Monday 4 October 2021

ইউরোপিয়ান সেনাবাহিনী… কতটা বাস্তব?

০৫ই অক্টোবর ২০২১

সামনের দিনগুলিতে ফ্রান্স এবং জার্মানির নিরাপত্তা চিন্তাতেই যে একাত্মতা থাকবে, সেটার নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারে না। কারণ ইউরোপের ইতিহাসে একাত্মতা নেই। প্রকৃতপক্ষে ষোড়শ শতক থেকে ইউরোপে জাতিরাষ্ট্রের চিন্তা আবির্ভূত হবার পর থেকেই ঐক্যবদ্ধ থাকা বা একই চিন্তা বাস্তবায়ন করাটা ইউরোপের বাস্তবতা ছিল না কখনোই।

 

নতুন করে ইউরোপের সামরিক বাহিনী তৈরির উদ্যোগ

গত ১৫ই সেপ্টেম্বর ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন ইইউ পার্লামেন্টের এক ভাষণে বলেন যে, ইইউএর উচিৎ নিরাপত্তা চ্যালেঞ্জ এবং বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবিলায় নিজেদের সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। তিনি আরও বলেন যে, ইইউএর নিজস্ব সামরিক বাহিনী এক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ সমাধান হবে। আফগানিস্তান থেকে পশ্চিমা দেশগুলি সরে আসার পর যুক্তরাষ্ট্র বা ন্যাটোর সামরিক সহায়তা ছাড়াই ইইউএর নিজস্ব রাজনৈতিক সদিচ্ছা দরকার। তিনি বলেন যে, আগামী বছর ফ্রান্স ইইউএর একটা প্রতিরক্ষা শীর্ষ বৈঠকের ডাক দেবে। ইইউএর বাৎসরিক স্টেট অব দ্যা ইউনিয়ন ভাষণে ভন ডার লেয়েন বলেন যে, সময় এসেছে ইইউকে পরের ধাপে নিয়ে যাবার। তিনি বলেন যে, ইইউএর উচিৎ নিজস্ব উঠানে এবং অন্যান্য স্থানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কাজ করা; তা ন্যাটো এবং জাতিসংঘের মিশনের বাইরেও হতে পারে। একইসাথে ইইউএর উচিৎ নিজেদের মাঝে ইন্টেলিজেন্স শেয়ার করা এবং সাইবার নিরাপত্তায় নেতৃস্থানীয় অবস্থানে পৌঁছানো। তবে এতকাল ইইউ এক্ষেত্রে পিছিয়ে আছে শুধুমাত্র সক্ষমতা না থাকার কারণেই নয়, রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাবের কারণে। তিনি বলেন যে, সবচাইতে উন্নত সামরিক বাহিনী থাকলেও সেটা ব্যবহার করার মতো প্রস্তুতি না থাকলে তা অর্থহীন হবে।

ইইউ এতকাল ধরে তার নিরাপত্তাজনিত কর্মকান্ডের জন্যে ন্যাটোর উপরেই নির্ভর করে এসেছে। ‘বিবিসি’ মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রঁ আরও আগেই ইইউএর নিজস্ব সেনাবাহিনী তৈরি করার কথা বলেছেন। ইইউ থেকে ব্রিটেনের বের হয়ে যাবার পর ইইউএর সেনাবাহিনীর চিন্তাটা আরও গুরুত্ব পেয়েছে। কিছুদিন আগেই জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেট ক্রাম্প কারেনবাউয়ার বলেন যে, ইইউএর উচিৎ একটা গুরুত্বপূর্ণ কৌশলগত খেলোয়ার হিসেবে আবির্ভূত হওয়া। ইইউএর নিজস্ব ‘র‍্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ তৈরি করা চিন্তা এসেছিল ১৯৯০এর দশকে বলকানে প্রাক্তন যুগোশ্লাভিয়ার গৃহযুদ্ধের সময়। ২০০৭ সালে একেক সদস্য রাষ্ট্র থেকে ১৫’শ সেনার ব্যাটলগ্রুপ তৈরি করার হয়। এই ব্যাটলগ্রুপ অপারেশনের জন্যে প্রস্তুত বলা হলেও এর অর্থায়ন এবং মোতায়েন করার ব্যাপারে মতৈক্য হয়নি কখনোই। বেশিরভাগ ইইউ সদস্য রাষ্ট্রই ন্যাটোর সদস্য। আর যেই দেশগুলি রাশিয়ার সীমানায় রয়েছে, তারা কেউই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্ক খারাপ করতে চায়না। ন্যাটোর সেক্রেটারি জেনারেল জ্যান্স স্টলটেনবার্গ ইইউএর নিজস্ব প্রতিরক্ষানীতি তৈরিকে স্বাগত জানিয়েছেন; তবে নতুন করে আরেকটা সামরিক বাহিনী তৈরির ব্যাপারে তিনি হুশিয়ার করেন।

 
১৫ই সেপ্টেম্বর ইইউ পার্লামেন্টের এক ভাষণে ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন ডার লেয়েন। ভন ডার লেয়েন বলেন যে, সময় এসেছে ইইউকে পরের ধাপে নিয়ে যাবার। তিনি বলেন যে, ইইউএর উচিৎ নিজস্ব উঠানে এবং অন্যান্য স্থানে স্থিতিশীলতা নিশ্চিতে কাজ করা; তা ন্যাটো এবং জাতিসংঘের মিশনের বাইরেও হতে পারে।

আফগানিস্তানের পর ইউরোপের চিন্তায় পরিবর্তন?

‘ফ্রান্স টুয়েন্টিফোর’এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের আফগানিস্তান ছেড়ে আসার একতরফা সিদ্ধান্তই ইইউএর নিজস্ব সামরিক বাহিনীর ব্যাপারটাকে নতুন করে সামনে নিয়ে এসেছে। আফগানিস্তান থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরে আসার পর ইউরোপিয়ান দেশগুলির সেখান থেকে চলে আসা ছাড়া কোন গতিই ছিল না; যদিও ইউরোপের দেশগুলি চেয়েছিল সেখানে থাকতে এবং তালিবানের নিয়ন্ত্রণ নেয়া প্রতিরোধ করতে। আফগানিস্তানে নিজেদের সামরিক অবস্থান ধরে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলি ওয়াশিংটনের লজিস্টিকস এবং আকাশ সক্ষমতার উপর পুরোপুরিভাবে নির্ভরশীল ছিল। নিজেদের নাগরিকদেরকে সেখান থেকে সরিয়ে আনতেও তারা ওয়াশিংটনের উপর নির্ভরশীল ছিল। ইইউএর পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেল ০২রা সেপ্টেম্বর সাংবাদিকদের বলেন যে, ইইউএর নিজস্ব প্রতিরক্ষার দরকারটা আফগানিস্তানের ঘটনার আগে আর কখনোই এভাবে অনুভূত হয়নি। তিনি বলেন যে, ইইউএর উচিৎ ৫ হাজার সেনার একটা ‘র‍্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ তৈরি করা।

২০২০ সালের নভেম্বরে ‘পলিটিকো’ পত্রিকাতে এক লেখায় জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী আনেগ্রেট ক্রাম্প কারেনবাউয়ার, যিনি ‘একেকে’ নামে সমধিক পরিচিত, বলেন যে, ইউরোপের নিজস্ব কৌশলগত সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতার ব্যাপারে চিন্তা সকলেরই পরিত্যাগ করা উচিৎ। কারণ ইউরোপ বৈশ্বিকভাবে নিরাপত্তা দেবার মার্কিন সক্ষমতাকে কখনোই প্রতিস্থাপিত করতে পারবে না। ‘একেকে’র এই মন্তুব্যে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ অত্যন্ত বিরক্ত হন। এর কারণ হলো ইউরোপের কৌশলগত নিজস্বতা ইউরোপের ব্যাপারে ম্যাক্রঁর চিন্তার মূল স্তম্ভ। ম্যাক্রঁ চাইছেন সামরিক, অর্থনৈতিক এবং প্রযুক্তিগত দিক থেকে ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের উপর নির্ভরশীলতা থেকে সরিয়া আনতে। কিছুদিন আগে ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটএর সাথে এক সাক্ষাতের পরেও ম্যাক্রঁ ইউরোপের কৌশলগত স্বাধীনতার ব্যাপারে কথা বলেন। দুই নেতা যৌথ বিবৃতিতে বলেন যে, ইইউএর উচিৎ নিজস্ব কৌশলগত স্বকীয়তা তৈরি করা, যাতে করে তা নিরাপত্তা এবং প্রতিরক্ষাক্ষেত্রে আরও দায়িত্ব নিতে পারে।

এর আগে ইইউ যতবার নিজস্ব সামরিক বাহিনী তৈরি করেছিল, প্রতিবারই রাজনৈতিক সদিচ্ছা না থাকা ছাড়াও গুরুত্বপূর্ণ স্থানে দরকারি সক্ষমতার ঘাটতি ছিল। ‘ইউরোপিয়ান কাউন্সিল অন ফরেন রিলেশন্স’এর নিরাপত্তা বিশ্লেষক রাফায়েল লস বলছেন যে, প্রায় সকল ক্ষেত্রেই ইউরোপের সক্ষমতার অভাব রয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার সমাধানে কৌশলগত আকাশ পরিবহণে দ্রুত অনেক সেনা এবং তাদের যন্ত্রপাতি মোতায়েন করার ক্ষেত্রে ইউরোপের সক্ষমতার ঘাটতি রয়েছে। এছাড়াও সর্বদা অপারেশনাল ইন্টেলিজেন্স পাবার জন্যে স্যাটেলাইটের সক্ষমতাও ইউরোপের যথেষ্টই কম।

ইইউএর সদস্য রাষ্ট্রগুলির মাঝে চিন্তাগত পার্থক্য

প্রকৃতপক্ষে ইইউএর সমস্যা আরও গভীর। ন্যাটোর সদস্যদেশগুলি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, তারা তাদের জিডিপির ২ শতাংশ প্রতিরক্ষা খাতে খরচ করবে। কিন্তু ২০২১ সালে ন্যাটোর ২৮টা ইউরোপিয়ান সদস্য রাষ্ট্রের মাঝে মাত্র ৯টা দেশ তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটের টার্গেট বাস্তবায়ন করেছে; যার বেশিরভাগই রাশিয়ার সীমানার কাছের দেশ। ইউরোপের সবচাইতে বড় অর্থনীতি জার্মানির ক্ষেত্রে এই সংখ্যাটা হলো ১ দশমিক ৫৩ শতাংশ। ২০১৫ সাল থেকে তা মাত্র ০ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। ‘জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল এন্ড সিকিউরিটি এফেয়ার্স’এর নিরাপত্তা বিশ্লেষক ক্লাউডিয়া মেজর বলছেন যে, ২০২৪ সালের আগে জার্মানি হয়তো ন্যাটোর ২ শতাংশের বাজেট টার্গেট ধরতে পারবে না। এর মূল কারণ হলো জার্মানির মতো দেশগুলি নিজেদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি রয়েছে বলে মনে করে না। তাই তারা সামরিক বাজেট বৃদ্ধি করার ক্ষেত্রে এতটা কৃপণ।

কাবুলের সরকারের পতন ইউরোপের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে আসেনি। ক্লাউডিয়া মেজর বলছেন যে, আফগানিস্তান ইউরোপকে নতুন করে শেখাচ্ছে যে, তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতা কতটা কম। কিন্তু এই শিক্ষাটাতো ইউরোপ এর আগেও পেয়েছে। আফগানিস্তানের কারণে ইইউএর দেশগুলিতে নিজেদের সামরিক বাজেট বৃদ্ধির পক্ষে জনমত তৈরি হবে না। রাফায়েল লস বলছেন যে, বেশিরভাগ ইউরোপিয়ান গত এক দশকে আফগানিস্তান নিয়ে কোন চিন্তাই করেনি।

এছাড়াও ইইউএর সদস্যরাষ্ট্রগুলির মাঝেই রয়েছে চিন্তাগত পার্থক্য। রাশিয়ার সীমানার দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া কোন ইউরোপিয় নিরাপত্তার উপর নির্ভর করতে চায় না। ‘ইউনিভার্সিটি অব কেন্ট’এর প্রফেসর রিচার্ড হুইটম্যান বলছেন যে, অনেক দেশের কাছে এটা বিশ্বাসযোগ্য নয় যে, যুক্তরাষ্ট্র না থাকলেও কোন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা একই রকমের নিরাপত্তা দিতে পারবে। এর মূল কারণ হলো যেখানে বল্টিকের দেশগুলি রাশিয়াকে তাদের অস্তিত্বের প্রতি হুমকি হিসেবে দেখে, সেখানে জার্মানি রাশিয়াকে প্রধান জ্বালানি সরবরাহকারী এবং ভূরাজনৈতিক সমস্যা সৃষ্টিকারী হিসেবে দেখে। আবার হাঙ্গেরি রাশিয়াকে বন্ধু হিসেবেও দেখে। সামরিক কর্মকান্ডকে মানুষ বৈধ হিসেবে দেখবে যখন তাদের নিজস্ব জাতীয় নেতারা বা তাদের পার্লামেন্ট সিদ্ধান্ত নেবে। নিজস্ব জাতীয় সিদ্ধান্তকে বাইপাস করে কোন সামরিক সিদ্ধান্ত নেয়াটা অবাস্তবই বটে।

 

ব্রিটেনকে ছাড়া ইউরোপের নিরাপত্তা সক্ষমতা কতটুকু?

ইইউ সদস্যদেশগুলির যখন নিরাপত্তা ক্ষেত্রে চিন্তাই আলাদা, তখন একত্রিতভাবে সামরিক কোন সিদ্ধান্ত নেয়া ইইউএর পক্ষে অবাস্তবই ঠেকছে। ভবিষ্যতে ইইউএর কোন সামরিক সিদ্ধান্তে সকলে একত্রে সিদ্ধান্ত নিতে পারবে এটা যেহেতু বলা যাচ্ছে না, তাই হয়তো ইইউএর কিছু দেশ নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নে সামরিক কোয়ালিশন গঠন করতে পারে। ‘দ্যা ইকনমিস্ট’এর নিরাপত্তা বিশ্লেষক শশাঙ্ক জোশি উদাহরণ দিয়ে বলছেন যে, ২০১৩ সালে পশ্চিম আফ্রিকার মালিতে এভাবেই ফ্রান্সের সাথে কিছু ইউরোপিয় দেশ যোগ দিয়েছিল। এভাবে ইইউএর সকলের মাঝে সমঝোতা অথবা সংখ্যাগরিষ্ঠ সমর্থন যদি তৈরি করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইইউএর কাঠামোর বাইরের দেশগুলিও ইউরোপের সামরিক মিশনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেবে। এক্ষেত্রে সর্বাগ্রে নাম আসবে ব্রিটেনের, যারা ইইউ থেকে বের হয়ে গেছে; কিন্তু যারা এখনও সামরিক দিক থেকে ইউরোপের সবচাইতে বড় বাজেটের অধিকারী এবং বিশ্বব্যাপী যাদের ইন্টেলিজেন্স সক্ষমতা রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে ইউরোপের নিজস্ব কৌশলগত স্বকীয়তা ব্রিটেনকে ছাড়া সম্ভবই নয়; যদি যুক্তরাষ্ট্র সেখানে অনুপস্থিত থাকে। ন্যাটোর মতো মিশন অথবা ইউরোপের সামষ্টিক প্রতিরক্ষা ব্রিটেনকে ছাড়া সম্ভব নয়।

ইউরোপের নিরাপত্তায় ব্রিটেনের নেতৃত্বশীল অবস্থান নতুন নয়। রাজনৈতিক সূক্ষ্মতা এবং আদর্শিক কৌশলগত দৃষ্টিভঙ্গি ব্রিটেনকে সবসময়ই ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলি থেকে এগিয়ে রেখেছে। বল্টিক সাগরীয় অঞ্চল, নরওয়ের উপকূল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরে ব্রিটেন তার অবস্থানকে যেভাবে ধরে রেখেছে, তা ইউরোপের অন্যান্য যেকোন দেশের জন্যেই অবাস্তব। এছাড়াও ব্রেক্সিটের পর ‘গ্লোবাল ব্রিটেন’ চিন্তার বাস্তবায়নের মাধ্যমে ব্রিটেন বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব বৃদ্ধিতে মনোনিবেশ করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে ইইউএর কৌশলগত স্বকীয়তা নিয়ে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ম্যাক্রঁ, ইউরোপিয়ান কমিশনের প্রেসিডেন্ট ভন ডেন লেয়েন অথবা ইইউ পররাষ্ট্রনীতি প্রধান জোসেপ বোরেলের কথাগুলি বাস্তবতার সাথে কতটা সামঞ্জস্যপূর্ণ, তা আগের বছরগুলিতে ইউরোপের ‘র‍্যাপিড রেসপন্স ফোর্স’ তৈরি করার ব্যর্থ প্রয়াসগুলিই বলে দেয়। ব্রেক্সিটের পর ইউরোপের নেতৃত্ব নেবার যে প্রচেষ্টা ফ্রান্স দেখাতে চাইছে, তা ইমানুয়েল ম্যাক্রঁর আকাশচুম্বী আকাংক্ষাকেই তুলে ধরে। এঙ্গেলা মার্কেলের ১৬ বছরের নেতৃত্বের পর ফ্রান্স হয়তো চাইবে জার্মানি ফ্রান্সের নেতৃত্বকে মেনে নিক। কিন্তু সামনের দিনগুলিতে ফ্রান্স এবং জার্মানির নিরাপত্তা চিন্তাতেই যে একাত্মতা থাকবে, সেটার নিশ্চয়তাও কেউ দিতে পারে না। কারণ ইউরোপের ইতিহাসে একাত্মতা নেই। প্রকৃতপক্ষে ষোড়শ শতক থেকে ইউরোপে জাতিরাষ্ট্রের চিন্তা আবির্ভূত হবার পর থেকেই ঐক্যবদ্ধ থাকা বা একই চিন্তা বাস্তবায়ন করাটা ইউরোপের বাস্তবতা ছিল না কখনোই।

2 comments:

  1. আপনি বলছেন, "বল্টিক সাগরীয় অঞ্চল, নরওয়ের উপকূল, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চল এবং কৃষ্ণ সাগরে ব্রিটেন তার অবস্থানকে যেভাবে ধরে রেখেছে"- এক্ষেত্রে যদি ব্যাখ্যা করতেন বৃটেন কিভাবে উক্ত অঞ্চলে তার অবস্থান ধরে রেখেছে তাহলে বুঝতে সুবিধা হবে। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি 'যুক্তরাষ্ট্রের পর...' বইতে "গ্লোবাল ব্রিটেন - কতটা বাস্তব?" লেখাটা পড়ুন। (পৃঃ ১১৭) সেখানে ন্যাটোর ফ্রেমওয়ার্ক অব নেশনস কনসেপ্ট নিয়ে পড়া ছাড়াও 'গ্লোবাল ব্রিটেন' কনসেপ্টের মূল বিষয়গুলির উপর একটা সম্যক ধারণা পাবেন।

      Delete