Tuesday 12 February 2019

যুক্তরাষ্ট্র কি যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে?

১২ই ফেব্রুয়ারি ২০১৯ 

১৭৮৩ সাল থেকে ১৮৫৩ সালের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের ভূখন্ড প্রতিনিয়ত পরিবর্তিত হয়েছে।  ফ্রান্স, স্পেন এবং মেক্সিকো থেকে ভূখন্ড নিয়ন্ত্রণে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ভৌগোলিকভাবে বড় হয়েছে। তবে ভৌগোলিক পরিবর্তন হলেও রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিত পরিবর্তিত হয়নি। 


নির্দিষ্ট ভূখন্ড কি রাষ্ট্রের সংজ্ঞার অন্তর্গত? 

একটা রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় ভূমি বা ভূখন্ড কতটা গুরুত্বপূর্ণ? ভূখন্ড নির্দিষ্টকরণ না হলে কি রাষ্ট্র হবে, নাকি হবে না? একটা রাষ্ট্রের ভিত্তির সংজ্ঞার মাঝে কি তার ভূখন্ডের মানচিত্রও পড়ে? ভূখন্ড বা মানচিত্রে পরিবর্তন হলে সেই রাষ্ট্রের সংজ্ঞা কি আগের মতোই থাকবে, নাকি নতুন কোন রাষ্ট্র হিসেবে সেটাকে দেখতে হবে? যে জিনিসগুলি দিয়ে একটা রাষ্ট্রকে অন্যদের থেকে আলাদা করা যায়, তার মাঝে কি তার ভূখন্ডের মানচিত্রও পড়ে? এই প্রশ্নগুলি সমাজে অপ্রচলিত বললেও অত্যুক্তি হয় না। বর্তমানে মানচিত্র বা ভূখন্ডকে একটা রাষ্ট্রের ভিতের সাথে এমনভাবে গেঁথে দেয়া হয়েছে যে, রাষ্ট্র তৈরির আগেই সকলে ভূখন্ড নিয়ে ভাবতে থাকেন। একটু খেয়াল করলেই দেখা যাবে যে, এখানে যে ব্যাপারটা ধরে নেয়া হচ্ছে, তা হলো – একটা রাষ্ট্র আসলে তৈরিই হয় ভূখন্ড হিসেবে অন্য ভূখন্ড থেকে আলাদা হবার কারণে। এরসাথে জাতিগত ব্যাপারটাকে যোগ করলে দেখা যাবে যে, একটা জাতি একটা নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বাস করে বলেই সেই ভূখন্ড নির্দিষ্টকরণের মাঝেই তাদের আলাদা একটা রাষ্ট্র গঠনের অনুপ্রেরণা। আরও নির্দিষ্ট করে বললে, জাতিগতভাবে নিজেদেরকে আলাদা করে দেখাবার ‘টেরিটোরিয়াল’ উদ্দেশ্য থেকেই একটা রাষ্ট্রের জন্ম হচ্ছে। ব্যাপারটা অনেকটা জঙ্গলের জীবজন্তুর মতোই হয়ে যাচ্ছে। বন্য প্রাণীরাও নিজেদের এলাকা আগলে রাখে অন্যদের থেকে রক্ষা করার জন্যে। বাইরের কেউ সেখানে প্রবেশ করতে গেলেই তারা আক্রমণ করে। আপাতঃদৃষ্টে বর্তমান বিশ্বে রাষ্ট্র গঠনের চিন্তাখানাও জঙ্গলের মতোই। শুনতে খারাপ লাগলেও তা আসলে কিছুটা পাশবিক প্রকৃতির।

কিন্তু জাতি এবং নির্দিষ্ট ভূখন্ডের মাধ্যমে সর্বক্ষেত্রে একটা রাষ্ট্রের সংজ্ঞা দেয়া যাবে না। কোরিয়া উপদ্বীপের কথাই ধরা যাক। উত্তর এবং দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণের মাঝে জাতিগত কোন পার্থক্য নেই; তারপরেও তারা আলাদা। এক্ষেত্রে দুই কোরিয়াকে আলাদা করে রাখা হয়েছে চিন্তাগত কারণে – উত্তর কোরিয়া সমাজতান্ত্রিক; দক্ষিণ কোরিয়া পুঁজিবাদী। একসময় এই ব্যাপারটা কিউবা এবং ভিয়েতনামের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য ছিল। তবে মূল কথা হলো, এই রাষ্ট্রগুলি সংজ্ঞায়িত হয়েছে রাষ্ট্রের চিন্তার উপরে ভিত্তি করে; তার জাতিগত বা ভৌগোলিক নির্দিষ্টকরণের মাধ্যমে নয়। তাহলে বিশ্বের বাকি দেশগুলি কেন চিন্তার ভিত্তিতে গঠিত রাষ্ট্র নয়? উত্তর সহজ – সকলেই একই চিন্তার মাঝে রয়েছে। সেই একই চিন্তার মাঝে পাশবিক প্রবৃত্তিগুলিকে লালন করেই বর্তমান বিশ্বের জাতিগত ভৌগোলিক বাউন্ডারিগুলি দেয়া হয়েছে। কিন্তু এই সীমানাগুলি আসলে কতটা শক্ত ভিতের উপরে?

ভৌগোলিক আকার এবং নাগরিকত্ব – দু’টা উদাহরণ

রাষ্ট্রগুলির সীমানার ভিত দেখতে হলে রাষ্ট্রের সীমানার ইতিহাস দেখতে হবে। যেমন ১৯৩০ সালে ঢাকায় জন্ম নেয়া একটা মানুষের জাতীয়তা কি সর্বদা একই ছিল? ১৯৪৬ সালে তার জাতীয়তা কি পরিবর্তিত হয়েছিল? ১৯৪৭ সালে তার জাতীয়তা কি ছিল? ১৯৭২ সালে? লোকটার পারিবারিক ইতিহাস তো পরিবর্তিত হয়নি; তার ভৌগোলিক অবস্থানও আগের মতোই রয়েছে। তারপরেও তার জাতীয়তা কি পরিবর্তিত হয়নি? যদি পরিবর্তিত হয়েই থাকে, তাহলে কিসের ভিত্তিতে হলো সেটা? আরেকটা উদাহরণ দেয়া যাক।

জার্মান কারা? যারা বর্তমানে জার্মানি নামের রাষ্ট্রের ভূখন্ডের অন্তর্গত তারা? নাকি অন্য রাষ্ট্রের মাঝে বসবাসকারীরাও জার্মান বলে পরিগণিত হতে পারে? আর যদি রাষ্ট্র হিসেবে জার্মানির অন্তর্গত মানুষকেই বোঝানো হয়ে থাকে, তাহলে কোন কালের জার্মানির কথা বলা হবে, তা-ও কিন্তু সংজ্ঞায়িত করে ফেলতে হবে। হ্যাঁ, অনেকেই শুধু বর্তমানের কথাই বলবেন। কিন্তু যে ব্যক্তির ১৯৪৫ সাল পর্যন্ত জার্মান নাগরিকত্ব ছিল, কিন্তু ১৯৪৬ সালে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জার্মানি হেরে যাবার পর তার শহরটা যদি পোল্যান্ডের অধীনে চলে গিয়ে থাকে, তাহলে সেই ব্যক্তির জাতীয়তার কি হবে? আর এই ব্যক্তির জাতীয়তা তার বাকি জীবনে যে একই থাকবে, তার নিশ্চয়তা কে দিচ্ছে?

ব্রিটিশ কলোনির মাত্র ১৩টা রাজ্য নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম হয়। ১৭৮৩ সালের এই মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, শুধুমাত্র আটলান্টিকের পাড়ে কিছু অঞ্চল জুড়েই ছিল যুক্তরাষ্ট্র।  


যুক্তরাষ্ট্রের আকারের ইতিহাস –

সুপারপাওয়ার যুক্তরাষ্ট্রের কথাই বলা যাক। ১৭৮৩ সালে ব্রিটেনের অধীনে থাকা ব্রিটিশ নর্থ আমেরিকার ১৩টা রাজ্য ব্রিটেন থেকে আলাদা হয়ে যুক্তরাষ্ট্র গঠন করে। এই রাজ্যগুলি ছিল –

১। ম্যাসাচুসেটস,

২। নিউ হ্যাম্পশায়ার,

৩। রোড আইল্যান্ড,

৪। কানেকটিকাট,

৫। নিউ ইয়র্ক,

৬। নিউ জার্সি,

৭। পেনসিলভানিয়া,

৮। ডেলাওয়্যার,

৯। ম্যারিল্যান্ড,

১০। ভার্জিনিয়া,

১১। নর্থ ক্যারোলাইনা,

১২। সাউথ ক্যারোলাইনা এবং

১৩। জর্জিয়া।

এর বাইরে দক্ষিণ এবং পশ্চিমের ভূখন্ড ছিল ফ্রান্স ও স্পেনের অধীনে; উত্তর ছিল ব্রিটেনের অধীনে। ২০ বছর পর ১৮০৩ সালে পশ্চিমের লুইসিয়ানা নামের বিশাল এলাকা যুক্তরাষ্ট্র ফ্রান্সের কাছ থেকে কিনে নেয়। এরও ১৮ বছর পর ১৮২১ সালে দক্ষিণের ফ্লোরিডাকে যুক্তরাষ্ট্র কিনে নেয় স্পেনের কাছ থেকে। আরও ২৪ বছর পর ১৮৪৫ সালে টেক্সাসকে যুক্তরাষ্ট্র দখল করে নেয়। পরের বছর ১৮৪৬ সালে উত্তর-পশ্চিমের ওরেগন অঞ্চলকে যুক্তরাষ্ট্র পেয়ে যায় কানাডার সাথে সীমানা নির্ধারণ করার মাধ্যমে। এরও দুই বছর পর ১৮৪৮ সালে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভের পর গুয়াদেলুপ হিদালগো চুক্তির মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত পশ্চিমের বিরাট এলাকা যুক্তরাষ্ট্র নিজের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেয়। এভাবে মাত্র ৭০ বছরের ভেতর যুক্তরাষ্ট্র আটলান্টিক মহাসাগরের তীরবর্তী কিছু এলাকা থেকে দুই মহাসাগরের মধ্যবর্তী বিশাল ভূখন্ডের মালিক হয়ে যায়। তবে এতেও সন্তুষ্ট থাকেনি যুক্তরাষ্ট্র। ১৮৬৭ সালে রাশিয়ার কাছ থেকে আলাস্কা কিনে নেবার মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র ইউরেশিয়ার সীমানায় পৌঁছে যায়। ১৮৯৮ সালে যুক্তরাষ্ট্র প্রশান্ত মহাসাগরের হাওয়াই দ্বীপ, ফিলিপাইন এবং ক্যারিবিয়ানস-এ পুয়ের্তো রিকো দখল করে নেয়।

এই সময়ের মাঝে যুক্তরাষ্ট্রের পতাকারও পরিবর্তন হতে থাকে। প্রথমে পতাকায় থাকে ১৩টা তারা; অর্থাৎ ১৩টা রাজ্য। ১৮৯৫ সালে তারার সংখ্যা হয় ১৫; ১৮০৩ সালে হয় ১৭; ১৮১৩ সালে ১৮; ১৮১৮ সালে ২০; ১৮২২ সালে ২৪; ১৮৩৭ সালে ২৬; ১৮৬১ সালে ৩৪; ১৮৬৫ সালে ৩৬; ১৮৬৭ সালে ৩৭; ১৮৭৭ সালে ৩৮; ১৯১২ সালে ৪৮; ১৯৫৯ সালে ৪৯; ১৯৬০ সালে ৫০। অর্থাৎ নিয়মিত বিরতিতে ভূখন্ডের পরিধি বাড়ার সাথে সাথে পতাকার ডিজাইনে পরিবর্তন হয়েছে। শেষ পর্যন্ত রাজ্যের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৫০-এ।
  
মার্কিন জাতীয় পতাকার বিবর্তন। ১৩টা রাজ্যের জন্যে ছিল ১৩টা তারা। সেই তারার সংখ্যা এখন ৫০। কিন্তু কে নিশ্চয়তা দিতে পারে যে এই তারা বা রাজ্যের সংখ্যা বাকি সময়ও একই থাকবে? 


ভৌগোলিক পরিবর্তনের সাথে সাথে যুক্তরাষ্ট্র কতটুকু পরিবর্তিত হয়েছে?

রাষ্ট্র হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের ভিত গড়ার সময় যা যা বলা হয়েছিল, তার অনেকটাই এখন পর্যন্ত রয়ে গেছে; আবার বেশকিছু ব্যাপার পরিবর্তনও হয়েছে। ঊনিশ শতকের মাঝামাঝি পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র মূলতঃ নিজেকে আমেরিকার আশেপাশেই সীমাবদ্ধ রেখেছিল। এই ব্যাপারখানা পরিবর্তিত হতে থাকে যখন ১৮৪৮ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বাউন্ডারির মাঝে আটলান্টিক থেকে প্রশান্ত মহাসাগর পর্যন্ত পুরো এলাকা চলে আসে। উত্তর আমেরিকাতে ভূখন্ড বাড়াবার সুযোগ কমতে থাকলে ঊনিশ শতকের শেষের দিকে কিছু চিন্তাবিদেরা যুক্তরাষ্ট্রকে তার উপকূল থেকে দূরে পাঠাতে থাকে। হাওয়াই, ফিলিপাইন এবং পুয়ের্তো রিকো দখল করা এই চিন্তারই ফসল। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের একেবারে শেষের দিকে ১৯১৭ সালের এপ্রিলে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের মাটিতে যুদ্ধে যোগদান করে। দেরিতে হলেও এই যুদ্ধ আমেরিকাকে ইউরোপের মাটিতে রাজনৈতিক ভিত গাড়তে সহায়তা করে। পরবর্তীতে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের মাটিতে শক্তভাবেই গেড়ে বসে। যেহেতু দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ পর্যন্ত ইউরোপের হাতেই বিশ্বের বেশিভাগ অঞ্চলের ক্ষমতা ছিল, তাই ইউরোপকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে অতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আসলে সেটাই ছিল ইউরোপের হাত থেকে ক্ষমতা আটলান্টিকের ওপাড়ে চলে যাবার মুহুর্ত। ইউরোপীয় সাম্রাজ্য থেকে মার্কিন সাম্রাজ্যের সূচনা তখন থেকেই।

ভূখন্ডগত দিক থেকে যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই পরিবর্তিত হয়েছে। বিশ্বব্যাপী তার প্রভাবেরও পরিবর্তন হয়েছে। একসময় যেখানে ইউরোপের আশেপাশেও ভিড়তো না যুক্তরাষ্ট্র, এখন সেই যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপের ‘রক্ষাকবচ’ ন্যাটোর নেতৃত্বে। জাপান-কোরিয়ার নিরাপত্তায় এখনও রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ফিলিপাইনকে কলোনি হিসেবে না রাখলেও সেদেশের নিরাপত্তা যুক্তরাষ্ট্রের হাতেই ছিল বহুকাল; এখনও অনেকাংশেই তাই। প্রশান্ত মহাসাগরীয় দ্বীপ গুয়ামে রয়েছে বিশাল সামরিক ঘাঁটি। মধ্য এবং দক্ষিণ আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এবং আফ্রিকাতেও রয়েছে মার্কিন সামরিক উপস্থিতি। ভারত মহাসাগরের দিয়েগো গার্সিয়া এবং পাকিস্তান-আফগানিস্তানে রয়েছে মার্কিন সামরিক ঘাঁটি। এগুলি কোনটাই যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমারেখার মাঝে না থাকলেও সবখানেই মার্কিন সামরিক সদস্যরা মোতায়েন রয়েছে। অর্থাৎ রাষ্ট্রের নিরাপত্তা শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ভৌগোলিক সীমারেখা দ্বারা সীমাবদ্ধ নয়। সকলে মার্কিন নাগরিক হতে পারে না; কিন্তু সকলেই মার্কিন নাগরিক হতে চায়। তারা চায় নির্দিষ্টভাবে বলে দেয়া মার্কিন রাজনৈতিক সীমানার মাঝে বসবাস করতে। কোন সীমানা? এখন যেই সীমানা রয়েছে সেই সীমানা; ১৭৮৩ সালের সীমানা নয়। তবে রাষ্ট্র কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রই।

এই আলোচনার শুরু হয়েছিল রাষ্ট্রের সংজ্ঞায় ভূখন্ডগত নির্দিষ্টতার প্রয়োজনীয়তা থেকে। ঢাকায় জন্মগ্রহণ করা মানুষটার পরিচয় যেহেতে বারংবার পরিবর্তিত হয়েছে, তাই এটা বলা যেতেই পারে যে তার পরিচয় বাকি সময়ের জন্যেও নির্দিষ্ট হয়ে যায়নি। জার্মান নাগরিকের ভৌগোলিক অবস্থানও ইতিহাসের সাথে পরিবর্তিত হয়েছে। রাষ্ট্রের বাউন্ডারি পরিবর্তিত হবার কারণে তার জাতিগত পরিচয় নিয়েও শুরু হয়েছে সংশয়। আর মার্কিন সীমানা কবে যে নির্দিষ্ট ছিল, তা বলা কঠিন। মার্কিন রাষ্ট্র তার নিরাপত্তার বাউন্ডারি আঁকতে গিয়ে তার ভৌগোলিক সীমানার মাঝে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বাকি বিশ্বের ভূখন্ডকেও এর মাঝে ধরে নিয়েছে। এই উদাহরণগুলি ভৌগোলিক নির্দিষ্টকরণকে রাষ্ট্রের সংজ্ঞার মাঝে ফেলে না। একটা রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্রের মতো ভৌগোলিক দিক থেকে বড়ও হতে যেতে পারে; আবার জার্মানির মতো ছোটও হয়ে যেতে পারে। আর এই ছোটবড় হবার মাঝ দিয়ে কেউ সেই রাষ্ট্রের নাগরিকত্ব পেতেও পারে; আবার নাগরিকত্ব হারাতেও পারে। 

যুক্তরাষ্ট্র ভৌগোলিকভাবে যত বড় হয়েছে, তার রাজ্যের সংখ্যাও বৃদ্ধি পেয়েছে। ৫০টা রাজ্যের সংযুক্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু কখনও যদি এতে বিযুক্তি আসে, তাহলে দেশটার নাম কি যুক্তরাষ্ট্রই থাকবে? 


ভবিষ্যতের যুক্তরাষ্ট্র কেমন হবে?

জার্মানির জন্ম ১৮৭১ সালে। ১৯১৪ সালে বড় হবার নিমিত্তে তারা যুদ্ধ শুরু করে। কিন্তু যুদ্ধে হেরে ১৯১৮ সাল নাগাদ বরং আরও ছোট হয়ে যায়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে আবারও বড় হবার আশা করলেও ১৯৪৫ সাল নাগাদ আরও ছোট হয়ে যায় জার্মানি। ১৯৮৯ সালে আবার কিছু অংশ পূনএকত্রিকরণ হয়। অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্রের জন্ম ১৭৭৬ সালে; ব্রিটেনের ১৩টা রাজ্য নিয়ে। এখন সেই রাজ্যের সংখ্যা ৫০; এবং আকারে অনেক বড়। কিন্তু কেউ আসলে এই ছোটবড় থাকার ব্যাপারে নিশ্চয়তা দিতে পারে না। অন্ততঃ ইতিহাস থেকে সেটাই ধারণা করা যায়। রাষ্ট্রের শক্তি কমতে থাকলে তার ভৌগোলিক আকৃতিতেও পরিবর্তন আসতে পারে। বাইরের শক্তিরা তার ভূখন্ড থেকে অংশবিশেষ কেড়ে নিতে চাইবে। আমেরিকাও সময়ের বিবর্তনে ব্রিটেন, ফ্রান্স, স্পেন, রাশিয়ার কাছ থেকে ভূখন্ড কেড়ে নিয়ে বর্তমান যুক্তরাষ্ট্রের আকৃতি পেয়েছে। বাকি বিশ্বে তার প্রভাবও বাড়িয়েছে অন্যদের প্রভাবকে খর্ব করে। বর্তমান বিশ্বে মার্কিন প্রভাব কমার সাথেসাথে একসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক আকার-আকৃতি নিয়েও প্রশ্ন আসতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের সংজ্ঞার মাঝে তো ৫০টা রাজ্য নেই; দেশটার জন্ম যেহেতু মাত্র ১৩টা রাজ্য নিয়ে। তাই কেউই নিশ্চিত করে বলতে পারে না যে ভবিষ্যতে কখনোই বিযুক্তির মাধ্যমে দেশটার রাজ্যের সংখ্যা কমে যাবে না। বরং যে প্রশ্নটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে তা হলো – তখনও কি যুক্তরাষ্ট্রকে যুক্তরাষ্ট্রই ডাকা হবে?

1 comment: