Thursday 25 April 2019

বাংলাদেশের "ইন্দো-প্যাসিফিক" কমান্ড এখন সময়ের দাবি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে ৩ দিনের সরকারি সফরে ২১শে এপ্রিল ব্রুনাই যান। শেখ হাসিনা আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম সাউথ-ইস্ট এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (সিয়াকো) প্রস্তাব দেন সুলতানের কাছে। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে বিবেচনা’ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন।


২৫শে এপ্রিল ২০১৯

বাংলাদেশের জন্যে পূর্ব দিকটা যেন হঠাতই বেশ গুরুত্বপূর্ণ হয়ে গেল। ২০১৯-এর মার্চ-এপ্রিল বাংলাদেশের “পূর্ব-যাত্রা”র সময় বলা যেতে পারে। তবে একটু খেয়াল করলেই বোঝা যাবে যে পূর্বের গুরুত্ব বাড়ছিল বহুদিন ধরেই। “লুক ইস্ট” বা “পূর্বমুখী” নীতি এই গুরুত্ব বাড়ার পিছনে থাকলেও সাম্প্রতিককালের তৎপরতা এর আগের অবস্থান থেকে বেশ কিছুটা ভিন্ন।

পূর্বের সাথে অর্থনৈতিক যোগাযোগ…

চীন-জাপানের সাথে অর্থনৈতিক সম্পর্কোন্নয়ন ছাড়াও মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং সিঙ্গাপুরের সাথে অর্থনৈতিক যোগাযোগ বেড়েই চলেছিল প্রতিদিন। দক্ষিণ কোরিয়াও বাংলাদেশের গুরুত্বপুর্ণ অর্থনৈতিক সহযোগী। মালয়েশিয়ায় বিরাট সংখ্যক বাংলাদেশী শ্রমিক কর্মরত রয়েছে। মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বাংলাদেশের বেশিরভাগ ভোজ্য তেলের সরবরাহ আসছে। মালাক্কা প্রণালীতে অবস্থিত সিঙ্গাপুর এবং মালয়েশিয়ার সমুদ্রবন্দরগুলি হয়ে পূর্বের দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের বেশিরভাগ বাণিজ্য সংঘটিত হচ্ছে। অস্ট্রেলিয়ার সাথে বাণিজ্য করতে গিয়েও জাহাজগুলি এই অঞ্চলের বন্দর হয়ে যাতায়াত করছে। এমনকি কানাডা এবং যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূল থেকে আসা জাহাজগুলিও মালাক্কা হয়ে আসছে। চীন বর্তমানে বাংলাদেশের সবচাইতে বড় বাণিজ্য সহযোগী। ভিয়েতনাম এবং থাইল্যান্ড থেকে আসছে বিপুল পরিমাণ সিমেন্ট ক্লিংকার এবং পাথর। পূর্বের সাথে বাণিজ্যে নতুন যুক্ত হয়েছে কয়লা এবং সামনের দিনগুলিতে এলএনজি-ও যুক্ত হতে যাচ্ছে।

পূর্বের দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের মূলতঃ আমদানি বাণিজ্য; তবে রপ্তানিও রয়েছে। চীন সাথে বাণিজ্য ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের। সিঙ্গাপুরের সাথে বাণিজ্য ৪ দশমিক ৬ বিলিয়ন; জাপানের সাথে বাণিজ্য ২ দশমিক ৯ বিলিয়ন; হংকং-এর সাথে বাণিজ্য ২ দশমিক ৮ বিলিয়ন; মালয়েশিয়ার সাথে বাণিজ্য ২ বিলিয়ন; কোরিয়ার সাথে বাণিজ্য ১ দশমিক ৮ বিলিয়ন; অস্ট্রেলিয়ার সাথে ১ দশমিক ৬ বিলিয়ন; ইন্দোনেশিয়ার সাথে বাণিজ্য ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন; থাইল্যান্ডের সাথে দশমিক ৯ বিলিয়ন; ভিয়েতনামের সাথে দশমিক ৮ বিলিয়ন। মোটামুটিভাবে বলা যায় যে, বাংলাদেশের ৩১ বিলিয়ন ডলারের বেশি বাণিজ্য হচ্ছে পূর্বের দেশগুলির সাথে, যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। এই বাণিজ্যের বেশিরভাগটাই যাচ্ছে মালাক্কা প্রণালী হয়ে। মালয়েশিয়া থেকে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলারের রেমিটান্সও আসছে।

বাংলাদেশের বেশিরভাগ বিনিয়োগ এখন আসছে চীন থেকে। তার সাথে রয়েছে জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া এবং মালয়েশিয়া, যেখান থেকেও বড় অংকের বিনিয়োগ আসছে। বড় বড় জটিল কিছু যন্ত্রাংশ-সহ পদ্মা সেতুর প্রযুক্তিগত সকল সাপোর্ট আসছে চীন থেকে। পায়রা বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ, কর্ণফুলী টানেল, পায়রা বন্দরের অবকাঠামো, ইত্যাদি প্রকল্পে চীনা সহায়তা রয়েছে। অন্যদিকে মাতারবাড়ি বন্দর ও বিদ্যুতকেন্দ্র, মেট্রো রেল, মেঘনা-গোমতি-শীতলক্ষ্যার উপর সেতু, ইত্যাদি প্রকল্পে সহায়তা দিচ্ছে জাপানিরা। স্পেশাল ইকনমিক জোনগুলিতেও চীন, জাপান, সিঙ্গাপুর, কোরিয়া এবং অন্যান্য দেশ থেকে বিরাট অংকের বিনিয়োগ আসছে। এসব বিনিয়োগের সাথে আসছে বিপুল পরিমাণ যন্ত্র এবং যন্ত্রাংশ, যার বেশিরভাগ আসছে সমুদ্রপথে। চীন-জাপানের বিনিয়োগ বৃদ্ধির সাথে সাথে সেসব দেশ থেকে বিরাট সংখ্যক ইঞ্জিনিয়ার এবং টেকনিশিয়ান বাংলাদেশে আসছে।

নিরাপত্তা সম্পর্ক...

চীন বাংলাদেশের সামরিক অস্ত্রসস্ত্রের সবচাইতে বড় সরবরাহকারী। চীনা সহায়তায় বাংলাদেশের সমরাস্ত্র তৈরির সক্ষমতাও তৈরি হচ্ছে। চীনা সহায়তায় ২১৪ এমআরও ইউনিট প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এখন এফ-৭ ফাইটার জেটগুলি বাংলাদেশেই ওভারহলিং করা হচ্ছে। এর আগে ২১০ এমআরও ইউনিটের মাধ্যমে চীনে নির্মিত পিটি-৬ প্রশিক্ষণ বিমান ওভারহোলিং-ও শুরু হয়। শর্ট-রেঞ্জ সার্ফেস-টু-এয়ার মিসাইল তৈরির কারখানাও করা হচ্ছে চীনা সহায়তায়। কক্সবাজারে সাবমেরিন বেস তৈরি হচ্ছে চীনা সহায়তায়। খুলনা শিপইয়ার্ডে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জন্যে দুর্জয়-ক্লাসের এলপিসি তৈরি হয়েছে চীনা সহায়তায়। স্বাধীনতা-ক্লাসের কর্ভেট চীনে নির্মিত হয়েছে, যেগুলির ফলো-অন ইউনিটগুলি চীনা সহায়তায় দেশে তৈরি হতে পারে। সেনাবাহিনীর পুরোনো ট্যাঙ্কগুলিকে আপগ্রেড করা হচ্ছে চীনা সহায়তায়। ইন্দোনেশিয়ার সহায়তায় নারায়নগঞ্জ ডকইয়ার্ডে তৈরি হচ্ছে কম্পোজিট ম্যাটেরিয়ালের ফাস্ট প্যাটোল বোট। ইন্দোনেশিয়ার প্রতিরক্ষা ইন্ডাস্ট্রিও চাইছে বাংলাদেশে তাদের বাজার বৃদ্ধি করতে।

রাজনৈতিক সম্পর্ক...

রাষ্ট্রীয় অত্যাচারের পর মিয়ানমারের আরাকান থেকে ১০ লাখ মুসলিম উদ্বাস্তু বাংলাদেশে চলে আসার সময় থেকে বাংলাদেশের সাথে পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সম্পর্ক নতুন মোড় নিয়েছে। চীন এবং জাপানকে বাংলাদেশ নিজেদের দলে ভেড়াতে পারেনি; থাইল্যান্ডের অবস্থানও একই। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ব্রুনাই থেকে বাংলাদেশ সাড়া পেয়েছে। বৌদ্ধ সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি যখন কোন সমর্থন দিতে অপারগ ছিলো, তখন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি থেকে কূটনৈতিক তৎপরতা লক্ষ্য করা গেছে। এর কারণ ছিল সেসব দেশের মানুষের ইসলামের প্রতি দুর্বলতা। দেশগুলির সরকার মূলতঃ সেকুলার হলেও মুসলিম জনমতের চাপে তারা মিয়ানমারের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক তৎপরতা শুরু করতে বাধ্য হয়। মিয়ানমারে গণহত্যার প্রতিবাদে ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী জাকার্তায় লাখো মানুষ মিছিল করেছিল। ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়ার উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা নিয়মিত বাংলাদেশের কক্সবাজারের উদ্বাস্তু শিবিরগুলি পরিদর্শন করেছেন। ২০১৮-এর জানুয়ারিতে ইন্দোনেশিয়ার প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো বাংলাদেশে আসেন। বাংলাদেশ চাইছে মিয়ানমার ইস্যুতে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশগুলি শক্ত অবস্থানে আসুক। আর সেই লক্ষ্যে এই দেশগুলির সাথে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহী বাংলাদেশ।

যোগাযোগের ব্যবস্থার উন্নয়ন...

বাংলাদেশ থেকে পূর্বের দেশগুলিতে যাতায়াতের মূল উপায় বিমান এবং সমুদ্রপথ; সড়কপথ বা রেলপথ তৈরির পরিস্থিতি এখনও তৈরি হয়নি মূলতঃ মিয়ানমারের কারণে। তদুপরি, পূর্বের সাথে বাণিজ্যের প্রসার হয়েছে বেশ দ্রুতই। ঢাকা থেকে কুয়ালালামপুরে এখন প্রতিদিন ৮টা থেকে ১০টা ফ্লাইট চলে; ব্যাঙ্ককে যায় প্রতিদিন ৭টা ফ্লাইট; সিঙ্গাপুরে প্রতিদিন ৩টা ফ্লাইট। সরাসরি গুয়াংঝু যাচ্ছে প্রতিদিন ২টা ফ্লাইট; কুনমিং-এ ১টা ফ্লাইট। আর এসব শহর থেকে জাকার্তা, বেইজিং, সাংহাই, হংকং অথবা টোকিওতে রয়েছে বহু ফ্লাইট। এই ফ্লাইটগুলি এখন বাংলাদেশের সাথে পূর্বের দেশগুলিকে অনেক কাছে নিয়ে এসেছে। সহজ যাতায়াত সেসব দেশের সাথে বাণিজ্যের প্রসারে বিরাট অবদান রেখেছে। তবে বেশিরভাগ পণ্য বাণিজ্য হচ্ছে সমুদ্রপথে; মালাক্কা প্রণালীর সমুদ্রবন্দরগুলি হয়ে।
 
২৮শে মার্চ ২০১৯ - মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন দেশটিতে সফররত বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী,  বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম ও দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার এয়ার কমোডর হুমায়ুন কবীর প্রতিনিধিদলে ছিলেন। 



মার্চ-এপ্রিলের ইস্টার্ন টাইম-লাইন......

২০১৯-এর মার্চ-এপ্রিলে বাংলাদেশের পূর্ব-নীতি যথেষ্ট গতি লাভ করে। নির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে এগুলে এই গতিবেগ যে বৃদ্ধি পেতে পারে, তা পরিষ্কার হয়ে গেল।

১৮ই মার্চ ২০১৯ - মালয়েশিয়ায় লংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশনে অংশ নিতে মালয়েশিয়ায় গেল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল। জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন শেখ মোহাম্মদ জসিমুজ্জামানের নেতৃত্বে ১২ জন কর্মকর্তা, ১০৬ জন নাবিক ও ১১ জন বেসামরিক লোক শুভেচ্ছা সফরে যাচ্ছেন। জাহাজটি ভারতের পোর্ট ব্লেয়ার ও থাইল্যান্ডের ফুকেট বন্দর হয়ে মালয়েশিয়ায় পৌঁছাবে।

২০শে মার্চ ২০১৯ – চারদিনের শুভেচ্ছা সফরে ভারতের আন্দামান দ্বীপপুঞ্জের পোর্ট ব্লেয়ার গেল বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল।

২১শে মার্চ ২০১৯ - মালয়েশিয়ায় লংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশনে অংশ নিতে চট্টগ্রাম নৌ-জেটি ত্যাগ করে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ 'সমুদ্র জয়'।

২৬শে মার্চ ২০১৯ – ছয় দিনের সফরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত। সফরকালে তিনি লাংকাউই-তে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড এরোস্পেস এক্সিবিশন (এলআইএমএ)-২০১৯ ও এয়ার চিফ কনফারেন্সে অংশগ্রহণ করেন। রুশ এয়ারক্রাফট করপোরেশন, ইউনাইটেড এয়ারক্রাফট করপোরেশন ও ইরকুট করপোরেশনের প্রতিনিধির সঙ্গেও তিনি সাক্ষাৎ করেন। ৩১শে মার্চ বাংলাদেশ বিমান বাহিনী প্রধান মালয়েশিয়ান আর্মড ফোর্সেস স্টাফ কলেজ পরিদর্শন করেন। সেখানে আর্মড ফোর্সেস স্টাফ কলেজ আয়োজিত একটি অভিষেক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে কলেজের ‘হল অব ফেম’ এ ১৩তম ব্যক্তি হিসেবে বিমান বাহিনী প্রধানের নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়। পরে বিমান বাহিনী প্রধান ছাত্রদের উদ্দেশ্যে বক্তব্য দেন।

২৬শে মার্চ ২০১৯ – পাঁচ দিনের সফরে মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হন নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী। মালয়েশিয়া অবস্থানকালে নৌপ্রধান যুক্তরাষ্ট্রের প্যাসিফিক ফ্লিট কমান্ডার এবং মালয়েশিয়া ও শ্রীলংকান নৌবাহিনী প্রধানের সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করেন। তিনি লাংকাউই-তে ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড এরোস্পেস এক্সিবিশন (এলআইএমএ)-২০১৯-এর ফ্লিট রিভিউ-এ অংশ নেন।

২৭শে মার্চ ২০১৯ - লংকাউই ইন্টারন্যাশনাল মেরিটাইম অ্যান্ড অ্যারোস্পেস এক্সিবিশনের ফ্লীট রিভিউ-এ অংশ নেয় বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ 'সমুদ্র জয়' এবং বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড জাহাজ সিজিএস সৈয়দ নজরুল।

২৮শে মার্চ ২০১৯ - মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী ডা. মাহাথির বিন মোহাম্মদের সঙ্গে বাংলাদেশ ও মালয়েশিয়ার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বৈঠক করেন দেশটিতে সফররত বাংলাদেশের উচ্চ পর্যায়ের একটি প্রতিনিধি দল। দেশটির প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নিরাপত্তা বিষয়ক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) তারেক আহমেদ সিদ্দিকী কর্মী নিয়োগ, অবৈধদের বৈধতা দেয়া, নির্বিঘ্নে প্রত্যাবাসন, নিরাপদ কর্ম, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, শিক্ষা, রোহিঙ্গা এবং বাংলাদেশ সফর নিয়ে আলোচনা করেন। এসময় উপস্থিত ছিলেন, বিমান বাহিনী প্রধান এয়ার চিফ মার্শাল মাসিহুজ্জামান সেরনিয়াবাত, নৌবাহিনী প্রধান অ্যাডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী, বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম ও দূতাবাসের ডিফেন্স অ্যাডভাইজার এয়ার কমোডর হুমায়ুন কবীর।

২৯শে মার্চ ২০১৯ - চীনে অনুষ্ঠেয় ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউতে অংশ নিতে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর যুদ্ধজাহাজ ‘প্রত্যয়’ চট্টগ্রাম নৌজেটি ত্যাগ করে। ২২-২৫ এপ্রিল চার দিনব্যাপী এ মহড়ায় বাংলাদেশসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নৌবাহিনীর জাহাজ, যুদ্ধবিমান এবং সামরিক ব্যক্তিবর্গ অংশ নেবার কথা রয়েছে। ‘বানৌজা প্রত্যয়’ জাহাজের অধিনায়ক ক্যাপ্টেন এমএম মেহেদী হাসানের নেতৃত্বে ২৪ জন কর্মকর্তাসহ ১১৭জন নৌসদস্য এ মহড়ায় অংশ নেবেন।

২রা এপ্রিল ২০১৯ - বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্ভেট বিএনএস প্রত্যয় ২৩ জন কর্মকর্তা এবং ১১৬ জন নাবিকসহ মালয়েশিয়ার রাজকীয় নৌবাহিনীর লুমুট ঘাঁটিতে নোঙর করে।

৩রা এপ্রিল ২০১৯ - নৌবাহিনীর কর্ভেট বিএনএস প্রত্যয়-এ অনবোর্ড অভ্যর্থনা ও নৈশভোজের আয়োজন করা হয়। অভর্থনা ও নৈশভোজ অনুষ্ঠানে মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার শহীদুল ইসলাম সস্ত্রীক প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে 'গেস্ট অব অনার' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মালয়েশিয়ার নেভাল স্পেশাল ফোর্সের কমান্ডার ফার্স্ট অ্যাডমিরাল দাতু আনুর বিন হাজি ইলিয়াস।

৩রা এপ্রিল ২০১৯ - সেনাবাহিনী প্রধান জেনারেল আজিজ আহমেদ ৭ দিনের সরকারী সফরে সিঙ্গাপুর ও মালয়েশিয়ার উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। সফরকালে সেনাবাহিনী প্রধান সিঙ্গাপুরে যৌথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনের চূড়ান্ত দিনের কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ করেন। বাংলাদেশের সেনা, নৌ, বিমানবাহিনীসহ বেসামরিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ৪১ জন সদস্য এ যৌথ দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনে অংশগ্রহণ করে। দেশের বাইরে এবারই প্রথম বাংলাদেশ এ ধরনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অনুশীলনে সহযোগী আয়োজকের ভূমিকা পালন করেছে। সিঙ্গাপুরের চিফ অব ডিফেন্স ফোর্সেস লেফটেন্যান্ট জেনারেল মেলভিন অংয়ের সঙ্গেও তিনি সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। এছাড়াও তিনি চাংগি কমান্ড এন্ড কন্ট্রোল সেন্টার এবং সিঙ্গাপুরের স্বনামধন্য এসটি কাইনেটিকস ডিফেন্স ফ্যাক্টরিসহ বেশকিছু সামরিক ও অসামরিক স্থাপনা পরিদর্শন করেন।

৩রা এপ্রিল ২০১৯ - বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ বিএনএস সংগ্রাম (এফ১১৩) ও বিএনএস প্রত্যাশা (এফ১১৪) তৈরির পর অফিশিয়ালি হস্তান্তর করেছে চীনা জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠান সিএসআইসি। চীনের পূর্বের জিয়াংশু প্রদেশের চিডং বন্দরে এই অনুষ্ঠান হয়।

৮ই এপ্রিল ২০১৯ - বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্ভেট বিএনএস প্রত্যয় ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির সায়গন বন্দরে প্রবেশ করে। চীনে অনুষ্ঠেয় ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউতে অংশ নিতে যাত্রাবিরতি করে জাহাজটা। এটা বাংলাদেশের কোন যুদ্ধজাহাজের প্রথম ভিয়েতনাম সফর।


৮ই এপ্রিল ২০১৯ - বাংলাদেশ নৌবাহিনীর কর্ভেট বিএনএস প্রত্যয় ভিয়েতনামের হো চি মিন সিটির সায়গন বন্দরে প্রবেশ করে। জাহাজটা সেখানে চার দিনের শুভেচ্ছা সফর শুরু করেছে। এটা বাংলাদেশের কোন যুদ্ধজাহাজের প্রথম ভিয়েতনাম সফর।

১৪ই এপ্রিল ২০১৯ - বাংলাদেশ নৌবাহিনীর জাহাজ 'বিএনএস প্রত্যয়' চীনের গুয়াংঝু পৌঁছায়। জাহাজটা চীনে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লীট রিভিউ-এ অংশ নেবে।

২১শে এপ্রিল ২০১৯ - গণচীনের নৌবাহিনীর ৭০তম বার্ষিকীতে যোগদানের উদ্দেশ্যে নৌবাহিনী প্রধান এডমিরাল আওরঙ্গজেব চৌধুরী আট দিনের সফরে গণচীনের উদ্দেশ্যে ঢাকা ত্যাগ করেন। তিনি সেখানে ইন্টারন্যাশনাল ফ্লিট রিভিউ এ অংশগ্রহণ করবেন। সফরকালে নৌপ্রধান চীনের বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ ছাড়াও, গণচীনের যুদ্ধজাহাজ ও সাবমেরিন একাডেমিসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণ ঘাঁটি পরিদর্শন করবেন।

২১শে এপ্রিল ২০১৯ - প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্রুনাই দারুসসালামের সুলতান হাজী হাসানাল বলকিয়ার আমন্ত্রণে ৩ দিনের সরকারি সফরে ২১শে এপ্রিল ব্রুনাই যান। প্রধানমন্ত্রীর সফরকালে বাংলাদেশ ও ব্রুনাই কৃষি, মৎস্য, পশুসম্পদ, সংস্কৃতি ও ক্রীড়া এবং এলএনজি সরবরাহের ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করার জন্য সাতটি চুক্তি স্বাক্ষর করে। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় অঞ্চলে ইসলামী সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সদস্য পাঁচটি দেশের সমন্বয়ে এক আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম গঠনের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ। ব্রুনাইয়ের সুলতান হাজি হাসানাল বলকিয়ার সঙ্গে তার সরকারি বাসভবন ইস্তানা নুরুল ইমানে অনুষ্ঠিত এক বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ প্রস্তাব করেন। প্রস্তাবিত আঞ্চলিক অর্থনৈতিক ফোরাম সাউথ-ইস্ট এশিয়া কো-অপারেশন অর্গানাইজেশনের (সিয়াকো) সদস্য হবে দক্ষিণ এশিয়া থেকে বাংলাদেশ ও মালদ্বীপ এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া ও ব্রুনাই। প্রধানমন্ত্রীর প্রস্তাবে সাড়া দিয়ে ব্রুনাইয়ের সুলতান বিষয়টি ‘ইতিবাচকভাবে বিবেচনা’ করবেন বলে আশ্বস্ত করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ও সুলতান উভয়ই বাংলাদেশ ও ব্রুনাইয়ের মধ্যে সরাসরি উড়োজাহাজ চলাচল শুরুর কথা বলেছেন। এ সময় মানবিক কর্মসূচি ও জ্ঞান বিনিময়ের ক্ষেত্রে সামরিক সহযোগিতার প্রস্তাব দেন প্রধানমন্ত্রী। এ প্রসঙ্গে আসিয়ানের বড় ধরনের অংশগ্রহণ কামনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে তিনি ব্রুনাই সুলতানের সহযোগিতাও কামনা করেন। এর বিপরীতে হাজি হাসানাল বলকিয়া আশ্বাস দেন, বাংলাদেশ এবং আঞ্চলিক ফোরামের সহযোগিতাকে শক্তিশালী করতে ব্রুনাই সহায়তা করবে। আলোচনাকালে প্রধানমন্ত্রী ব্রুনাইয়ের সুলতানকে সস্ত্রীক বাংলাদেশ সফরের আমন্ত্রণ জানান।
   
২২শে এপ্রিল ২০১৯ - চীন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রাপথে মালয়েশিয়ার পোর্ট ক্লাংয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ বিএনএস সংগ্রাম (এফ১১৩) ও বিএনএস প্রত্যাশা (এফ১১৪) নোঙর করে। জাহাজ দুটিতে অন বোর্ড অভ্যর্থনা এবং নৈশভোজের আয়োজন করা হয়, যেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বিশেষ অতিথি এবং 'গেস্ট অব অনার' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রয়েল মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী সদর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অব স্টাফ (প্ল্যানস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), ফার্স্ট অ্যাডমিরাল আহমদ শাফিরুদ্দীন বিন আবু বকর।

২২শে এপ্রিল ২০১৯ - চীন থেকে বাংলাদেশের উদ্দেশে যাত্রাপথে মালয়েশিয়ার রাজকীয় নৌঘাঁটি ন্যাশনাল হাইডোগ্রাফি জেটি পোর্ট ক্লাংয়ে বাংলাদেশ নৌবাহিনীর দুটি জাহাজ বিএনএস সংগ্রাম (এফ১১৩) ও বিএনএস প্রত্যাশা (এফ১১৪) নোঙর করে। জাহাজ দুটিতে অন বোর্ড অভ্যর্থনা এবং নৈশভোজের আয়োজন করা হয়, যেখানে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম প্রধান অতিথি ও মালয়েশিয়ায় নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। অনুষ্ঠানে 'গেস্ট অব অনার' হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রয়েল মালয়েশিয়ার নৌবাহিনী সদর দফতরের অ্যাসিস্ট্যান্ট চিফ অব স্টাফ (প্ল্যানস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট), ফার্স্ট অ্যাডমিরাল আহমদ শাফিরুদ্দীন বিন আবু বকর।

২৩শে এপ্রিল ২০১৯ - মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশনে (সিয়াকো) মালয়েশিয়ার সমর্থন অর্জনের জন্য কুয়ালালামপুরে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন শাহরিয়ার আলম। বৈঠকে অর্থনৈতিক সহযোগিতার মাধ্যমে উন্নয়নের বিভিন্ন বিষয়ে ঐক্যমত পোষণ করেছেন উভয় দেশের মন্ত্রী। ওয়ার্ল্ড ইসলামিক ইকনোমিক ফোরামের (ডব্লি­উআইইএফ) চেয়ারম্যান এবং মালয়েশিয়ার সাবেক উপপ্রধানমন্ত্রী মুসা হাতিমের সঙ্গে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর পৃথক বৈঠক হয়। বাংলাদেশের উদ্যোগে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাওয়া যায়।
   

২৩শে এপ্রিল ২০১৯ - মালয়েশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সাইফুদ্দীন আব্দুল্লাহর সঙ্গে বৈঠক করেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া কো-অপারেশনে (সিয়াকো) মালয়েশিয়ার সমর্থন অর্জনের জন্য কুয়ালালামপুরে চার সদস্যের প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন শাহরিয়ার আলম। বাংলাদেশের উদ্যোগে তাদের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন পাওয়া যায়।

যা হতে যাচ্ছে... 

খুব সম্ভবতঃ ২০১৯-এর জুনেই ‘সিয়াকো’ প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে ভারত মহাসাগর আর প্রশান্ত মহাসাগরের দেশগুলির মাঝে একটা সাংগঠনিক সম্পর্ক তৈরি হবে। আরও নির্দিষ্টভাবে বলতে গেলে মালাক্কা প্রণালীর দুই পাশের দেশগুলিকে এই সংস্থা একত্র করবে। আর এর সদস্য দেশগুলির প্রধান পরিচয় হবে এদের মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা। ভূরাজনৈতিক দিক থেকে ভারত মহাসাগরের একটা দেশের প্রশান্ত মহাসাগরে যাওয়া, অথবা প্রশান্ত মহাসাগরের একটা দেশের ভারত মহাসাগরে আসাটা বেশ গুরুত্বপূর্ণ। এই যাতায়াত এখন পর্যন্ত সামগ্রিক কোন পরিকল্পনার অংশ মনে না হলেও সেদিকেই এগুচ্ছে সকলকিছু। এই সংস্থা আরও নতুন সমঝোতার জন্ম দেবে, যা কিনা সামগ্রিকভাবে “ইন্দো-প্যাসিফিক” চিন্তার প্রসার ঘটাবে। ভারত মহাসাগরে চীনের আনাগোনা ভারতকে তুষ্ট করেনি। একইসাথে ভারত মহাসাগরে বাংলাদেশের নেতৃত্বে পাঁচটা মুসলিম দেশের আনাগোনাও ভারতকে তুষ্ট করবে না; বিশেষ করে এই দেশগুলিকে একত্রিত করার মূলে রয়েছে যেখানে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠতা। আবার অন্যদিকে দক্ষিণ চীন সাগরে বাংলাদেশের আনাগোনা চীন মেনে নিতে বাধ্য হবে ভালো সম্পর্ক রক্ষার খাতিরেই।

মালাক্কা প্রণালী হয়ে বাংলাদেশের ৩১ বিলিয়ন ডলারের বাণিজ্য যদি “ইন্দো-প্যাসিফিক” চিন্তার ভিত গড়তে যথেষ্ট শক্তিশালী ধাক্কা না দিতে পারে, তাহলে মিয়ানমারের শরণার্থী সমস্যা তা পারবে। নিজের অবস্থানকে শক্তিশালী না করতে পারলে অন্যদের কাছ থেকে সঠিক মূল্যায়ন পাবার চিন্তাটা অবান্তর। পূর্ব এশিয়ার দেশগুলির সাথে বাংলাদেশের যথেষ্ট ‘বারগেইন পাওয়ার’ থাকলে মিয়ানমারের পক্ষে আরাকানের মুসলিমদের গায়ে হাত তোলা সম্ভব হতো না। বাংলাদেশ তার সম্পর্কোন্নয়ন করেছিল মূলতঃ বৌদ্ধ-অধ্যুষিত চীন-জাপান-কোরিয়া-সিঙ্গাপুর-থাইল্যান্ডের সাথে, যারা মুসলিম উদ্বাস্তু সমস্যাকে তাদের বিলিয়ন ডলারের বিনিয়োগের অন্তরায় হিসেবে দেখেছে। ভারতও সেই পথেই চিন্তা করেছে। মিয়ানমারের উদ্বাস্তুদের ব্যাপারে আসিয়ানের অবস্থানকে বাংলাদেশের পক্ষে আনার চেষ্টাটাও ব্যর্থ হয়েছে বৌদ্ধ-অধ্যুষিত দেশগুলির অনাগ্রহের কারণে। দেরিতে হলেও বাংলাদেশ বুঝতে পারছে যে, পূর্ব এশিয়ার মুসলিম জনগণের সাথে কৌশলগত সম্পর্কোন্নয়নের বিকল্প আর কিছু নেই। এই সম্পর্কের গভীরতাই সেই দেশগুলির সরকারগুলিকে বাংলাদেশের পক্ষে থাকতে অনুপ্রেরণা যোগাবে। পূর্বের মুসলিম দেশগুলির সাথে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে কর্মকান্ড বৃদ্ধি, বিশেষ করে প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে সম্পর্কোন্নয়ন এখন অত্যাবশ্যক। সেই লক্ষ্যে নিজেদের ইচ্ছা বা ‘ইনটেন্ট’ জানান দিতে পূর্বের সকল রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ডকে একটা আমব্রেলার নিচে এনে “ইন্দো-প্যাসিফিক” কমান্ড তৈরি করার এখনই সময়।

Tuesday 2 April 2019

ঢাকা-কোলকাতা ইকনমিক করিডোরের ভূরাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

৩রা এপ্রিল ২০১৯
ঢাকা-কোলকাতা যাতায়াত এখন নৌপথেও সম্ভব। র‍্যাডক্লিফের আঁকা আন্তর্জাতিক বাউন্ডারির দুই পাড়ের বাংলার জনগণের মাঝে যত বেশি যাতায়াত হবে, দিল্লী তত বেশি রক্ষণশীল ভূমিকা নিতে পারে।


পশ্চিমবঙ্গের সরকার যখন বাংলাদেশী পর্যটকদের আকর্ষণ করতে গিয়ে সেখানে হালাল খাবারের অপ্রতুলতা নিয়ে চিন্তিত হয়, তখন বেশ কিছু ব্যাপার সামনে এসে যায়। একইসাথে যখন কলকাতার জুতার দোকানের বিজ্ঞাপন এখন দেয়া হয় বাংলাদেশের পত্রিকাতে, তখনও আলোচনা একই দিকে যেতে থাকে।

প্রথমতঃ অর্থনৈতিক প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ চাইছে বাংলাদেশ থেকে আরও বেশি মানুষ সেখানে ঘুরতে যাক। বর্তমানে প্রতি বছর প্রায় ৫ লক্ষের মতো পর্যটক বাংলাদেশ থেকে পশ্চিমবঙ্গে যাচ্ছে। তবে এদের বেশিরভাগই সেখানে যাচ্ছে ট্রানজিট যাত্রী হিসেবে। তারা হয় দক্ষিণ ভারতে চিকিৎসার জন্যে যাচ্ছে, নতুবা আজমীর শরীফ যাচ্ছে মাজার জিয়ারত করতে, নতুবা কাশ্মীর যাচ্ছে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্য দেখতে। কোলকাতার কর্তাব্যক্তিরা চাইছেন যে, বাংলাদেশী পর্যটকেরা এক-দুই দিনের বদলে পাঁচ-সাত দিন যেন পশ্চিমবঙ্গে থাকেন। এক্ষেত্রে পশ্চিমবঙ্গের অর্থনীতিতে বাংলাদেশী পর্যটকদের অবদান যে যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ, তা বোঝা যায়। বাংলাদেশী পর্যটকেরা আবার কোলকাতা যান বাজার করতে। ভারতের অন্য স্থান থেকে কত মানুষ কোলকাতায় বাজার করতে আসে, সে প্রশ্নের উত্তর জানা না থাকলেও এটা এখানে বোঝা যায় যে, বাংলাদেশের বাজার কলকাতার অর্থনীতির জন্যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে 'কনজিউমারিজম' যতটা প্রবল, ততটা ভারতের মানুষের মাঝে নয়।

এছাড়াও ভারত থেকে বাংলাদেশে যেসকল পণ্য রপ্তানি হচ্ছে, তার একটা বড় অংশ পশ্চিমবঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। ভারতীয় পিঁয়াজ, আদা, রসুন-সহ কৃষি দ্রব্যগুলি যেখানেই উতপাদিত হোক না কেন, তা সড়কপথে পশ্চিমবঙ্গ হয়েই আসছে বাংলাদেশে। কৃষি দ্রব্যের বাণিজ্য পুরো এলাকার মানুষের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ, কেননা পুঁজিবাদী বিশ্ব ব্যবস্থায় কৃষিকে বাঁচিয়ে রাখাটা যেকোন অর্থনীতির জন্যে সবচাইতে বড় চ্যালেঞ্জ। এই সীমান্ত বাণিজ্যের মাঝে গরুর বাণিজ্যও ছিল। ভারতের হিন্দুত্ববাদী বিজেপি সরকারের কঠোর নীতির ফলে পশ্চিমবঙ্গের ব্যবসায়ীরা এই বাণিজ্য থেকে বঞ্চিত হয়। এখন বাংলাদেশ গরুর গোশতে প্রায় স্বয়ংসম্পূর্ণ।

বাংলাদেশে তৈরি বিভিন্ন পণ্যও পশ্চিমবঙ্গে ব্যাপক বাজার পাচ্ছে। বাধা শুধু ভারতের অতি-জাতীয়তাবাদী বাণিজ্য নীতি। যে জিনিসগুলি এখন বাংলাদেশে তৈরি হয়, তা অনেক ক্ষেত্রেই ভারতের অন্য স্থানে তৈরি জিনিসের চাইতে খরচ দামে পাওয়া যাবার কথা। ভারত থেকে বাংলাদেশে যে কয়লা আসতো, সেটাও ভারতের অতি-রক্ষণশীল নীতির কারণে মার খেয়েছে। এখন বাংলাদেশ কয়লা আনছে সমুদ্রপথে।

দ্বিতীয়তঃ বিশ্বাসগত দিক থেকে ছাড় দেয়ার মানসিকতা। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ বাংলাদেশ যে পশ্চিমবঙ্গের মানুষের জন্যে অনেক পুরোনো একটা বাস্তবতা, তা আবারও তাদের মনে করিয়ে দেয়া। ব্রিটিশ প্ররোচনাতে বিংশ শতাব্দীর শুরুতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গার আবির্ভাব হয় ভারতীয় উপমহাদেশে; যার আবার বেশিরভাগটাই ছিল গ্রেটার বেঙ্গল-এ। এর আগের প্রায় ছয় শতাব্দীর মুসলিম শাসনের সময় এধরনের কোন দাঙ্গা হয়নি। সেই ইতিহাস নতুন করে সামনে আনার যে সময় হয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গ সরকারের বর্তমান চেষ্টার মাঝে ফুটে ওঠে। ব্রিটিশ শাসনের রূড় বাস্তবতাকে মেনে নিতেই একসময় এখানে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা হয়েছে। আর এখনকার বাস্তবতাকে মেনে নিতেই এখন হালাল খাবারের কথা বলা হচ্ছে। তবে এক্ষেত্রে ভারতের উগ্র হিন্দুত্ববাদীরা যে বাধা দেবে, তা মোটামুটিভাবে বলা যায়। তারা ঈদ-উল আজহা-র সময় ভারতের মুসলিমদের উপরে যে নির্যাতন চালিয়েছে, তাতে পশ্চিমবঙ্গেরই ক্ষতি হবার সম্ভাবনা সবচাইতে বেশি। আসলে র‍্যাডক্লিফের বাউন্ডারির দুই পাশের মানুষের যাতায়াত হিন্দুত্ববাদীদের কাছে ভালো ঠেকছে না।
 
বাংলাদেশের পত্রিকাতে কোলকাতার জুতার দোকানের বিজ্ঞাপন। অর্থনৈতিক কারণেই কোলকাতার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের পর্যটকদের চাইছেন। ভাষাগত এবং সংস্কৃতিগত মিলের কারণে এই বাণিজ্য অনেকটাই সহজ হয়ে যায়। কিন্তু বাধা শুধু ভারতের হিন্দুত্ব জাতীয়তাবাদী নীতি। ভারতীয় ইমিগ্রেশন বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্যে কড়াকড়ির ব্যবস্থা করলে কোলকাতার ব্যবসায়ীরাই সবচাইতে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। 


তৃতীয়তঃ ভাষাগত মিল। ভাষাগত যে মিল বাউন্ডারির দুই পাশের মানুষের মাঝে রয়েছে, তা পশ্চিমবঙ্গ কিভাবে দেখছে, আর দিল্লীই বা কিভাবে দেখছে? বাংলাদেশ থেকে একটা মানুষ ভারতের কোন শহরে গেলে কেন পশ্চিমবঙ্গের মানুষটাই তাকে প্রথম খুঁজে পায়? কোলকাতার একজন ব্যবসায়ীকে বাংলাদেশী ক্রেতা আকর্ষণে কেন নিজ ভাষার বাইরে যেতে হয়না? ১৯৪৭ সাল থেকেই দিল্লীর জন্যে এটা সমস্যা। ১৯৭১ সালে এদেশ থেকে যখন লাখো বাংলাভাষী শরণার্থী ভারতে যায়, তখন পশ্চিমবঙ্গই সবচাইতে বেশি লোককে থাকতে দিয়েছিল। আর কিভাবে যেন বাংলাদেশ থেকেও বেশিরভাগ শরণার্থী পূর্বে না গিয়ে পশ্চিমে গিয়েছিল; অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ অভিমুখে গিয়েছিল। এসবই কি কাকতালীয় ছিল? কোলকাতা জুতার দোকানের বিজ্ঞাপণ বাংলাদেশের পত্রিকাতে ছাপা হয় বাংলাতে। অবশ্যই বাংলাতে হবে; তাই নয় কি? কিন্তু যখন সেই একই পত্রিকার একই সংখ্যায় আরও বহু ইংরেজী ভাষার বিজ্ঞপণ দেখা যায়, তখন অবশ্য ব্যাপারটা আলাদা। ভাষার পক্ষে কতটা সহজে আন্তর্জাতিক বাউন্ডারি পার হওয়া সম্ভব, তার চমৎকার উদাহরণ এটা। কলকাতার ব্যবসায়ীদের পক্ষে ভারতের অন্য এলাকার মানুষকে একইভাবে টেনে আনা সম্ভব কিনা, তা প্রশ্নসাপেক্ষ।

পশ্চিমবঙ্গের অধিকাংশ সাহিত্যিক নাম করেছেন বাংলাদেশে তাদের বই বিক্রি করে। তারা খুব ভালো করেই জানেন তাদের মূল পাঠকের ভিত্তি এখন বাংলাদেশে। পশ্চিমবঙ্গের মানুষকে ভারতের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হিন্দী শিখতে হচ্ছে; শুধু ইংরেজী দিয়ে চলছে না। তাই সেখানে বাংলা ভাষায় লেখার সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখতে অল্প কিছু মানুষকেই চেষ্টা করতে হবে। বই-এর সাথে বাংলা ছায়াছবি এবং বাংলা গানের কথাও এসে যায়। ভারতে হিন্দী সিনেমার গানের দাপটে বাংলা গান যেখানে কোণঠাসা, সেখানে বাংলাদেশে আইয়ুব বাচ্চু ব্যান্ড সঙ্গীতের মাধ্যমে ব্যাপক জনপ্রিয়তা নিয়েই মারা গেলেন। ভারতে ব্যান্ড সংগীত নেই বললেই চলে। ব্যান্ডের জন্যে বাংলাদেশের দিকে তাকাতে হবে তাদের।  
 
কোলকাতা বই মেলায় পালিত হচ্ছে বাংলাদেশ দিবস। কোলকাতার বাংলা সাহিত্যিকদের সবচাইতে বড় সাফল্য বাংলাদেশে; যেখানে তাদের বেশিরভাগ পাঠক। কমন সংস্কৃতি এবং ভাষা খুব সহজেই আন্তর্জাতিক বাউন্ডারি পার হতে পারে। এবং একইসাথে তা জাতি-রাষ্ট্রের জাতীয়তাবাদকেও চ্যালেঞ্জ করে বসে।


চতুর্থতঃ কমন সংস্কৃতি। পাদুকার মতো পরিধেয় বস্ত্রের সাথে সংস্কৃতির একটা সম্পর্ক রয়েছে। যদিও বাইরের সংস্কৃতি দ্বারা একে পরিবর্তিত করা হচ্ছে নিয়মিতই, তথাপি কাছাকাছি সংস্কৃতির না হলে পরিধেয় বস্ত্রের চাহিদাকে বুঝতে পারাটা কষ্টকর। কোলকাতার মানুষ যতটা সহজে বাংলাদেশের মানুষের চাহিদা বুঝবে, মুম্বাইয়ের মানুষ কিন্তু সেটা বুঝবে না। বাংলাদেশের বিভিন্ন উৎসব সিজনেই কোলকাতার ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশের ট্যুরিস্টদের জন্যে অপেক্ষা করে। কোলকাতা থেকেও পর্যটক আসছে বাংলাদেশে। যদিও কোলকাতা থেকে ভারতের অন্যান্য শহরে যেতে যা খরচ হয়, তা দিয়ে বাংলাদেশে ঘুরে আসা যায়, তথাপি কোলকাতা থেকে বাংলাদেশে পর্যটক আসার মূল কারণ হলো ভাষা এবং সংস্কৃতিগত মিল। পশ্চিমবঙ্গের অনেকেরই পারিবারিক সূত্র ছিল বাংলাদেশে। ১৯৪৭ এবং ১৯৭১-এ রক্তক্ষয়ী দেশ বিভাগের কারণে তাদেরকে পৈত্রিক ভিটামাটি ত্যাগ করতে হয়েছিল।

এছাড়াও রয়েছে ইলিশের বাণিজ্য। ইলিশের ব্যাপারে বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় নীতিতে পরিবর্তনের ফলে বাংলাদেশে ইলিশের আহরণ প্রতিবছর বেড়েই চলেছে। আর ইলিশ কোলকাতার বাঙ্গালীদের জন্যে অতি লোভনীয় একটা ডিশ; ঠিক যেমনটা বাংলাদেশেও। ভারতের অন্য কোন রাজ্য কি ইলিশের স্বাদ খোঁজে?

পঞ্চমতঃ যোগাযোগের উন্নয়ন। বাংলাদেশ আর পশ্চিমবঙ্গের মাঝে যোগাযোগের মাধ্যম এখন সড়ক, রেল, বিমান এবং নৌপথ। পথিমধ্যে বাধা শুধু ভারতীয় ইমিগ্রেশন। কোন কারণে কোন বিশেষ ট্যুরিস্ট-সিজনে দিল্লী সরকার যদি বাংলাদেশী পর্যটকদের জন্য ইমিগ্রেশন কড়াকড়ি করার নির্দেশ দেয়, তাহলে কোলকাতার ব্যবসায়ীরা সেটা কিভাবে দেখবেন?

ষষ্ঠতঃ রাজনৈতিক প্রশ্ন। ১৯৪৭ সালে বাংলার বিভাজনের পরেও আন্তর্জাতিক বাউন্ডারি যে মানুষকে পুরোপুরি আলাদা করতে পারেনি, তা এখন আবারও বোঝা যাচ্ছে। সাইরিল র‍্যাডক্লিফ আর লর্ড মাউন্টব্যাটেনের আঁকা সেই কৃত্রিম বাউন্ডারিকে মেনে নিলে কোলকাতার অর্থনীতির যে ক্ষতি হবে, তা কি দিল্লী পোষাতে পারবে, নাকি লন্ডন পোষাবে? আপাততঃ সীমান্তে ট্রিগার-হ্যাপি বিএসএফ-এর গুলিতে মৃত্যুর মিছিলের মাঝেই এই সীমানা বেঁচে থাকবে। আর একইসাথে টিকে থাকবে ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া জাতি-রাষ্ট্র।

কোলকাতা কিন্তু এখনও ভারতের অংশ। অথচ সেখানকার জনগণের বাংলাদেশ-প্রেম লক্ষ্যণীয়। দিল্লীর নেতৃত্ব কোলকাতার ব্যাপারে কতদিন নিশ্চিন্ত থাকতে পারবে, তা নির্ভর করবে কতদিন 'ভারতীয় জাতীয়তাবাদ' কোলকাতার মানুষের কাছে তাদের মৌলিক চাহিদাগুলির চাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ থাকবে; আর কোলকাতার জনগণই বা কতদিন দিল্লীর নিয়ন্ত্রণমূলক নীতিকে 'ভারতীয় জাতিয়তাবাদের' অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে মেনে নেবে।