন্তর্জাতিক আইনের লংঘন। ফিলিস্তিনি রাজনীতিবিদেরা দু'টা সমাধানের যেকোন একটা মেনে নিতে রাজি আছে। ‘সিএনএন'এর বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, গাজার অধিবাসীদের গাজা থেকে বের করে দেয়ার অর্থ হলো 'টু-স্টেট সলিউশন'এর সম্ভাবনা বাতিল হয়ে যাওয়া। এটা এখন নিশ্চিতভাবেই বোঝা যাচ্ছে যে, মুখে না বললেও বাস্তবিক অর্থে ট্রাম্প প্রশাসন 'টু-স্টেট সলিউশন' সমর্থন করে না এবং দু'টা আলাদা রাষ্ট্র গঠন করার জন্যে ইস্রাইলকে ভূমি ছেড়ে দেয়ার জন্যে ট্রাম্প কোনরূপ চাপ প্রদান করবেন না। বারঘুতি মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, সৌদি আরব যুক্তরাষ্ট্রের 'আব্রাহাম একর্ড'এর মাধ্যমে ইস্রাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করবে না যদি ওয়াশিংটন 'টু-স্টেট সলিউশন' সমর্থন না করে। আর সৌদিদের ছাড়া ট্রাম্পের এই প্রকল্প বাস্তব রূপ পাবেন না।
ট্রাম্পের প্রকল্প কতটুকু বাস্তব?
ইস্রাইলি সাংবাদিক বালিগ স্লাডেন 'ডয়েচে ভেলে'কে বলছেন যে, ইস্রাইলিরা ইতোমধ্যেই চিন্তা করছে যে, যেসকল দেশ (যেমন স্পেন এবং আয়ারল্যান্ড) গাজায় ইস্রাইলের অভিযানের বিরোধিতা করেছে, সেসব দেশে গাজাবাসীদেরকে পাঠিয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা। ট্রাম্পের প্রস্তাব ইস্রাইলিদের এধরণের চিন্তার সাথেই যায়। এই মুহুর্তে ইস্রাইলের ৫২ শতাংশ জনগণ মনে করছে যে ট্রাম্পের প্রস্তাব বাস্তব। অপরদিকে ৩০ শতাংশ জনগণ মনে করছে যে, এই প্রকল্প বাস্তব নয়; তবে তারা আশা করে যে এই প্রস্তাব বাস্তব করা গেলে খুবই ভালো হতো। অর্থাৎ ইস্রাইলের বেশিরভাগ জনগণই মনে করে যে ৭ই অক্টোবরের হামলা এবং বহু বছরের সংঘাতের পর 'গাজা সমস্যা'র সমাধান হওয়া প্রয়োজন। তিনি আরও বলেন যে, ইস্রাইলের হিসেবে গাজার ৪৪ শতাংশ জনগণ গাজা ত্যাগ করার পক্ষপাতি।
মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক 'কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পীস'এর ডিরেক্টর আমির হামজাউই সংযুক্ত আরব আমিরাতের সরকারি মিডিয়া 'দ্যা ন্যাশনাল'এর সাথে এক সাক্ষাতে বলছেন যে, ট্রাম্প বলেছেন যে তিনি মধ্যপ্রাচ্য, বিশেষ করে সিরিয়া থেকে আমেরিকান সৈন্যদেরকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসবেন। এখন যদি তিনি গাজায় মার্কিন সেনা মোতায়েন করতে যান, সেটা তার নিজের বলা নীতির সাথে কতটুকু যায়? আর যদি মার্কিন সেনাদেরকে গাজাতে মোতায়েন করা না হয়, তাহলে কারা তাদের স্থান নেবে? যদি ফিলিস্তিনিরা সেখান থেকে চলে যেতে না চায়, তাহলে তিনি তাদেরকে কি করে বের করবেন? ট্রাম্পকে যারা ভোট দিয়েছিল, তাদের প্রতি ট্রাম্পের দায় রয়েছে মধ্যপ্রাচ্য থেকে মার্কিন সেনা প্রত্যাহার করার ব্যাপারে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলিকে তিনি এখনও রাজি করাতে পারেননি; ইউরোপিয়রাও না বলছে; আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলিও না বলছে। আর কয়েক'শ বা কয়েক হাজার মানুষকে যদি অন্য কোন দেশে নিয়ে যাওয়া সম্ভব হয়ও, ২০ লক্ষ মানুষকে সরিয়ে ফেলা মোটেই সহজ কথা নয়। আর চুপিসারে গাজাবাসীদেরকে সরিয়ে ফেলাও কঠিন। কারণ এর আগেও বিভিন্নভাবে ফিলিস্তিনিদেরকে চুপিসারে সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করা হয়েছে; প্রতিবারই সেগুলি ভেস্তে গেছে। ফিলিস্তিনিরা জানে যে, এখান থেকে সরে যাবার অর্থ কি।
'সিএনএন'এর সামরিক বিশ্লেষক মার্কিন বিমান বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মার্কিন কর্নেল সেডরিক লেইটন বলছেন যে, যদিও ট্রাম্প বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্যে আমেরিকার বন্ধু দেশগুলিকে একত্রে নিয়ে তিনি এই নীতি বাস্তবায়ন করবেন, তথাপি এটা নিশ্চিত যে মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রাইলের দুই প্রতিবেশী দেশ মিশর ও জর্দান গাজা থেকে কোন ফিলিস্তিনি শরণার্থী নিতে রাজি নয়। কাতারের কাছ থেকে হাল্কা সাড়া পাওয়া গেলেও পারস্য উপসাগরীয় দেশগুলি থেকে গাজায় মোতায়েন করার জন্যে কোন শান্তিরক্ষী বাহিনীর প্রতিশ্রুতি পাওয়া যায়নি। আফ্রিকান ইউনিয়ন থেকেও শান্তিরক্ষী বাহিনী যোগাড় করার প্রস্তাব কেউ দেয়নি। লেবানন এবং গোলান মালভূমির মতো শান্তিরক্ষী বাহিনী মোতায়েনের কোন প্রস্তাব জাতিসংঘের কাছ থেকেও আসেনি। এখানে একদিকে যেমন কূটনৈতিক দিক থেকে স্থবিরতা রয়েছে, তেমনি গাজায় এধরণের কোন প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে অবকাঠামোও নেই।
কর্নেল লেইটন আরও বলছেন যে, গাজাতে এখনও হামাসের যোদ্ধারা রয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যদি গাজাকে জনশূণ্য করতে চায়, তাহলে বাধা আসতে পারে। আর গাজাকে দখলে রাখতে ইস্রাইলি সেনাবাহিনী কমপক্ষে ১০ হাজার সেনা মোতায়েন রেখেছিল। এই সংখ্যক সেনা মোতায়েন রাখতে আরও অনেক সেনাকে আবর্তনের মাঝে রাখতে হয়েছে। কাজেই এধরণের একটা মিশনে যুক্তরাষ্ট্রের ১০ থেকে ২০ হাজার সেনার প্রয়োজন হবে। এর উপরে থাকবে এয়ার সাপোর্ট, ইন্টেলিজেন্স, লজিস্টিকস, নৌবাহিনীর সাপোর্ট, ইত্যাদি। এটা কোন ছোট অপারেশন হবে না; যা বাস্তবায়ন করতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে অন্যান্য বৈশ্বিক গুরুত্বপূর্ণ ফ্রন্ট ( যার মাঝে থাকতে পারে ইউক্রেন এবং তাইওয়ান) থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিতে হবে যেগুলির উপরে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইতোমধ্যেই গুরুত্বারোপ করেছেন। বিশ্বের অন্য এলাকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে সামরিক এবং ইন্টেলিজেন্স সক্ষমতাকে সরিয়ে নিয়ে গাজায় মোতায়েন করতে হবে। কর্নেল লেইটন মনে করছেন না যে, এগুলি নিয়ে কেউ খুব একটা চিন্তা করেছে।
আমির হামজাউই 'দ্যা ন্যাশনাল'কে বলছেন যে, ট্রাম্প বলেছেন যে, গাজা পুনর্নির্মাণ করতে ১৫ বছর পর্যন্ত লেগে যেতে পারে। এবং ট্রাম্প গাজাবাসীদেরকে সরিয়ে ফেলার পিছনে এই সময়টাকে একটা ছুতো হিসেবে ব্যবহার করেছেন। যদিও পুনর্নির্মাণে সময় লাগবে, তথাপি গাজার সকল স্থানে তো ১০ থেকে ১৫ বছর লাগবে না পুনর্নির্মাণ করতে। যেহেতু গাজার ভেতরেই গাজার জনগণ একস্থান থেকে অন্যস্থানে গিয়েছে, কাজেই এই মানুষগুলিকে গাজার ভেতরে রেখেই কয়েকটা ফেইজে গাজা পুনর্নির্মাণ করা সম্ভব। সুতরাং গাজাবাসীদেরকে সরিয়ে দেয়া এবং গাজার পুনর্নির্মাণ করার ট্রাম্পের প্রকল্প একটা আরেকটা সাথে যাচ্ছে না।
মিশর, জর্দান ও সৌদিদেরকে রাজি করাতে পারবেন ট্রাম্প?
১০ই ফেব্রুয়ারি মার্কিন মিডিয়া 'ফক্স নিউজ'এর সাথে এক সাক্ষাতে ট্রাম্প বলেন যে, তিনি মনে করেন যে, মিশর, জর্দান ও অন্যান্য দেশ গাজার অধিবাসীদেরকে থাকার জায়গা দেবে। আর যদি মিশর ও জর্দান ট্রাম্পের পরিকল্পনার ব্যাপারে রাজি না হয়, তাহলে তিনি এই দুই দেশের জন্যে অর্থনৈতিক ও সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিতে পারেন। আমির হামজাউই 'দ্যা ন্যাশনাল'কে বলছেন যে, প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে যে ট্রাম্প তার আন্তর্জাতিক সাহায্য বন্ধের কার্ডকে ব্যবহার করে মিশরকে রাজি করাতে পারবেন কিনা। এই মুহুর্তে মিশরকে যুক্তরাষ্ট্র আড়াই'শ থেকে তিন'শ মিলিয়ন ডলারের অর্থনৈতিক সহায়তা দেয়, যা তেমন বড় কিছু নয় এবং মিশর অন্য কোথাও থেকে সেটা সহজেই যোগাড় করতে সক্ষম হবে। তবে যুক্তরাষ্ট্র মিশরের সামরিক সহায়তা বন্ধ করে দিলে তাতে মিশরের ক্ষতি হবে। তথাপি ২০১৪ সালের পর থেকে মিশর সরকার তার সামরিক সরঞ্জাম যোগাড়ের উৎসে বৈচিত্র্য এনেছে। গাজার নতুন প্রকল্প যদি মিশরের অস্তিত্ব সংকট রূপে দেখা দেয়, তাহলে মিশর রাজি না-ও হতে পারে। গাজার প্রকল্প যে পশ্চিম তীরের ক্ষেত্রেও প্রয়োগ হবে না, সেটার কোন গ্যারান্টি নেই। সেটা হলে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের পুরো ব্যাপারটাই বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের চাপের মুখেও মিশর না বলতে পারে। আর ফিলিস্তিনিদেরকে শরণার্থী হিসেবে নেয়ার খরচটা শুধু মিশরের সরকারের নয়, জনগণের একটা বড় অংশকেও নিতে হবে; যারা এই প্রকল্পে সায় দেবে না। হামজাউই বলছেন যে, ট্রাম্পের প্রকল্প বাস্তবায়নে সৌদিদেরকে সাথে নেয়ার ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ইস্রাইলের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে সৌদিদেরকে রাজি করাতে সৌদি আরবের নিরাপত্তা গ্যারান্টির প্রয়োজন হতে পারে; তাদেরকে শান্তিপূর্ণ পারমাণবিক শক্তির প্রযুক্তি দেয়ার কথাও আসতে পারে। যদি ট্রাম্প ইস্রাইলের উগ্র ডানপন্থীদের নীতিকে অনুসরণ করতে থাকেন, তাহলে ইস্রাইলের সাথে সৌদি আরবের সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ইচ্ছায় ঘাটতি দেখা দেবে। এছাড়াও আঞ্চলিক ভূরাজনীতি ও অস্তিত্বগত চাপের বাস্তবতার মুখে পারস্য উপসাগরীয় আরব দেশগুলির সাথে মিশর ও জর্দানের সম্পর্ক আরও গভীর হতে পারে।
জর্দান থেকে অবশ্য ট্রাম্পের নীতিকে তোষণের কথাই শোনা যাচ্ছে। জর্দানের ভূরাজনৈতিক বিশ্লেষক আমের সাবাইলেহ 'দ্যা ন্যাশনাল'কে বলছেন যে, জর্দানিরা মনে করে যে ফিলিস্তিনের ইস্যু তাদের নিজেদের ইস্যু। একারণেই জর্দানিদের দ্বারা রাজনৈতিক উদ্বেগ প্রকাশ বা রাস্তায় বিক্ষোভ করার মতো কাজগুলি সম্ভব হয়েছে। তবে রাজনৈতিক, সামরিক এবং অর্থনৈতিক দিক থেকে জর্দান যুক্তরাষ্ট্রের উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল। জর্দানের রাষ্ট্রীয় কাঠামোতেই মার্কিন-বিরোধিতা নেই। কাজেই জর্দান নিঃসন্দেহেই ট্রাম্পের সাথে আলোচনায় বসবে। সাবাইলেহ মনে করছেন যে, জনপ্রিয় সিদ্ধান্তের চাইতে বাস্তবতা-কেন্দ্রিক সিদ্ধান্ত বেশি গুরুত্বপূর্ণ। ইস্রাইলের সাথে চুক্তি থাকার পরেও গত দেড় বছরে জর্দানকে সবচাইতে বেশি ইস্রাইল-বিরোধী দেখা গেছে; যা বাস্তবতা-বিরুদ্ধ। জর্দানের জনগণ বুঝতে পারছে না যে, মার্কিন-বিরোধী রাষ্ট্রের তকমা জর্দানের জন্যে কতটা বিপদের হতে পারে।
ট্রাম্পের প্রস্তাবের সম্ভাব্য ফলাফল কি হতে পারে?
'নিউ ইয়র্ক টাইমস'এর প্রবীণ সাংবাদিক এবং লেখক ডেভিড স্যাংগার 'সিএনএন'কে বলছেন যে, জর্দানের রাজার কাঁধের উপরে এই মুহুর্তে বিশাল ফিলিস্তিনি জনগণের বোঝা রয়েছে; যা কিনা জর্দানের জন্যে অস্থিতিশীলতার কারণ। ট্রাম্প যখন প্রথমবার ক্ষমতায় এসেছিলেন, তখন তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে, তিনি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধগুলিকে বন্ধ করবেন; যার মাঝে ছিল ইরাক এবং আফগানিস্তান। কাজেই এটা অবাক করার বিষয় যে তিনি এমন একটা সামরিক মিশনের কথা বলছেন, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ১৫ থেকে ২০ বছর স্থায়ী হতে পারে। এবং এরূপ একটা মিশন ট্রাম্পের নিজের প্রশাসনকেও বিভক্ত করে ফেলবে। তিনি এমন কিছু লোককে তার সরকারে নিয়েছেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রের ইউক্রেন এবং মধ্যপ্রাচ্যে জড়ানোকে পছন্দ করেননি এবং যারা চেয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সকল শক্তিকে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করে তাইওয়ানকে রক্ষা করতে।
তবে অনেক বিশ্লেষকই গত সাত দশকের ইস্রাইলি দখলদারিত্বকে সমস্যার কেন্দ্রে না টেনে ২০০১-পরবর্তী তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী যুদ্ধের সাথে ফিলিস্তিন ইস্যুকে ট্যাগ করতে চাইছেন। আমির হামজাউই 'দ্যা ন্যাশনাল'কে বলছেন যে, ট্রাম্প ইস্রাইলের সাথে বসে ফিলিস্তিনিদের কোন মতামত না নিয়েই তাদেরকে নিয়ে পরিকল্পনা করছেন; যা ফিলিস্তিনিদের বহুকালের সংগ্রামের সাথে সাংঘর্ষিক। হামজাউই মনে করছেন যে, এহেন প্রকল্প আরও সংঘাতের জন্ম দিতে পারে এবং পুরো অঞ্চলকে অস্থিতিশীল করতে পারে; এবং মার্কিন-বিরোধী চিন্তাকে উস্কে দিতে পারে। মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' বা 'সিআইএ'র প্রাক্তন কর্মকর্তা মার্ক পলিমেরোপলাস মার্কিন মিডিয়া 'এমএসএনবিসি'কে বলছেন যে, ট্রাম্পের এই প্রস্তাব সিআইএ-এর মধ্যপ্রাচ্যের সকল স্টেশন প্রধানদের মাথাব্যাথার কারণ হয়ে দাঁড়াবে। কারণ এটা সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকান্ডের জন্যে একটা দুঃস্বপ্ন। ট্রাম্প বলছেন যে, তিনি গাজার 'নিয়ন্ত্রণ' নেবেন এবং গাজার 'মালিকানা' নেবেন। এই শব্দগুলি ইসলামিক জিহাদি গ্রুপগুলি রিক্রুটিংএর জন্যে ব্যবহার করে। 'টেক এগেইনস্ট টেরোরিস্টস' এনজিওএর বিশ্লেষক লুকাস ওয়েবার 'এনবিসি'কে বলছেন যে, জিহাদি গ্রুপগুলি গাজার সংঘাত এবং ফিলিস্তিনি জনগণের কষ্টকে পুঁজি করে মার্কিন সরকারের উপর হামলা করার জন্যে উৎসাহ যোগাচ্ছে। তারা ইতোমধ্যেই সোশাল মিডিয়াতে ট্রাম্পের কথাগুলিকে প্রচার করছে। 'ইউনিভার্সিটি অব শিকাগো'র প্রফেসর রবার্ট পেইপ 'এনবিসি'কে বলছেন যে, ২০০৩ সালে ইরাকে যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর মার্কিনীদের বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় সুইসাইড হামলা শুরু হয়। মধ্যপ্রাচ্য থেকে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তি কমিয়ে ফেলতে শুরু করার পর থেকে এই হামলা যথেষ্টই কমে গেছে। অনেক বছর ধরেই এই গ্রুপগুলি ট্রাম্পের পরিকল্পনার মতো একটা ছুতো খুঁজছিলো। পেইপ বলছেন যে, ট্রাম্প যদি তার বক্তব্য থেকে সড়েও আসেন, বা তিনি যদি গাজার নিয়ন্ত্রণ নেবার ব্যাপারে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না-ও করেন, তবুও জিহাদি গ্রুপগুলি ধরেই নেবে যে, যুক্তরাষ্ট্রের চোখ রয়েছে গাজার উপর। ক্ষতি যা হবার হয়েই গেছে। বাস্তবতাকে ঘুরিয়ে এখন কোন লাভ হবে না।
ট্রাম্প মূলতঃ ইস্রাইলের চিন্তাটাকেই প্রকল্প রূপে ব্যাখ্যা করেছেন; যেটাকে পুঁজি করেই ইস্রাইল ১৫ মাস ধরে গাজার সকল ভবন ধ্বংস করে পুরো অঞ্চলকে বসবাসের অযোগ্য করে তুলেছে। মার্কিন সরকারের, বিশেষ করে বাইডেন প্রশাসনের সরবরাহ করা ৮৬ হাজার টন বোমার মাধ্যমে এই অমানবিক প্রকল্প বাস্তবতা পেয়েছে। এই পুরো সময় লিবারাল চিন্তার পশ্চিমা সরকারগুলি সকলেই গতবাধা একটা লাইন বলে গিয়েছে - ‘ইস্রাইলের নিজেকে রক্ষা করার অধিকার রয়েছে'। ইস্রাইলি বর্বরতায় প্রায় অর্ধলক্ষ ফিলিস্তিনির মৃত্যুর সময় পশ্চিমারা ইস্রাইলের নিরাপত্তা রক্ষায় মধ্যপ্রাচ্যে সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। লিবারাল চিন্তার পশ্চিমা মিডিয়াগুলি এই পুরো সময় গাজায় ইস্রাইলের বর্বরতার খবর পুরোপুরিভাবে সেন্সর করেছে। অথচ ট্রাম্পের গাজা পরিকল্পনা ঘোষণার সাথেসাথেই প্রায় সকল পশ্চিমা মিডিয়া একসাথে ট্রাম্পের বিরোধিতা করা শুরু করেছে; যেন ট্রাম্পই প্রথম ইস্রাইলের বর্বর প্রকল্পে সমর্থন দিয়েছেন! প্রকৃতপক্ষে ট্রাম্পের অধীনে যুক্তরাষ্ট্র ফিলিস্তিনিদেরকে বাস্তুচ্যুত করার যে প্রকল্প নিয়েছে, তা ১৯৪৮ সালে ফিলিস্তিনিদের বিরুদ্ধে জাতিগত নির্মুলের ব্রিটিশ-ইস্রাইলি প্রকল্পেরই অনুরূপ। কাজেই ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর গাজাবাসীদের জন্যে মায়াকান্না হাস্যকরই বটে। মিশর ও জর্দানের সরকারের উপর যুক্তরাষ্ট্রের চাপ সৃষ্টি করার সক্ষমতা যথেষ্ট। আর গত ১৫ মাসে গাজায় ইস্রাইলি হামলার সময় যুক্তরাষ্ট্রকে খুশি রাখতে মিশর ও জর্দান সরকার ইস্রাইলকে নিরাপত্তা দিয়েছে। কাজেই গাজার অধিবাসীদেরকে এই দুই দেশে পাঠিয়ে দেয়ার চেষ্টাটাই প্রাধান্য পাবে। সৌদিদেরকে রাজি করাবার বিভিন্ন অস্ত্রও যুক্তরাষ্ট্রের হাতে রয়েছে। অভিভাবকহীন ফিলিস্তিনিদের জন্যে সবচাইতে দুঃখজনক হলো, জাতীয়তাবাদে বিভক্ত মুসলিমরা ফিলিস্তিনের সমস্যাকে নিজেদের সমস্যা হিসেবে দেখেনি। শুধু তা-ই নয়, ইস্রাইলের রক্ষাকর্তা যুক্তরাষ্ট্রকেও তারা নিয়েছে সবচাইতে কাছের বন্ধু হিসেবে। ট্রাম্প আতঙ্কে সকলেই আজ ভীত! ট্রাম্প অখুশি হন, এমন কিছুই কেউ করতে চাইছে না!
জর্ডান তো রাজী।সে এখনো তাকিয়ে আছে মিশর কি বলে এই ব্যাপারে।ভাই আপনার কাছে জানতে চাচ্ছি গাজাবাসীর স্হানচূতি কী কার্যকর হবে?
ReplyDeleteট্রাম্পের এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সহজ নয় মোটেই। উপরের লেখাতেই এই ব্যাপারটা এসেছে যে, ট্রাম্পের নিজস্ব প্রশাসনের মাঝেই অনেকে রয়েছে যারা ট্রাম্পের এই প্রকল্পের সাথে একমত হবে না। এছাড়াও এই প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্যে যে সামরিক ও অন্যান্য সাপোর্ট প্রয়োজন, সেগুলি যোগাড় করতে গেলে চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন করা সামরিক শক্তিকে সরিয়ে এনে মধ্যপ্রাচ্যে মোতায়েন করতে হবে; যা বর্তমান প্রধান মার্কিন নীতির সাথে সাংঘর্ষিক। এর উপর ট্রাম্পের সকল প্রকল্পকে বাধা দেয়ার জন্যে ডেমোক্র্যাটরা তো রয়েছেই। এগুলি কারণে কেউ কেউ সন্দেহ করছেন যে, ট্রাম্প হয়তো মুসলিম রাষ্ট্রগুলির উপর চাপ প্রদান করে তাদের কাছ থেকে কিছু আদায় করার জন্যে এই প্রকল্প ফেঁদেছেন। তারা বলছেন যে, ট্রাম্প হয়তো নিজেও নিশ্চিত যে, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।
Deleteতবে যেটা পরিষ্কার তা হলো, ট্রাম্পের এই পরিকল্পনা মূলতঃ ইস্রাইলের। ইস্রাইলির শুধুমাত্র নিজেদের স্বার্থ দেখে। তারা কখনও নিজেদের স্বার্থ ছাড়া অন্য কারও স্বার্থ দেখে না; এমনকি যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থও তারা কখনও দেখেনি। ইস্রাইলকে সমর্থন দিতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র অনেক ক্ষেত্রেই বৈশ্বিকভাবে সমস্যায় পড়েছে। কিন্তু ইস্রাইল লবির চাপে কোন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বা কংগ্রেসম্যান বা সরকারি কর্মকর্তা বা স্কলার ইস্রাইলকে সমর্থন দেয়া ছাড়া কিছু করতে পারেনি (বিরোধিতার তো প্রশ্নই আসে না)।
মার্কিন স্কলার জন মিয়ার্সহাইমারের কেইসটা সবচাইতে মারাত্মক। তিনি 'ইস্রাইল লবি' নামে বই লেখার পর সকল মার্কিন মিডিয়া তার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। অথচ তার লেখা বই একসময় আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ছাত্রদেরকে পড়ানো হতো। যুক্তরাষ্ট্রের কোন মানুষ ফিলিস্তিনের ইতিহাস জানে না। কারণ যুক্তরাষ্ট্রে এমন কোন বই পাবলিশ বা বিক্রি করা যায় না, যেখানে ফিলিস্তিনের ইতিহাস রয়েছে। সেখানে শুধুমাত্র ইস্রাইলিদের লেখা ইস্রাইলের ইতিহাস বই আকারে পাওয়া যায়। মার্কিন ক্যাপিটালিস্ট সিস্টেম ইস্রাইলি লবিকে এই সুযোগ করে দিয়েছে; ঠিক যেমনটা তারা দিয়েছে তেলের লবি, অস্ত্রের লবি, টেক লবি, ফার্মা লবি, ইত্যাদি লবি গ্রুপকে। এটা তাদের সিস্টেমেরই সমস্যা। অন্য কোন দেশে ইস্রাইল লবি এতটা শক্তিশালী নয়।
যতদূর খবর শুনা যাচ্ছে মিডল ইস্ট কাউন্সিলের সূপারিশ করেছে আমেরিকা যেখানে ইসরায়েল,ইরান,তুরস্ক অন্তর্ভুক্ত থাকবে যারা একে অপরকে কাউন্টার ব্যালেন্স করবে।
ReplyDeleteইতোমধ্যেই মধ্যপ্রাচ্যে আরব লীগ রয়েছে; জিসিসি রয়েছে; ওআইসি রয়েছে। কিন্তু এগুলি কোনটাই কথা বলার বাইরে কোনকিছু করতে পারে না। যদি একটা মধ্যপ্রাচ্য কাউন্সিল গঠন করার চেষ্টা করা হয়, সেটাতে সকলে যোগ দেবে কিনা, সেটা যেমন প্রশ্ন করা যায়, তেমনি সেখানে শুধু বাক্যবাণ ছোঁড়া ছাড়া আর কিছু হতে পারে কিনা, সেটা নিয়েও প্রশ্ন থেকে যাবে।
Deleteযুক্তরাষ্ট্র এখন যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যকে ম্যানেজ করছে, তা কোন কাউন্সিল ছাড়াই করছে। এর বাইরে আর কোনভাবে ম্যানেজ করা সম্ভব কিনা, সেটাও চিন্তার ব্যাপার রয়েছে। কারণ ট্রাম্প এর আগের টার্মে নিজেই যুক্তরাষ্ট্রকে জেসিপিওএ থেকে বের করে নিয়ে এসেছিলেন। এখন সেই একই ট্রাম্প ইরানের সাথে সরাসরি আলোচনায় বসবেন - এটা আপাততঃ চিন্তা করা যাচ্ছে না। আর ইরানের সাথে সরাসরি আলোচনা না করে অথবা ইরানকে যেসকল তকমা দেয়া হয়েছে ওয়াশিংটন থেকে, সেগুলিকে তুলে না নিয়ে কিভাবে ইস্রাইল এবং ইরনাকে এক প্ল্যাটফর্মে বসানো সম্ভব, সেটা চিন্তা করার বিষয়। আর ইস্রাইলও এরকম একটা প্রস্তাবে রাজি হবার কথা নয়। যদি এই প্রস্তাব কেউ দিয়েই থাকে, খুব সম্ভবতঃ সেটা তুরস্ক বা কাতার বা সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে এসেছে; ওয়াশিংটন থেকে আসেনি।