গত ৮ই মার্চ উত্তর কোরিয়ার সরকারি মিডিয়া 'কোরিয়া সেন্ট্রাল নিউজ এজেন্সি' খবর প্রকাশ করে যে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন তৈরি করছে; যা কিনা কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বহণে সক্ষম। উত্তর কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট কিম জন উন একটা শিপইয়ার্ডে সে সাবমেরিন তৈরি প্রত্যক্ষ করতে যান। দক্ষিণ কোরিয়ার 'হানইয়াং ইউনিভার্সিটি'র প্রফেসর এবং সেদেশের নৌবাহিনীর সাবেক সাবমেরিন কর্মকর্তা মুন কিউন-সিক 'সিএনএন'কে বলছেন যে, তার ধারণা এই সাবমেরিনটা ৬ হাজার থেকে ৭ হাজার টনের হতে পারে। কৌশলগত ক্ষেপণাস্ত্র বলতে পারমাণবিক ক্ষেপণাস্ত্র বোঝানো হয়েছে। ১০টা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হয়তো এরকম একটা সাবমেরিন বহণ করতে সক্ষম হতে পারে। ২০২১এর শুরুতে অস্টম ওয়ার্কার্স পার্টি কংগ্রেসে কিম জন উন বলেছিলেন যে, তার দেশ পারমাণবিক সাবমেরিন, ‘সলিড ফুয়েল' আন্তমহাদেশীয় ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, গোয়েন্দা স্যাটেলাইট এবং 'মাল্টি ওয়ারহেড' ক্ষেপণাস্ত্র পাবার জন্যে কাজ করছে। সেই সময় থেকে উত্তর কোরিয়া এই প্রযুক্তির বিভিন্ন রকম পরীক্ষা চালিয়েছে। এসকল প্রযুক্তি উত্তর কোরিয়া কিভাবে পেলো, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। মুন কিউন-সিক মনে করছেন যে, ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে সেনা ও রসদ সরবরাহের বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার কাছ থেকে এসকল প্রযুক্তি পেয়েছে। উত্তর কোরিয়া হয়তো আগামী এক থেকে দুই বছরের মাঝেই এই সাবমেরিন পানিতে ছাড়বে। ২০১৬ সাল থেকে উত্তর কোরিয়া পানির নিচ থেকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র উৎক্ষেপণের পরীক্ষা চালিয়ে আসছে। এই পরীক্ষাগুলি করা হচ্ছিলো ২ হাজার টনের একটা পরীক্ষামূলক সাবমেরিন থেকে।
মার্কিন নৌবাহিনীর 'অফিস অব নেভাল ইন্টেলিজেন্স' বা 'ওএনআই'এর প্রাক্তন প্রধান অবসরপ্রাপ্ত রিয়ার এডমিরাল মাইক স্টুডেম্যান নিরাপত্তা বিষয়ক ম্যাগাজিন 'সাইফার ব্রীফ'কে বলছেন যে, এটা জানাই ছিল যে, উত্তর কোরিয়া পাঁচ বছরের মাঝে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন পেতে চাইছে, যেটা কৌশলগত অস্ত্র বহণ করতে সক্ষম হবে। সাম্প্রতিক সময়ে উত্তর কোরিয়া পানির নিচ থেকে উৎক্ষেপিত ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের পরীক্ষা চালিয়েছে। এর মাঝে কিছু ছিল স্বল্প পাল্লার; যেগুলি সর্বোচ্চ ৫'শ থেকে ৬'শ কিঃমিঃএর বেশি যেতে পারবে না। তবে পরবর্তীতে তারা একটা ভার্সন তৈরি করেছে যেটার পাল্লা ২ থেকে আড়াই হাজার কিঃমিঃ হতে পারে। 'পুকগুকসং-৫' নামের সর্বশেষ প্রযুক্তির ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা ৩ হাজার কিঃমিঃ পর্যন্ত হতে পারে। উত্তর কোরিয়ার পশ্চিমে পীত সাগরের গভীরতা দেড়'শ ফুটের বেশি নয়; তবে পূর্বের জাপান সাগরের গভীরতা ৫ হাজার ফুটের বেশি। জাপান সাগর থেকে এরকম একটা সাবমেরিন ৩ হাজার কিঃমিঃ পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের গুয়াম সামরিক ঘাঁটিতে আঘাত হানতে পারবে।
মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' বা 'সিআইএ'র প্রাক্তন ইস্ট-এশিয়া অপারেশন্সএর ডিরেক্টর জোসেফ ডেট্রানি 'সাইফার ব্রীফ'কে বলছেন যে, ২০২১ সাল থেকেই জানা ছিল যে, উত্তর কোরিয়া পারমাণবিক সাবমেরিন পেতে চাইছে। এরপর ২০২৪ সালে কিম জং উন রাশিয়ার ভ্লাডিভস্টকে রুশ প্রশান্ত মহাসাগরীয় ফ্লিট ভিজিট করেন। তাই তাদের হাতে পারমাণবিক সাবমেরিন দেখে অবাক হবার কিছু নেই। উত্তর কোরিয়া নিয়ে যেকোন খবর এলেই সকলে হাই তোলেন এবং ভিন্ন দিকে মুখ ফিরিয়ে নেন। কিন্তু এখানে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তিত হবার কারণ রয়েছে শুধুমাত্র পারমাণবিক অস্ত্রের কারণেই নয়, রাশিয়ার সাথে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্কের কারণেও।
'ওএনআই'এর এডমিরাল স্টুডেম্যান বলছেন যে, উত্তর কোরিয়া নিশ্চিত করতে চাইছে যে, কোন শক্তিশালী রাষ্ট্র যাতে উত্তর কোরিয়ার উপর হামলা করে না বসতে পারে। এটা নিশ্চিত করতেই তারা হয়তো রাশিয়ার কাছে পারমাণবিক সাবমেরিনের প্রযুক্তি চেয়েছে। বিনিময়ে তারা হয়তো ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সৈন্য ও রসদ দিয়ে সহায়তা করেছে। ‘সিআইএ'এর জোসেফ ডেট্রানি বলছেন যে, উত্তর কোরিয়া 'হোয়াসং-১৯' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের মূল ভূখন্ডে আঘাত হানতে সক্ষম। এই ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র যা পারতো না, তা এখন পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের মাধ্যমে তারা অর্জন করতে যাচ্ছে। এছাড়াও উত্তর কোরিয়া স্যাটেলাইট উৎক্ষেপণ করেছে। এগুলির প্রযুক্তি তারা নিঃসন্দেহে রাশিয়া থেকে পেয়েছে। 'হোয়াসং-১৯' ক্ষেপণাস্ত্রের কিছু প্রযুক্তিও উত্তর কোরিয়া হয়তো রাশিয়া থেকেই পেয়েছে।
মার্কিন নৌবাহিনীর প্রাক্তন এডমিরাল জেমস স্টাভরাইডিস নিরাপত্তা ম্যাগাজিন 'সাইফার ব্রীফ'কে বলছেন যে, ইউক্রেনের সাথে যুদ্ধে ১২ হাজার সেনা এবং রসদ সরবরাহ করার পুরষ্কার হিসেবে রাশিয়া উত্তর কোরিয়াকে ইন্টেলিজেন্স এবং প্রযুক্তি সরবরাহ করেছে। এর মাঝে হয়তো পারমাণবিক শক্তি উৎপাদনের প্রযুক্তি সহ পারমাণবিক অস্ত্রের প্রযুক্তিও থাকতে পারে। এই সাবমেরিনগুলিতে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থাকবে কিনা, তা এখনও নিশ্চিত নয়; তবে এগুলি নিঃসন্দেহে ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করবে। আর পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন হলো সমুদ্রের সবচাইতে মারাত্মক শিকারী। এরকম একটা সাবমেরিন যদি কিম জং উনের হাতে পড়ে, তা সকলকে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত করবে। তাইওয়ানকে ঘিরে চীনের সাথে কোন সংঘাত হলে উত্তর কোরিয়ার এই সাবমেরিনকে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের চিন্তা করতে হবে। কারণ এই সাবমেরিন হয়তো তখন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক শক্তিকে বিভাজিত করে ফেলতে পারবে। এর চাইতেও বড় সমস্যা হলো, যদি এরকম একটা সাবমেরিন প্রশান্ত মহাসাগরে বের হয়ে পার্ল হারবার, বা লস এঞ্জেলেস বা ওয়াশিংটন স্টেটের উপকূলের কাছাকাছি অবস্থান নেয়, আর এতে যদি পারমাণবিক ব্যালিস্টিক ও ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র থাকে, তাহলে তা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে ভয়াবহ হুমকি তৈরি করবে। কারণ একটা পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন প্রায় অনির্দিষ্টকাল পর্যন্ত পানির নিচে অবস্থান করতে সক্ষম।
তবে 'ওএনআই'এর এডমিরাল মাইক স্টুডেম্যান বলছেন যে, এরকম একটা সাবমেরিনের প্রশান্ত মহাসাগরে বেরিয়ে আসা এতটা সহজ নয়। কারণ তাকে তখন জাপান এবং রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা দ্বীপগুলির মাঝ দিয়ে মহাসাগরে প্রবেশ করতে হবে। আপাততঃ মনে হচ্ছে যে, উত্তর কোরিয়ার জন্যে মহাসাগরে যাওয়াটা অনেক বড় পদক্ষেপ হবে। উত্তর কোরিয়ার জন্যে আপাততঃ সীমিত পরিসরে 'সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি' (নিজ ভূমিতে শত্রুর হামলায় নিজের ক্ষেপণাস্ত্রগুলি ধ্বংস হয়ে গেলেও শত্রুকে প্রত্যুত্তর দিতে পারা) ডেভেলপ করাটাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ হবে। পিয়ং ইয়ং যদি সাগরকে ব্যবহার করে ভিন্ন একটা দিক থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার সক্ষমতা পেয়ে যায়, তাহলে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র থেকে রক্ষা করাটা যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে কিছুটা হলেও কঠিন হবে। তিনি বলছেন যে, এরকম একটা প্রযুক্তি প্রথমবারের মতো হাতে পাবার পর উত্তর কোরিয়া হয়তো দুই-তিন বছর সেটা নিয়ে পরীক্ষা করবে। তারা সেটাকে কতদূর পর্যন্ত নিতে পারবে, তা এখনই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয়। যদি উত্তর কোরিয়া সার্বক্ষনিকভাবে 'সেকেন্ড স্ট্রাইক ক্যাপাবিলিটি' রাখতে চায়, তাহলে তাদের ৩ থেকে ৫টা সাবমেরিন প্রয়োজন হবে। কারণ একটাকে সমুদ্রে রাখতে হলে বাকিগুলিকে মেইনটেন্যান্সের কোন না কোন পর্যায়ে থাকতে হবে। এটা সম্ভব করতে হলে হয়তো ১০ বছর লেগে যেতে পারে।
এডমিরাল স্টাভরাইডিস মনে করেন যে, চীনের সাথে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক আস্ট্রেলিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের মতো। কাজেই উত্তর কোরিয়ার হাতে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যাওয়াতে চীনের চিন্তার কোন কারণ থাকার কথা নয়। তিনি বলছেন যে, অস্ট্রেলিয়াকে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন দেয়ার জন্যে যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেন যে 'অকাস' চুক্তি করেছে, সেই চুক্তিতে জাপানকে ঢোকানো যেতে পারে। যদিও জাপান পারমাণবিক শক্তি ব্যবহারের ব্যাপারে অনিচ্ছুক, তথাপি উত্তর কোরিয়ার হাতে পারমাণবিক সাবমেরিন জাপানকে তাদের চিন্তা পরিবর্তনে প্রভাবিত করতে পারে। তবে 'ওএনআই'এর এডমিরাল স্টুডেম্যান বলছেন যে, উত্তর কোরিয়ার হাতে পারমাণবিক সাবমেরিন চীনের জন্যে সুখকর বিষয় নয়। এতে পিয়ং ইয়ংএর উপর চীনের প্রভাব নিঃসন্দেহে কমে যাচ্ছে; এবং উত্তর কোরিয়া রাশিয়ার বলয়ে প্রবেশ করছে। উত্তর কোরিয়া এখন চীনের বদলে রাশিয়া থেকেও প্রায় সকল দ্রব্যের সরবরাহ পাচ্ছে। চীনারা হয়তো নিজেদেরকে প্রশ্ন করবে যে, কোন ঘাটতির কারণে তারা উত্তর কোরিয়াকে নিজেদের বলয়ে রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। তিনি মনে করছেন যে, উত্তর কোরিয়া যুক্তরাষ্ট্রের সাথে কোনরূপ শান্তিচুক্তির ব্যাপারে হাল ছেড়ে দিয়েছে। ওয়াশিংটন ও পিয়ং ইয়ংএর মাঝে সম্পর্কে এখন কোন বিশ্বাস নেই। উত্তর কোরিয়া চেয়েছিল আলোচনার মাধ্যমে তাদের উপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ সরিয়ে নিতে। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে এমন কিছু দিতে ব্যর্থ হয়েছে। তার ফলশ্রুতিতে এখন উত্তর কোরিয়া রাশিয়া থেকেই অনেক কিছু পাচ্ছে এবং তাদের কাছে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনার গুরুত্ব এখন একেবারেই নেই।
‘সিএইএ'র জোসেফ ডেট্রানি বলছেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের জন্যে সবচাইতে বড় ভুল ছিল বুঝতে না পারা যে, কিম জং উন পুতিনের দিকে ঘুরে যাচ্ছেন। একইসাথে ডেট্রানি বলছেন যে, তিনি নিজে ইউক্রেন যুদ্ধে ১২ হাজার উত্তর কোরিয় সেনা দেখে মনে করেছিলেন যে, সেটা ছিল প্রতিকী। কিন্তু সেটা তার ভুল বিশ্লেষণ ছিল; বরং সেটা ছিল পুরোপুরিভাবে কৌশলগত ব্যাপার। ডোনাল্ড ট্রাম্প কিম জন উনএর সাথে আলোচনা করেছিলেন ২০১৮ সালে। গত চার বছরে উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্র কোন কথা বলেনি। একারণেই কিম জন উন যুক্তরাষ্ট্রের উপর সকল আশা ছেড়ে দিয়ে তার দেশের সংবিধান পরিবর্তন করে যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়াকে প্রধান শত্রু হিসেবে লিপিবদ্ধ করেছেন। জোসেফ ডেট্রানি মনে করছেন যে, এখনও উত্তর কোরিয়ার সাথে একটা স্বাভাবিক সম্পর্ক অসম্ভব নয়। উত্তর কোরিয়ার উপরে অবরোধ কমানোর ব্যাপারে কথা বলা যাবে। যদিও এটা দাবি করাটা বোকামি হবে যে, উত্তর কোরিয়া তাদের পারমাণবিক অস্ত্র ত্যাগ করলে যুক্তরাষ্ট্র তাদের সাথে কথা বলতে রাজি হবে। তবে এখন উত্তর কোরিয়াকে আলোচনায় বসানো অপেক্ষাকৃত কঠিন হলেও পুতিনের সাথে ট্রাম্পের সম্পর্ক এখানে বড় ভূমিকা রাখতে পারে। পুতিন হয়তো কিম জং উনকে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে আলোচনায় বসতে প্রভাবিত করতে পারেন। এতদিন চীন এব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্রকে সহায়তা করেনি। কারণ চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক সর্বদাই অবনতির দিকে গিয়েছে। তিনি বলছেন যে, তার বিশ্বাস কিম জন উনের কাছে ট্রাম্পের গ্রহণযোগ্যতা অপেক্ষাকৃত বেশি। তবে আলোচনার দিকে যেতে হলে যুক্তরাষ্ট্রকে কিছুটা হলেও ছাড় দিতে হবে। চীনের সাথে উত্তর কোরিয়ার ৯০ শতাংশ বাণিজ্য থাকলেও এখন উত্তর কোরিয়া তার অনেক কিছুই রাশিয়া থেকে পাচ্ছে; এমনকি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ও স্যাটেলাইট তৈরির সহায়তাও আসছে সেখান থেকে। এগুলি চীনের জন্যে যথেষ্টই বিচলিত হবার কারণ। হয়তো চীনারা এখন ভাববে যে, গত চার বছরে তারা উত্তর কোরিয়াকে বাইডেন প্রশাসনের সাথে আলোচনায় বসার জন্যে উপদেশ দিলে সেটা ভালো হতো। হয়তো যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সাথে উত্তর কোরিয়ার সম্পর্ক কেমন হবে, সেসম্পর্কেও চীন এখন নিশ্চিত হতে পারবে না। চীনারা হয়তো এখন চিন্তা করবে যে, ভূকৌশলগত দিক থেকে উত্তর কোরিয়ার উপর চীনের প্রভাব কমে যাবার ব্যাপারটাকে তারা কিভাবে পুনরুদ্ধার করবে।
উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন তৈরির খবর মার্কিন নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের বিচলিত করেছে। একদিকে ইউক্রেন যুদ্ধে রাশিয়াকে সামরিক সহায়তা দেয়ার বিনিময়ে উত্তর কোরিয়া যে রাশিয়ার কাছ থেকে কৌশলগত প্রযুক্তি পেয়েছে, সেব্যাপারে যেমন সকলেই একমত, তেমনি গত এক দশকের মাঝে উত্তর কোরিয়ার উপর যুক্তরাষ্ট্র যে তার সকল প্রভাব হারিয়েছে, এই ঘটনা তার প্রমাণ। আর এটাও এখন নিশ্চিত যে, ইউক্রেন যুদ্ধের ফলাফল যে প্রশান্ত মহাসাগরের ভূরাজনীতিকেও প্রভাবিত করতে পারে, সেটাও যুক্তরাষ্ট্র আগে বুঝতে পারেনি। এই সময়ের মাঝে যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বব্যাপী তার প্রভাব কতটা হারিয়েছে তা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। উত্তর কোরিয়াকে বিরত করার একমাত্র কার্ড এখন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। এই ঘটনায় চীনের বিচলিত হওয়াটাও স্বাভাবিক। কারণে এতে উত্তর কোরিয়ার উপর চীনের প্রভাব কমে গিয়ে রাশিয়া সেই জায়গা নিয়েছে। অপরদিকে ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতির আলোচনার মাঝে রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক স্বাভাবিকীকরণের সম্ভাবনা এবং উত্তর কোরিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রেসিডেন্টের সম্ভাব্য সম্পর্কের ব্যাপারে অনিশ্চয়তা চীনাদেরকে ধোঁয়াশার মাঝে রাখবে। একটা ব্যাপার নিশ্চিত, তা হলো, উত্তর কোরিয়ার পারমাণবিক সাবমেরিন প্রকল্পের সাথেসাথে প্রশান্ত মহাসাগরে দু'টা দেশের নৌবাহিনীতে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যুক্ত হতে যাচ্ছে। অপরটা হলো অস্ট্রেলিয়া। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন এবং অস্ট্রেলিয়ার মাঝে 'অকাস' চুক্তির মাধ্যমে প্রশান্ত মহাসাগরে পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিনের যুগ শুরু হয়েছিল। তখন যারা 'অকাস' চুক্তির বিরুদ্ধে কথা বলেছিল, তারা সকলেই এখন পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন যোগাড় করতে ছুটবে। প্রশান্ত মহাসাগরের পারমাণবিকীকরণ ধ্বংসপ্রপ্ত বিশ্বব্যবস্থায় আসন্ন সংঘাতের জানান দিচ্ছে মাত্র!
No comments:
Post a Comment