Monday 24 October 2016

আমাদের শিল্পোন্নয়নের “হার্ট” কোথায়?

একটা ইঞ্জিনের মূল বডি এটা, যাকে ইঞ্জিন ব্লক বলে। এর উপরে ছিদ্রগুলি দিয়ে ঢুকে লাইনার, আর লাইনারের মধ্যে দিয়ে ওঠানামা করে পিস্টন। আমরা এখন লাইনার এবং পিস্টন তৈরি করি। ইঞ্জিনটার বাঁ পাশে দু'টা বড় ছিদ্র দেখা যাচ্ছে, যার নিচেরটা দিয়ে ক্র্যাংকশাফটের একটা অংশ বের হয়ে থাকে। এই শাফট-এর মাধ্যমেই মেকানিক্যাল শক্তি ইঞ্জিন থেকে বাইরে বের হয়। এই ইঞ্জিনই হচ্ছে শিল্পোন্নয়নের "হার্ট"
২৪শে অক্টোবর ২০১৬

হার্ট ছাড়া যেমন মানুষ বাঁচে না, ঠিক তেমনি ইঞ্জিন ছাড়া এই একুশ শতকে কোন দেশ উন্নতি করতে পারে না। হার্টের মতোই একটি ইঞ্জিন অন্য সকল কিছুকে চালাতে থাকে। হার্ট যেভাবে ধমনীর মাধ্যমে রক্ত পাম্প করে, ঠিক তেমনি ইঞ্জিন মেকানিক্যাল শক্তিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পাঠানোর ব্যবস্থা করে অসার বস্তুতে প্রাণ এনে দেয়। বাংলাদেশে ইঞ্জিনের সবচাইতে বেশি ব্যবহার যেসব স্থানে, তার মাঝে সামনের সাড়িতে রয়েছে পানি সেচ। আমাদের প্রতিবেশীরা পঞ্চাশোর্ধ সংখ্যক নদীর উপরে উজানে বাঁধ দিয়ে একতরফা পানি প্রত্যাহারের পরেও গত কয়েক দশকে কৃষিতে যে বিপ্লব ঘটে গেছে, তার মূলের কারণগুলির মাঝে একটি হলো এই পানি সেচ। নদী ড্রেজিং করা হয়নি প্রায় চার দশক ধরে (কিছুদিন আগে যা শুরু হয়েছে), যেটার কারণে খাল কেটেও পানির সংকুলার হয়নি; বর্ষার পর বৃষ্টির পানি আর অবশিষ্ট ছিল না। কাজেই পানির যোগাড় হয়েছে মাটি খুঁড়ে। যদিও এটা মোটেই ভালো কোন পদ্ধতি নয়, তারপরেও এটা ছাড়া আর কোন পদ্ধতি তখন কারও জানা ছিল না। এই সেচের উপরে ভিত্তি করে এক বিশাল অর্থনীতি সচল রয়েছে আজ। সেচের পাম্পগুলির বেশিরভাগই ডিজেল ইঞ্জিনে চলে; কিছু চলে বিদ্যুতে। ডিজেল ইঞ্জিনের জন্যে ডিজেল সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়েছে; বিদ্যুতের জন্যে বিশেষ সময়ে আলাদাভাবে বিদ্যুত সরবরাহের ব্যবস্থা করতে হয়েছে। ইঞ্জিনের সাথে সংযুক্ত পাম্প বিভিন্ন কারণে বিকল হয়ে যায়; সেই পাম্পগুলি মেরামত এবং পরবর্তীতে পাম্প তৈরি করার শিল্প তৈরি হয়েছে। ইঞ্জিনের লাইনার এবং পিস্টনসহ বিভিন্ন যন্ত্রপাতি, যেগুলি নিয়মত বিকল হয়, সেগুলি মেরামত এবং তৈরির জন্যে শিল্প হয়েছে। পানি সরবরাহের জন্যে লোহা এবং প্লাস্টিকের পাইপ তৈরির শিল্প প্রতিষ্ঠা হয়েছে। ডিজেল সরবহারের জন্যে জাহাজ শিল্পের বিকাশ ঘটেছে। সড়ক পরিবহণের ক্ষেত্রে ট্রাকের বডি তৈরির শিল্প দাঁড়িয়েছে। এই সবগুলি লোহার শিল্পের উপরে ভিত্তি করে আবার শিপব্রেকিং শিল্প দাঁড়িয়েছে (যদিও শিপব্রেকিং থেকে আরও অনেক শিল্প উপকৃত হয়েছে)। বিদ্যুতচালিত পাম্পের ক্ষেত্রেও অনেক কিচু ঘটেছে, তবে যেহেতু বিদ্যুতের ব্যাপারটা অনেক বড় পরিসরের আলাপ, তাই আর উল্লেখ করলাম না (তবে বৈদ্যুতিক মোটরকে বাদ দিচ্ছি না)। মোটকথা এ এক বিরাট কাহিনী – পুরোটার মূলে রয়েছে একটা কাজ – শুষ্ক মৌসুমে জমিতে পানি সেচ করা। এত্তোবড় অর্থনৈতিক কর্মকান্ড; এত্তো এত্তো শিল্প গড়ে উঠলো! কিন্তু আসল জিনিস কই?? ইঞ্জিন কই?? সারা দেশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে সেচের কাজে নিয়োজিত রয়েছে ১৭ লক্ষ ইঞ্জিন!! যে ১৭ লক্ষ ইঞ্জিনের উপরে নির্ভর করে লক্ষ লক্ষ মানুষের কর্মসংস্থান হয়েছে; অর্থনীতিতে লক্ষ কোটি টাকা সঞ্চালিত হয়েছে, সেই ইঞ্জিনই তো উপরের এই লিস্টের মাঝে নেই!! হার্ট নেই; হাত-পা তৈরি করে বসে আছি আমরা!! হার্টখানা আমদানি করতেই আমাদের সুখ!!
  
 একটা ইঞ্জিন তৈরির ফুল অটোমেটিক পদ্ধতির একটা ভিডিও দিয়ে দিচ্ছি প্রসেসটা বোঝার জন্য। কিছু কিছু ইঞ্জিন তৈরির ক্ষেত্রে অতটা অটোমেটেড প্রসেস নেয়া হয়না উতপাদনের সংখ্যার কারণে। তবে যেগুলি বেশি সংখ্যায় তৈরি হয়, সেগুলি অটোমেটেড প্রসেসে খরচ বাঁচে।

এত বড় বাজার বিদেশীর জন্যে?

ঊনিশ শতকে ইউরোপে শিল্প বিপ্লব হয়েছিল এই ইঞ্জিনের আবির্ভাবেই। আমাদের তো আর নতুন করে সেই ইঞ্জিন আবিষ্কার করতে হচ্ছে না। আমাদের শুধু যেটা দরকার ছিল তা হলো ঐ ১৭ লক্ষ ইঞ্জিনের অন্তত কয়েক লক্ষ (পুরোটা করতে পারলে অবশ্য সমস্যা নাই) দেশে তৈরি করা। আমরা এই ইঞ্জিন তৈরি করতে পারলে আজও আমাদের মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন নিয়ে টানাটানি করতে হতো না; কয়েক লক্ষ ট্রাক্টর ও পাওয়ার টিলার আমদানি করতে হতো না; গাড়ি বানাতে পারবো কি পারবো না, সেটাও চিন্তা করতাম না। এদেশে ইঞ্জিনের ব্যবহার মোটেই কম না – এ এক বিশাল বাজার। এর উপরেও রয়েছে ৩০ হাজারের উপরে জলযান, যেগুলি সবগুলিই ইঞ্জিনচালিত; রয়েছে ৬০ হাজারের উপরে ইঞ্জিনচালিত মাছ ধরার নৌকা। লক্ষ লক্ষ মোটরগাড়ি, লক্ষ লক্ষ মোটরসাইকেল, অজানা সংখ্যক অনান্য যানবাহন, লক্ষ লক্ষ জেনারেটর – এর প্রত্যেকটিই আমদানি করা ইঞ্জিনচালিত। এদেশের বিরাট জনসংখ্যা এই বাজারকে ধরে রাখবে বহুকাল। বিদেশীরা এই বাজার হারাতে চায় না; আর আমরাও এই বাজার বিদেশীদের হাতে রাখতেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করি।
   
 মার্সিডিস এএমজি-৬৩ ইঞ্জিনের এসেম্বলি লাইন। এখানে একজন কর্মী একাই একটা ৪-লিটার ৪৫১ হর্স-পাওয়ারের ভি-৮ (৮টা সিলিন্ডার) ইঞ্জিন এসেম্বলি করে ফেলছেন। এটা খুবই হাই-পার্ফরমেন্স ইঞ্জিন, তাই তৈরি হয় সংখ্যায় কম; কাজেই ফুল অটোমেটিক প্রসেস এখানে নেয়া হয়নি।

এই সুযোগ হাতছাড়া করার সময় এখন নয়…

ইঞ্জিন ছাড়া একটা জাতি নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে না। উন্নয়নের এটা একটা পূর্বশর্তের মতো। (আশা করি পরবর্তী আরও কয়েকটি লেখায় এই পূর্বশর্তগুলি নিয়ে লিখবো।) বিদ্যুত ছাড়া শিল্প হয় না; জেনারেটর ছাড়া বিদ্যুত হয় না; ইঞ্জিন ছাড়া জেনারেটর হয় না। যানবাহন ছাড়া পণ্য পরিবহণ হয় না; ইঞ্জিন ছাড়া আজ যানবাহন হয় না (দয়া করে রিক্সা-বাইসেকেলের কথা মনে করাবেন না)। টাকা উঠে আসবে কি-না, এটা কোন কথা হতে পারে না। ব্রিটিশরা যখন এদেশের মানুষকে চা খাইয়েছিল, তখন এখান থেকে মুহুর্তের মাঝে টাকা উঠানোর কথা তারা চিন্তা করেনি; তারা জানতো যে টাকা একসময় এমনিতেই উঠে আসবে; কিন্তা চা খাওয়ানোর অভ্যাস না করাতে পারলে বাজারই গড়বে না। বাংলাদেশেও বহু উদাহরণ রয়েছে। একসময় এখানে টিস্যু পেপারের কোন বাজার ছিল না। সয়াবিন তেলের বদলে মানুষ সরিষার তেল দিয়ে রান্না করতো। বেবি ডায়াপারের কোন প্রশ্নই আসতো না মাত্র কয়েক বছর আগেও। মোট কথা বাজার তৈরি করা হয় পরে; আগে বাজার তৈরি করে প্রডাক্ট আনার চেষ্টা করলে সারাজীবন অন্যের পিছন পিছন চলতে হবে। একুশ শতকে ভারত মহাসাগরীয় অঞ্চলের অতি-গুরুত্বপূর্ণ ভূকৌশলগত অবস্থানে এটা আমাদের অপশন নয়। ইঞ্জিন তৈরি করতে হবে; ইঞ্জিনের চাপে বাজার তৈরি হবে।
যেসব স্থানে ইঞ্জিন তৈরির বিরাট সুযোগ রয়েছে আমাদের –

১. সেচের জন্যে ডিজেল ইঞ্জিন (সেচ পাম্প)

২. পাওয়ার টিলার এবং ট্রাক্টর

৩. মোটরসাইকেল

৪. কমার্শিয়াল মোটরগাড়ি

৫. জেনারেটর

৬. মেরিন ইঞ্জিন

 এই ভিডিওখানা থেকে মোটামুটিভাবে ধারণা পাওয়া যাবে যে অলটারনেটর বা মোটর কিভাবে তৈরি করা হয়। এটা 'মডার্ন' প্রসেস। প্রসেস মডার্ন হতে পারে, কিন্তু আসলে কাজগুলি আগের মতোই আছে। সাইজে অনেক বড় হয়ে গেলেও যে একই পদ্ধতিতে তৈরি করা হয়, সেটা নিচের ভিডিওতে দেখা যাবে। আর এই পদ্ধতি যে ফ্যানের মোটর তৈরি থেকে মোটেও আলাদা নয়, সেটা এর পরের ভিডিওতে দেখা যাবে।

এখানে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মোটর/অলটারনেটরের উতপাদন প্রসেস বোঝা যাবে। বিরাট আকৃতির মোটর; প্রসেস দেখলে অনেক হাই-টেক ঠেকবে। কিন্তু খেয়াল করলে বোঝা যাবে সে আসলে ঐ একই পদ্ধতি।



  

এই ভিডিওতে বিআরবি ফ্যানের উতপাদন প্রসেস দেখে বুঝতে পারা যাবে যে ইন্ডাস্ট্রিয়াল মোটরের উতপাদন প্রসেসের সাথে এর পার্থক্য কতটা সামান্য।
 

শিল্পোন্নয়নের আরেক ভিত্তি – বৈদ্যুতিক মোটর

উপরে লিখেছি যে ইঞ্জিন ছাড়া বিদ্যুত তৈরি হয় না। আসলে সেই ইঞ্জিনটা হলো জেনারেটরের অংশ। ইঞ্জিনটা মেকানিক্যাল শক্তি তৈরি করে; আর সেই মেকানিক্যাল শক্তি থেকে বিদ্যুত তৈরি করে অলটারনেটর (Alternator)। অলটারনেটর লাগানো থাকে ইঞ্জিনের ক্র্যাংকশাফট-এর সাথে; ইঞ্জিন ঘুরলে অলটারনেটর-এর মাঝের অংশটিও ঘুরে এবং বিদ্যুত উতপন্ন হয়। এই যন্ত্রটি (অলটারনেটর) অত্যন্ত সাধারণ একটা যন্ত্র, যা তৈরি করা খুব সহজ। এর প্রযুক্তিখানা হলো ইলেকট্রিক মোটরের ঠিক উল্টোটা। যেখানে অলটারনেটর মেকানিক্যাল শক্তি থেকে বৈদ্যুতিক শক্তি উতপাদন করে, সেখানে মোটর বৈদ্যুতিক শক্তি থেকে মেকানিক্যাল শক্তি উতপন্ন করে। যে মোটর তৈরি করতে পারে, তার কাছে অলটারনেটর একই জিনিস। আবার এই দুইটি জিনিস (মোটর এবং অলটারনেটর) আরও একটি বৈদ্যুতিক যন্ত্রের খুব কাছের – ট্রান্সফরমার। আমাদের দেশে যে বৈদ্যুতিক ফ্যান তৈরি হয়, তা আসলে মোটর। আর ফ্যানের এই মোটর আমাদের দেশেই তৈরি হয়। আবার বাংলাদশে খুবই উন্নত ট্রান্সফরমার তৈরি হয় (বিদেশে রপ্তানিও হয়)। অথচ কোন উদ্ভট এক কারণে যারা এই ফ্যানের মোটর বানায় বা যারা ট্রান্সফরমার বানায়, তারা কেউই অন্য কোন মোটর তৈরি করে না। ইউরোপের একটি কোম্পানি বাংলাদেশে পানির পাম্পের সাথে মোটর বিক্রি করে বিরাট ব্যবসা করে ফেললো; আর আমরা হাততালি দিয়েই ঠান্ডা থাকলাম। সেই কোম্পানি নাকি বাংলাদেশে ১০ লক্ষের বেশি মোটর বিক্রি করেছে, যার একটা বড় অংশ নিয়োজিত রয়েছে মাটির নিচ থেকে পানি তোলার কাজে। চিন্তা করে দেখুন তো বাংলাদেশে কতগুলি মাল্টি-স্টোরিড বিল্ডিং রয়েছে? এবার ভাবুন তো এই বিল্ডিংগুলির ছাদের উপরে পানির ট্যাঙ্কে পানি কি করে ওঠে? প্রত্যেক বাড়িতে পানি ব্যবস্থাপনার জন্যে একটি বা দু’টি করে পাম্প (মোটর) থাকে। সবাই যে পানি পাম্পটাকে পাম্প বলে চিনে, সেটা আসলে একটা বৈদ্যুতিক মোটর, যার শাফট-এর সাথে ইম্পেলার (Impeller) নামে একটি অতি সাধারণ যন্ত্র লাগানো থাকে, যেটিকে আসলে আমরা পাম্প বলে চিনি। (ডিজেল ইঞ্জিনের সাথে ইম্পেলার লাগালে সেটা সেই সেচ পাম্পের মতো কাজ করে।) মোটরে বিদ্যুত সংযোগ দিলে শাফট ঘোরে, অর্থাৎ মেকানিক্যাল শক্তি উতপন্ন হয়। এই মেকানিক্যাল শক্তি ইম্পেলারকে ঘোরালে মেকানিক্যাল শক্তি হয়ে যায় হাইড্রলিক শক্তি, অর্থাৎ পানির শক্তি। এর ফলেই পানিকে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে স্থানান্তরিত করা সম্ভব হয়। আমাদের দেশে এই ইম্পেলার-খানা তৈরি করা হয়; কিন্তু মোটরখানা বিদেশীদের ব্যবসার জন্যেই আমরা রেখে দিয়েছি!

 

এনার্জিপ্যাকের কাস্ট রেজিন ট্রান্সফরমার (সিআরটি) তৈরির একটা ভিডিও। এটা বেশ এডভান্সড এক ধরনের ট্রান্সফরমার। তবে প্রসেস দেখলে বোঝা যাবে যে বৈদ্যুতিক মোটর বা অলটারনেটর তৈরির প্রসেস থেকে এই প্রসেস খুব একটা দূরে নয়।
 

ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন…

কাজেই ইঞ্জিনের সাথে অলটারনেটর লাগালে তৈরি হয় বিদ্যুত, আর মোটরের সাথে (বা ইঞ্জিনের সাথে) ইম্পেলার লাগালে টানা যায় পানি। আর মোটর এবং অলটারনেটর আসলে একই জিনিস। এখন যদি আমরা মোটরের সাথে বা অলটারনেটরের সাথে গিয়ার চাকা (বর্তমানে দেশে তৈরি হয়, তবে প্রযুক্তি আরও অনেক দূর এগিয়ে নিতে হবে) লাগিয়ে অন্য কিছু ঘোরাবার চেষ্টা করি? এখানেই হলো শিল্পোন্নয়নের আরেক চাবি। যা কিছু ঘোরে বা নড়াচড়া করে, সেটা যদি বিদ্যুতের সাহায্যে নড়াচড়া করে, তাহলে সেখানে অবশ্যই একটা মোটর আছে। এসেম্বলি লাইন এবং প্রসেস চালু থাকে মোটরের কারণে। ফর্কলিফট চলে মোটরে (কারণ সেটা ব্যাটারি-চালিত গাড়ি)। বয়লারের পানি ঢোকানো-বের করা হয় মোটরের (পাম্পের) সাহায্যে। ক্রেন চলে মোটরে। যেকোন মেশিন চলে মোটরে, যেমন লেদ মেশিন, শিয়ারিং মেশিন, কাটিং মেশিন, বোরিং মেশিন, ইত্যাদি। আগেই বলেছি যে, যে ফ্যানের মোটর বানাতে পারে, সে অন্য মোটরও বানাতে পারবে – প্রযুক্তি অত্যন্ত সাধারণ। যতো উন্নত কারখানাই হোক না কেন, সেটাতে মোটর ছাড়া কাজ হয় না। রোবটের হাত-পা নাড়ানো হয় কি করে? কয়েকটি মোটর সেখানে কাজ করে। অর্থাৎ ইন্ডাস্ট্রিয়াল রোবট তৈরি করতেও মোটর লাগবে।

একটা গ্যাস বা তেল বা কয়লা বা হাইড্রো বা পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র থেকে বিদ্যুত কি করে তৈরি হয়? প্রথমে মেকানিক্যাল শক্তি তৈরি করা হয়, যা কিনা একটা আলটারনেটরের মাঝের অংশটিকে ঘোরায় এবং অলটারনেটর বিদ্যুত তৈরি করে। অবশ্য সবাই বিদ্যুতকেন্দ্রের আলটারনেটরকে জেনারেটর হিসেবেই চেনে। শিল্প, দোকানপাট, বাড়িঘরে যে ব্যাকআপ জেনারেটর থাকে, সেটাও একইভাবে কাজ করে। কাজেই যেটা বোঝা যাচ্ছে তা হলো শিল্প স্থাপনে মোটর একটা অতি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস। এটা ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশনের পূর্বশর্ত। আর ইন্ডাস্ট্রিয়াল অটোমেশন করতে না পারলে হাই কোয়ালিটি জিনিস তৈরি করা কঠিন, সময়সাপেক্ষে এবং অনেক ক্ষেত্রে সম্ভবই না। আমাদের নতুন করে মোটর আবিষ্কার করতে হবে না; শুধু উতপাদনে যেতে হবে; সর্বশেষ প্রযুক্তি নিয়ে আসার ব্যবস্থা করতে হবে, যা কিনা আমরা বহু শিল্পের জন্যেই করেছি। ফ্যানের মোটর তৈরি করে ফুলস্টপ দেয়াটা বোকার স্বর্গে বসবাস। এভাবে একটা জাতি গরমকালে কিছুটা স্বস্তি পাবে, কিন্তু সামনে এগুতে পারবে না। সব ধরনের মোটর এবং অলটারনেটর তৈরি করতে হবে। এগুলিরও একটা লিস্ট করে ফেলা যাক –

১. পানি তোলার এবং পানি সেচের মোটর (পাম্প)

২. জেনারেটর (ইঞ্জিন + অলটারনেটর)

৩. ইন্ডাস্ট্রিয়াল মোটর

৪. ফ্যান, ট্রান্সফরমার, ইত্যাদি (বর্তমানে তৈরি হচ্ছে)

ইঞ্জিন যদি হার্ট হয়, তাহলে মোটর এবং অলটারনেটর হবে সেই হার্টের ভালভ। একটা গাড়ি যখন চলে, তখন সেই গাড়িতে এয়ার কন্ডিশনার চলে কি করে? রেডিও চলে কি করে? কারণ ইঞ্জিনের শাফট-এর সাথে একটা অলটারনেটর লাগানো থাকে, যা কিনা বিদ্যুত উতপাদন করে। একেকটা গাড়ি একেকটা বিদ্যুতকেন্দ্র। একেকটা জেনারেটর একেকটা বিদ্যুতকেন্দ্র। বিদ্যুত না থাকলে প্রস্তরযুগে ফিরে যেতে হবে। আর সেই বিদ্যুতের দায়িত্ব আমরা কখনোই অন্য কারুর হাতে তুলে দিতে পারি না। হাত-পা তৈরি করছি আমরা; সেটা চলবে। তবে এখন “হার্ট” তৈরি করার পালা। ইঞ্জিন, মোটর, অলটারনেটর – এগুলি না হলে দেশের শিল্পোন্নয়নের ভিত্তি তৈরি হবে না। ভাগারের উপরে বিল্ডিং যেমন স্থায়ী হয় না, তেমনি ইঞ্জিন, মোটর, অলটারনেটর ছাড়া একটা দেশের উন্নয়ন বেলুনের মতো ফুলবে, কিন্তু কোনদিনই দৃঢ় হবে না।

3 comments:

  1. Very good writing but the quality of making Engineers & Diploma Engineers Bangladesh is still below the standard.
    Good students are leaving Bangladesh and they are contributing for the development of other countries. If they are interested to contribute then they are to getting opportunities.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Good thoughts...
      Practical steps towards technology application has become pivotal now... The rest would fall in place... We can debate on quality of engineers all day, but that will never help to actually set-up an industry... Both have to move in parallel...

      Delete