Tuesday 5 October 2021

আলজেরিয়ার ইতিহাস নিয়ে কথা বলে ম্যাক্রঁ কত বড় ভুল করলেন?

০৬ই অক্টোবর ২০২১

ম্যাক্রঁর চিন্তার উপর উসমানি খিলাফতের সময়ের ছায়া কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছে, তা আলজেরিয়ার উসমানি সময়ের ইতিহাস নিয়ে তার মন্তব্যেই বোঝা যাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ককে আলজেরিয়া থেকে দূরে রাখতেই ম্যাক্রঁ হয়তো তার মন্তব্যগুলি সাজিয়েছিলেন। তবে বর্তমান তুরস্ককে উসমানি খিলাফতের সাথে তুলনা করার মতো ভুল করে ম্যাক্রঁ মুসলিম ইতিহাসের এমন এক স্থানে হস্তক্ষেপ করেছেন, যার ফলাফল বহণ করতে পারার মতো সক্ষমতা ক্রমেই দুর্বল হওয়া ফরাসি রিপাবলিকের রয়েছে কিনা, তা প্রশ্ন করাই যায়।

 

আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ফ্রান্সের সময়টা খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। মাত্র কিছুদিন আগেই ফ্রান্সকে বাইপাস করে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়া ‘অকাস’ প্রতিরক্ষা চুক্তির ঘোষণা দেয়; যার ফলশ্রুতিতে ফ্রান্স বড় আকারের সামরিক বাণিজ্যিক কাজ হারানো ছাড়াও তার বন্ধু দেশগুলির কাছে অপমাণিত হয়েছে। প্রায় একইসাথে আফ্রিকাতে ফ্রান্সের প্রাক্তন উপনিবেশ মালির সরকার ফ্রান্সকে বাইপাস করে রাশিয়ার সাথে নিরাপত্তা সম্পর্ক করছে। এখন ফ্রান্সের উত্তর আফ্রিকার প্রাক্তন উপনিবেশ আলজেরিয়ার সাথে নতুন করে বিরোধ দেখা দিয়েছে; যার ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব যথেষ্ট।

ফ্রান্সের অভিবাসী নীতি এবং উগ্র ডানপন্থী চিন্তার প্রসার

সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে ফরাসি সরকার ঘোষণা দেয় যে, উত্তর আফ্রিকার দেশগুলি থেকে জনগণকে ফ্রান্সে প্রবেশ করতে দেয়ার ক্ষেত্রে তারা ব্যাপকভাবে ভিসার সংখ্যা কমাবে। এর মাঝে আলজেরিয়া এবং মরক্কোর ক্ষেত্রে অর্ধেক এবং তিউনিসিয়ার ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ ভিসা কর্তনের ঘোষণা দেয়া হয়। এই তিন দেশই একসময় ফ্রান্সের উপনিবেশ ছিল। সেই হিসেবে এই দেশগুলির অনেক মানুষেরই ফ্রান্সের সাথে পারিবারিক সম্পর্ক রয়েছে। ফরাসি সরকারের মুখপাত্র গ্যাব্রিয়েল আত্তাল ‘ইউরোপ ওয়ান’ রেডিওকে বলেন যে, ভিসা কর্তনের সিদ্ধান্তটা ফরাসি সরকার নিতে বাধ্য হয়েছে। কারণ ঐ দেশগুলি ফ্রান্স থেকে বের করে দেয়া অভিবাসীদেরকে ফেরত নেবার ক্ষেত্রে যথেষ্ট সহযোগিতা করেনি। তিনি আরও বলেন যে, ২০১৮ সালে নতুন অভিবাসী আইন পাস করার পর থেকে ফ্রান্স এই দেশগুলির সাথে কথা চালিয়ে যাচ্ছে। আলোচনায় কাজ না হওয়ায় ফ্রান্স এখন হুমকি ব্যবহার করছে। ফ্রান্স আশা করছে এর ফলশ্রুতিতে তারা এই দেশগুলির কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে আরও সহযোগিতা পাবে। মরক্কোর পররাষ্ট্রমন্ত্রী নাসের বুরিতা বলেন যে, তার সরকার ফ্রান্সের সাথে যথেষ্ট সহযোগিতা করে চলেছে। তবে সেখানে ফ্রান্সেরও সমস্যা রয়েছে; কারণ অনেকেই ভাইরাস টেস্ট না করেই ফ্রান্স থেকে মরক্কোতে চলে আসতে চাইছে। শুধুমাত্র তিউনিসায়ার প্রেসিডেন্টের অফিস থেকেই সবচাইতে বন্ধুত্বপূর্ণ কথা বলা হয়। সেখান থেকে বলা হয় যে, তিউনিসিয়া সেই দেশগুলির মাঝে রয়েছে, যারা ফ্রান্সের সাথে সহযোগিতা করে এবং দুই দেশের মাঝে খুবই ভালো সম্পর্ক বিদ্যমান।

ভিসা কর্তনের সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন ফ্রান্সের উগ্র ডানপন্থী নেতা মারিন লা পেন। ২০১৭ সালের নির্বাচনে লা পেন ছিলেন ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী। খুব সম্ভবতঃ ২০২২ সালের এপ্রিলের নির্বাচনেও তিনি ম্যাক্রঁর মূল প্রতিদ্বন্দ্বী থাকবেন। তিনি বলেন যে, তিনি এই আইন বাস্তবায়নের জন্যে বহুদিন থেকেই বলে আসছিলেন। তিনি খুশি হয়েছেন যে, প্রেসিডেন্ট তার কথা শুনেছেন। তবে প্রেসিডেন্ট এক্ষেত্রে অনেক বেশি সময় নিয়েছেন। লা পেন এক সংবাদ সন্মেলনে বলছিলেন যে, তিনি ক্ষমতায় আসলে ফ্রান্সের অভিবাসী নীতিতে ব্যাপক পরিবর্তন আনবেন। ম্যাক্রঁ সরকারের ভিসা কর্তনের সিদ্ধান্ত এবং তাতে লা পেনের সমর্থন দেখিয়ে দিচ্ছে যে, ম্যাক্রঁর সরকার আসন্ন নির্বাচনে উগ্রবাদী ডানপন্থীদের ভোট হারাতে চাইছে না। অর্থাৎ উগ্রবাদী ডানপন্থী চিন্তা ফ্রান্সে এখন এতটাই শক্ত ভিতের উপর আছে যে, কেউই এদের বিরুদ্ধে গিয়ে নির্বাচনে জেতার আশা করতে পারছেন না।

 
১৯৫৬ সাল; আলজেরিয়াতে ফরাসি সেনা। ফ্রান্সের এমন একটা কালো অধ্যায় নিয়ে ম্যাক্রঁ কথা বলে আলজেরিয়ার সাথে সম্পর্ককে চাপের মাঝে ফেলতে চাইছেন কেন? তাও আবার এমন একটা সময়ে, যখন আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রান্স চাপের মাঝে রয়েছে?

আলজেরিয়ার ইতিহাস নিয়ে ম্যাক্রঁর মন্তব্য

০২রা অক্টোবর আলজেরিয়ার সরকার প্যারিস থেকে তাদের রাষ্ট্রদূতকে আলোচনার জন্যে ডেকে পাঠায়। আলজেরিয়ার সরকার বলে যে, তারা এটা করেছে আলজেরিয়ার অভ্যন্তরীণ বিষয়ে ফ্রান্সের ‘অগ্রহণযোগ্য হস্তক্ষেপ’এর কারণে। ‘দ্যা গার্ডিয়ান’ বলছে যে, মাত্র দ্বিতীয়বারের মতো আলজেরিয়ার সরকার তার রাষ্ট্রদূতকে ফ্রান্স থেকে ডেকে পাঠিয়েছে। ফ্রান্সের প্রভাবশালী ‘লে মন্ড’ পত্রিকাতে ০২রা অক্টোবর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর কিছু মন্তব্য ছাপা হবার পর থেকে আলজেরিয়া কূটনৈতিকভাবে পাল্টা পদক্ষেপ নেয়া শুরু করে। ম্যাক্রঁ ৩০শে সেপ্টেম্বর কিছু আলজেরিয় বংশোদ্ভূত ফরাসি তরুনের সাথে একটা অনুষ্ঠানে আলজেরিয়ার ইতিহাস নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন যে, ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ সাল পর্যন্ত আলজেরিয়ার স্বাধীনতার আন্দোলনের পর থেকে আলজেরিয়া একটা ‘রাজনৈতিক সামরিক ব্যবস্থা’য় পরিচালিত হচ্ছে; যারা কিনা আলজেরিয়ার ইতিহাসকে ‘পুরোপুরিভাবে নতুন করে লিখেছেন’। এই ইতিহাস সত্যের উপর নয়, বরং ফ্রান্সের প্রতি ঘৃণা উপর ভিত্তি করে লেখা হয়েছে। তিনি প্রশ্ন করেন যে, ফরাসিরা আলজেরিয়াতে উপনিবেশ তৈরি করার আগে আলজেরিয়ার নিজস্ব কোন জাতিগত পরিচয়ই ছিল কিনা। তিনি আলজেরিয়ার ইতিহাস লেখার জন্যে ফ্রান্সের নিয়ন্ত্রণে থাকা আরবী এবং বারবার ভাষায় লেখা ডকুমেন্ট সামনে নিয়ে আসার কথাও বলেন। ম্যাক্রঁ আরও বলেন যে, বর্তমানে আলজেরিয়ার রাজনৈতিক ব্যবস্থাটা দুর্বল হয়ে গেছে; বিশেষ করে সরকারবিরোধী ‘হিরাক’ আন্দোলনের পর থেকে।

পরের দিন আলজেরিয়া ফ্রান্সের সামরিক বিমানগুলিকে তার নিজস্ব আকাশসীমা ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ফরাসি বিমানগুলি নিয়মিতভাবেই আলজেরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহার করে পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে যাওয়া আসা করতো। পশ্চিম আফ্রিকার সাহেলে ফরাসি সামরিক বাহিনী ‘অপারেশন বারখেইন’এর অধীনে তথাকথিত সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকান্ডে জড়িত রয়েছে। ফরাসি সামরিক বাহিনীর মুখপাত্র কর্নেল পাসকাল ইয়ানি ‘এএফপি’কে বলেন যে, তারা আলজেরিয়ার কর্তৃপক্ষের কাছে দু’টা বিমানের আলজেরিয়ার আকাশসীমা ব্যবহারের জন্যে অনুমতি চাইতে গিয়ে আবিষ্কার করেন যে, আলজেরিয়ার সরকার ফরাসি বিমানগুলিকে তাদের আকাশসীমা ব্যবহার করতে দিচ্ছে না। তিনি বলেন যে, এতে তাদের সাহেলের সাপ্লাই ফ্লাইটে স্বল্প প্রভাব পড়লেও মূল অপারেশনে কোন প্রভাব পড়বে না।

ম্যাক্রঁর চিন্তার উপর উসমানি খিলাফতের ছায়া

আলজেরিয় বংশোদ্ভূত ফরাসিদের সাথে কথোপকথনের মাঝ দিয়ে ম্যাক্রঁ কিছু বার্তা দিতে চেয়েছেন। একদিকে তিনি যেমন আলজেরিয়ার স্বাধীনতা আন্দোলনের ইতিহাস নিয়ে কথা বলেছেন, তেমনি তিনি আলজেরিয়াতে ফরাসি উপনিবেশের আগের সময় নিয়েও কথা বলেছেন। প্রায় ৩’শ বছর উসমানি খিলাফতের অধীনে এবং প্রভাবের মাঝে থাকার পর ১৮৩০ সালে ফরাসিরা বর্তমান আলজেরিয়ার উপকূলের আলজিয়ার্স অঞ্চল জোরপূর্বক দখল করে নেয়। আলজেরিয়রা এই দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে প্রায় পাঁচ দশক ধরে যুদ্ধ চালিয়ে যায়; যাতে ফরাসি যাঁতাকলে পড়ে কয়েক লক্ষ মানুষ প্রাণ হারায়। আলজেরিয়াকে ফ্রান্সের অধীনে শক্তভাবে নিয়ে আসার জন্যে ফ্রান্স হাজার হাজার ফরাসিকে আলজেরিয়াতে বসতি স্থাপন করায়। শেষ পর্যন্ত জনসংখ্যার প্রায় এক পঞ্চমাংশই হয়ে যায় ফরাসি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আলজেরিয়রা স্বাধীনতা চাইলে সেখানে বসতি স্থাপন করা ফরাসিরা স্বাধীনতাকামীদের ব্যাপকভাবে বাধা দেয়। ১৯৫৪ থেকে ১৯৬২ পর্যন্ত স্বাধীনতা যুদ্ধ চলে; যাতে কমপক্ষে ১০ লক্ষ আলজেরিয় বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়। যুদ্ধের ফলাফল হিসেবে ফ্রান্সে সামরিক অভুত্থানের মাধ্যমে জেনারেল দ্য গল ক্ষমতা নেন এবং চতুর্থ রিপাবলিক বাতিল ঘোষণা করেন। প্রায় দশ লক্ষ ফরাসি বংশোদ্ভূত জনগণ ফ্রান্সে পালিয়ে যায়। ফরাসিদের পক্ষে যুদ্ধ করা প্রায় দুই লক্ষ আলজেরিয় ‘হারকিস’রাও বিদ্বেষের শিকার হয়। হাজার হাজার ‘হারকিস’কে আলজেরিয়ার স্বাধীনতাকামীরা হত্যা করে। গত ২০শে সেপ্টেম্বর ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ ‘হারকিস’দের আলজেরিয়াতে ফেলে যাবার জন্যে ফ্রান্সের পক্ষ থেকে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। কিন্তু ফ্রান্সের এমন একটা কালো অধ্যায় নিয়ে ম্যাক্রঁ কথা বলে আলজেরিয়ার সাথে সম্পর্ককে চাপের মাঝে ফেলতে চাইছেন কেন? তাও আবার এমন একটা সময়ে, যখন আন্তর্জাতিকভাবে ফ্রান্স চাপের মাঝে রয়েছে?

 

প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ আলজেরিয় বংশোদ্ভূতদের সাথে তার মন্তব্যে প্রশ্ন করেন যে, ফরাসিরা আলজেরিয়াতে উপনিবেশ করার আগে আলজেরিয় জাতির কোন অস্তিত্ব ছিল কি? তিনি বলেন যে, তিনি অবাক হচ্ছেন যে, তুরস্ক কত সহজে সকলকে আলজেরিয়ার ইতিহাস ভুলিয়ে দিয়েছে। তিনি বলেন যে, ফরাসিরা আলজেরিয়াতে যাবার আগে তুরস্ক সেই দেশটাকে দখল করে রেখেছিল। অনলাইন নিউজ পোর্টাল ‘পোডাল’এর এক প্রতিবেদনে ফরাসি ইতিহাসবিদ জাইলস মানসিরন প্রশ্ন করছেন যে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট আলজেরিয়ার ইতিহাস সম্পর্কে এমন মন্তব্য করতে পারেন কি? ম্যাক্রঁ যখন বলছেন যে, ফরাসিরা আসার আগে আলজেরিয়া ছিল না; এই ব্যাপারটা সেই চিন্তাটাকেই তুলে ধরে যে, ফরাসিদের আগে সেখানে কিছুই ছিল না। প্রকৃতপক্ষে স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে আলজেরিয়ার জাতীয়তাবোধ সাধারণভাবে সামনে আসেনি সেটা সত্যি। কিন্তু ফ্রান্সের ক্ষেত্রেও তো ব্যাপারটা সত্যি। ফরাসি বিপ্লবের আগ পর্যন্ত ফরাসি জাতির অংশ হিসেবে নিজেদের চিন্তা করার ব্যাপারটা ফরাসিদের মাঝেও আসেনি।

আলজেরিয়ার বর্তমান রাজনৈতিক সীমানা নিয়ে যে দেশ, সেটা না থাকলেও কয়েক শতক ধরে সেখানে একটা অঞ্চল ছিল। এই অঞ্চল ১৫১২ সাল থেকে উসমানি খিলাফতের অধীনে ছিল। ১৮৩০ সালে সেটা ফরাসিরা দখল করে নেয়। জাইলস মানসিরন বলছেন যে, উসমানিদের অধীনে আলজিয়ার্স পরিচালিত হতো ‘বেইলিক’ হিসেবে। আলজেরিয়ার অঞ্চল ইস্তাম্বুলের অধীনে থাকলেও সেখানকার জনগণের যথেষ্ট স্বাধীনতা ছিল। উসমানি সরকার জনগণের কাছ থেকে কর আদায় করতো। তবে উসমানিদের অধীনে আলজেরিয়া আর ফ্রান্সের অধীনে আলজেরিয়ার তুলনা দেয়া সম্ভব নয়। কারণ ফ্রান্সের অধীনে আলজেরিয়া ছিল মারাত্মক সহিংসতায় পরিপূর্ণ। ফরাসি উপনিবেশিকরা আলজেরিয়ার সামাজিক এবং ধর্মীয় কাঠামোকে পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করেছে।

আরেক ফরাসি ইতিহাসবিদ ‘সিএনআরএস’এর রিসার্চ ডিরেক্টর ইসাবেল গ্রানগাউদ বলছেন যে, উসমানি কর্তৃপক্ষের অল্প কিছু লোক আলজিয়ার্স শাসন করতো। তারা শুধু রাষ্ট্রীয় কার্যক্রম পরিচালনা করতো এবং সেনাবাহিনী পরিচালনার মাধ্যমে নিরাপত্তা দিতো। সেখানে উসমানিদের শাসন ছিল খুবই সহনীয় ধরনের। অপরদিকে ফরাসিরা আলজেরিয়াতে ব্যাপক হারে বসতি স্থাপন করেছিল। তিনি বলছেন যে, ম্যাক্রঁ যখন আলজেরিয়াতে ফরাসি শাসনের সাথে উসমানি শাসনের তুলনা দিচ্ছেন, তখন নতুন আরেকটা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। কারণ ম্যাক্রঁ এখানে একেবারেই দুই ধরনের রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং রাজনৈতিক নেতৃত্বকে এক মাপকাঠি দিয়ে মাপছেন। ইসাবেল গ্রানগাউদ আরও বলছেন যে, ম্যাক্রঁ যখন উসমানি খিলাফত না বলে তার স্থলে তুরস্ক বলছেন, তখন তিনি তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগানের স্বপ্নের সাথেই একাত্মতা প্রকাশ করলেন। কারণ এরদোগান বর্তমান তুরস্ককে উসমানিদের মতোই বৈশ্বিকভাবে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্র হিসেবে দেখার স্বপ্নে বিভোর আছেন।

ফরাসিরা কঠোর অভিবাসী আইন বাস্তবায়নের মাধ্যমে ফরাসি সমাজে ডানপন্থী চিন্তার শক্ত ভিতের ব্যাপারেই জানান দিচ্ছে। ম্যাক্রঁ বুঝতে পারছেন যে, ২০২২এর এপ্রিলের নির্বাচন জিততে হলে তাকে ডানপন্থী কথাই বলতে হবে। এতে উত্তর আফ্রিকার দেশ আলজেরিয়ার সাথে ফ্রান্সের সম্পর্কের অবনতি ম্যাক্রঁর কাছে অনিবার্য ফলাফল; যদিও আলজেরিয়ার সরকার তার দেশের আকাশসীমা ফ্রান্সের সামরিক বিমানের জন্যে বন্ধ করে দিয়ে পুরো পশ্চিম আফ্রিকার সাহেল অঞ্চলে সমস্যায় জর্জরিত ফ্রান্সকে আরও চাপের মাঝে ফেলেছে। কিন্তু একইসাথে ম্যাক্রঁর চিন্তার উপর উসমানি খিলাফতের সময়ের ছায়া কতটা প্রভাব বিস্তার করে আছে, তা আলজেরিয়ার উসমানি সময়ের ইতিহাস নিয়ে তার মন্তব্যেই বোঝা যাচ্ছে। ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে ফ্রান্সের প্রতিদ্বন্দ্বী তুরস্ককে আলজেরিয়া থেকে দূরে রাখতেই ম্যাক্রঁ হয়তো তার মন্তব্যগুলি সাজিয়েছিলেন। তবে বর্তমান তুরস্ককে উসমানি খিলাফতের সাথে তুলনা করার মতো ভুল করে ম্যাক্রঁ মুসলিম ইতিহাসের এমন এক স্থানে হস্তক্ষেপ করেছেন, যার ফলাফল বহণ করতে পারার মতো সক্ষমতা ক্রমেই দুর্বল হওয়া ফরাসি রিপাবলিকের রয়েছে কিনা, তা প্রশ্ন করাই যায়।

1 comment:

  1. ফ্রান্স হচ্ছে একটা উগ্র জাতীয়বাদী দেশ, এবং খোলাখুলিভাবে বর্ন বিদ্বেসী। এখন পশ্চিমা বিশ্বেই ক্রমশ্বই একঘরে হয়ে পড়ছে।

    ReplyDelete