Saturday, 12 October 2024

লেবাননে ইস্রাইলি আক্রমণ এবং গাজা গণহত্যার এক বছর – মধ্যপ্রাচ্যের ভবিষ্যৎ কি?

১২ই অক্টোবর ২০২৪

হিযবুল্লাহ বুঝতে পেরেছে যে, ইস্রাইলের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ-প্রচেষ্টা বড্ড দেরি হয়ে গেছে। গাজায় ইস্রাইলি হামলার সময় সাইডলাইনে বসে থেকে হিযবুল্লাহ কত বড় ভুল করেছে, সেটা এখন পরিষ্কার। বিশেষ করে হিযবুল্লাহর নেতৃত্ব এবং পুরো কমান্ড-কন্ট্রোল কাঠামো যখন ইস্রাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন ইরানও তাদের নিজেদের ভূমিতে ইস্রাইলি হামলার বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় ডিটারেন্টকে দুর্বল হতে দেখেছে। 


ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা বিশ্লেষক মাইকেল ক্লার্ক 'স্কাই নিউজ'কে দেয়া সাক্ষাতে বলছেন যে, গত ২৭শে জুলাই ইস্রাইলের দখলকৃত গোলান মালভূমি এলাকার মাযদাল শামস শহরে হিযবুল্লাহর রকেট হামলা (যাতে ১২ জন নিহত হয়) হবার পর ইস্রাইল লেবাননে ব্যাপকভাবে হামলা শুরু করে। ইস্রাইল এমনভাবে জবাব দেয়া শুধু করে যেন মাযদাল শামসের ঘটনার জন্যেই তারা অপেক্ষা করছিলো। ইস্রাইলের লেবাননে হামলা নিয়ে প্রতিরক্ষা ম্যাগাজিন 'জেনস'এর এক বিশ্লেষণে বলা হচ্ছে যে, বর্তমানে লেবাননে ইস্রাইলের হামলার শুরুতে ৩০শে জুলাই হিযবুল্লাহর সিনিয়র নেতা ফুয়াদ শুকরকে হত্যা করা হয়। হিযবুল্লাহ প্রায় এক মাস পর ২৫শে অগাস্ট উত্তর ইস্রাইলে প্রায় ২০০ থেকে ৩০০ রকেট এবং শেল নিক্ষেপ করে এই হত্যার জবাব দেয়। তবে এই জবাবের কথা চিন্তা করে আগেভাগেই ইস্রাইলিরা পুরো লেবানন জুড়ে হিযবুল্লাহর রকেটের অবস্থান এবং অবকাঠামোর উপর বিমান হামলা করে। ইস্রাইল দাবি করে যে, এই হামলায় হিযবুল্লাহর ৫০ থেকে ৬০ শতাংশ রকেট এবং শেল নিক্ষেপ সক্ষমতা ধ্বংস হয়েছে। তথাপি ১লা সেপ্টেম্বর থেকে 'জেনস'এর হিসেবে ইস্রাইলে হিযবুল্লাহর হামলা প্রায় ৩০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে; এবং কমপক্ষে একই হারে লেবাননে ইস্রাইলের হামলাও বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে ১৭-১৮ সেপ্টেম্বর লেবাননে পেইজার এবং ওয়াকিটকি হামলার মাধ্যমে কমপক্ষে ৩২ জনকে হত্যা এবং আরও প্রায় ৩ হাজার জনকে আহত করার পর ইস্রাইলের লেবানন অপারেশন এক ধাপ এগিয়ে যায়। এই হামলা নিঃসন্দেহে হিযবুল্লাহর কমান্ড-কন্ট্রোল অবকাঠামোকে দুর্বল করে ফেলে। যে ব্যাপারটা ইস্রাইলের এই অপারেশনের মাধ্যমে পরিষ্কার হয়েছে তা হলো, ইস্রাইল এখন আর হিযবুল্লাহর কোন প্রতিশোধমূলক হামলা নিয়ে ভয়ে নেই; বরং তারা নিজেরাই বড় কোন হামলার প্রস্তুতি হিসেবে আগে থেকেই স্বাধীনভাবে কোন অপারেশন চালাতে পারে। পেইজার হামলার প্রতিশোধ হিসেবে ২০শে সেপ্টেম্বর হিযবুল্লাহ ইস্রাইলি অবস্থানের উপর কমপক্ষে ২৯০টা রকেট এবং শেল নিক্ষেপ করে। তবে ইস্রাইল আবার এর জবাবে বৈরুতে হামলা করে হিযবুল্লাহর স্পেশাল অপারেশনসএর 'রেদওয়ান ফোর্স'এর কমান্ডার ইব্রাহিম আকীলকে হত্যা করে। এর জবাবে হিযবুল্লাহ ২০২৩এর অক্টোবরের পর প্রথমবারের মতো ২২শে সেপ্টেম্বর 'ফাদি-১' (৮০কিঃমিঃ পাল্লা) এবং 'ফাদি-২' (১০৫কিঃমিঃ পাল্লা) ক্ষেপণাস্ত্র এবং ২৫শে সেপ্টেম্বর তেল আভিভ লক্ষ্য করে 'ক্বদর-১' ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। এর মাধ্যমে বোঝা যায় যে, হিযবুল্লাহ তার নীতি অনুযায়ী ইস্রাইলি হামলার পরিধি বৃদ্ধির জবাবে নিজেদের হামলার পরিধিও বৃদ্ধি করেছে। তবে ২৩শে সেপ্টেম্বর থেকে ৩০শে সেপ্টেম্বরের মাঝে ইস্রাইল লেবাননে কমপক্ষে ২ হাজার টার্গেটে বোমাবর্ষণ করে; যার মাঝে ছিল রকেট লঞ্চার, মধ্যম পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র, সামরিক অবকাঠামো, এবং ইন্টেলিজেন্স অবকাঠামো। এর মাঝে সবচাইতে বেশি গুরুত্বপূর্ণ ছিল ২৭শে সেপ্টেম্বর হিযবুল্লাহর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কমান্ড বাংকারে হামলা; যেখানে তাদের সর্বোচ্চ নেতা হাসান নাসরাল্লাহসহ কমপক্ষে ২০ জন নেতা নিহত হন; যাদের মাঝে ছিলেন হিযবুল্লাহর দক্ষিণ লেবাননের কমান্ডার আলী খারাকি। এই বিমান হামলার মাধ্যমে হিযুবুল্লাহর যুদ্ধ সক্ষমতা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এখন পর্যন্ত ইস্রাইলি হামলায় বহু বেসামরিক নাগরিক হতাহত এবং কয়েক লক্ষ মানুষের বাস্তুচ্যুত হবার খবর পাওয়া যায়।

মাইকেল ক্লার্ক বলছেন যে, ইস্রাইলিরা দাবি করছে যে, তারা হিযবুল্লাহর নেতা হাশিম শাফিউদ্দিনকে হত্যা করেছে। এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া না গেলেও দেখা যাচ্ছে যে, ইরানও এমনভাবে কথা বলছে যেন তাকে হত্যা করা হয়েছে। ইস্রাইলিরা যে কৌশলটা নিয়ে এগুচ্ছে তা হলো, তারা হিযবুল্লাহকে ধ্বংস করতে চেষ্টা করছে না; তবে হিযবুল্লাহর নেতৃত্ব এবং সক্ষমতাকে এমনভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইছে, যাতে করে হিযবুল্লাহ অনেক লম্বা সময় ধরে ব্যাকফুটে চলে যায়। আর এই সময়ের মাঝে ইস্রাইলিরা গাজা এবং লেবাননের সামরিক বাস্তবতাকে পরিবর্তন করে ফেলতে চেষ্টা করবে। আর যদি ইরান কিছু করতে চায়, তাহলে তারা হয়তো বাস্তবতার কারণে পিছিয়ে যেতে বাধ্য হবে। দক্ষিণ লেবাননের লিটানি নদীর দক্ষিণের বাসিন্দাদেরকে ইস্রাইল সরে যেতে বলছে। শুধু তা-ই নয়, তারা এরও উত্তরে আওয়ালি নদীর দক্ষিণেও অনেক বাসিন্দাদেরকে সরে যেতে বলেছে। এর অর্থ এটা হতে পারে যে, হয়তো তারা লিটানি নদী এবং আওয়ালি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বোমা হামলা করবে, অথবা এই অঞ্চলকে সেনাবাহিনীর হামলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে; যা এখনও নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না।
 
দক্ষিণ লেবাননের লিটানি নদীর দক্ষিণের বাসিন্দাদেরকে ইস্রাইল সরে যেতে বলছে। শুধু তা-ই নয়, তারা এরও উত্তরে আওয়ালি নদীর দক্ষিণেও অনেক বাসিন্দাদেরকে সরে যেতে বলেছে। এর অর্থ এটা হতে পারে যে, হয়তো তারা লিটানি নদী এবং আওয়ালি নদীর মধ্যবর্তী অঞ্চলে বোমা হামলা করবে, অথবা এই অঞ্চলকে সেনাবাহিনীর হামলার মাধ্যমে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে নেবে


প্রাক্তন ইস্রাইলি কর্মকর্তা এবং ব্রিটিশ-ইস্রাইলি রাজনৈতিক বিশ্লেষক ড্যানিয়েল লেভি 'মিডলইস্ট আই'কে দেয়া এক সাক্ষাতে বলছেন যে, লেবাননে ইস্রাইলের পেইজার আক্রমণে এটা নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল যে, ইস্রাইল এখন লেবাননে তার আক্রমণকে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করবে। এটা ইস্রাইলের পক্ষে সম্ভব হয়েছে কারণ এক বছর ধরে গাজায় হামলা চালিয়ে যাবার সময় তার মার্কিনীদের কাছ থেকে কোন বাধার সন্মুখীন হওয়া তো দূরে থাক, ইস্রাইলিরা দেখেছে যে, মার্কিনীরা ইস্রাইলের সমর্থনে মধ্যপ্রাচ্যে ব্যাপক সামরিক শক্তি মোতায়েন করেছে। এর ফলে ইস্রাইলিরা নিশ্চিত হয়েছে যে, তারা যা কিছুই করুক না কেন, সেটা ওয়াশিংটন সমর্থন করে যাবে। ইস্রাইলে এখন কোন কূটনীতি নেই; সেখানে সকল চিন্তাই এখন সামরিক। প্রধানমন্ত্রী নেতানিয়াহু একদিকে যেমন নিজের ক্ষমতাকে টিকিয়ে রাখতে চাইছেন, তেমনি তিনি ইস্রাইলের আদর্শিক ব্যাপারগুলিকে ব্যবহার করেছেন। এর ফলে ইস্রাইলের পার্লামেন্টে যারা নেতানিয়াহুর বিরোধী তাদেরকেও লেবানন অপারেশনের জন্যে গ্রিন লাইট দিতে দেখা গিয়েছে।

‘আল-জাজিরা'র সাথে সাক্ষাতে প্রাক্তন মার্কিন কূটনীতিক এবং 'দ্যা এরাব সেন্টার'এর সিনিয়র ফেলো নাবীল খৌরি বলছেন যে, ইস্রাইলিরা হয়তো হামাসের সক্ষমতাকে কমাতে চাইছে এবং লেবাননের দক্ষিণে লিটানি নদীর কিছুটা উত্তর পর্যন্ত নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কিন্তু তার চাইতেও গুরুত্বপূর্ণ হলো, তারা একটা কৌশল নিয়ে এগুচ্ছে; যার মাধ্যমে তারা পুরো ফিলিস্তিনের এলাকায় ভৌগোলিক পরিবর্তন আনতে চাইছে। যেমন, সকল জনগণকে সরিয়ে দিয়ে তারা গাজার পুরো এলাকা দখলে নিয়ে ইহুদিদের বসবাসের ব্যবস্থা করতে চাইছে। একইসাথে তারা ধীরে ধীরে জর্দান নদীর পশ্চিম তীরেরও নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নিচ্ছে। হয়তো লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলের ব্যাপারেও তাদের এধরণেরই কোন পরিকল্পনা থাকতে পারে। ২০০৬ সালে ইস্রাইল হিযবুল্লাহর সক্ষমতাকে কমাতে চেষ্টা করেছিল; কিন্তু সেই কাজে তারা ব্যর্থ হয়। এবারে লেবাননে তাদের হামলা অনেক বেশি ভয়াবহ। হয়তো তারা একইসাথে লেবাননের নেতৃত্বের কাঠামোকেও পরিবর্তন করে ফেলতে চাইছে। এই মুহুর্তে রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের কারণে লেবাননে কোন প্রেসিডেন্ট নেই; একটা কেয়ারটেকার সরকারের মাধ্যমে কর্মকান্ড চলছে। হয়তো এই সুযোগে ইস্রাইল এমন কাউকে লেবাননের সরকারে দেখতে চাইতে পারে, যে ইস্রাইলের বন্ধুও যদি না হয়, অন্ততঃ ইস্রাইলের বিরোধিতা করবে না। আর যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো ইস্রাইল কোন প্রকারের অস্ত্রবিরতি মানবে না; সেটা অতি স্বল্প সময়ের জন্যেও যদি হয়। কোন স্থিতিশীল শান্তিতেও ইস্রাইল আগ্রহী নয়। নেতানিয়াহু সরকারের বিরোধীরাও যুদ্ধবিরতি না করার জন্যে এবং জিম্মিদের উদ্ধার না করার জন্যে নেতানিয়াহুর সমালোচনা করেছে। হোয়াইট হাউজে বাইডেন প্রশাসন এব্যাপারে সকল কিছুই জানে; কিন্তু কিছুই করেনি।

এক বছর ধরে গাজায় ৪১ হাজার মানুষ হত্যায় যুক্তরাষ্ট্র শুধু সম্মতিই দিয়ে যায়নি; সামরিক সহায়তা পাঠিয়ে ইস্রাইলকে সুরক্ষা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল পশ্চিমা দেশও ইস্রাইলের সুরক্ষায় সামরিক শক্তি পাঠিয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কিন্তু তুরস্ক এবং ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল রাষ্ট্র ইস্রাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে কিছুই করেনি। ইস্রাইল, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব এক পক্ষে এসে গণহত্যাকে সার্টিফিকেট দেয়াটা একদিকে যেমন দেউলিয়া হওয়া বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়, তেমনি তা মুসলিম বিশ্বে বড় আকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও আগের চাইতে অনেক বৃদ্ধি করে।

মাইকেল ক্লার্ক বলছেন যে, এক বছর আগে হামাসের হামলার মাধ্যমে গাজায় ইস্রাইলের বোমাবর্ষণ শুরু হয়। হামাসের নেতৃত্ব গাজার বাইরেও আঞ্চলিকভাবে ইস্রাইল-বিরোধী একটা সংঘাত শুরু করতে চাইছিলো। এবং এক বছর পর ইস্রাইল গাজা, লেবানন, ইয়েমেন, ইরাক, সিরিয়াতে যুদ্ধ করছে; এমনকি ইরানেও হামলা করা পরিকল্পনা করছে। তবে আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো, এক বছর পর এই সংঘাত আঞ্চলিক সংঘাতে পরিণত হলেও সেখানে ইস্রাইল ব্যাকফুটে নেই; তারা আক্রমণে রয়েছে। তারা হামাসের ১৭ হাজারের বেশি সদস্যকে হত্যা করেছে বলে দাবি করছে; এবং হামাসের ২৪টা ব্যাটালিয়নের কাঠামোকে ধ্বংস করেছে। তবে এর মাধ্যমে ইস্রাইল কত হাজার মানুষকে ইস্রাইলের বিরুদ্ধে যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করবে, তার হিসেব নেই। তথাপি এর মাধ্যমে ইস্রাইল এখন হিযবুল্লাহর দিকে নজর দিতে পারছে। এবং তারা হিযবুল্লাহর বিরুদ্ধে সেটাই করছে, যারা তারা হামাসের বিরুদ্ধে করেছিলো - হিযুবুল্লাহর সর্বোচ্চ নেতৃত্বের দুই স্তরের প্রায় সকলকেই তারা হত্যা করেছে। ইস্রাইল বলছে যে, তারা ইস্রাইলের উপর ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার প্রতিশোধ নেবে। ইস্রাইলি মিডিয়া বলছে যে, আমেরিকানরা ইস্রাইলকে আর্থিকভাবে সহায়তা দিতে চাইছে, যদি ইস্রাইল ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলিকে হামলা করা থেকে বিরত থাকে। তবে ইস্রাইল যদি ইরানের তেলের স্থাপনায় (যেমন খারগ দ্বীপ) হামলা করে বসে, তাহলে এর ফলাফল হবে মারাত্মক। ইস্রাইল বলছে যে, এটা তাদের জন্যে মধ্যপ্রাচ্যকে পরিবর্তন করার একটা অভূতপূর্ব সুযোগ; আর আরবের অনেক নেতাই ইস্রাইলের সাথে একমত। তবে যে ব্যাপারটা নিশ্চিত তা হলো, পুরো মধ্যপ্রাচ্যের নিরাপত্তা পরিস্থিতি ২০২৩এর অক্টোবরের ৭ তারিখের আগে যা ছিলো, সেখানে ফেরত যাবে না।

প্রায় দশ মাস ধরে ইস্রাইল যখন গাজায় ব্যাপক বোমা হামলা করছিলো, তখন হিযবুল্লাহ ইস্রাইলের বিরুদ্ধে বিভিন্ন প্রকারে সংঘাতে জড়িয়েছে। কিন্তু শুধুমাত্র গত অগাস্ট মাস থেকেই হিযবুল্লাহ ইস্রাইলের বিরুদ্ধে শক্তিশালী হামলা শুরুর চেষ্টা করেছে; যখন ইস্রাইল গাজার যুদ্ধকে গুছিয়ে নিয়ে হিযবুল্লাহর সক্ষমতাকে ধ্বংস করার জন্যে পুরো শক্তিকে নিয়োজিত করেছে। হিযবুল্লাহ বুঝতে পেরেছে যে, ইস্রাইলের বিরুদ্ধে তাদের যুদ্ধ-প্রচেষ্টা বড্ড দেরি হয়ে গেছে। গাজায় ইস্রাইলি হামলার সময় সাইডলাইনে বসে থেকে হিযবুল্লাহ কত বড় ভুল করেছে, সেটা এখন পরিষ্কার। বিশেষ করে হিযবুল্লাহর নেতৃত্ব এবং পুরো কমান্ড-কন্ট্রোল কাঠামো যখন ইস্রাইলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তখন ইরানও তাদের নিজেদের ভূমিতে ইস্রাইলি হামলার বিরুদ্ধে সবচাইতে বড় ডিটারেন্টকে দুর্বল হতে দেখেছে। এক বছর ধরে গাজায় ৪১ হাজার মানুষ হত্যায় যুক্তরাষ্ট্র শুধু সম্মতিই দিয়ে যায়নি; সামরিক সহায়তা পাঠিয়ে ইস্রাইলকে সুরক্ষা দিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সকল পশ্চিমা দেশও ইস্রাইলের সুরক্ষায় সামরিক শক্তি পাঠিয়ে সরাসরি অংশ নিয়েছে। কিন্তু তুরস্ক এবং ইরানসহ মধ্যপ্রাচ্যের সকল রাষ্ট্র ইস্রাইলের বর্বরতার বিরুদ্ধে কিছুই করেনি। এহেন পরিস্থিতিতে ইস্রাইল যে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের ইচ্ছামতো চলবে, তাতে অবাক হবার কিছু নেই। এর ফলশ্রুতিতে ইস্রাইলকে যতই শক্তিশালী মনে হোক না কেন, মধ্যপ্রাচ্যের যে সরকারগুলির মাধ্যমে ইস্রাইলের সীমান্তগুলি নিরাপদে থাকছে, সেই সরকারগুলি ইস্রাইলের পক্ষে তাদের নিজেদের জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে নিজেদের অবস্থানকে দুর্বল করেছে। ইস্রাইল, যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বিশ্ব এবং মধ্যপ্রাচ্যের নেতৃত্ব এক পক্ষে এসে গণহত্যাকে সার্টিফিকেট দেয়াটা একদিকে যেমন দেউলিয়া হওয়া বিশ্বব্যবস্থার ইঙ্গিত দেয়, তেমনি তা মুসলিম বিশ্বে বড় আকারের পরিবর্তনের সম্ভাবনাকেও আগের চাইতে অনেক বৃদ্ধি করে।

8 comments:

  1. ০৭ অক্টোবর ২০২৩ সালে হামাস হামলা শুরু করার পর থেকে এখন পর্যন্ত কিকি অর্জন করেছে? শুরু থেকেই ফিলিস্তিনিদের রক্ত ঝরা ছাড়া আর কিছুই কি করতে পারছে? উলটো এখন সব কিছুই ব্যাকফায়ার করেছে। হামাসের নিজের অবস্থাও নড়বড়ে। গাজা পুরাই ইস্রাইলের কব্জায়। আর ঐদিকে লেবাননের দক্ষিণাঞ্চলও চলে যাচ্ছে ইস্রাইলের কাছে। হিজবুল্লাহ-র কমান্ডাররা মাটির নিচে বৈঠক করতে করতে পার্মানেন্টলি মাটির নিচে চলে গেসেন। ইরান এখন ইয়া নফসি করছে। ইরানের সমস্ত তেলভিত্তিক স্থাপনা আর পারমাণবিক স্থাপনা গুড়ো গুড়ো হতে পারে যে কোন সময়। তাদের অর্থনীতি ধ্বংস হবে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনার বাড়িতে ডাকাত পড়েছে; আপনি ডাকাতকে প্রতিহত করতে চেষ্টা করেছেন এবং ডাকাতের হাতে মার খেয়েছেন। আমার কোন অধিকার নেই আপনার সমালোচনা করার। বরং আমার দায়িত্ব ছিল যার বাড়িতে ডাকাত পড়েছে, তাকে সাহায্য করার।

      ফিলিস্তিনিরা গত এক শতাব্দীতে দেখেছে কিভাবে তাদের বাড়িঘর জমিজমা দখল করে সেই এলাকা থেকে তাদেরকে বিতাড়িত করা হয়েছে। যারা সেখানে রয়েছে গেছে, তাদের উপর কারণে-অকারণে হামলা করে হাজারো মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। এই মানুষগুলির চাকুরি নাই; তাদেরকে অল্পকিছু জায়গার মাঝে অবরুদ্ধ করে রাখা হয়েছে। তাদের পড়াশোনার সুযোগ নাই; মৌলিক চাহিদা পূরণ হচ্ছে না - যুগের পর যুগ। বহু মানুষের জন্ম হয়েছে শরণার্থী শিবিরে; তাদের সন্তানদের জন্মও হয়েছে শরণার্থী শিবিরে। কারণ ইহুদিরা তাদের জায়গা জমি দখল করে নিয়েছে। কয়েক যুগ ধরে তাদের বাড়িঘর বুলডোজার দিয়ে গুড়িয়ে দিয়ে সেখানে ইহুদী বসতি স্থাপন করা হচ্ছে। এবং কয়েক যুগ ধরেই তারা দেখছে যে, যখন তারা মার খাচ্ছে, তখন পশ্চিমারা ইহুদিদের পক্ষ নিচ্ছে; আর মুসলিমরা চুপ করে থাকছে। এই মানুষগুলিকে দোষ দেয়া যায় না। তারা একটা উপনিবেশের মাঝে মানবেতর জীবনযাপন করছে। যদি দোষ দিতেই হয়, দিতে হবে মুসলিম বিশ্বের ৫০টার বেশি শাসকগোষ্ঠীকে; যারা ৬১ লক্ষ সৈন্যকে ব্যারাকে বসিয়ে রেখেছে; যখন ফিলিস্তিনিরা মার খেতে খেতে কোন ভবিষ্যৎ দেখতে পারছে না। ফিলিস্তিনের মুক্তি ফিলিস্তিনের হাতে নয়; ইস্রাইলের হাতে নয়; যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমাদের হাতেও নয়। ফিলিস্তিনের মুক্তি মুসলিম বিশ্বের হাতে; যারা নিজেদের সেনাবাহিনী পাঠিয়ে ইস্রাইলকে নিশ্চিহ্ন করতে পারে। এটা সম্ভব হবে যদি মুসলিম বিশ্বে একক নেতৃত্ব আসে। কারণ ৫০টারও বেশি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্রের (যেগুলি পশ্চিমারাই তৈরি করেছে) মাঝে বিভক্ত থেকে ফিলিস্তিনের মুক্তি আশা করা যায় না।

      Delete
  2. ইস্রাইলের ইতোমধ্যে পুরো ফিলিস্তিনকে জবরদখল করে নিয়েছে এবং নিচ্ছে। এখন তাদের প্লান কি লেবাননকে হামাসের মতো হিজবুল্লাহকে নিশ্চিহ্ন করাত জন্য গাঁজার মতো পরিস্থিতি তৈরি করে দখলে নেওয়া নাকি প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে যুদ্ধটা চালিয়ে নেওয়া যতক্ষণ অবধি তাদের শএুকে ধ্বংস করে ইস্রাইলি লবির স্বার্থসিদ্ধির না হচ্ছে?? এটা ত যদি হয় পুরো মধ্যপাচ্যে আঞ্চলিক সংঘাতে জড়িয়ে যাবে কিন্তু ইরান তার নিজের গন্ডিতে থেকেই জবাব দিতে চাচ্ছে পক্ষান্তরে ইস্রাইল ছুতো খুঁজছে এটাক করার জন্য।

    প্রশ্ন হচ্ছে আমেরিকার প্লান কি ইস্রাইল এবং মধ্যপাচ্যকে নিয়ে?? আমার ত মনে হয় আমেরিকা এই যুদ্ধ থামানোর কোনো নামগন্ধ নেই, প্রেসিডেন্সিয়াল ডিবেটে কে কার চেয়ে ইস্রাইলের স্বার্থ রক্ষা করতে হবে এটা নিয়ে চিন্তিত।।

    আবার যদি খেয়াল করি এই যুদ্ধটা আমেরিকাকে নড়বড়ে করে দিয়েছে, জনসমর্থনের আস্থা হারাচ্ছে, জনসম্মুখের চাপের মুখে বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছে আবার অভ্যন্তরীণভাবে জনগণের কাঙ্ক্ষিত চাওয়া এবং চাহিদা পূরনের ব্যর্থ্যতা ফুসিয়ে তুলছে এবং বিভক্ত করছে।এর পরেও কেন আমেরিকা তার নীতিতে অটুট থাকতেছে, তারা কি বুঝতেছে এটা সুপারপাওয়ারের চরম ব্যর্থতকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি সঠিক ব্যাপারটাই ধরেছেন - এখানে একটা বড় গড়মিল রয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এখানে শুধুই স্বার্থের খেলা। শুধু দেখতে হবে যে, কার স্বার্থ এখানে কি।

      প্রথমতঃ সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান চিন্তা হলো পুঁজিবাদের নতুন কোন প্রতিদ্বন্দ্বীর যাতে আবির্ভাব না হয়, সেটার ব্যবস্থা করা। সেই হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র প্রায় দুই দশক ধরে ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে এবং সেটা নাম দিয়েছে তথাকথিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ'। এই যুদ্ধে ইউরোপের দেশগুলি যুক্তরাষ্ট্রকে সমর্থন দিয়েছে; কারণ তাদের স্বার্থের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের দ্বন্দ্ব হয়নি।

      দ্বিতীয়তঃ তথাকথিত 'সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে' নিজেদের অর্থনৈতিক এবং সামরিক শক্তির বারোটা বাজার পর যুক্তরাষ্ট্র চীনের দিকে নজর দিয়েছে। কারণ তাদের ইন্টেলিজেন্সের এসেসমেন্ট হলো, যদি প্রতিদ্বন্দ্বী কোন আদর্শ নিজের অবস্থান গড়ে নিতে সক্ষম হয়, তাহলে চীন তাদেরকে সহায়তা দিতে পারে। একারণে দুই দশক জুড়ে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে ব্যর্থতার পর চীনকে টার্গেট করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

      তৃতীয়তঃ চীনকে টার্গেট করলেও চীনের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে পুরোপুরিভাবে নিজেদের পক্ষে আনতে পারেনি। কারণ ইউরোপ চীনের উপর অর্থনৈতিকভাবে যথেষ্টই নির্ভরশীল। যদি চীনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র হয়তো বেঁচে যাবে; কারণ যুক্তরাষ্ট্রের প্রচুর সম্পদ রয়েছে এবং দুনিয়ার রিজার্ভ কারেন্সি মার্কিন ডলার যুক্তরাষ্ট্রের নিজের ছাপানো মুদ্রা। কিন্তু যুদ্ধ হলে ইউরোপের বারোটা বেজে যাবে। অন্ততঃ ২০০১ সালের পর থেকে তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধ, ২০০৮ সালের ইকনমিক ক্রাইসিস এবং ২০২০-২১ সালের করোনা মহামারির পর ইউরোপের অর্থনীতি একেবারেই দুর্বল অবস্থানে রয়ে গেছে। এর উপর ২০২২ সালে আবার শুরু হয়েছে ইউক্রেন যুদ্ধ; যার ফলে অবস্থা আরও খারাপ হয়েছে। এই ক্রাইসিসগুলির সাথে আরও ছিল ২০১১এর আরব বসন্তের পর ইউরোপে অভিবাসীদের ঢল; যার ফলে পুরো ইউরোপজুড়ে ডানপন্থী রাজনীতি শক্তিশালী হয়েছে। এর ফলে ইউরোপের কোন দেশের পার্লামেন্টেই কোন বিষয়েই এগ্রিমেন্ট হচ্ছে না। ইউক্রেন যুদ্ধের ক্ষেত্রেও সেটাই হচ্ছে। এরকম ভঙ্গুর অর্থনৈতিক এবং রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে চীনের বিপক্ষে ইউরোপকে যুক্তরাষ্ট্রের নিজের পক্ষে নিয়ে আসাটা কঠিন। অর্থাৎ চীনের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে ইউরোপ যুক্তরাষ্ট্রের সাথে এগ্রিমেন্টে নেই।

      চতুর্থতঃ ইউরোপ জানে যে, এই মুহুর্তে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করতে পারার মতো পশ্চিমা দেশ একটাই - ব্রিটেন। যদিও ইউরোপিয়রা (বিশেষ করে জার্মানি এবং ফ্রান্স) ব্রিটেনকে বিশ্বাস করে না; তথাপি তাদের ব্রিটেনের উপর নির্ভর করা ছাড়া গত্যন্তর নেই। ব্রিটেন ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যে তার প্রভাব খাটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের নীতিকে প্রভাবিত করছে।

      পঞ্চমতঃ যুক্তরাষ্ট্র চাইছিলো রাশিয়াকে ইউরোপে আটকে রেখে চীনের সাথে সংঘাত শুরু করা। ওয়াশিংটনে অনেকেই ২০২৬-২৭ সালের কথা বলতে শুরু করেছেন তাইওয়ান যুদ্ধের সম্ভাব্য সময় হিসেবে। রাশিয়াকে ইউরোপে আটকে রাখার প্রধান ফর্মুলাই হলো ইউক্রেন যুদ্ধ। এই যুদ্ধের শুরুতে ফ্রান্স এবং জার্মানি রাশিয়ার বিপক্ষে যেতে চাইছিলো না। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের চাপে তারা বাধ্য হয়েছে; এবং ব্রিটেনও তাদেরকে রাজি করিয়েছে। ব্রিটেন এক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রাখছে। লন্ডন চাইছে ইউক্রেন যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রকে জড়িয়ে রাখতে; যাতে করে ওয়াশিংটন একচ্ছত্রভাবে চীনের বিরুদ্ধে যুদ্ধপ্রস্তুতি নিতে না পারে।

      ষষ্ঠতঃ ব্রিটেন জানে যে, চীনের সাথে যুদ্ধ শুরু হলে ব্রিটেনের অর্থনীতি শূণ্যের কোঠায় চলে যাবে। এইকারণে ব্রিটেন একদিকে যেমন যুক্তরাষ্ট্রকে ইউক্রেনে, তথা ইউরোপে বেঁধে রাখতে চাইছে, তেমনি তারা যুক্তরাষ্ট্রকে মধ্যপ্রাচ্যেও বেঁধে রাখতে চাইছে। যুক্তরাষ্ট্র যতবারই মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করছে, ততবারই তারা আবারও ফিরে আসতে বাধ্য হচ্ছে। ব্রিটেনের এই খেলায় লন্ডনের পক্ষে বন্ধুর অভাব নেই। কারণ মধ্যপ্রচ্যের বেশিরভাগ দেশই চায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে থাকুক। ইস্রাইল চায় যুক্তরাষ্ট্র তাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব এবং নিরাপত্তা দিক। সৌদিরা চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদেরকে নিরাপত্তা দিক। ইরান চায় যুক্তরাষ্ট্র তাদের উপর থেকে অর্থনৈতিক অবরোধ তুলে নিক; যেকারণে সে সর্বদাই যুক্তরাষ্ট্রের সাথে দরকষাকষিতে যেতে চায়; যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য ত্যাগ করলে সে যুক্তরাষ্ট্রকে সেখানে টেনে নিয়ে আসে। ফিলিস্তিনিরা চায় যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে থাকুক; কারণ যুক্তরাষ্ট্র চলে গেলে ফিলিস্তিন রাষ্ট্র নিয়ে আর কেউ কথা বলবে না। ভুলে গেলে চলবে না যে, 'টু-স্টেট' কনসেপ্টটা ওয়াশিংটনের। এসকল কারণেই যুক্তরাষ্ট্র যখনই মধ্যপ্রাচ্য ছেড়ে চলে যেতে উদ্যত হয়, তখনই মধ্যপ্রাচ্যে একটা ক্রাইসিস লেগে যায় এবং আমেরিকা আবারও এখানে ফিরে আসতে বাধ্য হয়।

      পুরোটাই স্বার্থের খেলা।

      Delete
  3. মধ্যপাচ্য ইস্যুর বাইরে একটা প্রশ্ন করতে চাচ্ছি, দয়া করে উওর দিবেন। গত দিন নিউজে ঢালাওভাবে প্রচার হতে দেখলাম, ইলন মাস্কের প্রতিষ্ঠান space-x রকেটের বোস্টার ক্যাচ করাটা অবর্ণনীয় সাফল্যের অংশীদার। আর এদিকে আমাদের রাষ্ট্রের কেনো সদিচ্ছা তৈরি হচ্ছে না।আমরা কেনো পারছি না মহাকাশ গবেষণা, নিউক্লিয়ার পাওয়ারপ্লান্ট, পারমাণবিক স্থাপনা,ভারী শিল্পকারখানা,টেক জায়ান্টের মতো শিল্পগুলো সাইন্টিফিক রিসার্চ ইনস্টিটিউট তৈরি করতে। এটা খুবই দুঃখজনক যে আমাদের মেধাবী সন্তানেরা গণহারে brain drain হয়ে যাচ্ছে কিন্তু রাষ্ট্রের শক্তিশালী কাঠামোতে বিল্ড আপ করার সক্ষমতা রাখে?? অন্যের কাছে হাতপাতার চেয়ে নিজেদের ব্রেইনকে কাজে লাগানোটা কি রাষ্ট্রের ইনস্টিটিউটগুলো বুঝার সময় হয় নি??কেন মূর্খতার পরিচয় দিচ্ছে বারবার??রাষ্ট্র জনগণকে আবর্জনা হিসেবে দেখলেই তখন এরকমটা সম্ভব।

    ReplyDelete
    Replies
    1. এটা রাষ্ট্রের কোন লক্ষ্য না থাকার কারণে রয়েছে। এব্যাপারে এই ব্লগে বহু লেখা রয়েছে। আপনি 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' বইটা পড়তে পারেন। এই বইয়ে একটা বড় অংশের আলোচনা এই বিষয়কে নিয়ে।

      আপাততঃ এই ব্লগের কিছু লেখার লিঙ্ক নিচে দেয়া হলো -
      https://koushol.blogspot.com/2016/12/21st-century-brain-flow-direction.html
      https://koushol.blogspot.com/2016/12/nurturing-creativity.html
      https://koushol.blogspot.com/2016/11/what-is-working-for-state.html
      https://koushol.blogspot.com/2017/01/energy-bay-of-bengal-powerful-state.html
      https://koushol.blogspot.com/2017/02/who-will-use-my-brain.html
      https://koushol.blogspot.com/2017/03/powerful-state-powerful-jute.html
      https://koushol.blogspot.com/2017/10/bangladesh-defence-industry-when.html

      Delete
  4. হিটলার তার ভিশনকে পরিপূর্ণ করার জন্য খুব দ্রুতই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি মানুষকে দেখিয়েছে ও শিখেয়েছে বাট প্রশ্ন হচ্ছে আমাদের কি এটা বলা উচিত যে হিটলারের মতো আসলে লোক প্রয়োজন যে কিনা তার নিজ রাষ্ট্রের ভিশনকে এগিয়ে নেবার জন্য ইনোভেশন তৈরি করেছে একইসাথে বোমা মেরে মানুষকে মেরেছে।

    এক্ষেএে ইনোভেশনের সম্পর্ক কি শুধু সভ্যতার মানদণ্ড বলা যায়?? অনেক রাষ্ট্রই আছে যাদের ভিশন আছে আবার অন্যের আদর্শ ফেরি করে বেড়ায়? বুঝতে চাচ্ছি ইনোভেশনের সাথে সম্পর্কটা আসলে কি???
    একটু কনফিউশন লাগতেছে,একটু ক্লিয়ার করবেন প্রশ্নগুলোর উওর দিয়ে

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইনোভেশন কোন চিন্তা নয়; চিন্তা বাস্তবায়নের টুল। হিটলারের ইনোভেশন ছিল তার 'লিবেনস্ট্রম' চিন্তার বাস্তবায়ন। হিটলার এবং তার নাজি পার্টি এমন একটা জাতীয়াতাবাদী চিন্তা ধারণ করেছিলো, যার কেন্দ্রে ছিল জার্মান জাতির জাতিগত সুপেরিয়রিটি। তারা মনে করতো যে, তাদের পূর্বে থাকা স্লাভিচদের জন্মই হয়েছে জার্মানদের দাস হিসেবে কাজ করার জন্যে। একারণে তারা 'ড্রাং নাখ অস্টেন' বা 'পূর্ব দিকে চলো' নীতি বাস্তবায়নের চেষ্টা করেছে। সেই লক্ষ্যে তারা তাদের সকল কাজ করেছে - ইনোভেশন করেছে, গণহত্যা করেছে এবং ইউরোপের বহু জাতির উপর জুলুম করেছে। এরূপ জাতীয়তাবাদী চিন্তা প্রকৃতপক্ষে সবচাইতে নিকৃষ্ট চিন্তা; যা মানুষকে তার প্রবৃত্তির দাস বানিয়ে ফেলে এবং শেষ পর্যন্ত সকলের জুলুমের কারণ হয়। জাতীয়বাদ থেকে কোন আদর্শ আসে না; কোন ইকনমিক, সোশাল সিস্টেম আসে না। জাতীয়তাবাদী যেকোন রাষ্ট্রকে অন্য আদর্শ থেকে এসকল ব্যবস্থা ধার করে নিতে হয়; যার ফলশ্রুতিতে জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র সর্বদাই আদর্শিক রাষ্ট্রের কর্মকান্ডের রিয়্যাকশন হিসেবে নিজের কর্মকান্ডকে সাজাবে।

      Delete