Tuesday 13 July 2021

হাইতির প্রেসিডেন্টের হত্যাকান্ড … যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডার দ্বন্দ্বের ফলাফল?

১৩ই জুলাই ২০২১

২০১৮ সাল। প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইজের ছবি নষ্ট করছেন একদল প্রতিবাদকারী। ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদেরা সরাসরিই নির্বাচন পাশ কাটিয়ে হাইতির প্রেসিডেন্ট মোইজকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা বলছিলেন। আবার অনেকেই হাইতির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর বিপক্ষে কথা বলছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সকলের সামনে ক্যারিবিয়ানে মার্কিন স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারটাই সামনে আসছে; যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত থাকুক আর না থাকুক।

 

হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইজকে তার বাড়িতে ঢুকে হত্যার ঘটনার পিছনে কারা জড়িত ছিল, তা নিয়ে চলছে ব্যাপক জল্পনা কল্পনা। ৭ই জুলাই দিবাগত রাতে মোইজের প্রাইভেট বাড়িতে ঢুকে তাকে নৃশংশভাবে গুলি করে হত্যা করা হয়। তার স্ত্রীও ভীষণভাবে আহত হন। এই হত্যাকান্ড এমন সময়ে এলো, যখন হাইতির নেতৃত্ব নিয়ে ব্যাপক দ্বন্দ্ব চলছে। দেশটাতে এখন কোন কার্যকর পার্লামেন্ট নেই। মোইজের পদত্যাগের দাবিতে রাস্তায় বিক্ষোভ চলছে প্রায় তিন বছর ধরে। ২০১৭ সাল থেকে প্রেসিডেন্ট মোইজ ছয়জনকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছেন। ক্লদ জোসেফ বর্তমান প্রধানমন্ত্রী হলেও তাকে মোইজ নিয়োগ দিয়েছিলেন ভারপ্রাপ্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে। হত্যাকান্ডের শিকার হবার মাত্র কয়েকদিন আগে মোইজ আরিয়েল হেনরিকে প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দিয়েছিলেন। তবে পার্লামেন্ট এবং প্রেসিডেন্ট ছাড়া হেনরির কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর কঠিন হবে। অপরদিকে হাইতির সংবিধান অনুযায়ী প্রেসিডেন্টের মৃত্যু হলে ক্ষমতা পাবার কথা প্রধান বিচারপতির। কিন্তু কিছুদিন আগে প্রধান বিচারপতি করনায় আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। বোঝাই যাচ্ছে যে, প্রেসিডেন্ট মোইজের হত্যাকান্ডের ঘটনার সময়টা ছিল খুবই সংবেদনশীল। ১ কোটি ১২ লক্ষ মানুষের হাইতি আমেরিকা মহাদেশের দরিদ্রতম দেশ। ১৯৯০এর দশক থেকে দেশটা অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিকভাবে খুঁড়িয়ে চলছে। তবে এই দরিদ্র দেশটাকে কেন্দ্র করেই চলছে ভূরাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা।

যুক্তরাষ্ট্র এবং কলম্বিয়ার নাগরিকেরা জড়িত

‘সিএনএন’এর এক প্রতিবেদনে প্রশ্ন করা হচ্ছে যে, হাইতির পুলিশ কর্মকর্তারা যেখানে বলছেন যে, হত্যাকারীরা ছিল বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত সামরিক সদস্য এবং তারা কয়েক মাস ধরে পরিকল্পনা করেছে, সেখানে তারা যে হাইতির পুলিশের আক্রমণের শিকার হবে, তা তারা একেবারেই চিন্তায় রাখেনি! শুধু তাই নয়, আশ্চর্য হলেও সত্যি যে, মোইজের শরীরে অনেকগুলি বুলেটের আঘাতের কথা বলা হলেও প্রেসিডেন্টের নিরাপত্তারক্ষীদের মাঝে কারুরই হতাহত হবার খবর আসেনি! বিভিন্ন সূত্রের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সেই রাতে প্রেসিডেন্টের বাড়িতে হামলার খবর পেয়ে ছুটে আসা নিরাপত্তা সদস্যরা কোন কারণে পাঁচটা গাড়িতে করে আসা হত্যাকারীদেরকে বিনা বাধায় চলে যেতে দেয়। এরপর গাড়িগুলি কিছুদূর যাবার পর কয়েক’শ নিরাপত্তারক্ষীর বাধার সন্মুখীন হয় এবং গাড়ি থেকে বের হয়ে পালিয়ে যায়। একটা বাড়িতে লুকিয়ে থাকা গ্রুপকে হাইতির নিরাপত্তা বাহিনী ঘিরে ফেলে। সকালের দিকে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ার পর তারা নিরাপত্তারক্ষীদের সাথে ফোনে আলাপ করতে থাকে এবং একে একে বের হয়ে আসতে থাকে। এদের মাঝে দু’জন ছিল হাইতি এবং যুক্তরাষ্ট্রের দ্বৈত নাগরিক। তারা নিজেদেরকে অনুবাদক বলে পরিচয় দেয়। কমপক্ষে তিনজন ভাড়াটে সেনা গোলাগুলিতে নিহত হয় বলে নিরাপত্তা বাহিনী জানায়। প্রতিবেদনে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, কয়েকজন সদস্য কাছেই তাইওয়ান দূতাবাস থাকার ব্যাপারে জানতো বা অন্য কারো কাছ থেকে জানতে পারে। যদিও স্প্যানিশ ভাষাভাষী কলম্বিয়ার নাগরিকেরা ফরাসি ভাষাভাষী হাইতিতে কি করে তাইওয়ানের দূতাবাস খুঁজে পেলো, তা বোধগম্য নয়। হয়তো তারা মনে করেছিল যে, রাজনৈতিক আশ্রয় প্রার্থনা করলে তাইওয়ানের দূতাবাসের কর্মকর্তারা হাইতির পুলিশের কাছে তাদের ধরিয়ে দেবে না বা পুলিশকে ভেতরে ঢুকতে দেবে না। এই ব্যক্তিরা পাহাড় এবং দূতাবাসের উঁচু দেয়াল বেয়ে দূতাবাসে ঢুকে পড়ে। তাইওয়ান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন যে, প্রেসিডেন্টের হত্যার খবর জানার পর নিরাপত্তার কারণে তাইওয়ানের দূতাবাসে কেউ অবস্থান করছিল না। তবে হাইতির নিরাপত্তা বাহিনীর অনুরোধে তাইওয়ান দূতাবাসের কর্মকর্তারা পুলিশকে সেখানে ঢোকার অনুমতি দেয়। সেখান থেকে ১১ জন ভাড়াটে সেনাকে গ্রেপ্তার করা হয়। নিজস্ব সূত্রের বরাত দিয়ে ‘সিএনএন’ বলছে যে, গ্রেপ্তারকৃত কিছু ব্যক্তি মার্কিন ‘ড্রাগ এনফোর্সমেন্ট এডমিনিস্ট্রেশন’ বা ‘ডিইএ’ এবং ‘ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন’ বা ‘এফবিআই’এর ‘সোর্স’ হিসেবে কাজ করতো।

 
প্রেসিডেন্টকে হত্যার অভিযোগে হাইতির পুলিশ দু’জন মার্কিন নাগরিক এবং ১৫ জন কলম্বিয়ার নাগরিককে গ্রেপ্তার করেছে। হত্যাকারীদের হাইতি ছেড়ে পালাবার তেমন কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি। হয়তো তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর একটা অভ্যুত্থান সংগঠিত হবে এবং নতুন ক্ষমতা নেয়া ব্যক্তিরা তাদেরকে নিরাপদে দেশ ছাড়তে সহায়তা করবে।


১২ই জুলাই ‘এসোসিয়েটেড প্রেস’এর এক খবরে বলা হয় যে, হাইতির প্রেসিডেন্টকে হত্যায় জড়িত থাকার সন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামিতে বসবসকারী হাইতির নাগরিক ক্রিশ্চিয়ান ইমানুয়েল সানোনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। যদিও হাইতির কর্মকর্তারা বলছেন যে, ইউটিউবে প্রকাশ করা ভিডিওতে জাজক এবং ডাক্তার সানোন হাইতির নেতৃত্ব পাবার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছিলেন, অনেকেই বলছেন যে, সানোন প্রকৃতপক্ষে এব্যাপারে কিছুই জানেনা; বরং যারা সত্যিকারের অপরাধী, তারাই সানোনের নাম সামনে এনেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সানোনের বন্ধুর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, কিছু ব্যক্তি নিজেদেরকে মার্কিন সরকারের প্রতিনিধি আখ্যা দিয়ে সানোনের সাথে দেখা করে এবং তাকে হাইতির প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসাতে চায়। এতে পরিকল্পনা করা হয় যে, প্রেসিডেন্ট মোইজকে আটক করা হবে; খুন করা হবে না। ফ্লোরিডাতে সানোনের বন্ধুরা বিশ্বাস করতে পারছেন না যে সে হত্যার মতো প্রকল্পের অংশ হতে পারে।

হাইতির পুলিশ প্রধান লিয়ন চার্লস বলছেন যে, হাইতিতে সানোনের বাড়িতে মার্কিন ‘ডিইএ’এর লোগো খচিত একটা টুপি তারা পেয়েছেন; সাথে ২০ বাক্স বুলেট, অস্ত্র, ডোমিনিকান রিপাবলিকের চারটা লাইসেন্স প্লেট, দু’টা গাড়ি, এবং কিছু চিঠি। তিনি বলেন যে, এখন পর্যন্ত ২৩ জন সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; যাদের বেশিরভাগই কলম্বিয়ার নাগরিক। তিনজন হাইতির নাগরিককেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এছাড়াও আরও তিনজন ইতোমধ্যেই গোলাগুলিতে মৃত্যুবরণ করেছে। অপরদিকে কলম্বিয়ার পুলিশ প্রধান জেনারেল লুইস ভারগাস বলেন যে, ফ্লোরিডাতে রেজিস্টার করা ‘সিটিইউ সিকিউরিটি’ নামের এক কোম্পানি কলম্বিয়ার রাজধানী বোগোটা থেকে ডোমিনিকান রিপাবলিকের সান্টো ডোমিঙ্গো পর্যন্ত ১৯টা বিমানের টিকেট ক্রয় করেছিল। এই ব্যক্তিরা জুনে ডোমিনিকান রিপাবলিকে আসে, এবং কয়েক সপ্তাহের মাঝেই স্থলপথে সীমান্ত অতিক্রম করে হাইতিতে প্রবেশ করে। দ্বীপ দেশ হাইতির একমাত্র স্থলসীমানা রয়েছে ডোমিনিকান রিপাবলিকের সাথে। শুধু তাই নয়, হাইতির পুলিশ কর্মকর্তা দিমিত্রি হেরাল্ড হত্যাকান্ডের আগের মাসগুলিতে কলম্বিয়া, ইকুয়েডর এবং পানামাতে যাতায়াত করেছিল। তাই কলম্বিয়ার পুলিশ তার ব্যাপারেও তদন্ত করে দেখছে যে ভাড়াটে সেনাদের রিক্রুট করার ক্ষেত্রে তার কোন ভূমিকা ছিল কিনা। হাইতির পুলিশ বলছে যে, সানোনের সাথে ‘সিটিইউ সিকিউরিটি’র যোগাযোগ ছিল; এবং একটা প্রাইভেট বিমানে করে সানোন হাইতিতে আসেন; তার সাথে কিছু অস্ত্রধারী ব্যক্তিও ছিল। সানোনের এক বন্ধু বলছে যে, কিছুদিন আগে ‘সিটিইউ সিকিউরিটি’র মালিক ভেনিজুয়েলার নাগরিক ইমানুয়েল ইন্ত্রিয়াগো ভালেরার সাথে সানোনের বৈঠক হয়; যেখানে ভালেরা হাইতির উন্নয়নের জন্যে কিছু প্রকল্প তুলে ধরেন। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সানোন হাইতিতে একজন অপরিচিত ব্যক্তি। তাকে এই ষড়যন্ত্রের কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে কেউই মানতে পারছেন না।

প্রেসিডেন্ট মোইজ বনাম হাইতির জনগণ

এবছরের এপ্রিলে ‘হারভার্ড ল’ স্কুল’এর ‘ইন্টারন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস ক্লিনিক’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৮ থেকে ২০২০এর মাঝে হাইতির রাজধানী পোর্ট আউ প্রিন্সএর গরীব এলাকাগুলিতে সরকারি সহায়তায় তিনটা গণহত্যা চালানো হয়। এতে কমপক্ষে ২’শ ৪০ জন মানুষকে হত্যা করা হয়। এই হত্যাকান্ডে হাইতির সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এবং পুলিশ সদস্যরা জড়িত ছিল। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যে এলাকাগুলিতে এই হত্যাকান্ড চালানো হয়, সেই এলাকাগুলি থেকেই সরকার বিরোধী বিক্ষোভ শুরু এবং পরিচালনা করা হয়েছিল। নিহত প্রেসিডেন্ট মোইজ ক্ষমতা নেবার পর থেকেই তার বিরুদ্ধে রাস্তায় বিক্ষোভ শুরু হয়। বিক্ষোভের মূল বিষয় ছিল দেশটার রাজনীতিবিদ এবং সরকারি কর্মকর্তাদের ব্যাপক দুর্নীতি। মোইজএর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, এই হত্যাকান্ডগুলি সশস্ত্র গ্যাংএর সহিংসতা ছাড়া আর কিছুই নয়। তবে প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যথেষ্ট প্রমাণ রয়েছে যে, এই হত্যাকান্ডগুলি পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন এবং তথ্যপ্রমাণ গোপন করার পিছনে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ের কর্তাব্যক্তিরা জড়িত ছিলেন। মোইজের সরকার গ্যাংগুলিকে অর্থ, অস্ত্র এবং গাড়ি দিয়ে সহায়তা দেয়। দায়িত্বরত না থাকা পুলিশ কর্মকর্তারাও এসব কর্মকান্ডে অংশ নেন। পুলিশ স্টেশনগুলির কাছেই এই ঘটনাগুলি ঘটে; কিন্তু পুলিশ মানুষকে রক্ষা করার জন্যে এগিয়ে আসেনি। অপরাধীদের বেশিরভাগই ছিল ‘জি৯’ গ্যাংএর সদস্য। এই গ্যাংএর নেতা জিমি শেরিজিয়ের সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা পেয়ে থাকেন।

২০১৮ সালের জুলাই মাসে মোইজের সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করলে মানুষ রাস্তায় নেমে আসে। প্রতিবাদস্বরূপ সেপ্টেম্বর থেকে পুরো দেশজুড়ে ‘লকডাউন’ ঘোষণা করা হয় এবং স্কুল, ব্যাংক এবং আদালতসহ সকল অর্থনৈতিক কর্মকান্ড প্রায় শূণ্যের কোঠায় পৌঁছে। অনেক ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেউলিয়া হয়ে যায় এবং ব্যাপক দারিদ্র্য পেয়ে বসে জনগণকে। এখন পর্যন্ত সহিংসতায় দু’শর বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছে বলে বিভিন্ন খবরে প্রকাশ। এই আন্দোলনের সময় হাইতিতে অতি প্রভাবশালী বিদেশী গ্রুপগুলির ভূমিকা ছিল খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

 
২০১০ সাল। হাইতিতে ভয়াবহ ভূমিকম্পের পর মার্কিন সামরিক বাহিনীর সদস্যরা ত্রাণসামগ্রী বিতরণ করছে। হাইতির রাজনীতি এবং নীতিনির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে। একদিকে যেমন মার্কিন সরকার মোইজকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন রাজনীতিবিদেরা হাইতি প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন।


হাইতিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব

মার্কিন সরকারের একটা প্রতিনিধিদল হাইতি ঘুরে এসেছেন। সফরকালে তারা হাইতির বর্তমান নেতৃত্বের এবং নেতৃত্ব দাবি করা ব্যক্তিদের সাথে কথা বলেছেন। হোয়াইট হাউজের প্রেস সচিব জেন পিসাকি সাংবাদিকদের বলেন যে, হাইতি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ সামরিক হস্তক্ষেপ চাওয়া হয়েছে। তবে সেব্যাপারে মার্কিন সরকার এখনও কোন সিদ্ধান্ত নেয়নি। তিনি আরও বলেন যে, প্রতিনিধিদল সফরে বুঝেছেন যে, নেতৃত্বের ভবিষ্যতের ব্যাপারে কোন পরিষ্কার সিদ্ধান্ত নেয়া যাচ্ছে না।

হাইতির নীতিনির্ধারণে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে ‘কোর গ্রুপ’; যা হলো শক্তিশালী কয়েকটা রাষ্ট্র এবং সংস্থার প্রতিনিধিদের গ্রুপ। এর সদস্যদের মাঝে সবচাইতে শক্তিশালী হলো যুক্তরাষ্ট্র এবং কানাডা; যারা ক্যারিবিয়ানে সবচাইতে প্রভাবশালী। হাইতির প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি ফ্রান্সও এতে রয়েছে; ক্যারিবিয়ানে ফ্রান্সের এখনও উপনিবেশ রয়েছে। এছাড়াও এই গ্রুপে রয়েছে জাতিসংঘ, ইইউ, জার্মানি, স্পেন এবং ল্যাটিন আমেরিকার একমাত্র প্রতিনিধি দেশ ব্রাজিল। ‘অর্গানাইজেশন অব আমেরিকান স্টেটস’ বা ‘ওএএস’এর একজন প্রতিনিধিও রয়েছে এই গ্রুপে। ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে হাইতির রাস্তায় ব্যাপক সহিংসতার পর ‘কোর গ্রুপ’ একটা বিবৃতি দেয়। হাইতিতে মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত ‘কোর গ্রুপ’এর এই বিবৃতিতে বলা হয় যে, তারা হাইতিতে ভোট ব্যতীত আর কোন পদ্ধতিতে সরকার পরিবর্তন সমর্থন করে না। বিক্ষোভকারীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষের সময় পুলিশের ভূমিকারও ব্যাপক প্রশংসা করা হয় সেই বিবৃতিতে। আর সহিংসতা থামাতে হাইতির নেতৃত্বকে আলোচনায় মনোনিবেশ করার উপদেশ দেয়া হয়। একইসাথে মোইজের সরকারকে সংস্কার কাজ চালিয়ে যেতে আহ্বান জানানো হয়।

কয়েক দশক ধরে হাইতির রাজনীতি এবং নীতিনির্ধারণে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই কেন্দ্রীয় ভূমিকা রেখেছে। একদিকে যেমন মার্কিন সরকার মোইজকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে, অন্যদিকে মার্কিন রাজনীতিবিদেরা হাইতির প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্যে সরাসরি বক্তব্য দিয়েছেন। হাইতির সহিংসতার মাঝে ২০১৯এর অক্টোবরে ফ্লোরিডার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ফ্রেডারিকা উইলসন হাইতির উপর একটা গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করেন; যেখানে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত হাইতির নাগরিকরা হাইতির রাজনীতিতে যুক্তরাষ্ট্রের হস্তক্ষেপ বন্ধের আহ্বান জানান এবং প্রেসিডেন্ট মোইজের ক্ষমতা ছাড়ার পক্ষে মত দেন। ডিসেম্বরে হাইতির পরিস্থিতি নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক কমিটির শুনানি হয়। ‘মায়ামি হেরাল্ড’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, এই শুনানি ছিল ছয় বছরের মাঝে হাইতি নিয়ে প্রথম শুনানি। সেসময়ে ডেমোক্র্যাট সদস্যরা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে ক্ষমতা থেকে সরাবার চেষ্টা করছিলেন। ফ্লোরিডার ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ফ্রেডারিকা উইলসন হাইতির প্রতিনিধিদের জিজ্ঞেস করেন যে, হাইতির প্রেসিডেন্টকে ক্ষমতাচ্যুত করার কাজ কতটা এগুলো। হাইতির রাজনৈতিক কর্মী ইমানুয়েলা দুইয়োন বলেন যে, হাইতির পার্লামেন্টের সদস্যারা সকলেই প্রেসিডেন্ট মোইজের সমর্থনপুষ্ট এবং অত্যন্ত দুর্নীতিগ্রস্ত। প্রেসিডেন্টের কাছ থেকে তারা বিভিন্ন আইন পাস করার জন্যে অর্থ পেয়ে থাকে। সেবছরের মার্চে প্রেসিডেন্টের সমর্থনপুষ্ট হয়েই পার্লামেন্টের সদস্যরা প্রধানমন্ত্রীকে সরিয়ে দেয়। এর পর থেকে হাইতিতে জনগণের প্রতিনিধিত্বমূলক কোন সরকার নেই। শুনানিতে ডেমোক্র্যাট কংগ্রেস সদস্য ম্যাক্সিন ওয়াটার্স অভিযোগ করেন যে, মোইজের সরকার ভেনিজুয়েলার পেট্রোক্যারিব তেল আমদানি প্রকল্প থেকে বেঁচে যাওয়া ২ বিলিয়ন ডলার আত্মসাৎ করেছে। অথচ ২০১০ সালের মারাত্মক ভূমিকম্পের পর ধ্বংসপ্রাপ্ত হাইতির পুনর্বাসনের জন্যে এই অর্থ ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ। তদুপরি মার্কিন সরকার মোইজের সরকারকে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে। হাইতির ‘ন্যাশনাল হিউম্যান রাইটস নেটওয়ার্ক’এর ডিরেক্টর পিয়েরে এসপেরেন্স বলেন যে, হাইতিতে আন্তর্জাতিক সহায়তা মূলতঃ দেয়া হচ্ছে দেশটার নির্বাচন পদ্ধতিকে সঠিক করতে; হাইতির পুলিশ এবং আদালতকে শক্তিশালী করতে সহায়তা আসছে না। হাইতির আরেক নাগরিক লিওনি হেরমানটিন বলেন যে, আন্তর্জাতিক শক্তিরা নির্বাচন কেন্দ্রিক সহায়তার মাঝেই নিজেদেরকে সীমাবদ্ধ করার কারণে হাতে গোণা কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত লোকের হাতে রাজনৈতিক ক্ষমতা কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে। হাইতিতে নির্বাচন হলেই গণতন্ত্র সঠিকভাবে বজায় থাকবে, এব্যাপারে তিনি দ্বিমত পোষণ করেন। ওবামা প্রশাসনের সময় ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের বিশেষ উপদেষ্টা ড্যানিয়েল এরিকসন বলেন যে, হাইতির সমস্যার সমাধান করতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত কানাডা, ইইউ এবং ‘অর্গানাইজেন অব আমেরিকান স্টেটস’ বা ‘ওএএস’এর সাথে যৌথভাবে কাজ করা। তিনিও হাইতির পুলিশ এবং আদালতের জন্যে মার্কিন সাহায্য দেয়ার আহ্বান জানান। ফ্রেডারিকা উইলসন বলেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে মাত্র দু’শ মাইল দূরের একটা দেশে কি হচ্ছে, সেব্যাপারে চোখ বন্ধ করে থাকার সময় নয় এটা।

 
২০১৮ সাল। হাইতির প্রেসিডেন্ট জোভেনেল মোইজের সাথে কানাডার প্রধানমন্ত্রী জাস্টিন ট্রুডো। হাইতিতে কানাডার প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান নয়। কয়েক দশক ধরেই ক্যারিবিয়ানে ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশগুলিকে উপজীব্য করে নিজের প্রভাব ধরে রেখেছে কানাডা। ১৯৯০এর দশক থেকে হাইতির রাজনৈতিক সমস্যা শুরু হলে কানাডা এই সুযোগে সেখানে নিজেদের রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ পায়। কিন্তু বরাবরের মতোই সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নামটাই প্রচারিত হয়; কানাডার নয়। তাই যেকোন রাজনৈতিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের নামটাই উচ্চারণ করতে থাকে।

যুক্তরাষ্ট্র বনাম কানাডা

‘দ্যা ডেইলি বিস্ট’এর নিকো হাইনসএর মতে, হত্যাকারীদের হাইতি ছেড়ে পালাবার তেমন কোন পরিকল্পনা চোখে পড়েনি। হয়তো তাদেরকে বলা হয়েছিল যে, প্রেসিডেন্টকে হত্যার পর একটা অভ্যুত্থান সংগঠিত হবে এবং নতুন ক্ষমতা নেয়া ব্যক্তিরা তাদেরকে নিরাপদে দেশ ছাড়তে সহায়তা করবে। ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’এর ওয়াশিংটন প্রতিবেদক কেথেভানি গোরজেস্তানি বলছেন যে, হোয়াইট হাউজের কর্মকর্তারা যেভাবে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে একই কথা বারবার বলছিলেন, তাতে বোঝা যাচ্ছিল যে, যুক্তরাষ্ট্র কাউকেই তড়িঘড়ি করে দোষী বলে বিপদে পড়তে চাইছে না। অর্থাৎ মার্কিন প্রশাসন আসলে নিশ্চিত নয় যে, এই হত্যাকান্ড কারা চালিয়েছে। হাইতির রাস্তার মানুষ বলছে যে, মোইজ একজন দুর্নীতিগ্রস্ত লোক ছিলেন; যাকে আরও কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত ব্যক্তিই খুন করেছে। কেউ কেউ বলছেন যে, এই হত্যাকান্ডের পিছনে কাজ করছে প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তিরা; যাদের মাঝে রয়েছে কানাডা এবং ফ্রান্স। ফ্রান্স ছিল হাইতির প্রাক্তন ঔপনিবেশি শক্তি; যুক্তরাষ্ট্র দু’শ মাইল দূরে বর্তমান বিশ্বের সুপারপাওয়ার। সেই হিসেবে হাইতির রাজনীতিতে ফ্রান্স এবং যুক্তরাষ্ট্রের নামটা আসতেই পারে। কিন্তু কানাডার নামটাও হাইতির রাস্তার মানুষের কাছে এতটা পরিচিত কেন?

হাইতিতে কানাডার প্রভাব খুব একটা দৃশ্যমান নয়। তবে একটা উদাহরণই বলে দিতে পারে যে, পুরো ক্যারিবিয়ানে কানাডা আসলে কতটা প্রভাব রাখে। ‘নিউ ইয়র্ক টাইমস’এর এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০১৪ সালে কিউবার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনপ্রতিষ্ঠার পিছনে এক বছরের বেশি সময়ে ধরে কাজ করেছিলেন ওবামা প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বেন রোডস। রোডস গোপনে কিউবার ব্যাপারে আলোচনা চালাচ্ছিলেন কানাডাতে। কয়েক দশক ধরেই ক্যারিবিয়ানে ব্রিটেনের প্রাক্তন উপনিবেশগুলিকে উপজীব্য করে নিজের প্রভাব ধরে রেখেছে কানাডা। ১৯৯০এর দশক থেকে হাইতির রাজনৈতিক সমস্যা শুরু হলে কানাডা এই সুযোগে সেখানে নিজেদের রাজনৈতিক এবং সামরিক প্রভাব বৃদ্ধি করার সুযোগ পায়। কিন্তু বরাবরের মতোই সারা বিশ্বে যুক্তরাষ্ট্রের নামটাই প্রচারিত হয়; কানাডার নয়। তাই যেকোন রাজনৈতিক সমস্যার কেন্দ্রবিন্দু হিসেবে সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের নামটাই উচ্চারণ করতে থাকে।

২০২০ সালের মে মাসে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ভেনিজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোকে বিদেশী ভাড়াটে সেনাদের ব্যবহার করে অপহরণ করার অবাস্তব পরিকল্পনা মিডিয়াতে আসার পর ক্যারিবিয়ানে মার্কিন নিয়ন্ত্রণ যেমন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছিল, তেমনি জো বাইডেন প্রশাসনের সময় হাইতির প্রেসিডেন্ট মোইজের হত্যাকান্ড একইভাবে মার্কিন অবস্থানকে দুর্বল করবে। বিশেষ করে ট্রাম্প প্রশাসনের সময় ডেমোক্র্যাট রাজনীতিবিদেরা যখন সরাসরিই নির্বাচনকে পাশ কাটিয়ে হাইতির প্রেসিডেন্ট মোইজকে ক্ষমতাচ্যুত করার কথা বলছিলেন। অপরপক্ষে অনেকেই হাইতির অভ্যন্তরীণ বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নাক গলানোর বিপক্ষে কথা বলছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে সকলের সামনে ক্যারিবিয়ানে মার্কিন স্বেচ্ছাচারিতার ব্যাপারটাই সামনে আসছে; যুক্তরাষ্ট্র এতে জড়িত থাকুক আর না থাকুক। গত কয়েক দশক ধরে ক্যারিবিয়ানে যুক্তরাষ্ট্রের একচ্ছত্র প্রভাব বিস্তারের বিরুদ্ধে মূল বাধা হলো কানাডা। সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের তুলনায় অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তিতে বহুদূরে থাকা কানাডা যুক্তরাষ্ট্রের স্থলসীমানায় অবস্থান করে কিভাবে সুপারপাওয়ারকে চ্যালেঞ্জ করতে পারছে, তা বুঝতে হলে কানাডাকে আলাদা একটা জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র হিসেবে দেখলে হবে না। ব্রিটিশ কমনওয়েলথের কানাডা চিন্তাগত দিক থেকে প্রাক্তন সুপারপাওয়ার ব্রিটেনের মতোই। তাই নিজের ভৌগোলিক আকার হিসেব করে তারা তাদের নীতিনির্ধারণ করেনি। হাইতি যুক্তরাষ্ট্র থেকে দু’শ মাইল দূরে হলেও কানাডা থেকে কিন্তু অনেক দূরে। তথাপি সেখানে কানাডার সম্মতি ছাড়া যে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে কোন কিছুই করা সম্ভব হচ্ছে না, তা নিশ্চিত। কয়েক দশক চেষ্টার পরেও হাইতির রাজনীতিকে নিজ পক্ষে নিয়ে আসতে না পারাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে একটা বড় ব্যর্থতা। সেখানে অন্য কারুর বাধা থাকুক আর না থাকুক; সকলেই যুক্তরাষ্ট্রের ব্যর্থতাটাই মনে রাখবে। পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় দুর্বল হতে থাকা সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রকে নিজ উঠানে হেনস্তা করাটা আসলে ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ কৌশলের মাঝে পড়ে; কানাডা যেটার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ। ক্যারিবিয়ানে প্রতি পদে যুক্তরাষ্ট্রের হারানো প্রভাবকে প্রতিস্থাপিত করতে চাইছে কানাডা।

4 comments:

  1. ভাই আমার প্রশ্ন হল কানাডা কি চায়। তার ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কি

    ReplyDelete
    Replies
    1. কানাডার উদ্দেশ্য বুঝতে হলে 'গ্লোবাল ব্রিটেন'এর উদ্দেশ্য বুঝতে হবে। গ্লোবাল ব্রিটেন নিয়ে এই ব্লগের লেখাগুলি পড়ুন। একইসাথে "যুক্তরাষ্ট্রের পর..." বইটাও পড়ুন।

      এই লিঙ্কে গিয়ে কানাডার ক্যারিবিয়ানের উদ্দেশ্য সম্পর্কে একটা ধারণা পাবেন।

      https://koushol.blogspot.com/2020/06/what-is-canada-interest-in-caribbean.html

      Delete
  2. তারমানে আপনি বলতে চাইসেন কানাডা কে ব্রিটেন তার গ্লোবাল ব্রিটেন পলিসির প্রক্সি হিসাবে ব্যবহার করসে আমেরিকান সাবকন্টিনেন্ট এ?

    ReplyDelete
    Replies
    1. জ্বি না। কানাডা ব্রিটেনের প্রক্সি নয়; ব্রিটেনের অংশ। কানাডা ব্রিটেনের পক্ষে কাজ করে না; বরং কানাডা ব্রিটেনের অংশ হবার জন্যেই কাজ করে।

      কানাডা, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডের রানী হলো দ্বিতীয় কুইন এলিজাবেথ।

      Delete