Friday 12 December 2014

সুন্দরবনের তেলে সন্বিত ফিরবে আমাদের?

১২ ডিসেম্বর ২০১৪

সুন্দরবনের জীববৈচিত্র হুমকির মুখে ফেলেও যদি আমাদের সন্বিত ফেরে আরকি




মাত্র কিছুদিন আগেই গত অগাস্টে মাওয়ার কাছে পিনাক-৬ লঞ্চডুবির সময় একটা ইমার্জেন্সিডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সির কথা বলেছিলাম। এরপরে আবার অক্টোবর মাসে ঢাকা কারওয়ান বাজার বাণিজ্যিক এলাকার বিএসইসি ভবনে দ্বিতীয়বারের মতো আগুন লাগলো মনে করিয়ে দিল সেই একই কথা। কিন্তু এই একই কথা কতবার মনে করিয়ে যেতে হবে, সেটাই এখন প্রশ্ন। ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট যে একটা আলাদা কাজ, সেটাই এখনো আমরা বুঝে উঠতে পারিনি। ঠিক এই কারণেই রিসোর্স জোগার করতে করতেই আমাদের মূল্যবান সময় অপচয় হয়ে যাচ্ছে। কখনো কখনো এভাবে ঝরে যাচ্ছে নিষ্পাপ প্রাণ, কখনো বা ধংস হয়ে যাচ্ছে পরিবেশের ভারসাম্যতা। সুন্দরবনের তেলবাহী জাহাজের দুর্ঘটনা আমাদের বহুকাল চোখে ঠুলি পড়ে থাকার ফলাফল মাত্র।

গোপালগঞ্জের ১০০ মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্র, যার জন্যে ফার্নেস অয়েল নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল সুন্দরবনের মাঝ দিয়ে। গ্যাসের অপ্রতুলতায় বিদ্যুত উতপাদনে ফার্নেস অয়েলের উপরে নির্ভরতা বাড়ছে। আর একই সাথে বাড়ছে নদীপথ এবং পরিবেশের উপরে হুমকি।


তেল কাহিনী

ফার্নেস অয়েল বা হেভি ফুয়েল অয়েল (এইচএফও) হলো অপরিশোধিত তেল শোধন করার পরে প্রাপ্ত অনেকগুলি তেলের মধ্যে একটি। রিফাইনারিতে অপরিশোধিত তেল প্রসেস করলে সবচেয়ে হাল্কা তেলগুলি প্রথমে একে একে আলাদা হয়ে যায় - যেমন কেরোসিন, পেট্রোল, ডিজেল। ঘনত্বের হিসাবে এগুলিকে ১ নম্বর থেকে ৬ নম্বর তেল পর্যন্ত ক্লাসিফাই করা হয়, যেখানে ১ নম্বর হলো সবচাইতে হাল্কা আর ৬ নম্বর হলো সবচাইতে ভারি। ফার্নেস অয়েল হচ্ছে ৬ নম্বর তেল, যেটা একেবারে গাদের মতো। এটার নিচে থাকে শুধু আলকাতরা। প্রথম দিকের তেলগুলি স্বাভাবিক তাপমাত্রায় রেখে দিলেও আস্তে আস্তে বাতাসে মিলিয়ে যায়। আর অন্যদিকে ৬ নম্বর তেল গরম না করলে পাইপের মধ্যে দিয়ে নেওয়াই যায় না। এসব কারণে উপরের দিকের তেলগুলি ছোট যানবাহনে ব্যবহার করা গেলেও নিচের দিকের তেলগুলি তাপ দেওয়া ছাড়া যেহেতু ব্যবহার করা যায় না, তাই সেগুলি শুধুমাত্র বড় ইঞ্জিনের জন্যে প্রযোজ্য - যেমন পাওয়ার প্ল্যান্ট এবং বড় জাহাজ। এই তেলে অত্যন্ত ক্ষতিকর সালফারের পরিমাণ অনেক বেশি। সালফার বেশি থাকার কারণে একে হাই সালফার ফুয়েল অয়েলও (এইচএসএফও) বলে। আর ব্যবহারের ক্ষেত্র কম হওয়ার কারণে এই তেলের দামও কম। কিছুদিন আগেই বিপিসি ২০১৫ সালের জন্য বিদেশ থেকে ফার্নেস অয়েল আমদানির চুক্তি করেছে, যেখানে অপেক্ষাকৃত কম সালফারের লো সালফার ফুয়েল অয়েলের আমদানির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সুন্দরবনে ডুবে যাওয়া জাহাজটিতে ছিল হাই সালফার ফুয়েল অয়েল, যা এটা নিয়ে যাচ্ছিল গোপালগঞ্জের পাওয়ার প্ল্যান্টের জন্যে। মংলা বন্দরে যেসব সমুদ্রগামী জাহাজ ভিড়ছে, সেগুলিও কিন্তু এই ফার্নেস অয়েলেই চলে। জাহাজের ভিতরে একেবারে তলায় পড়ে থাকে বলে এই তেলকে বাংকার তেলও বলে। একেকটি জাহাজে শুধুমাত্র নিজের চলার জন্যেই এরকম প্রচুর পরিমাণ তেল থাকে। কাজেই এই ধরনের দুর্ঘটনা বারে বারে ঘটার সম্ভাবনা কেউই উড়িয়ে দিতে পারবে না। কিছুদিন আগেও আরও একটি জাহাজ দুর্ঘটনায় পতিত হয়েছিল; কিন্তু সেটা সিমেন্ট ক্লিংকারবাহী হবার কারণে পরিবেশের উপরে সেটার প্রভাব কম। কিন্তু বিদ্যুত উতপাদনের গুরুত্ব বাড়ার সাথে সাথে জ্বালানি তেলের গুরুত্বও যেভাবে বেড়ে চলেছে, তাতে তেলবাহী জাহাজের দুর্ঘটনায় পতিত হওয়া সময়ের ব্যাপার ছিল মাত্র। গ্যাসের রিজার্ভ কমে যাবার কারণে তেল-পুড়ানো পাওয়ার প্ল্যান্টের সংখ্যা বেড়েছে অনেক। গাদের মতো এই ফার্নেস অয়েল জাহাজ ছাড়া পরিবহণ খুবই দুরূহ। কাজেই অচিরেই জাহাজের সংখ্যা কমানোর কোন পদ্ধতি দেখি না। এটা মোটামুটি ঠিক যে আমরা আমাদের ভাগ্যের উপরেই চড়ে বেড়াচ্ছিলাম। আমরা শুধু দোয়া করছিলাম যেন বড় কোন দুর্ঘটনা না হয়। কিন্তু এভাবে আমরা নিজেদের কদিন বাঁচাতে পারি, সেটার উত্তর আজ আমরা পেয়ে গেছি।

সুন্দরবনের মাঝ থেকে এই ২৩-তলা সমান উঁচু সাইলো বিল্ডিং দেখা যাচ্ছে। এই স্থাপনা এখানে জন্ম দেবে নতুন কর্মযজ্ঞের। এই স্থাপনা সুন্দরবনের কফিনে শেষ পেরেকগুলির মধ্যে একটি।


পসুর নদী - আর. আই. পি.

দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান শহর খুলনা এবং যশোর তৈরি হবার পিছনে সুন্দরবনের পসুর নদীর উপরে সমুদ্রবন্দরের গুরুত্বই সবচাইতে বেশি। সমুদ্রবন্দরের স্থান নাব্যতার কারণে বারে বারে পরিবর্তন হলেও সেটা পসুর নদীর উপরেই রয়েছে। এই নদীটা সুন্দরবনকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। প্রতিদিন এখানে জাহাজ আসছে মালামাল নিয়ে। এই বন্দরের উপরে নির্ভর করেই এখানে গড়ে উঠেছে কয়েকটি সিমেন্ট কারখানা। পসুর নদীতে যত জাহাজ চলে, তার সবচাইতে বেশি হলো ক্লিংকারবাহী জাহাজ। মংলার উত্তরে এই একই নদীর উপরে রামপালে কয়লা-ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র এখানে কয়লাবাহী জাহাজের আনাগোনার সূচনা করবে। প্রতিদিন ১০,০০০ টন কয়লার যোগান দিতে কি-রকম সংখ্যক জাহাজের এই নদী ব্যবহার করতে হবে, তা সহজেই অনুমেয়। মংলা বন্দরের সাথেই বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) তৈরি করছে ১ লক্ষ টন ক্ষমতার ফুয়েল ডিপো। খুলনায় তৈরি হচ্ছে নতুন তেলভিত্তিক পাওয়ার প্ল্যান্ট। এগুলি তেলবাহী জাহাজের আসাযাওয়া আরও বাড়াবে। এখন পর্যন্ত মংলায় তৈরি হয়েছে তিনটি এলপিজি বটলিং প্ল্যান্ট; আরও তৈরি হতে যাচ্ছে। খুলনা থেকে মংলা পর্যন্ত তৈরি হচ্ছে রেলপথ, যা কর্মযজ্ঞ বাড়াবে বৈ কমাবে না। মংলা বন্দরের উপরে নির্ভরশীল তিনটি রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা বা এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন (ইপিজেড) - সৈয়দপুর, ঈশ্বরদী এবং মংলা। এগুলির ব্যবসার পরিধি বাড়ছে; তাই বাড়ছে কনটেইনার জাহাজের সংখ্যা। বড় কনটেইনার জাহাজ বন্দরের জেটিতে আনার জন্যে করা হচ্ছে ড্রেজিং। সরকারের সিদ্ধান্তে মংলা বন্দর দিয়ে খাদ্য আমদানীর একটা বড় অংশ এখন আসছে। কাজেই বেড়েছে খাদ্যশস্যবাহী জাহাজের সংখ্যা। মংলা বন্দরের ১৭ কিলোমিটার দক্ষিণে জয়মনিরখোল এলাকা হলো অফিশিয়ালি সুন্দরবনের বাউন্ডারি। এখানেই শেলা নদী মুখ, যার দক্ষিণ পাড়ে গহীন বন আর উত্তর পাড়ে তৈরি হচ্ছে খাদ্য অধিদপ্তরের ৫০,০০০ টন ধারণক্ষমতার বিশাল অত্যাধুনিক সাইলো (খাদ্য গুদাম)। মংলা থেকে জয়মনিরখোল পর্যন্ত কিছুই ছিল না; রাস্তার অবস্থা ছিল করুন; নদী-খালের উপরে ছিল না সেতু। এই সাইলো নির্মাণের কারণে এখানে বিদ্যুত লাইন বসানো ছাড়াও তৈরি হচ্ছে রাস্তা এবং সেতু। এই অবকাঠামো এখানে জন্ম দেবে নতুন কর্মযজ্ঞের। এখানকার প্রায় পুরো এলাকাতেই এখন সাইন বোর্ডের বন্যা। এখানে খুলনা শিপইয়ার্ড-এর দ্বিতীয় ইউনিটসহ একাধিক জাহাজ নির্মাণ শিল্প বসার কথা রয়েছে। মোটকথা, রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র থেকে শুরু করে জয়মনিরখোল পর্যন্ত পুরো এলাকাটাই খুব দ্রুত শিল্পাঞ্চলে রূপ নিতে যাচ্ছে। অর্থনৈতিক দিক থেকে আমরা সুন্দরবন রক্ষায় পয়েন্ট অব নো রিটার্নে চলে গেছি প্রায়। কাজেই সুন্দরবন রক্ষায় যা চোখের পানি ফেলার, তা এখনি ফেলে নেওয়া ভালো হবে। 

ভোলার শাহবাজপুর গ্যাসক্ষত্র পটুয়াখালীর পায়রা সমুদ্রবন্দরকে মংলার প্রতিদ্বন্দী হিসেবে তৈরি করে দিতে পারতো, এবং একই সাথে সুন্দরবনকে বাঁচার একটা সুযোগ করে দিতে পারতো, যদি আমাদের পলিসিমেকাররা বরিশাল-পটুয়াখালী এলাকাকে খুলনা-যশোরের সাথে ব্যালান্স করার কথা চিন্তা করতে পারতেন।


পায়রা বন্দর - সুন্দরবনের রক্ষাকর্তা হতে পারে কি?

চেষ্টা করলে হয়তো রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র, খাদ্য অধিদপ্তরের সাইলো আর বিপিসি-র ফুয়েল ডিপো পায়রা সমুদ্রবন্দরের পাশে করা যেতে পারতো। এই কয়েকটি স্থাপনা মংলা বন্দরের কর্মচাঞ্চল্যকে পায়রায় স্থানান্তর করতো। সরকারী সিদ্ধান্ত খুব সহজেই জাহাজ নির্মাণ শিল্পকে পসুর নদী থেকে সরিয়ে বরিশাল-পটুয়াখালী এলাকায় নিয়ে আসতে সক্ষম। এক্ষেত্রে অবকাঠামো উন্নয়ন সহ যেসব জটিলতা তৈরি হতো, তা হয়তো সদিচ্ছা থাকলে উতড়ানো সম্ভবও হতো। ভোলার শাহবাজপুর গ্যাস ক্ষেত্র এবং নির্মাণাধীন বিদ্যুত কেন্দ্র যথেষ্ট সাহায্য করতো এক্ষেত্রে। পটুয়াখালীতে চীনের সহায়তায় তৈরি হচ্ছে আরও একটি কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র। কয়েক বছরের মাঝে পদ্মা সেতু তৈরি হইয়ে গেলে সেটা পায়রার জন্যে তৈরি করতো আরও সুযোগের। এখানে সবচেয়ে বড় প্রশ্নটি দাঁড়াতো - মংলা এবং পায়রা বন্দরের ব্যালান্স নিয়ে। একটির উত্থান অপরটির অবনতি ডেকে আনতো। বরিশাল-পটুয়াখালীকে প্রাধান্য দিতে হতো খুলনা-যশোরের উপর। সেই সিদ্ধান্তের জন্যে আমাদের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দরা কতটুকু প্রস্তুত ছিলেন, সেটা চিন্তা করার বিষয়। সুন্দরবনকে রক্ষা করাটা আমাদের পলিসিমেকারদের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বের মাঝে পড়ে বলে মনে হয়নি কখনো। পায়রাকে নিয়ে এগুনো গেলে পসুরকে পুরোপুরি রক্ষা হয়তো করা যাবে না; তবে স্যালাইন দিয়ে কিছুদিন বেশি বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব হলেও হতে পারে।

বিএসইসি ভবনে আবারো আগুন লাগে অক্টোবর ২০১৪। ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট সম্পর্কে আমাদের শিক্ষা পুরো হয়েছে কি?


দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বলতে কি শুধু বন্যা-জলোচ্ছ্বাস বোঝায়?

শুরুতেই বলছিলাম ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট-এর কথা। আমাদের দেশে দুর্যোগের সংজ্ঞা যে খুব ছোট, সেটা সুন্দরবনে জাহাজডুবির পরে সেখানে বিআইডব্লিউটিএ-এর কর্মকর্তাদের অগ্রগামী ভূমিকা পালন করতে দেখেই বোঝা গেছে। ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট বলতে এখনো বন্যা-ঝড়ের মাঝেই আমরা আটকে আছি। মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগ যে একেবারে কম ভয়াবহ নয়, সেটা আমরা এখনো বুঝে উঠতে পারিনি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ হবার কারণে আমরা সেইদিকেই চোখ রেখেছি সর্বদা। আর অর্থনৈতিক অনগ্রসরতার কারণে মনুষ্যসৃষ্ট দুর্যোগের সম্ভাবনাও অপেক্ষাকৃত কম ছিল। তবে গত দুই দশকে অর্থনৈতিক দিক থেকে দ্রুত অগ্রগতির সাথে সাথে যেসব ঝুঁকির সৃষ্টি হয়েছে, সেগুলির জন্যে আমরা নিজেদের তৈরি করতে পারিনি। নদীতে জাহাজের সংখ্যা আগের চেয়ে বহুগুণ বেড়ে গেছে, কিন্তু তার সাথে পাল্লা দিয়ে তৈরি হয়নি মনিটরিং এজেন্সিগুলি। জাহাজ তৈরি হচ্ছে যথেচ্ছভাবে, যাত্রী নেওয়া হচ্ছে অতিরিক্ত, ফিটনেসবিহীন জাহাজ চলছে, নদীর পানি দূষণ করছে জাহাজের বর্জ্য, নদীর মাঝে পার্ক করে রাখা হচ্ছে জাহাজ, সঠিক যন্ত্রপাতি ছাড়াই চলছে জাহাজ, চলাচলের সময় ঠিক করে দেয়ার পরেও কেউ মানছেনা কেউ দেখার নেই। কাজেই দুর্ঘটনার সম্ভাবনা প্রতিদিন বেড়েই চলেছে। আর দুর্ঘটনার সম্ভাবনা বাড়লেও সেটার জন্যে প্রস্তুতি নেই আমাদের। এটা ঘটলে এদের দায়িত্ব; ওটা ঘটলে ওদের দায়িত্ব - এগুলি ছেড়ে দায়িত্ব একজনকেই দিতে হবে। তাকে দিতে হবে পলিসি এবং ইনফ্রাস্ট্রাকচার ব্যাকআপ। দুর্যোগের সময় ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকে ক্ষমতা দিতে হবে অন্য যেকোন রিসোর্স ব্যবহার করতে পারার। বিদ্যুত উতপাদন ও সঞ্চালন, গ্যাস সঞ্চালন, পানি সরবরাহ, সড়ক, রেল এবং নদীপথের গুরুত্বপূর্ণ রুট, স্টেশন ও সেতু, বন্দর ব্যবস্থাপনা, টেলিযোগাযোগ, ইন্টারনেট সংযোগ ও সাইবার সিকিউরিটি, গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্যিক ও স্ট্র্যাটেজিক স্থাপনা, পরিবেশগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ স্থান, প্রধান পর্যটন কেন্দ্র - এগুলি সবকিছুই ইন্টেলিজেন্সের ক্ষেত্রে তো অবশ্যই, আবার ডিসাসটার ম্যানেজমেন্টের চিন্তার ভেতরেও আনতে হবে। এর যেকোনটির ক্ষতিই দেশের জাতীয় নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলতে পারে। আর এই হুমকি যে কারুর কাছ থেকেই আসতে পারে- সেটা দেশের ভেতরেও হতে পারে, এমনকি বাইরেও হতে পারে। কাজেই এগুলিকে ছোট করে দেখার সুযোগ নেই। 

দেশের প্রতিটি স্থাপনা এখন টাকার অঙ্কে অনেক মূল্যবান। দেশের প্রতিটি মানুষের মূল্য অনেক বেশি; এখন আমরা আর ফকিরের দেশ নই - একেকটা মানুষ দেশের অর্থনীতিতে তাদের জীবদ্দশায় অনেক অবদান রাখে। একেকটি মানুষ একেকটি জীবন্ত কারখানা। এদের প্রত্যেকের অবদানের উপরেই দেশের অর্থনীতি প্রতিষ্ঠিত। কাজেই তাদের জীবনের মূল্য যেমন দিতে হবে, তেমনি প্রতিটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনারই নিরাপত্তা দিতে হবে। তৈরি রাখতে হবে ডিসাসটার ম্যানেজমেন্ট এজেন্সিকে, যাতে যেকোন দুর্যোগ সবচাইতে দ্রুততার সাথে মোকাবিলা করা যায়; মানুষের জানমালের সর্বনিম্ন ক্ষতির মাঝেই যেন দুর্যোগ ম্যানেজ করা যায়। আর বেঁচে থাকার পরিবেশ না থাকলে বেঁচে থাকারি বা মানে কি? আস্তাকুঁড়ে বসবাসের কোন মানে হয় না। অত্যন্ত ঘনবসতিপূর্ণ এই দেশে আমরা পরিবেশের দিকে না তাকালে অচিরেই এদেশ আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য অব্যবহার্য হয়ে পড়বে। আর সেটার জন্যে দায়ী থাকবো আমরাই। নিজেদের সন্তানদের বিদেশ পাঠিয়ে দায়মুক্তির চাইতে বরং আমাদের ভাবা উচিত সন্তানদের এই দেশে বসবাসের জন্যে নিজেদের দায়িত্বটুকু কিভাবে আমরা পালন করতে পারি।

4 comments:

  1. ধন্যবাদ শরীফ ভাই... আমি অপেক্ষায় ছিলাম এই লেখাটার জন্য... আমি লিখতে পারিনা... সেদিন আপনার সাথে প্রায় ঘণ্টাব্যপি আলোচনায় জেনেছিলাম অনেক কিছু... আজ আরও কিছু কথন যোগ করলেন...

    আমড়া যতই পরিবেশ প্রতীবেশ নিয়ে চীৎকার দেই তাতে আমাদের নিতি নির্ধারকদের কি আসে যায়! কিছু বে আক্কেল লোক যখন মন্ত্রিত্ব পায় তারা তখন যা খুশি তা করতে পারে... কিন্তু যে ভুল হয়ে যায় তা আর শুধ্রাবার উপায় থাকে না ... তাদের বানী নিয়ে আমাদের পত্রিকার পাতা ভরান বা ফেসবুকের পাতায় নিজেদের স্ট্যাটাস বানানো ছাড়া ...

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ আপনাকে নিজের মতামত দেওয়ার জন্যে।
      আমি মনে করি যে আমাদের দেশের জন্মের সময়েই দেশের বিবেকের মৃত্যু হয়েছিল বুদ্ধিজীবিদের হত্যাকান্ডের সাথেসাথে। কিন্তু অবশেষে আমাদের দেশের মানুষ নিজেদের সন্বন্ধে ভাবতে শিখছে। স্বাধীনতার চার দশক পরে দেশের বিবেক ফেরত আসছে। এই বিবেক এখন কথা বলতে শুরু করেছে। এটাই আশার লক্ষণ। এটার প্রকৃত ফলাফল পেতে আমাদের আরও অপেক্ষা করতে হবে। তবে প্রসেস শুরু হয়েছে; সেজন্যেই আমি আশাবাদী।

      Delete
  2. আপনি আশাবাদী কিন্তু আমি এখনো হতে পারছি না ভাই।ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  3. That is a very good tip particularly to those new to the blogosphere.
    Short but very precise info… Many thanks for sharing this one.
    A must read article!

    ReplyDelete