Saturday 6 February 2016

শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর কাছ থেকে আমাদের কিছু শিক্ষনীয় রয়েছে কি?

০৬ ফেব্রুয়ারী ২০১৬

বাংলাদেশের জাতীয় স্বার্থ বিবেচনা করলে অনেক দেশের সাথে সম্পর্কের কথাই উল্লেখ করতে হয়। যেমন জাপান এবং চীনের কথা বলতেই হয় কারণ তারা এই দেশে সবচাইতে বড় বিনয়োগকারীদের অন্যতম। আবার মধ্যপ্রাচ্য থেকে আসে বেশিরভাগ জ্বালানি তেল এবং সেখানে আবার অনেক বাংলাদেশী কাজ করেন। মালেশিয়ার ক্ষেত্রেও তা-ই। ইউরোপ আর আমেরিকার উপরে নির্ভরশীলতা হয়েছে কারণ তারা আমাদের তৈরি পোষাকের বাজার। কিন্তু এর বাইরেও কিছু দেশ আছে, যেগুলির সাথে সম্পর্ক সবসময় চোখে পড়ে না। যেমন শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশের সাথে মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ, রাশিয়া এবং আফ্রিকার সকল দেশের যতো নৌ-বাণিজ্য রয়েছে, তা পুরোটাই শ্রীলঙ্কা হয়ে যায়। অর্থাৎ বাংলাদেশের বহিঃবাণিজ্যের একটা বিশাল অংশ শ্রীলঙ্কা হয়ে যায় এবং সেগুলি শ্রীলঙ্কার সাথে ভালো সম্পর্কের উপরে অনেকটাই নির্ভরশীল। শ্রীলঙ্কার সাথে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সম্পর্ক উপরোল্লিখিত দেশগুলির কোনটির সাথেই অর্থের অঙ্কে তুলনীয় নয়; অথচ এই দেশটিতে সমস্যা হলে বাংলাদেশ সমস্যায় পড়বে।

তবে আশ্চর্যের বিষয় এই যে এই দেশটি তিন দশক ধরে গৃহযুদ্ধে জর্জরিত থাকার পরেও সবার সাথেই ভালো সম্পর্ক রাখার চেষ্টা করেছে; আমাদের নৌ-বাণিজ্যও শ্রীলঙ্কা হয়ে যেতে বড় কোন সমস্যায় পড়েনি। প্রচন্ড ধ্বংসাত্মক সেই গৃহযুদ্ধ দেশটিকে পিছিয়ে দেবার চেষ্টা করলেও এর মাঝ থেকেই শ্রীলঙ্কার মানুষ উঠে দাঁড়াবার চেষ্টা করেছে। দেশটির অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ইত্যাদি দিকে উন্নতি দেখার মতো ছিল। বিদেশীদের প্রক্সি যুদ্ধও দেশটিকে লাগামের মধ্যে রাখতে পারেনি পুরোপুরি। তবে আর যা-ই হোক, এই যুদ্ধ তাদের অনেক কিছুই শিখিয়েছে। যুদ্ধের মাঝে এবং আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার মাঝে একটা দেশ কিভাবে চালাতে হয়, সেটার দক্ষিণ এশীয় উদাহরণ এই দেশটি। দেশটির সামরিক বাহিনী অনেক ত্যাগের মাধ্যমে যুদ্ধ থেকে অনেক কিছুই শিখেছে। তাদের সমর কৌশল সর্বকালের শ্রেষ্ঠ না হলেও তাদের দেশের প্রেক্ষিতে সেগুলি ছিল বিরাট শিক্ষা। কাগুজে পরিকল্পনা আর বাস্তব অভিজ্ঞতার মাঝে বিরাট ফারাক। শ্রীলঙ্কার মানুষ যুদ্ধ থেকে বাস্তব অনেক কিছুই শিখেছে, যা কিনা পৃথিবীর অনেক সামরিক বাহিনীই জানতে এবং বুঝতে আগ্রহী। কিভাবে এই যুদ্ধ তারা চালিয়ে নিলো; কি দিয়ে চালিয়ে নিলো; উত্থান-পতন কখন কিভাবে হলো; সেসবের কৌশলগত গুরুত্ব কতটুকু? – এইসবই এখন অন্যদের জন্যে শিক্ষনীয় বিষয়। 

'এক্সারসাইজ করমোর‌্যান্ট স্ট্রাইক ২০১৫'-এর উভচর অপারেশন। তিন দশক যুদ্ধ করে শ্রীলঙ্কানরা কম্বাইন্ড অপারেশনের এক্সপার্ট হয়ে উঠেছে। ছবিতে RABS-এর জিআরপি বোটগুলিকে স্থলভাগে সৈন্য পরিবহণ করতে দেখা যাচ্ছে।


উভচর যুদ্ধের এক্সপার্ট

প্রত্যেক যুদ্ধেই আলাদা কিছু থাকে। শ্রীলঙ্কার যুদ্ধও তা-ই। তাদের ওই যুদ্ধের একটা প্রধান দিক ছিল যে শ্রীলঙ্কা একটি দ্বীপ দেশ। অর্থাৎ দেশটি ভৌগোলিক অবস্থান তাদের এই যুদ্ধকে বিরাটভাবে প্রভাবিত করেছে। যুদ্ধের কারণে তাদের ভৌগোলিক এই অবস্থানের কিছু কিছু দিক তাদের চিন্তাকে নির্দেশনা দিয়েছে। যেমন তিন বাহিনীর একত্রে অভিযান (কম্বাইন্ড অপারেশন) চালানোর অভিজ্ঞতা শ্রীলংকার চাইতে বেশি তেমন একটা দেশের নেই। আর এই দক্ষিণ এশিয়াতে শ্রীলঙ্কার চাইতে বেশি অভিজ্ঞতা এক্ষেত্রে আর কারুরই নেই। ভারতের কাছে এই এলাকার সবচাইতে বড় বাহিনী থাকলেও শ্রীলঙ্কার বাহিনীর মতো তিন দশকের অভিজ্ঞতা তাদের নেই। একারণেই ছোট দেশ হয়েও সামরিক দিক থেকে শ্রীলঙ্কার অবস্থান আলাদা। কম্বাইন্ড অপারেশন সেখানেই সবচাইতে জটিল হয় যেখানে ম্যারিটাইম ব্যাপারটি থাকে। অর্থাৎ সাগর বা হ্রদ বা নদীর মোহনা বা দ্বীপাঞ্চল যেখানে রয়েছে, সেখানেই কম্বাইন্ড অপারেশনের কথাটা ওঠে স্বাভাবিকভাবে। শ্রীলঙ্কার ক্ষেত্রে ঠিক সেটাই হয়েছে। দ্বীপ দেশ হবার কারণে তাদের গৃহযুদ্ধের একটা বড় অংশই ছিল উভচর যুদ্ধ, যেখানে সেনা, নৌ এবং বিমান বাহিনীকে এক হাতের কয়েকটি আঙ্গুলের মতো কাজ করতে হয়েছে। জাফনা উপদ্বীপ, এলিফ্যান্ট পাস আর মুল্লাইতিভু-এর যুদ্ধের মতো অনেক যুদ্ধই সংঘটিত হয়েছে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধে, যেখানে উভচর অপারেশনই ছিল একমাত্র পন্থা। এ এক বড় অভিজ্ঞতা নিঃসন্দেহে।

২০০৯ সালে শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ হয় সেদেশের সরকারী বাহিনীর পরিপূর্ণ বিজয়ের মাঝে দিয়ে। এই বিজয়ের কারণে শ্রীলঙ্কার এই অভিজ্ঞতা অন্যদের সাথে শেয়ার করার সুযোগ তৈরি হয়েছে। ২০১০ সালে শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী দেশের সৈন্যদেরকে শান্তিকালীন সময়ে তৈরি রাখার নিমিত্তে এক কম্বাইন্ড মহড়ার আয়োজন করে। ‘এক্সারসাইজ করমোর‌্যান্ট স্ট্রাইক’ নামের এই মহড়া শ্রীলঙ্কার বাইরে অনেকেরই দৃষ্টি আকর্ষণ করে। অন্যান্য দেশ শ্রীলঙ্কার এই অভিজ্ঞতা থেকে শেখার আগ্রহ প্রকাশ করে। ২০১৫ সালের সেপ্টেম্বরেও এই মহড়া অনুষ্ঠিত হয় শ্রীলঙ্কার বাট্টিকালোয়া প্রদেশে। সেখানে ৮টি দেশ থেকে ৫৪ জন সামরিক সদস্য অংশগ্রহণ করেন। সেই দেশগুলির লিস্টে রয়েছে বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, চীন, ইন্দোনেশিয়া, মালেশিয়া এবং যুক্তরাষ্ট্র। 
তামিল টাইগারদের সী টাইগার জিআরপি বোটগুলি ছিল দুর্ধর্ষ। এদের গতি এবং সংখ্যা শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীকে ব্যতিব্যস্ত করেছিল অনেক বছর ধরে।


সী টাইগারদের হাতে নাকানি-চুবানি
শ্রীলঙ্কা যুদ্ধের অভিজ্ঞতার কারণে সামরিক দিক থেকে বেশ এগিয়েছে, যেটা হয়তো যুদ্ধ না হলে তাদের পক্ষে সম্ভব হতো না। যুদ্ধের বাস্তবতাতে সমুদ্রের গুরুত্ব বেশি থাকায় নৌবাহিনী গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ২০০৯ সালে যুদ্ধ যখন শেষ হয়, তখন শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ছিল ৪৮,০০০, যা নিঃসন্দেহে বিশাল। বাহিনী বড় করা এবং সামরিক সরঞ্জাম কেনাকাটা ছাড়াও নিজেদের অভিজ্ঞতা থেকে তারা কিছু নৌযান তৈরি করেছে যা কিনা যুদ্ধ জয়ে বিরাট ভূমিকা রেখেছে। LTTLE (Liberation Tigers of Tamil Eelam)-এর ম্যারিটাইম উইং ‘সী টাইগার’-দের দাপটের মুখে আন্তর্জাতিক অবরোধের মাঝে তাদেরকে ইস্রাইলের সরণাপন্ন হতে হয়েছে, যদিও তারা জানতো যে ইস্রাইল একইসাথে LTTLE-কেও ট্রেনিং দিচ্ছে। তবে একইসাথে নিজেদের অস্ত্র তৈরির সক্ষমতার উপরেও তাদের নির্ভরশীলতা বাড়াতে হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ উপকূল থেকে এবং কিছু বাণিজ্যিক জাহাজ থেকে ছোট ছোট বোটে করে গোপনে তামিল যোদ্ধাদের জন্যে অস্ত্রসহ সকল সাপ্লাই আসতো। শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর জন্যে যুদ্ধে জয়লাভ করতে এই সাপ্লাই লাইন কেটে ফেলা ছিল সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ। আর এই সাপ্লাই লাইন কাটার জন্যে দরকার ছিল বিরাট সমুদ্রাঞ্চলসহ ভারত-শ্রীলঙ্কার মাঝের ‘পক প্রণালী’-এর অগভীর বিপজ্জনক নৌপথে দিবারাত্র প্যাট্রোল। শ্রীলঙ্কার যুদ্ধ-পূর্ববর্তী নৌবাহিনীর কাছে যেসব প্যাট্রোল বোট ছিল, সেগুলি যুদ্ধের চাহিদা মেটাতে পারছিল না। তামিল টাইগাররা ১৯৮০-এর দশকে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে তেমন কোন কষ্ট ছাড়াই শ্রীলঙ্কাতে তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে। সেসময়ে টাইগারদের সাপ্লাই লাইন কেটে দিতে পারলে যুদ্ধ হয়তো তিন দশক স্থায়ী হতো না।

চীন থেকে ১৯৭২ থেকে ১৯৭৫-এর মাঝে কেনা ৬টি ‘সাংহাই’ গানবোট (পরবর্তীতে ডজনখানেকের মতো হয়) এবং অন্যান্য প্যাট্রোল বোট দিয়ে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী যুদ্ধের শুরুতে সী টাইগারদের তৈরি করা সাপ্লাই লাইন কাটার চেষ্টা করতে থাকে। এই বোটগুলি শক্তিশালী কামানে সজ্জিত থাকলেও সী টাইগারদের গ্লাস-ফাইবার বা Glass-Reinforced Plastic (GRP) বোটগুলির গতি এবং ম্যানুভার করার ক্ষমতা এই গানবোটগুলির জন্যে মোকাবিলা সম্ভব হচ্ছিল না। তাদের দরকার হচ্ছিল আরও দ্রুতগতির বোট। কিন্তু আন্তর্জাতিক অবরোধ যখন তামিলদের সুবিধা করে দিচ্ছিল, তখন শ্রীলঙ্কা সরকার ১৯৮০-এর দশকের মাঝামাঝি ইস্রাইলের কাছে যেতে বাধ্য হয়, যদিও তারা জানতো যে ইস্রাইলীরা তামিলদেরকেও ট্রেনিং দিচ্ছে।

ইস্রাইল থেকে কেনা ২২টির মতো ‘ভোরা’ (Dvora), ‘সুপার ভোরা’ (Super Dvora) এবং ‘শালদাগ’ (Shaldag) ফাস্ট এটাক ক্রাফট চালনা করে এবং দেখে তারা শিখেছে; এবং পরবর্তীতে ‘কলম্বো-ক্লাস’ (Colombo-class)-এর ২০টি ফাস্ট এটাক ক্রাফট কলম্বো ডকইয়ার্ডে তৈরি করেছে। ২৫ মিটারের মতো লম্বা এই ক্রাফটগুলির গতি ঘন্টায় ৪৫ থেকে ৫০ নটিক্যাল মাইল এবং নখ-পর্যন্ত অস্ত্র-সজ্জিত! শ্রীলঙ্কার উপকূলীয় এলাকায় 4th Fast Attack Flotilla (4FAF)-এর অধীনে এগুলি সামরিক এবং বেসামরিক জাহাজের কনভয়কে নিরাপত্তা দিয়ে সামুদ্রিক যোগাযোগ পথগুলিকে সচল রেখেছিল। দ্বীপ দেশ হবার কারণে ওসব সমুদ্রপথ রক্ষা শ্রীলঙ্কার জন্যে অসম্ভব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সী টাইগারদের জিআরপি বোটগুলির গতিকে মোকাবিলা করতে সক্ষম হয়েছিল এই ক্রাফটগুলি। উভচর অভিযানের জন্যে ল্যান্ডিং শিপ, ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং পরিবহণ জাহাজগুলিকেও এগুলি এসকর্ট করতো। সী টাইগাররা তাদের ছোট বোটগুলিতে ২৩মিমি কামান ব্যবহার করতো, যা কিনা 4FAF-এর ক্রাফটগুলির কামানের সমান। তাই শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী ৩০মিমি কামান লাগিয়ে 4FAF-এর বোটগুলিকে আরও বেশি দূরত্ব থেকে গোলা ছোঁড়ার সুযোগ করে দেয়। ১৯৯০-এর দশকের শুরুতে তামিল গেরিলারা সুইসাইড বোট মোতায়েন করে। তবে ওই সুইসাইড বোটগুলি 4FAF-এর বোটগুলিকে গতি এবং ম্যানুভারিং-এ হারাতে পারতো না। ব্যাপারটা পাল্টে যায় ২০০২ থেকে ২০০৬-এর মাঝে যুদ্ধবিরতির সময়ে, যখন সী টাইগাররা বিদেশ থেকে সহায়তা নিয়ে আরও শক্তিশালী ইঞ্জিনের জিআরপি বোট ডেভেলপ করে। যুদ্ধবিরতি এবং ২০০৪-এর সুনামির ত্রাণ সহায়তার আড়ালে টাইগাররা তাদের শক্তি বৃদ্ধি করে নেয়; অনেক ইঞ্জিন আমদানি করে; তৈরি করে নতুন ডিজাইনের অনেক জিআরপি বোট। ২০০৬ সালে যুদ্ধ পুণরায় শুরু হলে এই বোটগুলি 4FAF-এর বোটগুলিকে হারাতে সক্ষম হচ্ছিলো। ৩৫-৪০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলা গোটা পনেরোটা সী টাইগার বোট এবং সাথে গোটা দশেক সুইসাইড বোট যখন একত্রে হামলা করে, তখন 4FAF-এর শক্তিশালী বোটগুলি হিমসিম খেতে শুরু করলো। কাঁটা দিয়ে কাঁটা তোলার সময় এলো বলে।
   
শ্রীলঙ্কা নৌবাহিনীর স্পেশাল বোট স্কোয়াড্রন। সামনের বোটগুলি হলো Arrow আর পিছনের বড় বোটটি হলো Inshore Patrol Craft (IPC)। এই বোটগুলি সী টাইগারদের সাথে যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দেয়।

প্লাস্টিক বোটেই ভরসা!

ল্যান্ডিং শিপ এবং পরিবহণ জাহাজগুলি থেকে যে ল্যান্ডিং ক্রাফটগুলি সৈন্য নিয়ে উপকূলে অবতরণ করতো, সেগুলিকে এসকর্ট দিতো আরেক ধরনের বোট, যেগুলি শ্রীলঙ্কানরা নিজেরা ডিজাইন করেছে। ‘এরো’ (Arrow) নামের ১৮ফুট (৫.৫ মিটার) লম্বা এই জিআরপি বোটগুলি ২৩মিমি কামান বা গ্রেনেড লঞ্চারে সজ্জিত থাকতো। ২০০৬-এ যুদ্ধ পুনরায় শুরুর পরে 4FAF-এর ফাস্ট এটাক ক্রাফটগুলি সী টাইগারদের নতুন বোটগুলির সাথে পেরে উঠছিলো না। ৪০ নটিক্যাল মাইল গতিতে চলতে সক্ষম ছোট্ট ওই বোটগুলিকে টার্গেট করা ছিল ভীষণ কঠিন। ঠিক সেসময় প্লাস্টিকের তৈরি এই ‘এরো’ বোটগুলি নৌবাহিনীকে বাঁচালো। ২০০৫ সালে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর নেতৃত্ব নেন ভাইস এডমিরাল (পরে এডমিরাল) ওয়াসান্থা কারান্নাগোডা (Wasantha Karannagoda)। তিনি তার বাহিনীতে Small Boat Concept চালু করেন। নতুন চিন্তার ফসল ওই বোটগুলি গতি এবং সংখ্যায় (ঝাঁকে ঝাঁকে) সী টাইগারদের মোকাবিলা করতে সক্ষম হলো। ছোট বোট দিয়েই ছোট বোটের মোকাবিলা করা সম্ভব হলো অবশেষে। এই বোটগুলি দিয়েই গঠিত হয়েছিল তাদের Rapid Action Boat Squadron (RABS)। ২০০৯ সালে ফেব্রুয়ারীতে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এডমিরাল কারান্নাগোডা বলেন যে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী তাদের ডকইয়ার্ডে গড়ে প্রতি ৮ দিনে একটি করে বোট তৈরি করছিল (মানে বছরে ৫০টির মতো), আর তখন পর্যন্ত তারা ১৫০টিরও বেশি বোট বানাতে পেরেছিল। ছয় থেকে আট মাসের গবেষণায় প্রথম বোটটা নৌবাহিনী তৈরি করতে সক্ষম হয়। এর পর থেকে সেটাকে তারা আরও উন্নত করেছে। মিলিয়ন ডলার দিয়ে বিদেশ থেকে আমদানি করা যুদ্ধজাহাজ পারেনি সী টাইগারদের হারাতে; বরং নিজেদের প্রকৌশলীদের ডিজাইন করা নিজেদের ডকইয়ার্ডে তৈরি সস্তা এই বোটগুলিই প্রমাণ করে যে আসল সমাধান পেতে চিন্তা করতে হয়, কারো কাছে হাত পাততে হয় না। এই বোটগুলি শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর স্পেশাল ফোর্স Special Boat Squadron (SBS)-ও ব্যবহার করে। বোটের তলা সমান হবার কারণে এগুলি উভচর অভিযানের সময়ে মাটিতে উঠে গিয়ে সৈন্যও নামাতে পারে। ২০০৬ সালের অগাস্টে ত্রিঙ্কোমালী বন্দরের অবরোধের সময় গোটা ত্রিশেক সী টাইগার বোট শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর কাছে পরাজিত হয়। ত্রিঙ্কোমালী থেকে জাফনায় চলাচলকারী ‘জেটলাইনার’ জাহাজে ছিল ১,১০০ সৈন্য, আর একই বছরে সী টাইগারদের দ্বারা আক্রান্ত হওয়া ‘পার্ল ক্রুজ ২’ জাহাজে ছিল ৭০০ সৈন্য। জাহাজগুলিকে রক্ষা করে নৌবাহিনীর 4FAF, RABS এবং SBS। ত্রিঙ্কোমালীর অবরোধ সফল হলে জাফনা উপদ্বীপে শ্রীলঙ্কার ৩০,০০০ সৈন্যের জন্যে সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যেত আর টাইগারদের বিরাট এক জয়ের আশা জাগতো। মোটকথা সী টাইগারদের ভয়ঙ্কর ছোট বোটগুলি তাদের কার্যকারিতা হারাতে থাকে।

শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীর RABS গঠিত হয় তিন ধরনের বোট দিয়ে। এর সবচাইতে ছোটটি হচ্ছে ‘এরো’। এর চাইতে বড়গুলির নাম দেওয়া হয়েছিল Inshore Patrol Craft (IPC)। প্রায় ১৫ মিটারের মতো লম্বা এই বোটগুলি ২৫টিরও বেশি তৈরি করা হয়েছিল, যেগুলির প্রধান কাজ ছিল সমুদ্রবন্দরের নিরাপত্তা দেওয়া, সমুদ্রে সী টাইগার বোটগুলিকে মোকাবিলা করা এবং উভচর অভিযানের সময় সৈন্য পরিবহণ করা। শ্রীলঙ্কা কোস্ট গার্ডের জন্যে এখন এগুলি তৈরি করা হচ্ছে। আর সবচাইতে বড় বোটটা ছিল ১৭ মিটারের মতো লম্বা, যেগুলি কমান্ড প্ল্যাটফর্ম হিসেবে ব্যবহৃত হতো।

শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল ওয়াসান্থা কারান্নাগোডা, সাথে প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে। শ্রীলঙ্কার তিন দশকের গৃহযুদ্ধ শেষ করার পিছনে এডমিরাল কারান্নাগোডার কৌশল এবং প্রেসিডেন্ট রাজাপক্ষের সাহসী পদক্ষেপের অবদান ছিল ব্যাপক।

জাহাজ-ধ্বংসী মর্টার??

শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ শেষ করার কৃতিত্ব অনেকেই দিতে চান ভাইস এডমিরাল কারান্নগোডাকে। এই স্বীকৃতি স্বরূপ শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাহিন্দ্রা রাজাপক্ষে তাকে এডমিরাল পদে পদোন্নতি দেন, যা কিনা শ্রীলঙ্কার ইতিহাসে প্রথম। তিনি সাফল্যের সাথে ছোট বোটের ব্যবহারই শুধু করেননি, তামিল টাইগারদের সাপ্লাই লাইনের কফিনে শেষ পেরেকটিও ঠোকেন। ২০০৬-এ পুনরায় যুদ্ধ শুরুর পর নৌবাহিনী অল্প সময়ে ১১টি ট্রলার ধ্বংস বা আটক করে, যেগুলি অস্ত্র চোরাচালান করছিল টাইগারদের জন্যে। কিন্তু এই ট্রলারগুলি আসছিল কোথা থেকে? সেই উতস ধরতে না পারলে তো ট্রলার ধরতেই থাকবে নৌবাহিনী, কিন্তু যুদ্ধ শেষ হবে না। নৌবাহিনীর ইন্টেলিজেন্স আরও উন্নত করা শুরু হলো। ফলশ্রুতিতে তথ্য আসতে লাগলো কোথা থেকে এই ট্রলার আসছে। জানা গেলো যে গভীর সাগরে শ্রীলঙ্কার সমুদ্রসীমার এমনকি অর্থনৈতিক অঞ্চলের বাইরে থেকে এই ট্রলার আসছে। সেখানে সাগরের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকে কিছু বাণিজ্যিক জাহাজ, যেগুলি অস্ত্র শুধু নিয়েই আসে না, অস্ত্রের ‘ভাসমান গুদাম’ হিসেবে কাজ করে। কয়েক বছরের যুদ্ধবিরতির সময়ে এই জাহাজগুলিকে অস্ত্র মজুতের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হয়েছিল। এডমিরাল কারান্নাগোডা এই ‘ভাসমান গুদাম’-গুলিকে টার্গেট করায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হলেন, সেটা যত কঠিন কাজই হোক না কেন।

এই পরিকল্পনা সফল করার পেছনে দুইটি সমস্যা ছিল। প্রথমতঃ শ্রীলঙ্কার নৌবহরে কোন ডেস্ট্রয়ার বা ফ্রিগেট এমনকি কর্ভেটও নেই, যা কিনা গভীর সাগরে গিয়ে মিশন শেষ করে ফেরত আসতে পারবে। আর দ্বিতীয়তঃ নিজেদের সমুদ্রসীমার বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক জলসীমানায় বাণিজ্যিক জাহাজ আক্রমণ করতে যে রাজনৈতিক সাহসের দরকার, সেটা শ্রীলঙ্কা সরকারের আছে কি? শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীতে গভীর সমুদ্রে চালনা করার মতো যুদ্ধজাহাজ বলতে ছিল তিনটি অফশোর প্যাট্রোল ভেসেল বা ওপিভি। প্রথম সমস্যার সমাধান এগুলি দিয়েই দেয়া হয়েছিল। ১৯৮৩ সালে শ্রীলঙ্কা সরকার ৩৩০ টনের ‘জয়াসাগারা’ তৈরি করে, যার ডিজাইন গভীর সাগরে চালনার জন্যে কতটা উপযোগী, সেটা প্রশ্ন করা যেতে পারে। (একই রকমের ‘সাগারাবর্ধনা’ তামিলরা ডুবিয়ে দেয় ১৯৯৪ সালে।) ২০০০ সালে ভারত তাদের ‘সুকণ্যা-ক্লাস’-এর ১,৮৯০ টনের একখানা ওপিভি শ্রীলঙ্কাকে উপহার দেয়, যেটার নাম রাখা হয় ‘সাইউরা’। ২০০৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র তাদের কোস্ট গার্ড থেকে ‘রিলায়েন্স-ক্লাস’-এর ১,১২৯ টনের ৩৬ বছরের পুরোনো একটি কাটার দেয়, যার নাম রাখা হয় ‘সামুদুরা’। এগুলিতে শক্তিশালী অস্ত্রের অভাব ছিল, যা তারা পূরণ করেছিল ৮১মিমি মর্টার, ১০৭মিমি রকেট এবং ১০৫মিমি কামান সাথে নিয়ে। স্থলবাহিনীর অস্ত্র এরকম অদ্ভুতভাবে সমুদ্রে ব্যবহৃত হলেও এতে যে কাজ হয়েছিল, তা কিছু ভিডিওতে পরিষ্কার বোঝা গেছে। জাহাজগুলিকে গভীর সমুদ্রে লম্বা মিশনে টিকিয়ে রাখতে ব্যবহার করা হয়েছিল পুরোনো তেলবাহী জাহাজ, বাণিজ্যিক পরিবহণ জাহাজ এবং মাছ ধরার ট্রলার। হতে পারে এগুলি দেখতে খুব একটা উন্নত হবে না, কিন্তু এতে কাজ চলেছে।
  
শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী ভারত মহাসাগরে হাজার হাজার মাইল চষে বেড়িয়েছে তামিল টাইগারদের সাপ্লাই জাহাজগুলিকে খুঁজে বের করে ধ্বংস করতে। এই মিশনগুলির ফলশ্রুতিতে সবাইকে অবাক করে দিয়ে অত্যন্ত অল্প সময়ে যুদ্ধ শেষ হয়ে যায়।

ছোট দেশটির বড্ড বাড় বেড়েছিল!

১৭ই সেপ্টেম্বর ২০০৬-এ তামিল টাইগারদের প্রথম জাহাজটিকে আক্রমণ করা হয় ২৫০কিমি দূরবর্তী সমুদ্রে; সেখানে শ্রীলঙ্কার বিমান বাহিনী সাপোর্ট দেয়। ২০০৭-এর ২৮শে ফেব্রুয়ারী দ্বিতীয় জাহাজটির উপরে আক্রমণ চালিত হয় ৩৬৫কিমি দূরের সমুদ্রে। এরপর বুঝতে পেরে টাইগাররা তাদের বাকি জাহাজগুলি আরও দূরের সমুদ্রে নিয়ে যায়। কিন্তু সেটা এডমিরাল কারান্নাগোডার নেতৃত্বে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনীকে থামাতে পারেনি। ১৮ই মার্চ ১,৮০০কিমি দূরে ইন্দোনেশিয়ার কাছাকাছি সমুদ্রে আরও দুইটি জাহাজে হামলা করে নৌবাহিনী। একই বছর ১০ই এবং ১১ই সেপ্টেম্বরে ২৪ ঘন্টার মাঝে তিনটি জাহাজে হামলা করা হয় – শ্রীলঙ্কা থেকে ৩,১০০কিমি দূরে; একেবারে অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্রসীমার কাছাকাছি!! এখানেই শেষ নয়! আরেকটি জাহাজ পালাতে সক্ষম হয়, তবে সেটা শুধু অক্টোবরের ১৭ তারিখ পর্যন্ত। নিজেদের দ্বীপ থেকে ৩,৪০০কিমি দূরে শ্রীলঙ্কার নৌবাহিনী জাহাজটিকে ধ্বংস করে! এক বছরের ভিতর এই আটটি জাহাজ ধ্বংস করার ফলে যুদ্ধের মোড় পুরোপুরি পরিবর্তিত হয়ে যায়। এই জাহাজগুলিতে যা ছিল, তার একটা ফিরিস্তি দেয়া যাক – ৮০ হাজার আর্টিলারি শেল, ১ লক্ষ মর্টার শেল, একটি বুলেটপ্রুফ জীপ, জোড়া লাগানো ছাড়া তিনটি বিমান, টর্পেডো, বিমান-ধ্বংসী মিসাইল, ফ্রগম্যানদের জন্যে ডাইভিং যন্ত্রপাতি, রাডার, জিআরপি বোটের ইঞ্জিন – সব মিলিয়ে প্রায় ১০,০০০ হাজার টন যুদ্ধ সরঞ্জাম! পরে আরও দুইটি জাহাজ ধ্বংস করা হয়। যুদ্ধের বাকি আড়াই বছরে তামিল টাইগারদের শক্তি ব্যাপকভাবে হ্রাস পায় এবং যুদ্ধের ফলাফল নিশ্চিত হয়। দেশ থেকে এতো দূরে গিয়ে বাণিজ্যিক জাহাজ ধ্বংস করতে পারার পিছনে যে অনেক শক্ত রাজনৈতিক প্রতিজ্ঞা ছিল, সেটা খুব সহজেই অনুমেয়। শ্রীলঙ্কার ততকালীন প্রেসিডেন্ট মহেন্দ্র রাজাপক্ষে একারণে যুদ্ধজয়ী প্রেসিডেন্ট বলে পরিচিতি পান। মাত্র চার বছরের চাইতেও কম সময়ে তিন দশকের যুদ্ধ কি করে জেতা সম্ভব হলো, সেটা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ভারত এবং পাকিস্তানে রাজনৈতিক এবং সমর বিশেষজ্ঞরা নড়েচড়ে বসলো। তারা বুঝে উঠতে চাইলো ব্যাপারটা। এজন্যেই শ্রীলঙ্কার সাথে তাদের আসাযাওয়াও বৃদ্ধি পেল।

বৃহত খেলায় ছোট্ট শিক্ষক
বৃহত খেলায় ছোট্ট খেলুড়ে হয়েও শ্রীলঙ্কা এতোবড় বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছিল তার জনগণের জন্যে, এটা উল্লেখ করতেই হয়। শ্রীলঙ্কাকে নিয়ন্ত্রণের ত্রিশ বছরের একখানা ফর্মূলা হঠাত অকার্যকর হয়ে গেল! ভূরাজনৈতিক সকল হিসেব গেল পালটে। বিশ্বের অপেক্ষাকৃত ছোট রাষ্ট্রগুলির কাছে এটা একটা বড় উদাহরণ হয়ে দাঁড়ালো। শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনী বাকি বিশ্বের কাছে সামরিক শিক্ষার কেন্দ্র হয়ে দেখা দিল। ‘এক্সারসাইজ করমোর‌্যান্ট স্ট্রাইক’ একারণেই অনেক বিদেশী অংশগ্রহণকারী যোগাড় করতে পারছে।

শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশের বন্ধু রাষ্ট্র; আর সেই দেশের মানুষের জন্যে এদেশের মানুষের কিছুটা সহানুভূতি রয়েছে তাদের অমায়িক চরিত্রের জন্যে। সেই চরিত্রকে সামনে তুলে ধরে তাদের ক্রিকেট দল। আমার নিজের অভিজ্ঞতা থেকেও বলতে পারি যে, আমি যেসব শ্রীলঙ্কানদের সাথে মিলিত হতে পেরেছি, তাদেরকে আমার বেশ ভদ্রলোক বলে মনে হয়েছে, যেখানে তাদের পার্শ্ববর্তী আরেকটি দেশের মানুষ নিয়ে মিশ্র অভিজ্ঞতা হয়েছে। আমরা যখন নিজেদের ম্যারিটাইম নেশন হিসেবে গড়ে তুলতে চাচ্ছি, তখন শ্রীলঙ্কা কিন্তু তাদের দেশ সম্পর্কেও একই কথা বলছে। আর প্রথমেই বলেছি যে আমাদের বাণিজ্যপথের কারণে শ্রীলঙ্কা আমাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ দেশ। সমুদ্রের নিরাপত্তার কথা নিয়ে আজকাল অনেকেই কথা বলছেন। আমরা বদ্বীপের দেশ এবং আমাদের এখানেও উপকূল পাহাড়া দেওয়াটা অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক এবং সামরিক দিক থেকে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। শ্রীলঙ্কার সামরিক বাহিনীর তিন দশকের যুদ্ধজয়ের বিশাল বাস্তব অভিজ্ঞতা থেকে আমাদের অনেক কিছু শেখার আছে। শ্রীলঙ্কার মতো সামরিক মহড়া আমাদের এখানে হলে সেটা যুগপত হতে পারে; আমরা তাদের কাছে শিখবো; তারাও আমাদের থেকে জানবে। আবার এধরনের মহড়া শ্রীলঙ্কাতেও হতে পারে, যেখানে আমাদের শেখার পরিধি বাড়বে বই কমবে না। বর্তমানের বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা সম্পর্ককে পরবর্তী স্তরে নিয়ে গেলে দুই দেশেরই লাভ।

2 comments:

  1. অনেক বেশি বিস্তৃত ও গবেষনামূলক লেখা। খুব ভালো লাগলো। সত্যি, নিজেদের প্রয়োজন নিজেদেরকেই মিটাতে হয়। এর ওর কাছ থেকে আর কত নিবো ??
    আজকে আমাদের দেশে জাহাজ নির্মান হচ্ছে, এদের থেকে কিছু ভালো এক্সপার্টদেরকে আরো উন্নত প্রশিক্ষন ও সেবা যত্ন করে আমাদের নিজেদের জন্যই আমরা অনেক কিছু তৈরী করতে পারি। শত্রুর জন্য আগে থেকেই তৈরী থাকলে শত্রু হয়তো ভয়েই সামনে এগুবে না। তাছাড়া নিজেদের তৈরী জিনিসের সাফল্য যখন ভালো হয়, তখন তা নিয়ে যেমন খুশি নাড়াচাড়া করে তা আরো ভালো করে তৈরী করা যেতে পারে যা কিনা অন্যের তৈরি করে দেয়া জিনিসের উপর চলে না। আর তাতে সাহস বাড়ে , মনে হয় যে আমার নিজের কিছু একটা আছে।

    ReplyDelete
  2. কারান্নোগোডায় মেইন খেলোয়াড়, তামিলদের মেইন সাপ্লাই লাইন বন্ধ করা না গেলে যুদ্ধটা হয়তো শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই যেত :) ধন্যবাদ!! অনেক কিছু জানলাম। লিখে যান

    ReplyDelete