Showing posts with label resource. Show all posts
Showing posts with label resource. Show all posts

Monday, 23 May 2016

বাংলাদেশের সম্পদ কি যথেষ্ট?

২৪শে মে ২০১৬

পানির কষ্ট যে একবার পেয়েছে, সে জানে যে সবচাইতে বড় সম্পদ কোনটি। 



গুজরাট রাজ্যের রাজার গল্প

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হবার আগে গুজরাট রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। সেখানে তার কাজের লিস্টির মাঝে যেসব কাজকে ফলাও করে বলা হয়, সেগুলির মাঝে ছিল বিদ্যুত এবং পানি নিয়ে ব্যাপক কিছু কর্মকান্ড। তিনি নাকি সেখানে সাড়ে ৮ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত উতপাদন ক্ষমতা থেকে একেবারে ২৪ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত (যা বাংলাদেশের দ্বিগুণ) উতপাদন ক্ষমতায় উন্নীত করেছিলেন। যার ফলে ফসলের ক্ষেতগুলিকে তিনি নাকি রক্ষা করেছিলেন সেচের ব্যবস্থা করে। ১৫০ খানার বেশি পানি শোধনাগার স্থাপন করে রিভার্স অসমোসিস প্রসেসের মাধ্যমে মাটির বহু গভীর থেকে তোলা পানির ব্যাপক পরিমাণ খণিজ সরানোর ব্যবস্থা করেন তিনি। এরপর সুপেয় পানির অভাব দূরীকরণের জন্যে সেই পানি তিনি ২ হাজার কিলোমিটার পাইপলাইন এবং ১ লক্ষ ১৫ হাজার কিলোমিটার সাবসিডিয়ারি পাইপলাইন স্থাপন করে রাজ্যের মোট ১৮,০০০ গ্রামের মাঝে ১০,০০০ গ্রামে ২২৫ কোটি লিটার পানি প্রতিদিন পৌঁছে দিয়েছেন। ১১ হাজার হাজার পানির রিজার্ভার তৈরি করেছেন। ৫৬ হাজার বস্তা বালু জমা করেছেন, যাতে কখনো বন্যা হলে বন্যার পানি বস্তা দিয়ে আটকে রেখে পরে ব্যবহার করার ব্যবস্থা করতে পারেন। গুজরাট গ্রীন রেভোলিউশন কোম্পানি স্থাপন করে ‘ড্রিপ ইরিগেশন’এর ব্যবস্থা করেছেন ফসলের ক্ষেতে, যাতে পানির ব্যবহার সর্বনিম্ন হয়। এতকিছু করার পরেও বেশিরভাগ মূল্যায়নেই নাকি বলা হয় যে গুজরাটের বেশিরভাগ মানুষ এখনও দারিদ্র সীমার নিচেই রয়ে গেছে; মানে পুরোটাই ফাঁপা। আসলে এই কর্মকান্ডকে মূল্যায়ন করা আমাদের এখনকার লক্ষ্য নয়। সেগুলি ঠিকমতো হয়েছিল কিনা, বা পুরোটাই চাপাবাজি কিনা, সেটাও আমাদের মাথাব্যাথা নয়। তাহলে এগুলির এখানে উল্লেখ করা কেন?

উপরের এই গল্প ফাঁদার উদ্দেশ্য হচ্ছে কিছু চিন্তার উদ্রেক ঘটানো। অনেকেই হয়তো উপরের অংশটুকু পড়ে মনে করবেন যে এই ভদ্রলোককে (মানে লেখককে আরকি!) আবার বাংলাদেশে মোদি সাহেবের ক্যাম্পেইন ম্যানেজার কে বানালো? আবার কেউবা মনে করতে পারেন যে মোদি সাহেবের ‘উন্নতি’র মডেল আমাদের দেশেও কপি-পেস্ট করা উচিত। আবার কেউবা এ-ও মনে করতে পারেন যে আমরা মোদি সাহেবের চাইতে কম যাই না। যাহোক, যে যাই মনে করুন, এই লেখার উদ্দেশ্য একটু অন্য রকম চিন্তার শুরু করা। যেমন একটু চিন্তা করলেই বোঝা যাচ্ছে যে ভারতের এই গুরুত্বপূর্ণ রাজ্যটিতে পানির কি ব্যাপক হাহাকার। বিদ্যুত উতপাদনের রেকর্ড গড়তে হচ্ছে পানির সরবরাহ নিশ্চিত করতে। আবার মাটি খুঁড়ে পানি বের করতে করতে এমন অবস্থা হয়েছে যে পানি পেতে গিয়ে এক্কেবারে পৃথিবীর কেন্দ্রে (!) চলে যেতে হচ্ছে! পানির সাথে এত্তো বেশি মিনারেল উঠে আসছে যে সেটা আর পানযোগ্য থাকছে না। সেই পানিকে রিভার্স অসমোসিস প্রসেসের মাধ্যমে শোধন করে খেতে হচ্ছে। বলে নেয়া উচিত যে এই প্রসেসে বাংলাদেশে মিনারেল ওয়াটার পরিশোধন করে বোতলজাত করা হয়। অর্থাৎ গুজরাটের গ্রামের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে বোতলের পানিই পাইপ দিয়ে সরবরাহ করতে হচ্ছে। তা-ও আবার লক্ষ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে; সেটাও আবার যাচ্ছে ১০ হাজার গ্রামে! এর অর্থ গ্রামের মানুষকে বাঁচিয়ে রাখতে লক্ষ কিলোমিটার পাইপলাইন বসিয়ে বোতলের মিনারেল ওয়াটার সরবরাহ করতে হচ্ছে। সেই পানি স্টোর করে রাখার জন্যে হাজার হাজার রিজার্ভার তৈরি করা হয়েছে। বালুর বস্তা রেডি রাখা হয়েছে বন্যার পানি যাতে তাড়াতাড়ি পালিয়ে সমুদ্রে চলে যেতে না পারে সেজন্য। বন্যার পানি সেখানে সৃষ্টিকর্তার বিশেষ দান; তাই সেটাকে আটকে রেখে পরবর্তীতে ব্যবহারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। পানির এই উত্তোলন, শোধন, পরিবহণ, সংরক্ষণ, ব্যবহার – এই পুরো প্রসেসে কি পরিমাণ সম্পদ ব্যয় করতে হচ্ছে একবার চিন্তা করে দেখুন তো! কি পরিমাণ বিদ্যুত প্রতিদিন লাগতে পারে মাটির বহু নিচ থেকে পানি উঠিয়ে ১৫০টা পানি শোধনাগার চালাতে? এবং সেই পানি পাম্প করে লক্ষ কিলোমিটার পাইপলাইন দিয়ে হাজার হাজার গ্রামে সরবরাহ করতে? কি পরিমাণ বিনিয়োগ লাগতে পারে এই পুরো প্রসেসটাকে একবার বসাতে এবং সর্বক্ষণের জন্যে চালু রাখতে? বন্ধ হয়ে গেলে তো একেবারে জীবন-মরণ সমস্যা, তাই না?

 
https://agricultureandfarming.files.wordpress.com/2013/06/rri_rivers_in_bangladesh_image5.jpg
পানির দেশের মানুষ হয়ে গুজরাটের মতো মরুপ্রায় অঞ্চলের মানুষের পানির কষ্ট যেমন অনুধাবন করা সম্ভব নয়, তেমনি পানি যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ, সেটাও বোঝা কষ্টকর।

তাতে আমাদের কি?

কোথায় যাচ্ছি এই আলোচনা নিয়ে? মোদি সাহেবকে (অথবা যেই সাহেবকেই সেখানে বসানো হোক) আসলে কতটাই না পরিশ্রম করতে হচ্ছে এই রাজ্যকে বাঁচিয়ে রাখতে; ঠিক কিনা? শুধুমাত্র বেঁচে থাকতে তাদের এতটা কষ্ট করতে হচ্ছে! গুজরাটের ১৮৫টা নদীর মাঝে মাত্র ৮টা নদীতে নাকি সারা বছর পানি থাকে; বাকিগুলি শুকিয়ে যায়। পুরো ভারতে বৃষ্টিপাত গড়ে খুবই কম। সেখানে আবার গুজরাট রাজ্যে অন্য রাজ্যগুলির তুলনায় আরও অনেক কম বৃষ্টিপাত হয় – বছরে মাত্র ৮০ সেন্টিমিটার। এখন একটু চোখ ফেরানো যাক বাংলাদেশের দিকে। একবার একটু চিন্তা করে দেখুন তো – বাংলাদেশে কোন গ্রামে কি রিভার্স অসমোসিস পদ্ধতিতে পানি শোধন করে সেটা পাইপলাইনের মাধ্যমে সরবরাহ করতে হচ্ছে? হ্যাঁ, কিছু ক্ষেত্রে আর্সেনিকের জন্যে বিকল্প পানির ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। কিন্তু সেটা হচ্ছে পানিসম্পদের ম্যানেজমেন্ট ঠিকমতো না করার জন্যে; প্রকৃতিতে পানি কম থাকার জন্যে নয়। গুজরাটের মতো এক চিমটি বৃষ্টির জন্যে চাতক পাখির মতো বসে থাকতে হচ্ছে না। একটু অপেক্ষা করলেই আকাশ থেকে শত শত পাইপলাইনের মাধ্যমে বৃষ্টি এসে পড়ছে! সেটাও আবার চলছে মাসের পর মাস। নদীর সার্ফেস ওয়াটার ব্যবহার করতে পারছিনা; সেটা আমাদের দোষ। সৃষ্টিকর্তাকে কিছু বলার তো নেই। বছরের পর বছর নদী ড্রেজিং করিনি; গঙ্গা ব্যারাজের মতো প্রজেক্ট পায়ে ঠেলেছি বিদেশীদের কথা শুনে শুনে – এগুলিতো আমাদের দোষ। আল্লাহ এদেশে শতশত নদী দিয়ে সেগুলির সাথে আবার খালা-বিল-নালা যোগ করে পৌঁছে দিয়েছেন একেবারে অজোপাড়াগাঁ পর্যন্ত। ফসলের ক্ষেতের মাঝ থেকে ফসল নৌকায় উঠিয়ে সেই নৌকা খালের মাঝ দিয়ে দড়ি দিয়ে টেনে নদী পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যাচ্ছে – একটা টাকাও খরচ হচ্ছে না। গরম লাগলে গ্রামের ছোকরারা পানিতে ঝাঁপ দিয়ে গোসল সেড়ে নিচ্ছে। নদী-খাল-বিলে হাঁসের চাষ করা হচ্ছে পানি থাকার কারণে। লক্ষ লক্ষ টন স্বাদু পানির মাছ উতপাদিত হচ্ছে। সমুদ্রবন্দর থেকে জাহাজে করে কম খরচে মালামাল পৌঁছে যাচ্ছে দেশের গুরুত্বপূর্ণ শিল্প এলাকাগুলিতে। হাজার হাজার নৌকা-লঞ্চে করে লাখ লাখ মানুষ শহর থেকে শহরে চলাচল করছে। নদীর পানি ব্যবহৃত হচ্ছে শিল্পের কাজে। নদীর পানি বর্ষার শেষে ধরে রাখতে পারি নাই; সেটাতো আমাদের দোষ। যথেষ্ট পানি তো ছিলোই নদীতে। সেই পানি তো আর বসে থাকবে না; সমুদ্রে চলে যাবে ধরে না রাখলে – সে-ই তো স্বাভাবিক। আর একারণেই গুজরাটের মতো খরা এলাকার মতো পাম্প দিয়ে মাটির নিচ থেকে পানি তুলতে হচ্ছে কোটি কোটি টাকার ডিজেল তেল খরচ করে। ঠিকমতো ব্যবহার করতে পারলে বাংলাদেশের পানি সম্পদ আমাদের জন্যে সৃষ্টিকর্তার কতোবড় আশীর্বাদ, সেটা কি আমরা গুজরাটের উপরের গল্প থেকে এখনো ধরতে পারিনি?

http://www.theindependentbd.com/assets/news_images/Water-Resource.jpg
অন্য অনেককে না দিয়ে সৃষ্টিকর্তার কেন খেয়াল হলো একটা জাতিকে পানি সম্পদে পূর্ণ করে ফেলা? - এই প্রশ্নের উত্তরের মাঝেই রয়েছে সেই জাতির উদ্দেশ্য


আরেকটা গল্প দিয়ে শেষ করি…

ধরুন, একটা দেশের সম্পূর্ণ আয় ১০০ টাকা। মোটামুটিভাবে বেঁচে থাকতে তার খরচ করতে হয় ৫ টাকা। অর্থাৎ নিজের কিছু চেলাচামুন্ডা পুষে ট্রেনিং দিয়ে সেগুলিকে শক্তিশালী সিকিউরিটি হিসেবে গড়ে তোলার জন্যে তার হাতে থাকে ৯৫ টাকা। আরেকটি দেশের সম্পূর্ণ আয় ১,০০০ হাজার টাকা। মোটামুটিভাবে বেঁচে থাকতে তার খরচ করতে হয় ৯০০ টাকা। অর্থাৎ সে মোটামুটি ১০০ টাকা পাচ্ছে তার চেলা-চামুন্ডা বাহিনী তৈরি করতে। তাহলে এই দু’দেশের মাঝে পার্থক্য কি তেমন একটা কিছু থাকলো (৯৫ বনাম ১০০); যদিও তাদের একজনের আয় আরেকজনের ১০ গুণ?

মরাল অব দ্যা স্টোরি – একটা দেশের সম্পদের পরিমাণ শুধু তার হাতে কি পরিমাণ অর্থ-বিত্ত-সম্পদ আছে তা-ই নয়। সেই সম্পদের কতটুকু তার নূন্যতমভাবে বেঁচে থাকার জন্যে ব্যবহার করতে হচ্ছে, আর সেই সম্পদ আসলে সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারছে কি-না, তার উপরে। বিপুল অর্থ থাকার পরেও একজনের মরুভূমির মাঝে বেঁচে থাকতে অসম্ভব পরিশ্রম করতে হতে পারে; আরেকজনের আবার সবুজ-শ্যামলা ক্ষেতের মাঝে ফকিরের মতো বিত্ত থাকার পরেও বেঁচে থাকতে এক চিমটি পরিশ্রমই যথেষ্ট হতে পারে। এক্ষেত্রে বিত্ত কম থাকার পরেও দ্বিতীয়জনের ঘুষির শক্তি কিন্তু প্রথমজনের চাইতে অনেক বেশি হতে পারে; কারণ তার বেশিরভাগ শক্তিই রিজার্ভে রয়ে গেছে। দ্বিতীয়জন (ফকির) যদি একবার বুঝে যায় যে সে আসলে দরিদ্র নয়, বরং সম্পদ আসলে তারই বেশি, কারণ তার বেঁচে থাকা সহজ; তাহলে প্রথমজন (মুরুভূমির বাসিন্দা) যদি দ্বিতীয়জনের প্রতিবেশী হয়, তাহলে তার (প্রথমজনের) মাঝে মৃত্যুভয় জন্মাতে এক মুহুর্তও লাগবে না। তাহলে দ্বিতীয়জনের (ফকির) এই বুঝ কিভাবে আসবে? খুব সহজ – যখন সে বুঝতে পারবে যে তাকে এত্তোসব সম্পদ কেউ একজন উপহার দিয়েছেন সম্পদের উপরে বসে বসে ডিমে তা দেবার জন্যে নয়।