গত ২৬শে ডিসেম্বর চীনের আকাশে চীনাদের তৈরি দু'টা নতুন ডিজাইনের যুদ্ধবিমানের ওড়ার দৃশ্য সোশাল মিডিয়ায় আসার পর বিশ্বব্যাপী আলোড়ন পড়ে গেছে। চীনা প্রতিরক্ষা দপ্তর এবং মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তর কেউই এখনও এব্যাপারে কোন মন্তব্য করেনি। এই বিমানগুলির এখনও কোন অফিশিয়াল নাম জামা যায়নি। একই দিনে চীনা সরকারি মিডিয়া 'শিনহুয়া' জানাচ্ছে যে, চীনা কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিষ্ঠাতা মাও সে তুংএর জন্মদিনে চীনারা তাদের নৌবাহিনীর সর্বশেষ উভচর এসল্ট শিপ পানিতে ভাসিয়েছে। ‘রয়টার্স'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, দু'টা বিমানের একটা বেশ বড়; যার আকৃতি অনেকটাই হীরার মতো। এটার তিনটা ইঞ্জিন ইনলেট রয়েছে; যার দু'টা রয়েছে বিমানের গা ঘেঁষে; আর বাকিটা রয়েছে উপরের দিকে। এধরণের তিন ইঞ্জিনের বিমান সচরাচর দেখা যায় না। দ্বিতীয় বিমানটা বেশ ছোট আকৃতির। 'এভিয়েশন উইক'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, চীনা 'চেংডু' কোম্পানি থেকে ওড়া প্রথম বিমানটার সাথে একটা 'জে-২০এস' ফাইটার বিমানও উড়ছিলো। দ্বিতীয় বিমানটা উড়েছিলো 'শেনইয়াং' কোম্পানি থেকে। দু'টা বিমানই ছিল লেজবিহীন; যার অর্থ হলো, এগুলিকে কম্পিউটারের মাধ্যমে আকাশে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। উভয় বিমানেই কোন ৯০ ড্রিগ্রি কোণ নেই; যা বলে দিচ্ছে যে, এগুলিকে রাডার এড়ানো মাথায় রেখেই ডিজাইন করা হয়েছে। এর আগে মার্কিনীদের তৈরি 'বি-২' এবং 'বি-২১' বোমারু বিমানও 'ফ্লাইং উইং' ডিজাইনের বা লেজবিহীন। এছাড়াও বিভিন্ন মনুষ্যবিহীন ড্রোন বিমানও লেজবিহীন; যেমন মার্কিন 'আরকিউ-১৭০' এবং চীনা 'সিএইচ-৭'। 'দ্যা ওয়ার জোন'এর এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, লেজবিহীন হবার অর্থ হলো রাডার এড়িয়ে চলার ক্ষেত্রে এই বিমানগুলি একধাপ এগিয়ে। কারণ এর মাধ্যমে বিভিন্ন দিক থেকে বিভিন্ন ব্যান্ডের রাডার সিগনাল এড়ানো সম্ভব হবে। তবে লেজ না থাকার কারণে সেই বিমানে যত শক্তিশালী কম্পিউটার সিস্টেমই থাকুক না কেন, সেটার ম্যানিউভার করার সক্ষমতা অপেক্ষাকৃত কম হবে। তথাপি দূরবর্তী মিশনে লম্বা সময় সুপারসনিক ফ্লাইটের ক্ষেত্রে এর সুবিধা রয়েছে।
'রয়টার্স'এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, মার্কিনীরা তাদের 'নেক্সট জেনারেশন এয়ার ডমিন্যান্স' বা 'এনজিএডি' নামের বিমান প্রকল্প কেমন হবে, সেব্যাপারে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আসন্ন প্রশাসনের সময় সিদ্ধান্ত নেবে। ব্রিটিশ এবং জাপানিরা একত্রে পরবর্তী জেনারেশনের বিমান নিয়ে একটা প্রকল্পে একত্রে কাজ করছে। 'অস্ট্রেলিয়ান স্ট্র্যাটেজিক পলিসি ইন্সটিটিউট'এর জ্যেষ্ঠ বিশ্লেষক ইউয়ান গ্রাহামের মতে, এই বিমানগুলি দেখিয়ে দেয় যে, চীনা বিমান নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলির নতুন কিছু নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার মনমানসিকতা রয়েছে। ডিজাইনগুলির ভালো খারাপ যা-ই থাকুক না কেন, এটা বলার অবকাশ নেই যে, ডিজাইনগুলির যথেষ্ট স্বকীয়তা রয়েছে। অনেকেই ধরেই নেয় যে, নতুন কোন কিছু মানেই সেটা যুক্তরাষ্ট্র ও তার বন্ধু দেশগুলির কাছ থেকেই আসতে হবে। কিন্তু এখন চীনাদের মাঝে কোন হীনমন্যতা থাকলে তারা সেটা ঝেড়ে ফেলে দিতে পারে। সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন প্রতিরক্ষা দপ্তরের প্রকাশিত 'চায়না মিলিটারি পাওয়ার' প্রতিবেদনে বলা হয়েছে যে, চীনারা 'এইচ-২০' স্টেলথ বোমারু বিমান এবং মধ্যম পাল্লার ফাইটার-বোম্বার ডেভেলপ করছে। অপরদিকে চীনা বিমান নির্মাতা কোম্পানির কর্মকর্তারা বলেছেন যে, তারা ষষ্ঠ জেনারেশনের যুদ্ধবিমানের উপর গবেষণা চালাচ্ছে। ২০২২ সালের সেপ্টেম্বরে মার্কিন বিমান বাহিনীর তৎকালীন 'এয়ার কম্ব্যাট কমান্ড'এর প্রধান জেনারেল মার্ক কেলি মন্তব্য করেছিলেন যে, চীনারাও মার্কিনীদের মতো ষষ্ঠ জেনারেশনের যুদ্ধবিমান নিয়ে কাজ করছে; যা হবে মূলতঃ 'সিস্টেম অব সিস্টেমস'। এর মাধ্যমে বিমানের রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা আরও কমে যাবে; কম্পিউটারের সক্ষমতাও বহুগুণে বাড়বে; সেন্সরগুলির সক্ষমতাও অনেক বেড়ে যাবে। একইসাথে নতুন যেকোন সিস্টেম এই বিমানের সাথে মুহুর্তের মাঝেই যুক্ত করে ফেলা যাবে।
তিন ইঞ্জিনের বোমারু বিমান!
‘রয়টার্স'এর সাথে কথা বলতে গিয়ে পাঁচজন সামরিক বিশ্লেষক মত দিয়েছেন যে, ডিজাইন দেখে বলা সম্ভব নয় যে, এগুলি রাডারে কতটা ধরা পড়বে অথবা এগুলির ভেতরে কিধরণের সরঞ্জাম রয়েছে। এছাড়াও এগুলি আকাশে কতটা ম্যানিউভার করতে সক্ষম বা এগুলির গতি কতটা হতে পারে, সেব্যাপারেও নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না। এগুলি জানতে পারলেই নিশ্চিত করে বলা সম্ভব যে, এগুলিকে পরবর্তী জেনারেশনের যুদ্ধবিমান বলা যাবে কিনা। 'এভিয়েশন উইক' ম্যাগাজিনের এক প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, তিন ইঞ্জিনের প্রথম বিমানটার নিচের দিকের ইঞ্জিন দু'টার ইনলেটগুলি 'ক্যারেট' ধরণের। আর উপরের ইঞ্জিনটার ইনলেট 'ডাইভার্টারলেস সুপারসনিক ইনলেট' বা 'ডিএসআই' ধরণের। বিমানের নিচের দিকের বডি এতটাই বড় যে, এর ভেতরে খুব সহজেই অস্ত্র রাখা যাবে। এর ল্যান্ডিং গিয়ারে ডাবল চাকা দেয়া হয়েছে; যা বলে দিচ্ছে যে, বিমানটাকে যথেষ্ট ভারি ফাইটার-বম্বার হিসেবে ডিজাইন করা হয়েছে। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক 'রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট' বা 'রুসি'র সিনিয়র ফেলো জাস্টিন ব্রঙ্ক বলছেন যে, বিমানটার বিরাট আকৃতি এবং রাডার এড়ানোর ডিজাইন দেখে মনে হচ্ছে যে, এটা বহুল প্রতীক্ষিত চীনা আঞ্চলিক বোমারু বিমান; যা বহু উঁচু দিয়ে উড়ে গিয়ে প্রশান্ত মহাসাগরের সামরিক ঘাঁটি এবং যুদ্ধজাহাজে আঘাত হানতে পারবে। তবে হতেও পারে যে, এটা চীনাদের ষষ্ঠ প্রজন্মের যুদ্ধবিমান প্রকল্পের একটা অংশ।
'রয়াল এরোনটিক্যাল সোসাইটি'র এক লেখায় ব্রিটিশ এভিয়েশন বিশ্লেষক বিল সুইটম্যান বলছেন যে, পাশে 'জে-২০এস' বিমানটা থাকায় বোঝা যায় যে, ‘চেংডু'র বিমানটা লম্বায় প্রায় ৭৫ফুট এবং প্রস্থে প্রায় ৬৩ফুট। সেই হিসেবে এর উইং এরিয়া প্রায় ২ হাজার বর্গফুট; যার প্রায় পুরোটাই জ্বালানি বহণে ব্যবহার করা যাবে। বিমানের ডাবল-হুইল ল্যান্ডিং গিয়ার আজকাল ৪৫টন টেইক-অফ ওজনের নিচে কোন বিমানে দেওয়া হয় না। তিনি বলছেন যে, এই বিমানের টেইক-অফ ওজন ৫৪টন বা তারও বেশি হলেও তিনি অবাক হবেন না। এর ফলে এর উইং লোডিং হতে পারে প্রতি স্কয়ার ফুটে ২৭ কেজির মতো; যা তেমন আহামরি কিছু নয়; এবং ফুয়েল ফ্র্যাকশন হতে পারে দশমিক ৪এর মতো। বিমানের ডানার সুইপ এঙ্গেল দেখে মনে হচ্ছে এটা সর্বোচ্চ মাক ১ দশমিক ৮ গতিতে চলতে পারবে। বিমানটার ডানায় একেক পাশে ৫টা করে মোট ১০টা কন্ট্রোল সেগমেন্ট রয়েছে; যার বাইরের দু'টা ওড়ার সময় পুরোপুরিভাবে খোলা ছিল (হয়তো এয়ার ব্রেক হিসেবে)। 'বি-২' এবং 'বি-২১' বিমানের ওড়ার সময় দেখা গেছে যে, এই সেগমেন্টগুলি পুরোপুরিভাবে বন্ধ না করতে পারলে রাডারে ধরা পড়ার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। তবে চীনারা বিমানের উপর ব্যবহৃত ম্যাটেরিয়ালের ক্ষেত্রে বড় কোন আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছে কিনা, সেব্যাপারে কেউ নিশ্চিত করে কিছু বলতে পারেনি। 'বি-২' এবং 'বি-২১' বিমানগুলি তাদের ইঞ্জিনগুলির মাঝে শক্তির ব্যালান্সিংএর মাধ্যমে বিমান নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। 'চেংডু' ফাইটারও হয়তো সেটা করবে।
'দ্যা ওয়ার জোন'এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, ‘চেংডু'র বিমানটাতে তিনটা ইঞ্জিন দেয়া হয়েছে; কারণ 'জে-২০' বিমানে ব্যবহৃত চীনাদের ডেভেলপ করা দু'টা 'ডব্লিউএস-১০সি' ইঞ্জিনের পক্ষে এত বড় বিমানের গতি এবং উচ্চতার টার্গেট ধরা সম্ভব হবে না। তবে বিল সুইটম্যান মনে করছেন যে, ইঞ্জিনের ক্ষমতার কারণে বিমানে এতবড় ডিজাইন পরিবর্তন না-ও আনা হয়ে থাকতে পারে। হয়তো মাঝের ইঞ্জিনটাকে টেক-অফ, ইনিশিয়াল ক্লাইম্ব এবং সুপারক্রুজের জন্যে ব্যবহার করা হবে। আর বাকি ইঞ্জিন দু'টাকে ব্যবহার করা হবে ফ্লাইট কন্ট্রোলের জন্যে। আর এখনই নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, তৃতীয় ইঞ্জিনটা কি বাকি দু'টার মতো একই ইঞ্জিন কিনা। বিমানটার অস্ত্র বহণ করার অভ্যন্তরীণ কম্পার্টমেন্ট ২৫ফুট লম্বা এবং ৭ফুট চওড়া। এছাড়াও এর দু'টা সাইড বে রয়েছে, যেগুলিতে আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র বা রাডার বিধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করা সম্ভব। তবে অভ্যন্তরীণ কম্পার্টমেন্টের আকার বলে দিচ্ছে যে, এই বিমানে বড় আকারের টার্গেট (বিমান ঘাঁটি, বিমানবাহী যুদ্ধজাহাজ) ধ্বংস করার জন্যে বড় আকারের অস্ত্র বহণ করা হবে। তবে এই বিমানে বহুসংখ্যক সুইসাইড ড্রোনও বহণ করা যেতে পারে; যা কিনা দূরবর্তী টার্গেটে হামলা করতে পারবে। দ্রুতগামী সুপারসনিক বিমান হবার কারণে এগুলি শত্রুর অপেক্ষাকৃত কাছের ঘাঁটিতে মোতায়েন করা যাবে। ধীরগতির বোমারু বিমানগুলিকে দূরবর্তী ঘাঁটিতে রাখতে হয়; যেখান থেকে পরিচালনা করতে গেলে আবার আকাশে রিফুয়েলিংএর জন্যে বিমান প্রয়োজন হয়; যেগুলি আবার শত্রুর বিমান ঘাঁটি থেকে দেড় হাজার কিঃমিঃ দূরে থাকলেও শত্রুর টার্গেটে পরিণত হতে পারে। 'দ্যা ওয়ার জোন'এর প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে যে, যেহেতু চীনাদের আকাশে রিফুয়েলিং করার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের মতো নয়, তাই দূরবর্তী টার্গেটে হামলা করার ক্ষেত্রে এধরণের বিমান খুবই উপযোগী হবে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের বাহিনীগুলি যেসকল জায়গায় বিমান হামলার ভয় করতো না, সেগুলি এখন চীনা বিমানের পাল্লার মাঝে পড়ে যাবে। এই টার্গেটগুলির মাঝে থাকবে মার্কিন ট্যাংকার বিমান, পরিবহণ বিমান, আর্লি ওয়ার্নিং এওয়াকস বিমান, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার বিমান, গোয়েন্দা বিমান এবং ফরওয়ার্ড ঘাঁটিতে মোতায়েন থাকা জাহাজ ও বাহিনী। তাছাড়া শত্রুর মাঝ থেকে এই বিমানগুলি তথ্য পাঠাতে পারবে এবং একই সক্ষমতার মনুষ্যবিহীন ড্রোনগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে।
যুক্তরাষ্ট্র-চীন অনিবার্য সংঘাত!
মার্কিন থিঙ্কট্যাঙ্ক 'স্টিমসন সেন্টার'এর সিনিয়র ফেলো কেলি গ্রীকো বলছেন যে, চীনারা দিনের বেলায় এই বিমানগুলিকে সবার সামনে দিয়ে ওড়াবার ব্যাবস্থা করেছে; যা উল্লেখ করার মতো। বিমানের ক্ষেত্রে চীনারা যুক্তরাষ্ট্রের সাথে পাল্লা দিয়ে হয়তো কিছুটা ভালো অবস্থানে যেতে পারে। তবে মনুষ্যবিহীন বিমান এবং ক্ষেপণাস্ত্রের ক্ষেত্রে সেটা অপেক্ষকৃত কঠিন হতে পারে। যেহেতু পেন্টাগনে এই মুহুর্তে 'এনজিএডি' নিয়ে বিতর্ক চলছে, কাজেই এটা ধরেই নেয়া যায় যে, চীনাদের এই বিমানগুলি পেন্টাগণের আলোচনাকে নতুন করে উস্কে দেবে। 'এভিয়েশন উইক' বলছে যে, চীনারা সরকারিভাবে কিছু না বললেও তারা কয়েক ডজন ব্যক্তির ভুমি থেকে ধারণ করা ভিডিও সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করার উপর কোন সেন্সরশিপ প্রয়োগ করেনি। বিল সুইটম্যান বলছেন যে, একেকটা ছবি একেক দিন তোলা হয়েছে বলে দেখা যাচ্ছে; কিন্তু সবগুলিই একই দিনে সোশাল মিডিয়াতে পোস্ট করা হয়েছে। এর অর্থ হলো চীনারা নির্দিষ্ট করেই একই দিনে ছবিগুলিকে পোস্ট করেছে; অন্য কথায় এগুলি সাধারণ জনগণের তোলা ছবি নয়।
বিল সুইটম্যান বলছেন যে, ‘চেংডু'র ফাইটার-বোম্বার বিমানটা হয়তো কয়েক বছরের মাঝেই সার্ভিসে আসতে যাচ্ছে; যা পশ্চিমা সামরিক অবস্থানের জন্যে হুমকির কারণ হতে পারে। 'রয়টার্স' মনে করিয়ে দিচ্ছে যে, চীনাদের সামরিক শক্তিকে নিয়ন্ত্রণ করতে যুক্তরাষ্ট্র সাম্প্রতিক সময়ে সামরিক প্রযুক্তিতে ব্যাপক বিনিয়োগ করছে। কিছুদিন আগেই প্রশান্ত মহাসাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক ঘাঁটি গুয়ামে ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ধ্বংস করার সিস্টেমের পরীক্ষা চালিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পশ্চিমা চিন্তাবিদদের কপালে চিন্তার রেখাই বলে দিচ্ছে যে, চীনাদের এই দুই বিমানের উড্ডয়ন, বিশেষ করে 'চেংডু' কোম্পানির ফাইটার-বোম্বার বিমান প্রশান্ত মহাসাগরে সামরিক ব্যালান্সের হিসেব পাল্টে দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র যখন তাদের দূরবর্তী দ্বীপ ঘাঁটিগুলিতে শুধুমাত্র চীনা ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে চিন্তিত ছিল, তখন সেগুলি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র, হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র, মনুষ্যবিহীন ড্রোন এবং দূরপাল্লার স্টেলথ বোমারু বিমানের মতো বহু প্রকার অস্ত্রের সমন্বিত আক্রমণের হুমকিতে পড়ে গিয়েছে। মোটকথা চীন যত সময় পাবে, ততই সে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সামরিক শক্তির ব্যবধান কমিয়ে ফেলতে থাকবে; হয়তো একসময় চীনই এগিয়ে যাবে। আসন্ন ট্রাম্প প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন হাজির হয়েছে - অনিবার্য সংঘাতের আগে যুক্তরাষ্ট্র চীনকে কতটা সময় দেবে?
অনিবার্য সংঘাত ২০৩০ এর আগেই শুরু হবে মনে হচ্ছে। মেজরিটি তাঈওয়ানিজ মেইনল্যান্ড চায়নার সমর্থক।চায়নার সি ওয়ারদেয়ারের৷ ক্ষেত্রে আরো উন্নতির প্রয়োজন আছে।
ReplyDeleteপ্রথমতঃ যুক্তরাষ্ট্র ২০২৬-২৮এর মাঝে যুদ্ধের জন্যে প্রস্তুতি নিচ্ছে। একসময় তারাই ২০৩০এর পরের কথা বলছিলো। প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রই ঠিক করে যে, কবে যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে, বা আদৌ যুদ্ধের সম্ভাবনা রয়েছে কিনা। তাদের এই তারিখগুলিই বলে দেবে যে, যুক্তরাষ্ট্র আসলে কবে যুদ্ধ শুরু করতে চায়। তাদের হিসেবে চীন যেই সময় নাগাদ নিজেকে প্রস্তুত বলে মনে করবে, তার কিছুটা আগেই যুক্তরাষ্ট্র যুদ্ধ শুরু করতে চাইবে - অর্থাৎ চীনাদের প্রস্তুতি শেষ হবার আগেই। কাজেই এটা নিশ্চিত যে, চীনারা প্রস্তুত হবার আগেই যুক্তরাষ্ট্র চীনের উপরে যুদ্ধ চাপিয়ে দেবে।
Deleteদ্বিতীয়তঃ তাইওয়ানের জনগণ আসলে চীনা। তিব্বত, উইগুর, ইনার মঙ্গোলিয়া এবং মাঞ্চুরিয়া চীনের অধীন অঞ্চল হলেও সেই অঞ্চলের মানুষগুলি জাতিগতভাবে চীনা (হান) নয়। কিন্তু তাইওয়ানের সকলেই হান। ১৯৫০এর দশকে কমিউনিস্টদের সাথে যুদ্ধে হেরে গিয়ে চিয়াং কাইশেক তার দলবলসহ তাইওয়ানে আশ্রয় নিয়েছিল। অর্থাৎ তাইওয়ানে আশ্রয় নেয়া কিছু লোক ছিল চিয়াং কাইশেকের অনুসারী। অন্যকথায় বলতে গেলে, চীনের মূল ভূখন্ডে চিয়াং কাইশেকের চীনা অনুসারীরা মাও সেতুংএর চীনা অনুসারীদের সাথে যুদ্ধ করে হেরে গিয়ে তাইওয়ানের চীনা জনগণের আশ্রয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়ে তাইওয়ান নামের নতুন "দেশ" তৈরি করে। এখনও যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থন নিয়েই তাইওয়ান টিকে আছে - মধ্যপ্রাচ্যে ইস্রাইলের মতোই এশিয়াতে তাইওয়ান যুক্তরাষ্ট্রের একটা স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি।
তৃতীয়তঃ চীনের মূল শক্তি হতে হবে ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তি - সেগুলি ভূমি থেকে বা আকাশ থেকে বা সমুদ্র থেকেই উৎক্ষেপিত হোক। চীনা ক্ষেপণাস্ত্রের শক্তির ভয়েই যুক্তরাষ্ট্র আজকে চীনকে ভয় পাচ্ছে। চীন শুধুমাত্র এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়ার জন্যে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করছে। 'জে-৩৬' দূরপাল্লার ফাইটার-বম্বার এই চেষ্টার সর্বশেষ ফলাফল। ইতোমধ্যেই কথা শুরু হয়ে গেছে যে, চীনারা তাদের স্টেলথ বোমারু বিমানেরও নাকি প্রথম ফ্লাইট সম্পন্ন করেছে। তবে সেটা এখনও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারেনি।
যাইহোক, চীনাদের এসকল সামরিক সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রকে বিচলিত করছে। এবং যুক্তরাষ্ট্র চাইছে যে, চীনারা এই অস্ত্রগুলিকে পুরোপুরিভাবে ডেভেলপ করতে পারার আগেই যেন চীনাদের উপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়া যায়। কারণ আদর্শিক শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র তার কোন প্রতিদ্বন্দ্বী রাষ্ট্রকে দেখতে চায় না।