ফরাসি নৌবাহিনীর চার প্রকারের নেভাল ড্রোন
গত ২৬শে এপ্রিল ফরাসি নৌবাহিনী ফ্রান্সের উপকূলে 'আনম্যান্ড সারফেস ভেসেল' (ইউএসভি) বা মনুষ্যবিহীন ম্যারিটাইম বা নেভাল ড্রোন নিয়ে একটা পরীক্ষা চালায়। পরীক্ষায় নৌবাহিনীর একটা অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল বা ওপিভি থেকে একটা সুইসাইড বা কামিকাজি ড্রোন ছাড়া হয়; যা কিনা পুরোনো একটা ল্যান্ডিং ক্রাফটকে আঘাত করে ব্যাপক ক্ষতিসাধন করে। ২০২১ সাল থেকে শুরু করা 'পোলারিস' কৌশলের অন্তর্ভুক্ত এই পরীক্ষায় সত্যিকারের যুদ্ধাবস্থার সবচাইতে কাছাকাছি অবস্থা তৈরি করে পরীক্ষাটার আয়োজন করা হয়। ফরাসি নৌবাহিনীর এক বিবৃতিতে বলা হয় যে, এর আগে গত ডিসেম্বরে ফরাসি সাবমেরিন থেকে টর্পেডো ছোঁড়ার মাধ্যমে একটা জাহাজ ধ্বংস করা হয়। গত ফেব্রুয়ারিতে ফরাসি নৌবাহিনীর একটা 'লাফায়েত-ক্লাস' ফ্রিগেটের খুব কাছে একটা বিস্ফোরণ ঘটানোর মাধ্যমে জাহাজের চাপ নেবার সক্ষমতা যাচাই করা হয়। আর গত মার্চ মাসে 'ড্রাগুন ফিউরি' উভচর মহড়ার মাধ্যমে আক্রমণ এবং প্রতিরক্ষামূলক যুদ্ধে ড্রোনের ব্যবহার যাচাই করা হয়। সর্বশেষ পরীক্ষার মাধ্যমে ফরাসি নৌবাহিনী মনুষ্যবিহীন নেভাল ড্রোনের ব্যবহার, বিশেষ করে সুইসাইড ড্রোনের ব্যবহার, গাইড্যান্স এবং ধ্বংসাত্মক সক্ষমতার ক্ষেত্রে আরও শক্তিশালী অবস্থানে যেতে চাইছে। ফরাসি নৌবাহিনীর বিবৃতি থেকে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার হয় তা হলো, ফরাসি নৌবাহিনী ড্রোন ব্যবহারের ক্ষেত্রে যথেষ্ট গুরুত্ব দিচ্ছে। গত জানুয়ারিতে ফরাসি নৌবাহিনীর রিয়ার এডমিরাল ডেভিড ডেসফুজেরেস 'নেভাল নিউজ'কে বলেন যে, ফরাসি নৌবাহিনী চার ধরণের নেভাল ড্রোন পেতে চাইছে। এর প্রথমটা হলো সামুদ্রিক মাইন ধ্বংস করার জন্যে; দ্বিতীয়টা হলো হাইড্রোগ্রাফিক সার্ভে কাজের জন্যে; তৃতীয়টা হলো উভচর অপারেশনে ব্যবহার করার জন্যে; আর চতুর্থটা হলো শত্রুর সাথে সরাসরি যুদ্ধ করার জন্যে কমব্যাট বা এটাক ড্রোন।
গত মার্চের উভচর মহড়ায় ফরাসি নৌবাহিনী 'এক্সেইল' কোম্পানির তৈরি 'ড্রিএক্স এইচ-৮' নেভাল ড্রোন ব্যবহার করে। এর আগে এই একই ড্রোন ২০২০ সাল থেকে পরীক্ষা করা হচ্ছিলো হাইড্রোগ্রাফির কাজের জন্যে। অর্থাৎ সমুদ্রাঞ্চলকে জাহাজ চলাচলে নিরাপদ রাখতে এর ব্যবহার খোঁজা হচ্ছিলো। এর মাধ্যমে পানির নিচের ভূমির গঠনপ্রকৃতির একটা ছবি পাওয়া যাচ্ছিলো। আর এই ড্রোন অটোনমাস, বা কোন মনুষ্য নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একটা প্রোগ্রামের মাধ্যমে চালানো সম্ভব। এর ফলে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলের পানির নিচের ত্রিমাত্রিক মানচিত্র তৈরির জন্যে এই ড্রোনগুলিকে একটা নির্দেশনা দিয়ে দিলেই হলো; সর্বদা কোন ব্যক্তিকে এগুলির কাজ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে না। 'ড্রাগুন ফিউরি' মহড়ার মাধ্যমে ফরাসি নৌবাহিনী এই কাজটাকেই উভচর অপারেশনে ব্যবহার করতে চাইছে। এরূপ অপারেশনে 'ড্রিএক্স এইচ-৮' ড্রোন শত্রুর নিয়ন্ত্রণে থাকা উপকূলের কাছাকাছি অঞ্চলে পানির নিচের ভূপ্রকৃতি সম্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করবে। ড্রোন ব্যবহারের কারণে ফরাসি সামরিক কোন সদস্যের জীবন হুমকির মাঝে পড়বে না। মহড়ার মাঝে ফরাসিরা আরও দেখতে চাইছিলো যে, কিভাবে এই ড্রোন নিরাপদে ফরাসি 'মিসট্রাল-ক্লাস'এর হেলিকপ্টার ডক ল্যান্ডিং শিপের ডক থেকে পানিতে ওঠা-নামা করানো যায়।
এর আগে ২০২৪এর ডিসেম্বরে ফরাসি নৌবাহিনী 'থালেস' কোম্পানির কাছ থেকে ১২মিটার লম্বা নেভাল ড্রোনের ডেলিভারি পায়। এটাকে বলা হয় পৃথিবীর প্রথম সার্ভিসে আসা অটোনমাস নেভাল ড্রোন। এই ড্রোনগুলি ফ্রান্স এবং ব্রিটেনের নৌবাহিনীর মাইন ধ্বংস করা জাহাজে বহণ করা যাবে। এগুলি একটা সোনার টেনে নেবে এবং পানির নিচে মাইন খুঁজবে। অটোনমাস হবার কারণে এই ড্রোনগুলি মানুষের নিয়ন্ত্রণ ছাড়াই একনাগারে ৪০ ঘন্টা মাইন খুঁজতে পারবে। এই ড্রোন ডেলিভারি পাবার আগেই ফরাসিরা ন্যাটোর অধীনে 'রেপমাস' মহড়ায় অংশ নেয়; যেখানে তারা তাদের নিজস্ব নৌবাহিনী থেকে ৩৮ বছরের পুরোনো ৪২মিটার লম্বা ৪০০টন ওজনের ডাইভিং টেন্ডার জাহাজ 'এশিরন'কে পাঠায়। এই জাহাজ মূলতঃ ব্যবহৃত হয় পানির নিচের বস্তু খোঁজায় ডাইভারদের বহণ করার জন্যে। এই জাহাজ থেকে সুইডেনে নির্মিত 'পিরায়া' নেভাল ড্রোন অপারেট করা হয়েছিলো। একটা ডাইভিং টেন্ডার জাহাজ থেকে মনুষ্যবিহীন নেভাল ড্রোন অপারেট করার অর্থ হলো এসকল ড্রোন অনেক প্রকারের জাহাজ থেকেই অপারেট করা সম্ভব।
২০২৪এর নভেম্বরে ফরাসি সরকারি মালিকানার শিপবিল্ডিং কোম্পানি 'নেভাল গ্রুপ' এবং 'কুয়াচ শিপইয়ার্ড' তাদের প্রথম নেভাল ড্রোন সামনে আনে। 'সীকুয়েস্ট এস' নামের প্রায় ৯মিটার লম্বা এই ড্রোনগুলিকে যেকোন জাহাজে বহণ করা যাবে; যার মাঝে থাকবে ফ্রিগেট, হেলিকপ্টার ক্যারিয়ার ডক ল্যান্ডিং শিপ, সাপ্লাই জাহাজ, ইত্যাদি। এই ড্রোনগুলিকে জাহাজের নিজস্ব বোট পানিতে নামানোর জন্য ব্যবহার করা ক্রেন বা ড্যাভিটের মাধ্যমে অপারেট করা যাবে। ফরাসি নৌবাহিনীর 'ফ্রেম' ফ্রিগেট থেকে এই ড্রোন ইতোমধ্যেই অপারেট করা হয়েছে। এই ড্রোনগুলি সোনারের মাধ্যমে পানির নিচের সাবমেরিন, টর্পেডো এবং ড্রোন খুঁজে পেতে সহায়তা করবে। বিশেষ করে অগভীর পানিতে, যেখানে মাদারশিপের জন্যে অপারেট করা কঠিন, সেখানে এই ড্রোনগুলি চলতে পারবে। ফরাসি সরকারের মালিকানায় থাকার কারণে নৌবাহিনীর চাহিদার গুরুত্ব অনুধাবন করে 'নেভাল গ্রুপ' মাত্র এক বছরের মাঝে এই ড্রোন ডেভেলপ করে অপারেশনাল অবস্থায় নিয়ে আসতে পেরেছে। এই কোম্পানির কর্মকান্ড অনেক ক্ষেত্রেই ফরাসি সরকারের কৌশলগত চিন্তাভাবনার ফলাফল। আর এর মাঝে এ-ও বোঝা যায় যে, ভূরাজনৈতিক পরিস্থিতি কতটা বেসামাল হবার কারণে ফরাসিরা এতটা দ্রুত এগুচ্ছে।
ইউক্রেন যুদ্ধ এবং লোহিত সাগরে ইয়েমেনের হুথিদের থেকে শিক্ষা
তবে যেকোন জাহাজ থেকে নেভাল ড্রোন অপারেট করার সবচাইতে শক্তিশালী পরীক্ষাটা ছিল সুইসাইড এটাক ড্রোনের ক্ষেত্রে। ইউক্রেন যুদ্ধে এবং লোহিত সাগরে পশ্চিমা বাণিজ্যিক জাহাজের উপর ইয়েমেনের হুথি মিলিশিয়াদের আক্রমণে সুইসাইড নেভাল ড্রোনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে লক্ষ্য করা গিয়েছে। ইউক্রেনিয়রা কিছু সুইসাইড এটাক ড্রোনের সাথে নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করা কমব্যাট ড্রোনও ব্যবহার করেছে। এই কমব্যাট ড্রোনগুলি রুশ প্রতিরক্ষা লাইনে টহল হেলিকপ্টারের উপর গুলি করে। কিছু কমব্যাট ড্রোনকে আবার মাদারশিপ হিসেবে ব্যবহার করে তারা; যার মাধ্যমে একটা কমব্যাট ড্রোনের ভেতর কয়েকটা সুইসাইড ড্রোন বিমান বহণ করা হয়। হুথি মিলিশয়ারা নেভাল ড্রোনের সাথে সমন্বয় করে ড্রোন বিমান, জাহাজ-ধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, এমনকি জাহাজ-ধ্বংসী ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রও ব্যবহার করেছে। এর ফলে প্রতিরক্ষায় নিয়োজিত পশ্চিমা যুদ্ধজাহাজগুলি মারাত্মক সমস্যায় পড়েছিল। ফরাসিরা এই ঘটনাগুলি থেকে শিক্ষা নিয়েই নিজেদের ড্রোন ডেভেলপ করছে।
ফরাসিরা ছাড়াও অন্যান্য নৌবাহিনীও মনুষ্যবিহীন নেভাল ড্রোন নিয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে অথবা নিজেদের নৌবাহিনীতে সেগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়ায় রয়েছে। মার্কিন নৌবাহিনী 'ঘোস্ট ফ্লীট' নামের প্রকল্পের অধীনে বিভিন্ন ধরণের নেভাল ড্রোন তৈরি করছে; যেগুলি ইন্টেলিজেন্স সংগ্রহ, এটাক, লজিস্টিক্যাল মিশন ছাড়াও অন্যান্য মিশন সম্পাদনে সক্ষম হবে। এছাড়াও চীন, তুরস্ক, ইস্রাইল, দক্ষিণ কোরিয়া এবং তাইওয়ানও নেভাল ড্রোন ডেভেলপ করছে। ২০২১এর মে মাসে তুরস্ক প্রথমবারের মতো তাদের 'উলাক' নেভাল ড্রোন থেকে 'সিরিট' রকেট ছোঁড়ার মাধ্যমে একটা টার্গেট ধ্বংস করেছে। এই ড্রোন দু'টা 'এল-উমটাস' দূরপাল্লার ট্যাঙ্ক-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্রও বহণ করতে সক্ষম। উপকূলীয় অঞ্চলে জাহাজের নিরাপত্তা ও নৌস্থাপনার নিরাপত্তা দিতে এই ড্রোনগুলিতে রাডার, নাইট ভিশন ক্যামেরা এবং ১২ দশমিক ৭মিঃমিঃ মেশিন গান বসানো হয়। ২০২২এর জুনে তুর্কিরা দু'টা 'আলবাট্রস এস' এটাক ড্রোনের সাথে একটা 'মির' কমান্ড ড্রোনের সমন্বয়ে আক্রমণকারী ড্রোনের ঝাঁক নিয়ে পরীক্ষা করে। ২০২৩এর এপ্রিলে তুর্কিরা একটা পরীক্ষা চালায়, যেখানে 'মারলিন' নেভাল ড্রোন সাবমেরিন খুঁজে বের করে এবং তার সাথে সমন্বিতভাবে কাজ করা 'মির' নেভাল ড্রোন থেকে টর্পেডো ছুঁড়ে টার্গেট ধ্বংস করা হয়। ২০২৩এর অক্টোবরে তুরস্ক তাদের 'আলবাট্রস এস' সুইসাইড নেভাল ড্রোন পরীক্ষা করে। প্রায় ৭মিটার লম্বা এবং ২টন ওজনের এই ড্রোনগুলি ৪০নটিক্যাল মাইল গতিতে এবং প্রায় ১০ ঘন্টা ধরে চলতে সক্ষম। ইনবোর্ড ডিজেল ইঞ্জিন ব্যবহার করে এই ড্রোন ২৫০কেজি ওয়ারহেড বহণে সক্ষম। অটোনমাস এরকম ৮টা ড্রোন একত্রে টার্গেটে সমন্বিতভাবে হামলা করে এবং শেষ পর্যন্ত ওয়ারহেড বহণ করা একটা ড্রোনের আঘাতে ২২মিটার লম্বা টার্গেট জাহাজটা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস হয়। নেভাল ড্রোনগুলিকে আকাশ থেকে সহায়তা দিচ্ছিল 'বায়রাক্তার টিবি-২' ড্রোন বিমান। ২০২৪এর অক্টোবরে কাতার তুরস্ক থেকে 'উলাক ১১' নেভাল ড্রোন ক্রয় করার ঘোষণা দেয়।
‘ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার' হিসেবে নেভাল ড্রোন
ইউক্রেন যুদ্ধের বাইরে অন্যান্য দেশের সুইসাইড নেভাল ড্রোনগুলি এখন পরীক্ষামূলক থেকে অপারেশনাল সক্ষমতা পর্যায়ে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে একটা ঝাঁকে অনেকগুলি ড্রোন ব্যবহার করে শত্রুর প্রতিরক্ষাকে ব্যাতিব্যস্ত করে ফেলাটাকেই সবচাইতে কার্যকর মনে করছেন অনেকে। দূরবর্তী টার্গেটের ক্ষেত্রে ফ্রিগেট বা অন্য কোন স্পেশালাইজড জাহাজ থেকে পানিতে নামিয়ে এগুলিকে শত্রুর বিরুদ্ধে ব্যবহার করা যায়। এরূপ নেভাল ড্রোনগুলিকে পানির নিচ দিয়ে চলা সাবমেরিন ড্রোন এবং ড্রোন বিমানের সাথে সমন্বয় করে ব্যবহার করলে শত্রুর সমস্যাকে আরও জটিল করে ফেলা সম্ভব। বিশেষ করে বিভিন্ন দিক থেকে ভিন্ন ভিন্ন ড্রোনের মাধ্যমে আক্রমণ করে শত্রু জাহাজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে অকেজো করে ফেলা সম্ভব। তবে অনেক দূরবর্তী টার্গেটে ম্যারিটাইম সুইসাইড এটাক ড্রোন দিয়ে হামলা করার ব্যাপারটা এখনও পরীক্ষিত নয়। এধরণের হামলায় ইলেকট্রোম্যাগনেটিক সমস্যার কারণে ড্রোনের সাথে নিজ বাহিনীর যোগাযোগ ব্যাহত হতে পারে। এই সমস্যা দূর করতে হলে এগুলিকে অটোনমাস করা প্রয়োজন। তবে অটোনমাস করতে হলে এগুলিতে যথেষ্ট ভালো সেন্সর যুক্ত করতে হবে; যাতে করে অন্য কোন বস্তুর সাথে সংঘর্ষ এড়াতে পারে এবং টার্গেটে নিখুঁতভাবে আঘাত হানতে পারে। এছাড়াও শত্রুর নিয়ন্ত্রণে থাকা এলাকায় জ্যামিং এবং সাইবার হামলা এড়াতে গেলে এই ড্রোনগুলিতে অত্যন্ত শক্তিশালী গাইড্যান্স সিস্টেম থাকা প্রয়োজন। তবে এখনও পর্যন্ত বেশিরভাগ নৌবাহিনীতেই নেভাল ড্রোন খোঁজা এবং সেগুলিকে ঠেকাবার জন্যে তেমন কোন শক্তিশালী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। পানির ঢেউএর মাঝ দিয়ে চলা নিচু এবং ছোট্ট এসকল নৌযানকে খুঁজে পাওয়া বেশ বড় চ্যালেঞ্জ। স্বল্প খরচের এসকল ড্রোনের মাধ্যমে অনেক বড় এবং দামী যুদ্ধজাহাজ ঘায়েল করে ফেলা সম্ভব।
ইউক্রেনিয়রা প্রমাণ করেছে যে, নেভাল ড্রোনের মাধ্যমে শত্রুর নৌবাহিনীকে বন্দরের কাছাকাছি স্থানে পঙ্গু করে ফেলা সম্ভব। ইয়েমেনের হুথিরা প্রমাণ করেছে যে, নেভাল ড্রোন, ড্রোন বিমান, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ও ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের সমন্বিত আক্রমণের মাধ্যমে শত্রুর জাহাজের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে ব্যাতিব্যস্ত করে ফেলা সম্ভব। যুদ্ধজাহাজ হতে হলে এখন আর কোন জাহাজকে জটিল ডিজাইনের হতে হয় না। প্রতিটা জাহাজেই নিজস্ব বোট পানিতে নামাবার জন্যে ক্রেন বা ড্যাভিট থাকে। এই একই ব্যবস্থার মাধ্যমে একটা নেভাল ড্রোনকে জাহাজে বহণ করে পানিতে নামানো সম্ভব; যা কিনা ফরাসি নৌবাহিনী প্রমাণ করেছে। ইউক্রেনিয়রা যা উপকূলের কাছাকাছি করেছে, ফরাসিরা সেটাকে গভীর সাগরে নিয়ে গিয়েছে। বিশ্বব্যাপী ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা ফরাসিদেরকে চিন্তার মাঝে ফেলেছে এবং একইসাথে নিজেদের প্রতিরক্ষাকে দ্রুত উন্নত করতে অনুপ্রেরণা যুগিয়েছে। নেভাল ড্রোনগুলি একপ্রকার 'ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার' হিসেবে কাজ করছে; যার মাধ্যমে একটা নৌবাহিনী তাদের স্বাভাবিক শক্তিমত্তার চাইতে বেশি শক্তি প্রদর্শন করতে সক্ষম হবে। ইউক্রেন এক্ষেত্রে প্রমাণ করেছে যে, বহুগুণে শক্তিশালী একটা নৌবাহিনীকেও নেভাল ড্রোনের বিচক্ষণ ব্যবহারের মাধ্যমে পঙ্গু করে ফেলা সম্ভব। তুরস্কও এক্ষেত্রে শিক্ষা নিয়ে অনেক ধরণের নেভাল ড্রোন ডেভেলপ করেছে; যার মাঝে কয়েক প্রকারের কমব্যাট বা এটাক ড্রোনও রয়েছে।
বাংলাদেশের জন্যে 'ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার'
বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে সম্পদের মারাত্মক স্বল্পতা রয়েছে। এই স্বল্প সম্পদ দিয়ে সামরিক দিক থেকে শক্তিশালী কোন রাষ্ট্রকে (যেমন ভারত) মোকাবিলা করা খুবই কঠিন কাজ। তবে বাংলাদেশের যথেষ্ট সক্ষমতা রয়েছে তাদের নিজেদের শক্তিকে এমন একটা অবস্থানে নিয়ে যাওয়া, যা দিয়ে শত্রুর নৌবাহিনীকে বঙ্গোপসাগর অবরোধ দেয়ার প্রচেষ্টা থেকে নিবৃত করতে পারবে। হঠাৎ করে নৌবাহিনীর জাহাজের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে গেলে সেকেন্ড-হ্যান্ড জাহাজ যোগাড় করতে হবে। আর সেক্ষেত্রে শধু সামরিক নয়, বেসামরিক জাহাজও ক্রয় করা যেতে পারে; যেগুলি কিনা সামরিক কাজের জন্যে প্রস্তুত করে নেয়া যেতে পারে। এই জাহাজগুলিকে বিভিন্ন প্রকারের সামরিক সরঞ্জাম বহণের জন্যে উপযোগী করে নেয়া সম্ভব। এর মাঝে ছোট ড্রোন বিমান যুক্ত করতে তেমন কোন পরিবর্তনই প্রয়োজন নেই। জাহাজের আকার অনুযায়ী সেখান থেকে ৪০মিনিট থেকে ১৮ঘন্টা ওড়ার সক্ষমতার ড্রোন অপারেশন পরিচালনা করা যেতে পারে। একইসাথে কনটেইনারের ভেতর বিভিন্ন প্রকারের সক্ষমতার প্যাকেজ বহণ করা যেতে পারে; যেমন, জাহাজ-ধ্বংসী ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র; ড্রোন অপারেশনস কমান্ড সেন্টার। এছাড়াও জাহাজের ডেকের উপরেই বিভিন্ন প্রকারের অস্ত্র জুড়ে দেয়া যেতে পারে; যেমন, কাঁধে বহণযোগ্য বিমান-বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র (ম্যানপ্যাডস); ১২ দশমিক ৭মিঃমিঃ, ২০মিঃমিঃ বা ৩০মিঃমিঃ বিমান-বিধ্বংসী কামান।
নেভাল ড্রোন বা 'আনম্যান্ড সারফেস ভেসেল' (ইউএসভি) বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্যে ‘ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার' হিসেবে কাজ করতে পারে। প্রায় সকল জাহাজেই নিজস্ব বোট থাকে এবং বোট পানিতে নামাবার জন্যে ক্রেন বা ড্যাভিটও থাকে। এই মাধ্যমটা ব্যবহার করেই জাহাজে নেভাল ড্রোন বহণ করা যেতে পারে। যত বড় জাহাজ, তত বড় বা তত বেশি সংখ্যক বা প্রকারের নেভাল ড্রোন বহণ করতে সক্ষম হবে। বাংলাদেশ নৌবাহিনীর পুরোনো 'আইল্যান্ড-ক্লাস' ওপিভি, ‘ক্যাসল-ক্লাস' কর্ভেট, ‘রিভার-ক্লাস' মাইন সুইপার, কোস্ট গার্ডের 'লীডার-ক্লাস' কর্ভেটগুলি খুব সহজেই বেশকিছু প্রকারের নেভাল ড্রোন বহণ করতে পারে। এখানেই ১৫টা জাহাজ। এগুলির সাথে আরও কিছু সেকেন্ড-হ্যান্ড জাহাজ যুক্ত করলে খুব সহজেই এই সংখ্যাকে ৩০ থেকে ৫০-এ নিয়ে যাওয়া সম্ভব। এরূপ একটা ফ্লীটের পক্ষে ১০০ থেকে ৪০০টা নেভাল ড্রোন, একই সংখ্যক ড্রোন বিমান ছাড়াও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করা তেমন কঠিন হবে না। এই জাহাজগুলিকে উচ্চতর সক্ষমতার ফ্রিগেট-কর্ভেটের সাথে গ্রুপ হিসেবে অপারেশনে যুক্ত করতে পারলে একে অপরের সক্ষমতাগুলিকে ব্যবহার করতে পারবে। এগুলির একত্রিত সক্ষমতা তখন প্রতিটা জাহাজের আলাদা সক্ষমতার সাথে যুক্ত হবে এবং নিজেদের একক দুর্বলতা দৃশ্যমান হবে না।
নেভাল ড্রোন বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্যে 'ফোর্স মাল্টিপ্লায়ার' হিসেবে কাজ করে বঙ্গোপসাগরকে শত্রুর নৌ-অবরোধের চেষ্টা থেকে মুক্ত রাখতে পারবে। তবে সেটা তখনই সম্ভব, যখন বাংলাদেশ নিশ্চিত করে বুঝতে পারবে যে, তারা নিজেদেরকে কোথায় দেখতে চায়। সাত দশকের লিবারাল বিশ্বব্যবস্থা, যা কিনা যুক্তরাষ্ট্র দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর প্রতিষ্ঠা করেছিলো, তা আজ যুক্তরাষ্ট্র নিজেই ভেঙ্গে ফেলেছে। এরূপ ভূরাজনৈতিক বাস্তবতায় বাংলাদেশের জন্যে সবথেকে বেশি প্রয়োজন নিজেদের রাজনৈতিক চিন্তাকে পাঁচ দশকের নতজানু অবস্থান থেকে সরিয়ে আদর্শিক চিন্তার দিকে ধাবিত করা। এছাড়াও প্রয়োজন রয়েছে নিজেদের ভূকৌশলগত অবস্থানকে 'হোলিস্টিক'ভাবে মূল্যায়ন করা; যাতে করে সামগ্রিকভাবে একটা প্রতিরক্ষা কৌশলের দিকে অগ্রগামী হওয়া সম্ভব হয়। এরূপ একটা কৌশলে উপনীত হবার মাধ্যমে প্রতিরক্ষা সেক্টরকে শক্তিশালী করার জন্যে শক্তিশালী সিদ্ধান্ত নেয়া সম্ভব হবে। যুদ্ধ আসছে জেনে শুধু কথায় প্রস্তুতি নিলেই হবে না; গুরুত্বের ক্রম অনুধাবন করে কাজে দেখাতে হবে। সার্বভৌমত্ব এই ক্রমের মাঝে কোথায় স্থান পাবে, তা আজ কেউ প্রশ্ন না করলেও পরাধীনতার স্বাদ নেয়ার পর প্রধান আলোচ্য বিষয় হবে। আজকে কাজ না করার স্বপক্ষে কোন যুক্তিই আগামীকালকের ব্যর্থতার পর কারুর কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আজকের অদূরদর্শীতা আগামীকালকে জনগণের কাছে দেশদ্রোহীতার সমতুল্য হবে। কারণ ব্যর্থতার দায় কেউই নিতে চাইবে না।
সূত্রঃ
‘French Navy tests one-way attack USV against target at sea’ in Naval News, 29 April 2025
‘French Navy conducts trials with Exail DriX USV’ in Naval News, 18 March 2025
‘French Navy experiments new unmanned systems to support amphibious operations’ in Naval News, 18 March 2025
‘French Navy Tests iXblue’s DriX Unmanned Surface Vessel’ in Naval News, 02 November 2020
‘‘World’s first’ autonomous surface drone system delivered’ in Naval Today, 10 February 2025
‘French Navy steps up USV development and delivery ’ in Naval News, 27 January 2025
‘French Navy Experiments Weaponized Drone Jet Ski for Remote Naval Attacks Without Risking Crews’ in Army Recognition, 29 April 2025
‘France’s Naval Group unveils Seaquest, its first unmanned surface vessel’ in Breaking Defense, 05 November 2024
‘Seaquest S System Successfully Deployed on French Navy FREMM Frigate’ in Army Recognition, 08 November 2024
‘Turkey’s ‘ULAQ’ USV Completes Firing Tests with New Weapon System’ in Naval News, 24 January 2022
‘Türkiye's Okhan USV successfully completes tests’ in Turkiye Today, 20 January 2025
‘Qatar orders Turkish Ulaq USV’ in Janes’, 01 November 2024
‘Turkish Navy successfully tests Albatros S kamikaze naval drone’ in Army Recognition, 09 October 2023
‘For the First Time in the World, a Swarm Attack Concept was Carried Out in a Joint USV-UAV Operation!’ in Defence Turkey, 09 October 2023
‘Turkish “MIR” USV test-fires torpedo for the first time’ in Newsatsea, 19 April 2023
‘Turkey’s Aselsan demonstrates new swarm USV capabilities’ in Naval News, 20 June 2022
পলিসি মেকারদের চিন্তা কি করে বড় পোস্ট পাওয়া যায়, কি করে ক্ষমতা ধরে রাখা যায়। আর বৃটিশদের রেখে যাওয়া বড় প্রতিবেশিত আছেই। আলেম ওলামারা অনেক কথা বলবেন কিন্তু রিসার্চের কথা বলবেনা। তাছাড়া আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি খুবই সংকীর্ণ। আমরা দূর চিন্তা করতে পারিনা।
ReplyDeleteআর দেশের সামরিক শিল্পে বসুন্ধরা,মেঘনা গ্রুপের মত বড় বড় বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আগায়ে আসলে তখন ভালো কিছু সম্ভব হতে পারে। অবশ্য এক টাকার জিনিস research+production cost মিলায়ে দশ টাকায় খরিদ করলে আবার সেই অর্থনীতির বারোটা বাজবে।
বর্তমান ব্যবস্থার এটাই সমস্যা। সকলেই স্বার্থকেন্দ্রিক চিন্তা করছে - সাধারণ জনগণ থেকে শুরু করে একেবারে সর্বোচ্চ নেতা পর্যন্ত সকলেই ব্যক্তিগত স্বার্থ ছাড়া চিন্তা করে না। এটা ব্যবস্থাগত সমস্যা; এটার জন্যে একজন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীকে দোষারোপ করা যাবে না। যদি মানুষকে শেখানোই হয় যে, তুমি বেনেফিট ছাড়া কোন কাজ করবে না, তাহলে আপনি তাকে কিভাবে দোষ দেবেন? সে তো জন্মের পর থেকেই এই শিক্ষাই পেয়ে এসেছে। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরাও তো এই একই সমাজেরই অংশ। কাজেই কেউই আশা করতে পারে না যে, নেতৃস্থানীয় ব্যক্তিরা সাধারণ মানুষ থেকে আলাদা কিছু হবে। ব্যবস্থাগত পরিবর্তন আনতে না পারলে এই সমস্যাগুলির সমাধান হবে না।
Deleteদেশের কৌশলগত শিল্পে শীর্ষস্থানীয় শিল্পপতিরা বিনিয়োগ করবে কিনা, সেটা অবশ্য আরেক প্রশ্ন। তারা ব্যাংকিং সিস্টেম থেকে কম অর্থ সরায়নি। তারা অনেক ব্যবসায় বিনিয়োগ করেছে। লাভ রয়েছে বলেই সেগুলিতে তারা বিনিয়োগ করেছে। কিন্তু এমন অনেক সেক্টর রয়েছে, যেগুলিতে লাভ থাকা সত্ত্বেও তারা কোন বিনিয়োগ করেনি বা করছে না। এখানেই সমস্যা। তারা যদি স্বার্থই দেখবে, তাহলে সেই সেক্টরগুলিতেও তো স্বার্থ দেখা যেতো। সেটা তারা কেন করে না? রাষ্ট্রের সকল সেক্টরেই চুরি হয়; কোথায় হয় না? কিন্তু এরপরেও বিভিন্ন সেক্টরে তো বিনিয়োগ হয়েছে। তাহলে সেই বিনিয়োগগুলি কেন কৌশলগত সেক্টরে নয়? এই দেশে স্টিলের প্লেট তৈরির সক্ষমতা রয়েছে; কিন্তু অদৃশ্য কারণে সেটা এখনও হচ্ছে না; সকল স্টিল প্লেট বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। লক্ষ লক্ষ সিলিং ফ্যান তৈরি হচ্ছে; যেগুলি প্রত্যেকটাই একেকটা ইলেকট্রিক মোটর। অথচ ইলেকট্রিক মোটর তৈরির কোন ফ্যাক্টরি কেউ করছে না; লক্ষ লক্ষ মোটর বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। দেশে ডিজেল ইঞ্জিন বানানোর কারখানা রয়েছে পাঁচ দশকের উপরে। অথচ ডিজেল ইঞ্জিন তৈরি হচ্ছে না; সব ইঞ্জিন বিদেশ থেকে আমদানি করা হচ্ছে। এগুলির চাইতে অনেক বেশি জটিল জিনিস বাংলাদেশে তৈরি হয়।
বাংলাদেশের পাট বিদেশে রপ্তানি হবার পর তা দিয়ে কৌশলগত ইঞ্জিনিয়ারিং দ্রব্য তৈরি হয়। অথচ যখন তাদেরকে বলা হয় যে, ঐ জিনিসগুলি নিজেরা তৈরি করেন, তখন তারা বলছেন যে, এগুলি আকাশ-কুসুম চিন্তা! এগুলি দাসসুলভ মেন্টালিটি ছাড়া আর কিছুই নয়। আর সিএনসি মেশিন আসার পর থেকে বাংলাদেশে প্রায় যেকোন প্রিসিশন আইটেম তৈরি করা সম্ভব। ইচ্ছা থাকলে অনেক কিছু সম্ভব। এর মাঝে অনেকেই প্রমাণ করেছেন যে, আসলে অনেক কিছুই তৈরি করা যায়।
২০১৫/১৬ সালের দিকে চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইনসে কুনমিং থেকে বাংলাদেশে আসছি, পাশে একজন বাংলাদেশী ব্যবসায়ী ভাই এর সীট পড়েছে।
Deleteসাধারণত আমি বাড়তি কৌতুহল দেখিয়ে আলাপ শুরু করি না, তবে ওই পক্ষ থেকে আগ্রহ থাকলে আপত্তি করি না।
তো সেবার উনার আগ্রহেই আলাপ শুরু হয়। ভদ্রলোক ব্যাটারি আমদানি করেন বাংলাদেশে। বেশ বড় এমাউন্টে আমদানি করেন।
আমি উনার আমদানি ভলিউম শুনে অবাক হয়ে বললাম যে আপনি নিজে কেন ফ্যাক্টরি দেন না?
উনি খুব নিরাশ হয়ে উত্তর দিলেন যে ভাই দিয়েছিলাম ফ্যাক্টরী। প্রায় ২০/২৫ টা লাইসেন্স ও অনুমোদন নিয়ে প্রোডাকশন শুরু করার পর শুরু হয় আয়কর ও ভ্যাট অধিদপ্তরের চলাফেরা।
উনি হিসেব করে আমাকে বললেন যে, আমি একটা ব্যাটারি ইম্পোর্ট করে যেই ট্যাক্স দেই তারচেয়ে বেশি দেওয়া লাগে বাংলাদেশে প্রোডাকশন করতে। তাহলে আমি কেন বাংলাদেশে ফ্যাক্টরী দিবো?
আমি নিরুত্তর রইলাম আর বাহিরের সুন্দর সুন্দর মেঘ দেখতে থাকলাম।
আপনাদের কাছে আছে এর উত্তর?
-- facebook থেকে সংগৃহীত।
ভালো উদাহরণ দিয়েছেন। এরকম উদাহরণ আপনি আরও হাজারটা দিতে পারবেন। এগুলি হলো ফ্রি মার্কেট ইকনমির থিউরি। আপনার সরকারের যা আয়ের প্রয়োজন হবে, তা আপনি আমদানি শুল্কের মাধ্যমে আয় করবেন না; বরং আপনি আয় করবেন জনগণের উপর কর আরোপের মাধ্যমে। এই কর আসবে আয়কর, ভ্যাট, এআইটি এবং আরও অন্যান্য অনেক প্রকারের করের মাধ্যমে। এই ফর্মূলা দিয়েছে পশ্চিমারা - প্রথমে ব্রিটিশরা। ফ্রি মার্কেট ব্রিটিশরা তখনই নিয়েছে, যখন তারা সারা দুনিয়াতে উপনিবেশ করে ফেলেছে এবং উপনিবেশ থেকে আমদানি তাদের অন্যান্য যেকোন অর্থনৈতিক কর্মকান্ড থেকে বেশি। কাজেই আমদানি শুল্ক শূণ্য করে ফেলাটাই যুক্তিযুক্ত ছিল তাদের জন্যে। তবে সমস্যা হলো, তারা এই থিউরিকে সারা দুনিয়াতে ফেরি করে বেরিয়েছে। আর দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়াকে তাদের উপরে নির্ভরশীল করে রাখার জন্যে এই থিউরি বাস্তবায়ন করেছে। এই থিউরির বাস্তবায়ন হয়েছে ডব্লিউটিও, বিশ্বব্যাংক, আইএমএফ-এর মতো সংস্থাগুলির মাধ্যমে। আপনি এই সংস্থাগুলিতে সদস্য দেশ হলে আপনাকে মুচলেকা দিতে হবে যে, আপনি ফ্রি মার্কেটের দিকে যাবেন; সেটা আপনার জনগণের জন্যে কষ্টকর হলেও আপনি সেটা করবেন। বাংলাদেশে আজকে সেটাই আপনি দেখতে পাচ্ছেন। যেটা বাংলাদেশ তৈরি করতে পারতো এবং যেটা তৈরি করলে বাংলাদেশ বিশ্বে গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্র হতে পারতো, সেগুলি তৈরি না করে বাংলাদেশ তৈরি করেছে সেই পণ্যগুলি, যেগুলি পশ্চিমা দেশগুলি বাংলাদেশকে তৈরি করতে বলেছে। তারা বলেছে যে, এইসব পণ্যের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে পশ্চিমা দেশগুলিতে; তাই বাংলাদেশের উচিৎ সেসব পণ্য তৈরি করা। আর বাকি পণ্য আমদানি করে চলা। অর্থাৎ বাংলাদেশ সর্বদাই আমদানি-রপ্তানি বা বহির্বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল থাকবে। আর যেহেতু বহির্বাণিজ্যের জন্যে মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হয়, তাই বাংলাদেশ সর্বদা মার্কিন ডলারের একটা মজুত রাখবে। এভাবে একদিকে বাংলাদেশ বহির্বাণিজ্যের উপর নির্ভরশীল থাকবে এবং বিশ্বব্যাপী মার্কিন ডলারের চাহিদাকে জিইয়ে রাখতে সহায়তা করবে। আশা করি উত্তরটা পেয়েছেন।
Delete