Wednesday 20 October 2021

বঙ্গোপসাগরে পশ্চিমা শক্তি প্রদর্শনের আসল উদ্দেশ্য কি?

২০শে অক্টোবর ২০২১

বঙ্গোপসাগরে 'এক্সারসাইজ মালাবার ২০২১'। চীনারা এখন পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে কোন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ কেন, একটা বিমানও মোতায়েন করতে সক্ষম হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, বঙ্গোপসাগরে এতসব বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের মহড়া কাকে টার্গেট করে? এটা কি শুধু চীনকে নিয়ন্ত্রণের জন্যেই? যে চীনের বঙ্গোপসাগরে একটা প্যাট্রোল বোটও নেই? নাকি দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল দেখতে চাওয়াটা ইন্দোপ্যাসিফিককে নিয়ন্ত্রণে রাখার বড় কৌশলের মাঝেই একটা অপশন?

 
কয়েক মাস ধরে পূর্ব এশিয়ার সমুদ্রগুলি দাপিয়ে বেড়ানোর পর শক্তিশালী দেশগুলির যুদ্ধজাহাজগুলি মোটামুটিভাবে অক্টোবরের শুরু থেকেই বঙ্গোপসাগরে জড়ো হতে থাকে। প্রথমে আসে জাপানি নৌবাহিনীর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘কাগা’ এবং ডেস্ট্রয়ার ‘মুরাসামে’। শ্রীলংকার ‘দ্যা আইল্যান্ড’ পত্রিকা বলে যে, ২রা অক্টোবর জাহাজদু’টা তিন দিনের জন্যে কলম্বো বন্দরে ভিড়ে। ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকা বলে যে, ৬ই অক্টোবর থেকে ৮ই অক্টোবর জাপানি জাহাজগুলি ভারতীয় নৌবাহিনীর সাথে আরব সাগরে মহড়া দেয়। ‘জিমেক্স’ নামে আখ্যায়িত এই মহড়ায় ভারতীয় নৌবাহিনীর ডেস্ট্রয়ার ‘কোচি’ ফ্রিগেট ‘তেগ’, একটা ‘পি ৮আই’ প্যাট্রোল বিমান এবং ‘মিগ ১৯কে’ ফাইটার বিমান অংশ নেয়। জাপানের পর বঙ্গোপসাগরে হাজির হয় মার্কিন নৌবাহিনীর দৈত্যাকায় বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘কার্ল ভিনসন’। এর সাথে ছিল ক্রুজার ‘লেক শ্যাম্পলেইন’ এবং ডেস্ট্রয়ার ‘স্টকডেইল’। প্রায় একইসাথে বঙ্গোপসাগরে ঢোকে অস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর ফ্রিগেট ‘বালারাট’ এবং সাপ্লাই জাহাজ ‘সিরিয়াস’। জাপান, যুক্তরাষ্ট্র এবং আস্ট্রেলিয়ার নৌবাহিনীর এই জাহাজগুলির উদ্দেশ্য ছিল ‘এক্সারসাইজ মালাবার ২০২১’। মহড়ার আরেক অংশগ্রহণকারী হলো ভারত। এই মহড়ার প্রথম ধাপ এবছরের অগাস্টে প্রশান্ত মহাসাগরে হয়ে গেছে; অক্টোবর মাসের ১২ থকে ১৫ তারিখ ছিল মহড়ার দ্বিতীয় ধাপ। ভারতের পক্ষ থেকে অংশ নেয় ডেস্ট্রয়ার ‘রণবিজয়’, ফ্রিগেট ‘সাতপুরা’, ‘পি ৮আই’ প্যাট্রোল বিমান এবং একটা সাবমেরিন। এই চারটা দেশ হলো সাম্প্রতিক সময়ে গঠন করা ‘কোয়াড’ কৌশলগত জোটের অংশ। সরাসরি না বলা হলেও সব মিডিয়াতেই বলা হচ্ছে যে, এই জোটের উদ্দেশ্য হলো ইন্দোপ্যাসিফিকে চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা।

অস্ট্রেলিয়ার ফ্লোটিলা কমান্ডার রিয়ার এডমিরাল মার্ক হ্যামন্ড বলেন যে, এই মহড়ার মাধ্যমে তাদের যৌথ সক্ষমতা তৈরি হচ্ছে; যার মাধ্যমে তারা ইন্দোপ্যাসিফিককে মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং প্রাণবন্ত রাখবেন। মার্কিন নৌবাহিনীর চিফ অব নেভাল অপারেশন্স এডমিরাল মাইক গিলডে বলছেন যে, মুক্ত ইন্দোপ্যাসিফিকের শক্তিশালী ঘাঁটি হলো ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুত্ব। তিনি আরও বলেন যে, কেউ যেন ভুল না করে যে, ভারত যুক্তরাষ্ট্রের সবচাইতে কাছের কৌশলগত বন্ধুদের একটা। ‘কোয়াড’এর কোন ঘোষণাতেই বলা হয়নি যে, এই জোট চীনকে মাথায় রেখে তৈরি হয়েছে। তবে ভারতীয় মিডিয়ায় এই মহড়ার লক্ষ্য কি, তা কোন রাখঢাক না রেখেই প্রচার করা হয়। মূলতঃ চীনকে টার্গেট করেই এই মহড়া দেয়া হয় বলে উল্লেখ করে ‘টাইমস নাউ নিউজ’। বেইজিং ‘কোয়াড’ জোটের কর্মকান্ডের খেয়াল রাখছে বলে বলা হয়। গত মাসে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ‘কোয়াড’ শীর্ষ বৈঠকে যোগ দিলে চীনা সরকার ভারতকে পশ্চিমাদের চিন্তার ফাঁদে না পড়ার আহ্বান জানায়।

 
ব্রিটিশ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ 'কুইন এলিজাবেথ' এবং 'সিএসজি২১'। ব্রিটিশরা বলছে যে, ইন্দোপ্যাসিফিককে মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উন্নত রাখতে ভারত অতি গুরুত্বপূর্ণ। ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসের জন্মদাতা ব্রিটেন অবশ্যই জানে যে দিল্লী সরকারের উগ্রবাদী কর্মকান্ড পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থির করতে পারে। তারপরেও কেন দিল্লীকে এতটা আলিঙ্গন? 

ব্রিটিশরা কেন ‘মালাবার’এর বাইরে?

ব্রিটিশ রয়াল নেভিও একই সময়ে একই এলাকায় শক্তিশালী অবস্থান নেয়। ১১ই অক্টোবর সিঙ্গাপুরে অবস্থান নেয় ব্রিটিশ রয়াল নেভির বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘কুইন এলিজাবেথ’। কিন্তু জাহাজটা আপাততঃ ভারত মহাসাগরে ঢোকা থেকে বিরত থাকে। তবে এই জাহাজের নেতৃত্বে ‘ক্যারিয়ার স্ট্রাইক গ্রুপ ২১’ বা ‘সিএসজি২১’ ফ্লিটের অংশ ফ্রিগেট ‘কেন্ট’কে পাঠানো হয় বঙ্গোপসাগরে। ১৪ই অক্টোবর জাহাজটা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে ঢোকে। ভারতীয় মিডিয়া ব্রিটিশদের পরিকল্পনার ব্যাপারে নিশ্চিত ছিল না। ১২ই অক্টোবর ‘দ্যা হিন্দু’ পত্রিকা মার্কিন এডমিরাল গিলডের বরাত দিয়ে বলে যে, ‘মালাবার’ মহড়া আরও বড় হবে কিনা, তা নির্ভর করবে ‘কোয়াড’ সদস্যদের সিদ্ধান্তের উপর। এর আগে ৩০শে সেপ্টেম্বর ‘টাইমস নাউ নিউজ’ বলে যে, ব্রিটিশ রয়াল নেভি ‘মালাবার’ মহড়ায় যুক্ত হবার জন্যে প্রস্তাব দিয়েছে। যদি ব্রিটেন এর অংশ হয়, তবে এর নাম হবে ‘এক্সারসাইজ ম্যারিন প্যাট্রোল’। এটা বাস্তবে রূপ নিলে প্রকৃতপক্ষে তা হবে ‘অকাস প্লাস টু’। অর্থাৎ সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে স্বাক্ষরিত ‘অকাস’ কৌশলগত চুক্তির দেশগুলির সাথে ভারত এবং জাপানকেও যুক্ত করা হবে। ভারতীয়রা চিন্তা করতে থাকে যে, যেহেতু অক্টোবর মাসেই ব্রিটিশ রয়াল নেভির সাথে ভারতীয়দের একটা বড় মহড়া রয়েছে; তদুপরি তাদের অপর বন্ধু দেশ ফ্রান্স এবং রাশিয়া এব্যাপারটাকে কিভাবে দেখবে? মোটকথা, রয়াল নেভির ‘মালাবার’ মহড়ায় অংশ নেয়ার প্রস্তাব ভারতীয়দের বিচলিতই করেছিল। ‘কোয়াড’এ ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার অংশ অস্ট্রেলিয়া সদস্য হিসেবে রয়েছে। ব্রিটেন হয়তো এতেই খুশি থাকবে। কারণ এতে ব্রিটেন ‘কোয়াড’এর শক্তি প্রদর্শনের বাইরে গিয়ে কূটনৈতিক তৎপরতা চালাতে পারবে। যেমনটা তারা করেছে ‘মালাবার’এর সময় চট্টগ্রামে তাদের ফ্রিগেট ‘কেন্ট’কে পাঠিয়ে।

‘টাইমস অব ইন্ডিয়া’ জানাচ্ছে যে, ‘মালাবার’ শেষ হবার প্রায় সাথেসাথেই ব্রিটিশ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ ‘কুইন এলিজাবেথ’ বঙ্গোপসাগরে প্রবেশ করে। এই জাহাজের গ্রুপ ভারতীয় তিন বাহিনীর সাথে মহড়ায় অংশ নেবে। ভারতীয় তিন বাহিনীর সাথে মহড়া এর আগ পর্যন্ত শুধুমাত্র যুক্তরাষ্ট্র এবং রাশিয়ার সাথে হয়েছে। ব্রিটেন এখানে নতুন করে নাম লেখাতে যাচ্ছে। এই মহড়া চলবে অক্টোবরের ২১ থেকে ২৭ তারিখ পর্যন্ত ভারতের পশ্চিম উপকূলে আরব সাগরে। ভারতে ব্রিটিশ হাই কমিশনার এলেক্স এলিস বলছেন যে, ইন্দোপ্যাসিফিককে মুক্ত, অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং উন্নত রাখতে ভারত অতি গুরুত্বপূর্ণ। তিনি আরও বলেন যে, ভারতে ব্রিটিশ বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের সফর দুই দেশের প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সম্পর্কের গভীরতা বৃদ্ধিকে দেখিয়ে দেয়। ব্রিটেনের ফার্স্ট সী লর্ড এডমিরাল টনি রাডাকিন বলছেন যে, দুই দেশের সামরিক বাহিনীর মহড়া কৌশলগত বন্ধুত্বকে আরও গভীর করবে।

আসল টার্গেট কে?

এতসব মহড়ার আয়োজন যদি চীনকে টার্গেট করেই হয়ে থাকে, তবে কিছু প্রশ্ন এসেই যায়। বঙ্গোপসাগর বা আরব সাগরে এখন পর্যন্ত চীনের কোন নৌঘাঁটি হয়নি। জিবুতিতে চীনা ঘাঁটিতে স্থায়ীভাবে কোন যুদ্ধজাহাজ মোতায়েন নেই। চীনের যুদ্ধজাহাজ ভারত মহাসাগরে আসছে ঠিকই, কিন্তু তারা মার্কিন বা ব্রিটিশদের মতো শক্তি প্রদর্শনের ধারেকাছেও আসতে পারেনি। চীনারা এখন পর্যন্ত ভারত মহাসাগরে কোন বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ কেন, একটা বিমানও মোতায়েন করতে সক্ষম হয়নি। তাহলে প্রশ্ন হলো, বঙ্গোপসাগরে এতসব বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের মহড়া কাকে টার্গেট করে? ভারত মহাসাগরে মাঝে মাঝে সফরে আসা চীনা নৌবাহিনীর জাহাজগুলি কি মার্কিন, ব্রিটিশ বা ভারতীয় নৌবাহিনীর বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজের বহরকে হুমকির মাঝে ফেলছে?

‘কোয়াড’ সদস্যরা চীনের হুমকির কথা বলছে। কিন্তু ইন্দোপ্যাসিফিককে ‘মুক্ত’ রাখার কথা বলে বিশাল সামরিক শক্তির প্রদর্শন তো ভীতি প্রদর্শন ছাড়া কিছুই নয়। আর ভারতকে অপরিহার্য কৌশলগত বন্ধু বলে আখ্যা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন উগ্রবাদী মোদি সরকারের মুসলিম নির্যাতনের ব্যাপারে চুপ করে থাকছে। বিজেপি সরকারের আসামে লাখো বাঙ্গালী মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ১১ লক্ষ রোহিঙ্গা উদ্বাস্তুকে স্থান দেয়া পার্শ্ববর্তী বাংলাদেশে কি অর্থ বহণ করে সেটা দিল্লীর হিন্দুত্ববাদী সরকার যেমন জানে, তেমনি জানে লন্ডন এবং ওয়াশিংটন। একইসাথে ভারতীয় উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ইতিহাসের জন্মদাতা ব্রিটেন অবশ্যই জানে যে দিল্লী সরকারের উগ্রবাদী কর্মকান্ড পুরো দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থির করতে পারে। তারপরেও কেন দিল্লীকে এতটা আলিঙ্গন? এটা কি শুধু চীনকে নিয়ন্ত্রণের জন্যেই? যে চীনের বঙ্গোপসাগরে একটা প্যাট্রোল বোটও নেই? নাকি দক্ষিণ এশিয়াকে অস্থিতিশীল দেখতে চাওয়াটা ইন্দোপ্যাসিফিককে নিয়ন্ত্রণে রাখার বড় কৌশলের মাঝেই একটা অপশন? চীনকে নিয়ন্ত্রণ, নাকি ইন্দোপ্যাসিফিককে নিয়ন্ত্রণ? পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা এখন ক্রান্তিলগ্নে। তাই ভূরাজনৈতিক সমীকরণে শুধু চীন নয়, পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার সম্ভাব্য বিকল্পকেও রাখতে হবে। কারণ চীন নয়, বরং পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি হুমকিটাই যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনকে ইন্দোপ্যাসিফিকে এতটা আগ্রাসী আচরণ করাচ্ছে।

4 comments:

  1. যদি চীন না হয়ে থাকে তাহলে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার প্রতি actual threat আসলে কোনটা বা কারা যার জন্য আমেরিকা-বৃটেন এত আগ্রাসী মনোভাব প্রকাশ করছে ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চলে???

    ReplyDelete
    Replies
    1. উত্তরটা লেখা মাঝেই দেয়া আছে - পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার বিকল্প ব্যবস্থা।

      Delete
  2. আপনি উল্লেখ করেছেন যে, "পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থা এখন ক্রান্তিলগ্নে।তাই ভূরাজনৈতিক সমীকরণে শুধু চীন নয়, পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার সম্ভাব্য বিকল্পকেও রাখতে হবে।"

    এখানে ২টো প্রশ্ন করতে চাই,
    ১, পশ্চিমা ব্যবস্থা যেহেতু লিবরাল রিপাব্লিক /ডেমোক্রেসি মাধ্যমে শাসন করে সেহেতু তারা কেনো দক্ষিন এশিয়া বা ইন্দোপ্যসিফিকে ডেমোক্রেটিক রাষ্ট্রগুলো বা ঐ জাতীয় সেকুলার রাষ্ট্র গুলোর প্রতিষ্ঠান গুলোকে মজবুত করার কথা বলছে না কেনো।! যেমন -ইন্ডিয়া।

    ২, তারা কি মনে করছে ইন্দোপ্যাসিফিক অঞ্চল থেকেই নতুন বিশ্বব্যাবস্থার উৎপত্তি হতে পারে / এশিয়া থেকে হতে পারে?

    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. পশ্চিমা বিশ্বের সমস্যা তো আজকে থেকে শুরু হয়নি। তাদের সমস্য বেশ গভীর; কারণ তা মূলতঃ তাদের আদর্শকে ঘিরেই। পশ্চিমারাই তাদের আদর্শকে এখন তুলে ধরতে চাইছে না। জাতীয় স্বার্থ এখন তাদের আদর্শকে রক্ষার চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। বাগদাদ, কাবুল বা গুয়ান্তানামোর জেলখানায় বিনা বিচারে মানুষকে বেঁধে রেখে অত্যাচার করে তাদের উলঙ্গ ছবি বিশ্বের কাছে তুলে ধরা; অথবা ইরাক, সিরিয়া ও আফগানিস্তানে লাখ লাখ মানুষকে হত্যা করার পর পশ্চিমা আদর্শের গুরুত্বপূর্ণ ভিত্তি মানবাধিকার এখন ধূলিস্মাত। চীনের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর পর মুক্ত বাণিজ্য এখন অর্থহীন। দেশে দেশে মুসলিম নিধনকে সমর্থন দিয়ে পশ্চিমারা তাদের বিশ্বাসগত স্বাধীনতার কনসেপ্টকে নিজেরাই ধ্বংস করেছে। পশ্চিমা বিশ্বেই এখন নারীস্বাধীনতা মৃতপ্রায়। পার্লামেন্ট ভবনেই যখন নারীরা নিরাপদ থাকে না, তখন পশ্চিমা গণতন্ত্রের স্বরূপ বোঝা যায়।

      গণতন্ত্র হলো মানুষের তৈরি আইনের মাধ্যমে শাসন। আর পশ্চিমারা এই এই আইনের মাঝে তাদের আদর্শগুলিকে ফাউন্ডেশন হিসেবে রেখেছে; যার মাঝে রয়েছে মানবাধিকার, মুক্ত বাজার অর্থনীতি, বিশ্বাসগত স্বাধীনতা, নারীস্বাধীনতা, ইত্যাদি। অর্থাৎ এই আদর্শগুলি আইন হিসেবে না থাকলে এটাকে গণতন্ত্র বলা যাবে না। পশ্চিমারা যখন তাদের আদর্শের স্তম্ভগুলিকেই রক্ষা করতে পারছে না, তখন বাকি বিশ্বে তারা সেই একই আদর্শকে রক্ষা করতে কি করছে, তা অর্থহীন। এরকম একটা পরিস্থিতিতে পশ্চিমারা ভয়ে রয়েছে তাদের ধ্বসে পড়া ব্যবস্থার বিকল্পের ব্যাপারে; সেটা যেখানেই হোক না কেন।

      Delete