Monday 28 October 2019

বলিভিয়া – লিথিয়াম যুদ্ধের শুরু?


২৮শে অক্টোবর ২০১৯
বলিভিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতাকে মূল্যায়ন করতে হলে অত্র অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এক খনিজ সম্পদকে হিসেবের মাঝে আনতে হবে। এই খনিজের নাম হলো লিথিয়াম। সবচাইতে হাল্কা এই ধাতু এখন ইলেকট্রিক ব্যাটারি তৈরির অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত বিশ্বে ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে লিথিয়ামের। গাড়ির জ্বালানি হিসেবে তেলের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে লিথিয়াম ব্যাটারি। লিথিয়াম হয়ে যাচ্ছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদার্থ। আর এই কৌশলগত পদার্থের বেশিরভাগ রিজার্ভই রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়।


২০শে অক্টোবর বলিভিয়াতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনের পর সুপ্রিম ইলেকটোরাল কোর্ট ঘোষণা দেয় যে, মোরায়েজ ৪৭ শতাংশ ভোট পেয়ে বিজয়ী হয়েছেন। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী কার্লোস মেসা পেয়ছেন ৩৬ শতাংশ ভোট। দু’জনের মাঝে ১০ শতাংশের বেশি ভোটের ব্যবধান থাকায় দ্বিতীয় রাউন্ডের নির্বাচনের আর দরকার হবে না। ভোট গননার প্রথম দিকে মোরায়েজ এগিয়ে থাকলেও ব্যবধান ছিল খুবই সামান্য। শেষের দিকের গণনায় হঠাত করেই মোরায়েজের পক্ষে ব্যবধান অনেক বেড়ে যায়। এতে বিরোধী দলগুলি ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ তোলে এবং ব্যাপক বিক্ষোভের ডাক দেয়। ‘এএফপি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বলিভিয়ার নির্বাচনের ফলাফলে পশ্চিমা দেশগুলি খুশি হতে পারেনি। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন এবং যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় রাউন্ড নির্বাচন করার জন্যে মোরায়েজের সরকারের উপর চাপ দিচ্ছে। অপরদিকে মোরায়েজ বলছেন যে, তার বিরোধীরা তার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানের চেষ্টা চালাচ্ছে। বলিভিয়ার রাজনীতিতে অস্থিরতার এই আভাসকে মূল্যায়ন করতে হলে অত্র অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ এক খনিজ সম্পদকে হিসেবের মাঝে আনতে হবে। এই খনিজের নাম হলো লিথিয়াম। সবচাইতে হাল্কা এই ধাতু এখন ইলেকট্রিক ব্যাটারি তৈরির অতি গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। উন্নত বিশ্বে ব্যাটারিচালিত ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার বাড়ার সাথে সাথে চাহিদা বাড়ছে লিথিয়ামের। গাড়ির জ্বালানি হিসেবে তেলের স্থলাভিষিক্ত হতে পারে লিথিয়াম ব্যাটারি। লিথিয়াম হয়ে যাচ্ছে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ এক পদার্থ। আর এই কৌশলগত পদার্থের বেশিরভাগ রিজার্ভই রয়েছে দক্ষিণ আমেরিকায়। ‘ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে’র হিসেবে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বড় লিথিয়াম রিজার্ভ পাওয়া গেছে বলিভিয়াতে; যা প্রায় ৯০ লক্ষ টনের মতো। পার্শ্ববর্তী দেশ চিলিতে রয়েছে ৭৫ লক্ষ টন এবং আর্জেন্টিনাতে ২০ লক্ষ টন। এর বাইরে চীনে ৩২ লক্ষ টনে এবং অস্ট্রেলিয়াতে ২৭ লক্ষ টন লিথিয়ামের রিজার্ভ পাওয়া গেছে।

  
‘ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে’র হিসেবে এখন পর্যন্ত পৃথিবীর সবচাইতে বড় লিথিয়াম রিজার্ভ পাওয়া গেছে বলিভিয়াতে; যা প্রায় ৯০ লক্ষ টনের মতো। পার্শ্ববর্তী দেশ চিলিতে রয়েছে ৭৫ লক্ষ টন এবং আর্জেন্টিনাতে ২০ লক্ষ টন। এর বাইরে চীনে ৩২ লক্ষ টনে এবং অস্ট্রেলিয়াতে ২৭ লক্ষ টন লিথিয়ামের রিজার্ভ পাওয়া গেছে।


সাদা সোনা?

২০১৮ সালের ডিসেম্বরে বলিভিয়া সরকার জার্মান কোম্পানি ‘এসিআই সিস্টেমস’এর সাথে একটা জয়েন্ট ভেঞ্চার প্রকল্পে লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড প্ল্যান্ট এবং লিথিয়াম ব্যাটারি তৈরিতে অগ্রসর হবার ঘোষণা দেয়। ১ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগের এই প্রকল্প বলিভিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমের উইউনিতে বাস্তবায়িত হবে। উইউনি হলো বৃহত্তম ‘সল্ট ফ্ল্যাট’ বা সমতল লবনের খনি। পৃথিবীর প্রায় অর্ধেক লিথিয়ামের রিজার্ভ রয়েছে বলিভিয়াতে। আর বলিভিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ চিলি এবং আর্জেন্টিনাতে রয়েছে আরও বেশকিছু রিজার্ভ। এই তিন দেশের রিজার্ভ মিলে একে ‘লিথিয়াম ট্রাইএঙ্গেল’ বা ‘লিথিয়াম ত্রিভুজ’ বলা হয়ে থাকে। বলিভিয়া এতদিন নিজের অংশের খনিগুলিকে ব্যাবহার করতে সমর্থ হয়নি। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ইভো মোরায়েজ চাইছিলেন যে, বলিভিয়ার লিথিয়াম শুধুমাত্র কাঁচামাল হিসেবে রপ্তানি না হয়। তার লক্ষ্য ছিল কর্মসংস্থান বৃদ্ধি হয় এমন কিছু শিল্প স্থাপন করা। একইসাথে প্রেসিডেন্ট মোরায়েজের সরকার এই প্রকল্পের পরিবেশগত সমস্যা নিয়েও চিন্তিত ছিল। জার্মানরা বলিভিয়ানদের আস্বস্ত করে যে এই প্রকল্পে পরিবেশগত সমস্যা খুব একটা নেই। একইসাথে তারা বলিভিয়াতে ব্যাটারি তৈরির কারখানা করার প্রস্তাব দেয়ায় অন্য প্রস্তাবগুলি থেকে এগিয়ে যায়।

‘রয়টার্স’ জানাচ্ছে যে, দুই বছর ধরে জার্মান কর্মকর্তারা তদবিরের জন্যে বলিভিয়াতে যাতায়াত করেছেন। বলিভিয়ার কর্মকর্তারাও জার্মানিতে ব্যাটারি ফ্যাক্টরি ঘুরে আসেন। এরপর ২০১৮ সালের এপ্রিলেই খুব সম্ভবতঃ জার্মানি কাজটা নিশ্চিত করে ফেলে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর জার্মান অর্থমন্ত্রী পিটার অল্টমায়ার বলেন যে, জার্মানির উচিৎ বিশ্বের নেতৃস্থানীয় ইলেকট্রিক ব্যাটারি প্রস্তুতকারক হয়ে যাওয়া। কারণ ব্যাটারি তৈরির খরচের একটা বড় অংশ আসে এর কাঁচামাল থেকে। তিনি আরও বলেন যে, জার্মান কোম্পানিগুলির উচিৎ আগেভাগেই নিজেদের চাহিদা অনুযায়ী লিথিয়ামের সরবরাহ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়া; এটা না করতে পারলে তারা অন্যের উপরে নির্ভরশীল হয়ে পড়বে এবং পিছিয়ে থাকবে। চুক্তিটাকে তিনি এই লক্ষ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ বলে আখ্যা দেন। চুক্তি মোতাবেক ২০২২ সাল থেকে পরবর্তী ৭০ বছর পর্যন্ত জার্মান কোম্পানি ‘এসিআই সিস্টেমস’ প্রতি বছর ৪০ হাজার টন লিথিয়াম হাইড্রক্সাইড উৎপাদন করবে। ‘এসিআই’এর প্রধান নির্বাহী উলফগ্যাং শ্মাটজ বলেন যে, এখান থেকে ৮০ শতাংশ লিথিয়ামই জার্মানিতে রপ্তানি হবে। ‘এসিআই’ চাইছে যে, এই লিথিয়াম প্ল্যান্টের ব্যাটারি বড় কিছু জার্মান গাড়ি নির্মাতা কোম্পানিকে সরবরাহ করতে।

এই প্রকল্পের মাধ্যমে জার্মানরা কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়াম ত্রিভুজে নিজেদের স্থান করে নিল। ‘এসিআই’এর সামনে একটা ভীতি রয়েছে যে, এর আগে বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ বিভিন্ন শিল্পকে সরকারীকরণ করেছিলেন। তবে এব্যাপারে কোম্পানির প্রধান নির্বাহী শ্মাটজ বলছেন যে, বলিভিয়ানরা নিশ্চিত করেছে যে তারা বিদেশী বিনিয়োগের নিরাপত্তা দেবে। এব্যাপারে মোটামুটি নিশ্চিত হলেও জার্মানরা যে ব্যাপারটাকে এড়িয়ে যেতে পারবে না তা হলো বলিভিয়া একটা স্থলবেষ্টিত দেশ। এখান থেকে লিথিয়াম জাহাজে ওঠাতে হলে পার্শ্ববর্তী দেশ চিলি বা পেরুর সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করতে হবে। ‘এসিআই’ বেশ ছোট একটা কোম্পানি; আর লিথিয়াম প্রসেসিং-এ তাদের কোন পূর্ব অভিজ্ঞতাই নেই। আর ঠান্ডা পরিবেশে অবস্থিত হওয়ায় উইউনিতে লবন থেকে লিথিয়াম আলাদা করতে বেশ কষ্ট করতে হবে। পার্শ্ববর্তী চিলিতে উত্তপ্ত মরুভূমিতে অবস্থিত হবার কারণে সেখানে লিথিয়াম প্রসেসিংএ খরচ কম হয়।

‘রয়টার্স’ তাদের বিশ্লেষণে বলছে যে, যখন বলিভিয়ার সরকার জয়েন্ট ভেঞ্চারের জন্যে পার্টনার খোঁজার ডাক দেয়, তখন চীনাদের নাম স্বাভাবিকভাবেই সামনে চলে আসে। কারণ পৃথিবীর বেশিরভাগ লিথিয়াম ব্যাটারি চীনেই তৈরি হয়, এবং বলিভিয়ার সরকারের সাথে চীনাদের সম্পর্ক বেশ ভালো। জার্মানরা চীন, রাশিয়া এবং কানাডার সাতটা কোম্পানিকে ডিঙ্গিয়ে কাজটা পেয়ে যায়। জার্মানির কেন্দ্রীয় সরকার এবং প্রাদেশিক সরকারের সরাসরি সম্পর্থন থাকার কারণে ‘এসিআই’ এই কাজের জন্যে কতটা উপযোগী, তা প্রমাণিত হয়। চীনারা বলিভিয়াতে ব্যাটারি তৈরির প্রস্তাব দেয়নি। তাদের যুক্তি ছিল যে, বলিভিয়াতে ব্যাটারি তৈরি করলে তা অর্থনৈতিকভাবে লাভজনক হবে না। বলিভিয়ানরা এই প্রকল্পের ৫১ শতাংশের মালিক থাকবে। এব্যাপারে বলিভিয়ানদের পূর্ব অভিজ্ঞতা মোটেই ভালো নয়। কয়েক’শ বছর ধরে বলিভিয়াতে রূপার খনির কাজ চলছে। বলিভিয়ার রূপার খনির উপর ভিত্তি করে স্পেন বিশ্বব্যাপী তার সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল। কিন্তু এই খনিতে অত্যন্ত বিপজ্জনক পরিবেশে শ্রম দেয়া ছাড়া বলিভিয়ানরা কিছুই পায়নি। রূপার খনি শেষ হয়ে গেলে সকলেই বলিভিয়ানদের ভুলে যায়। ইভো মোরায়েজের সরকারও ইতিহাসকে মাথায় রেখেই বলিভিয়ার খনিজ সম্পদের নিয়ন্ত্রণ রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে রাখতে চান। সেই আঙ্গিকে ২০০৬ সালে মোরায়েজ বিদেশী কোম্পানি ‘পেট্রোব্রাজ’ এবং ‘রেপসল’এর তেলের খনিগুলি সরকারিকরণ করেন। বলিভিয়ার সরকারি কোম্পানি ‘ওয়াইএলবি’র প্রধান হুয়ান কার্লোস মন্টেনেগ্রো বলেন যে, কোন কোম্পানিকে কাজ দেয়া হবে, সেটা ঠিক করতে ভূরাজনৈতিকে প্রধান্য দিতে হয়েছে। তিনি বলেন যে, তারা চাননা যে, একটা দেশ এখানে সকলকিছু নিয়ন্ত্রণ করুক; বরং এখানে একটা ব্যালান্স থাকা উচিৎ। বলিভিয়ার জন্যে দরকার শুধুমাত্র অর্থনৈতিক সহযোগী নয়, বরং দরকার ভূরাজনৈতিক কৌশলগত সহযোগী। তিনি আরও বলেন যে, চীনকে তারা এড়িয়ে যেতে চান না। কারণ চীনারা দুনিয়ার সকল দেশেই রয়েছে; তাদেরকে এড়িয়ে যাওয়া সম্ভব নয়।

   
লিথিয়াম ত্রিভুজের মাঝে চিলিরই সবচাইতে বেশি সফল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। চিলির সমুদ্রবন্দর থেকে লিথিয়াম খুব সহজেই প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে চীন পৌঁছে যাবে। বলিভিয়াকে চিলির বন্দরগুলিই ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার খনি থেকে লিথিয়াম বের করে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো বেশ কঠিন। আর্জেন্টিনার সমুদ্রবন্দরগুলি আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে।


চীনের পাল্টা আক্রমণ

জার্মানরা বলিভিয়াতে উইউনি খনিতে বিনিয়োগ নিশ্চিতের পর অনেকেই বলেছিলেন যে জার্মানরা চীনাদের হারিয়ে সেই স্থান দখল করে নিয়েছে। সেটার জবাব এসেছে চীনাদের কাছ থেকে এবছরের ফেব্রুয়ারিতে। বলিভিয়ার সরকার ঘোষণা দেয় যে, বলিভিয়ার কইপাসা এবং পাসতোস গ্রান্দেস খনির উন্নয়নের জন্যে সেদেশের সরকার চীনের ‘শিনজিয়াং টিবিইএ গ্রুপ’ নামের এক কনসোর্টিয়ামের সাথে জয়েন্ট ভেঞ্চারের চুক্তি করেছে। ২ দশমিক ৩ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে প্রথমে শুধু চীনারাই বিনিয়োগ করবে। তবে জার্মান কোম্পানির সাথে চুক্তির মতোই এই জয়েন্ট ভেঞ্চারেও ৫১ শতাংশ থাকবে বলিভিয়া সরকারের কাছে। চীনা কোম্পানি জার্মানি, রাশিয়া এবং আয়ারল্যান্ডের মোট ছয়টি কোম্পানিকে হারিয়ে এই চুক্তি করে। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ বলেন যে, তারা চীনকে নির্বাচন করেছেন কারণ চীনে রয়েছে লিথিয়াম ব্যাটারির একটা নিশ্চিত বাজার। বলিভিয়ান সরকার উইউনি খনিতে প্রায় ২ কোটি ১০ লক্ষ টন লিথিয়াম আছে ঘোষণা দিলেও কইপাসা এবং পাসতোস গ্রান্দেস খনিতে কতটা লিথিয়াম রয়েছে, তা জানায়নি। বলিভিয়ার সরকার বলছে যে, তারা হয়তো চীনে একটা ব্যাটারি ফ্যাক্টরি তৈরিতে সহযোগিতা করতে পারে। অর্থাৎ চীনারা বলিভিয়াতে ব্যাটারি ফ্যাক্টরি করছে না।

বলিভিয়ার সাথে চীনের সম্পর্ক বেশ ভালো। ২০১৮ সালে প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ চীন সফর করেন। সফরকালে দুই দেশ তাদের সম্পর্ককে কৌশলগত সম্পর্কে উন্নীত করার ঘোষণা দেয়। এর আগে ব্রাজিলের সাথে চীন তার সম্পর্ককে এই পর্যায়ে উন্নীত করে ২০০৯ সালে; চিলির সাথে ২০১৬ সালে; এবং উরুগুয়ের সাথে ২০১৮ সালের জানুয়ারিতে। অর্থাৎ বলিভিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়ন দক্ষিণ আমেরিকায় চীনের দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনারই অংশ। ‘নর্থ আমেরিকান কংগ্রেস অন ল্যাটিন আমেরিকা’র এক গবেষণায় বলা হচ্ছে যে, ২০১৬ সাল পর্যন্ত বলিভিয়াতে ১’শর মতো চীনা কোম্পানি কাজ করছিল। এরা অনেকেই সরকারি কাজকর্মের একটা বড় অংশ নিয়ে নিয়েছে। ইলেকট্রনিক্স, নিরাপত্তা, পরিবহণ, টেলিকমিউনিকেশন, অবকাঠামো উন্নয়ন, ইত্যাদি খাতে চীনারা কাজ করছে সেখানে। এছাড়াও কাগজ কারখানা, চিনি পরিশোধনাগার, দস্তা ও টিন প্রসেসিং কারখানা, স্টিল মিল, ইত্যাদি খানে চীনারা বিনিয়োগ করেছে। এমনকি বর্তমানে বলিভিয়ার সরকার স্বল্প পরিসরে যে লিথিয়াম উৎপাদন করছে, তা-ও চীনা প্রযুক্তির কারণেই সম্ভব হচ্ছে। ২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে বলিভিয়া প্রথমবারের মতো ১৫ টন লিথিয়াম চীনে রপ্তানি করে। বলিভিয়ার তামা খনির উন্নয়নেও চীনারা এগিয়ে এসেছে। বলিভিয়ার বিভিন্ন স্থানে তেল খনি উন্নয়নেও চীনা কোম্পানিগুলি কাজ পেয়েছে। মোট কথা, বলিভিয়ার লিথিয়াম খনিতে চীনারা কাজ করবে, এটা মোটেই অস্বাভাবিক ছিল না। বরং জার্মানদের কাজ পাওয়াটাই ছিল অস্বাভাবিক।

ভূরাজনৈতিক গবেষণা সংস্থা ‘স্ট্রাটফর’ বলছে যে, দক্ষিণ আমেরিকার লিথিয়াম খনির গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পাবে। কারণ সামনের দিনগুলিতে ইলেকট্রিক গাড়ির ব্যবহার আরও বাড়তে চলেছে; আর এই গাড়িগুলি চলবে লিথিয়াম ব্যাটারিতেই। লিথিয়ামকে এখন বলা হচ্ছে ‘নতুন তেল’। ‘স্ট্রাটফর’ বলছে যে, লিথিয়াম ত্রিভুজের মাঝে চিলিরই সবচাইতে বেশি সফল হবার সম্ভাবনা রয়েছে। চিলির সমুদ্রবন্দর থেকে লিথিয়াম খুব সহজেই প্রশান্ত মহাসাগর পেরিয়ে চীন পৌঁছে যাবে। বলিভিয়াকে চিলির বন্দরগুলিই ব্যবহার করতে হবে। অন্যদিকে আর্জেন্টিনার খনি থেকে লিথিয়াম বের করে সমুদ্রবন্দর পর্যন্ত পৌঁছানো বেশ কঠিন। আর্জেন্টিনার সমুদ্রবন্দরগুলি আটলান্টিক মহাসাগরের পাড়ে। তবে আর্জেন্টিনার খনিতে চিলির কোম্পানি ‘এসকিউএম’ এবং কানাডার ‘লিথিয়াম আমেরিকাস কর্পোরেশন’ ও ‘এক্সার’ বিনিয়োগ করছে। অন্যদিকে নিজেদের খনিকে পুরোপুরি ব্যবহার করতে পারার মতো যথেষ্ট প্রযুক্তিগত যোগ্যতা বলিভিয়ানদের নেই বলেই তারা বিদেশী সহযোগী খুঁজছে। নিজেদের চেষ্টায় তারা এখন মাসে ১০ টনের বেশি লিথিয়াম কার্বনেট উৎপাদন করতে পারছে না। তবে চিলি কৌশলগতভাবে এগিয়ে থাকলেও তাদের ক্ষেত্রেও নতুন করে সমস্যা তৈরি হতে যাচ্ছে। চিলিতে চলছে ব্যাপক সরকারবিরোধী বিক্ষোভ। ২৫শে অক্টোবর চিলির রাজধানী সান্তিয়াগোতে হাজারো মানুষের বিক্ষোভের মাঝে ৭’শ মাইল উত্তরের আতাকামা লবনের খনির কাছে সাধারণ জনতা রাস্তা আটকে ফেলে। এই রাস্তা দিয়েই চিলির লিথিয়াম সমুদ্র পর্যন্ত পৌঁছে। পরিবহন খরচ বৃদ্ধির প্রতিবাদে শুরু হওয়া এই বিক্ষোভে ইতোমধ্যেই ১৭ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে।

   
ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে মোরায়েজ তার জনসমর্থন যতো বেশি হারাবেন, ততই তাকে নির্ভরশীল হতে হবে পশ্চিমাদের সমর্থনের উপর। আবার বিদেশী কোম্পানিগুলিকে বেশি ছাড় দিতে থাকলে মোরায়েজ তার জনসমর্থন আরও হারাবেন। একইসাথে বলিভিয়ার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়ামের খনিগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পশ্চিমাদের সাথে চীনের উত্তেজনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।


বলিভিয়ায় খনিজ সম্পদের রাজনীতি

৭ই অক্টোবর পোতোসি প্রদেশে জার্মান কোম্পানি ‘এসিআই’এর চুক্তির বিরুদ্ধে আন্দোলন শুরু হয়। এই প্রদেশেই বলিভিয়ার বেশিরভাগ খনিজ সম্পদ রয়েছে। আন্দোলনকারীরা বলছেন যে, অত্র অঞ্চলের মানুষ এই প্রকল্প থেকে যথেষ্ট পরিমাণ সুবিধা ভোগ করতে পারবে না। ‘পোতোসি সিভিক কমিটি’ বিক্ষোভ মিছিল করে এবং এবং ঘোষণা দেয় যে, প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ তাদের কথা না শুনলে তারা তাদের কর্মকান্ডকে আরও প্রসারিত করবেন। প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ বিরোধী দলের সমালোচনা করে বলেন যে, তারা প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে আগে এই আন্দোলন করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে। এই আন্দোলন শুরুর দুই সপ্তাহের মাঝে ২০শে অক্টোবর বলিভিয়াতে প্রেসিডেন্ট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়।

৬০ বছর বয়সী ইভো মোরায়েজ জাতিগতভাবে ল্যাটিন আমেরিকার আদিবাদী। আর তিনিই বলিভিয়ার প্রথম আদিবাসী প্রেসিডেন্ট। বলিভিয়ার সংবিধানে একজন প্রেসিডেন্টের পক্ষে দু’বারের বেশি ক্ষমতাসীন হবার নিয়ম না থাকলেও তিনি এবার চতুর্থবারের মতো নির্বাচন করেছেন। ২০১৬ সালে এক গণভোটে হেরে গিয়ে তিনি চতুর্থবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দাঁড়াবার পক্ষে জনমত যোগাড়ে ব্যর্থ হন। এর এক বছর পর সাংবিধানিক আদালত থেকে তিনি চতুর্থবারের মতো নির্বাচনে দাঁড়াবার অনুমতি নিয়ে নেন। অপরদিকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী কার্লোস মেসা ২০০৩ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত প্রেসিডেন্ট বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট ছিলেন। ২০০৩ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট গনথালো সানচেজ ডে লোজাদা ব্রিটিশ এবং স্প্যানিশ কোম্পানির সাথে দেশের গ্যাস রপ্তানির চুক্তি করতে গিয়ে ব্যাপক জনরোষের মুখে পড়ে পদত্যাগ করেন। এরপর কার্লোস মেস ক্ষমতা নিলেও বিক্ষোভ থামাতে ব্যর্থ হন; এবং ২০০৫ সালে তিনিও পদত্যাগ করেন। ঐ একই বছরের ডিসেম্বরে বলিভিয়ার ‘গ্যাস যুদ্ধ’র নেতৃত্ব দেয়া বামপন্থী এবং আদবাসী নেতা ইভো মোরায়েজ প্রায় ৫৪ শতাংশ ভোট পেয়ে ক্ষমতায় আরোহণ করেন।

২০০৫ সালে বলিভিয়ার গ্যাস রপ্তানি বন্ধ করার শপথ নিয়েই মোরায়েজ ‘গ্যাস যুদ্ধে’ নেতৃত্ব দেন এবং পরিশেষে ক্ষমতায় আরোহণ করেন। আর এখন লিথিয়াম রপ্তানির জন্যে মোরায়েজ চুক্তি করেছেন জার্মান এবং চীনা কোম্পানির সাথে। বলিভিয়ার খনিজ সম্পদ আহরণের ক্ষেত্রে রক্ষণশীল হওয়ায় পশ্চিমা দেশগুলি মোরায়েজকে বাধা হিসেবে দেখেছে। পশ্চিমা কোম্পানিগুলিকে জয়েন্ট ভেঞ্চারে বিনিয়োগ করতে বাধ্য করায় মোরায়েজকে পশ্চিমারা লিথিয়ামের বাজারে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা হিসেবে দেখছে। বলিভিয়াতে জার্মান কোম্পানির সাথে চুক্তির বিরোধিতা করে আন্দোলন শুরু হলেও বিনিয়োগের ধরন এবং কর্মসংস্থান তৈরির ক্ষেত্রে জার্মানরা চীনাদের থেকে এগিয়ে আছে। অর্থাৎ এক্ষেত্রে জার্মানদের চাইতে চীনাদের বিনিয়োগই বেশি সমস্যায় পড়বে।

প্রেসিডেন্ট মোরায়েজ নির্বাচনের ফলাফল পরীক্ষা করার জন্যে প্রস্তুত বলে জানিয়েছেন। তিনি ক্ষমতায় আসার পর বলিভিয়ার অর্থনীতিকে গতিশীল করেন। ২০০৫ সালে বলিভিয়ার জিডিপি ছিল ১০ বিলিয়ন ডলার, যা বর্তমানে বিশ্বব্যাংকের হিসেবে ৪০ বিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ তার ১৪ বছরের শাসনামলে বলিভিয়ার অর্থনীতির আকার চারগুণ হয়েছে। তবে বলিভিয়ার অর্থনীতি খনিজ রপ্তানির উপরে যথেষ্টই নির্ভরশীল। জিডিপির প্রায় পাঁচ ভাগের এক ভাগই রপ্তানি। আর রপ্তানি পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশই খনিজ পদার্থ, যার মাঝে রয়েছে গ্যাস, স্বর্ণ, রূপা, দস্তা, এন্টিমনি, টাংস্টেন, ইত্যাদি। মোট রপ্তানি আয়ের প্রায় অর্ধেকই আসে ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনাতে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস রপ্তানি করে। মোরায়েজের সরকার ক্ষমতায় এসে গ্যাস রপ্তানিতে মনোযোগী হন। তবে তিনি গ্যাসের খনিগুলিকে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে রাজস্ব বৃদ্ধি করেন। মোরায়েজের শাসনামলে আন্তর্জাতিক বাজারে খনিজের মূল্য ভালো থাকায় বলিভিয়ার রপ্তানি আয় বাড়তে থাকে। মোরায়েজের অর্থনৈতিক সাফল্য তার তিনবার নির্বাচনে জেতার পিছনে বড় কারণ ছিল।

স্বেচ্ছাচারিতার মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার কারণে ইভো মোরায়েজের জনসমর্থন আগের চেয়ে অনেক কমলেও এখনও তার বেশ জনসমর্থন রয়েছে। আর যেহেতু বলিভিয়াতে খনিজ সম্পদ রক্ষার একটা রক্ষণশীল আন্দোলন আগে থেকেই রয়েছে, তা সর্বদা মোরায়েজের বামপন্থী সরকারকে শক্ত ভিত্তি দিয়েছে। তবে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করতে খনিজ রপ্তানির দিকেই ঝুঁকতে হয়েছে মোরায়েজকে। একইসাথে লিথিয়াম খনির উন্নয়নে পশ্চিমা কোম্পানির সাথে চুক্তিও করতে হয়েছে তার সরকারের, যা কিনা মোরায়েজের একসময়কার আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। মোরায়েজের দুর্বল অবস্থান পশ্চিমারা ব্যবহার করবে বলিভিয়ার কাছ থেকে সর্বোচ্চ সুবিধা আদায় করে নেবার লক্ষ্যে। অপরদিকে সাংবিধানিকভাবে বেআইনী পদ্ধতিতে তৃতীয়বার প্রেসিডেন্ট হবার পরেও পশ্চিমা দেশগুলি বলিভিয়ার সাথে ভালো সম্পর্ক রেখে চলেছে। গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক চুক্তিগুলিকে পশ্চিমারা মোরায়েজকে ক্ষমতাচ্যুত করার উপরে প্রাধান্য দিয়েছে। কিন্তু এখন ভূরাজনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়ামের খনিগুলি উন্নয়নের ক্ষেত্রে পশ্চিমারা তাদের নীতিতে পরিবর্তন আনতে পারে। ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে মোরায়েজ তার জনসমর্থন যতো বেশি হারাবেন, ততই তাকে নির্ভরশীল হতে হবে পশ্চিমাদের সমর্থনের উপর। আবার বিদেশী কোম্পানিগুলিকে বেশি ছাড় দিতে থাকলে মোরায়েজ তার জনসমর্থন আরও হারাবেন। একইসাথে বলিভিয়ার কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ লিথিয়ামের খনিগুলি নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে পশ্চিমাদের সাথে চীনের উত্তেজনা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাবে।

2 comments:

  1. assalamu alaikum
    nice write up
    some queries
    1. argentina is better in condition compare to others two ,is it possible for them to gain profit by establishing or upgrading the existing railroad to export the lithium ?
    2. is there any possibility for chilli to overcome and earn the profit from the lithium market ?
    3. how this 3 countries can gain profit as they export only raw materials where major portion of the price are tagged in finished goods (in this case lit-ion battery)
    4. can they form a consortium with the technical help from developed countries) and make product to gain more profit ?
    5.if not in a brief what will be the future of this lithium talks ?
    off topic 1:
    বাংলাদেশকে বলা হয় প্রতিরক্ষার স্বর্গ। আর স্নাইপিং এর জন্য বাংলাদেশের ভূমি ও প্রকৃতি খুবই উপযোগী।

    want to know why and how we call it as a defenders paradise and in which way it is a very well place for sniping

    off topic 2:(but relatable with the post)
    https://bdnews24.com/economy/2019/10/28/bangladeshi-scientists-plan-to-turn-waste-into-eco-friendly-hydrogen-fuel

    queries :
    1.what is your thought on this ?
    2.is there any strategic issue that can affect adversely to this good effort ?
    3.i am not clear from the news, is it more safer from the existing fuel that we use in our cooking ?
    waiting for your thoughtful answer .
    will be grateful if you answer.
    jajak allah.

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওয়াআলাইকুম সালাম!

      অনেক ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্যে।

      প্রথম তিনটি প্রশ্নের উত্তর একসাথেই দেয়া যায়। এই তিনটি দেশের কোনটারই লিথিয়াম বিক্রি করে ধনী হওয়া কঠিন। কারণ এটি থেকে যে পণ্যগুলি তৈরি করা হবে, তার উপরে তাদের কোন নিয়ন্ত্রণ থাকবে না। চতুর্থ প্রশ্নের উত্তর এক্ষেত্রে চলে আসে। এই দেশগুলি প্রযুক্তিগত দিক থেকে অনেক পিছনে। আর প্রযুক্তি যাদের হাতে রয়েছে, তাদের উপরে এই দেশগুলির কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। কাজেই এই দেশগুলিকে অন্য দেশের ইচ্ছের উপরে নির্ভর করতে হবে।
      পঞ্চম প্রশ্নের উত্তর এই লেখার মাঝেই আছে। লিথিয়াম হতে চলেছে তেলের বিকল্প। বিশ্বব্যাপী মোটরগাড়ির ব্যবহার বাড়ার সাথেসাথেই তেলের চাহিতা আকাশচুম্বী হয়ে যায়। আর এখন এই গাড়িগুলিই সামনের দিনে যদি ব্যাটারিতে চলতে থাকে, তাহলে লিথিয়ামের ক্ষেত্রেও একই ব্যাপার ঘটবে। কেউ কেউ বলিভিয়াকে লিথিয়ামের সৌদি আরব বলছেন। লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে বলেই এই দেশগুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে প্রতিযোগিতা সামনের দিনে আরও বৃদ্ধি পাবে।

      স্নাইপারের ব্যাপারে আপনি যে প্রশ্নটা করেছেন, তা এতদিন চিন্তার খোরাক ছিল বাংলাদেশের জন্যে। এখন অবশ্য চিন্তা করতে হচ্ছে অন্যভাবে। যেমন - স্নাইপারদের প্রতিযোগিতায় আপনি যদি নেপাল, ভুটান, শ্রীলংকার সাথে আসাম, ত্রিপুরা, মেঘালয়কে আলাদাভাবে নিমন্ত্রণ করেন, তাহলে দিল্লী এতে বাধা দেবে কি?

      বিকল্প জ্বালানি নিয়ে গবেষণা হচ্ছে; হবে। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জ্বালানি গুরুত্বপূর্ণ হবে। যেমন একসময় কয়লা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গিয়েছিল রেলগাড়ি আর জাহাজে স্টিম ইঞ্জিনের কারণে। এরপর তেল গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় জাহাজের জ্বালানি তেল হবার কারণে। এরপর তেল আরও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় গাড়ির কারণে। এরপর নিউক্লিয়ার গুরুত্বপূর্ণ হয়ে যায় বোমার কারণে। এখন নিকেল-কোবাল্ট-লিথিয়াম গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ব্যাটারির কারণে। এই বিবর্তন চলতেই থাকবে। ইউরোপে ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিপ্লবের পর থেকে মানুষ জ্বালানির জন্যে মরিয়া হয়ে ছুটেছে; যুদ্ধ করেছে; হত্যা করেছে। এগুলি মানুষ করেছে তার অনিয়ন্ত্রিত চাহিদাকে খুশি করতে। তার চাহিদার জন্যেই দরকার হয়েছে বিদ্যুৎ; যার জন্যে দরকার হয়েছে জ্বালানি। ইন্ডাস্ট্রিয়াল বিপ্লব যে চিন্তার কারণে হয়েছিল, সেই চিন্তাগুলিই এখন ক্ষয়িষ্ণু। তাই চিন্তার ভবিষ্যৎ নিয়েই কথা বলা দরকার। সেটাই বলে দেবে যে মানুষ ভবিষ্যতে কি ধরনের জ্বালানির দিকে ছুটবে।

      আশা করি কিছু উত্তর পাবেন। একটু চিন্তা করলে হয়তো আরও কিছু পেতে পারেন।

      বারাক আল্লাহ!

      Delete