০৭ জুলাই ২০১৫
দূরপ্রাচ্যের সামরিক কৌশলের প্রাচীন থিউরিগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে - Train the tiger to come out of the mountains. যার অর্থ হচ্ছে শত্রুকে তার শক্ত অবস্থান থেকে বের করে নিয়ে আসা, যাতে সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থেকে লড়াই করতে বাধ্য হয়। প্রাচীন জাপানের "৩৬টি কৌশল"-এর মধ্যে এটি থাকলেও এর উতস চীন হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ সেখান থেকেই জাপানী সংস্কৃতির অনেক কিছুই এসেছে। যাই হোক, আজকে এই প্রবাদসম কৌশল দিয়ে কথা শুরু করলেও উদ্দেশ্য হচ্ছে এই একই ধরনের কৌশলের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখানো। উদাহরণটা আসলে দূরপ্রাচ্যের নয়; আমাদের এখানেই - বাংলাদেশে। এই প্রবাদগুলি আসলে এমন নয় যে অন্য সভ্যতার কেউ সেগুলি জানে না। কাজেই অন্য কেউ সেগুলি প্রয়োগ করলে অবাক হবার কিছু নেই। অন্য সভ্যতাতে সেই একই প্রবাদ হয়তো অন্য কোন বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়; আসলে অর্থ হয়তো একই।
স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূরর দিক হচ্ছে এদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যার প্রধান দিক হচ্ছে এর নদনদী। শতশত নদনদী থাকার কারণে শত্রু সেনাবাহিনীর পক্ষে এদেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান এবং ভারতের সেনাবাহিনী এটা টের পেয়েছিল। তবে এরও অনেক আগেই সেটা বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যের অধিকর্তারা টের পেয়েছিল; টের পেয়েছিল দিল্লীর মুঘলরা; ব্রিটিশরাও বুঝেছিল। কিন্তু একটা জিনিস অনেক গবেষকই এড়িয়ে গেছেন অথবা বুঝে উঠতে পারেননি, সেটি হচ্ছে এই দেশের অর্থনীতিতে নদনদীর গুরুত্ব। প্রবাদসম একটি কথা আছে যে, যে দেশ সমুদ্রের কাছাকাছি থাকবে, তার অর্থনীতি স্থলভাগের ভেতরে অবস্থিত একটি দেশের চাইতে অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। কারণ সমুদ্রের কাছাকাছি দেশ অপেক্ষাকৃত সহজে এবং কম খরচে পণ্য পরিবহণ করতে পারবে; অন্যদিকে স্থলভাগের ভেতরে থাকা দেশটিকে কষ্ট করে অনেক খরচ করে রাস্তা বানাতে হবে। আর সমুদ্রের কাছাকাছি থাকা দেশটিতে যদি নদনদীর আধিক্য থাকে, তাহলে তাদের সারা দেশে তৈরি মালামাল খুব সহজেই নদীপথে পৌঁছে যাবে সমুদ্রবন্দরে। মোদ্দাকথা, নদীমাতৃক একটি দেশ যার অবস্থান সমুদ্রের কাছে, সেটি স্থলবেষ্টিত একটি দেশ থেকে অধিক সম্পদশালী হবে। আর সম্পদের আধিক্য থাকা মানেই দেশটি একটি শক্তিশালী দেশ রূপে পৃথিবীতে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে চাইবে। এখন বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর নদনদী কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের চিন্তাগুলি আমরা নিজেরা করতে পারিনি (অথবা করতে দেওয়া হয়নি) বলেই বাইরের শক্তিরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে সবসময়। ১৭৫৭ সাল ছিল এর শুরু; তবে এর যে শেষ কখনোই হয়নি, তা মোটামুটিভাবে বলা চলে। আমাদের নদীগুলিকে আড়াআড়ি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে যাতে নদী শুকিয়ে যায়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাঁচতে হলে রাস্তা বানাতে হবে নদীর উপর দিয়ে; ড্রেজিং করে নদীতে পানি ধরে রেখে নয়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাঁচতে হলে সীমান্তে দেওয়া বাঁধ থেকে কয়েক চিমটি পরিমাণ পানি আনলেই হবে; অথচ বাংলাদেশে যে বছরে সম্পূর্ণ ভারতের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেকথা কেউই জানে না। পানি দিয়ে নদী ভরতে হলে নাকি ওই টেস্টটিউব ভরে আনা ছিঁটেফোঁটা পানিই যথেষ্ট হবে; অথচ গত চার দশকে কোন নদীই খনন করা হয়নি; ভরে গেছে পলি দিয়ে - পানি সবসময় নিচু জায়গাতেই থাকে, ভরাট হওয়া উঁচু জায়গাতে নয়। উঁচু জায়গাতে পানি ঢাললেও সেখানে পানি থাকবে না।
গত কয়েক বছরে পরিবহণ সেক্টরে যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার ৭৯% হয়েছে সড়কপথে, ১৯% হয়েছে রেলপথে, অথচ নৌপথে হয়েছে মাত্র ১.৬% । দেশের জ্বালানী তেলের ৯০% পরিবহণ হয় নৌপথে; একতৃতীয়াংশ যাত্রী এবং মালামালও পরিবহণ হয় নৌপথে। রেলপথের অর্ধেক খরচ হয়ে নদীপথে; আর সড়কে তারও কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়ছে যে উন্নতি মানেই সড়ক এবং রেলপথ; নৌকায় যাতায়াত করে তো গরীব দেশের মানুষেরা!! প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসছে সড়ক এবং রেলপথের জন্যে, কিন্তু নৌপথের যোগাড় কিন্তু নিজেদেরই করতে হচ্ছে। বিদেশীরা তাদের নিজেদের স্বার্থ দেখবেই। তাদের দরকার কি ভারত মহাসাগরে একটা টাইগারের জন্ম দেওয়ার? বরং টাইগারকে জঙ্গল থেকে বের করে খোলা মাঠে নিয়ে আসলেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সহজ। প্রাচীন প্রবাদ পুরোনো হয় না কখনোই।
দূরপ্রাচ্যের সামরিক কৌশলের প্রাচীন থিউরিগুলির মধ্যে একটি হচ্ছে - Train the tiger to come out of the mountains. যার অর্থ হচ্ছে শত্রুকে তার শক্ত অবস্থান থেকে বের করে নিয়ে আসা, যাতে সে অপেক্ষাকৃত দুর্বল অবস্থানে থেকে লড়াই করতে বাধ্য হয়। প্রাচীন জাপানের "৩৬টি কৌশল"-এর মধ্যে এটি থাকলেও এর উতস চীন হওয়াটা অস্বাভাবিক নয়, কারণ সেখান থেকেই জাপানী সংস্কৃতির অনেক কিছুই এসেছে। যাই হোক, আজকে এই প্রবাদসম কৌশল দিয়ে কথা শুরু করলেও উদ্দেশ্য হচ্ছে এই একই ধরনের কৌশলের ব্যবহারিক প্রয়োগ দেখানো। উদাহরণটা আসলে দূরপ্রাচ্যের নয়; আমাদের এখানেই - বাংলাদেশে। এই প্রবাদগুলি আসলে এমন নয় যে অন্য সভ্যতার কেউ সেগুলি জানে না। কাজেই অন্য কেউ সেগুলি প্রয়োগ করলে অবাক হবার কিছু নেই। অন্য সভ্যতাতে সেই একই প্রবাদ হয়তো অন্য কোন বাক্যের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয়; আসলে অর্থ হয়তো একই।
স্ট্র্যাটেজিক দিক থেকে বাংলাদেশের সবচাইতে গুরুত্বপূরর দিক হচ্ছে এদেশের ভূ-প্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্য, যার প্রধান দিক হচ্ছে এর নদনদী। শতশত নদনদী থাকার কারণে শত্রু সেনাবাহিনীর পক্ষে এদেশে সামরিক অভিযান পরিচালনা করা খুবই কষ্টকর। ১৯৭১ সালে পাকিস্তান এবং ভারতের সেনাবাহিনী এটা টের পেয়েছিল। তবে এরও অনেক আগেই সেটা বাংলার প্রতিবেশী রাজ্যের অধিকর্তারা টের পেয়েছিল; টের পেয়েছিল দিল্লীর মুঘলরা; ব্রিটিশরাও বুঝেছিল। কিন্তু একটা জিনিস অনেক গবেষকই এড়িয়ে গেছেন অথবা বুঝে উঠতে পারেননি, সেটি হচ্ছে এই দেশের অর্থনীতিতে নদনদীর গুরুত্ব। প্রবাদসম একটি কথা আছে যে, যে দেশ সমুদ্রের কাছাকাছি থাকবে, তার অর্থনীতি স্থলভাগের ভেতরে অবস্থিত একটি দেশের চাইতে অপেক্ষাকৃত ভালো হবে। কারণ সমুদ্রের কাছাকাছি দেশ অপেক্ষাকৃত সহজে এবং কম খরচে পণ্য পরিবহণ করতে পারবে; অন্যদিকে স্থলভাগের ভেতরে থাকা দেশটিকে কষ্ট করে অনেক খরচ করে রাস্তা বানাতে হবে। আর সমুদ্রের কাছাকাছি থাকা দেশটিতে যদি নদনদীর আধিক্য থাকে, তাহলে তাদের সারা দেশে তৈরি মালামাল খুব সহজেই নদীপথে পৌঁছে যাবে সমুদ্রবন্দরে। মোদ্দাকথা, নদীমাতৃক একটি দেশ যার অবস্থান সমুদ্রের কাছে, সেটি স্থলবেষ্টিত একটি দেশ থেকে অধিক সম্পদশালী হবে। আর সম্পদের আধিক্য থাকা মানেই দেশটি একটি শক্তিশালী দেশ রূপে পৃথিবীতে নিজের অবস্থান সুসংহত করতে চাইবে। এখন বুঝতে বাকি থাকার কথা নয় যে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এর নদনদী কতটা গুরুত্বপূর্ণ।
এই ধরনের চিন্তাগুলি আমরা নিজেরা করতে পারিনি (অথবা করতে দেওয়া হয়নি) বলেই বাইরের শক্তিরা আমাদের নিয়ন্ত্রণ করেছে সবসময়। ১৭৫৭ সাল ছিল এর শুরু; তবে এর যে শেষ কখনোই হয়নি, তা মোটামুটিভাবে বলা চলে। আমাদের নদীগুলিকে আড়াআড়ি কেটে বাঁধ দেওয়া হয়েছে যাতে নদী শুকিয়ে যায়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাঁচতে হলে রাস্তা বানাতে হবে নদীর উপর দিয়ে; ড্রেজিং করে নদীতে পানি ধরে রেখে নয়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়েছে যে বাঁচতে হলে সীমান্তে দেওয়া বাঁধ থেকে কয়েক চিমটি পরিমাণ পানি আনলেই হবে; অথচ বাংলাদেশে যে বছরে সম্পূর্ণ ভারতের চাইতে দ্বিগুণেরও বেশি বৃষ্টিপাত হয়, সেকথা কেউই জানে না। পানি দিয়ে নদী ভরতে হলে নাকি ওই টেস্টটিউব ভরে আনা ছিঁটেফোঁটা পানিই যথেষ্ট হবে; অথচ গত চার দশকে কোন নদীই খনন করা হয়নি; ভরে গেছে পলি দিয়ে - পানি সবসময় নিচু জায়গাতেই থাকে, ভরাট হওয়া উঁচু জায়গাতে নয়। উঁচু জায়গাতে পানি ঢাললেও সেখানে পানি থাকবে না।
গত কয়েক বছরে পরিবহণ সেক্টরে যত বিনিয়োগ হয়েছে, তার ৭৯% হয়েছে সড়কপথে, ১৯% হয়েছে রেলপথে, অথচ নৌপথে হয়েছে মাত্র ১.৬% । দেশের জ্বালানী তেলের ৯০% পরিবহণ হয় নৌপথে; একতৃতীয়াংশ যাত্রী এবং মালামালও পরিবহণ হয় নৌপথে। রেলপথের অর্ধেক খরচ হয়ে নদীপথে; আর সড়কে তারও কয়েক গুণ বেশি খরচ হয়। আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেওয়া হয়ছে যে উন্নতি মানেই সড়ক এবং রেলপথ; নৌকায় যাতায়াত করে তো গরীব দেশের মানুষেরা!! প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসছে সড়ক এবং রেলপথের জন্যে, কিন্তু নৌপথের যোগাড় কিন্তু নিজেদেরই করতে হচ্ছে। বিদেশীরা তাদের নিজেদের স্বার্থ দেখবেই। তাদের দরকার কি ভারত মহাসাগরে একটা টাইগারের জন্ম দেওয়ার? বরং টাইগারকে জঙ্গল থেকে বের করে খোলা মাঠে নিয়ে আসলেই তাকে নিয়ন্ত্রণ করা হবে সহজ। প্রাচীন প্রবাদ পুরোনো হয় না কখনোই।
No comments:
Post a Comment