Saturday 23 October 2021

তুরস্ক কি আফ্রিকাতে সামরিক শক্তি হিসেবে রূপ নিচ্ছে?

২৩শে অক্টোবর ২০২১

এরদোগানের কাছে তুর্কি জনগণের আবেগকে জাগিয়ে রাখাটাই ক্ষমতায় টিকে থাকার ফাউন্ডেশন। তবে তুর্কি জনগণের আবেগকে ব্যবহার করতে গিয়ে তুরস্ক তার নীতিকে যতটা বহির্মুখী করবে, ততই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শক্তিদের সাথে প্রতিযোগিতার মাঝে পড়বে। আফ্রিকা তুরস্কের জন্যে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে বড় শক্তিদের সাথে প্রতিযোগিতায় তুরস্ক নিজেদের জন্যে আলাদা জায়গা করে নিতে চাইছে। তুরস্কের ড্রোনগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে ফ্রান্সের দুশ্চিন্তাই হবে সবচাইতে বেশি; কারণ ঔপনিবেশিক শক্তিদের মাঝে দুর্বল হয়ে পড়া ফ্রান্সেরই প্রভাব হারাবার ভয়ে থাকবে সবচাইতে বেশি।

 
তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিচেপ তাইয়িপ এরদোগান পশ্চিম আফ্রিকার তিন দেশ এঙ্গোলা, টোগো এবং নাইজেরিয়া ঘুরে এসেছেন। এর মাধ্যমে ৩০টা দেশ ভ্রমণ করে তিনি আফ্রিকায় সবচাইতে বেশি দেশ ভ্রমণকারী রাষ্ট্রনায়ক হলেন। নাইজেরিয়া এবং এঙ্গোলার জ্বালানি ও খনিজ সম্পদে তুর্কি বিনিয়োগ এবং দেশগুলির সাথে বাণিজ্য বৃদ্ধির খবরগুলিই মিডিয়াতে এসেছে বেশি। বিশ্লেষকেরা বলছেন যে, আফ্রিকাতে তুরস্কের বাণিজ্য বৃদ্ধি পেলেও তা এখনও ইউরোপের সাথে বাণিজ্যের তুলনায় কিছুই নয়। তবে আফ্রিকায় তুরস্কের কর্মকান্ড বৃদ্ধির ভূরাজনৈতিক গুরুত্ব অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে নয়; রয়েছে অন্য কোথাও। মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক ‘ইউরেশিয়া গ্রুপ’এর ‘জি জিরো মিডিয়া’র এক লেখায় বলা হচ্ছে যে, তুরস্ক আফ্রিকাতে বড় শক্তিগুলির সাথে সরাসরি প্রতিযোগিতা না করে নিজেদের জন্যে কিছু জায়গা বের করে নিয়েছে; যেখানে তারা বেশ সাফল্য পাচ্ছে। তুরস্কের সবচাইতে বড় সুবিধা হলো, তারা ফ্রান্স, ব্রিটেন বা বেলজিয়ামের মতো উপনিবেশিক শক্তি নয়; এমনকি বর্তমান যুগের বড় শক্তিগুলির একটাও তারা নয়। একইসাথে তুরস্ক নিজেদেরকে যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের মতো আগ্রাসী শক্তি হিসেবে উপস্থাপন করতে চাইছে না।

আফ্রিকায় তুরস্কের মূল লক্ষ্য কি ড্রোন বিক্রি?


‘মিডলইস্ট আই’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, তুর্কি প্রেসিডেন্টের আফ্রিকায় তিন দেশ সফরের ঘটনা তুর্কি মিডিয়াতে খুব কমই এসেছে। বরং পত্রিকাগুলি সরকারি প্রেসনোটকেই মূলতঃ হাইলাইট করেছে; যার মাঝে মূল বক্তব্য ছিল আফ্রিকায় তুরস্কের মানবকল্যাণমূলক কর্মকান্ড এবং উপনিবেশিকতা বিমুখ দিকনির্দেশনা। প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, গত দুই দশকে আফ্রিকাতে তুরস্ক তার কূটনৈতিক মিশনের সংখ্যা ১২ থেকে ৪৩শে উন্নীত করা হয়েছে; বাণিজ্য ৫ বিলিয়ন ডলার থেকে ২৫ বিলিয়ন ডলারে উঠেছে; বিনিয়োগ ১’শ মিলিয়ন ডলার থেকে সাড়ে ৬ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হয়েছে; ৬ হাজার আফ্রিকান ছাত্র তুরস্কের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্কলারশিপে পড়ছে। ‘টারকিশ এয়ারলাইন্স’ আফ্রিকার ৩৯টা দেশের ৬০টা গন্তব্যে যাচ্ছে; যার মাধ্যমে আফ্রিকা এবং বাকি বিশ্বের মাঝে হাব হয়ে যাচ্ছে ইস্তাম্বুল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আফ্রিকার কিছু অংশে সামরিক হস্তক্ষেপ এবং বিভিন্ন দেশে তুর্কিদের তৈরি মনুষ্যবিহীন ড্রোনের বাজার তৈরি হওয়ায় বিশ্লেষকেরা প্রশ্ন করছেন যে, আফ্রিকায় তুরস্ক তার কৌশল পরিবর্তন করে আঞ্চলিক খেলা পরিবর্তন করার মতো অবস্থানে যাবার চেষ্টা করছে কিনা। জার্মানির ‘ইউনিভার্সিটি অব বেইরিউথ’এর গবেষক ইব্রাহিম বাকির আব্দুলাই মনে করছেন যে, সোমালিয়া, লিবিয়া এবং পশ্চিম আফ্রিকায় তুরস্কের ভূমিকা দেখিয়ে দিচ্ছে যে, তুরস্ক আফ্রিকা জুড়েই তার প্রভাব বিস্তার করতে চাইছে।

সাম্প্রতিক সময়ে তুরস্কের তৈরি ড্রোন সিরিয়া, লিবিয়া এবং আজেরবাইজানে ব্যাপক সাফল্য পাবার পর তুর্কিরা প্রচুর ড্রোনের অর্ডার পেতে শুরু করেছে। ইউক্রেন এবং পোল্যান্ডের কাছে তুর্কি ড্রোন বিক্রয়ের খবর এসেছে। মধ্য এশিয়ার তুর্কমেনিস্তান প্যারেডে তুর্কি ড্রোন দেখিয়েছে; কিরগিজস্তানও একই ড্রোন অর্ডার করেছে বলছে। এমনকি ব্রিটিশরাও এতে আগ্রহ দেখিয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। আফ্রিকার দেশ তিউনিসিয়াতে তুর্কি ড্রোন বিক্রি হয়েছে, যদিও এই মুহুর্তে তিউনিসিয়ার ক্ষমতা নেয়া প্রেসিডেন্ট কাইস সাইয়েদের সাথে তুরস্কের সম্পর্কের টানাপোড়েন চলছে। মরক্কোতেও তুরস্কের ড্রোন বিক্রি হয়েছে; যেখানে বিচ্ছিন্নতাবাদী অঞ্চল পশ্চিম সাহারা নিয়ে মরক্কো এবং আলজেরিয়ার মাঝে ব্যাপক বিরোধ রয়েছে। তুরস্ক দুই দেশের সাথেই সম্পর্ক রেখে চলেছে। ‘আফ্রিকান ইন্টেলিজেন্স’ খবর দিচ্ছে যে, মোজাম্বিকে বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধরত রুয়ান্ডার সেনবাহিনী তুর্কি ড্রোন কেনার চিন্তা করছে। কিছুকাল আগ পর্যন্তও তুর্কিরা রুয়ান্ডায় কিছু বড় অবকাঠামো প্রকল্পে কাজ করছিল; এখন সেখানে প্রতিরক্ষাও যোগ হলো। ‘রয়টার্স’ বলছে যে, অফিশিয়ালি ঘোষণা না আসলেও ইথিওপিয়াও তুরস্কের কাছ থেকে ড্রোন কেনার ব্যাপারে একমত হয়েছে। ইথিওপিয়া বর্তমানে বিচ্ছিন্নতাবাদী তিগ্রে অঞ্চলের সাথে প্রায় এক বছর ধরে ভয়াবহ যুদ্ধে জড়িয়ে আছে। ইথিওপিয়াতে তুরস্কের বড় রকমের বিনিয়োগ রয়েছে টেক্সটাইল সেক্টরে। দেশটার বড় বড় অবকাঠামোর কাজও তুর্কিরা করছে। নাইজেরিয়াও তার উত্তরাঞ্চলে বোকো হারামের সাথে যুদ্ধে তুর্কি ড্রোন ব্যবহার করতে চাইছে। এঙ্গোলাও তুর্কি ড্রোনের প্রতি আগ্রহ দেখিয়েছে।

আঙ্কারার ‘ফরেন পলিসি সেন্টার’এর ফেলো এমরে চালিসকান বলছেন যে, তুরস্ক মূলতঃ মাঝারি আকৃতির ব্যবসাগুলিতে বিনিয়োগ করেছে; বড় আকারের ব্যবসায় নয়। অর্থাৎ আফ্রিকার সাথে তুরস্কের ব্যবসার প্রসার আসলে খুব বড় কিছু নয়। তবে প্রতিরক্ষা খাতে বিক্রির ব্যাপারগুলি আলাদা; কারণ এর মাঝে থাকে অভিজ্ঞতা ও প্রযুক্তির আদানপ্রদান এবং গভীরতর সহযোগিতা। অনেকেই প্রশ্ন করছেন যে, তুরস্ক কি আফ্রিকাতে ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, চীন বা রাশিয়ার প্রভাবকে চ্যালেঞ্জ করছে কিনা। তারা বলছেন যে, লিবিয়াতে এবং আজেরবাইজানে তুর্কি ড্রোন যুদ্ধের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পেরেছিল। লিবিয়ার যুদ্ধে পরিবর্তন আনার পরপরই তুরস্ক আফ্রিকাতে শুধুমাত্র মানবিক সহায়তা প্রদানকারী থেকে সামরিক শক্তিতে পরিণত হতে শুরু করে। চালিসকান বলছেন যে, লিবিয়াকে কেন্দ্র করেই আশেপাশের দেশগুলিতে তুরস্ক সামরিক শক্তি হতে চাইছে। তবে লিবিয়ার বাইরে সামরিক ঘাঁটি রাখার মতো অর্থনৈতিক সক্ষমতা তুরস্কের নেই। অপরদিকে চীনারা অস্ত্রও বিক্রি করছে; আবার বিশাল আকারের ঋণও দিচ্ছে।

ইস্তাম্বুলের ‘ইয়েদিতেপে ইউনিভার্সিটি’র এসিসট্যান্ট প্রফেসর ভোলকান ইপেক বলছেন যে, তুরস্কের আফ্রিকায় যাওয়া দেখিয়ে দেয় যে, তারা তাদের আশেপাশের দেশের মাঝে আর কূটনৈতিক কর্মকান্ডকে সীমাবদ্ধ করে রাখতে চাইছে না। এক্ষেত্রে ইউরোপিয় শক্তিদের তুলনায় তুরস্ক এগিয়ে আছে; কারণ তুরস্কের কোন ঔপনিবেশিক ইতিহাস নেই।

 
তুর্কি প্রেসিডেন্ট এরদোগান এবং নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট বুহারি। তুরস্ক তার নিজের জন্যে একটা আলাদা স্থান করে নিতে চাইছে। আরও শক্তিশালী কূটনীতির দিকে যেতে চাইছে তুরস্ক; যেখানে আফ্রিকার দেশগুলি তুরস্কের সাথে পার্টনারিশিপে নিজেরাও লাভবান হবে। উদাহরণস্বরূপ, নাইজেরিয়া চাইছে তার এলএনজির জন্যে বাজার খুঁজতে; যেখানে তুরস্ক এগিয়ে এসেছে নাইজেরিয়ার গ্যাস অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে।

তুরস্ক আফ্রিকাতে কার সাথে প্রতিযোগিতা করছে?

‘জি জিরো মিডিয়া’ বলছে যে, আফ্রিকাতে তুরস্কের কর্মকান্ড যার জন্যে সবচাইতে বেশি হুমকির সৃষ্টি করেছে, সে হলো ফ্রান্স। পশ্চিম আফ্রিকায় তুরস্কের অবস্থানের ব্যাপারে সবচাইতে বিরক্ত ফ্রান্স। ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ সরাসরিই বলেছেন যে, তুরস্ক আফ্রিকাতে ফরাসিদের বিরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়াচ্ছে। ফরাসি মিডিয়াতে এরদোগানের আফ্রিকা সফরে সাধারণ বাণিজ্যের তুলনায় ড্রোন বাণিজ্যকেই বেশি হাইলাইট করা হয়েছে। ‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’এর এক প্রতিবেদনে আফ্রিকাতে তুরস্কের অর্থনৈতিক কর্মকান্ড নিয়ে প্রশ্ন করা হচ্ছে; কারণ তুর্কি মুদ্রা লিরা এখন যথেষ্টই দুর্বল; মুদ্রাস্ফীতি মারাত্মক আকার ধারণ করেছে; দেশটার ব্যাংকিং সেক্টরের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। এমতাবস্থায় ডিসেম্বর মাসে ইস্তাম্বুলে তুরস্ক আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠককে কতটুকু স্বার্থক করা সম্ভব? ইতালির ‘ইউনিভার্সিটি অব জেনোয়া’র ফেডেরিকো ডনেলি বলছেন যে, প্রতিবারই আফ্রিকার সাথে তুরস্কের শীর্ষ বৈঠক তুর্কিদের নতুন নীতিকে সামনে নিয়ে এসেছে। এখন নতুন যে দিকটাকে তুর্কিরা গুরুত্ব দিচ্ছে, তা হলো নিরাপত্তা। ড্রোন বিক্রির মাধ্যমে তুর্কিরা আফ্রিকার দেশগুলির সাথে একরকমের দরকষাকষিতে যেতে পারছে; কারণ পশ্চিমাদের ড্রোনগুলির চাইতে কমদামি হলেও তুর্কি ড্রোনগুলির কর্মক্ষমতা যথেষ্ট। আফ্রিকার দেশগুলির নিরাপত্তার জন্যে এই ড্রোনগুলি বড় সুবিধা দিচ্ছে।

ইস্তাম্বুলের সাংবাদিক বারসিন ইনান্স বলছেন যে, এরদোগানের আফ্রিকা সফর তুরস্কের চাইতে ইউরোপেই বেশি আলোচনার জন্ম দিচ্ছে। ইউরোপিয় মিডিয়াতে এব্যাপারে যত বিতর্ক হচ্ছে, তা তুরস্কে প্রায় কখনোই দেখা যায় না। তুরস্কের আফ্রিকা নীতিতে পরিবর্তন এরদোগানের আগেই শুরু হলেও সকলে এব্যাপারে এরদোগানকেই ক্রেডিট দিচ্ছেন। তুরস্কের জ্বালানি উৎসকে আরও শক্ত ভিত দিতে তুরস্ক নাইজেরিয়া থেকে এলএনজি আমদানিতে গুরুত্ব দিতে চাইছে। এই ব্যাপারটা যতটা না হাইলাইট হয়েছে, তার চাইতে ড্রোন বিক্রি নিয়েই কথা হচ্ছে বেশি। নাইজেরিয়ার ডেভেলপমেন্ট কনসালট্যান্ট নাজিম আনিমাশাউন মনে করেননা যে তুরস্ক আফ্রিকাতে কাউকে প্রতিস্থাপিত করতে চাইছে। তিনি বলছেন যে, তুরস্ক তার নিজের জন্যে একটা আলাদা স্থান করে নিতে চাইছে। আরও শক্তিশালী কূটনীতির দিকে যেতে চাইছে তুরস্ক; যেখানে আফ্রিকার দেশগুলি তুরস্কের সাথে পার্টনারিশিপে নিজেরাও লাভবান হবে। উদাহরণস্বরূপ, নাইজেরিয়া চাইছে তার এলএনজির জন্যে বাজার খুঁজতে; যেখানে তুরস্ক এগিয়ে এসেছে নাইজেরিয়ার গ্যাস অবকাঠামোতে বিনিয়োগ করতে। যখন পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলি নিজেদের কর্মকান্ড কমিয়ে ফেলতে চাইছে, তুরস্ক ঠিক সেখানেই নিজেদের জায়গা করে নিতে চাইছে। তুর্কি সাংবাদিক বারসিন ইনান্স বলছেন যে, ইস্তাম্বুলে আসন্ন আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠক খুব সহজেই অন্যান্য ইস্যুর নিচে পড়ে যেতে পারে। কারণ তুরস্কের আশেপাশে সিরিয়া, রাশিয়া, ইরাক, ইরান, গ্রিসসহ আরও অনেক ইস্যু রয়েছে; যেগুলি যেকোন সময় সামনে চলে আসতে পারে এবং সেই ইস্যুগুলিকেই মিডিয়া আফ্রিকার চাইতে বেশি গুরুত্ব দিতে পারে। এমনকি তুরস্কে বড় কোন ইস্যু তৈরি না হলেও হয়তো আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠক তুর্কি মিডিয়াতে অতবড় হেডলাইন হবে না। তুরস্কের আফ্রিকা নীতি সরকারের কাছে যতটা না গুরুত্বপূর্ণ, সাধারণ জনগণের কাছে ততটা নয়। তবে তুর্কি ব্যবসায়ীরা আফ্রিকার ব্যাপারে যথেষ্টই আগ্রহী। তুর্কি চিন্তাবিদদের মাঝেও খুব কম সংখ্যক আফ্রিকা নিয়ে কথা বলছেন।

তুর্কিরা তাদের উসমানি খিলাফতের ইতিহাসের স্বপ্নে বিভোর। তাই উসমানি সময়ে তুর্কিদের প্রভাবের মাঝে থাকা এলাকাগুলিকেই তুরস্ক টার্গেট করছে। এরদোগানও তুর্কি জনগণের এই আবেগকে কাজে লাগাতে চাইছেন। তবে আফ্রিকা এখনও তুর্কিদের চিন্তায় বেশ ছোট। আঞ্চলিক প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতায় তুরস্ক এখন সর্বদাই সিরিয়া, রাশিয়া, ককেশাস, ইরাক, ইরান, গ্রিস, ইত্যাদি ইস্যু নিয়ে জর্জরিত; যা কিনা তুর্কি মিডিয়াকে আফ্রিকার ব্যাপারে অনাগ্রহী রেখেছে। এর মাঝে তুরস্কের অর্থনীতি চলছে ধুঁকে ধুঁকে। তুর্কি লিরার ব্যাপক দরপতন এবং মারত্মক মূল্যস্ফীতিই জনগণকে ব্যতিব্যস্ত রাখার জন্যে যথেষ্ট; যা কিনা সামনের নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ হবে। এমতাবস্থায় এরদোগানের কাছে তুর্কি জনগণের আবেগকে জাগিয়ে রাখাটাই ক্ষমতায় টিকে থাকার ফাউন্ডেশন। তবে তুর্কি জনগণের আবেগকে ব্যবহার করতে গিয়ে তুরস্ক তার নীতিকে যতটা বহির্মুখী করবে, ততই আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক শক্তিদের সাথে প্রতিযোগিতার মাঝে পড়বে। আফ্রিকা তুরস্কের জন্যে নতুন যুদ্ধক্ষেত্র। এখানে বড় শক্তিদের সাথে প্রতিযোগিতায় তুরস্ক নিজেদের জন্যে আলাদা জায়গা করে নিতে চাইছে। তুরস্কের ড্রোনগুলি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এতে ফ্রান্সের দুশ্চিন্তাই হবে সবচাইতে বেশি; কারণ ঔপনিবেশিক শক্তিদের মাঝে দুর্বল হয়ে পড়া ফ্রান্সেরই প্রভাব হারাবার ভয়ে থাকবে সবচাইতে বেশি।

2 comments:

  1. খুবই ইনফরমেটিভ আরটিকেল। ধন্যবাদ।

    একটা প্রশ্ন, এরদোয়ান এর নেতৃত্বে তুর্কিকি তার জন্মকে ভুলে যেতে চাইছে? লিবরালিজম-সেকুলারিজম দিয়ে তৈরি ভিত্তি কি ভেঙে যেতে বসেছে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. কেমালের তুরস্ক বহু বছর ধরে ইউরোপের অংশ হতে চেয়েছে। কিন্তু যেটা তুর্কি নেতৃত্ব বুঝতে পারেনি তা হলো, ইউরোপ তুর্কিদের কোনদিনই বিশ্বাস করেনি এবং করবেও না। ইউরোপ কয়েক শতক ধরে তুর্কিদেরকে ইউরোপের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখেছে। সেই তুর্কিদেরকে ইউরোপের অংশ করে নেয়াটা ইউরোপের জন্যে সমীচিন নয় কোনদিনই। এরপরেও ইউরোপিয় সেকুলার কনসেপ্টকে আলিঙ্গন করে নিজেদেরকে ইউরোপিয়ান বানাতে চেয়েছে কেমালের অনুসারীরা। প্রকৃতপক্ষে এই পদ্ধতিতে ইউরোপ নিশ্চিত করতে চেয়েছে যে, তুর্কিরা যেন ভবিষ্যতে কখনোই ইউরোপের প্রতি হুমকি না হয়ে যায়। তুর্কিরা ইউরোপের কনসেপ্টকে আলিঙ্গন করলে এবং অর্থনৈতিকভাবে ইউরোপের উপর নির্ভরশীল হলে ইউরোপকে কখনোই শত্রু মনে করবে না - এটাই ছিল মূল দিকনির্দেশনা।

      তুরস্ক এখনও সেই দিকনির্দেশনা থেকে বের হতে পারেনি। যদিও পশ্চিমা আদর্শের নিম্নগামিতা সাথেসাথে তুরস্কের সমাজেও ব্যাপক পরিবর্তন আসতে শুরু করেছে। তুর্কি জনগণ এখন কেমালের কট্টর সেকুলার আইনগুলিকে অমান্য করতে শিখছে। এই ব্যাপারগুলি এরদোগানের কারণে হয়নি। বরং তুরস্কের সমাজের পরিবর্তনকে পুঁজি করে পশ্চিমা গণতন্ত্রকে টিকিয়ে রাখা ফর্মূলার অন্তর্গত এরদোগানের মতো নেতৃত্ব। এধরনের নেতৃত্ব তুরস্ককে সেকুলার করেই রাখবে; এবং একইসাথে মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে ক্ষমতায় টিকে থাকবে।

      Delete