১১ জানুয়ারী ২০১৪
চীনা উপকূলে সী ট্রায়াল দিচ্ছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর তীনে তৈরি ফ্রিগেট 'বিএনএস আবু বকর'। জাহাজটি তার সাথের 'বিএনএস আলী হায়দার'-সহ সী ট্রায়াল শেষে খুব শিগগিরই বাংলাদেশে এসে পৌঁছবে।
বাংলাদেশের ৫
জানুয়ারী বিতর্কিত নির্বাচনের পরপর বিদেশী কোন শক্তিরা কে কি বললো, সেটা নিয়ে অনেক জল্পনা কল্পনা শুরু
হয়েছে। তাদের বিবৃতি শুধুমাত্র আমাদের দেশের প্রেক্ষিত বিশ্লেষণ করলে ঠিক হবে না।
প্রতিটা দেশই তাদের নিজেদের স্বার্থ দেখবে; সেটাই
স্বাভাবিক। আর সেই স্বার্থ শুধু যে একটি দেশকে কেন্দ্র করে হবে, সেটা কে বললো? যুক্তরাষ্ট্র যখন বাংলাদেশ
সম্পর্কে কোন সিদ্ধান্ত নেবে, তখন সে অবশ্যই চিন্তা করবে
যে তাদের ওই সিদ্ধান্তের কারনে ভারত, চীন, রাশিয়া, ইউরোপ, জাপান
বা মধ্যপ্রাচ্যের সাথে সম্পর্কের ক্ষেত্রে কোন প্রভাব পড়বে কিনা; আর পড়লেও সেটা কতটুকু পড়বে। কাজেই আমাদের সাথে তাদের সম্পর্কের
ব্যাপারটা বুঝতে তাদের চেয়ারে বসে চিন্তা করতে হবে; ভাবতে
হবে যে আমরা তাদের জায়গায় বসলে কি করতাম। এই লেখাতে আমি চেষ্টা করবো তাদের চেয়ারে
বসে চিন্তা করা যায় কিনা।
চীনা
গণতন্ত্র?
যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ), জাপান, কোরিয়া – এরা সবাই নির্বাচনের
আগে থেকেই তাদের অবস্থান জানিয়েছে। তার সেজন্যেই তারা বিতর্কিত নির্বাচনে
পর্যবেক্ষকও পাঠায়নি। নির্বাচনের পরেও তারা সরকারকে সরাসরি সমর্থন না দিয়ে বরং
সর্বজনস্বীকৃত আরেকটি নির্বাচনের দিকে গুরুত্ব দিয়েছে। এসব দেশে অনেক প্রেসার
গ্রুপ আছে যারা গণতন্ত্র আর মানবাধিকার নিয়ে যথেষ্ট সোচ্চার। যদিও ওই প্রেসার
গ্রুপগুলি দেশের স্বার্থ উপেক্ষা করে কমই মানবতার কথা বলে, তাদের প্রভাব ফেলে দেবার মত নয়।
নিজের দেশের কূটনীতি সমর্থন করলে প্রেসার গ্রুপের কথার গুরুত্ব বেশ বৃদ্ধি পায়। তবে
এখানে উল্লেখযোগ্য অবস্থান হচ্ছে চীনের। চীন বেশীরভাগ সময়েই অন্য দেশের অভ্যন্তরীণ
রাজনীতি সম্পর্কে কথা বলা থেকে বিরত থাকে। তবে বাংলাদেশের বেলাতে চীনকে বেশ ভালোই
সরব দেখা গিয়েছে। উপরে যে ক’টি দেশের কথা বলেছি, তারা সবাই কিন্তু গণতান্ত্রিক,
শুধু চীন ছাড়া। তাই যদিও অন্য দেশগুলির কাছ থেকে গণতান্ত্রিক
যুক্তি আসাটা নতুন কিছু নয়, চীনের কাছ থেকে গণতন্ত্রের
কথা আসাটা কিন্তু কিছুটা বেমানানই লাগে। এখানে চীনের অবস্থান যতটা না
গণতান্ত্রিকতার দিকে, তার চেয়ে বেশী রাজনৈতিক
স্থিতিশীলতার দিকে। কারণ বাংলাদেশে চীনের যে পরিমাণ অর্থনৈতিক স্বার্থ রয়েছে,
তাতে আপাতত যেকোন মূল্যে স্থিতিশীলতা আনার লক্ষ্যে কাজ করাটাই
তাদের জন্য স্বাভাবিক পদক্ষেপ। গণতন্ত্রের চাইতে বরং বর্তমান সরকার চীনের জন্য
কতটুকু সহায়ক হবে সেটাই বেশী গুরুত্বপূর্ণ। মিয়ানমারের সামরিক জান্তার সাথে ভাল
সম্পর্ক রাখতে চীন গণতন্ত্রের পক্ষে কথা বলার প্রয়োজন মনে করেনি। বাংলাদেশেও তাই
চীন গণতন্ত্রের জন্যে মরিয়া হয়ে উঠবে বলে মনে হয় না।
মার্কিন
ডলার
এখানে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে ভারতের
অবস্থান। আপাতত মনে হচ্ছে ভারতই একমাত্র দেশ যারা বাংলাদেশের নির্বাচনকে ইতিবাচক
দিক থেকে দেখছে। এখানে আমরা ভারতের অবস্থানের বিপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান নিয়ে
যতটা গভীরভাবে চিন্তা করছি,
চীনের অবস্থান কিন্তু ততটা গভীরভাবে চিন্তা করছি না। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশ থেকে
তাদের প্রভাব কমানোর দিকে যাবে কিনা সেটা অনেকটাই নির্ভর করছে চীনের অবস্থানের
উপরে। চীন গণতন্ত্রপ্রেমী নয়; আর তাই স্থিতিশীলতার
স্বার্থে তারা যদি বর্তমান বাংলাদেশ সরকারের বিরূদ্ধে বড় কোন কৌশল অবলম্বন করা
থেকে বিরত থাকে, তাহলে কিন্তু আশ্চর্য হবার কিছুই থাকবে
না। আর তখন মিউজিক্যাল চেয়ার খেলায় যুক্তরাষ্ট্রের ছেড়ে যাওয়া চেয়ারটি দখল করে
নিতে চীন ছাড়াও অন্য শক্তিরা পিছুপা হবে না। ২০১৩-এর শেষে টিকফা চুক্তি সই করে,
আর বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে বড় একটি যুদ্ধজাহাজ (বিএনএস সমুদ্র জয়)
দিয়ে ২০১৪ সালে একই রকম আরও একটি যুদ্ধজাহাজ দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র
রণে ভঙ্গ দেবে বলে আমার মনে হয় না। ১৮০ মিলিয়ন ডলার খরচ করে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী
৪টি C-130 পরিবহণ বিমানও কিনেছে আমেরিকা থেকে, যেগুলি এখনো (জানুয়ারী ২০১৪) দেশে
এসে পৌঁছায়নি। সুতরাং এটা মোটামুটি হলফ করেই বলা যায় যে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের
অবস্থান ঠিক রেখেই এই সরকারের সাথে কথা বলবে। একটা ‘Love-hate
relationship’ থাকবে এই সরকারের সাথে।
অস্ত্র
আর প্রযুক্তির বাণিজ্য
আর চীনের বাংলাদেশ থেকে দূরে চলে যাবার আমি
বিন্দুমাত্র কারণ দেখিনা। ২০১৩ সালেই বাংলাদেশ রাশিয়ার সাথে ১ বিলিয়ন ডলারের
প্রতিরক্ষা চুক্তি করেছে। চীন বুঝতে পারছে যে বাংলাদেশের অস্ত্রের বাজারে রাশিয়া
ঢোকার জন্য যারপরনাই চেষ্টা করছে। যেকারণে রাশিয়া ১ বিলিয়ন ডলার ঋণ পর্যন্ত দিতে
চাচ্ছে। এই চুক্তির মধ্যে বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর জন্য ২৪টা 4+/5th জেনারেশনের Yak-130
জেট ট্রেনিং বিমান কেনার কথা রয়েছে। এই ট্রেনিং বিমানের পরে কোন একসময় 4+ জেনারেশনের ফাইটার বিমান কেনার কথাও উঠবে। তখন
সেই বিমান যে রাশিয়া থেকে আসার সম্ভাবনাই বেশী থাকবে, তা বলাই বাহুল্য। সেসব ফাইটার
বিমানের একেকটির মূল্য ৬০ মিলিয়ন ডলারের উপরে হবে। কাজেই বোঝাই যাচ্ছে এখানে কতবড়
প্রতিরক্ষা ব্যবসার কথা আমরা বলছি। বাংলাদেশ চীন থেকে লেটেস্ট জেনারেশনের ফাইটার
বিমান কেনার চেষ্টা করেছে এবং করছে, সে খবর পাওয়া যায়
বিভিন্ন সূত্র থেকে। আবার বাংলাদেশ নৌবাহিনীও দু’টি
পুরোনো ডিজাইনের Romeo-class সাবমেরিন কিনছে চীন থেকে। শোনা যায় যে বাংলাদেশ
নাকি পুরোনো সাবমেরিন না কিনে নতুন ডিজাইনের Song-class সাবমেরিন কেনার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিল। এখানে বাজেটের কথা
ছাড়াও প্রযুক্তি হস্তান্তরের ব্যাপার কিন্তু থেকেই যাচ্ছে। দু’টি
পুরোনো ডিজাইনের সাবমেরিন কেনার কথাতেই ভারতীয় নৌবাহিনী তাদের দুশ্চিন্তার কথা
লুকিয়ে রাখতে পারেনি। কারণ বঙ্গোপসাগরে চীনা তৈরি সাবমেরিন তারা দেখতে চায় না।
ভারত মহাসাগরে চীনা নৌবাহিনীর সাবমেরিনের আনাগোনা রয়েছে বলেও তারা দাবী করেন।
মোদ্দাকথা এই এলাকায় চীনা সাবমেরিনকে ভারতীয়রা বেশ ভীতির চোখেই দেখছে। তাই চীনারাও
এই এলাকায় তাদের সাবমেরিনের অপারেশনাল ও প্রযুক্তিগত গোপনীয়তা রক্ষার চেষ্টায়
থাকবে। বাংলাদেশের কাছে তাদের লেটেস্ট সামরিক প্রযুক্তি বিক্রি করার ক্ষেত্রে চীন
অবশ্যই চিন্তা করবে সেটা তাদের প্রতিদ্বন্দী কোন দেশের সামরিক বিশারদ বা
গোয়েন্দাদের হাতে পড়তে পারে কিনা। এই ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে চীনের চিন্তা
কম থাকাটাই স্বাভাবিক, কারণ
প্রযুক্তির দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে। কাজেই বাকি
থেকে যায় শুধু একটি দেশ, যাদের খুব কাছাকাছি অবস্থান এখন
বাংলাদেশের।একটু আগেই বাংলাদেশে রাশিয়ার প্রতিরক্ষা ব্যবসায়ের কথা বলেছি। চীনেরও সেই একই ব্যবসা এখানে রয়েছে। তাই লেটেস্ট প্রযুক্তি বিক্রি না করলেও চীন এখানে যে পরিমাণ সমর ব্যবসা করতে পারবে, তাতে বাংলাদেশ পৃথিবীতে তাদের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রতিরক্ষা বাণিজ্যের অংশীদারই থাকবে। এই লেখা যখন লিখছি, তখন চীনের উপকূলে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্য দু’টি ফ্রিগেট ‘বিএনএস আবু বকর’ ও ‘বিএনএস আলী হায়দার’ সী ট্রায়াল দিচ্ছে। সী ট্রায়াল শেষ হলেই সেগুলি বাংলাদেশে এসে পৌঁছাবে কিছুদিনের ভেতরেই। ২০১৫ সালে এসে পৌঁছাবে দু’টি নতুন কর্ভেট, যেগুলি এখন চীনের ডকইয়ার্ডে তৈরি করা হচ্ছে। সাবমেরিনের কথাতো উপরেই বলেছি। এর উপরে সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর জন্য বিশাল অর্ডার পরে রয়েছে চীনের কাছে। কাজেই আগে বাণিজ্য, পরে অন্য কথা।
রাশিয়ার
মধ্যপন্থা
আর রাশিয়া? তারা কেন গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় উড়াল দেবে? তারা
নিজেরাই তো গণতন্ত্রের ধার ধারেন না। তাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ভীষণ ধোঁয়াসা
একটা বিবৃতি দিয়েছেন। তারা বলেছেন – “It is regrettable
that the voting was put under boycott by main opposition forces of the country.”
এখানে তারা নির্বাচনে বিরোধী দল না থাকায় “regrettable”, মানে দুঃখপ্রকাশ
করেছেন। যেটা অন্য বেশীরভাগ দেশই করেছে। এরপর বলেছেন – “Russia confirms its
readiness to continue constructive partner cooperation with the government
which will be formed on the basis of the will of the Bangladeshi voters.” এখানে
তারা কিন্তু এই সরকারের কথা একবারও বলেননি; বলেছেন যে “the government which will be formed on the basis
of the will of the Bangladeshi voters”; এখানে
কিন্তু একবারও বলেননি এই সরকার “will of the
Bangladeshi voters”-এর
ফসল কিনা। অর্থাৎ একটা অদ্ভুত জায়গায় এনে উনারা ফুল স্টপ দিয়েছেন। এখান থেকে যেকোন
দিকেই কথা বলা সম্ভব। শেষে বলেছেন – “At the same time, we
hope that the authorities and the opposition will not overstep the boundaries
of the constitutional field to ensure internal political stability and
strengthen the democratic institutes of friendly Bangladesh”, যা
পাশ্চাত্যের অন্যান্য দেশের সাথে মিল রেখেই বলেছেন। এই ধরনের মধ্যপন্থী বিবৃতি
আমার উপরের কথাগুলি সমর্থন করে; মানে এখানে মিউজিক্যাল
চেয়ার দখলে রাখাটা বেশী জরুরী। অস্ত্র ব্যবসা, পারমাণবিক প্রকল্প, তেল-গ্যাস
ড্রিলিং, ইত্যাদি
বিষয় গণতন্ত্র রক্ষার চাইতে অনেক বেশী গুরুত্বপূর্ণ।
এবং
ইউ...
যুক্তরাষ্ট্র আর ইইউ মোটামুটি একই দিকে কথা বললেও
কার্যক্ষেত্রে তারা কিছুটা ভিন্নমত পোষণ করতে পারে। ইইউ অনেকগুলি রাষ্ট্রের একটি
সংঘ। তাদের চিন্তাধারা তাই কিছুটা হলেও অন্য রকম হতে পারে। বিশেষ করে বাংলাদেশের
গার্মেন্টস শিল্পের ক্ষেত্রে তাদেরকে আমরা আরও কঠিন হতে দেখতে পারি। কারণ এখানে
মানবাধিকারের ইস্যুটিও রয়েছে। তবে বর্তমান সরকার যদি গার্মেন্টস শিল্পে নিয়মকানুন
মেনে চলার মত সঠিক প্রতিশ্রুতি দিতে পারে, তাতে ইইউ কিছুটা নরম হয়ে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের বিরূদ্ধে ব্যবস্থা
নাও নিতে পারে। আর ইইউ এটাও জানে যে বাংলাদেশের গার্মেন্টসের বিরূদ্ধে কিছু করতে
গেলে সেটা সরকারকে যতনা ক্ষতির মুখে ফেলবে, তার চাইতে
বেশী ক্ষতির মুখে ফেলবে দেশের খেটে খাওয়া মানুষগুলিকে। তখন মানবাধিকার নিয়ে কথা
বলারও ইইউর কিছু থাকবে না। জাপান আর কোরিয়া বাংলাদেশের উন্নয়ন পার্টনার। ইইউর যেমন
এদেশে রয়েছে অনেক উন্নয়ন প্রজেক্ট সেরকম জাপানেরও রয়েছে। তারা তাদের দেশের
ট্যাক্সপেয়ারদের কাছে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। জাপান আর কোরিয়ার প্রচুর বিনিয়োগ রয়েছে এখানে;
রয়েছে আমদানী-রপ্তানী বাণিজ্য। তাই তারা তাদের ব্যবসায়ীদের কাছেও
প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। তাদের কাছে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার চাইতে কোন কিছুই বেশী বড় হতে
পারে না। কাজেই এই স্থিতিশীলতার খাতিরে তারা অনেক কিছুই কষ্ট হলেও গিলে ফেলতে
পারে।৫ জানুয়ারীর নির্বাচনের পরে বাংলাদেশে পরাশক্তির মিউজিক্যাল চেয়ারে খুব বেশী একটা পরিবর্তন হয়েছে বলা যাবে না। ক্ষমতা এখনো রয়েছে বাংলাদেশের কাছে। ভারত-যুক্তরাষ্ট্র-চীন-রাশিয়া-ইইউ-জাপান সকলে একে অপরকে ব্যালান্স করে চলছে। কেউ কাউকে ক্ষেপাতে চাচ্ছে না। আর না ক্ষেপিয়ে শেষ পর্যন্ত যা হয়, তাকে আমরা বলি compromise । দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঠিক আগে আগে ইউরোপীয়ান রাজনীতিতে একটা শব্দ ছিল – “appeasement” । শব্দটা ইউরোপের ক্ষেত্রে যা এনেছিল, বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তা হয়তো আনবে না। কিন্তু এর ফলাফল যে ভালো না, সেটা কিন্তু ইতিহাসই বলে দেয়।
No comments:
Post a Comment