Sunday 22 March 2020

সারাবিশ্ব আজ যুদ্ধাবস্থায়; বাংলাদেশ কি করবে?

২৩শে মার্চ ২০২০


ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্রিটেনকে যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে যাবার ঘোষণা দেন। ব্রিটিশ ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারার ‘রোলস রয়েস’ এবং কন্সট্রাকশন যন্ত্রপাতির ম্যানুফ্যাকচারার ‘জেসিবি’কে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যায় থাকা রুগীদের জন্যে ‘ভেন্টিলেটর’ যন্ত্র বানাবার অনুরোধ করেন তিনি।


পশ্চিমা বিশ্বে যুদ্ধাবস্থা

১৪ই মার্চ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন নভেল করোনাভাইরাস প্রতিরোধে ব্রিটেনকে যুদ্ধাবস্থায় নিয়ে যাবার ঘোষণা দেন। তিনি ব্রিটিশ ইঞ্জিন ম্যানুফ্যাকচারার ‘রোলস রয়েস’ এবং কন্সট্রাকশন যন্ত্রপাতির ম্যানুফ্যাকচারার ‘জেসিবি’কে শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যায় থাকা রুগীদের জন্যে ‘ভেন্টিলেটর’ যন্ত্র বানাবার অনুরোধ করেন। তিনি বলেন যে, তাদের পিতামহরা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় সমস্ত জাতীয় সম্পদকে যুদ্ধের পিছনে নিয়োজিত করেছিল। আজকে তাদের জেনারেশন করোনাভাইরাসের মতো অন্য ধরনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে। [১] ‘রোলস রয়েস’এর এক মুখপাত্রকে এধরনের কাজ করা সম্ভব কিনা জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেন, সরকার নিজেদের পরিকল্পনা করলে তারা নিজেদের সাধ্যমতো সরকার এবং দেশকে সহায়তা করতে প্রস্তুত। [৩] ২২শে মার্চ মার্কিন ‘ফুড এন্ড ড্রাগ এডমিনিসট্রেশন’ বা ‘এফডিএ’ ঘোষণা দেয় যে, তারা ‘ভেন্টিলেটর’ যন্ত্র তৈরি করার জন্যে মার্কিন সরকারের যেসকল বাধ্যবাধকতা রয়েছে, তা শিথিল করতে যাচ্ছে, যাতে করে নতুন কিছু কোম্পানি ‘ভেন্টিলেটর’ তৈরি করার জন্যে এগিয়ে আসতে পারে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এক টুইটার বার্তায় বলেন যে, মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘ফোর্ড’, ‘জেনারেল মোটরস’ এবং ‘টেসলা’কে ‘ভেন্টিলেটর’ এবং অন্যান্য মেটাল প্রডাক্ট অতি দ্রুত বানানোর অনুমতি দেয়া হয়েছে। দেখা যাক গাড়ি নির্মাতারা কতটুকু সক্ষম! ‘আমেরিকান হসপিটাল এসোসিয়েশন’এর হিসেবে করোনাভাইরাসের কারণে ৯ লক্ষ ৬০ হাজার মার্কিন নাগরিককে ‘ভেন্টিলেটর’ দিয়ে শ্বাসপ্রশ্বাসের ব্যবস্থা করতে হতে পারে। [২] ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র করোনাভাইরাস মোকাবিলায় নিজেদেরকে যুদ্ধাবস্থায় উপনীত করেছে। এর অর্থ হলো, তারা নিজেদের জাতীয় সম্পদের সবকিছু বর্তমান চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নিয়োজিত করেছে। এক্ষেত্রে তারা শুধু বিপদ অনুধাবনই করেনি; এমতাবস্থায় কি করতে হবে, সেটা দ্রুত নির্ধারণ করেছে। পশ্চিমা আদর্শিক রাষ্ট্রগুলির আদর্শ সাম্প্রতিক সময়ে যতটাই দুর্বল হোক না কেন, কঠিন সময়ে তাদের কর্মদক্ষতাকে ব্যবহার করতে পারার মতো কাজগুলি বলে দেয় যে, তারা এখনও আদর্শিক শক্তি।

মার্কিন গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ‘জেনারেল মোটরস’ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় কামান এবং ট্যাঙ্ক তৈরি করেছিল। আর আজকে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তারা চীনের ‘সাইক মোটরস’এর সাথে যৌথভাবে চীনের লিউঝৌ শহরে সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরিতে মনোনিবেশ করেছে। শুধু তাই নয়, একসময় যেসকল কারখানা আইফোন, কসমেটিকস বা কেমিক্যাল তৈরি করতো, তারা এখন সার্জিক্যাল মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার এবং মেডিক্যাল সাপ্লাই তৈরি করতে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে। [৩] ১৫ই মার্চ ফ্রান্সের লাক্সারি গুডস ম্যানুফ্যাকচারার ‘এলভিএমএইচ’, যারা ‘লুই ভুইতঁ’, ‘ক্রিশ্চিয়ান দিয়র’ ও ‘গিভেঞ্চি’র মতো ব্র্যান্ডগুলির মালিক, তারা ঘোষণা দেয় যে, পারফিউম এবং কসমেটিক্স তৈরির কারখানাগুলি এখন থেকে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করবে। ‘এলভিএমএইচ’ তাদের এক বার্তায় বলে যে, যত বেশি সম্ভব মানুষকে সুরক্ষা দিতেই চেষ্টা করছে তারা। কোম্পানির মুখপাত্র ‘ফরচুন’ ম্যাগাজিনের সাথে কথা বলতে গিয়ে বলেন যে, ‘হাইড্রো এলকোহলিক জেল’ তৈরির জন্যে সকল সক্ষমতাই তাদের রয়েছে এবং তারা প্রথম সপ্তাহেই ১২ টন তৈরি করার চিন্তা করছে এবং ১৬ই মার্চ থেকেই তারা উৎপাদনে নেমে গিয়েছে। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘এলভিএমএইচ’ তাদের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ফরাসী কর্তৃপক্ষকে দিচ্ছে, যারা বিভিন্ন হাসপাতালে এগুলি দেবার ব্যবস্থা নিচ্ছেন। [৩] মদ তৈরির কোম্পানিগুলিও নেমেছে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরিতে; কারণ এলকোহল উৎপাদন করার কারণে তাদের জন্যে হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করাটা বেশ সহজ। [৬]

ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘জনতার যুদ্ধ’এর ডাক দেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে আড়াই হাজার চীনা কোম্পানি মাস্ক তৈরিতে নেমেছে! ‘এপল’এর ডিভাইসের ম্যানুফ্যাকচারার ‘ফক্সকন’ ফেব্রুয়ারির শুরুতে ঘোষণা দেয় যে, নতুন চালু করা ‘আইফোন’ কারখানায় তারা মাস্ক তৈরি করবে। বর্তমানে চীনে মাস্ক তৈরি করা আড়াই হাজার কোম্পানির মাঝে ৭’শ রয়েছে টেকনলজি কোম্পানি, যার মাঝে রয়েছে ‘ফক্সকন’, ‘শাওমি’ এবং ‘অপ্পো’।

 

চীনে যুদ্ধাবস্থা

তবে করোনাভাইরাস মোকাবিলায় চীন প্রথম যুদ্ধাবস্থা ঘোষণা করেছিল। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ‘জনতার যুদ্ধ’এর ডাক দেন। এই ডাকে সাড়া দিয়ে আড়াই হাজার চীনা কোম্পানি মাস্ক তৈরিতে নেমেছে! ‘এপল’এর ডিভাইসের ম্যানুফ্যাকচারার ‘ফক্সকন’ ফেব্রুয়ারির শুরুতে ঘোষণা দেয় যে, নতুন চালু করা ‘আইফোন’ কারখানায় তারা মাস্ক তৈরি করবে। চীনা রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন তেল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘সিনোপেক’ তাদের একটা কেমিক্যাল ফ্যাক্টরিকে ফেস মাস্ক এবং অন্যান্য মেডিক্যাল সাপ্লাইয়ের কাঁচামাল তৈরির জন্যে প্রস্তুত করে ফেলে। [৩] তারা জানুয়ারিতে পলিপ্রোপাইলিন বা পিপি এবং পলিভিনাইল ক্লোরাইড বা পিভিসির দু’টা প্ল্যান্ট তৈরি করে। মার্চের শুরুতে তারা বেইজিংএ দৈনিক ৪ টন ক্ষমতার ‘মেল্ট ব্লোউন নন উভেন ফ্যাব্রিক’ তৈরির দু’টা প্রোডাকশন লাইন প্রস্তুত করে, যা দিয়ে প্রতিদিন ১২ লক্ষ ‘এন ৯৫’ ‘রেসপিরেটর’ মাস্ক বা ৬০ লক্ষ সার্জিক্যাল মাস্ক তৈরি করা যাবে। [৫] আর ১৩ই মার্চ চীনা ইলেকট্রিক গাড়ি তৈরির কোম্পানি ‘বিওয়াইডি’ ঘোষণা দেয় যে, তারা এখন দৈনিক ৫০ লক্ষ মাস্ক এবং ৩ লক্ষ বোতল জীবাণুনাশক তৈরি করছে। তারা তাদের এই উৎপাদনযজ্ঞ শুরু করে ৮ই ফেব্রুয়ারি থেকে। তারা এই উৎপাদনের জন্যে এমন কিছু কাজ দুই সপ্তাহের মাঝেই করে ফেলে, যা কিনা সাধারণভাবে দুই মাস লাগার কথা। তারা এক সপ্তাহের মাঝেই মাস্ক তৈরির যন্ত্র এবং প্রসেস ডেভেলপ করে ফেলে। একইসাথে তারা মেডিক্যাল গ্রেডের হ্যান্ড স্যানিটাইজার ডেভেলপ করে ফেলে ৬ দিনের মাঝে; যা তারা উহানের হাসপাতালগুলিকে ৮ দিনের মাথায় সরবরাহ করে! শুধু তাই নয়, তারা প্রতিদিন গড়ে ৫ থেকে ১০টা মাস্ক তৈরির যন্ত্র তৈরি করতে থাকে! এর ফলে প্রতিদিন তাদের উৎপাদনক্ষমতা ৩ থেকে ৫ লক্ষ ইউনিট বাড়তে থাকে! ফেব্রুয়ারির শুরুতে পুরো চীনের মাস্ক তৈরির ক্ষমতার চার ভাগের একভাগ ছিল ‘বিওয়াইডি’এর। [৪]

করোনাভাইসের সংক্রমণ শুরু হবার আগে চীনের মাস্ক তৈরির সক্ষমতা ছিল দৈনিক ২ কোটি পিস। ২৯শে ফেব্রুয়ারি নাগাদ তা ১১ কোটি ৬০ লক্ষে পৌঁছায়। এই কোটি মাস্কের মাঝেই একটা গল্প বলছে ‘সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট’। গুয়াংঝুতে অবস্থিত লিউ ফ্যামিলির কারখানায় গত ১০ বছর ধরেই তৈরি হচ্ছিল ডায়াপার এবং বেবি প্রডাক্ট। ফুজিয়ান প্রদেশে তাদের কারখানায় ১’শ লোক কাজ করতো; যেখানে তারা প্রতিদিন ২ লক্ষ মাস্ক তৈরি করা শুরু করে। যদিও সিদ্ধান্তটা বাণিজ্যিকই ছিল; তথাপি সরকার বিভিন্ন সাবসিডি, ট্যাক্স বেনেফিট, ইন্টারেস্ট ফ্রি লোন, ইত্যাদি সহায়তা দেয়ায় কাজ সহজ হয়ে যায়। অস্ট্রিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং কোম্পানি ‘আনদ্রিতস’এর ‘ওয়েট ওয়াইপস’ তৈরির যন্ত্রের ব্যাপক চাহিদা তৈরি হয়েছে। তাদের চীন অফিসের প্রেসিডেন্ট থমাস স্মিটসএর মতে, চীনের সবচাইতে বড় ব্যাপার হলো গতি। যখন কারুর দৌড়াবার প্রয়োজন হয়, তখন সে জানে যে কি করে দৌড়াতে হয়! [৫] চীনা ‘জে ২০’ স্টেলথ যুদ্ধবিমান তৈরির প্রতিষ্ঠান ‘চেংডু এয়ারক্রাফট ইন্ডাস্ট্রি গ্রুপ’ তাদের কারখানার কিছু অংশকে মাস্ক তৈরি প্রোডাকশন লাইন ডিজাইনে কাজে লাগায়। ‘দ্যা সিচুয়ান ডেইলি’ বলছে যে, কোম্পানির ২’শ ৫৮ জন ইঞ্জিনিয়ার মাত্র ৩ দিনের মাঝে একটা এসেম্বলি লাইন ডেভেলপ করে ফেলে, যা তৈরির জন্যে ১২’শ কম্পোনেন্ট দরকার ছিল। [৫] বর্তমানে চীনে মাস্ক তৈরি করা আড়াই হাজার কোম্পানির মাঝে ৭’শ রয়েছে টেকনলজি কোম্পানি, যার মাঝে রয়েছে ‘ফক্সকন’, ‘শাওমি’ এবং ‘অপ্পো’। ইতালি সরকার বলে যে, তারা চীনের কাছ থেকে ১ হাজার ‘ভেন্টিলেটর’, ২০ লক্ষ মাস্ক, ১ লক্ষ ‘রেস্পিরেটর’, ২ লক্ষ প্রোটেকটিভ স্যুট এবং ৫০ হাজার করোনাভাইরাস টেস্টিং কিট আমদানি করছে। [৫]


বাংলাদেশ এতকাল কতটা উন্নয়ন করেছে, তার পরীক্ষা হবে আজ! বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সক্ষমতা যদি এই রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না যায়, তাহলে গত দুই দশকের সকল অর্থনৈতিক অগ্রগতি মুহুর্তের মাঝে ধূলায় মিশে যাবে! বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে দুনিয়ায় এতটা এগিয়ে থাকার পরেও ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ বা ‘পিপিই’ তৈরি করতে পারবে না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মাল্টিবিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রি দুর্যোগের সময় অথর্ব হয়ে বসে থাকবে, এটা মেনে নেয়া যায়না।



বাংলাদেশের জন্যে করণীয়

বাকি বিশ্বের যুদ্ধাবস্থার উদাহরণ যদি এখনই বাংলাদেশের জন্যে উদাহরণ হিসেবে না আসে, তাহলে অতি শীঘ্রই দেশ মহাবিপদের মাঝে পতিত হতে পারে। সকলকিছুর জন্যেই চীনের সরণাপন্ন হওয়াটা সকল দেশের জন্যেই জাতীয় নিরাপত্তার ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর সেটা প্রকাশ পায় উহানে করোনাভাইরাসের সংক্রমণের মাঝ দিয়ে। ব্রিটেন, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র বুঝতে পারছে যে, এই মুহুর্তে জাতি হিসেবে টিকে থাকতে হলে তাদের কি করতে হবে। ইতালি অসহায়ের মতো চীনের দিকেই তাকিয়েছে। এই ভাইরাস মোকাবিলায় ইতালি কতটা অপ্রস্তুত ছিল, তা বোঝাই যাচ্ছে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের জন্যে করণীয় কাজগুলি সহজেই অনুমেয়। যুদ্ধাবস্থায় যা যা করা দরকার তাই করতে হবে। সরকারের কর্তাব্যক্তিরা শুধু ‘যুদ্ধাবস্থা’ উচ্চারণ করেই থেমে যাবেন, তা হতে পারে না। বাকি বিশ্বের অবস্থা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, এই ভাইরাস কি করতে সক্ষম। এর থেকে শিক্ষা না নিলে পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করবে।

এই রোগের প্রথম দিক হলো এটা ভীষণ ছোঁয়াচে। কোয়ার‍্যান্টাইন হলো ছোঁয়াচে রোগের বিরুদ্ধে প্রধান প্রতিরোধ। কিন্তু সেই ব্যাপারটা মানা হয়নি একেবারেই। আক্রান্ত দেশগুলি থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষের ঢল নেমেছে বাংলাদেশে। আক্রান্ত এলাকা ত্যাগ করে অন্য এলাকায় রোগ ছড়িয়ে দেয়া ইসলাম বহির্ভূত কাজ। রাসূল (সাঃ) বলেন,

“প্লেগ শাস্তির প্রতিক। মহীয়ান গরীয়ান আল্লাহ তায়ালা তা দ্বারা তাঁর বান্দাদের কতিপয় ব্যক্তিকে পরীক্ষায় ফেলেছেন। তাই কোনো অঞ্চলে এর প্রভাবের খবর পেলে, তোমরা সেথায় যেয়ো না এবং কোনো অঞ্চলে অবস্থানকালে সেখানে প্লেগ লক্ষ্য করলে সেখান থেকে পালিয়ে যাবে না”। মুসলিম ৫৬৬৬-(৯৩/…)

আয়িশাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসুল (সাঃ)-কে প্লেগ রোগ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করলে, উত্তরে তিনি বলেনঃ “এটি এক ধরনের আযাব। আল্লাহ তায়ালা তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাদের প্রতি ইচ্ছা করেন, তাঁদের উপর তা প্রেরন করেন। আর আল্লাহ তায়ালা তাঁর মু’মিন বান্দাগনের উপর তা রহমত করে দিয়েছেন। অতএব কোনো ব্যক্তি যখন প্লেগ রোগে আক্রান্ত যায়গায় সাওয়াবের আশায় ধৈর্যধারন করে অবস্থান করে এবং অন্তরে দৃঢ় বিশ্বাস থাকে যে, আল্লাহ তাকদীরে যা লিখে রেখেছেন তা-ই হবে, এছাড়া আর কোনো বিপদ তার উপর আসবে না, তাহলে সে একজন শহীদের সমান সাওয়াব পাবে’” বুখারী ৩৪৭৪, ৫৭৩৪, ৬৬১৯।


দেশের মাঝে যে এলাকায় এই রোগ দেখা দেবে, সেই এলাকাটাকে কোয়ার‍্যান্টাইন করা যেতে পারে। তবে এই কাজ করতে রাষ্ট্রের সকল শক্তি নিয়োগ করতে হবে। পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মোতায়েন করে এই কোয়ার‍্যান্টাইন কার্যকর করা যেতে পারে। কোয়ার‍্যান্টাইনের সময় ঐ এলাকায় খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দরকারি রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিতে হবে। এই কাজে যারা নিয়োজিত থাকবে, তাদেরকে দরকারমতো ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ বা ‘পিপিই’, জীবাণুনাশক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, ইত্যাদি দিতে হবে।


দ্বিতীয়তঃ এই রোগের এখনও নিশ্চিত কোন চিকিৎসা নেই। কাজেই আপাততঃ কোয়ার‍্যান্টাইন করা ছাড়া কোন প্রতিরোধই নেই এর বিরুদ্ধে। যেহেতু আক্রান্ত দেশগুলি থেকে ইতোমধ্যেই লাখো মানুষ ডেকে নিয়ে আসার মতো মারাত্মক ভুল হয়েই গেছে, তাই সেব্যাপারে এখন কথা বলার কিছু নেই। তবে দেশের মাঝে যে এলাকায় এই রোগ দেখা দেবে, সেই এলাকাটাকে কোয়ার‍্যান্টাইন করা যেতে পারে। তবে এই কাজ করতে রাষ্ট্রের সকল শক্তি নিয়োগ করতে হবে। পুলিশ এবং আধা সামরিক বাহিনীকে সেনাবাহিনীর সহায়তায় মোতায়েন করে এই কোয়ার‍্যান্টাইন কার্যকর করা যেতে পারে। কোয়ার‍্যান্টাইনের সময় ঐ এলাকায় খাদ্যদ্রব্য এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ দরকারি রসদ সরবরাহ নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ চেষ্টা দিতে হবে। এই কাজে যারা নিয়োজিত থাকবে, তাদেরকে দরকারমতো ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ বা ‘পিপিই’, জীবাণুনাশক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, ইত্যাদি দিতে হবে।

এখন পর্যন্ত নিশ্চিত প্রতিষেধক নেই বলে রুগীকে সুস্থ্য হয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত সেবা দিয়ে যেতে হবে। বাকি বিশ্বের হিসেব দেখলে বোঝা যাবে যে, এই রোগে আক্রান্ত বেশিরভাগ মানুষই সুস্থ্য হয়ে ওঠে। আগে থেকে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম না হলে সে নিশ্চিতভাবেই সুস্থ্য হয়ে যায়। কাজেই একজন মানুষ আক্রান্ত হলে তার কোয়ার‍্যান্টাইন ‘মিলিটারি প্রিসিশন’এর মাধ্যমে করতে হবে, যাতে অন্য কারুর মাঝে না ছড়ায়; বিশেষ করে যাদের আগে থেকেই বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা রয়েছে, তাদের সংস্পর্শে যাতে কিছুতেই না আসে, তা নিশ্চিত করতে হবে। প্রয়োজনে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। পশ্চিমা মূল্যবোধের মানুষের ব্যক্তিস্বাধীনতাকে প্রাধান্য দেয়া যাবে না। ব্যক্তিস্বাধীনতা ইতালি এবং বাকি ইউরোপের জন্যে কি বয়ে এনেছে, তা এখন সকলেরই জানা। এসময় কোন প্রকারের দুর্বলতা সারা জাতির জন্যে মহাদুর্যোগ বয়ে আনতে পারে।

তৃতীয়তঃ যেহেতু এই রোগ শ্বাসপ্রশ্বাস, হাঁচি কাশির মাধ্যমে ছড়ায়, তাই এই রোগ প্রতিরোধে ফ্রন্টলাইনে থাকবে ‘পিপিই’, জীবাণুনাশক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, মাস্ক, ইত্যাদি। পশ্চিমা বিশ্ব এবং চীন যেভাবে যুদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েছে, বাংলাদেশকেও সেটাই করতে হবে। যদি সেটা না-ই করা সম্ভব হয়, তাহলে বঙ্গবন্ধুর ‘ঘরে ঘরে দুর্গ গড়ে তোল... তোমাদের যার যা কিছু আছে তা-ই নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ো” কথাগুলি মূল্যহীন হয়ে যাবে।

বাংলাদেশ এতকাল কতটা উন্নয়ন করেছে, তার পরীক্ষা হবে আজ! বাংলাদেশের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সক্ষমতা যদি এই রোগের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা না যায়, তাহলে গত দুই দশকের সকল অর্থনৈতিক অগ্রগতি মুহুর্তের মাঝে ধূলায় মিশে যাবে! বাংলাদেশ গার্মেন্টস শিল্পে দুনিয়ায় এতটা এগিয়ে থাকার পরেও ‘পার্সোনাল প্রোটেকটিভ ইকুইপমেন্ট’ বা ‘পিপিই’ তৈরি করতে পারবে না, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। মাল্টিবিলিয়ন ডলারের এই ইন্ডাস্ট্রি দুর্যোগের সময় অথর্ব হয়ে বসে থাকবে, এটা মেনে নেয়া যায়না।

জীবাণুনাশক এবং হ্যান্ড স্যানিটাইজার এমন কোন জিনিস নয় যে এটা তৈরি করা যাবে না।জীবাণুনাশক হিসেবে ব্লিচিং পাউডার বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। একটা বড় এলাকা জীবাণুমুক্ত করতে হলে ব্যাপক পরিমাণে ব্লিচিং পাউডারের দরকার হবে। বাংলাদেশে সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড বা কস্টিক সোডা ম্যানুফ্যাকচারিং প্ল্যান্ট আছে বেশ কয়েকটা। ‘ক্লোর এলকালি প্ল্যান্ট’ বলে পরিচিত এই কারখানাগুলি ক্যালসিয়াম হাইপোক্লোরাইট বা ব্লিচিং পাউডার তৈরি করে। হ্যান্ড স্যানিটাইজার তৈরি করাটাও খুব কঠিন নয়। এলকোহল বেইজড হ্যান্ড স্যানিটাইজারে মূলতঃ ব্যবহৃত হয় ইথাইল এলকোহল অথবা আইসোপ্রোপাইল এলকোহল। আর একলোহল ছাড়া স্যানিটাইজারে ব্যবহৃত হয় বেনজালকোনিয়াম ক্লোরাইড। [৭] বাংলাদেশের কর্পোরেট হাউজগুলি কি সারাজীবন মুনাফার পিছনেই ছুটবে, নাকি দুর্যোগের সময় ‘ইউনিলিভার’এর মতো মাল্টিন্যাশনালের হাতে দেশের জাতীয় নিরাপত্তা ছেড়ে দিয়ে পালাবে?

‘এন ৯৫’ মাস্ক এবং ‘ভেন্টিলেটর’ উৎপাদনের ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত কঠিন জিনিস। কিন্তু এটাই কি সময় নয় নিজেদের সক্ষমতাকে দেখাবার? এখন না দেখালে কখন দেখাবে? পশ্চিমা বাজার ধরে অর্থ উপার্জনের জন্যে বাংলাদেশের কর্পোরেট হাউজগুলি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি আমদানি করেছে। আজকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সেটা করতে কেন কার্পণ্য করবে? সক্ষমতা থাকার পরেও যারা এসময় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না, তারা একসময় সকলকিছু হারাবে। আর আল্লাহও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না। আল্লাহ যাদেরকে সক্ষমতা দিয়েছেন, তাদেরকে সবচাইতে বেশি জবাবদিহিতা করতে হবে।

“অনন্তর যে ব্যক্তি স্বীয় প্রতিপালকের সামনে দণ্ডায়মান হওয়াকে (জবাবদিহি) ভয় করে এবং প্রবৃত্তি থেকে নিজেকে বিরত রাখে, জান্নাতই হবে তার আবাস”। (সূরা আন নাযিয়াত‌, আয়াত: ৪০)



----------------------------
[১] ‘UK coronavirus: Boris puts industry on war footing to build ventilators amid outbreak’, Express, 15 March 2020
[২] ‘GM, Tesla tackle ventilator shortage amid coronavirus pandemic’, USA Today, 22 March 2020
[৩] ’Masks and hand sanitizer replace iPhones and perfume: Firms redeploy factories to make coronavirus supplies’, Fortune, 17 March 2020
[৪] ‘BYD Opens World’s Largest Face Mask Manufacturing Plant’, BYD Global Press Release, 13 March 2020
[৫] ‘Coronavirus: China’s mask-making juggernaut cranks into gear, sparking fears of over-reliance on world’s workshop’, South China Morning Post, 12 March 2020
[৬] ’Distilleries Race to Make Hand Sanitizer Amid Coronavirus Pandemic’, The New York Times, 19 March 2020
[৭] ‘Fact check: No, hand sanitizer won't harm your pets if they lick your hand after you use it’, USA Today, 20 March 2020


1 comment:

  1. এটাই কি সময় নয় নিজেদের সক্ষমতাকে দেখাবার? এখন না দেখালে কখন দেখাবে? পশ্চিমা বাজার ধরে অর্থ উপার্জনের জন্যে বাংলাদেশের কর্পোরেট হাউজগুলি দুনিয়ার সর্বশেষ প্রযুক্তি আমদানি করেছে। আজকে মানুষের জীবন বাঁচাতে সেটা করতে কেন কার্পণ্য করবে? সক্ষমতা থাকার পরেও যারা এসময় মানুষের পাশে দাঁড়াবে না, তারা একসময় সকলকিছু হারাবে। আর আল্লাহও তাদেরকে ক্ষমা করবেন না

    ReplyDelete