Tuesday, 18 March 2025

পাকিস্তানের ট্রেনে হামলা - ভারত কেন সন্ত্রাসী রাষ্ট্র নয়?

১৯শে মার্চ ২০২৫

পাকিস্তানে সন্ত্রাসী হামলার এই ঘটনা যে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যায় না তা হলো, পাকিস্তান রাষ্ট্র তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পুরণে যথেষ্ট যত্নবান হয়নি কখনোই। এছাড়াও পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতিগত বৈষম্যকেই প্রাধান্য দিয়েছে সর্বদা। একারণেই যুগ যুগ ধরে পুরো পাকিস্তান জুড়ে অস্থিরতা তৈরির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভারতীয়রা এই অস্থিরতায় ইন্ধন যুগিয়েছে মাত্র।


গত ১১ই মার্চ পাকিস্তানের বালুচিস্তান প্রদেশের বিচ্ছিন্নতাবাদী 'বালুচ লিবারেশন আর্মি' বা 'বিএলএ'এর একটা সশস্ত্র গ্রুপ দুর্গম অঞ্চলে 'জাফর এক্সপ্রেস' নামের একটা ট্রেন হাইজ্যাক করে ৪'শ মানুষকে জিম্মি করে। প্রায় ৩৬ ঘন্টা পর পাকিস্তানের স্পেশাল ফোর্স 'এসএসজি'র 'আল জারার কোম্পানি' ট্রেনটার নিয়ন্ত্রণ নিতে সক্ষম হয়। এর ফলাফল হিসেবে ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, ৩ জন রেলওয়ে কর্মী, ৫ জন সাধারণ যাত্রী এবং ৩৩ জন বিচ্ছিন্নতাবাদীর মৃত্যু হয় এবং ৩'শ ৫৪ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয় বলে সরকারি সূত্র বলছে। আক্রমণকারীরা ট্রেন লাইনে বোমা ফাটিয়ে ট্রেন থামানোর ব্যবস্থা করেছিল। 'এসোসিয়েটেড প্রেস'এর এক খবরে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, আক্রমণকারীরা ট্রেনের যাত্রীদের সকলের পরিচয়পত্র চেক করতে থাকে এবং যারা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য, তাদেরকে গুলি করে মেরে ফেলতে থাকে। হত্যা করা ব্যক্তিদের মাঝে সেনাসদস্য ছাড়াও সংখ্যালঘু শিয়া এবং পাঞ্জাবিরা ছিল। বালুচ অধিবাসীদেরকে ছেড়ে দেয়া হয়। একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেন যে, হামলাকারীরা কিছু যাত্রীর হাত বেঁধে তাদেরকে কয়েকবার গুলি করে হত্যা করে। একজন মহিলার চোখের সামনে সামরিক বাহিনীতে কাজ করা তার তিন ছেলেকে হত্যা করা হয়। পাকিস্তানী সেনাদের সাথে আক্রমণকারীদের গুলি বিনিময়ের সময় বেশ কিছু যাত্রী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়।

একইদিনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেঃ জেনারেল আহমাদ শরীফ চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন যে, এই সন্ত্রাসী হামলা এবং এর আগের আক্রমণগুলির পেছনে ইন্ধন যুগিয়েছে ভারত। তিনি অবশ্য ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপারে কোন প্রমাণ উপস্থাপন করেননি। তিনি উল্লেখ করেন যে, ২০১৬ সালে কুলভূষণ যাদব নামে ভারতের নৌবাহিনীর একজন অফিসার পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। ভারতের পক্ষে গোয়ান্দাবৃত্তির কাজ করা এবং বালুচিস্তান ও অন্যান্য অঞ্চলের গেরিলা গ্রুপগুলিকে ইন্ধন দেয়ার অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল। জেনারেল চৌধুরী বলেন যে, কিছু আক্রমণকারী পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে; যাদেরকে পাকরাও করার চেষ্টা চলছে। হতাহতের মাঝে বেশিরভাগই ছিল ট্রেনের যাত্রীদেরকে রক্ষা করতে যাওয়া নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং নিজেদের গ্রামের বাড়িতে ফেরত যাওয়া সেনা সদস্য। তিনি আরও বলেন যে, ভারতীয় মিডিয়াতে 'বিএলএ'এর প্রকাশ করা ভিডিও প্রচার করা হয়; যেগুলি হয় আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স বা এআইএর মাধ্যমে তৈরি, নতুবা পুরোনো ছবি। জেনারেল চৌধুরী বলেন যে, হামলাকারীরা মহিলা এবং শিশুদেরকে আলাদা করে ৮ ঘন্টা পরে ছেড়ে দেয়। তারা পুরুষ যাত্রীদেরকে বাইরে নিয়ে আসে এবং যাত্রীদের জাতিগত পরিচয়ের ভিত্তিতে আলাদা করে। 'আল জাজিরা' বলছে যে, তারাও যাত্রীদের সাথে কথা বলে সেটাই জানতে পেরেছে। জেনারেল চৌধুরী বলেন যে, আক্রমণকারীদের বড় অংশ পাহাড়ি অঞ্চলে লুকিয়ে পড়ে। আর ছোট একটা গ্রুপ জিম্মিদের সাথে থাকে। থেকে যাওয়া হামলাকারীদের প্রায় সকলেই ছিল সুইসাইড স্কোয়াডের সদস্য। পাকিস্তানি ইন্টেলিজেন্স বুঝতে পেরেছে যে, হামলাকারীরা ওয়াকিটকির মাধ্যমে আফগানিস্তানে তাদের ইন্ধনদাতাদের সাথে কথা বলছিল। দ্বিতীয় দিনে সামরিক স্নাইপারদের গুলিতে জিম্মিদের কাছে দাঁড়ানো কয়েকজন সুইসাইড স্কোয়াড হামলাকারীর মৃত্যু হলে কয়েকজন জিম্মি পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। এরপরই জিম্মি উদ্ধারের মূল অপারেশন চালানো হয়। উদ্ধার অভিযানের সময় কোন জিম্মির মৃত্যু হয়নি বলে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়। 'আল জাজিরা'র সাথে কথা বলতে গিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক নিরাপত্তা বাহিনীর অফিসার বলেন যে, গেরিলাদের জীবন্ত ধরার জন্যে সর্বোচ্চ লক্ষ্য থাকলেও এধরণের অপারেশনে জিম্মি উদ্ধারে গেরিলাদেরকে বাঁচিয়ে রাখা কঠিন।
 
২০১৬ সালে কুলভূষণ যাদব নামে ভারতের নৌবাহিনীর একজন অফিসার পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে আটক হয়েছিলেন। ভারতের পক্ষে গোয়ান্দাবৃত্তির কাজ করা এবং বালুচিস্তান ও অন্যান্য অঞ্চলের গেরিলা গ্রুপগুলিকে ইন্ধন দেয়ার অপরাধে তাকে মৃত্যুদন্ডে দন্ডিত করা হয়েছিল। কিন্তু পশ্চিমা মিডিয়া যখন পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা দেখতে পাচ্ছে না, তখন এটা বলাই বাহুল্য যে, পশ্চিমারা ভারত-ঘেঁষা নীতিতেই অটল থাকবে। কারণ বালুচিস্তানের গেরিলাদেরকে পশ্চিমারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছে। এখন এই সংগঠনগুলির সাথে ভারতের সংশ্লিষ্টতা মেনে নেয়ার অর্থ হলো ভারত সন্ত্রাসবাদের ইন্ধনদাতা। 


হামলার আন্তর্জাতিক চেহারা

দিল্লীতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রানধির জাইসওয়াল সাংবাদিকদের বলেন যে, পাকিস্তানের ট্রেন হামলায় ভারতের যোগসাজসের অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। তিনি বলেন যে, পাকিস্তানের নিজস্ব ভূখন্ডই সন্ত্রাসের আখড়া। পাকিস্তানের উচিৎ নিজের অভ্যন্তরীণ সমস্যা ও ব্যর্থতাকে ঢাকতে অন্যের উপর দোষ না চাপিয়ে নিজের দিকে তাকানো। এর আগে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র শাফকাত আলী খান বলেন যে, এই হামলার পরিকল্পনা আফগানিস্তানে বসে করা হয়েছে। এবং সেখানে হামলাকারীদের সাথে ইন্ধনদাতাদের যোগাযোগ হয়েছে। পাকিস্তান বরাবরই আফগানিস্তান সরকারকে বলেছে যে, তারা যেন 'বিএলএ'কে তাদের ভূখন্ড ব্যবহার করতে না দেয়। কাবুলের তালিবান সরকারের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র আব্দুল ক্বাহার বালখি এক বিবৃতিতে এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন যে, আফগানিস্তানে 'বিএলএ'র কোন উপস্থিতি নেই। তিনি আরও বলেন যে, পাকিস্তানের উচিৎ দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা না বলে নিজস্ব নিরাপত্তা জোড়দার করা এবং অভ্যন্তরীণ সমস্যার সমাধান করা।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস'এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, বালুচিস্তান প্রদেশের অনেকেই পাকিস্তান সরকারের বিরুদ্ধে বৈষম্যের অভিযোগ করে আসছিল; যদিও পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার তা সর্বদাই অস্বীকার করেছে। এই প্রদেশে প্রচুর খনিজ সম্পদও রয়েছে। 'বিএলএ' পাকিস্তান থেকে আলাদা হয়ে স্বাধীন রাষ্ট্র গঠন করতে চাইছে এবং সেই লক্ষ্যে তারা এর আগেও ট্রেনে হামলা করেছে। তবে ট্রেন হাইজ্যাকের ঘটনা এটাই প্রথম। এই আক্রমণ সারা দুনিয়া থেকে নিন্দা কুড়িয়েছে; যার মাঝে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, তুরস্ক, ইরান এবং ব্রিটেন রয়েছে। ১৪ই মার্চ জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদেও এই আক্রমনের নিন্দা জানানো হয় এবং এই আক্রমণকে সন্ত্রাসী আক্রমণ আখ্যা দিয়ে দায়ী ব্যক্তিদের শাস্তির দাবি করা হয়।

গত ফেব্রুয়ারি মাসে জাতিসংঘের এক প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ২০২১ সালের অগাস্ট থেকে আফগানিস্তানের তালিবান সরকার পাকিস্তানের 'তেহরিক-ই-তালিবান পাকিস্তান' বা 'টিটিপি'কে সহায়তা দিয়ে আসছে; যারা পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অনেক হামলার সাথে জড়িত ছিল। এছাড়াও সেই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, ‘বিএলএ'র সাথে 'টিটিপি' এবং আইসিসের খোরাসান শাখার যোগাযোগ রয়েছে। যদিও এই গ্রুপগুলির লক্ষ্য ভিন্ন, তথাপি নিজেদের স্বার্থে তারা একে অপরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে চলে।
 
বালুচিস্তানে চীনের কৌশলগত প্রকল্পে কাজ করা চীনা নাগরিকদের উপর হামলার ব্যাপারটা ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের গোয়াদরে চীনের কৌশলত সমুদ্রবন্দর তৈরিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত কেউই ভালো চোখে দেখেনি। চীনাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা যেন একপ্রকার গ্রীন লাইটই পাচ্ছে পশ্চিমাদের কাছ থেকে। হাজার হলেও চীনকে নিয়ন্ত্রণে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বড় বন্ধু। 


বালুচিস্তানের ভূরাজনীতি

‘বিবিসি'র এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, বালুচিস্তান হলো পাকিস্তানের পুরো ভূখন্ডের ৪৪ শতাংশ। তবে জনসংখ্যার দিক থেকে পাকিস্তানের ২৪ কোটি মানুষের মাত্র ৬ শতাংশ হলো বালুচ। তবে খনিজ সম্পদের ক্ষেত্রে এই প্রদেশ পাকিস্তানের সবচাইতে ধনী। কানাডার 'বারিক গোল্ড' কোম্পানি এখানে 'রেকো ডিক' খনি ডেভেলপ করছে; যা কিনা বর্তমানে ডেভেলপের মাঝে থাকা সর্ববৃহত তামা এবং স্বর্ণ খনিগুলির অন্যতম। এই প্রদেশে চীনারা 'চায়না পাকিস্তান ইকনমিক করিডোর' বা 'সিপেক' নামের কৌশলগত প্রকল্পে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। এই প্রকল্পের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হলো গোয়াদর গভীর সমুদ্রবন্দর; যা কিনা চীনের 'বেল্ট এন্ড রোড ইনিশিয়েটিভ'এর গুরুত্বপূর্ণ অংশ। এই প্রদেশে চীনারা খনিজ প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে এবং গোয়াদরে একটা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর তৈরি করছে। 'বিএলএ' এই প্রকল্পগুলির ঘোর বিরোধী। ইরান এবং আফগানিস্তানের সাথে বিশাল সীমানা ছাড়াও আরব সাগরে এর রয়েছে বেশ লম্বা সমুদ্রতট। বালুচ জাতির মাঝে বেশ অনেকেই আফগানিস্তান এবং ইরানের বাসিন্দা। ২০২৪এর জানুয়ারিতে ইরান এবং পাকিস্তান একে অপরের ভূমিতে বিমান হামলা করে। তাদের উভয়েরই যুক্তি ছিল যে, অপর দেশের অভ্যন্তরে বিদ্রোহীদের ক্যাম্প রয়েছে। বালুচিস্তানের বাসিন্দারা অভিযোগ করে যে, পাকিস্তান সরকার বালুচিস্তানের খনিজগুলিকে তুলছে ঠিকই, কিন্তু সেখানকার অধিবাসীদের অবস্থার উন্নয়ন করছে না। ১৯৪৮ সালে শুরু হয়ে বালুচ বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ১৯৭০এর দশক পর্যন্ত তাদের কর্মকান্ড চালিয়ে গিয়েছিল। এরপর বেশকিছু সময় পর ২০০৩ সাল থেকে তারা আবারও সক্রিয় হয়। 'বালুচ লিবারেশন আর্মি' বা 'বিএলএ' এবং 'বালুচ লিবারেশন ফ্রন্ট' বা 'বিএলএফ' প্রধান বিচ্ছিন্নতাবাদী গ্রুপ। এর মাঝে 'বিএলএ'র সক্ষমতা সবচাইতে বেশি। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেন 'বিএলএ'কে সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়ে থাকে। পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এক অপারেশনে বালুচ নেতা নওয়াব আকবর খান বুগতিকে হত্যা করে। অভিযোগ রয়েছে যে, পাকিস্তানি নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে বহু বালুচ জনগণ গুম হয়েছে। পাকিস্তান সরকার অবশ্য এগুলি অস্বীকার করে। সাম্প্রতিক বছরগুলিতে 'বিএলএ' পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী ছাড়াও বড় প্রকল্পগুলিতে কাজ করা চীনা নাগরিকদের উপর হামলা করছে। 'বিএলএফ'ও বিদেশী নাগরিকদের উপর হামলা করছে। পাকিস্তান সরকার দাবি করছে যে, ইরান এবং আফগানিস্তানে এই গ্রুপগুলির ঘাঁটি রয়েছে। এবং এদের অনেককেই ভারত অর্থায়ন করছে।

পাকিস্তানের ট্রেনে হামলার ঘটনা পশ্চিমা মিডিয়াতে ততটা গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হয়নি; যতটা দেখা গিয়েছে ভারতের উপর বিভিন্ন হামলার সময়। একইসাথে ভারতের উপর হামলার সময় পাকিস্তানের সংশ্লিষ্টতাকে যতটা হাইলাইট করা হয়েছে, ততটা কখনোই দেখা যায়নি পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলায় ভারতের জড়িত থাকার ব্যাপারে। এমনকি যখন ভারতের সামরিক বাহিনীর একজন অফিসার পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ার পরেও পশ্চিমা মিডিয়া পাকিস্তানের অভ্যন্তরে হামলায় ভারতের সংশ্লিষ্টতা দেখতে পাচ্ছে না, তখন এটা বলাই বাহুল্য যে, পশ্চিমারা ভারত-ঘেঁষা নীতিতেই অটল থাকবে। কারণ বালুচিস্তানের গেরিলাদেরকে পশ্চিমারা সন্ত্রাসী সংগঠন বলে আখ্যা দিয়েছে। এখন এই সংগঠনগুলির সাথে ভারতের সংশ্লিষ্টতা মেনে নেয়ার অর্থ হলো ভারত সন্ত্রাসবাদের ইন্ধনদাতা। আর বালুচিস্তানে চীনের কৌশলগত প্রকল্পে কাজ করা চীনা নাগরিকদের উপর হামলার ব্যাপারটা ভূরাজনৈতিকভাবে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ পাকিস্তানের গোয়াদরে চীনের কৌশলত সমুদ্রবন্দর তৈরিকে যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারত কেউই ভালো চোখে দেখেনি। চীনাদের উপর সন্ত্রাসী হামলা যেন একপ্রকার গ্রীন লাইটই পাচ্ছে পশ্চিমাদের কাছ থেকে। হাজার হলেও চীনকে নিয়ন্ত্রণে ভারত যুক্তরাষ্ট্রের বড় বন্ধু। তবে সন্ত্রাসী হামলার এই ঘটনাগুলি যে বাস্তবতাকে এড়িয়ে যায় না তা হলো, পাকিস্তান রাষ্ট্র তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পুরণে যথেষ্ট যত্নবান হয়নি কখনোই। এছাড়াও পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্র পরিচালনায় এবং তার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে জাতিগত বৈষম্যকেই প্রাধান্য দিয়েছে সর্বদা। একারণেই যুগ যুগ ধরে পুরো পাকিস্তান জুড়ে অস্থিরতা তৈরির পরিবেশ তৈরি হয়েছে। ভারতীয়রা এই অস্থিরতায় ইন্ধন যুগিয়েছে মাত্র।

10 comments:

  1. বিএলএ বা টিটিপি যাই বলি এদেরকে যদি পশ্চিমা বা ভারত সন্ত্রাসী হিসেবে গণ্য করলেও এরা কেনো ইন্ধন জুগাবে তা বিএলএ কেনই বা গ্রহণ করবে।তারা ত জানে তাদেরকে সন্ত্রাসী আখ্যায়িত করা হয়েছে, বেলুচিস্তানকে যদি তারা জাতীয় নিরাপওা বা মৌলিক অধিকার দিত তাই এসব ফ্রন্ট গঠন করার প্রয়োজনিই বা থাকতো কি!! এরা এই সামান্য ব্যাপারটা বুঝতে অক্ষম আবার পাকিস্তান আফগানিস্তানের বর্ডার কাছাকাছি বাট এদের সাথে অলওয়েস বর্ডার ক্লেশ লেগেই থাকবে জাস্ট জাতীয়তাবাদের ভিওিতে আলাদা বলে?
    এত সিলি কনসেপ্ট কত সহজে সলভ করা যায়, এরা কেন এটা বুঝে না আসলে এটা বোধগম্য নয়।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো, এটা বাস্তবতা। নেশন স্টেন বা জাতিরাষ্ট্র কনসেপ্টের এটা একটা প্রধানতম সমস্যা। একটা ভৌগোলিক বাউন্ডারির ভেতরে যারাই বাসিন্দা থাকবে, তাদেরকে সেই দেশের নাগরিক হিসেবে গণ্য করা হবে; এর মাঝে যে কোন ধর্ম বা জাতি থাকতে পারে। এখন ভৌগোলিক সীমানা দিয়ে ভাগ করা দেশগুলির একাধিক দেশের মাঝে যদি একই জাতি বা ধর্মের লোক থাকে, তাহলে তাদেরকেও মেনে নিতে হবে যে, তাদের প্রথম এবং একমাত্র আনুগত্য হলো তাদের রাষ্ট্রের সাথে। কিন্তু সমস্যা হলো, মানুষের বিশ্বাস বা জাতিগত ভালোবাসা থাকে আবেগের জন্যে। জাতিরাষ্ট্র বা নেশন স্টেট এই আবেগের জায়গাটাকে এড়িয়ে যায়। একারণে অনেক সময়েই জাতিগত সমস্যা দেখা দেয়। এক দেশের ভেতর কেউ হয়তো সংখ্যালঘু, কিন্তু পাশের দেশে সে সংখ্যাগরিষ্ঠ। তখন দেখা যায় যে, সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতির দেশটা পার্শ্ববর্তী দেশের ভেতর হস্তক্ষেপ করতে চায়।

      ১৬৪৮ সালের ওয়েস্টফালিয়ান চুক্তির অনুসারে এই নেশন স্টেটগুলি তৈরি হয়েছে। সেই চুক্তি অনুযায়ী একদেশ আরেক দেশের অভ্যন্তরে হস্তক্ষেপ করবে না। তবে সমস্যা হলো এই চুক্তিকে নিয়মিতই এড়িয়ে যাওয়া হয়। বিশেষ করে শক্তিশালী দেশগুলি তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধি করতে এই চুক্তিকে এড়িয়ে নিজেদের ইচ্ছামতো কাজ করে। কাজেই কথায় বলা হলেও ওয়েস্টফালিয়ান সিস্টেম প্রকৃতপক্ষে একটা প্রতারণা ছাড়া আর কিছু নয়। এই সিস্টেমের মাধ্যমে অপেক্ষাকৃত ছোট দেশগুলিকে নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য করা হয়।

      জাতিগত সমস্যাগুলিকে বিভিন্ন দেশ তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। আর যেহেতু সেকুলার নেশন স্টেটের উদ্দেশ্য নয় প্রতি নাগরিকের মৌলিক চাহিদা পুরণ করা, তাই মানুষের মাঝে অসন্তোষ লেগেই থাকে। বিশেষ করে জাতিগত বিভেদের সাথে যদি এই অসন্তোষ জুড়ে দেয়া যায়, তাহলেই বিচ্ছিন্নতাবাদী একতা আন্দলন গড়ে তোলা সম্ভব। কোন ইনসারজেন্সির সফলতা পাবার বা ইনসারজেন্সি সফলভাবে চালিয়ে নেয়ার প্রথম শর্ত হলো - বাইরের শক্তির সহায়তা থাকতে হবে। কাজেই এটা শুধু জিজ্ঞেস করতে হবে যে, পাকিস্তানের ক্ষেত্রে কারা ইনসারজেন্সিগুলিকে সহায়তা দিচ্ছে।

      Delete
  2. পৃথিবীতে সকল দেশের আছে সেনাবাহিনী আর পাকিস্তান-মায়ানমার সেনাবাহিনীর আছে একটা আস্ত দেশ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আদর্শিক গণতন্ত্র বা অংগ্রহণমূলক গণতন্ত্রের ন্যারেটিভ অনুসারে পাকিস্তানকে সামরিক প্রভাবের অধীন দেশ এবং মিয়ানমারকে সামরিক শাসনের দেশ বলা হবে। রাশিয়াকে বলা হবে একনায়নকের দেশ। চীনকে বলা হবে কর্তৃত্ববাদী রাষ্ট্র। উত্তর কোরিয়াকে বলা হবে একনায়কের অধীনে রাষ্ট্র। কিছু রাষ্ট্রকে ফ্যাসিস্টও বলা হতে পারে। আবার কিছু একনায়কের ব্যাপারে কোন কথাই হয়তো বলা হবে না। তবে এই ন্যারেটিভের সমস্যা হলো, এখানে গণতন্ত্রকে শুধুমাত্র ভোটের মাঝেই সীমাবদ্ধ করা হয়েছে। অর্থাৎ ভোট ঠিকমতো না হলে সেটা গণতন্ত্র না। এই সংজ্ঞাটা প্রকৃতপক্ষে গণতন্ত্রের সংজ্ঞা নয়। এটা একটা ন্যারেটিভ; যা তৈরি করা হয়েছে গণতন্ত্রকে দুনিয়ার একমাত্র সমাধান হিসেবে তুলে ধরার নিমিত্তে। প্রকৃতপক্ষে ডেমোক্র্যাসির অর্থ হলো ডেমো বা মানুষের তৈরি ক্র্যাসি বা আইন বা ব্যবস্থা। এখানে একজন আইন তৈরি করলেও তা ডেমোক্র্যাসি; ১০ জন তৈরি করলেও; এক হাজার জন তৈরি করলেও। এটাকে সেকুলারিজমও বলা যায়। কারণ এটা ডিভাইন ল বা সৃষ্টিকার্তার আইনকে প্রতিস্থাপন করেছে।

      গণতন্ত্রের সংজ্ঞা অনুসারে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, ভারত, ব্রিটেন, ইরান - সকলেই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র বা রিপাবলিক। কারণ এখানে মানুষের তৈরি করা আইন দিয়ে রাষ্ট্র পরিচালনা করা হয়। মানুষ যে আইন তৈরি করে বা যে আইনের উপর ভিত্তি করে সংবিধান রচনা করে, সেটা বরং বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের আইনের ভিত্তি হলো ক্যাপিটালিজম বা পুঁজিবাদ। উত্তর কোরিয়া আইনের ভিত্তি হলো সমাজতন্ত্র বা সোশালিজম। চীনের আইনের ভিত্তি সোশালিজম ও ক্যাপিটালিজমের খিচুরি। রাশিয়া পুরোপুরিভাবে ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্র। পাকিস্তান, মিয়ানমারও সেরকমই। এখানে একেক রাষ্ট্র ক্যাপিটালিস্ট নীতি বাস্তবায়নে কিছুটা আলাদা হতে পারে। যেমন, কেউ হয়তো ব্যক্তিস্বাধীনতা বেশি দিয়েছে; কেউ কম দিয়েছে। একেক রাষ্ট্র তাদের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতার উপর ভিত্তি করে নিজেদের নীতিকে কাস্টমাইজ করেছে। কিন্তু ভিত্তিটা ক্যাপিটালিজমই রেখেছে। যারা সেই দেশের আইন তৈরি করবে, তারা সেই আইন যে চিন্তার উপর ভিত্তি করে তৈরি (যেমন ক্যাপিটালিজম বা সোশালিজম), সেটার বাইরে যেতে পারবে না। এগুলি সংবিধানে লেখা থাকে। এই সংবিধান যারা রচনা করেছে, তারাই নির্ধারিত করে দিয়েছে এর পরবর্তীতে রাষ্ট্র কেমনভাবে চলবে। এই লোকগুলির সংখ্যা সাধারণতঃ খুবই কম থাকে। তারা সংবিধান তৈরিতে কখনও জনগণকে জিজ্ঞেস করে না। সংবিধান তৈরি হয়ে গেলে একটা পদ্ধতিতে সেটাকে বৈধতা দেয়ার ব্যবস্থা করে নেয়। সাধারণতঃ জনগণ সংবিধানের ভাষা ও জটিলতা বোঝে না। কাজেই যদি ভোটের মাধ্যমে সেটাকে বৈধতা দেয়ার চেষ্টা করা হয়, সেক্ষেত্রে জনগণের বোকার মতো ভোট দিয়ে সেটাকে অনুমোদন দেয়া ছাড়া কোন গত্যন্তর নেই। এভাবে হাতে গোণা কিছু লোকই একটা রাষ্ট্রের ভাগ্য নির্ধারক হয়ে থাকে। এটাই গণতন্ত্রের প্রক্রিয়া।

      Delete
    2. এর থেকে পরিএাণের উপায় কি,
      পরিএাণের পথ ও পদ্ধতিটা কিভাবে বাসতবায়ন করা যায় একটু বিস্তারিত বলবেন কি??

      Delete
    3. সমস্যার মাঝেই এর সমাধান রয়েছে। প্রথমতঃ পাকিস্তানের উদাহরণ থেকে এটা পরিষ্কার যে, পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ সমস্যা না থাকলে বাইরের শক্তি দেশের ভেতর সাবভার্সন চালাতে পারতো না। দ্বিতীয়তঃ পাকিস্তান রাষ্ট্র তার জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণ করতে সক্ষম হয়নি। তারা অনেক বড় বড় কাজ করেছে; কিন্তু জনগণের মৌলিক চাহিদা পূরণে যথেষ্ট গুরুত্ব দেয়নি। এটা হলো পুঁজিবাদী আদর্শ অনুসরণের সমস্যা। পুঁজিবাদী আদর্শ এটাই শেখায় - উপর দিয়ে পানি ঢাললে নিচে কিছু তো পড়বেই। নিচে পড়ে ঠিকই কয়েক ফোঁটা। কিন্তু উপরের সবাই বেশিরভাগটা খেয়ে ফেলে। এটা পুঁজিবাদী সিস্টেমের বেসিক একটা সমস্যা। তৃতীয়তঃ পাকিস্তানের রাষ্ট্রক্ষমতা যাদের হাতে, তারা একটা জাতিকে অন্য জাতি থেকে আলাদা চোখে দেখেছে। এর ফলে পাকিস্তানের একেকটা জাতি নিজেদেরকে বঞ্চিত মনে করেছে। পাকিস্তান একটা ডেমোক্র্যাসি। অর্থাৎ পাকিস্তানের মানুষ (যতজনই হোক না কেন) নিজেরা আইন তৈরি করবে। নিজেরা আইন তৈরি করলে সকলেই নিজেদের আখের গোছায়। তাই যারা ক্ষমতার শিখরে ছিল, তারাই তাদের অবস্থান ধরে রাখতে নিজেদের সুবিধামতো আইন তৈরি করেছে। এর ফলে জঙ্গলের নিয়মে চলেছে পাকিস্তান। যাদের শক্তি বেশি, তারা নিজেদের অবস্থান ধরে রাখতে নিজেদের মতো করে আইন তৈরি করেছে এবং সেই আইনকে সমুন্নত রাখতে বাকিদের উপরে জুলুম করেছে। চতুর্থতঃ পাকিস্তান রাষ্ট্র হিসেবে স্বাধীন হতে পারেনি কখনোই। বিদেশি শক্তিরা (বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র) সর্বদাই পাকিস্তানের নীতির উপর কর্তৃত্ব করেছে। ফলে পাকিস্তানের নীতি ছিল সর্বদাই যুক্তরাষ্ট্রের নীতির সাথে খাপ খাওয়ানো জন্যে - নিজেদের জনগণের সুবিধার জন্যে নয়। বিদেশীরা পাকিস্তানকে নিয়ন্ত্রণ করতে পেরেছে; কারণ ক্ষমতায় আসীন থাকার জন্যে পাকিস্তানের ক্ষমতাবান ব্যক্তিরা বিদেশীদের উপর নির্ভর করেছে। যদি পাকিস্তান কোন কালে বিদেশীদের অবাধ্য হয়েছে, তখনই পাকিস্তানের উপর বিভিন্ন অবরোধ দেয়া হয়েছে; যাতে করে পাকিস্তানের নীতির উপর বাইরের নিয়ন্ত্রণ থাকে।

      এই সমস্যাগুলি সমাধান হলো - জাতিরাষ্ট্র বা নেশন স্টেটএর কনসেপ্ট থেকে বের হয়ে আসতে হবে। এই কনসেপ্ট এখন কাজ করছে না; কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি করা যুক্তরাষ্ট্রের বিশ্বব্যবস্থা এখন ভেঙ্গে পড়েছে। এই ব্যাপারটাই ঘটেছিল প্রথম বিশ্বযুদ্ধের আগে। তখন ব্রিটিশদের তৈরি করা বিশ্বব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছিল। এর ফলে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরুর আগে ব্রিটিশরা যুদ্ধ বন্ধে কিছুই করতে পারেনি। এরূপ ব্যাপারটাই এখন দেখা যাচ্ছে বিশ্বে। কাজেই এই ভেঙ্গে পড়া বিশ্বব্যবস্থার উপর নির্ভর করার কোন মানে হয় না। বিশ্বের জন্যে এখন নতুন ব্যবস্থার প্রয়োজন; নতুন আদর্শের প্রয়োজন। নাহলে প্রথম বা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের মতো আরও একটা ভয়াবহ যুদ্ধ দেখতে হবে।

      Delete
    4. আপনার যতগুলা ব্লগ আছে মোটামুটি পড়ার চেষ্টা করেছি বাট আপনি সবসময় জাতি রাষ্ট্রের ও গণতন্ত্রের ব্যর্থতা, পুজিবাদ আদর্শ পচনশীল তা তুলে ধরেছেন যা যথার্থ make sense করে, এটা বুঝতে পেরেছি। সুতরাং আপনার কাছে অলটারনেটিভ কেনো আদর্শ বা সমাধান আছে বাট আপনার কয়েকটা ব্যর্থতা তুলে ধরেছি

      ১) আপনি সঠিক সমাধানের কথা সরাসরিভাবে ব্লগে বলেন না বা আপনি হেজিটেট ফিল করেন এটা আপনার ১ম ব্যর্থতা

      ২) সমাধান যদি আপনি জেনে থাকেন সমাধানের বাস্তবিকরূপ বা রোডম্যাপটা তুলে ধরতে পারেন নি এটা আপনার ২য় ব্যর্থতা

      ৩) আপনার কথা মানুষ কেন শুনবে যদি সমাধান দিতে ব্যর্থ হন, পুজিবাদ বা গণতন্ত্রের যারা বুলি আওড়ায় তারা তা কিছু একটা হলেও পাবলিসিটি করে বাট আপনার সমাধানের পথটা যদি না দেখান তাহলে বুঝে নেন আপনার ব্লগ যারা পড়ে তারা অলওয়েস দ্বিধাদন্ধে ভুগবে একটা সময় এসে ক্রেইডিবিলিটি হারাবে, পরিশেষে সেটা সমাধান খুজার চেয়ে পুঁজিবাদকে আলিঙ্গন করবে, এতে আপনার ব্যর্থতাই প্রমাণ করে

      Delete
    5. আপনাকে অনেক ধন্যবাদ যে আপনি ধৈর্য্য সহকারে পড়ে কমেন্ট করেছেন। সমালোচনা অবশ্যই প্রয়োজন। এতে লেখকের ধার বাড়ে। প্রথমতঃ এই ব্লগের কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে; যার মাঝে প্রধানতম হলো বর্তমান পুঁজিবাদী বিশ্বব্যবস্থার সমস্যাগুলিকে তুলে ধরা। এর কারণ হলো, ১। মানুষ জানে না বা জেনেও তাদের মাথায় থাকে না যে, তারা আদৌ একটা ব্যবস্থার মাঝে রয়েছে। তাই যত সমস্যার কথাই বলা হোক না কেন, তারা কখনও ব্যবস্থার সাথে সমস্যাগুলিকে কানেক্ট করতে সক্ষম হয় না। কাজেই আদৌ পুঁজিবাদ নিয়ে কথা বলাটা জরুরি। ২। বর্তমান ব্যবস্থা নিজেকে রক্ষা করার জন্যে কিছু ডিফেন্সিভ মেকানিজম ব্যবহার করে থাকে। এর মাঝে রয়েছে মানুষকে প্রচন্ড ব্যস্ত রাখা, যাতে করে বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনায় সময় দেয়া অসম্ভব হয়ে যায়। এবং আলোচনা যদি হয়ও, ব্যবস্থা-বিষয়ক আলোচনা থেকে মানুষকে দূরে সরিয়ে রাখা। এসকল কারণে এই ব্লগের উদ্দেশ্যের শীর্ষে রয়েছে পুঁজিবাদ নিয়ে কথা বলা। আর উদ্দেশ্য বিচার করলে এই ব্লগের বেশিরভাগ লেখাই এই উদ্দেশ্যের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ পাবেন।

      দ্বিতীয়তঃ এই ব্লগের অনেক লেখার মাঝেই সমাধানের কথা উল্লেখ রয়েছে। অন্ততঃ স্যামুয়েল হান্টিংটনের লেখার উপর আলোচনা করতে গিয়ে সমধানের কথা আসেনি, সেটা বলাটা কঠিন। ব্লগের বিভিন্ন কমেন্টেও সমাধানের উল্লেখ রয়েছে। এমনকি সমাধানের পদ্ধতি কেমন হতে পারে, সেব্যাপারেও কথা বলা হয়েছে।

      তৃতীয়তঃ যদি একজন ব্যক্তি এই ব্লগ পড়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বুঝতে পারেন যে পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় ব্যাপক সমস্যা রয়েছে, তাহলে তার অন্ততঃ সিনসিয়ার ব্যক্তি হিসেবে বিকল্প ব্যবস্থা খোঁজা উচিৎ। এই ব্লগের উদ্দেশ্য নয় মুখস্ত বুলির মতো একটা নির্দিষ্ট সমাধান সকলকে খাওয়ানো। বরং ব্লগের বিভিন্ন স্থানে বিকল্প ব্যবস্থার মাপকাঠি দেয়া রয়েছে - কি কি বিষয় থাকা উচিৎ একটা আদর্শ ব্যবস্থায়। একজন মানুষকে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে বোঝানো সম্ভব না হলে সে আপনার দেয়া সমাধান কেন নেবে? একারণেই বুদ্ধিবৃত্তিক আলোচনা, বিশেষ করে আদর্শ ব্যবস্থার মাপকাঠি নিয়ে আলোচনা বেশি গুরুত্বপূর্ণ। যাতে করে আপনি নিজেই বুঝে নিতে পারেন যে, কোন ব্যবস্থা এই মাপকাঠিকে স্যাটিসফাই করে।

      তৃতীয়তঃ এই ব্লগের মালিকের নিরাপত্তার কথাটা আপনি একবারও হিসেবে নেয়ার প্রয়োজন মনে করেননি। বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থা নিজেকে রক্ষা করতে বিভিন্ন আইন তৈরি করে রেখেছে; যার মাঝে আপনাকে কথা বলা থেকে দূরে রাখার ব্যবস্থা করা হয়েছে। আপনি কিছু শব্দ বা বাক্য ব্যবহার করতে গেলে আইনী সমস্যার সন্মুখীন হবেন। এভাবে বিভিন্ন দেশে বহু মানুষের হদিস পাওয়া যায়নি। অনেকের পরিবার বহু কান্নাকাটি করেও হদিস পায়নি তাদের পরিবারের সদস্যের।

      Delete
    6. আচ্ছা একটা বিষয় নিয়ে বলতে চাচ্ছিলাম যে ভবিষ্যতে যদি আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তি বাসতবায়ন হয় তাহলে বাংলাদেশের ভূ-রাজনীতির প্রেক্ষাপটটা কি দাড়াবে, চীনের সাথে ইকোনমিক বন্ড কি অবশেষে ধ্বস নামবে, বাংলাদেশের অস্তিত্ব কি সংকটময় দেখা দিবে??

      Delete
  3. প্রথমেই বুঝে নিতে হবে যে 'আকসা' চুক্তি হলো মূলতঃ ঘাঁটি চুক্তি। অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্র ইচ্ছা করলেই তাদের যুদ্ধজাহাজ বা যুদ্ধবিমানকে বাংলাদেশের সীমানায় নিয়ে আসতে পারবে এবং বাংলাদেশ সেগুলিকে সার্ভিস দিতে বাধ্য থাকবে। আর 'জিসোমিয়া' চুক্তি হলো ইন্টেলিজেন্স শেয়ারিং চুক্তি। এর মাধ্যমে বাংলাদেশের কালেক্ট করা যেকোন ইন্টেলিজেন্স যুক্তরাষ্ট্রকে দিতে রাজি থাকবে বাংলাদেশ। এই চুক্তি এতকাল স্বাক্ষর করা সম্ভব হয়নি, কারণ বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অনেকেই এটা চায়নি। এখনও সেটা চাইবে বলে খুব একটা মনে হয় না। যদিও এই চুক্তিগুলি স্বাক্ষরের পক্ষে কিছু লোক তোড়জোড় চালাবে।

    আর বাংলাদেশের সাথে চীনের কৌশলগত সম্পর্ক অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। একটা ব্যাপার বুঝতে হবে তা হলো, বাংলাদেশ রাষ্ট্র ভারতকে একেবারেই বিশ্বাস করে না। একারণে বাংলাদেশের সকল প্রতিরক্ষা চিন্তা ভারতকে কেন্দ্র করেই আবর্তিত হয়। বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্র থেকে ক্রিটিক্যাল সামরিক সরঞ্জাম কেনা থেকে দূরে থাকতে চায় - এর কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্র একটা আদর্শিক শক্তি এবং তারা তাদের আদর্শিক উদ্দেশ্য ব্যাতীত কোন কিছুই করে না। তারা কোন দেশকে সামরিক সহায়তা দেয় "শুধুমাত্র" তাদের নিজেদের স্বার্থ রক্ষা করার জন্যে। একারণেই যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে ক্রিটিক্যাল সামরিক সরঞ্জাম কেনাটা খুবই বিপজ্জনক। যেকোন সময় সফটওয়্যার আপডেট, বা স্পেয়ার পার্টসের সাপ্লাই বন্ধ হয়ে যেতে পারে। আর গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্মের (যেমন বিমান বা জাহাজ)এর সাথে যেসকল অস্ত্র ব্যবহার করা সম্ভব, সেগুলি যুক্তরাষ্ট্র কখনও একসাথে কাউকে দেয় না। বিভিন্ন শর্ত পূরণ করার বিনিময়ে ধীরে ধীরে একটা একটা করে দেয়। কখনও কখনও শর্ত পূরণ করার পরেও সেগুলি দেয় না। তুরস্কের ক্ষেত্রে তো এডভান্স ডলার পেমেন্ট করার পরেও 'এফ-৩৫' বিমান ডেলিভারি দেয়নি। তুরস্কের 'এফ-১৬'এর আপগ্রেড কিট নিয়ে এখনও যুক্তরাষ্ট্র তুরস্ককে ঘুরাচ্ছে - প্রতিটা শর্ত পূরণ করিয়ে নিচ্ছে; কিন্তু ডেলিভারি শুধুই পেছাচ্ছে। উল্টো, তুরস্কের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রীসকে তুরস্কের চাইতে বেশি শক্তিশালী অস্ত্র সরবরাহ করে যাচ্ছে। পাকিস্তানের ক্ষেত্রেও 'এফ-১৬' নিয়ে কম ঝামেলা করেনি যুক্তরাষ্ট্র। এখন ভারতকে যুক্তরাষ্ট্র অস্ত্র সরবরাহ করছে। সুতরাং যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চুক্তি করে সামরিক সরঞ্জাম কেনা, আর নিজের পায়ে কুড়াল মারার মাঝে পার্থক্য খুব কমই রয়েছে।

    ReplyDelete