Monday, 24 March 2025

মোজাম্বিকে রাজনৈতিক কলহ পশ্চিমা দেশগুলির ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতারই ফলাফল

২৪শে মার্চ ২০২৫

 আফ্রিকার দক্ষিণে শক্তিশালী দেশগুলির মাঝে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেন-ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিযোগিতা আরও বেগবান হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইস্রাইলি হামলার প্রতিবাদ হিসেবে লোহিত সাগর ও বাব-এল-মান্ডেব প্রণালিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জাহাজের উপর ইয়েমেনের হুথি মিলিশিয়াদের হামলা শুরু হবার পর থেকে। এই হামলার কারণে আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলি তাদের বেশিরভাগ জাহাজকে লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল ব্যবহার না করে আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূল ঘুরে যাতায়ত করার নির্দেশনা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে আফ্রিকার দক্ষিণের এই সমুদ্রপথের উপর দেশগুলি, বিশেষ করে মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার এবং সাউথ আফ্রিকায় শক্তিশালী দেশগুলির প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।


মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের মাত্র একমাস আগে ২০২৪এর ৯ই অক্টোবর আফ্রিকার দক্ষিণ-পূর্বের রাষ্ট্র মোজাম্বিকে সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ১৯৭৫ সাল থেকে ক্ষমতাসীন বামপন্থী 'ফ্রেলিমো' দলের ড্যানিয়েল চাপো দ্বিতীয়বারের মতো প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হন। চাপো পেয়েছেন ৬৫ শতাংশ ভোট এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী 'পোডেমোস' দলের ভেনানসিও মন্ডলানে পান ২৪ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে 'ফ্রেলিমো' দল ৭১ শতাংশ ভোট পায় এবং বিরোধী 'পোডেমোস' দল পায় মাত্র ১৩ শতাংশ ভোট। নির্বাচনে ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ উঠেছে। 'পোডেমোস' দলের দাবি, তাদের দল ৫৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। 'পোডেমোস' নির্বাচনের ফলাফলকে বাতিলের দাবি জানিয়ে দেশব্যাপী আন্দোলনের ডাক দেয়। সহিংসতায় বহু মানুষের প্রাণ গিয়েছে বলে বিভিন্ন মিডিয়া জানাচ্ছে। মানবাধিকার সংস্থা 'এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল' বলছে যে, নির্বাচনের পর মোজাম্বিকে ৩'শর বেশি মানুষ বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে। তবে ২৩শে মার্চ মোজাম্বিকের প্রেসিডেন্টের ওয়েবসাইটে বলা হয় যে, প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল চাপো বিরোধী নেতা ভেনানসিও মন্ডলানের সাথে প্রথমবারের মতো আলোচনায় বসেছেন।

ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা গভীর হচ্ছে

বামপন্থী 'ফ্রেলিমো' দল পাঁচ দশক ধরে ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখলেও পশ্চিমাদের সাথে তাদের সম্পর্ক খারাপ নয়। দেশের উত্তরে কাবো দেলগাদো অঞ্চলে মুসলিম বিদ্রোহীদের দমনে পশ্চিমারা, বিশেষ করে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন মোজাম্বিককে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে। মোজাম্বিকের প্রাক্তন ঔপনিবেশিক শক্তি পর্তুগাল, এমনকি যুক্তরাষ্ট্রও মোজাম্বিকের নিরাপত্তায় জড়িত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু দেশ রুয়ান্ডা মোজাম্বিকে সৈন্য পাঠিয়েছে। কাবো দেলগাদো অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে হাইড্রোকার্বনের ব্যাপক খনি অবিষ্কৃত হওয়ায় এই অঞ্চলের গুরুত্ব বেড়ে গেছে। পশ্চিমা তেল কোম্পানিগুলি এই অঞ্চলে বিশাল বিনিয়োগ করেছে। পশ্চিমা বিনিয়োগের উপর মুসলিম বিদ্রোহীদের হামলার পরপরই পশ্চিমা দেশগুলি মোজাম্বিকের গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের দৈন্যতা ভুলে গিয়ে সেখানকার নিরাপত্তা নিশ্চিতে সোচ্চার হয়েছে। তবে এর সাথে শক্তিশালী দেশগুলির মাঝে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতাও শুরু হয়। বিশেষ করে ব্রিটেন-ইউরোপিয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা উল্লেখযোগ্য। এই প্রতিযোগিতা আরও বেগবান হয়েছে সাম্প্রতিক সময়ে গাজায় ইস্রাইলি হামলার প্রতিবাদ হিসেবে লোহিত সাগর ও বাব-এল-মান্ডেব প্রণালিতে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য জাহাজের উপর ইয়েমেনের হুথি মিলিশিয়াদের হামলা শুরু হবার পর থেকে। এই হামলার কারণে আন্তর্জাতিক শিপিং কোম্পানিগুলি তাদের বেশিরভাগ জাহাজকে লোহিত সাগর ও সুয়েজ খাল ব্যবহার না করে আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূল ঘুরে যাতায়ত করার নির্দেশনা দিতে বাধ্য হচ্ছে। এর ফলশ্রুতিতে আফ্রিকার দক্ষিণের এই সমুদ্রপথের উপর দেশগুলি, বিশেষ করে মোজাম্বিক, মাদাগাস্কার এবং সাউথ আফ্রিকায় শক্তিশালী দেশগুলির প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে।

মোজাম্বিকের উত্তরের মুসলিম-অধ্যুষিত কাবো দেলগাদো অঞ্চলে এলএনজি প্রকল্পে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে ব্রিটেন ও তার বন্ধু দেশগুলির সাথে যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধু দেশগুলির মতের অমিল দেখা যাচ্ছে। অন্ততঃ যতদিন হোয়াইট হাউজে বাইডেন প্রশাসন ছিল, ততদিন মোজাম্বিকের ব্যাপারে ব্রিটেনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিমত ছিল না। তবে ট্রাম্প প্রশাসন হোয়াইট হাউজে আসার সাথেসাথেই প্রকল্পের ব্যাপারে দুই শক্তিধর দেশের দ্বিমত শুরু হয়ে গেছে। 'ফিনানশিয়াল টাইমস'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ফরাসি তেলের কোম্পানি 'টোটাল এনার্জি'কে প্রতিশ্রুত মার্কিন 'এক্সিম ব্যাংক'এর ৪ দশমিক ৭ বিলিয়ন ডলারের স্থগিত ঋণ হোয়াইট হাউজে পরিবর্তনের সাথেসাথে ছাড় দেয়া হয়েছে। ২০২০ সালে প্রথম ট্রাম্প প্রশাসন এই ঋণের অনুমতি দিয়েছিল। ২০২১ সালে কাবো দেলগাদোর এলএনজি প্রকল্পে মুসলিম বিদ্রোহীদের হামলা শুরুর পর বাইডেন প্রশাসন এই ঋণ স্থগিত করেছিল। গত ১৩ই মার্চ মোজাম্বিকের জ্বালানি মন্ত্রী এব্যাপারে বলেন যে, এই ঋণ ছাড়ের মাধ্যমে মোজাম্বিকের এই গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বশীল অবস্থান নিশ্চিত হলো। তিনি একইসাথে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এবং যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে 'টোটাল এনার্জি' বলছিলো যে, কাবো দেলগাদোতে নিরাপত্তা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। এই প্রকল্পের কমপক্ষে ৩০ শতাংশ কাজ মার্কিন সাবকন্ট্রাক্টররা করবে; যার মাধ্যমে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব নিশ্চিত হবে। ক্ষমতাসীন 'ফ্রেলিমো' দলের পুনর্নিবাচিত প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল চাপোর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির প্রধানতম ছিল কাবো দেলগাদোর এলএনজি প্রকল্পে বিদেশী বিনিয়োগের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা।

২০২১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ স্থগিত করার সাথেসাথে ব্রিটেন এবং নেদারল্যান্ডসের সরকারও সেখানে বিনিয়োগ স্থগিত করেছিলো। এই প্রকল্পে ব্রিটেনের ১ দশমিক ১৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেয়ার কথা ছিল। 'ফিনানশিয়াল টাইমস' বলছে যে, ব্রিটিশ সরকার এই প্রকল্প থেকে তাদের বিনিয়োগ সরিয়ে নেবার চিন্তা করছে। ব্রিটেন সরে গেলে নেদারল্যান্ডসও সরে যাবে। ব্রিটিশ সরকারের সূত্রগুলি বলছে যে, তারা মোজাম্বিকের নিরাপত্তা পরিস্থিতির ব্যাপারে যথেষ্ট আশাবাদী নয়। অপরদিকে এই প্রকল্পের এশিয়ান দাতারা যুক্তরাষ্ট্রের পদাঙ্ক অনুসরণ করে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার ঋণের ব্যাপারে ছাড় দিয়েছে। প্রায় ২০ বিলিয়ন ডলারের এই প্রকল্পে ফরাসি কোম্পানি 'টোটাল এনার্জি'র (সাড়ে ২৬ শতাংশ) সাথে পার্টনার হিসেবে কাজ করছে মোজাম্বিক সরকার (১৫ শতাংশ), জাপান (২০ শতাংশ), ভারত (৩০ শতাংশ) এবং থাইল্যান্ড (সাড়ে ৮ শতাংশ)।

৯ই জানুয়ারি ২০২৫। ভেনানসিও মন্ডলানের বীরের বেশ মোজাম্বিকের মাটিতে অবতরণ। ২০১৩ সালে তিনি পর্তুগীজ ভাষাভাষী দেশগুলির মাঝে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকল্প 'ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লীডারশিপ প্রোগ্রাম' বা 'আইভিএলপি'তে অংশ নেন। মার্কিন দূতাবাস কেন ভেনানসিও মন্ডলানেকে এই প্রকল্পে যুক্ত করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার পরবর্তী কর্মকান্ডে। রাজনীতিবিদ হিসেবে মোজাম্বিকের জনগণ মন্ডলানেকে ডানপন্থী না ভাবলেও দেশের বাইরে অনেকেই তাকে সেরকমই মনে করে। 


ভেনানসিও মন্ডলানে যুক্তরাষ্ট্রের পছন্দের ব্যক্তি

নির্বাচনে হেরে যাবার পরপরই ভেনানসিও মন্ডলানে দেশ ছেড়ে চলে যান এবং দেশের বাইরে থেকে সোশাল মিডিয়ার মাধ্যমে মোজাম্বিকের জনগণকে সরকারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করতে বলেন। গত কয়েক মাসের সহিংসতায় মোজাম্বিকের অর্থনীতি একেবারেই ধ্বসে গেছে। এরপর ৯ই জানুয়ারি তিনি বাইবেল হাতে দেশের মাটিতে পা রাখেন, এবং বলেন যে তিনি সরকারের সাথে আলোচনার জন্যে প্রস্তুত। ভেনানসিও মন্ডলানে বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে চাকুরি করতেন। ২০১৩ সালে তিনি পর্তুগীজ ভাষাভাষী দেশগুলির মাঝে একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রকল্প 'ইন্টারন্যাশনাল ভিজিটর লীডারশিপ প্রোগ্রাম' বা 'আইভিএলপি'তে অংশ নেন। এই প্রকল্পের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ থেকে নেতৃত্ব নেবার মতো প্রায় ৫ হাজার ব্যক্তিকে একত্রে নিয়ে এসে তিন সপ্তাহের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক জীবন সম্পর্কে একটা ধারণা দেয়া হয়; যাতে করে তারা তাদের নিজস্ব কর্মক্ষেত্রে সেটার প্রতিফলন ঘটাতে পারে। এই প্রকল্প যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতির একটা অংশ। মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তররের 'আইভিএলপি' বিষয়ক তথ্যবহুল বর্ণনায় বলা হয় যে, বিভিন্ন দেশের মার্কিন দূতাবাস এই ব্যক্তিদেরকে নির্বাচন করে থাকে। মার্কিন দূতাবাস কেন ভেনানসিও মন্ডলানেকে এই প্রকল্পে যুক্ত করেছিল, তার প্রমাণ পাওয়া যায় তার পরবর্তী কর্মকান্ডে। সেই বছরই মন্ডলানে মোজাম্বিকের রাজধানী মাপুটো শহরের মেয়র হিসেবে নির্বাচনে লড়েন। হেরে গেলেও পরের বছর তিনি শহরের মিউনিসিপ্যাল এসেম্বলির সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৩ সালে তিনি আবারও মাপুটোর মেয়র হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেন এবং আবারও হেরে যান। তিনি বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলে যোগ দিয়েছেন। ২০২০ সালে তিনি 'রেনামো' দলের হয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০২৪ সালে তার পদ ছেড়ে দিয়ে তিনি প্রথমে 'সিএডি' এবং পরবর্তীতে 'পোডেমোস' দলের হয়ে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশ নেন। 'নিউ ইয়র্ক টাইমস'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, রাজনীতিবিদ হিসেবে মোজাম্বিকের জনগণ মন্ডলানেকে ডানপন্থী না ভাবলেও দেশের বাইরে অনেকেই তাকে সেরকমই মনে করে। তিনি ক্ষমতাসীন বামপন্থী 'ফ্রেলিমো' দলের ঘোর বিরোধী এবং কমিউনিস্ট-বিরোধী গ্রুপেরও সদস্য। ব্রাজিলের ক্ষমত্যাচ্যুত এবং মামলায় জর্জরিত প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জেয়ার বউসুনারুকে তিনি বিভিন্ন সময়ে সমর্থন করে বক্তব্য দিয়েছেন। নির্বাচনী প্রচারনার মাঝেই মন্ডলানে পর্তুগালের উগ্র ডানপন্থী দল 'চেগা'র প্রধান আন্দ্রে ভেনচুরার সাথে সাক্ষাৎ করেন। তিনি ঐতিহ্যগতভাবে পারিবারিক আদর্শগুলিকে ধরে রাখার পক্ষপাতি এবং ক্ষমতায় গিয়ে দুর্নীতি, অপরাধ এবং আইন ব্যবস্থায় ব্যাপক পরিবর্তন আনার কথা বলেছেন।

‘এসোসিয়েটেড প্রেস'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, সমস্যা নিরসনে প্রেসিডেন্ট ড্যানিয়েল চাপোও বিভিন্ন সময়ে আলোচনায় বসার ব্যাপারে তারা ইচ্ছার কথা ব্যক্ত করেছেন। জনগণকে ঠান্ডা করার জন্যে গত ২৪শে জানুয়ারি চাপো মোজাম্বিকের পুলিশ প্রধান বারনারডিনো রাফায়েলকে বরখাস্ত করেন। অন্ততঃ নিজের জীবনের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হবে না বুঝেই ভেনানসিও মন্ডলানে যে দেশে ফিরে এসেছিলেন, এটা নিশ্চিত। প্রেসিডেন্ট চাপো আর যা-ই হোক, ট্রাম্প প্রশাসনকে ক্ষেপাতে চাইছেন না।
 
ডিসেম্বর ২০২৪। সাউথ আফ্রিকার সাথে মোজাম্বিকের লেবোম্বো সীমান্ত রাস্তা। সাউথ আফ্রিকার উত্তর-পুর্বাঞ্চলের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ট্রাকে করে কয়লা এবং ক্রোমিয়াম যায় মোজাম্বিকে। স্থলবন্দর বন্ধ হবার কারণে সাউথ আফ্রিকা প্রতিদিন সাড়ে ৫ লক্ষ ডলার বা মাসে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে। 'ডিসাইড' নামের মোজাম্বিকের একটা বেসামরিক সংগঠন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্স'এ একটা খোলা চিঠি প্রকাশ করে যেখানে মোজাম্বিকের রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে সরকার এবং বিরোধী দলকে আলোচনায় বসাতে সাউথ আফ্রিকার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়।  


মোজাম্বিকে প্রতিবেশী দেশ সাউথ আফ্রিকার প্রভাব

‘ব্লুমবার্গ'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মোজাম্বিকে রাজনৈতিক অসন্তোষের কারণে সাউথ আফ্রিকার অর্থনীতিতে চাপ পড়ছে। সাউথ আফ্রিকার উত্তর-পুর্বাঞ্চলের খনিজ সমৃদ্ধ অঞ্চল থেকে দৈনিক প্রায় ১ হাজার ট্রাকে করে কয়লা এবং ক্রোমিয়াম যায় মোজাম্বিকে। সেই খনিজ পণ্য লেবোম্বো স্থলবন্দর দিয়ে মোজাম্বিকে ঢুকে মাপুটো সমুদ্রবন্দর হয়ে বিদেশে রপ্তানি হয়। মোজাম্বিকে রাজনৈতিক কলহ শুরুর পর থেকে এই রুটে খনিজ রপ্তানি কমে যেতে থাকে। এরপর ২০২৪এর ৯ই ডিসেম্বর সাউথ আফ্রিকা এই স্থলবন্দর দিয়ে খনিজ রপ্তানি পুরোপুরিভাবে বন্ধ করে দেয়। সাউথ আফ্রিকার 'রোড ফ্রেইট এসোসিয়েশন'এর হিসেবে স্থলবন্দর বন্ধ হবার কারণে সাউথ আফ্রিকা প্রতিদিন সাড়ে ৫ লক্ষ ডলার বা মাসে প্রায় ১৭ মিলিয়ন ডলার ক্ষতির সন্মুখীন হচ্ছে। একসময় সাউথ আফ্রিকার খনিজ শিল্প দেশের অর্থনীতির মূল চালিকাশক্তি থাকলেও বর্তমানে ৪ লক্ষ ৭৭ হাজার মানুষ এই শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। এবং সরকার এখনও এই শিল্প থেকে করের মাধ্যেমে ব্যাপক আয় করে থাকে। সাম্প্রতিক সময়ে সাউথ আফ্রিকার খনিজ শিল্প দুর্দিনের মাঝ দিয়ে যাচ্ছে। খনিজের মূল্যে স্থবিরতা, খরচ বৃদ্ধি পাওয়া এবং লজিস্টিক্যাল সমস্যা থাকার কারণে এই শিল্পে লাভ কমে গেছে। বিভিন্ন কোম্পানি তাদের কর্মীর সংখ্যা কমিয়ে দিয়েছে এবং বাকিরাও খরচ কমানোর চেষ্টায় রয়েছে।

গত ৭ই জানুয়ারি 'ডিসাইড' নামের মোজাম্বিকের একটা বেসামরিক সংগঠন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম 'এক্স'এ একটা খোলা চিঠি প্রকাশ করে সাউথ আফ্রিকার সরকারকে উদ্দেশ্য করে। সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্ট সাইরিল রামাফোসা এবং দেশটার পার্লামেন্টকে উদ্দেশ্য করে লেখা এই চিঠিতে মোজাম্বিকের রাজনৈতিক সমস্যা নিরসনে সরকার এবং বিরোধী দলকে আলোচনায় বসাতে সাউথ আফ্রিকার হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেন সংস্থার প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরিচয় দেয়া এডসন রবার্টো ডে অলিভেইরা কর্তেজ। সংস্থার ব্যক্তিরা আন্তর্জাতিক মিডিয়াতে বেশ সরব। এর ডিরেক্টর উইকলার দিয়াজ মাত্র কয়েকদিন আগেই 'ডয়েচে ভেলে'তে স্বাক্ষাত দিয়ে মোজাম্বিকের পরিস্থিতি বর্ণনা করেন। তারা সাউথ আফ্রিকার প্রেসিডেন্টকে আফ্রিকান কোর্ট অব জাস্টিস, ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল কোর্ট এবং আফ্রিকান ইউনিয়নের পীস এন্ড সিকিউরিটি কাউন্সিলের সহায়তা নিতে অনুরোধ জানান। এখানে উল্লেখযোগ্য ব্যাপার হলো, তারা মোজাম্বিকের সমস্যা নিরসনে 'সাউদার্ন আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট কমিউনিটি' বা 'এসএডিসি'র সহায়তা চাননি। যদিও ২০২১ সালে মোজাম্বিকের উত্তরাঞ্চলের মুসলিম বিদ্রোহীদের দমন করতে 'এসএডিসি'র অধীনেই আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে সৈন্য পাঠানো হয়েছিল। এরপর ২০২৪এর নির্বাচন পর্যবেক্ষক হিসেবে 'এসএডিসি'র প্রতিনিধিরা নির্বাচনকে বৈধতা দেয়। 'এসএডিসি'র ওয়েবসাইটে নির্বাচন সম্পর্কিত প্রতিবেদনে বলা হয় যে, নির্বাচন যথেষ্ট কর্মদক্ষতার সাথে সম্পাদন করা হয়েছে। এবং এর পরিবেশ ছিল নিয়মমাফিক এবং স্বাধীন। 'এসএডিসি'র এই অবস্থান মোজাম্বিকের বিরোধী দলীয় বিক্ষোভকারীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি মোটেই। প্রকৃতপক্ষে মোজাম্বিকের নির্বাচনের আগেই আফ্রিকার দক্ষিণের দেশগুলিতে সকল নির্বাচন এবং সরকারি দমনপীড়নের ব্যাপারেই 'এসএডিসি' নীরব ভূমিকা নিয়েছিল। মোজাম্বিকের ২০১৯ সালের নির্বাচনের অনিয়ম নিয়েও 'এসএডিসি' কোন কথা বলেনি। 'এসএডিসি'র অনেক দেশেই যখন একনায়কের শাসন চলছে, তখন সংস্থার এহেন চরিত্র অবশ্য অবাক করা কিছু নয়।
  

২৩শে মার্চ ২০২৫। ওয়াশিংটনে সাউথ আফ্রিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত এব্রাহিম রাসূল দেশে ফিরে বীরোচিত সন্মান পান। তিনি একটা অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' প্রকল্পকে শ্বেতাঙ্গ 'সুপ্রিম্যাসিস্ট প্রবৃত্তি' হিসেবে আখ্যা দেয়ার কারণে মার্কিন সরকার তাকে দেশ থেকে বের করে দেয়। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় রকমের পরিবর্তনের পর থেকে সেটার প্রতিফলন ঘটছে দুনিয়ার সকল অঞ্চলে। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ব্রিটিশ ঘরানার প্রভাবের সাথে মার্কিন প্রভাবের দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামনে আসেনি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই দ্বন্দ্বগুলিকে লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে খুব একটা সচেষ্ট নয়। ভেঙ্গে পড়ার কারণে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার কদর্যটা এখন মোটামুটিভাবে সকলের কাছেই দৃশ্যমান হচ্ছে।


যুক্তরাষ্ট্র-সাউথ আফ্রিকার সম্পর্কে টানাপোড়েন

মোজাম্বিকের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধানে কেউ কেউ যখন সাউথ আফ্রিকার হস্তক্ষেপ কামনা করছে, তখন সাউথ আফ্রিকার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কের পরিস্থিতি চিন্তা করা প্রয়োজন। কারণ হোয়াইট হাউজে নতুন প্রশাসন আসার পর থেকে মোজাম্বিকের প্রতিবেশী ব্রিটিশদের বন্ধু দেশ সাউথ আফ্রিকার সাথেও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক বেশ অনেকদিন থেকেই ভালো যাচ্ছে না। অপরদিকে মোজাম্বিকের বিরোধী নেতা মন্ডলানে ট্রাম্প প্রশাসনের পছন্দের লোক। মার্কিন সরকার ওয়াশিংটনে সাউথ আফ্রিকার রাষ্ট্রদূত এব্রাহিম রাসূলকে বের করে দেয়ার পর ২৩শে মার্চ তিনি সাউথ আফ্রিকাতে হিরোর বেশে অবতরণ করেন। বিমানবন্দরে শতশত মানুষের মাঝে তিনি ঘোষণা দেন যে, যদিও কোন একটা রাষ্ট্র অপর রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে বের করে দেয়াটা অপমানজনক, তথাপি তিনি যুক্তরাষ্ট্র থেকে তাকে বের করে দেয়ার এই আদেশকে গর্বভরে বলে বেড়াবেন। এক সপ্তাহ আগে মার্কিন পররাষ্ট্রসচিব মার্কো রুবিও বলেন যে, এব্রাহিম রাসূলকে বের করে দেয়ার কারণ হলো, তিনি একটা সাউথ আফ্রিকান থিংকট্যাঙ্কের অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের 'মেইক আমেরিকা গ্রেট এগেইন' প্রকল্পকে শ্বেতাঙ্গ 'সুপ্রিম্যাসিস্ট প্রবৃত্তি' হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। রাসূল একইসাথে ট্রাম্পের সমকামিতা-বিরোধী প্রকল্প এবং অভিবাসী নীতির সমালোচনা করেন। 'ডয়েচে ভেলে' মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, ফেব্রুয়ারি মাসেই ট্রাম্প প্রশাসন সাউথ আফ্রিকাতে মার্কিন সহায়তা বন্ধ করে দেয়। এর পিছনে অভিযোগ ছিল যে, সাউথ আফ্রিকা সরকার ফিলিস্তিনের হামাস এবং ইরানকে সমর্থন দিচ্ছে। রাসূল বলেছেন যে, সাউথ আফ্রিকা সরকার যুক্তরাষ্ট্রের চাপে মাথা নত করে আন্তর্জাতিক আদালত থেকে ইস্রাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা সরিয়ে নেবে না। এছাড়াও ট্রাম্প সমালোচনা করেন যে, সাউথ আফ্রিকা সরকার সেই দেশের শ্বেতাঙ্গদের জমি দখল করে নিচ্ছে।

মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক 'সেন্টার ফর স্ট্র্যাটেজিক এন্ড ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজ' বা 'সিএসআইএস'এর সিনিয়র ফেলো মুয়েম্বা ফেজো এক লেখায় বলছেন যে, সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদী সরকারের পতনের পর নেলসন ম্যান্ডেলার নেতৃত্বে ক্ষমতায় আসা দল 'এএনসি' তাদের দেশের বর্ণবাদ-বিরোধী আন্দলনের সময় বিভিন্ন দেশের ভূমিকাকে ভিন্নরূপে দেখে। তারা মনে করে যে, সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের চাইতে বেশি ভূমিকা রেখেছিল সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং কমিউনিস্ট ব্লকের রাষ্ট্রগুলি। তারা ক্ষমতায় আসার পর থেকেই জোট-নিরপেক্ষ ভূমিকায় থেকেছে এবং ওয়াশিংটনের হুমকি অগ্রাহ্য করেই রাশিয়া এবং কিউবার সাথে সম্পর্ক করেছে; যারা সাউথ আফ্রিকার বর্ণবাদী সময়ে 'এএনসি'রকে সমর্থন দিয়েছিল। তথাপি সাউথ আফ্রিকা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ভালো সম্পর্কে রেখে চলেছে। তবে বাইডেন প্রশাসনের সময় থেকেই সাউথ আফ্রিকার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্কে ভাটা পড়তে থাকে। ২০২২ সালে ইউক্রেনে রুশ হামলার পর সাউথ আফ্রিকা রাশিয়ার বিরুদ্ধে নিন্দা প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে। সেই বছরের ডিসেম্বরে রাশিয়ার একটা জাহাজ সাউথ আফ্রিকার সায়মন্সটাউন বন্দর থেকে অস্ত্রের ডেলিভারি নেয়; যা যুক্তরাষ্ট্রের চোখে রাশিয়ার বিরুদ্ধে অস্ত্র নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের শামিল। সাউথ আফ্রিকা রাশিয়া ও চীনের সাথে যৌথ নৌ-মহড়াও করেছে। এরপর গাজায় ইস্রাইলের বোমাবর্ষণ শুরুর পর আন্তর্জাতিক আদালতে ইস্রাইলের বিরুদ্ধে গণহত্যার মামলা ঠুকে দেয় সাউথ আফ্রিকা। এটা যুক্তরাষ্ট্রের অনেক রাজনীতিবিদের জন্যেই গ্রহণযোগ্য ছিল না। তারা সাউথ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ চাইছিলেন।

মুয়েম্বা ফেজো বলছেন যে, ওয়াশিংটনের সাথে সাউথ আফ্রিকার বর্তমান কূটনৈতিক দ্বন্দ্ব আগে থেকেই বোঝা যাচ্ছিলো। ট্রাম্প প্রশাসন হয়তো সাউথ আফ্রিকার মাধ্যমে 'ব্রিকস'এর অন্যান্য সদস্যদেশকে (বিশেষ করে রাশিয়া, চীন ও ব্রাজিলকে) শেখাচ্ছে যে, ওয়াশিংটনের রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক এজেন্ডার বিরুদ্ধে গেলে কি হতে পারে। এর ফলাফল হিসেবে সাউথ আফ্রিকার অর্থনীতিতে ধ্বস নামতে পারে। এমনকি রাজনৈতিক দলগুলির মাঝে বিভেদ তৈরি হয়ে বর্তমান কোয়ালিশন সরকারের পতনও ঘটে যেতে পারে। আপাততঃ ওয়াশিংটন সাউথ আফ্রিকার উপর চাপ সৃষ্টি করছে কারণ 'ব্রিকস' জোটের পক্ষ থেকে সাউথ আফ্রিকার পক্ষে বড় ধরণের কোন অর্থনৈতিক সমর্থন না-ও আসতে পারে। অন্ততঃ ওয়াশিংটনকে দূরে ঠেলে রাখার মতো শক্তি 'ব্রিকস' জোটের এখনও হয়নি। একারণে অনেকেই হয়তো ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে যেতে দুইবার চিন্তা করবে। তবে অনেক দেশই হয়তো রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক ক্ষতির সন্মুখীন হয়ে নতুন করে ওয়াশিংটনের সাথে সম্পর্কের হিসেব করবে।

মোজাম্বিকে ১৯৭৭ সাল থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত গৃহযুদ্ধে ('ফ্রেলিমো' সরকার বনাম 'রেনামো’ বিদ্রোহী দল) দেশটা ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছিল। এরপর ২০১৭ সাল থেকে উত্তরের কাবো দেলগাদো অঞ্চলে মুসলিম বিদ্রোহীদের সাথে যুদ্ধ শুরু হয়। এই সংঘাতে ৪ হাজারের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে এবং প্রায় ১০ লক্ষ মানুষ গৃহহারা হয়েছে। বিপুল সম্পদ থাকার পরেও দেশের প্রায় ৭৫ শতাংশ মানুষ দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছে। বিশেষ করে মুসলিম-অধ্যুষিত এলাকায় বৈষম্য সবচাইতে বেশি।

আফ্রিকার দক্ষিণের দেশ মোজাম্বিকে রাজনৈতিক অস্থিরতা মূলতঃ ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতারই ফলাফল। এই প্রতিযোগিতার একদিকে রয়েছে ব্রিটিশ ঘরানার সাউথ আফ্রিকা এবং ইউরোপিয় ইউনিয়ন। অন্যপক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। গাজা যুদ্ধকে কেন্দ্র করে ইয়েমেনের হুথি মিলিশিয়ারা লোহিত সাগর এবং বাব-এল-মান্ডেব প্রণালিতে বাণিজ্য জাহাজের উপর হামলা শুরু করার পর থেকে বেশিরভাগ বাণিজ্য জাহাজকে আফ্রিকার দক্ষিণ উপকূল ঘুরে যেতে হচ্ছে। একারণে এই অঞ্চলের দেশগুলি, বিশেষ করে মোজাম্বিক, মাদাগাসকার এবং সাউথ আফ্রিকার গুরুত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে এবং এই অঞ্চলে প্রভাব বিস্তারের প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে বড় রকমের পরিবর্তনের পর থেকে সেটার প্রতিফলন ঘটছে দুনিয়ার সকল অঞ্চলে। বাইডেন প্রশাসনের সময়ে ব্রিটিশ ঘরানার প্রভাবের সাথে মার্কিন প্রভাবের দ্বন্দ্ব বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই সামনে আসেনি। কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন এই দ্বন্দ্বগুলিকে লুকিয়ে রাখার ব্যাপারে খুব একটা সচেষ্ট নয়। ভেঙ্গে পড়ার কারণে পশ্চিমা বিশ্বব্যবস্থার কদর্যটা এখন মোটামুটিভাবে সকলের কাছেই দৃশ্যমান হচ্ছে।

No comments:

Post a Comment