Friday 15 October 2021

ভারতের বিজেপি সরকারের ধর্মান্ধ কর্মকান্ড দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ভারতের অস্তিত্ব রক্ষা এখন দক্ষিণ এশিয়ার চ্যালেঞ্জ!

১৬ই অক্টোবর ২০২১

সেপ্টেম্বর ২০২১। আসামের মুসলিমদের বাস্তুচ্যুত করার জন্যে পুলিশী অভিযান। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস নতুন নয়; তবে মোদির বিজেপি সরকার প্রথমবারের মতো ভারতের সেকুলার পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এতটাই স্থায়ী রূপ নিচ্ছে যে, দেশটার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটা এখন আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরের উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মকান্ডের প্রভাবের সীমানা অতিক্রম রোধ করার চিন্তাটাই দক্ষিণ এশিয়াকে সেই সহযোগিতার পথে হাঁটাবে।

 বাংলাদেশে বাঙালি হিন্দুদের অনুষ্ঠান দূর্গাপুজার পুজামন্ডপে পবিত্র কূরআন পাওয়ার ঘটনা এবং পরবর্তীতে সেটাকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন পুজামন্ডপে হামলা দেশটার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে চ্যালেঞ্জ করে। পরদিন ১৪ই অক্টোবর ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র অরিন্দম বাগচি সাংবাদিকদের বলেন যে, তারা বাংলাদেশে ধর্মীয় অনুষ্ঠানে হামলার খবর পেয়েছেন, যা তাদেরকে দুশ্চিন্তা দিয়েছে। তবে বাগচি বলেন যে, বাংলাদেশ সরকার দ্রুতই ঘটনার নিয়ন্ত্রণ নেয়ার জন্যে ব্যবস্থা নেয়। একইসাথে তিনি এও বলেন যে, তাদের জানা রয়েছে যে, বাংলাদেশে দূর্গাপুজার অনুষ্ঠান সরকারের সহায়তাতেই হয়ে থাকে। ভারতের পররাষ্ট্র দপ্তর বাংলাদেশ সরকারের পদক্ষেপের পক্ষে কথা বললেও ভারতের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্যের বিজেপি নেতা সামিক ভট্টাচার্য্য বাংলাদেশ সরকারকে দোষারোপ করেন। তিনি বলেন যে, বাংলাদেশের হিন্দুদের উপর এরকম নির্যাতন গত কয়েক মাসে বৃদ্ধি পেয়েছে; আর সেখানে সরকার চুপ করে দেখছে। একই দিনে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হিন্দুদের বিভিন্ন সংগঠনের নেতা ও প্রতিনিধিদের সাথে পুজার শুভেচ্ছা জানানোর অনুষ্ঠানে কঠোর ভাষায় এই কর্মকান্ডের পিছনে যারা জড়িত, তাদের শাস্তি দেবার কথা বলেন। একইসাথে তিনি ভারতকে উদ্দেশ্য করেও কিছু বলেন, যা অনেক মিডিয়াই এড়িয়ে যায় অথবা হাইলাইট না করার সিদ্ধান্ত নেয়।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন যে, ভারত ১৯৭১ সালে বাংলাদেশকে স্বাধীনতা পেতে সহায়তা দিয়েছে; যার জন্যে তাদের কথা বাংলাদেশ সবসময় কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করে। কিন্তু ভারতকে সাবধান থাকতে হবে যে, সেখানেও যাতে এমন কোনকিছু যেন না করা হয়, যা বাংলাদেশের উপরেও প্রভাব ফেলে এবং বাংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর আঘাত আসে। তিনি আরও বলেন যে, ধর্মান্ধরা সবসময়ই ধর্মীয় সংঘাত দেখতে চায়। এরা শুধু মুসলিমদের মাঝ থেকেই আসে না; অন্যান্য ধর্ম থেকেও আসে। শেখ হাসিনা ভারতের কোন ঘটনাকে নির্দিষ্ট করে না বললেও ভারতীয় মিডিয়া এই যোগসূত্র ধরতে ভুলেনি।

ভারতীয় পত্রিকা ‘দ্যা টেলিগ্রাফ’ বলছে যে, শেখ হাসিনা এমন সময়ে কথাগুলি বললেন, যখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ্য বাংলাদেশে এমন একটা ধারণা জন্মেছে যে, ২০১৪ সালে বিজেপি সরকার ক্ষমতা নেবার পর থেকে ভারতের মুসলিমদের অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। ভারতের নরেন্দ্র মোদি সরকারের নতুন নাগরিকত্ব আইন, যার মাধ্যমে আসামে অগুণিত বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমকে বেআইনী বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারী আখ্যা দিয়ে নাগরিকত্ব কেড়ে নিয়ে বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে এবং ‘আর্টিকেল ৩৭০’ পরিবর্তনের মাধ্যমে ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মিরের বিশেষ স্ট্যাটাস বাতিল করে সেখানে অন্য অঞ্চলের হিন্দুদের বসতি স্থাপনের ব্যবস্থা করার পরিকল্পনা বাংলাদেশে মুসলিম বিরোধী কর্মকান্ড বলে পরিচিতি পেয়েছে।

গত ২৩শে সেপ্টেম্বর আসামের দারাং জেলায় তথাকথিত ‘বেআইনী বসতি স্থাপনকারী’দের বাস্তুচ্যুত করার পুলিশী মিশনে সাধারণ জনগণ বাধা দেয়। ‘হিন্দুস্তান টাইমস’ বলছে যে, এই সংঘর্ষে পুলিশের গুলিতে দু’জন ব্যক্তির মৃত্যু হয়। প্রতিবেদনে বলা হয় যে, সিপাঝার অঞ্চলের ধলপুর গ্রামে পুলিশের এই অভিযানের সময় করা এক ভিডিওতে দেখা যায় যে, এক ব্যক্তি পুলিশ এবং একজন ফটোগ্রাফারকে তাড়া করছে। এরপর একসময় পুলিশ সদস্যরা সেই ব্যক্তিকে ঘিরে ফেলে। সে মাটিতে পড়ে যায়, কারণ তার বুকে গুলি লেগেছিল। পুলিশ তখন তার উপর লাঠি দিয়ে আঘাত করতে থাকে। এরপর সেখানকার এক ফটোগ্রাফার বিজয় শংকর বানিয়া পড়ে যাওয়া মানুষটাকে লাথি মারতে থাকে এবং তার শরীরের উপর উঠে লাফাতে থাকে। একসময় সকলে যখন বুঝতে পারে যে, সে মৃত্যুবরণ করেছে, তখন পুলিশ তার মৃতদেহ সরিয়ে নিয়ে আসে। পুলিশ বলে যে, মৃত দুই ব্যক্তির নাম মইনুল হক এবং শেখ ফরিদ। পত্রিকার প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ধলপুর গ্রামের অধিকাংশ মানুষ বাংলা ভাষাভাষী মুসলিম। শেখ ফরিদ ছিল ১২ বছর বয়সী এক শিশু, যে পোস্ট অফিস থেকে সেখান দিয়ে বাড়ি যাচ্ছিল। ৩৫ বছর বয়সী মইনুল হক ছিলেন একজন সাধারণ গ্রামবাসী।

আসামের মূখ্যমন্ত্রী হিমান্ত বিশ্ব সর্মা বলেন যে, পুলিশ তাদের নিজেদের কাজ করছে। তিনি বলেন যে, তার পাওয়া তথ্য অনুযায়ী পুলিশ জনগণের কাছ থেকে রামদা, বল্লম এবং অন্যান্য অস্ত্র দ্বারা আক্রমণের শিকার হয়। তিনি পরিষ্কার করেন যে, বাস্তুচ্যুত করার এই মিশন চলবে। হিমান্ত সর্মা একসময় কংগ্রেস দলের সদস্য থাকলেও ২০১৫ সালে তিনি দল বদল করে বিজেপিতে যোগ দেন। ‘দ্যা ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস’ বলছে যে, আসামের ধলপুর গ্রামের উত্তেজনা সেদিনই বন্ধ হয়ে যায়নি। পুলিশ ৩০শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আরও তিন ব্যক্তিকে ২৩শে সেপ্টেম্বরের ঘটনায় ইন্ধন যোগাবার অভিযোগে গ্রেপ্তার করে।

ভারতের পূর্ব সীমানার কাছে আসামে যখন মুসলিমদের জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত করা হচ্ছে, তখন পশ্চিম সীমান্তে কাশ্মিরে নতুন করে সংঘর্ষ শুরু হয়েছে। ১১ই অক্টোবর ভারত অধিকৃত কাশ্মিরের পুঞ্চ জেলায় নিরাপত্তা বাহিনী বিচ্ছিন্নতাবাদী গেরিলাদের খোঁজা শুরু করলে গোলাগুলিতে পাঁচজন ভারতীয় সেনা নিহত হয়। এর কিছুদিন আগেই কাশ্মিরে সংখ্যালঘু হিন্দু বেসামরিক জনগণের উপর আক্রমণ শুরু হয়। হামলা এবং পাল্টা হামলায় বেশ কয়েকজন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়। ‘বিবিসি’র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, অনেক সংখ্যালঘু পরিবারই এখন কাশ্মির ছাড়তে শুরু করেছে। তারা বলছে যে, এখন ১৯৯০এর দশকের মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে সরকার কাশ্মিরে শান্তি ফেরার যে দাবিগুলি করছিল, তা প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ২০১৯ সালে বিজেপি সরকার কাশ্মিদের বিশেষ স্ট্যাটাস বাতিল করার পর থেকেই ভারতের একমাত্র মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চল কাশ্মিরে জনসংখ্যা বিষয়ক পরিবর্তন আনতে চেষ্টা চালাচ্ছে।

ধর্মান্ধতাকে উপজীব্য করে ধ্বংসাত্মক কার্যকলাপে জড়িয়ে ভারতের বিজেপি সরকার শুধু ভারত তৈরির স্তম্ভকেই প্রশ্নবিদ্ধ করে ক্ষান্ত হয়নি, পুরো দক্ষিণ এশিয়াতেও ধর্মীয় সহিংসতাকে উস্কে দিয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র হিসেবে ভারতের সাম্প্রদায়িকতার ইতিহাস নতুন নয়; তবে মোদির বিজেপি সরকার প্রথমবারের মতো ভারতের সেকুলার পরিচয়কে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। ভারতের অভ্যন্তরীণ বিভাজন এতটাই স্থায়ী রূপ নিচ্ছে যে, দেশটার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখাটা এখন আঞ্চলিক চ্যালেঞ্জ হয়ে যাচ্ছে। ভারতের অভ্যন্তরের উগ্র হিন্দুত্ববাদী কর্মকান্ডের প্রভাবের সীমানা অতিক্রম রোধ করার চিন্তাটাই দক্ষিণ এশিয়াকে সেই সহযোগিতার পথে হাঁটাবে।

9 comments:

  1. ভারতের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখবার জন্য আমাদের এত খায়েস কেন? আমরা কি ঘরের খেয়ে বনের মহিষ তাড়ায় বেড়াবার জন্য স্বাধীন হয়েছি?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমরা প্রতিবেশী ভারত, পাকিস্তান বা মিয়ানমারের ব্যাপারে যতটা জাতীয়তাবাদী, ব্রিটেন বা যুক্তরাষ্ট্রের ব্যাপারে কিন্তু আমরা ততটা জাতীয়তাবাদী নই। বাংলাদেশের সীমানায় ভারতীয় যুদ্ধজাহাজ আমাদের মাথাব্যাথার কারণ হয়; কিন্তু ব্রিটিশ বা মার্কিন যুদ্ধজাহাজ দেখলে হয় না। অথচ ব্রিটেন এবং যুক্তরাষ্ট্র হলো সাম্রাজ্যবাদী শক্তি। শুধু তাই নয়, ব্রিটেন দু'শ বছর এই এলাকায় ঔপনিবেশি শাসক ছিল এবং ১৯৪৭ সালে সে এই উপমহাদেশকে ভাগ করে রেখে যায়। র‍্যাডক্লিফের এঁকে দেয়া সেই সীমানাগুলিকেই আমরা পবিত্র ধরে নিয়েছি। তাই পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে নতুন দেশ তৈরি করেছিল; কিন্তু সেই দেশের সীমানা নতুন করে আঁকিনি। সবকিছু পরিবর্তন করেছি; সীমানা ছাড়া!

      যাই হোক, ব্রিটিশদের সেই ডিভাইড এন্ড রুল নীতিই আমরা মাথা পেতে নিয়েছি। তাই সীমানার ওপাড়ে কোনকিছুই নিজেদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে, তা মনে করিনি। রেঙ্গুনে আমাদের প্রভাব থাকা দরকার ছিল কিনা, তা আমরা কখনোই বুঝতে পারনি। এর ফলশ্রুতিতে এখন ১১ লক্ষ শরণার্থী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে রয়েছে। এই ভুল আরেকবার করা, অর্থাৎ দিল্লী, কোলকাতা, গৌহাটি বা আগরতলাতে নিজেদের প্রভাব না রাখার মানে আরও লক্ষ লক্ষ শরণার্থী নয়; কোটি কোটি শরণার্থী।

      শুধু তাই নয়, ব্রিটিশদের এঁকে দেয়া সীমানার ওপারে কিছু পাগল মশাল হাতে খড়ের গাদার ওপরে দাঁড়িয়ে আছে। আমরা যদি না বুঝি যে, সেই খড়ের গাদা আমাদের দেশেও রয়েছে; অর্থাৎ সীমানার ওপাড়ে আগুন লাগানো মাত্রেই এপাড়েও আগুন লাগবে, তার অর্থ হচ্ছে আমরা ব্রিটিশদের নির্দেশ ছাড়া এখনও চলতে পারি না। ব্রিটিশরা বলে দিচ্ছে যে, আমরা কতটুকু করতে পারবো বা পারবো না। এই সুযোগটাই তারা নিয়েছে মিয়ানমারের ক্ষেত্রে এবং আমাদের উপরে ১১ লক্ষ উদ্বাস্তু চাপিয়ে দিয়েছে। তারাই আমাদের জন্যে নিয়ম বেধে দিয়েছে যে, সীমানার ওপাড়ে প্রভাব তৈরি করা যাবে না; ওটা তাদের "অভ্যন্তরীণ" বিষয়! অথচ ঔপনিবেশিকরা সর্বদাই আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে; আমরা এব্যাপারে কিছুই বলি না। আমরা তাদেরকে এব্যাপারে জন্মগত অধিকার যেন দিয়েই দিয়েছি!

      প্রভাবশালী দেশ অর্থ হলো নিজের গন্ডি থেকে বের হতে হবে এবং দায়িত্ব নিতে হবে। এটা না করতে পারলে ঔপনিবেশিকদের নির্দেশ বাস্তবায়ন ছাড়া কোনকিছুই হবে না। তারা বলে দেবে আমরা কতটুকু করবো - আর আমরা জ্বি হুজুর বলে ততটুকুই করবো - এই দিন শেষ।

      Delete
    2. বাংলাদেশ কি বর্তমান বিশ্বে নর্মালাইজড নেশন-স্টেট কন্সেপ্ট থেকে কি বেরোতে পারবে ? মনে হয় না। কারন এর জন্মই তো হয়েছে নেশন-স্টেট কন্সেপ্টকে মাথায় রেখে!
      তাই বাংলাদেশ এর বাইরে ভাবতে পারবে না।
      ধন্যবাদ।

      Delete
    3. বর্তমান বিশ্ব যে ব্যবস্থায় চলছে, তার একটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো নেশন স্টেট বা জাতিরাষ্ট্রের কনসেপ্ট। এর উৎপত্তি হলো ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের সাথে। এর মাধ্যমে ইউরোপের রাষ্ট্রগুলি মেনে নিয়েছিল যে, তারা মেনে নেয়া সীমানার বাইরে কোন ধরনের হস্তক্ষেপ করবে না। এই নিয়মটা তারা তৈরি করেছিল নিজেদের মাঝে এবং পরবর্তীতে উপনিবেশ ছেড়ে যাবার সময় উপনিবেশগুলিকে এই নিয়ম মানতে বাধ্য করেছে (আন্তর্জাতিক আইন হিসেবে)। শুধু পশ্চিমা দেশগুলিই তাদের উপনিবেশগুলিতে (প্রাক্তন) হস্তক্ষেপ করতে পারবে বলে নিজেদের মাঝে একটা অলিখিত নিয়ম তারা রেখে দিয়েছে। তবে কোন অবস্থাতেই অন্যান্য দেশ এই নিয়ম ভাঙতে পারবে না। কিন্তু সমস্যা হলো, বর্তমান বিশ্ব এবং বিশৃংখলার মাঝ দিয়ে যাচ্ছে; নেতৃত্বহীনভাবে। একইসাথে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার একটা ভিত্তি এই ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম এখন নামমাত্র দাঁড়িয়ে আছে।

      ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমের বরখেলাপ হয় এমন কিছু উদাহরণ এখানে দেয়া হলো। এদের অনেকেই গ্রেট পাওয়ারদের পক্ষে হস্তক্ষেপ করলেও ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেমে এটা হবার কথা নয়। অর্থাৎ সিস্টেম পরিবর্তন হয়েছে কোন ঘোষণা না দিয়েই।

      ১। লিবিয়াতে তুরস্ক, আমিরাত, মিসরের হস্তক্ষেপ (রাশিয়া, ফ্রান্স গ্রেট পাওয়ার বলে নাম আসবে না)
      ২। নাগোর্নো কারাবাখের যুদ্ধে আজেরবাইজানের পক্ষে তুরস্কের হস্তক্ষেপ।
      ৩। ইয়েমেনে সৌদি গ্রুপ এবং ইরানের হস্তক্ষেপ।
      ৪। সিরিয়াতে ইরান এবং তুরস্কের হস্তক্ষেপ (রাশিয়া গ্রেট পাওয়ার)
      ৫। ইরাকে ইরানের হস্তক্ষেপ (যুক্তরাষ্ট্র গ্রেট পাওয়ার)
      ৬। ইথিওপিয়ার যুদ্ধে এরিত্রিয়ার হস্তক্ষেপ।
      ৭। সোমালিয়ার বিচ্ছিন্নতাবাদী এলাকা সোমালিল্যান্ডকে আমিরাত, মিশর এবং কেনিয়ার সহায়তা।
      ৮। আফগানিস্তানে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ।
      ৯। মোজাম্বিকের কাবো দেলগাদোতে রুয়ান্ডার হস্তক্ষেপ।
      ১০। ভেনিজুয়েলাতে কিউবার ইন্টেলিজেন্স সহায়তা।
      ১১। মিয়ানমারের অভ্যন্তরে রোহিঙ্গা নির্যাতনে বাংলাদেশ, মালয়েশিয়া এবং অন্যান্য দেশের হস্তক্ষেপ।
      ১২। সেনেগালের সেনাবাহিনী দ্বারা গাম্বিয়ার সরকার পরিবর্তন।
      ১৩। কাশ্মিরে পাকিস্তানের হস্তক্ষেপ (যদিও সেটা ভারত অধিকৃত কাশ্মিরে)।

      এই উদাহরণের বাইরে রাজনৈতিক এবং ইন্টেলিজেন্সের গোপন হস্তক্ষেপের বহু উদাহরণ রয়েছে। কারণ গত কয়েক দশকে বিশ্বের বহু দেশের হাতে অনেক অর্থ চলে গেছে এবং তারা নিজস্ব ইন্টেলিজেন্স তৈরি করে ফেলেছে। সেগুলিকে আবার আঞ্চলিক বিরোধে ব্যবহার করছে। মোটকথা, বর্তমান বিশ্ব কোন একটা নিয়মে চলছে না। ওয়াস্টফালিয়ান সিস্টেম এখন নামমাত্র চলছে। জাতিরাষ্ট্রের কনসেপ্ট এখন যথেষ্টই দুর্বল। ধর্ম, জাতি, বর্ণ এগুলি এখন অনেক ক্ষেত্রেই জাতিরাষ্ট্রের চাইতে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেছে। সেকারণেই বিভিন্ন স্থানে জাতিগত আক্রোশের ফলাফল লক্ষণীয়।

      Delete
  2. উপমহাদেশের ত্রুটিপূর্ন মানচিত্র যে এই অন্চলে শান্তি আনায়নের পক্ষে প্রধান অন্তরায় সেটা মোটামুটি সবাই স্বীকার করে। ভারতের বিজেপি সরকার আর কিছুদিন ক্ষমতায় থাকলে এই ব্যাপারটি ত্বরান্বিত হবে। তবে তাদের কাছে পারমানবিক বোমা আছে এবং এই ব্যাপারটিই খুব গুরুত্বপূর্ন। তারা এটা দিয়ে সকলকে ব্লাকমেইল করতে পারে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. মানচিত্র ত্রুটিপূর্ণ নয়। ব্রিটিশরা যেভাবে এবং যে উদ্দেশ্যে মানচিত্র এঁকেছে, সেটাই একটা খারাপ কাজ ছিল। এই সীমানা আঁকার আগে এই উপমহাদেশে কোন দাঙ্গার অস্তিত্ব ছিল না। ব্রিটিশরা এই সীমানারা মাধ্যমে তাদের তৈরি করা দাঙ্গার সংস্কৃতিকে স্থায়িত্ব দিতে চেয়েছে।

      ভারত একটা দুর্বল রাষ্ট্র। এটা নিয়ে এই ব্লগে অনেক লেখা পাবেন। আমার 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' বইতেও পাবেন। কাজেই ভারতের দুর্বলতা নিয়ে এখানে আর লিখছি না। একটা দুর্বল রাষ্ট্রের শক্তিশালী অংশ কোনটা, সেটা খুঁজে বের করার দায়িত্ব অন্য কেউ নিক।

      Delete
  3. ভারত কেন দুর্বল সেটা যদি ব্যাখ্যা করতেন এখানে তাহলে আমাদের জন্য বুঝতে সুবিধা হত। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. You should at least read these articles....


      https://koushol.blogspot.com/2015/08/mahan-bangladesh.html?m=1

      https://koushol.blogspot.com/2016/06/bangladesh-india-mirakkel.html?m=1

      https://koushol.blogspot.com/2017/03/bangladesh-india-relations-direction.html?m=1

      Delete
    2. ধন্যবাদ

      Delete