২৪শে জুন ২০১৭
হলিউড হলো মার্কিন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মার্কিন জনগণকে পথ দেখিয়ে যাবার কাজটা অনেক ক্ষেত্রেই হলিউড করেছে। ১৯৮০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের শেষাংশের চাইতে অন্য কোন সময় সম্ভবত এই কাজ অতটা গুরুত্ব বহন করেনি। ১৯৯০-এও সেব্যাপারটা কিছুটা চলেছিল। সেসময়ের মার্কিন মুভি এবং টিভি সিরিয়ালগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় যে হলিউড তখন সকলের কথাই চিন্তা করেছে। টম ক্রুজ এগিয়ে থাকা মার্কিন তরুণদের রক্তে আগুন দিয়েছিলেন তার Top Gun মুভির মধ্য দিয়ে। আরনল্ড শোয়ার্জনেগার ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হিরো; সিলভেস্টার স্ট্যালোন, কার্ট রাসেল এবং ভ্যান ড্যামরাও ছিলেন ঐ ধাঁচেরই। ব্রুস উইলিস, মেল গিবসন আকর্ষণ করেছিলেন সমাজের ঐ লোকগুলিকে, যারা কিনা নিজেকে সমাজের জন্যে সপে দিচ্ছেন নিজে কিছু না পেয়েও, যেমন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সিকিউরিটি গার্ড – এধরনের লোকজন। এডি মার্ফি আকর্ষণ করেছিলেন কালোদের ঐ অংশটাকে, যারা কিনা কালোদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ে ছিলেন সন্দিহান। আবার ডেনজেল ওয়াশিংটন এবং ওয়েসলি স্নাইপস কালো-সাদা দন্দ্ব কমাতে চেষ্টা করেছেন; তবে এরা আকর্ষণ করেছিলেন শহুরে sophisticated মানুষগুলিকে। পুলিশ নিয়ে অনেকগুলি মুভি তৈরি হয়েছিল; সামরিক বাহিনী নিয়ে মুভিগুলি ছিল কিছুটা নেগেটিভ – ভিয়েতনাম যুদ্ধের কালো ছায়াটা সমাজকে ঘিরে রেখেছিল তখন। সামরিক সার্ভিস নিয়ে ঐ নেগেটিভ মাইন্ডসেট থেকে উতড়ানোর চেষ্টা তারা করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তৈরি মুভিগুলি দিয়ে; এর মাঝে Saving Private Ryan-এর নাম হয়তো সর্বপ্রথমে আসবে। Forrest Gump-এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরের পিছিয়ে থাকা মানুষদেরকে রাষ্ট্রের সাথে একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়; আশা দেয়া হয় তাদেরকে। কেভিন কস্টনারের মুভিগুলিও ছিল সেরকমই। Hawaii Five-O তৈরি করা হয়েছিল হাওয়াই-এর জন্যে; Miami Vice তৈরি করা হয়েছিল মায়ামির জন্যে। ডেট্রয়েট এবং শিকাগোর জন্যেও তৈরি হয়েছিল মুভি এবং টিভি সিরিজ। মোট কথা, রাষ্ট্র সকলের কথাই চিন্তা করতো তখন। সেসময় মার্কিন চিন্তাচেতনা দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছে একাই। রাষ্ট্রের চিন্তার সাথে জনগণের চিন্তা যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, তার চেষ্টা তারা করতেন মোটামুটিভাবে। কারণ এক্ষেত্রে অমিল রাষ্ট্রকে দুর্বল করবে।
যেটা দেখার ব্যাপার হবে তা হলো, ২১ শতকে এসে হলিউড কি তৈরি করছে? হলিউডের মুভিগুলি এখন যতটা না আমেরিকান, তাই চাইতে বেশি গ্লোবাল। ব্রুস উইলিসের মুভি দেখলে বোঝা যায় যে মার্কিন রাষ্ট্রের জন্যে নিজেকে সঁপে দেবার মানুষদেরও বয়স বেড়ে গেছে। টম ক্রুজ এখনও চেষ্টা করে যাচ্ছেন শহুরে এগিয়ে থাকা মানুষগুলিকে সাথে রাখতে; তবে তাদেরও বয়স বাড়ছে। এখন এডভেঞ্চার-সুপার হিরো-টেকনো ফ্লিকগুলি যুক্তরাষ্ট্রের মানুষকে নিয়ে ভাবে না। একসময় মার্কিন জীবনযাত্রাকে দুনিয়ার কাছে নিয়ে গিয়েছিল হলিউড। তখন তাদের চিন্তাধারার ধার ছিল বলেই দুনিয়ার মানুষের অন্তরে মার্কিন মুল্লুকের জন্যে একটা আকর্ষণ তৈরি করতে পেরেছিল তারা। কিন্তু এখন মার্কিন যুদ্ধবাজিকে দুনিয়ার সামনে নিয়ে যায় হলিউড, যখন মার্কিন বোমার আঘাতে সারা দুনিয়া ক্ষতবিক্ষত। বাকি দুনিয়ার কাছেও হলিউডের এই অফারগুলি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে যাচ্ছে। অন্যদিকে নিজ দেশে, অর্থাৎ খোদ যুক্তরাষ্ট্রে Forrest Gump-এর মতো মানুষগুলি এখন কি করবে? সে কি সুপার হিরো হতে পারবে কখনো? নাকি টম ক্রুজের মুভির মতো sophisticated চিন্তার অধিকারী?
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে বারংবার চেষ্টা করেও হলিউড বোঝাতে পারছে না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধের মাঝে রয়েছে, যার জন্যে মার্কিন জনগণকে রাষ্ট্রের সাথে থাকতে হবে। যখন জনগণের বিরাট অংশের মাঝে চিন্তা ঢুকে গেছে যে তারা রাষ্ট্র দ্বারা অবহেলিত, তখন সেখানে কোন বার্তাই যে কানে যাবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। উইল স্মিথ তার The Pursuit of Happiness মুভির মাধ্যমে দেশের পিছিয়ে থাকা জনগণকে আশা দেবার যে চেষ্টাটা করেছেন, তা এখন প্রতারণা হিসেবেই দেখবে বেশিরভাগ মানুষ। Rush Hour মুভিতে ক্রিস টাকারকে জ্যাকি চ্যানের সাথে ব্যবহার করা হয়েছে চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নকে মাথায় রেখে; কালোদের জন্যে আলাদাভাবে কিছু করার জন্যে নয়। বরং এই মুভিতে কালোদেরকে মাথামোটা দেখিয়ে ছোটই করা হয়েছে।
মার্কিন চিন্তার চাকা এখন আর নিজে নিজে ঘুরছে না; ঠেলে নিতে হচ্ছে। হলিউডের অবস্থাও তা-ই। হলিউডে এখন টেকনলজি আছে; চিন্তা নেই। হলিউডে গ্লোব আছে; আমেরিকা নেই। বাকি বিশ্বের মানুষ এখন হলিউডের মাঝে যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে; মার্কিন জনগণ কোথাও যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে না। “We are 99”-এর কোন প্রত্যুত্তর হলিউডের কাছে নেই। বাকি বিশ্বকে জোর করে সন্ত্রাসী বানিয়ে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার চেষ্টাটা এখন হাস্যকরই বটে। নিজেদের দ্বন্দ্বকে [১] ধামাচাপা দেয়াটাই যে এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হলিউড এখন কি দেখাবে সেটা এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কারণ মার্কিনীরা এখন আর জানে না যে আগামীকাল কি হবে। বোঝা যাচ্ছে যে চাবির গোছার মালিক পরিবর্তন হতে চলেছে।
[১] ‘প্রশ্নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৬
‘ওবামার যুদ্ধগুলো লড়বে কে?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৯ জানুয়ারী ২০১৭
‘যুক্তরাষ্ট্র কি নিজের যঙ্গেই যুদ্ধরত?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
হলিউড হলো মার্কিন রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। মার্কিন জনগণকে পথ দেখিয়ে যাবার কাজটা অনেক ক্ষেত্রেই হলিউড করেছে। ১৯৮০-এর দশকে ঠান্ডা যুদ্ধের শেষাংশের চাইতে অন্য কোন সময় সম্ভবত এই কাজ অতটা গুরুত্ব বহন করেনি। ১৯৯০-এও সেব্যাপারটা কিছুটা চলেছিল। সেসময়ের মার্কিন মুভি এবং টিভি সিরিয়ালগুলির দিকে তাকালে দেখা যায় যে হলিউড তখন সকলের কথাই চিন্তা করেছে। টম ক্রুজ এগিয়ে থাকা মার্কিন তরুণদের রক্তে আগুন দিয়েছিলেন তার Top Gun মুভির মধ্য দিয়ে। আরনল্ড শোয়ার্জনেগার ছিলেন ইন্ডাস্ট্রিয়াল হিরো; সিলভেস্টার স্ট্যালোন, কার্ট রাসেল এবং ভ্যান ড্যামরাও ছিলেন ঐ ধাঁচেরই। ব্রুস উইলিস, মেল গিবসন আকর্ষণ করেছিলেন সমাজের ঐ লোকগুলিকে, যারা কিনা নিজেকে সমাজের জন্যে সপে দিচ্ছেন নিজে কিছু না পেয়েও, যেমন পুলিশ, ফায়ার সার্ভিস, সিকিউরিটি গার্ড – এধরনের লোকজন। এডি মার্ফি আকর্ষণ করেছিলেন কালোদের ঐ অংশটাকে, যারা কিনা কালোদের প্রতি রাষ্ট্রের আচরণ নিয়ে ছিলেন সন্দিহান। আবার ডেনজেল ওয়াশিংটন এবং ওয়েসলি স্নাইপস কালো-সাদা দন্দ্ব কমাতে চেষ্টা করেছেন; তবে এরা আকর্ষণ করেছিলেন শহুরে sophisticated মানুষগুলিকে। পুলিশ নিয়ে অনেকগুলি মুভি তৈরি হয়েছিল; সামরিক বাহিনী নিয়ে মুভিগুলি ছিল কিছুটা নেগেটিভ – ভিয়েতনাম যুদ্ধের কালো ছায়াটা সমাজকে ঘিরে রেখেছিল তখন। সামরিক সার্ভিস নিয়ে ঐ নেগেটিভ মাইন্ডসেট থেকে উতড়ানোর চেষ্টা তারা করেছিলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে তৈরি মুভিগুলি দিয়ে; এর মাঝে Saving Private Ryan-এর নাম হয়তো সর্বপ্রথমে আসবে। Forrest Gump-এর মাধ্যমে গ্রামাঞ্চল এবং ছোট শহরের পিছিয়ে থাকা মানুষদেরকে রাষ্ট্রের সাথে একত্রিত করার চেষ্টা করা হয়; আশা দেয়া হয় তাদেরকে। কেভিন কস্টনারের মুভিগুলিও ছিল সেরকমই। Hawaii Five-O তৈরি করা হয়েছিল হাওয়াই-এর জন্যে; Miami Vice তৈরি করা হয়েছিল মায়ামির জন্যে। ডেট্রয়েট এবং শিকাগোর জন্যেও তৈরি হয়েছিল মুভি এবং টিভি সিরিজ। মোট কথা, রাষ্ট্র সকলের কথাই চিন্তা করতো তখন। সেসময় মার্কিন চিন্তাচেতনা দুনিয়াকে নেতৃত্ব দিয়েছে একাই। রাষ্ট্রের চিন্তার সাথে জনগণের চিন্তা যাতে সাংঘর্ষিক না হয়, তার চেষ্টা তারা করতেন মোটামুটিভাবে। কারণ এক্ষেত্রে অমিল রাষ্ট্রকে দুর্বল করবে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামাজিক এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য এখন এমন পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে যে বারংবার চেষ্টা করেও হলিউড বোঝাতে পারছে না যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এখন যুদ্ধের মাঝে রয়েছে, যার জন্যে মার্কিন জনগণকে রাষ্ট্রের সাথে থাকতে হবে। যখন জনগণের বিরাট অংশের মাঝে চিন্তা ঢুকে গেছে যে তারা রাষ্ট্র দ্বারা অবহেলিত, তখন সেখানে কোন বার্তাই যে কানে যাবে না, এটাই তো স্বাভাবিক। উইল স্মিথ তার The Pursuit of Happiness মুভির মাধ্যমে দেশের পিছিয়ে থাকা জনগণকে আশা দেবার যে চেষ্টাটা করেছেন, তা এখন প্রতারণা হিসেবেই দেখবে বেশিরভাগ মানুষ। Rush Hour মুভিতে ক্রিস টাকারকে জ্যাকি চ্যানের সাথে ব্যবহার করা হয়েছে চীনের সাথে সম্পর্কোন্নয়নকে মাথায় রেখে; কালোদের জন্যে আলাদাভাবে কিছু করার জন্যে নয়। বরং এই মুভিতে কালোদেরকে মাথামোটা দেখিয়ে ছোটই করা হয়েছে।
মার্কিন চিন্তার চাকা এখন আর নিজে নিজে ঘুরছে না; ঠেলে নিতে হচ্ছে। হলিউডের অবস্থাও তা-ই। হলিউডে এখন টেকনলজি আছে; চিন্তা নেই। হলিউডে গ্লোব আছে; আমেরিকা নেই। বাকি বিশ্বের মানুষ এখন হলিউডের মাঝে যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে; মার্কিন জনগণ কোথাও যুদ্ধ দেখতে পাচ্ছে না। “We are 99”-এর কোন প্রত্যুত্তর হলিউডের কাছে নেই। বাকি বিশ্বকে জোর করে সন্ত্রাসী বানিয়ে যুদ্ধের প্রয়োজনীয়তাকে তুলে ধরার চেষ্টাটা এখন হাস্যকরই বটে। নিজেদের দ্বন্দ্বকে [১] ধামাচাপা দেয়াটাই যে এখন কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। হলিউড এখন কি দেখাবে সেটা এখন প্রশ্নবোধক চিহ্ন। কারণ মার্কিনীরা এখন আর জানে না যে আগামীকাল কি হবে। বোঝা যাচ্ছে যে চাবির গোছার মালিক পরিবর্তন হতে চলেছে।
[১] ‘প্রশ্নের মুখে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সক্ষমতা’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১লা সেপ্টেম্বর ২০১৬
‘ওবামার যুদ্ধগুলো লড়বে কে?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৯ জানুয়ারী ২০১৭
‘যুক্তরাষ্ট্র কি নিজের যঙ্গেই যুদ্ধরত?’, সাম্প্রতিক দেশকাল, ১৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৭
No comments:
Post a Comment