Saturday 24 August 2019

ভেনিজুয়েলার সরকারকে টিকিয়ে রেখেছে কিউবার ইন্টেলিজেন্স?


২৪শে অগাস্ট ২০১৯
অর্থনৈতিক সমস্যায় পতিত হবার পর ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি এখন মধ্য আমেরিকার ছোট দেশগুলির আকারে এসে পৌঁছেছে, যদিও দেশটা বিশ্বে বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির একটা; এবং পৃথিবীর সবচাইতে বড় তেলের রিজার্ভ (প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ব্যারেল) রয়েছে সেখানে। মার্কিন অবরোধ এবং ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতি মাসে ভেনিজুয়েলার তেল বিক্রির আয় ১৫ শতাংশ করে কমছে। ভেনিজুয়েলা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার পিছনে সবচাইতে বড় স্তম্ভ হলো এর সেনাবাহিনী, যা এখনও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থন করে যাচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র বলছে যে, মাদুরোকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রেখেছে কিউবা।



যুক্তরাষ্ট্র বনাম ভেনিজুয়েলা-কিউবা

গত ২৪শে জুলাই ভেনিজুয়েলায় মার্কিন বিশেষ প্রতিনিধি এলিয়ট এব্রামস এক অনুষ্ঠানে ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে টিকিয়ে রাখতে বাইরের দেশের হস্তক্ষেপের ব্যাপারে কথা বলেন। তিনি বলেন যে, ভেনিজুয়েলার অর্থনৈতিক অচলাবস্থার মাঝে মাদুরো সরকার ৩৮ মিলিয়ন ডলার খরচ করে সামরিক ইউনিফর্ম কিনেছে। মে মাসে ২’শ ৯ মিলিয়ন ডলার খরচে ভেনিজুয়েলা সরকার রাশিয়ার সহায়তায় তার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ঠিকঠাক করেছে। একইসাথে ৯টা রুশ ‘সুখোই-৩০’ যুদ্ধবিমান আর ৮টা পরিবহণ হেলিকপ্টার ক্রয়ের কথাও হয়েছে রুশদের সাথে। তবে রাশিয়ার ব্যাপারে এব্রামসের কথাগুলিতে নতুন কিছু না থাকলেও তিনি কিউবা নিয়ে যে কথাগুলি বলেছেন, তা অনেককেই অবাক করেছে। তিনি বলেন যে, ভেনিজুয়েলাতে আড়াই হাজার কিউবান ইন্টেলিজেন্স এজেন্ট কাজ করছে। আর এই সুযোগে কিউবা ভেনিজুয়েলা থেকে বিনা খরচে তেলের সরবরাহ পাচ্ছে। এব্রামসের কথার একদিন পরই আরেকজন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের সাথে টেলিকনফারেন্সের সময় একই ধরনের কথা বলেন। তিনি বলেন যে, কিউবার আর্থিক নেটওয়ার্ক, আয়ের উৎস, তেলের বাণিজ্য – এসকল কিছুর বিরুদ্ধেই মার্কিন সরকার ব্যবস্থা নিয়েছে। এই ব্যবস্থা আরও কঠোর হবে যদি কিউবানরা ভেনিজুয়েলার সরকারকে সমর্থন দেয়া বন্ধ না করে। আসলেই কি ভেনিজুয়েলায় কিউবার ততটা প্রভাব রয়েছে? মার্কিন চেষ্টার বিরুদ্ধে ভেনিজুয়েলার সরকারকে টিকিয়ে রাখতে কিউবার ভূমিকাই বা কতটুকু?

মার্কিন কর্মকর্তাদের হুমকির পরদিনই কিউবার ‘হাভানা টাইমস’ পত্রিকার এক খবরে বলা হয় যে, কিউবার প্রেসিডেন্ট মিগেল দিয়াজ-কানেল কিউবা ভেনিজুয়েলাকে তার সমর্থন দেয়া অব্যাহত রাখবে। কিউবান বিপ্লবের ৬৬তম বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে দিয়াজ-কানেল বলেন যে, ওয়াশিংটন কিউবার বিদ্যুৎ, পানি, এমনকি বাতাস আটকে দিতে চাইছে যাতে কিউবা ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট মাদুরোকে সহায়তা দিতে না পারে। মার্কিনীরা কিউবার বন্দরে তেলের জাহাজ ভিড়তে বাধা দিচ্ছে, জাহাজ কোম্পানিগুলিকে ভীতি প্রদর্শন করছে। ভেনিজুয়েলা থেকে কিউবায় তেল নিয়ে যাওয়া কয়েকটা কোম্পানির উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে। মার্কিন অবরোধের কারণে জুলাই মাসে কিউবায় পর্যটকের আগমন প্রায় ২৪ শতাংশ কমে গেছে। তবে একইসাথে কিউবার প্রেসিডেন্ট এ-ও বলেন যে, কিউবা ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিক করতে চায়; পারস্পরিক সন্মান প্রদর্শনের ভিত্তিতে নিজেদের বিরোধগুলিকে দেখতে চাচ্ছে কিউবা। তবে প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সময়ে মার্কিনীরা যখন কিউবার সাথে সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের মাধ্যমে দেশটাকে নিজেদের প্রভাব বলয়ে নিয়ে আসার চেষ্টা করছিল, ঠিক তখনই ট্রাম্প প্রশাসন সেখান থেকে পুরোপুরি উল্টো পথে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। কিউবার সাথে মার্কিনীদের বহু বছরের বিরোধের সূত্রে কিউবা তাদের নিরাপত্তাকে সর্বদাই গুরুত্ব দিয়ে দেখেছে; বিশেষতঃ তাদের ইন্টেলিজেন্স সার্ভিসের সক্ষমতাকে গড়ে তুলেছে।

‘কার্নেগি এনডাউমেন্ট ফর ইন্টারন্যাশনাল পিস’এর ফেলো মইজেস নাইম ১৯৯০-এর দশকে ভেনিজুয়েলার সরকারে ছিলেন। মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক ‘জি’-জিরো মিডিয়া’র সাথে এক সাক্ষাতে তিনি বলেন যে, অর্থনৈতিক সমস্যায় পতিত হবার পর ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি এখন মধ্য আমেরিকার ছোট দেশগুলির আকারে এসে পৌঁছেছে, যদিও দেশটা বিশ্বে বৃহৎ তেল উৎপাদনকারী দেশগুলির একটা; এবং পৃথিবীর সবচাইতে বড় তেলের রিজার্ভ (প্রায় ৩০০ বিলিয়ন ব্যারেল) রয়েছে সেখানে। মার্কিন অবরোধ এবং ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতির কারণে প্রতি মাসে ভেনিজুয়েলার তেল বিক্রির আয় ১৫ শতাংশ করে কমছে। ভেনিজুয়েলা সরকারের ক্ষমতায় টিকে থাকার পিছনে সবচাইতে বড় স্তম্ভ হলো এর সেনাবাহিনী, যা এখনও প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে সমর্থন করে যাচ্ছে। এর কারণ হিসেবে মইজেস নাইম বলছেন যে, সেনাবাহিনীর হাতে আর কোন অপশন নেই। এবং একইসাথে মাদুরোকে সমর্থন দিয়ে চলছে কিউবার ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস। ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি, রাজনীতি, কূটনীতি – বিভিন্ন ক্ষেত্রে কিউবার ইন্টেলিজেন্সের প্রভাব এখন ব্যাপক।

গত মে মাসে ‘অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস’এ এক ভাষণে কিউবা গবেষক মারিয়া সি ওয়েরলাউ বলেন যে, দুর্বল অর্থনীতি এবং ছোট জনসংখ্যা সত্ত্বেও কিউবা বস্তুতঃ ভেনিজুয়েলার দখল নিয়ে নিয়েছে। কোন গুলি খরচ না করেই কিউবা তার চাইতে অনেক বড় এবং অনেক বেশি বিত্তশালী একটা দেশের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিয়েছে। ওয়েরলাউ-এর কথাগুলি যে ভিত্তিহীন নয়, তার প্রমাণ পাওয়া যায় ভেনিজুয়েলার ব্যাপারে কানাডার কূটনৈতিক চেষ্টা দেখে। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, কানাডার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ক্রিস্টিয়া ফ্রিল্যান্ড ২২শে অগাস্ট ঘোষণা দেন যে, তিনি কিউবা যাচ্ছেন সেদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদরিগেজের সাথে ভেনিজুয়েলা বিষয়ে কথা বলতে। মে মাস থেকে এটা হবে রদরিগেজের সাথে তার তৃতীয় বৈঠক।

 
ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকার কারণে ১৯৯৯ সালে হুগো শাভেজ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হবার পর ‘জি-২’এর জন্যে নতুন করে দুয়ার খুলে যায়। কিউবা থেকে আসা ডাক্তার, ক্রীড়া প্রশিক্ষক, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝ দিয়েই ‘জি-২’ ভেনিজুয়েলায় তাদের উপস্থিতি গড়ে তোলে। ২০০৭ সালে হুগো শাভেজ বলেন যে, ভেনিজুয়েলাতে ২০ হাজারের বেশি কিউবান ডাক্তার, নার্স এবং টেকনিশিয়ান কাজ করছে। ২০০২ সালে হুগো শাভেজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টাটাই ছিল দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট।



হুগো শাভেজ এবং ফিদেল ক্যাস্ট্রো

‘জিওপলিটিক্যাল মনিটর’এর এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, ‘কিউবান ইন্টেলিজেন্স ডিরেকটরেট’ বা ‘জি-২’-এর শক্তির উৎস হচ্ছে ঠান্ডা যুদ্ধের সময় ১৯৬০-৭০-এর দশকে সোভিয়েত এবং পূর্ব-জার্মানির ইন্টেলিজেন্সের দ্বারা প্রশিক্ষণের ভিত। টানা ছয় দশক যুক্তরাষ্ট্রের কাছাকাছি অবস্থিত হয়েও সমাজতান্ত্রিক সরকারকে রক্ষা করতে পারার সাথে সাথে ‘জি-২’-এর ভিত আরও শক্ত হয়েছে। ফিদেল ক্যাস্ট্রোকে হত্যা করার বেশ কয়েকটা চেষ্টাকেও তারা প্রতিহত করেছে বলে শোনা যায়। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকার বেশকিছু সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবী গ্রুপকে ‘জি-২’ প্রশিক্ষণ দিয়েছে। আফ্রিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং ভিয়েতনামেও তাদের জড়িত থাকার কথা জানা যায়। ১৯৫৯ সালে কিউবায় সমাজতান্ত্রিক বিপ্লবের পর থেকেই ‘জি-২’ ভেনিজুয়েলায় প্রভাব বিস্তারে সচেষ্ট হয়েছিল। কিউবা ভেনিজুয়েলার বামপন্থী বিপ্লবীদের সহায়তা করছিল। অন্যদিকে ভেনিজুয়েলার সরকার ছিল বামপন্থা-বিরোধী। তাই এসময়ে দুই দেশের সম্পর্ক সহজ ছিল না। ঠান্ডা যুদ্ধ শেষের পর থেকে কিউবার জ্বালানি নিরাপত্তা শঙ্কার মাঝে পড়ে গেলে ভেনিজুয়েলা কিউবার কাছে আবারও গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ফিদেল ক্যাস্ট্রোর সাথে ভালো বন্ধুত্ব থাকার কারণে ১৯৯৯ সালে হুগো শাভেজ ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হবার পর ‘জি-২’এর জন্যে নতুন করে দুয়ার খুলে যায়। কিউবা থেকে আসা ডাক্তার, ক্রীড়া প্রশিক্ষক, টেকনিশিয়ান, ইঞ্জিনিয়ারদের মাঝ দিয়েই ‘জি-২’ ভেনিজুয়েলায় তাদের উপস্থিতি গড়ে তোলে। ২০০৭ সালে হুগো শাভেজ বলেন যে, ভেনিজুয়েলাতে ২০ হাজারের বেশি কিউবান ডাক্তার, নার্স এবং টেকনিশিয়ান কাজ করছে। বেসরকারি হিসেবে অনেকে এই সংখ্যাকে ৪০ হাজার বলছেন।

অভিজ্ঞতার দিক থেকে ‘জি-২’ ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্স থেকে অনেক এগিয়ে থাকার কারণেই কিউবা তার নেতৃত্ব ধরে রাখতে পেরেছে। তবে ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্সের মাঝে অনেকেই বামপন্থী-বিরোধী থাকায় তারা ‘জি-২’এর প্রভাবকে পছন্দ করেনি। ২০০২ সালে হুগো শাভেজকে ক্ষমতাচ্যুত করার ব্যর্থ অভ্যুত্থানচেষ্টায় মার্কিনীদের জড়িত থাকার খবর দেয় ব্রিটেনের ‘দ্যা অবজার্ভার’ পত্রিকা। জার্মান মিডিয়া ‘ডিডব্লিউ’ বলছে যে, শাভেজের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টাটাই ছিল দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট। ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ক্যাস্ট্রো এবং শাভেজ ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা নিশ্চিতে চুক্তি করেন। চুক্তি মোতাবেক কিউবা ভেনিজুয়েলার সেনাবাহিনী এবং ইন্টেলিজেন্সকে প্রশিক্ষণ দেয়া শুরু করে। প্রথম উদ্দেশ্যই থাকে ভেনিজুয়েলার অভ্যন্তরে শত্রু দেশের ইন্টেলিজেন্সের কর্মকান্ডকে খুঁজে বের করে দমন করা। এই কাজে ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্স ব্যাপক ধরপাকরড় চালায়।

নিরাপত্তা-বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ‘সিএনএ’-এর সিনিয়র এনালিস্ট উইলিয়াম রোজনাউ এবং রালফ এসপাচ ‘ন্যাশনাল ইন্টারেস্ট’ ম্যাগাজিনের এক লেখায় বলছেন যে, ছোট দেশ হয়েও কিউবা তার ইন্টেলিজেন্সের বদৌলতে নিজের ওজন বাড়িয়ে নিয়েছে। প্রাক্তন মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সদস্য এডওয়ার্ড স্নোডেন-কে ল্যাটিন আমেরিকায় রাজনৈতিক আশ্রয়ের ব্যবস্থা করে দেবার জন্যে কিউবার ইন্টেলিজেন্স মধ্যস্ততা করে। সোভিয়েতদের সাথে কিউবানরাও মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর, গুরুত্বপূর্ণ সরকারি দপ্তর এবং ইন্টেলিজেন্সের ভেতরে ঢুকে পড়ে। স্পেন এবং ল্যাটিন আমেরিকায় মার্কিন সামরিক ঘাঁটিগুলিতেও কিউবানরা কাজ চালিয়ে যায়। ১৯৮০-এর দশকে মধ্য আমেরিকার এল-সালভাদর এবং গুয়াতেমালাতে মার্কিন সমর্থিত সরকারের বিরুদ্ধে গেরিলাদের সহায়তা দেয় ‘জি-২’। ঠান্ডা যুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্রে ‘জি-২’এর কর্মকান্ড বৃদ্ধি পায়; বিশেষ করে ফ্লোরিডায় ক্যাস্ট্রো-বিরোধী গ্রুপগুলির ব্যাপারে ‘জি-২’ বেশি সক্রিয় ছিল। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা ‘এফবিআই’ ১৯৯০ থেকে ২০১০ পর্যন্ত মার্কিন নিরাপত্তা স্থাপনায় বহুদিন ধরে কাজ করা বেশকিছু কিউবার ইন্টেলিজেন্স সদস্যকে গ্রেপ্তার করে এবং আদালতে বিচারও করে। ২০১০ সালে ‘উইকিলিকস’এর ফাঁস করা মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের তারবার্তার বরাত দিয়ে ‘রয়টার্স’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট হুগো শাভেজ কিউবান ইন্টেলিজেন্সের উপদেশেই চলছেন। মার্কিন তারবার্তায় বলা হয় যে, ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্স কিউবার ইন্টেলিজেন্সের মতো সক্ষম নয়; তাই কিউবানরা ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্সকে প্রশিক্ষণও দেয়। স্পেনের পত্রিকা ‘এবিসি’ এক প্রতিবেদনে বলে যে, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বৈঠকে যোগ দেবার জন্যে মাদুরো যখন নিউ ইয়র্ক যাচ্ছিলেন, তখন তার বিমানে থাকা কিউবানদেরকে মার্কিন সরকার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের অনুমতি না দেয়ায় মাদুরোর বিমান ভেনিজুয়েলায় ফিরে যায়। ভেনিজুয়েলাকে ব্যবহার করে ‘জি-২’ ল্যাটিন আমেরিকার অন্যান্য দেশ, যেমন ব্রাজিল এবং কলম্বিয়াতে ইন্টেলিজেন্স অপারেশন চালাচ্ছে কিউবা।

তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা

কিউবা ভেনিজুয়েলার কাছ থেকে অর্থনৈতিক সহায়তা পাচ্ছে; আর ভেনিজুয়েলা কিউবা থেকে পাচ্ছে নিরাপত্তা, রাজনৈতিক, কৌশলগত এবং ইন্টেলিজেন্স সহায়তা। ‘ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ২০১২ সাল নাগাদ দুই দেশের বাণিজ্য কিউবার জিডিপির ২১ শতাংশে দাঁড়ায়। অথচ সেই তুলনায় এই বাণিজ্য ভেনিজুয়েলার অর্থনীতির মাত্র ৪ শতাংশ ছিল। ভেনিজুয়েলা থেকে কিউবা ১ লক্ষ ৪ হাজার ব্যারেল তেল আমদানি করে ঐ বছরে, যা ছিল ভেনিজুয়েলার মোট জ্বালানি তেলের চাহিদার ৬১ শতাংশ। অথচ কিউবায় রপ্তানি করা তেল ছিল ভেনিজুয়েলার মোট তেল রপ্তানির ৫ শতাংশ। এই তেল ভেনিজুয়েলা কিউবাকে দেয় অতি সুলভ মূল্যে। মাত্র ৬০ শতাংশ মূল্য ৯০ দিনের মাঝে পরিশোধ করতে হয়; বাকিটা ২৫ বছরে ১ শতাংশ সুদে পরিশোধযোগ্য। অন্যদিকে কিউবা থেকে আসা ডাক্তার-প্রশিক্ষক-টেকনিশিয়ানরা ভেনিজুয়েলার সামাজিক উন্নয়নের দায়িত্ব নিয়েছে। ভেনিজুয়েলার মানুষ উচ্চতর চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে কিউবাতে। আবার হাজার হাজার ভেনিজুয়েলান ছাত্র মেডিক্যাল বিষয়ে পড়াশোনা করছে কিউবাতে।

এর বিনিময়ে কিউবাকে ভেনিজুয়েলা কতটা আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে, তা সঠিক মূল্যায়ন করা কঠিন। তবে তেলের বিনিময়ে ভেনিজুয়েলাকে নিরাপত্তা সহায়তা দিচ্ছে কিউবা। ভেনিজুয়েলার জনগণের বায়োমেট্রিক ডাটাবেস তৈরি করে দিচ্ছে কিউবান সরকারি কোম্পানি। হুগো শাভেজের ক্যান্সার ধরা পড়ার পর তার চিকিৎসাও হয়েছে কিউবাতে – ব্যাপক নিরাপত্তার মাঝে। ২০১৩ সালে শাভেজ মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তার মন্ত্রীসভার বৈঠকগুলি কিউবাতেই করতেন। ‘রয়টার্স’এর প্রতিবেদন বলছে যে, কিউবার ইন্টেলিজেন্সের সহায়তার কারণেই মাদুরো ক্ষমতায় টিকে গেছেন। ব্যাপক অর্থনৈতিক ধ্বস এবং ৪০ লক্ষ মানুষের দেশত্যাগের পরেও কিউবানদের প্রশিক্ষিত সেনাবাহিনী মাদুরোর বিরুদ্ধে যায়নি। ভেনিজুয়েলার ইন্টেলিজেন্সের একসময় দায়িত্ব ছিল গণতন্ত্র রক্ষা। কিউবানদের প্রশিক্ষণের পর নতুন দায়িত্ব দাঁড়ায় সরকারকে ক্ষমতায় টিকিয়ে রাখা। এবছরের শুরুতে ভেনিজুয়েলার বিরোধী নেতা হুয়ান গুয়াইদো নিজেকে প্রেসিডেন্ট হিসেবে ঘোষণা করেন এবং সেনাবাহিনীকে মাদুরোর বিরুদ্ধে যাবার জন্যে অনুরোধ করেন। যুক্তরাষ্ট্র গুয়াইদোর কথায় সমর্থন দিলেও ভেনিজুয়েলার সামরিক বাহিনীর কাছ থেকে কোন সাড়াই মেলেনি।
মধ্য আমেরিকায় ভেনিজুয়েলার তেলের বিনিময়ে কিউবা প্রভাব বিস্তারের একটা সুযোগ পেয়েছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার মাঝেও কিউবা তার স্থান করে নিচ্ছে। মার্কিন প্রভাবে থাকা সংস্থাগুলিকে কিউবা অকার্যকর করে দিচ্ছে। ২০০১ সালে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ কারণে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি সড়ে যাবার পরই যুক্তরাষ্ট্রকে বাইপাস করে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি হতে থাকে। কিউবা-ভেনিজুয়েলার একত্রে কাজ করার কারণে পুরো আমেরিকাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমছে প্রতি নিয়ত। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমার সাথে এটা সাংঘর্ষিক নয়। 



আঞ্চলিক প্রভাব বাড়াচ্ছে কিউবা

‘ব্রুকিংস ইন্সটিটিউট’এর প্রতিবেদন বলছে যে, কিউবা এবং ভেনিজুয়েলার মাঝে ‘বলিভারিয়ান’ সহযোগিতাকে পুরো ল্যাটিন আমেরিকা এবং মধ্য আমেরিকায় ছড়িয়ে দিতে চাইছে কিউবা। ২০০৫ সালের ‘পেট্রোক্যারিব’ প্রকল্পের মাধ্যমে ভেনিজুয়েলার তেল শুধু কিউবা নয়, ক্যারিবিয়ানের দ্বীপ দেশগুলি এবং মধ্য আমেরিকার দেশগুলির বেশিরভাগের কাছেই যাওয়া শুরু করেছিল। মোট ১৫টা দেশ এই চুক্তির অধীনে সাশ্রয়ী মূল্যে ভেনিজুয়েলার তেল পাচ্ছিলো। এভাবে মধ্য আমেরিকায় ভেনিজুয়েলার তেলের বিনিময়ে কিউবা প্রভাব বিস্তারের একটা সুযোগ পেয়েছে। বিভিন্ন আঞ্চলিক সংস্থার মাঝেও কিউবা তার স্থান করে নিচ্ছে। যেমন ‘অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস’এর মতো মার্কিন প্রভাবে থাকা সংস্থাগুলিকে কিউবা অকার্যকর করে দিচ্ছে। এধরনের সংস্থাগুলির প্রধান এজেন্ডা হচ্ছে গণতন্ত্র এবং মানবাধিকার, যেগুলি ল্যাটিন আমেরিকার অনেক দেশই এড়িয়ে যেতে চায়। ২০০১ সালে বিশ্বব্যাপী তথাকথিত ‘সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের’ কারণে ল্যাটিন আমেরিকা থেকে যুক্তরাষ্ট্রের দৃষ্টি সড়ে যাবার পরই যুক্তরাষ্ট্রকে বাইপাস করে বিভিন্ন সংগঠন তৈরি হতে থাকে। কিউবা সরাসরি জড়িত থেকে অথবা ভেনিজুয়েলার মাধ্যমে এসব ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয়। ভেনিজুয়েলার হুগো শাভেজের চেষ্টায় ২০১০ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা বাদে পুরো আমেরিকার বাকি ৩৩টা দেশকে নিয়ে ‘কমিউনিটি অব ল্যাটিন আমেরিকান এন্ড ক্যারিবিয়ান স্টেটস’ গঠন করা হয়। ২০০৮ সালে গঠন করা হয় ‘ইউনিয়ন অব সাউথ আমেরিকান নেশনস’ (যদিও কিউব এর সদস্য নয়), যেটাকে আবার ‘বামপন্থী’ আখ্যা দিয়ে মার্কিন প্রভাবে থাকা বেশ কয়েকটা দেশ ২০১৮-১৯ সালে সেখান থেকে বের হয়ে যায়।

রোজনাউ এবং এসপাচ তাদের প্রতিবেদনে লিখছেন যে, কিউবা নিশ্চিতভাবেই তার ইন্টেলিজেন্স নেটওয়ার্ককে কৌশলগত এবং অর্থনৈতিক সুবিধা আদায়ে ব্যবহার করছে। কোন রাষ্ট্রই বিনা কারণে ইন্টেলিজেন্স তথ্য যোগাড় করে না। আর গোপন তথ্য যোগাড় করার খরচও তো যোগাতে হবে। কিউবা মার্কিনীদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশগুলির সাথে ইন্টেলিজেন্সের তথ্য আদান-প্রদান করে তাদের কাছ থেকে বিভিন্ন সুবিধা আদায় করতে পারে। কিউবানরা মার্কিন নিরাপত্তা, ইন্ডাস্ট্রি, বাণিজ্য এবং প্রযুক্তি সম্পর্কে তথ্য যোগাড় করে সেগুলি মার্কিনীদের প্রতিদ্বন্দ্বী দেশ, যেমন - রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশের সাথে বাণিজ্য করতে পারে।

ভেনিজুয়েলা বন্ধু খুঁজছে

কিছুদিন আগেই মাদুরো সরকারকে উৎখাত করার জন্যে মার্কিনীরা ভেনিজুয়েলার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কর্তাব্যক্তিদের সাথে কথা চালিয়ে যায়। পরবর্তীতে এই অভ্যুত্থান চেষ্টা ভেস্তে গেলেও মাদুরো অভ্যুত্থান চেষ্টার সাথে জড়িত ব্যক্তিদের কিছু করেননি অথবা করতে পারেননি। এর স্বপক্ষে যুক্তি হিসেবে বলা হচ্ছে যে, অভ্যুত্থানের চেষ্টাকারীরা ভেনিজুয়েলার সমাজে এতটাই প্রভাশালী যে, মাদুরো তাদেরকে আটক করা বা তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেবার চেষ্টাই করতে পারেননি। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা বলছেন যে, মাদুরোর বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানচেষ্টা ভেস্তে যাবার একটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো মোক্ষম সময়ে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ। রাশিয়ার পাঠানো সেনারা ভেনিজুয়েলার ক্ষমতার সমীকরণে অনিশ্চয়তা জুড়ে দিলে অভ্যুত্থান ভেস্তে যায়। রুশ সরকার দরকারমতো সহায়তা দিলেও কিউবানরা মাদুরোর সাথে আঠার মতোই লেগে আছে।

২১শে অগাস্ট ভেনিজুয়েলা উত্তর কোরিয়াতে তার দূতাবাস খুলেছে। উত্তর কোরিয়ার উপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞার সাথে ভেনিজুয়েলা সরকার নিজেদের অবস্থানের অভিন্নতা খুঁজছে; উদ্দেশ্য – বহিঃবিশ্বে সমর্থন খোঁজা। এর কয়েকদিন আগেই ১৫ই অগাস্ট ভেনিজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদ্রিনো লোপেজ মস্কো সফর করেন। রুশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী সের্গেই শোইগু ভেনিজুয়েলার সরকারের নিজস্ব পররাষ্ট্রনীতি এবং মার্কিন চাপের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়ার জন্যে রুশ সমর্থনের কথা মনে করিয়ে দেন। এই বছরেই রুশ প্রতিরক্ষা দপ্তরের কর্মকর্তারা কমপক্ষে দু’বার ভেনিজুয়েলা সফর করেন। তবে ভেনিজুয়েলাকে সমর্থন দেবার ক্ষেত্রে পুরোনো বন্ধুরাও শক্ত অবস্থানে থাকতে পারছে না। ১৯শে অগাস্ট ‘রয়টার্স’ বলছে যে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার চাপে চীনা তেল কোম্পানি ‘চায়না ন্যাশনাল পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন’ বা ‘সিএনপিসি’ অগাস্ট মাসে ভেনিজুয়েলার তেল আমদানি স্থগিত করেছে। ভেনিজুয়েলা তেল সরবরাহের বিনিময়ে চীনাদের কাছ থেকে বড় অংকের ঋণ পেয়েছে। ভেনিজুয়েলার বেশিরভাগ তেলের ক্রেতাই চীন। সাম্প্রতিক সময়ে বেইজিং-এ মার্কিন দূতাবাসের সাথে ‘সিএনপিসি’র আলোচনার পরই এই সিদ্ধান্ত এলো। অথচ আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নিকোলাস মাদুরোর বন্ধুর প্রয়োজনীয়তা এখন সর্বোচ্চ।

ভেনিজুয়েলায় প্রভাব বিস্তার কিউবার জন্যে সবচাইতে বড় ভূকৌশলগত সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রের উঠানে ছয় দশক ধরে সমাজতান্ত্রিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার পর ভেনিজুয়েলার সরকারকেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে কিউবা। ছোট্ট কিউবার পক্ষে পশ্চিম গোলার্ধে শক্তিধর দেশগুলিকে ব্যালান্সে রাখাটা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হবার ইঙ্গিত। 


কিউবার সাফল্য যা ইঙ্গিত দিচ্ছে

ভেনিজুয়েলার জনস্যংখ্যা কিউবার প্রায় তিন গুণ; ৩ কোটি ২০ লাখ বনাম ১ কোটি ১৫ লাখ। অর্থনৈতিক দিক থেকেও একইরকম গল্প। ভেনিজুয়েলার জিডিপি ২০১৪ সালে ছিল ৪’শ ৮২ বিলিয়ন ডলার; আর কিউবার ছিল ৮১ বিলিয়ন ডলার; অর্থাৎ প্রায় ৬ গুণ। (এখন অবশ্য ভেনিজুয়েলার অর্থনীতি পঙ্গু।) ‘জিওপলিটিক্যাল মনিটর’এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ভেনিজুয়েলায় প্রভাব বিস্তার কিউবার জন্যে সবচাইতে বড় ভূকৌশলগত সাফল্য। যুক্তরাষ্ট্রের উঠানে ছয় দশক ধরে সমাজতান্ত্রিক সরকারকে টিকিয়ে রাখার পর ভেনিজুয়েলার সরকারকেও টিকিয়ে রাখার দায়িত্ব নিয়েছে কিউবা। কিউবার ‘জি-২’এর সাফল্য বলছে যে, শুধু বড় রাষ্ট্রগুলিই নয়, ছোট রাষ্ট্রও শক্তিশালী ইন্টেলিজেন্স সার্ভিস তৈরি করতে সক্ষম, যদি তার জনগোষ্ঠির সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশটা চিন্তার দিক থেকে অন্যদের তুলনায় এগিয়ে থাকে। ইন্টেলিজেন্সের ব্যবহারের মাধ্যমে যে আন্তর্জাতিক ব্যালান্স অব পাওয়ার পরিবর্তন সম্ভব, তা কিউবার কর্মকান্ডই প্রমাণ দেয়। পশ্চিম গোলার্ধে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতায় আমেরিকা, রাশিয়া, চীন, এবং অন্যান্য শক্তিধর দেশগুলিকে ব্যালান্সে রাখার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে কিউবা।

কিউবার সাফল্য প্রথমতঃ দেখিয়ে দিচ্ছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি অবস্থান করেও ঐতিহ্যগতভাবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাবের মাঝে থাকা দেশগুলিতে কিউবা প্রভাব বিস্তার করছে। ভেনিজুয়েলার মাদুরো সরকারকে ক্ষমতা থেকে সরানোটা যুক্তরাষ্ট্রের অত্র অঞ্চলে প্রভাব ধরে রাখার জন্যে অতি জরুরি। কিউবা-ভেনিজুয়েলার একত্রে কাজ করার কারণে পুরো আমেরিকাতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমছে প্রতি নিয়ত। বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব কমার সাথে এটা সাংঘর্ষিক নয়। 
দ্বিতীয়তঃ চিন্তাগত দিক থেকে এগিয়ে থাকার কারণে শুধু ভেনিজুয়েলা নয়, পুরো এলাকায় কিউবা প্রাধান্য বিস্তার করে চলেছে। আকারে ছোট হলেও একটা আদর্শিক ভিতের উপর দাঁড়িয়ে থাকার কারণে কিউবা এটা করতে পারছে। বাকি বিশ্বের জন্যে এটা একটা উদাহরণ বটে – চিন্তাগত উতকর্ষতা থাকলে ছোট দেশও সুপারপাওয়ারের প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করতে সক্ষম। 
তৃতীয়তঃ কিউবা পশ্চিম গোলার্ধে ‘গ্রেট পাওয়ার’ প্রতিযোগিতাকে আরও উস্কে দিচ্ছে। কিউবার ইন্টেলিজেন্স যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিযোগী রাশিয়া, চীন এবং অন্যান্য দেশকে ইন্টেলিজেন্স সহায়তা দিয়ে এই প্রতিযোগিতাকে আরও ঘনীভূত করতে যাচ্ছে। 
চতুর্থতঃ ছোট্ট কিউবার পক্ষে পশ্চিম গোলার্ধে শক্তিধর দেশগুলিকে ব্যালান্সে রাখাটা নয়া বিশ্ব ব্যবস্থার দিকে ধাবিত হবার ইঙ্গিত।

4 comments:

  1. আমি একটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছি কিন্তু সাহস পাচ্ছিনা। যদি বুঝে নিতে পারেন তবে ভাল হয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার ধারণা যে ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত, সেখানে শক্তিশালী রাষ্ট্রের সংজ্ঞাটাকে আরেকবার প্রশ্ন করে নিন। কিউবা একটা চমৎকার উদাহরণ যে একটা রাষ্ট্র কিভাবে শক্তিশালী হতে পারে। আবার ভেনিজুয়েলার উদাহরণও দেখিয়ে দেয় যে, একটা রাষ্ট্র কিভবে দুর্বল হতে পারে।

      Delete
  2. অনেকদিন নতুন কোন পোস্ট পাচ্ছি না আপনার কাছ থেকে। অথচ কত গুরুত্বপূর্ন ঘটনা ঘটে চলেছে পৃথিবী জুড়ে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমার সমসাময়িক ঘটনাগুলি নিয়ে লেখাগুলি মূলতঃ পত্রিকায় যাচ্ছে। এখানেও কিছু লেখা পাবলিশ করবো ইনশাল্লাহ।

      আমার দ্বিতীয় বই পাবলিশ করা নিয়েও একটু ব্যস্ত ছিলাম বেশকিছু দিন।

      Delete