Saturday, 19 April 2025

আসন্ন ভূরাজনৈতিক ঝড়ের জন্যে বাংলাদেশ কতটা প্রস্তুত?

২০শে এপ্রিল ২০২৫

সবগুলি ঘটনা দেখিয়ে দিছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সামরিক সংঘাতের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একারণে বাকি বিশ্বও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামরিক শক্তি তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে। বাংলাদেশ কি এই ব্যাপারগুলি সম্পর্কে অবহিত রয়েছে? অনুধাবন করার এই ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের সামনে প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে দুই বছর রয়েছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না! অন্য কথা বলতে গেলে, সময় এখন আপাততঃ মাসের হিসেবে এগুচ্ছে!


ইউক্রেনের পর যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপ থেকে তার সামরিক শক্তি সরিয়ে নেবার প্রসেস শুরু করেছে। মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের মিউনিখ বক্তব্য যারা শুনেছেন, তাদের এই ব্যাপারটা বুঝে নিতে এক মুহুর্তও লাগার কথা নয়। মধ্যপ্রাচ্যে সিরিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র তার সামরিক শক্তিকে অর্ধেক করে তুরস্কের হাতে দায়িত্ব ছেড়ে দিচ্ছে। এখন তুরস্ক ইস্রাইলের নিরাপত্তা দেবে। একইসাথে ইরানকে, বিশেষ করে ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পকে নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে বিপুল সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। উদ্দেশ্য হলো, ইরানকে ভয় দেখিয়ে চুক্তি করতে বাধ্য করা; যাতে করে ইস্রাইলের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা যায়। এগুলির অর্থ হলো - যুক্তরাষ্ট্র সারা দুনিয়া থেকে সামরিক শক্তি সরিয়ে নিয়ে ইন্দোপ্যাসিফিকে মোতায়েন করছে। যুক্তরাষ্ট্রের নিজেদের জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতা চীনাদের তুলনায় নস্যি; চীনের একটা শিপইয়ার্ডের সক্ষমতা সমস্ত যুক্তরাষ্ট্রের জাহাজ নির্মাণ সক্ষমতার চাইতে বেশি! তাই যুক্তরাষ্ট্র এখন কোরিয়াকে নিয়োজিত করতে চাইছে মার্কিন নৌবহরের জন্যে যুদ্ধজাহাজ নির্মাণে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের বাণিজ্যযুদ্ধও ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। বিশেষ করে সেমিকন্ডাক্টর, রেয়ার আর্থ ম্যাটেরিয়াল, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স, ফাইভ-জি প্রযুক্তি, ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতা এখন যুদ্ধাবস্তা প্রায়। এই সবগুলি ঘটনা দেখিয়ে দিছে যে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সাথে সামরিক সংঘাতের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একারণে বাকি বিশ্বও সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে সামরিক শক্তি তৈরির দিকে মনোনিবেশ করছে। বাংলাদেশ কি এই ব্যাপারগুলি সম্পর্কে অবহিত রয়েছে? অনুধাবন করার এই ব্যাপারটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ বাংলাদেশের সামনে প্রস্তুতি নেয়ার জন্যে দুই বছর রয়েছে কিনা, সেটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না! অন্য কথা বলতে গেলে, সময় এখন আপাততঃ মাসের হিসেবে এগুচ্ছে!

প্রথমতঃ বাংলাদেশকে স্বনির্ভর অর্থনীতি গড়ে তুলতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব বিদেশ-নির্ভরতা থেকে বের হয়ে আসতে হবে; বিশেষ করে খাদ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে। কারণ দুনিয়াতে একটা যুদ্ধাবস্থা তৈরি হবার সাথেসাথেই বৈদেশিক বাণিজ্য-কেন্দ্রিক সুন্দর সুন্দর স্বপ্ন বাতাসে মিলিয়ে যাবে! কোন কোন পণ্য বাংলাদেশের না হলেই নয়, সেগুলির একটা তালিকা করতে হবে এবং সেগুলিকে যথাসম্ভব দেশে উৎপাদনের জন্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালাতে হবে। কিছু পণ্য বাইরে থেকে আনতেই হবে। সেগুলির উৎস নিয়ে গভীর চিন্তা ব্যয় করতে হবে - কোথা থেকে কিভাবে সেগুলি আনা সম্ভব হবে; এবং সেগুলির বাণিজ্যপথের নিরাপত্তা কিভাবে দেয়া যাবে। এক্ষেত্রে কোন কোন দেশ বাংলাদেশের দুর্যোগের সময় সাথে থাকতে পারে, তার একটা তালিকা করতে হবে। যেসকল দেশের উপর নির্ভর করা কঠিন, বা যেগুলি বাংলাদেশকে তাদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করতে পারে, সেগুলিকে তালিকা থেকে বাদ দিতে হবে - এখানে কোন ভালোবাসার সম্পর্ক রাখা যাবে না।

 
ডিজেল ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক মোটর এবং কম্প্রেসারের উৎপাদন করার জন্যে ফ্যাক্টরি দিতে হবে। এগুলি খুব জটিল কোন ইন্ডাস্ট্রি নয়। সদিচ্ছা থাকলে এসব ফ্যাক্টরি করতে এক বছরও লাগার কথা নয়। এই তিনটা জিনিস ছাড়া কোন ইন্ডাস্ট্রিই তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এগুলির জন্যে আমদানির উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল।



দ্বিতীয়তঃ যত দ্রুত সম্ভব কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল সক্ষমতা বাংলাদেশে গড়ে তোলার ব্যবস্থা করতে হবে।

১। ফ্ল্যাট স্টিলের উৎপাদন শুরু করতে হবে। বর্তমানে উৎপাদিত স্টিল প্লেটের মান যথেষ্ট নয়। বাংলাদেশে একাধিক ফ্যাক্টরি রয়েছে, যেগুলিতে ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেস বা ইএএফ চুল্লি রয়েছে। এসব চুল্লিতে তৈরি স্টিলের মান ফ্ল্যাট স্টিলের জন্যে সঠিক মানের (বিশুদ্ধতা বিবেচনায়)। ফ্ল্যাট স্টিল ছাড়া কোন কৌশলগত সামগ্রী তৈরি করা যাবে না; বিশেষ করে যানবাহন তৈরি করতে গেলে ফ্ল্যাট স্টিল লাগবেই।

২। ডিজেল ইঞ্জিন, ইলেকট্রিক মোটর এবং কম্প্রেসারের উৎপাদন করার জন্যে ফ্যাক্টরি দিতে হবে। এগুলি খুব জটিল কোন ইন্ডাস্ট্রি নয়। সদিচ্ছা থাকলে এসব ফ্যাক্টরি করতে এক বছরও লাগার কথা নয়। এই তিনটা জিনিস ছাড়া কোন ইন্ডাস্ট্রিই তৈরি করা সম্ভব নয়। বর্তমানে বাংলাদেশ এগুলির জন্যে আমদানির উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল।

৩। পেট্রোকেমিক্যাল এবং বেসিক কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে হবে। মিথানলের উৎপাদন বাংলাদেশে শুরু হয়ে গিয়েছে। এখন মিথানলের পরের পণ্যগুলিকে উৎপাদনে নিয়ে আসতে হবে। নাইট্রিক এসিড, ফরমালডিহাইড, এমোনিয়া এবং এগুলির মাধ্যমে তৈরি আরও কিছু যৌগ রয়েছে, যেগুলি উৎপাদন না করতে পারলে এক্সপ্লোসিভ ইন্ডাস্ট্রি করা সম্ভব নয়। আর এক্সপ্লোসিভ উৎপাদন না করতে পারলে সামরিক শক্তি তৈরির কথা ভুলে যেতে হবে। প্লাস্টিকের ধরণগুলির মাঝে শুধুমাত্র পিভিসি উৎপাদনে গিয়েছে বাংলাদেশে। এখানে পিইউ, পিএস, পিইটি, ইত্যাদি রেজিনের উৎপাদন শুরু করতে হবে যত দ্রুত সম্ভব। কারণ এগুলি ছাড়া কম্পোজিট ম্যাটেরিয়াল তৈরি করা যাবে না।

৪। সিএনসি মেশিন যত বেশি সম্ভব আনার ব্যবস্থা করতে হবে এবং দেশেই সিএনসি মেশিন তৈরির ব্যবস্থা করতে হবে। বর্তমানে বেশিরভাগ সিএনসি মেশিন হলো মিলিং মেশিন, ডব্লিউডিএম; কিছু লেজার কাটিং মেশিনও রয়েছে। একইসাথে সিএনসি লেদ মেশিন প্রয়োজন অনেক। দেশে এই মুহুর্তে লেদ মেশিন (নন সিএনসি) তৈরির সক্ষমতা রয়েছে। এটাকে আরও বাড়াতে হবে; সাথে মিলিং, সারফেস গ্রাইন্ডিং, শিয়ারিং, ইত্যাদি বেসিক মেশিন তৈরির সক্ষমতাকে আরও বাড়াতে হবে। বিএমটিএফ, বিওএফ, ইএমই ওয়ার্কশপ, ওয়াল্টন এবং আরও কিছু কারখানায় টুলস তৈরি করা হয়। এই সক্ষমতাগুলিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে এবং দীর্ঘস্থায়ীত্ব দিতে হবে।

৫। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের নিজস্ব কিছু ইন্ডাস্ট্রিয়াল প্ল্যান্ট ডিজাইন, কম্পোনেন্ট উৎপাদন এবং ইন্সটলেশনের সক্ষমতা রয়েছে। এগুলিকে আরও একধাপ এগিয়ে নিতে হবে। নলেজ বেইজটাকে আরও বাড়াতে হবে এবং ইন্সটিটিউশনাল জ্ঞানসম্পন্ন নতুন ইঞ্জিনিয়ারদেরকে এসব ক্ষেত্রে জড়িত করতে হবে।

৬। ইলেকট্রনিক্স ইন্ডাস্ট্রিকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। টেলিকমিউনিকেশন, রাডার, জিপিএস এবং স্যাটকমসহ ইলেকট্রোম্যাগনেটিক স্পেকট্রাম নিয়ে কাজ করা সকল ধরণের যন্ত্র উৎপাদন শুরু করতে হবে। রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংএর যন্ত্রের সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করতে হবে; বিশেষ করে মাল্টিলেয়ার পিসিবি তৈরির মেশিন, প্রোটোটাইপিং মেশিন, অটোম্যাটিক টেস্টিং ইকুইপমেন্ট, ইত্যাদির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। লিথিয়াম ব্যাটারির উৎপাদন (শুধু সংযোজন নয়) শুরু করতে হবে। ইপিজেডগুলিতে এই মুহুর্তে কিছু অপটিক্যাল সরঞ্জাম তৈরি হয়। এগুলি বাংলাদেশের জন্যে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ইলেকট্রো-অপটিক্যাল ইন্সট্রুমেন্ট তৈরির সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। কোন যুদ্ধাস্ত্রই এসকল সরঞ্জাম ছাড়া কার্যকর হবে না।

৭। টায়ার তৈরির সক্ষমতা বাড়াতে হবে; বিশেষ করে রেডিয়্যাল টায়ার। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগে কিছু বিদেশী শক্তি এদেশের গাজী টায়ার ফ্যাক্টরি ধ্বংস করে ফেলে। এটা ছিল বাংলাদেশের একমাত্র ফ্যাক্টরি, যেখানে ট্রাকে ব্যবহার করা কমার্শিয়াল ভেহিকল টায়ার তৈরি করা হতো। এটা ধ্বংস করে ফেলার কারণে ট্রাক টায়ার ভারত থেকে আনা ছাড়া কোন পদ্ধতিই থাকেনি। এই অবস্থা চলতে দেয়া যায় না। চীনের প্রযুক্তিতে আরও একটা টায়ার ফ্যাক্টরি (রেডিয়্যাল টায়ারসহ) তৈরি হবার প্রসেস শুরু হলেও সেটার ভবিষ্যৎ অনেক আগেই অনিশ্চিত হয়ে গিয়েছে। টায়ার তৈরির ফ্যাক্টরি এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ – সকল প্রকারের টায়ার তৈরির সক্ষমতা প্রয়োজন।

৮। গ্লাস তৈরির সক্ষমতাকে নতুন ধাপে নিয়ে যেতে হবে। বুলেটপ্রুফ গ্লাস এবং ফাইটার বিমানের ককপিটের ক্যানোপি তৈরির সক্ষমতা প্রয়োজন।

৯। আর্মার প্লেট এবং সিরামিক আর্মার তৈরির সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে বাংলাদেশে সিরামিক এবং গার্মেন্টস শিল্পে কিছু বিশেষ দক্ষতা রয়েছে; যেগুলিকে সমন্বয় করতে হবে।
 
বর্তমানে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের সংখ্যা বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়। ইউক্রেনে ৫০টার মতো বিমানবন্দর থাকার কারণে তারা রুশ হামলা থেকে তাদের বিমান বাহিনীর বিমানগুলিকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পেরেছে। ইউক্রেনের তুলনায় আকৃতিতে বাংলাদেশ অনেক ছোট। কাজেই বাংলাদেশের পুরাতন সকল বিমানবন্দরের রানওয়ে নতুন করে তৈরি করতে হবে। এছাড়াও নতুন করে বহু স্থানে রানওয়ে তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে যতগুলি হাইওয়ে রয়েছে, তার সকল স্থানে খুঁজে দেখতে হবে যে, কোথায় কোথায় ফাইটার বিমান ওঠানামা করার মতো দীর্ঘ রানওয়ে তৈরি করা যায়।



তৃতীয়তঃ কৌশলগত অবকাঠামো নির্মাণে মনোনিবেশ করতে হবে।

১। বিমানবন্দরের সংখ্যা বাড়াতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের বিমানবন্দরের সংখ্যা বিমান বাহিনীর যুদ্ধবিমানগুলিকে সুরক্ষা দেয়ার জন্যে যথেষ্ট নয়। ইউক্রেনে ৫০টার মতো বিমানবন্দর থাকার কারণে তারা রুশ হামলা থেকে তাদের বিমান বাহিনীর বিমানগুলিকে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করতে পেরেছে। ইউক্রেনের তুলনায় আকৃতিতে বাংলাদেশ অনেক ছোট। কাজেই বাংলাদেশের পুরাতন সকল বিমানবন্দরের রানওয়ে নতুন করে তৈরি করতে হবে; যাতে করে মোটামুটিভাবে পরিবহণ বিমান হলেও যেন ওঠানামা করতে পারে। এছাড়াও নতুন করে বহু স্থানে রানওয়ে তৈরি করতে হবে। বিশেষ করে যতগুলি হাইওয়ে রয়েছে, তার সকল স্থানে খুঁজে দেখতে হবে যে, কোথায় কোথায় ফাইটার বিমান ওঠানামা করার মতো দীর্ঘ রানওয়ে তৈরি করা যায়। সেই স্থানগুলির সারফেসকে আরও শক্তিশালী করতে হবে। ভারত ইতোমধ্যেই হাইওয়েতে ফাইটার বিমান নামানোর পরীক্ষা চালিয়ে ফেলেছে।

২। নদীবন্দরের সংখ্যা কয়েকগুণ বাড়াতে হবে। প্রকৃতপক্ষে বেশকিছু নদীবন্দর রয়েছে বর্তমানে; সেগুলিকে নতুন অবকাঠামো যোগ করে সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। এর মাঝে প্রথমেই থাকবে ড্রেজিং। নদীপথে নাব্যতা না থাকলে নদীবন্দর দিয়ে কি হবে? নাব্যতা নিশ্চিত করতে ড্রেজার এবং আনুসাঙ্গিক যন্ত্রপাতির সংখ্যা বাড়াতে হবে। ড্রেজারের ভেসেলগুলি বাংলাদেশে তৈরি হলেও ড্রেজারের কাটিং মেশিন এবং ডিজেল ইঞ্জিন আমদানির উপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে নিজস্ব সক্ষমতা তৈরি করতে হবে।

৩। শিপবিল্ডিংএর ক্ষেত্রে সক্ষমতা আরও বৃদ্ধি করতে হবে; বিশেষ করে খুলনা শিপইয়ার্ড ও নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডের তত্ত্বাবধানে আরও অনেক স্থানে উচ্চমানের জাহাজ তৈরির ফ্যাসিলিটি গড়ে তুলতে হবে। এক্ষেত্রে অভ্যন্তরীণ জাহাজ তৈরির জন্যে বরিশাল ও পটুয়াখালি এলাকা, চাঁদপুর, মুন্সিগঞ্জ, গজারিয়া, ভৈরব, আশুগঞ্জ, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা ভালো এলাকা হতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার এবং খুলনা অঞ্চলকে সমুদ্রগামী জাহাজ তৈরির জন্যে আলাদাভাবে গড়ে তোলা যেতে পারে।


জানুয়ারি ২০২৫। মিয়ানমার নৌবাহিনীর ফ্রিগেট পানিতে ভেসেছে। তাদের প্রথম ফ্রিগেটটা পানিতে ভেসেছে ১৩ বছর আগে। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত ফ্রিগেট তৈরির উপযোগী একটা ডকইয়ার্ডও তৈরি করতে পারেনি! এই লজ্জা নিয়েই বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন।


চতুর্থতঃ সামরিক ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তোলার দিকে মনোনিবেশ করতে হবে।

১। বিমান সংযোজন ও নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশ 'পিটি-৬', ‘বেল-২১২', ‘বেল-২০৬', ‘এমআই-১৭১' এবং 'এফ-৭' বিমান ওভারহোলিং করে থাকে। এছাড়াও 'গ্রোব জি-১২০টিপি' বিমানের কম্পোজিট স্ট্রাকচার তৈরির সক্ষমতাও রয়েছে। বাংলাদেশ বিমান বাহিনী অতি সম্প্রতি নিজস্ব দু'টা প্রোটোটাইপ বিমান তৈরি করে উড্ডয়ন করেছে। এই সক্ষমতাগুলিকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে হবে। বিমান সংযোজনের সক্ষমতাকে কাজে লাগাতে হবে এবং ফাইটার বিমান নির্মাণের সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

২। নৌবাহিনীর ফ্রিগেট তৈরির সক্ষমতা অর্জন করার কথা ছিলো কয়েক বছর আগেই। মিয়ানমার তাদের নৌবাহিনীর জন্যে প্রথম ফ্রিগেট পানিতে ভাসিয়েছে ১৩ বছর আগে। বাংলাদেশ এখনও পর্যন্ত ফ্রিগেট তৈরির উপযোগী একটা ডকইয়ার্ডও তৈরি করতে পারেনি! এই লজ্জা নিয়েই বাংলাদেশের নেতৃবৃন্দ সুখে শান্তিতে দিন কাটাচ্ছেন।

৩। ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। সকল প্রকারের ক্ষেপণাস্ত্র তৈরির সক্ষমতা প্রয়োজন। এন্টি-ট্যাঙ্ক, ম্যানপ্যাডস, শোরাড, মিডিয়াম রেঞ্জ এয়ার ডিফেন্স, এন্টি-শিপ, এয়ার-টু-সারফেস, এয়ার-টু-এয়ার, সারফেস-টু-সারফেস ব্যালিস্টিক, সারফেস-টু-সারফেস ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করা প্রয়োজন। এই মুহুর্তে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র ওভারহোলিং (এবং প্রয়োজনে এসেম্বলি) করার সক্ষমতা রয়েছে; যেগুলিকে পরের ধাপে নিয়ে যেতে হবে।

৪। ড্রোন তৈরির কারখানা তৈরি করতে হবে। ড্রোন বহু প্রকারের; তবে এর মাঝে কিছু প্রকারের ড্রোনকে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে। গোয়েন্দা কাজের জন্যে ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর (উপরে আলোচিত) সমৃদ্ধ ড্রোন প্রয়োজন। আর আক্রমণকারী ড্রোন হিসেবে 'ফার্স্ট পারসন ভিউ' বা 'এফপিভি' ড্রোন তৈরি করতে হবে। এই ড্রোনগুলি কোয়াডকপ্টার, হেক্সাকপ্টার, অক্টাকপ্টার, ফিক্সড-উইং হতে পারে। এই ড্রোনের প্রপালশন হিসেবে বিভিন্ন আকৃতির ইলেকট্রিক মোটর (উপরে মোটরের কারখানার কথা আলোচিত হয়েছে) এবং ছোট পেট্রোল ইঞ্জিন (মূলতঃ মোটরসাইকেল ইঞ্জিন) তৈরির কারখানা বসাতে হবে। এগুলিতে ব্যবহার করা জিপিএস, রিমোট-কন্ট্রোল কমিউনিকেশন ডিভাইস, লিথিয়াম ব্যাটারির (উপরে আলোচিত) আলাদা কারখানা প্রয়োজন। অনেক ক্ষেত্রেই এগুলির বডি (বিশেষ করে এফপিভি ড্রোনের) কার্বন-ফাইবার ম্যাটেরিয়াল দিয়ে তৈরি করতে হয়। কার্বন-ফাইবার কিভাবে যোগাড় করা যায়, অথবা কিভাবে এগুলি নিজেদের দেশে উৎপাদন করার প্রযুক্তি আনা যায়, সেটা খুঁজতে হবে।

৫। আর্টিলারি কামান তৈরির কারখানা প্রয়োজন। ইউক্রেন যুদ্ধ প্রমাণ করেছে যে, ন্যাটোর মতো এয়ার সুপেরিয়রিটি না থাকলে (যেটার ব্যাপারে এখন অনেকেই সন্দিহান) যেকোন দেশকে আর্টিলারির উপরেই নির্ভর করতে হবে। ১০৫মিঃমিঃ এবং ১৫৫মিঃমিঃ আর্টিলারি ব্যারেল অবশ্যই তৈরি করতে হবে। ১০৫মিঃমিঃ, ১৫৫মিঃমিঃ আর্টিলারি এমুনিশন তৈরির ব্যাপক সক্ষমতা প্রয়োজন। এছাড়াও আরও দূরের পাল্লার টার্গেটে আঘাত করার লক্ষ্যে ১২২মিঃমিঃ, ২৩০মিঃমিঃ, ৩০০মিঃমিঃ আর্টিলারি রকেটের কারখানা করতে হবে। এছাড়াও বিমান বিধ্বংসী কামান তৈরির সক্ষমতা প্রয়োজন। ২০মিঃমিঃ অথবা ১৪ দশমিক ৫মিঃমিঃ (যেকোন একটা), ৩৫ অথবা ৩৭মিঃমিঃ (যেকোন একটা), ৫৭মিঃমিঃ কামান নিজস্ব কারখানায় তৈরি করতে হবে। এগুলির সাথে ব্যবহার করার জন্যে নিজস্ব তৈরি ইলেকট্রো-অপটিক ডিভাইস এবং রাডারের সমন্বয় করতে হবে।

৬। সামরিক অফরোড গাড়ির কারখানা তৈরি করতে হবে। এগুলি সকল প্রকারের পরিবহণ ছাড়াও আর্টিলারি ট্রাকটর হিসেবে কাজ করবে। এগুলির মাঝে 'বাগি' প্রকারের হাল্কা যানও প্রয়োজন, যেগুলি মোটরসাইকেলের সাথে চলার উপযোগী। বাংলাদেশের ভূপ্রকৃতিতে এধরণের যানবাহন উপযোগী হবে। বেশকিছু গাড়ি প্রয়োজন, যেগুলি উভচর হবে; অর্থাৎ নদী-খাল-বিল পার হতে পারবে। গাড়িগুলিকে পরিবর্তিত করেই এধরণের উভচর যান তৈরি করা সম্ভব। এসকল গাড়িতে ব্যবহারের জন্যে ডিজেল ইঞ্জিন, স্টিল প্লেট, আর্মার, বুলেটপ্রুফ গ্লাসের কারখানার কথা উপরে উল্লিখিত হয়েছে।

৭। বন্দুকের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। এই মুহুর্তে বাংলাদেশের এসল্ট রাইফেল তৈরির সক্ষমতা মোটেই যথেষ্ট নয়। অতি দ্রুত এই উৎপাদন সক্ষমতাকে কয়েক গুণ করতে হবে। একইসাথে ৭ দশমিক ৬২মিঃমিঃ জিপি মেশিন গান এবং ১২ দশমিক ৭মিঃমিঃ হেভি মেশিন গান (এয়ার ডিফেন্সের জন্যে) তৈরির সক্ষমতা তৈরি করতে হবে। এসকল বন্দুকের জন্যে ৭ দশমিক ৬২মিঃমিঃ (রাইফেল ও মেশিন গান) এবং ১২ দশমিক ৭মিঃমিঃ এমুনিশন উৎপাদন কয়েক গুণ করতে হবে।

৮। এয়ারড্রপ এমুনিশন এবং নেভাল মাইন তৈরির সক্ষমতা অর্জন করতে হবে।

এছাড়াও আরও বেশকিছু সামরিক সক্ষমতা রয়েছে, যেগুলি উল্লেখ করতে থাকলে তালিকা বড় হতেই থাকবে। কিন্তু উপরে উল্লেখ করা সক্ষমতাগুলি অর্জিত না হলে এর সাথে আরও কয়েক'শ সক্ষমতা যুক্ত করাটা অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।
 
কেউ কেউ এখনও দিবাস্বপ্নে বিভোর রয়েছেন। তাদেরকে বলতে হবে - ঘুম থেকে জেগে উঠুন! বাস্তবতা বুঝুন! উপরে উল্লিখিত বাংলাদেশের স্বনির্ভরতার ভিত্তিগুলি বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সহজ হবে না। কারণ রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ কোন আদর্শিক রাষ্ট্র নয়। তারা 'প্রোএকটিভ' নয়; বরং তারা বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রতিক্রিয়া (রিয়্যাকটিভ) হিসেবে কিছু পরিকল্পনা করে থাকে। যেকারণে বেশিরভাগ সময়ই তারা বাইরের শক্তির প্রভাব বলয়ে আবর্তিত হয়।


উপরে দেয়া তালিকার বাইরে বাংলাদেশকে আরও অনেক কিছুই করতে হবে। যেমন, অতি দ্রুত কয়েক স্কোয়াড্রন চীনা 'জে-১০' এবং পাকিস্তানি 'জেএফ-১৭' যুদ্ধবিমান যোগাড় করতে হবে। একইসাথে অফ-দ্যা-শেলফ কিছু ফ্রিগেট (চীনা এবং আর যেখানে পাওয়া যায়) যোগাড় করতে হবে; যেগুলি আনার পর সেগুলির সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে। নতুন জাহাজ তৈরি করতে কয়েক বছর লেগে যাবে; এখন সেই সময়টুকু আছে কিনা, তা সন্দেহ। পুরোনো জাহাজগুলির সাথে ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার এবং এয়ার, সারফেস ও সাব-সারফেস ড্রোনের সমন্বয় ঘটিয়ে সেগুলিকে সর্বোচ্চ ব্যবহারের উপযোগী করে প্রস্তুত করা যেতে পারে। এই মুহুর্তে সংখ্যা অতি গুরুত্বপূর্ণ একটা ব্যাপার; যা কোনভাবেই প্রতিস্থাপনীয় নয়। মধ্যম পাল্লার এয়ার ডিফেন্স ক্ষেপণাস্ত্র (চীনা এবং তুর্কি) অবশ্যই প্রয়োজন। এগুলি না থাকলে দেশের কোন স্থাপনাই রক্ষা করা সম্ভব হবে না।

ঝড় আসছে! কিন্তু বাংলাদেশ এই মুহুর্তে মোটেই প্রস্তুত নয়! বিপদে ভয় পাওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ। কারণ ভয় না পেলে অনেক সময়েই স্থবিরতা কাটিয়ে ওঠা যায় না। ভয় পেলেই শরীরের ডিফেন্সিভ মেকানিজম কাজ করা শুরু করে; আবার কোন কোন ক্ষেত্রে প্যারালাইসিসেও আক্রান্ত হতে পারে। দ্বিতীয়টা বাংলাদেশের জনগণ তাদের নেতৃত্বের কাছ থেকে কখনোই আশা করবে না। কিন্তু আশা না করলেই যে তা বাস্তবে হবে না, তার কোন গ্যারান্টি নেই। কারণ কেউ কেউ এখনও দিবাস্বপ্নে বিভোর রয়েছেন। তাদেরকে বলতে হবে - ঘুম থেকে জেগে উঠুন! বাস্তবতা বুঝুন! উপরে উল্লিখিত বাংলাদেশের স্বনির্ভরতার ভিত্তিগুলি বাস্তবে রূপ দিতে পারলেও দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষা করা সহজ হবে না। কারণ রাজনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশ কোন আদর্শিক রাষ্ট্র নয়। তারা 'প্রোএকটিভ' নয়; বরং তারা বৈশ্বিক ঘটনাপ্রবাহ দেখে প্রতিক্রিয়া (রিয়্যাকটিভ) হিসেবে কিছু পরিকল্পনা করে থাকে। যেকারণে বেশিরভাগ সময়ই তারা বাইরের শক্তির প্রভাব বলয়ে আবর্তিত হয়।

24 comments:

  1. এই সবগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠা এবং ফাংশানে আনতে কতো হাজার কোটি টাকা অতিরিক্ত বাজেট প্রয়োজন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. মাতারবাড়ি প্রকল্প এবং সেই প্রকল্প থেকে ত্রিপুরা পর্যন্ত রেল লিঙ্কের খরচের চাইতে কম হওয়ার কথা। আশা করি সেসব প্রকল্পের বাজেটের ব্যাপারে আপনার যথেষ্ট জানা আছে। আর এতেও যদি কম মনে হয়, তাহলে অন্তর্বর্তী সরকারের হিসেবে প্রতিবছর দেশ থেকে যে ১৬ বিলিয়ন ডলার পাচার করা হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়েছে, সেই ১৬ বিলিয়ন ডলার এইসকল কৌশলগত সেক্টরে বিনিয়োগ করলেই অর্থের স্বল্পতা থাকার কথা নয়।

      বাংলাদেশের একটা সমস্যা হলো, কৌশলগত সেক্টরে বিনিয়োগের প্রশ্ন উঠলেই অর্থ পাওয়া যায় না; পরিবেশগত সমস্যা শুরু হয়; আন্দোলনে রাস্তায় নামে মানুষ; মামলা ঠুকে দেয়া হয়; অথবা কোন অদৃশ্য কারণে প্রকল্পের প্রস্তাবই আর খুঁজে পাওয়া যায় না। এগুলি গত পাঁচ দশকে বহুবার ঘটেছে। অথচ অদরকারী প্রকল্পের জন্যে অর্থায়ন ঠিকই পাওয়া যায়। এমনকি দেশ-বিরোধী প্রকল্পের জন্যেও অর্থায়ন পাওয়া যায়। এভাবেই ভারতকে সুবিধা দেয়া প্রকল্পে বিনিয়োগের অভাব হয় না; অথচ ভারতকে মোকাবিলা করার কৌশলগত প্রকল্পের সময় বাংলাদেশ হয়ে যায় এলডিসি রাষ্ট্র!

      Delete
  2. পাচার হওয়া অর্থ ফেরত আসার সম্ভাবনা কতোটুকু?? ইউনুস তো ফেরত আনতে পারছে না। আমার কিছু প্রশ্ন আছে-
    ১. বাংলাদেশ যদি পারমাণবিক বোমার দিকে এগোয় তাহলে সময় কীরূপ লাগতে পারে আর বহির্বিশ্বের প্রতিক্রিয়া কেমন হতে পারে। সেইটা কি বাংলাদেশ ট্যাকেল দিতে পারবে বা ট্যাকেল দিতে হলে কি কর্মপদ্ধতি অবলম্বন করা উচিত।

    ২. বাংলাদেশে আমেরিকার ঘাটি হওয়া কি প্রায় নিশ্চিত?? এই বিষয় নিয়ে কি ইউনুস সরকার বা আর্মি একমত?

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রথমতঃ পাচার করা অর্থ ফেরত আনার সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ। তার কারণ হলো, যেসব দেশে সেই অর্থ গিয়েছে, সেসব দেশ সেই অর্থকে তাদের দেশে বিদেশী বিনিয়োগ হিসেবে দেখেছে। তারা কোন কারণে তাদের দেশ থেকে বিদেশী বিনিয়োগ বের করে দিতে চাইবে?

      দ্বিতীয়তঃ বাংলাদেশে আপাততঃ পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির কোনরূপ সম্ভাবনাই নেই। এর কারণ, বাংলাদেশের পারমাণবিক রিয়্যাক্টর থেকে ফুয়েল রড বের করা সম্ভব হবে না - এরকমই ডিজাইন করা হয়েছে এবং এই শর্তেই যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে পারমাণবিক চুল্লি তৈরি করার অনুমতি দিয়েছে।

      তৃতীয়তঃ আমেরিকা ঘাঁটি থাকলেও আপনি যে জানতে পারবেন, সেটার গ্যারান্টি কতটুকু? ১৯৮০এর দশকে পাকিস্তান যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিরুদ্ধে অস্ত্র ও লজিস্টিক্যাল সাপোর্ট দিয়েছিল। যুক্তরাষ্ট্রের সিআইএ-এর হাতে গোণা কয়েকটা লোক হয়তো পাকিস্তানে ছিল সেসময়। কোন ঘাঁটির প্রয়োজন হয়নি। পাকিস্তান যদি যুক্তরাষ্ট্রের হয়ে কাজটা করে দেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র খামোকা কষ্ট করে নিজেদের ঘাঁটি কেন তৈরি করবে?

      Delete
  3. আবুল মনসুর আহমেদ একটা কথা বলেছিলেন, বাঙালির শরীরটা থাকে এদেশে, মন পড়ে থাকে মধ্যপ্রাচ্যে। সেটা মেনে নিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেই একটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছি।
    মধ্যপ্রাচ্যে তুরস্ককে নিরাপত্তার দায়িত্ব এবং একই সাথে ইসরায়েলের নিরাপত্তার দায়িত্বও দেয়া হয়েছে। এই কথাটা মানতে কষ্ট হচ্ছে। আমি একজন enthusiast। Erdoan যে দুই নৌকায় পা রেখে চলে সেটা জানি। কিন্তু বিষয়টাকে অনেকেই pragmatism এর মোড়কে দেখেন, আমিও সেটাই মনে করে সান্তনা পাই। কিন্তু বিষয়টাকে আসলেই তাই। আপনার একটা লেখায় বলেছিলেন, সিরিয়ার ঘটনা প্রমাণ করে এটা হঠাৎ করেই হয়ে গিয়েছ, পশ্চিমা মোড়লদের পরিকল্পনা কাজ করে নাই। তুরস্ক important role play করেছে সেটাও সত্যি

    কিছুদিন আগে শুনেছিলাম, usrael মুসলিম নাতো গঠন করে মধ্যপ্রাচ্য থেকে বিদায় নেবে। এবং এজন্য ksa, iran, israel, turkey কে মনোনীত করেছে 0, এবং গ্রীন সিগন্যাল দিয়ে হয়েছে নির্দিষ্ট সময়ের মাঝে যতটা সম্ভব ভূখণ্ড বাড়িয়ে নিতে। যেটা আসলে গাজায় বর্বরতার কারণ। তখন বিশ্বাস করিনি।

    এছাড়াও আমাদের দেশের আলেমরা, হারুন ইজহার সাহেব এবং আসিফ আদনান, ডাঃ শক্তি এর সিরিয়ার বিষয় নিয়ে বেশ প্রশংসা করে। কিন্তু আপনার লেখা পরে সেই middle east NATO এর কথাই সত্যি মনে হচ্ছে। আসলেই কি সেটা সত্যি??

    এই বিষয়ে আলোকপাত করবেন প্লিজ। এছাড়াও হারুন ইজহার সাহেব, আসিফ আদনান, ডাঃ শক্তি এরা যে মুসলিম বঙ্গ, ভারত কেন্দ্রিক প্রতিরক্ষা, ওয়াকফ বিল, ভারতে মুসলিম নির্যাতন, রোহিঙ্গাদের সামরিক সমর্থন না দেয়ার কারণে সমালোচনা করেন সেই বিষয়ে আলোকপাত করবেন প্লিজ।

    যদি unxlcomfort feel না করেন, জামাতের আদর্শ কি গণতান্ত্রিক (যেটা ওরা দূতাবাসে বলে বেড়ায়) নাকি ওদের দ্বারা শরিয়া কায়েম (যেটা ওদের ইনার ফোরাম বিশেষ করে ছাত্রসংগঠন এ দাবি করা হয়) সম্ভব বলে মনে করাটা কি কষ্টকল্পনা হবে?? ( যদিও আমি মনে করি ব্রাদারহুডের যে অবস্থা হয়েছে ওদেরও সেটাই হবে , বরং আরো খারাপ পরিস্থিতি হবে। ভালো হলে সর্বোচ্চ পাকিস্তানের মতো একটা মিলিটারি ব্যাকড সরকার করতে পারবে। )(আলোকপাত করবেন প্লিজ, ভূল জায়গায় সময় আর টাকা খরচ করতে চাই না)

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রথমতঃ এরদোগান হলেন একজন চরম বাস্তববাদী লোক। তার চিন্তায় মরালিটি, বা হিউম্যানিটি বা স্পিরিচুয়ালিটি - কোনটাই নেই। ম্যাটেরিয়াল বেনেফিট ছাড়া তিনি কোন কাজই করেননি। তিনি একারণেই সিরিয়া, লিবিয়া, সোমালিয়া এবং কাতারে সেনা ঘাঁটি করেছেন। অথচ ফিলিস্তিনের ব্যাপারে শুধুমাত্র মুখের কথায় সীমাবদ্ধ ছিলেন। তিনি ইউক্রেনের পক্ষে কথা বলে আবার রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক রেখে চলেছেন। রাশিয়ার কাছ থেকে 'এস-৪০০' ক্ষেপণাস্ত্র কেনার কারণে যুক্তরাষ্ট্র তুরস্কের উপর অবরোধ দিয়েছে। এরপরেও তিনি যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চাননি। এমনকি এখনও তিনি 'এফ-১৬' যুদ্ধবিমানের আপগ্রেড কিটের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল থাকতে চাইছেন; যেখানে তার দেশের ইন্ডাস্ট্রি যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিকে বাইপাস করার পদ্ধতি করে ফেলেছে। তিনি লম্বা সময় ক্ষমতায় রয়েছেন এবং তার সময়ে তুরস্ক যথেষ্ট প্রভাবশালী হয়েছে। তিনি তার প্রভাব খাটিয়ে ইস্রাইলের ক্ষতি করতে পারতেন। হয়তো ইস্রাইলের তিনি তার চাপ সৃষ্টি করলেই গাজা যুদ্ধ ভিন্ন দিকে মোড় নিতে পারতো। সেটা না করে তিনি যুদ্ধের পুরোটা সময় ইস্রাইলকে কৌশলগত ম্যাটেরিয়াল সরবরাহ করে গিয়েছেন। তার সময়ে ইস্রাইলিরা তুরস্কের ৯জন সেনাকে হত্যা করেছিল। এর প্রতিবাদে তিনি কিছু সময় ইস্রাইলের সাথে কথা বলা বন্ধ রেখে আবারও বন্ধুত্ব করে ফেলেছেন। পাকিস্তানও একই কাজ করেছিল যখন যুক্তরাষ্ট্র জেনেশুনে ড্রোন হামলার মাধ্যমে ২৪জন পাকিস্তানি সেনাকে হত্যা করেছিল। এগুলি প্র্যাগম্যাটিজমএর আলটিমেট উদাহরণ।

      Delete
    2. দ্বিতীয়তঃ মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্র সকল কিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে -এই কথাটা ঠিক নয়। তবে যুক্তরাষ্ট্র অনেক কিছুই নিয়ন্ত্রণ করে - এটা পুরোপুরিভাবে সত্যি। ইস্রাইলের নিরাপত্তা দেয় ইস্রাইলের আশেপাশের দেশগুলি; যেগুলি সবগুলিই যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীল। যুক্তরাষ্ট্র এই নির্ভরশীলতাকে কাজে লাগিয়ে এই দেশগুলির নেতৃত্বকে দিয়ে নিজের কাজ করিয়ে নেয়। তবে অনেক ক্ষেত্রে এখানেও প্র্যাগম্যাটিজমের উদাহরণ পাওয়া যায়, যা কিনা সবসময় যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে যায় না। এটা স্বাভাবিক; কারণ যুক্তরাষ্ট্র তো সর্বশক্তিমান নয়। সিরিয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র বাশার আল-আসাদের সরকারকে কখনোই সরাবার চেষ্টা করেনি। কারণ বাশারের প্রতিস্থাপকের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র নিশ্চিত ছিল না। একারণে ওবামার সময়ে বহু মার্কিন কর্মকর্তা একত্রে প্রেসিডেন্টকে চিঠি লেখার পরেও যুক্তরাষ্ট্র সিরিয়ার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেয়নি। ইস্রাইলও বাশারকে পছন্দ না করলেও বাশারের কিছু ব্যাপারে সে নিশ্চিত ছিল। ইস্রাইল নিয়মিত সিরিয়াতে হিযবুল্লাহর সাপ্লাই চেইনে হামলা করতো। সাম্প্রতিক সময়ে হামাস এবং হিযবুল্লাহর স্ট্রাকচার ধ্বংস করে ফেলতে পারার ফলে ইস্রাইলের নিরাপত্তা পরিস্থিতিতে বিশাল পরিবর্তন এসেছে। একারণেই সিরিয়ার ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে সিরিয়ার পুরো ব্যাপারটা যে একত্রে সমন্বিতভাবে পরিকল্পনা করা হয়নি, সেটা বোঝা যায় সিরিয়াতে তুরস্কের হবু বিমান ঘাঁটিতে ইস্রাইলের বিমান হামলা। অর্থাৎ সিরিয়ার কতটুকু তুরস্ক নিয়ন্ত্রণ করবে, অথবা সিরিয়ার পুনর্গঠন কিভাবে হবে বা সিরিয়ার সরকারের নিরাপত্তা কিভাবে দেয়া হবে, সেব্যাপারে কোন সমঝোতা হবার আগেই বাশারের পতন ঘটেছে। অন্ততঃ কেউ এটা ভাবতে পারেনি যে, বাশারের সেনারা যুদ্ধই করবে না। তবে যুক্তরাষ্ট্র বেশ খুশি যে, সে ইস্রাইলের নিরাপত্তা বিধানে বড় ভূমিকা নিতে পেরেছে। তবে এখনও ইরানের পারমাণবিক প্রকল্পের ব্যাপারটা সুরাহা হয়নি; তাই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের উপর চাপ সৃষ্টি করে চলেছে। মূল উদ্দেশ্য হলো, মধ্যপ্রাচ্যকে ঠান্ডা করে চীনের দিকে সকল শক্তি নিয়ে অগ্রসর হওয়া। আর এই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করছে তুরস্ক ও সৌদি আরব; সাথে রয়েছে মিশর। জর্দান, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাতে ব্রিটিশ প্রভাব বেশি হবার কারণে এগুলির ব্যাপারে এখনও শতভাগ নিশ্চিত নয় যুক্তরাষ্ট্র।

      Delete
    3. তৃতীয়তঃ কারুর সমালোচনা করাটা এই ব্লগের উদ্দেশ্য নয়। তবে সাধারণভাবে বলা যায় যে, মুসলিম উম্মাহর বিষয়কে ভাগ করে কিছু নিয়ে কথা বলা এবং কিছু নিয়ে কথা না বলাটা সত্যবাদিতা নয়। সত্য না বলা, সত্যের সাথে মিথ্যা মিশ্রিত করা এবং সত্য গোপন করা একই প্রকারের অপরাধ। মুসলিম বিশ্বকে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রে ভাগ করার পরিকল্পনা পশ্চিমাদের; মুসলিমদের নয়। কিছু অংশ বাঙ্গালী মুসলিমদের; কিছু অংশ রোহিঙ্গা মুসলিমদের; কিছু অংশ আরব মুসলিমদের; কিছু অংশ তুর্কি মুসলিমদের – এসকল চিন্তা ইসলামের কোথায় রয়েছে? কাজেই মুসলিম বিশ্বের মাঝে বহু সীমানা তৈরি করাটা কাদের উদ্দেশ্য বাস্তবায়িত করবে, তা আশা করি বুঝতে পারছেন।

      Delete
    4. চতুর্থতঃ ইখওয়ান বা মুসলিম ব্রাদারহুডের ইতিহাসের দিকে তাকালেই তাদের চিন্তাধারার একটা ধারণা আপনি পাবেন। ১৯২৪ উসমানি খিলাফতের পতন সকল মুসলিমকে পীড়া দিয়েছিল এবং এর পরপরই মুসলিম স্কলারদের মাঝে চিন্তা শুরু হয়ে গিয়েছিল যে, কিভাবে ইসলামকে আবারও নেতৃত্বশীল অবস্থানে নিয়ে আসা যায়। এই স্কলাররা অনেকেই একে অপরের বন্ধু ছিলেন এবং তারা নিজেদের মাঝে তাদের চিন্তাগুলি নিয়ে আলোচনা করেছেন। যেমন, তাকীউদ্দিন আল-নাবহানি এবং হাসান আল-বান্না বন্ধু ছিলেন। তাকীউদ্দিন পশ্চিমাদের হাদারা (চিন্তা) এবং মাদানিয়া (ম্যাটেরিয়াল)কে আলাদা করেছিলেন; এবং তিনি পশ্চিমা হাদারা (চিন্তা)কে বাদ দিয়ে এগুবার সিদ্ধান্ত নেন। পরবর্তীতে ১৯৫৩ সালে তিনি নুসরাহ পদ্ধতি অনুসরণ করে খিলাফত পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলনের ডাক দিয়ে হিযবুত তাহরীর প্রতিষ্ঠা করেন। অপরদিকে হাসান আল-বান্না ১৯২৮ সালে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রতিষ্ঠা করেন। ব্রাদারহুডের চিন্তার মাঝে পশ্চিমা হাদারা (চিন্তা)কে আলাদা করা হয়নি। যেকারণে ব্রাদারহুডের চিন্তার মাঝে বাস্তববাদিতার মতো পশ্চিমা চিন্তাগুলি বেশ প্রকট। যেহেতু একেকটা ভূমির বাস্তবতা ভিন্ন, তাই দেশ থেকে দেশে গেলে ব্রাদারহুডের কর্মকান্ডও ভিন্ন দেখা যায়; তাদের মেসেজও ভিন্ন দেখা যায়। অন্যকথায় বলতে গেলে, বাস্তবতা সহজ হলে ইসলামের কথা বলবেন; বাস্তবতা শক্ত হলে ইসলামের কথা বলা থেকে বিরত থাকবেন। তবে বর্তমানে ফিলিস্তিন ইস্যুতে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ব্রাদারহুড যেরূপ ভূমিকা নিয়েছে, তা দেখলে হাসান আল-বান্না খুবই কষ্ট পেতেন। তিনি ১৯২৪ সালের খিলাফতের পতনকে মুসলিমদের জন্যে ভয়াবহ দুর্যোগ বলে আখ্যা দিয়েছিলেন। একইসাথে তিনি বলেছিলেন যে, এটা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পশ্চিমাদের যুদ্ধ ঘোষণার শামিল। অথচ আজকে ব্রাদারহুডের নেতৃত্বই খিলাফতের কথা সহ্য করতে পারে না।

      Delete
  4. নাসরাল্লাহ মারা যাওয়ার পরও তো হিজব ভালরকম ফাইট দিলো দেখলাম ওদের অবস্থান কী আসলেই নাজুক??

    হামাস কন্ট্রোলড গাজায় তো হিসরাল এখন ঢোকার সাহস করছেনা বলে শুনছি,কারণ unexploded explsv ওদের উপরেই ব্যবহার হবে তাই। কিন্তু বাস্তবতা কী হমস এর জন্য খুব প্রতিকূল??
    গাজা কী বেদখল হবে বলে মনে করেন??

    Ritter বা gallawoay যেটা বলে যে isrl ইন্টারনাল কনফ্লিক্ট এর কারণেই উইক হতে যাচ্ছে , তার পরিণতি কিভাবে দেখেন??

    ReplyDelete
    Replies
    1. হামাসের রকেট হামলা ইস্রাইলকে সমস্যায় ফেলতে পেরেছিল। কারণ তারা বুঝে ফেলতে পেরেছিল যে, ইস্রাইলের আয়রন ডোমের দুর্বলতা কোথায়। এটা হিযবুল্লাহর জন্যে বড় একটা শিক্ষা ছিল। তারা হামাসের কৌশল অবলম্বন করে ইস্রাইলের আয়রন ডোমের বারোটা বাজাতে পারতো। কারণ হিযবুল্লাহ হামাসের চাইতে অনেক বড় এবং অনেক বেশি শক্তিশালী সংস্থা। হিযবুল্লাহর কাছে ইস্রাইলের হিসেবে দেড় লক্ষ রকেট ছিল। হিযবুল্লাহ যদি এগুলি ব্যবহার করতে পারতো, তাহলে ইস্রাইল আজকে এত শক্তিশালী অবস্থানে থাকতো না।

      গাজা যুদ্ধ চলার সময় হিযবুল্লাহ তাদের সেনাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করে রেখেছিল ইরানের সিদ্ধান্তে। তারা তাদের রকেটগুলিকে জমিয়ে রেখেছিল ভবিষ্যতের জন্যে। কিন্তু সেই ভবিষ্যতের দিন আর আসেনি। পেইজার আক্রমণে হিযবুল্লাহর কমান্ড স্ট্রাকচারে মারাত্মক ক্ষতি হয়েছিল। এবং এই ক্ষতির পুরোপুরি সুযোগ নিয়েই ইস্রাইল নাসরাল্লাহর অবস্থান শনাক্ত করতে পেরেছিল। একইসাথে নাসরাল্লাহর পরবর্তী অনেককেই একত্রে হত্যা করতে পেরেছিল ইস্রাইল। অর্থাৎ এই দুই হামলায় ইস্রাইল হিযবুল্লাহর কমান্ড স্ট্রাকচারকে পুরোপুরিভাবে পঙ্গু করে ফেলতে পেরেছিল। একইসাথে হিযবুল্লাহ তাদের রকেটগুলিকে রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছিল। ইস্রাইল লেবানন যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিকেই হিযবুল্লাহর রকেট স্টকের বেশিরভাগই ধ্বংস করে ফেলতে পেরেছিল। এর প্রমাণ পাওয়া যায় ইস্রাইলের উপর হিযবুল্লাহর দুর্বল হামলার মাঝে।

      হামাস বা গাজাবাসীদের সমালোচনা করাটা যে কারুর জন্যেই অনুচিত। কারণ তারা স্বল্প সংখ্যক যোদ্ধা নিয়ে ইস্রাইলকে যে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়েছে, তা আশেপাশের মুসলিম দেশগুলির সেনাবাহিনীকে লজ্জা দেয়ার কথা। শুধু তা-ই নয়, মুসলিম দেশগুলির সেনাবাহিনীগুলি ব্যারাকে লুকিয়ে থেকেছে। সমালোচনা করলে মুসলিম দেশগুলির সেনাবাহিনীকে করা উচিৎ। হামাসের কাছ থেকে আর কিছু আশা করাটাও অনুচিত। গাজায় এখনও মানুষ বেঁচে রয়েছে - এটাই একটা মিরাকল! এতো ছোট জায়গায় ৮৬ হাজার টন বোমা বা ৮৬ কিলোটন বোমা ফেলা হয়েছে!!

      ইস্রাইল সামরিক এবং কৌশলগত দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক দিক থেকে এটা সুইসাইড। কারণ ইস্রাইলের এহেন কর্মকান্ড গোটা মুসলিম বিশ্বের জনগণকে একত্রিত করেছে এবং প্রতিটা মুসলিম দেশের শাসকদের বিরুদ্ধে জনগণকে ক্ষেপিয়ে তুলেছে। কারণ প্রত্যেকটা সরকার প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে ইস্রাইলকে সহায়তা দিয়েছে। একারণে ইস্রাইল জেনেশুনেই নিজেদের কবর খুঁড়ছে। শুধুমাত্র তাদের নিজেদের অহমিকার কারণেই তারা বুঝতে পারছে না যে, তারা কতটা মারাত্মক ভুল করছে।

      Delete
  5. আমাদের দেশে ঝড়ের পূর্ব সময়ের শান্ত আবহাওয়া চলছে বলে মনে করি। যদি চিনা us conflict হয়, তার পরবর্তী সময়েই হয়ত আমরা উত্তরবঙ্গ আর cht তে আগ্রাসনের শিকার হবো। Regional player গুলো এভাবেই বড় যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে সীমানা বাড়িয়ে নেয় । ইন্ডিয়ার ক্ষেত্রে এই ইতিহাস আগেও হয়েছে। যেখানে সামরিক বাহিনীর major আর Lt জেনারেল রা ভারতে পালিয়েছে এদেশের স্টেট সিক্রেট কতটুকু আছে সেটা বোধগম্য। FPV ড্রোনের মানুফ্যাক ture base ইন্ডিয়ায় অনেক আছে। আমাদের জেনারেলরা যেটা বলে ২০/২৫। লাখ তরুণকে ২টা ম্যাগাজিন আর ৫ টা গ্রেনেড দিয়ে পাঠিয়ে দিবে, এটা সম্পূর্ণই backfire করবে fpv এর সামনে সামরিক বাহিনীই দাঁড়াতে পারবেনা।

    এই অবস্থায় আমাদের কি করার আছে??? ইউনুস সাহেব ত সল্প সময়ের কিছুই করতে পারবেনা, ওনার বা ওনার পিছনে যারা তাদের আজেন্ডাও শক্তিশালী বাংলা না। ড জি ফা ই রাজনীতিতে ব্যস্ত। দুই দল নির্বাচনে ব্যস্ত। আগ্রাসন হলে ওরা দেশের এক পার্ট উত্তরবঙ্গ ছেড়ে দিয়ে cht রক্ষা করার ডিল করবে। অথবা BAL কে ইন্ডিয়া রিপ্লেস করবে ৭১ এর মত ৭ দফা চুক্তি করে।


    আমাদের সাধারণদের আসলেই কি করার আছে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. জনগণের একটা বড় অংশ বিশ্বাস করে যে জনগণের পক্ষে ধীরে ধীরে কোন একটা সময় রাষ্ট্রের কাজগুলি করে ফেলা সম্ভব। কিন্তু যখন আপনি তাদেরকে নিজেদের কাজ করতে বলবেন, তখন তারা বলবে যে, সেগুলি রাষ্ট্রের কাজ; তাদের নিজেদের কিছুই করার নেই। এই ব্যাপারটা স্ব-বিরোধী। কারণ হাসিনা সরকারের পতনের সময় এই যুক্তি কেউ দেয়নি। তখন কেউ বলেনি যে, কাজটা তার নয়; বা তারা ধীরে ধীরে পরিবর্তন আনার পক্ষপাতি।

      মূলতঃ এগুলি নির্ভর করে নেতৃত্বের উপর। নেতৃত্ব ঠিক করে দেয় যে, জনগণ কি বলবে, অথবা কোন ইস্যু নিয়ে মাঠ গরম করবে; কোন ইস্যুতে মুখে তালা মারবে। জনগণ এই ব্যাপারটা স্বীকার করতে চায় না। কারণ এটা স্বীকার করে নেয়াটা নিজের আত্মসন্মানের ব্যাপার। একারণে তারা নেতৃত্বের কথাগুলি নিজেদের কথা বলে ধরে নিয়ে বলে যে, তারা জেনে বুঝেই মাঠে নেমেছে - ভেড়ার পাল হয়ে মাঠে আসেনি।

      ভারতের সাথে বাংলাদেশের রাষ্ট্র-বিরোধী চুক্তিগুলি বাতিলের দাবিতে কোন মুভমেন্ট হয়নি। কারণ কোন নেতৃত্ব এই ইস্যুতে জনগণকে মাঠে নামাতে চায় না। তারা চায় ভারতকে তুষ্ট করে চলতে; ভারতের সাথে সম্পর্ক ভালো রাখতে। ওয়াশিংটন থেকেও সেটাই বলা হচ্ছে। তাই বাংলাদেশও সেভাবেই চলছে।

      কিন্তু এর অর্থ এ-ই নয় যে, বাংলাদেশে কোন সিনসিয়ার মানুষ নেই। বাংলাদেশে সিনসিয়ার মানুষ রয়েছে বলেই এখনও এই দেশের সর্বত্র ভারতের দখল নেই। এই দেশে চীনের প্রকল্পগুলি এখনও বাস্তবায়িত হচ্ছে। এমনকি মাতারবাড়ি প্রকল্পের ঠিক পিছনেই চীনা সহায়তায় তৈরি হচ্ছে সাবমেরিন ঘাঁটি। দু'টা সাবমেরিনও যুক্ত হয়েছে বাংলাদেশ নৌবাহিনীতে। মিসাইল ওভারহোলিং (এবং এসেম্বলি) প্ল্যান্টও হয়েছে। নিজেদের বিমান এবং ড্রোন ডিজাইন এবং তৈরি হয়েছে (যদিও খুব বিশাল কিছু না)। কিছু পক্ষের ব্যাপক বিরোধিতা সত্ত্বেও তৈরি হয়েছে পায়রা পোর্ট এবং তৎসংলগ্ন শের-এ-বাংলা নৌঘাঁটি। এখানেও চীন সহায়তা দিয়েছে। প্রচুর প্রতিকূলত সত্ত্বেও বাংলাদেশে ওয়াল্টন কমপ্রেসার ফ্যাক্টরি তৈরি করতে পেরেছে। বিদেশী উপদেশ উপেক্ষা করেই বাংলাদেশে মিথানল ও পিভিসি ফ্যাক্টরি তৈরি হয়েছে। ইলেকট্রিক আর্ক ফার্নেসও এভাবেই এসেছে। রিভার্স ইঞ্জিনিয়ারিংএর প্রযুক্তিও বাংলাদেশে এসেছে। যেকোন মাল্টিলেয়ার পিসিবি বোর্ড এখন বাংলাদেশে কপি করা সম্ভব। এখন আপনি বাংলাদেশে প্রায় যেকোন প্রিসিশন যন্ত্র তৈরি করতে পারবেন; যদি আপনার ইচ্ছা থাকে। গত এক দশকে বাংলাদেশ বহু প্রকারের ইন্ডাস্ট্রিয়াল মেশিনারি তৈরির সক্ষমতা অর্জন করেছে। এবং অনেক ক্ষেত্রেই সেগুলি মান ইউরোপিয় স্ট্যান্ডার্ডের; বাকি ক্ষেত্রে চীনা স্ট্যান্ডার্ডের। বাংলাদেশের মিডিয়া এগুলি প্রচার করতে পছন্দ করে না। কারণ এগুলি প্রচার করলে এদেশের মেধাবী ছাত্ররা যুক্তরাষ্ট্রে না গিয়ে দেশের মাটিতেই ভবিষ্যৎ খুঁজবে। এটা তো তারা চাইছে না। বাংলাদেশে সিনসিয়ার মানুষ রয়েছে এবং একারণেই বাংলাদেশ এখনও টিকে আছে। সিনসিয়ার মানুষরা যখন বোঝে কিছু একটা করতে হবে, সে তখন দায়িত্বটাকে নিজের বলেই ধরে নেয়। তার সক্ষমতায় ঘাটতি থাকতে পারে; কিন্তু চার প্রচেষ্টা এবং সিনসিয়ারিটিতে কোন ঘাটতি থাকে না।

      Delete
  6. আমেরিকা আরাকান অ্যাক্টের আওতায় কক্সবাজারে হিউম্যান করিডোর করতে চাচ্ছে তাতে বর্তমান বাংলাদেশ সরকার কি করতে চাচ্ছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. যুক্তরাষ্ট্র মূলতঃ রাখাইনের কিউকপিউতে চীনা সমুদ্রবন্দরকে হুমকির মাঝে ফেলতে চাইছে। আরাকান আর্মি যদি কিউকপিউএর এলাকা দখল করে নেয়, তাহলে চীনারা রাজনৈতিক সমস্যায় পড়বে এবং এখানে আমেরিকার প্রভাব ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে। কিউকপিউ বন্দরের মাধ্যমে চীনারা কিছুটা হলেও মালাক্কা প্রণালীকে বাইপাস করতে চাইছে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসা তেলের জাহাজগুলি এখানে তেল খালাস করে ট্যাঙ্কে জমা করে। এরপর সেই তেল পাইপলাইনের মাধ্যমে মিয়ানমারের মাঝ দিয়ে চীনে চলে যায়। এই পাইপলাইনের উপর বিভিন্ন বিদ্রোহী গ্রুপের কার্যকলাপ রয়েছে। চীনারা চায় এই পাইপলাইনের নিশ্চয়তা দিতে। অন্যকথায়, চীনারা চায় যে, এই পাইপলাইনের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখা বিদ্রোহী গ্রুপগুলির সবগুলিই যেন চীনের কথা চলে। কিন্তু আরাকান আর্মির ব্যাপারে এই কথা বলা যাবে না। এই মূল কারণ হলো, আরাকান আর্মির সমুদ্রে যাবার সুযোগ রয়েছে এবং তাদের সাথে এখন বাংলাদেশের সীমানা রয়েছে। ফলে তাদের বৈদেশিক সাহায্য পাবার অপশন মিয়ানমারের অন্যান্য বিদ্রোহী গ্রুপগুলির চাইতে অপেক্ষাকৃত বেশি।

      ২০১৬-১৭ সালে রাখাইনে মিয়ানমার সেনাবাহিনী যে গণহত্যা করে, তার সূচনা করা হয়েছিল বিদেশী ইন্ধনে মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর বেশ কয়েকজন সদস্যকে হত্যা করার মাধ্যমে। মিয়ানমার সেনাবাহিনী সেই ঘটনাকে ছুতো হিসেবে ব্যবহার করেছিল। অথচ যারা মিয়ানমার নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের হত্যা করেছিল, তাদেরকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাদের উস্কে দেয়া সেই গণহত্যার কারণে এখন প্রায় ১২ লক্ষ শরণার্থী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে। বিদেশী শক্তিরা এভাবেই বিভিন্ন অঞ্চলের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করে।

      Delete
  7. This comment has been removed by the author.

    ReplyDelete
  8. একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ও আত্মনির্ভরশীল রাষ্ট্র হওয়া র জন্য যা যা Raw মেটারিয়াল দরকার তা বাংলাদেশে আছে কিন্তু প্রবলেম হচ্ছে এটার execute কেউ করবে না কারণ গ্লোবাল প্লেয়ারদের চোখ সব জায়গায় থাকে এবং এদের এজেন্টও থাকে এরা সবসময় বাধা প্রদান করে, এরা চায় না কোনো রাষ্ট্র সুপারপাওয়ার হক। সুপারপাওয়ার জন্য আদর্শিক রাষ্ট্র হওয়া জরুরি যার ভিওিতে সবাই একতাবদ্ধ হবে কিন্তু প্রত্যেকটা রাষ্ট্রই পশ্চিমা আদর্শ ধার করেই সিদ্ধান্ত নেয়, এভাবে কোনো রাষ্ট্র সুপারপাওয়ার হতে পারে না,সঠিক জবাব ও দিতে পারবে না জাস্ট মৌখিক কিছু বার্তায় সীমাবদ্ধ থাকে এমনকি এটা চীনের জন্য প্রযোজ্য বাট চীনের একটা ব্যাপার ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছে যে তারা তাদের মেধা-দক্ষতাকে ব্যবহার করতে পারতেছে যার ফলে চীনের অর্থনীতি ও টেকনোলজি অনেক দ্রুত এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু সে আমেরিকাকে beat করতে পারবে না শুধু মাএ আদর্শিক রাষ্ট্র না হওয়ার কারণে

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি যথার্থই বলেছেন যে, পশ্চিমারা সর্বদাই তাদের প্রতিদ্বন্দ্বী কোন আদর্শিক রাষ্ট্র তৈরি হওয়াতে বাধা প্রদান করে। তবে উপরে উল্লেখ করা ইন্ডাস্ট্রিগুলি বেশিরভাগ পেতে সুপারপাওয়ার হবার প্রয়োজন নাই। বিশ্বের অনেক জাতিরাষ্ট্রই এসকল ইন্ডাস্ট্রির মালিক। সেই হিসেবে বাংলাদেশেও এধরণের ইন্ডাস্ট্রি থাকাটা খুব কঠিন কিছু হওয়া উচিৎ ছিল না। তুরস্ক, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া বা মিশরের সামরিক ইন্ডাস্ট্রির কথা বাদই দিলাম; অন্ততঃ মিয়ানমার এবং সুদানের সামরিক ইন্ডাস্ট্রি দেখলেও তো এদেশের কর্তাব্যক্তিদের লজ্জা হওয়া উচিৎ ছিল। এখনও এই দেশের মানুষের শুনতে হচ্ছে যে, বাংলাদেশের তো ট্যাঙ্ক ও স্পেসক্রাফট বানাবার প্রয়োজন নেই! কি অদ্ভুত কথা! অথচ অন্য দেশের হয়ে এগুলি তৈরি করার জন্যে এই দেশ থেকে মানবসম্পদ পাচার করা হচ্ছে।

      সুপারপাওয়ার হবার কথা বাদই দিলাম। পারমাণবিক প্রযুক্তি, টারবাইন ইঞ্জিন, সেমিকন্ডাক্টর, লিথোগ্রাফি মেশিন, স্টেলথ প্রযুক্তি, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স - এগুলি ছাড়া সুপারপাওয়ার হওয়া কঠিন। কিন্তু ইলেকট্রিক মোটর, ডিজেল ইঞ্জিন - এগুলি তো তেমন কিছুই না। বাংলাদেশে অনেক জটিল ট্রান্সফরমার তৈরি করা হচ্ছে; অথচ ইলেকট্রিক মোটর তৈরি করতে তাদের রুচিতে বাঁধে! কি আশ্চর্য্য! এদেশের সর্বক্ষেত্রে বিদেশ-তুষ্টির চিন্তা বিদ্যমান। এদেশে ওয়াল্টনের কমপ্রেসার ফ্যাক্টরি, বা মিথানল ফ্যাক্টরি বা পিভিসি ফ্যাক্টরি তৈরির মতো কিছু গোঁয়াড়তমি প্রয়োজন।

      Delete
    2. তৃতীয় বিশ্বের দেশ হিসেবে উপরোল্লিখিত টেকনোলজি ডেভেলাপ করাটাও কঠিন কারণ রাষ্ট্রের কোনো ভিশন নেই, রাষ্ট্র যেভাবে বিদেশী উদ্যোক্তা ও বাণিজ্য প্রসারণ ও লোন নেওয়ার জন্য যেভাবে উঠে পড়ে লাগে, যেসব লজিস্টিকাল ও আইনী হেল্প দেওয়া হয় তা দেশীয় প্রতিষ্ঠান ও উদ্যোক্তাদের সেরকম সুবিধাটুকুই পাই না উল্টো হাঁটুর নজরে দেখে, আর বিদেশী জায়ান্ট মনোপলি প্রতিষ্ঠানের কাছে দেশীয়ভাবে কেউ কিছু করতে চাইলে মার্কেট থেকে বিরাট পরিমাণ লস খেয়ে আউট হয়ে যাবে এটাই স্বাভাবিক। আর বিদেশীরা এমনকিছুতে ইনভেস্ট করে না যেটা রাষ্ট্রের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারে উল্টো দেখছি এসবের ফাঁদে পড়ে কিভাবে চিনি,পাট ও চামড়া শিল্পকে ধ্বংস করা হয়ছে।

      নিজেদের মেধা,পরিশ্রম ও দক্ষতাকে যদি রাষ্ট্র বোঝা হিসেবে দেখে, এটা খুবই খুবই দুঃখজনক

      Delete
    3. আপনি সরকারের সুবিধা দেয়ার যে ব্যাপারটা বলেছেন, সেটা পুরোপুরিভাবে সত্য। তবে এটা বিদেশীদের ক্ষেত্রে নয়। কারণ বিদেশীরা বাংলাদেশে কখনোই কৌশলগত কোন সেক্টরে বিনিয়োগ করেনা। বাংলাদেশের গার্মেণ্টস শিল্পে প্রচুর বিদেশী বিনিয়োগ আসলেও গার্মেন্টসএর সেলাই মেশিন বা টেক্সটাইল তৈরির মেশিন সর্বদাই বিদেশ থেকে আমদানি করা। আবার এই দেশের অনেক ব্যক্তিই পশ্চিমাদের তোষণের ক্ষেত্রে দুই ধাপ এগিয়ে রয়েছে অন্যান্য দেশের তুলনায়। তাদেরকে আপনি যদি তিনটা ব্যবসা দেখান, যেখানে তিনটাতেই ভাল লাভ করা যাবে, তারা সেখান থেকে এমন একটা সিলেক্ট করবে, যেটা কৌশলগত সেক্টর না। বাংলাদেশের শিক্ষিত সমাজের অনেকেই ধারণা করে থাকেন যে, বিদেশী ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, কনসালট্যান্ট, এবং ডেভেলপমেন্ট ইন্সটিটিউটগুলি সবচাইতে বেশি ভালো উপদেশ দেয়। কারণ এসব ইন্সটিটিউটে 'কোয়ালিফাইড' লোক বেশি; কাজেই কোন সেক্টর বিনিয়োগের জন্যে ভালো, তা এরাই ভালো জানে। আপনি তাদেরকে একটা সেক্টরে বিনিয়োগ করতে বললে, এই তথাকথিত শিক্ষিত জেনারেশন আপনার কথা না শুনে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড বা প্রাইস ওয়াটারহাউজ কুপার্স-এর কথা শুনবে। অথবা এসব ইন্সটিটিউটএ কাজ করা লোকগুলিই কর্তাব্যক্তি হয়ে যাবে। একারণে বিনিয়োগগুলি সবসময়ই বাজে জায়গায় হতে থাকে। স্টিল, ইঞ্জিনিয়ারিং, কেমিক্যাল, ইলেকট্রনিক্স সেক্টরে বিনিয়োগ না হয়ে বিনিয়োগ যায় সেই এক গার্মেন্টসএ। তা-ও আবার গার্মেন্টস সেক্টরের যন্ত্রপাতি বা কেমিক্যালে নয়; সেই গতবাধা কাপড় সেলাইএর কাজে।

      দুই দশক ধরে এই দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উপর তথ্য সংগ্রহ করেছে বিশ্ব ব্যাংক। কিন্তু একটা টাকাও বিনিয়োগ করেনি। তারা প্রতিবেদনে বারংবার বলেছে যে, অল্প কিছু টাকার ঘাটতির জন্যে লাইট ইঞ্জিনিয়ারিংএর (মূলক কৃষি যন্ত্রপাতি তৈরির সাথে সম্পৃক্ত) ইমপ্রুভমেন্ট হচ্ছে না। একটা হীট ট্রীটমেন্ট ফার্নেস এবং কয়েকটা সিএনসি মেশিনের জন্যে এই সেক্টর পিছিয়ে রয়েছে বলে তার জানতো। কিন্তু গত এক দশকে যখন প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রির সম্পুররক হিসেবে নিজেদের উদ্যোগে ছোট ছোট উদ্যোক্তারা সিএনসি মেশিন দিয়ে বাজার ভরিয়ে ফেললো, তখন বিদেশীরা তরিঘরি করে এই সেক্টরে ঢুকেছে মানুষের নিয়ন্ত্রণ করার উদ্দেশ্যে। কারণ তারা বুঝে ফেলেছে যে, দুই দশকের নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা ফেইল করেছে।

      এই দেশে ছোট বড় যে-ই কৌশলগত সেক্টরে বিনিয়োগ করুক না কেন, সেটা রাষ্ট্রের কাজে লাগবে। কিন্তু এই দেশের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বিদেশ-তোষকদের দেখতে পাবেন; যারা কিনা সর্বদা বাধা সৃষ্টি করে যাবে। আপনি পাট শিল্পের ধ্বংসের কথা বলেছেন। আমি এখানে কিছুটা সহমত। কারণ পাট শিল্পকে মূলতঃ বেসরকারি খাতের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। বাংলাদেশে দু'শএর বেশি জুট মিল রয়েছে। আপনি বাংলাদেশ থেকে পাট পণ্য রপ্তানির পরিমাণ দেখলে পাট শিল্প ধ্বংস হয়েছে - এটা বলতে পারবেন না। বরং এটা বলতে পারবেন যে, এই শিল্পের সকল মুনাফা এখন হাতে গোণা কয়েকজন শিল্পপতির হাতে। এই স্ট্যাটিসটিকস দেখিয়ে তারা সরকারি ২৫টার মতো জুট মিল বেসরকারি খাতে লীজ দিয়ে দিয়েছে। তবে পাট শিল্পের আরও বড় সমস্যাগুলির একটা হলো - পাটের বীজের প্রায় ৭০ শতাংশ ভারত থেকে আমদানি হয়ে থাকে। আর দ্বিতীয় সমস্যা হলো, বাংলাদেশের পাট ব্যবহার করে ফ্রান্স এবং জার্মানিতে গাড়ি তৈরি করা হয়; জাপানে শব্দ নিরোধক হিসেবে ব্যবহার করা হয়; আমেরিকাতে কৌশলগত সেক্টরে ব্যবহৃত হয় (গোপনীয়তার কারণে তথ্যের ঘাটতি রয়েছে)। অথচ এই দেশের কাউকে দিয়ে আপনি বাংলাদেশে এসকল কৌশলগত সেক্টরে পাটের ব্যবহার করাতে পারবেন না। তারা আপনাকে বস্তার আর হ্যান্ডিক্রাফটএর বাইরে পাট ব্যবহৃত হতে দেবে না। আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো, বাংলাদেশের টেলিভিশন রিপোর্টেই বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে কৌশলগত ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের পাটের ব্যবহার দেখানো হয়েছে; যেখানে সেই দেশের ইঞ্জিনিয়াররা পাটকে বলছে "গোল্ড"; কারণ এটা দিয়ে অনেক কিছু তৈরি করা যায়!! কি অদ্ভুত তাই না? কারণ বাংলাদেশের মানুষকে শেখানো হয়েছে যে, পাটের রংএর কারণে নাকি এটা "গোল্ডেন ফাইবার"!

      তবে মোটকথা, এদেশের অনেক ব্যক্তির মাঝেই দাস মনোবৃত্তির কারণে কৌশলগত সেক্টরে বিনিয়োগ হয় না। উপরের লেখা এবং কমেন্টে এব্যাপারে আরও রয়েছে। বিশেষ করে সুদান এবং মিয়ানমারের সামরিক শিল্পের উল্লেখ রয়েছে। সুদানের ব্যাপারে ২০১৭ সালের লেখার লিঙ্ক নিচের দেয়া হলো -
      https://koushol.blogspot.com/2017/10/bangladesh-defence-industry-when.html

      Delete
    4. বাংলাদেশের টেলিভিশন রিপোর্টেই বেলজিয়াম এবং ফ্রান্সের নরম্যান্ডিতে কৌশলগত ইন্ডাস্ট্রিতে বাংলাদেশের পাটের ব্যবহার দেখানো হয়েছে; ---- সেই ইন্ডাস্ট্রির নাম উল্লেখ করুন।

      Delete
    5. "Gold of Bangladesh"... Somoy TV, 19Apr2019... Making vehicle components.... https://youtu.be/DI7A07lgLrY?si=PxAfdMgdaDEbmG1n

      Delete
    6. দুই দশক ধরে এই দেশের লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টরের উপর তথ্য সংগ্রহ করেছে বিশ্ব ব্যাংক।এই তথ্যের অথেনটিক ডিটেইলড উৎসটা দিতে পারবেন দয়া করে!!

      Delete
    7. বিশ্বব্যাঙ্ক লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং সেক্টর নিয়ে কতগুলি সার্ভে করেছে, সেটা জানার চেষ্টা করুন। তাদের রিপোর্টগুলি পাবার চেষ্টা করুন। সেই রিপোর্টগুলিতে বারংবার কি কি সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে, সেটা দেখুন। তাহলেই বুঝতে পারবেন।

      Delete