পশ্চিমা লিবারাল মিডিয়া গত কিছুদিনের সংবাদ প্রচার করতে গিয়ে হিমসিম খেয়েছে। জার্মানির মিউনিখে নিরাপত্তা সন্মেলনে মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভ্যান্সের ইউরোপের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানো; সৌদি আরবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধে ইউক্রেন ও ইউরোপকে বাদ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মাঝে আলোচনা; এবং হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে মিডিয়ার সন্মুখে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সাথে মারাত্মক ঝগড়ার পর হোয়াইট হাউজ থেকে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলদিমির জেলেন্সকিকে বের করে দেয়া - এই ঘটনাগুলি পুরো বিশ্বব্যবস্থায় বিরাট পরিবর্তনের আভাস দিচ্ছে। পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা বলছেন যে, সোভিয়েত ইউনিয়নের পতনের পর গত ৩৫ বছরে এতবড় পরিবর্তন আসেনি। কারণ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গত ৮০ বছর ধরে চলা পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত লিবারাল বিশ্বব্যবস্থা আজকে মৃত বলেই ধরে নেয়া যায়।
ইউক্রেনের জন্যে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা এখানেই শেষ!
মার্কিন ইন্টেলিজেন্স সংস্থা 'সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্স এজেন্সি' বা 'সিআইএ'র প্রাক্তন ডেপুটি ডিরেক্টর জন ম্যাকলাঘলিন নিরাপত্তা ম্যাগাজিন 'সাইফার ব্রীফ'এর সাথে কথা বলতে গিয়ে বলছেন যে, ট্রাম্পের ইউক্রেন নীতিতে ইউরোপিয়দের মাঝে একতাবদ্ধ হবার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে ঠিকই; তবে সেটার অর্থ আসলে কি হবে, সেটা এখনও নিশ্চিত নয়। রাশিয়ার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার চ্যালেঞ্জগুলি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেন্সকি ছাড়া ইউরোপের আর কোন নেতৃত্বের বুঝতে পারার কথা নয়। কারণ জেলেন্সকি রাশিয়ার বিরুদ্ধে তিন বছর ধরে যুদ্ধ করছেন। একমাত্র তিনিই জানেন রাশিয়ার সামরিক আগ্রাসন কিভাবে মোকাবিলা করতে হবে। ইউরোপ রাশিয়ার হুমকি বোঝে না তা-ও কিন্তু নয়। ইউরোপের কিছু অপারেশনাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। ইউরোপের সকল দেশের অস্ত্রই ন্যাটোর স্ট্যান্ডার্ড মেনে তৈরি করা। কিন্তু সমস্যা হলো, সেখানে সকলেই আলাদা আলাদা অস্ত্র তৈরি করেছে; এবং সেগুলি একটা আরেকটার সাথে যায় না। শুধুমাত্র ন্যাটোর অধীনেই তারা একত্রে যুদ্ধ করার ক্ষমতা রাখে। ন্যাটোকে বাদ দিয়ে তারা যুদ্ধ করার মতো একত্রিত ইউরোপিয় সামরিক বাহিনী মোতায়েন করতে পারবে কিনা, তাতে সন্দেহ রয়েছে। আবার ইউক্রেনকে বাদ দিয়ে ইউরোপের নিজস্ব সামরিক বাহিনী তৈরি করাটাও অদ্ভুত ঠেকছে। কারণ এই মুহুর্তে ইউরোপের সবচাইতে শক্তিশালী সামরিক বাহিনী রয়েছে ইউক্রেনের। ইউক্রেন চাইলে পুরো ইউরোপ নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়ে একেবারে ফ্রান্সের আটলান্টিক উপকূল পর্যন্ত যাবার সক্ষমতা রাখে। ইউক্রেনে যুদ্ধবিরতি বজায় রাখার জন্যে একটা ইউরোপিয় বাহিনীর কথা বলা হচ্ছে। এই মুহুর্তে এই বাহিনী বলতে যা বোঝা যায় তা হলো কয়েকটা ব্রিগেডের একটা বাহিনী যা রাশিয়ার সাথে সীমানায় টহল দেয়ার কাজ করতে পারে। যুক্তরাষ্ট্র ইতোমধ্যেই বলে দিয়েছে যে, কোন মার্কিন সেনা এই বাহিনীতে থাকবে না। তথাপি যুক্তরাষ্ট্রকে এই বাহিনীর পিছনে গ্যারান্টি দিতে হবে। কারণ এই বাহিনী যদি রাশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সেটা ট্রাম্পের জন্যে একটা মারাত্মক রাজনৈতিক পরাজয় হিসেবে আবির্ভূত হবে। কাজেই পুতিন রাজি হোক আর না হোক, যুক্তরাষ্ট্রকে শক্তভাবে বলতেই হবে যে, ইউরোপিয়দের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত সমর্থন রয়েছে এবং রাশিয়া চুক্তি ভঙ্গ করলে যুক্তরাষ্ট্র শক্ত অবস্থান নেবে। তবে খুব সম্ভবতঃ এখন থেকে যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের সম্পর্ক নতুন করে সংজ্ঞায়িত হবে।
হোয়াইট হাউজের ওভাল অফিসে জেলেন্সকির সাথে ট্রাম্পের ঝগড়ার পর লিবারাল ঘরানার মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ এবং 'ইউরেশিয়া গ্রুপ'এর প্রতিষ্ঠাতা ইয়ান ব্রেমার 'জি-জিরো মিডিয়া'তে বলছেন যে, ট্রাম্পের কথাগুলি জেলেন্সকি মেনে নিতে পারেননি এবং ট্রাম্পকে প্রতিরোধের চেষ্টা চালিয়েছিলেন। এটা ট্রাম্পের অতি উঁচু দম্ভের সাথে সংঘর্ষ সৃষ্টি করেছে এবং এরপর ট্রাম্প মূলতঃ জেলেন্সকিকে হোয়াইট হাউজ থেকে বের করে দিয়েছেন। অন্য কথায় বলতে গেলে, ইউক্রেনের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের একটা দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। এখন অনেকেই হয়তো বলবেন যে, যুক্তরাষ্ট্রের সাথে ইউক্রেনের সম্পর্ককে জোড়া লাগাতে হলে জেলেন্সকিকে পদত্যাগ করতে হতে পারে। আর গত কয়েক বছরে ইউরোপের কর্মকান্ডে যা বোঝা গেছে তা হলো, ইউরোপিয়রা যতটা বলে, ততটা করে না। অনেক কথার পরেও ইউরোপের সকল দেশ তাদের প্রতিরক্ষা বাজেটকে জিডিপির ২ শতাংশেই নিয়ে যেতে পারেনি। তাদের একেক দেশের একেক এজেন্ডা এবং একেক বাজেট। তাদের পক্ষে একটা একত্রিত সামরিক শক্তি গঠন করে যুক্তরাষ্ট্রকে প্রতিস্থাপিত করা খুবই কঠিন। কাজেই যুক্তরাষ্ট্র যখন ইউক্রেনকে ছেড়ে যাচ্ছে, তখন মনে হচ্ছে না যে, ইউরোপ ইউক্রেনকে বেশিদূর নিয়ে যেতে পারবে। অন্ততঃ এখনও পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রকে ছাড়া ইউরোপ ভূরাজনৈতিক দিক থেকে শক্তিশালী হবার ক্ষমতা রাখে না।
ট্রাম্প ইউরোপ, বিশেষ করে ব্রিটিশদেরকে বাদ দিয়ে পুতিনের সাথে আলোচনায় বসেছেন – এই ব্যাপারটা ব্রিটিশরা মোটেই ভালো চোখে দেখেনি। ব্রিটিশ থিঙ্কট্যাঙ্ক 'রয়াল ইউনাইটেড সার্ভিসেস ইন্সটিটিউট' বা 'রুসি'র প্রাক্তন ডিরেক্টর জেনারেল মাইকেল ক্লার্ক ব্রিটিশ মিডিয়া 'স্কাই নিউজ'কে বলছেন যে, ইউক্রেনে যা দেখা যাচ্ছে, তা হলো ঐতিহাসিক মাত্রার ঐতিহাসিক এক বিশ্বাসঘাতকতা। ইউক্রেন তার ২০ শতাংশ ভূমি হারাবে ঠিকই; কিন্তু পশ্চিমা বিশ্ব তাদের শতভাগ রাজনৈতিক বিশ্বাসযোগ্যতা হারাবে। একত্রিতভাবে পশ্চিমা বিশ্ব বলতে যা এতদিন বোঝাতো, সেটা এখন মৃত; আন্তর্জাতিক আইন এখন মৃত। এগুলি গত তিন-চার বছর ধরেই নিম্নগামী ছিল। তবে গত দুই সপ্তাহে এর কফিনে শেষ পেরেক ঠোকা হয়ে গেছে। তিনি বলছেন যে, এখন বিশ্ব রয়েছে নব্য সাম্রাজ্যবাদের মাঝে; ট্রাম্প, পুতিন এবং শি জিনপিং দুনিয়াটাকে নতুন একটা ব্যবস্থার মাঝে নিয়ে আসতে চাইছে আগামী দেড়-দুই বছরের মাঝে। ট্রাম্প মূলতঃ বোঝেন বাণিজ্য এবং তিনি মার্কিন অর্থনীতিকে দুনিয়ার সবচাইতে শক্তিশালী অর্থনীতি হিসেবে দেখতে চান। এবং একইসাথে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ভৌগোলিক আকৃতিও বড় করার ইচ্ছা ব্যক্ত করেছেন। প্রকৃতপক্ষে এরা তিনজনই তাদের রাষ্ট্রের ভৌগোলিক আকৃতিকে বড় করার ঘোষণা দিয়েছেন। ট্রাম্প এই তিন দেশের পারমাণবিক অবস্থানকে কমিয়ে ফেলার দিকে এগুতে চাইছেন। ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরষ্কার চান এবং মাউন্ট রাশমোরএর মাঝে তার একটা প্রতিকৃতি থাকুক, সেটাও চান। তিনি ইউক্রেন, গাজা, তাইওয়ান এবং ন্যাটো নিয়ে চিন্তা করেন না। সুতরাং সামনের চার বছরে এরূপ অন্ধকারের মাঝে পতিত হতে যাচ্ছে বিশ্ব।
যুক্তরাষ্ট্র এখন নতুন বিশ্বব্যবস্থা গড়ার চেষ্টায় রয়েছে
ট্রাম্পের কর্মকান্ডকে স্বাভাবিক আখ্যা দিয়ে পুরো বিষয়টাকে যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের অংশ বলে আখ্যা দিয়েছেন মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ জর্জ ফ্রীডম্যান। মার্কিন থিংকট্যাঙ্ক 'জিওপলিটিক্যাল ফিউচার্স'এর এক পডকাস্টে তিনি বলছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি হওয়া বিশ্বব্যবস্থাকে এখন আর টিকিয়ে রাখা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বকে লিবারাল চিন্তার অধীনে আনার পশ্চিমা প্রকল্প ছিল কল্পনার জগতের একটা চিন্তা। একারণেই যুক্তরাষ্ট্র এই বিশ্বব্যবস্থাকে ভেঙ্গে ফেলছে। ট্রাম্পের কর্মপদ্ধতি খুবই উদ্ভট; কিন্তু তিনি যা করছেন, তার পিছনে যথেষ্ট যুক্তি রয়েছে। ইউক্রেনের প্রতি আমেরিকার কোন ভালোবাসা নেই। কঠোর বাস্তবতা হলো, ইউক্রেন ছিল একটা ভূরাজনৈতিক খেলার মাঠ। ইউরোপিয়দের মাঝে অনেকেরই, বিশেষ করে ব্রিটিশদের মাঝে অনেকেরই ইউক্রেনের জন্যে ভালোবাসা রয়েছে। কিন্তু কেউই প্রকৃতপক্ষে ইউক্রেনকে রক্ষা করতে জীবন দিতে প্রস্তুত নয়। রাশিয়া ইউক্রেনের মতো প্রায় তৃতীয় বিশ্বের একটা সামরিক শক্তিকে তিন বছরে হারাতে ব্যর্থ হয়েছে এবং এতে তাদের সামরিক সক্ষমতা কতটুকু তা এখন প্রমাণিত। রাশিয়া ইউক্রেন যুদ্ধে হেরে গেছে; তাই রাশিয়াকে শত্রু ভেবে অনেক কিছু করার সময় এখন নয়। ন্যাটোর সৃষ্টি হয়েছিল রাশিয়াকে আটকে রাখার জন্যে; যখন রাশিয়া ইউরোপের জন্যে একটা বড় হুমকি ছিল। এখন রাশিয়া ইউরোপের জন্যে কোন হুমকি নয়; তাই ন্যাটোরও এখন কোন প্রয়োজন নেই। ফ্রীডম্যান বলছেন যে, ইউক্রেনের চাইতে মধ্যপ্রাচ্য অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। আর তাই রাশিয়ার সাথে যুক্তরাষ্ট্রের আলোচনা হয়েছে সৌদি আরবে। এই আলোচনা শুধু ইউক্রেন নিয়ে নয়; এখানে মধ্যপ্রাচ্যও রয়েছে। এই আলোচনা নতুন বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে। এই পরিকল্পনায় যুক্তরাষ্ট্র ইউরোপকে বাদ দিয়েছে বলেই ইউরোপে এতটা হৈচৈ শুরু হয়েছে। তিনি বলছেন যে, মধ্যপ্রাচ্য হলো সারা দুনিয়ার জ্বালানি সরবরাহের সবচাইতে বড় উৎস। মধ্যপ্রাচ্যকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে যুক্তরাষ্ট্রের সৌদি আরবকে প্রয়োজন। আর গাজা দখলের মতো আশ্চর্য্য পরিকল্পনা না নিয়ে আসলে হয়তো সৌদিদেরকে দিয়ে ট্রাম্প কাজ করাতে পারতেন না। তবে ফ্রীডম্যানের কথাগুলির মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার ছিল নতুন বিশ্বব্যবস্থা নিয়ে। তিনি বলছেন যে, চীনের জন্যে সবচাইতে বড় হুমকি হলো যুক্তরাষ্ট্রের সাথে রাশিয়ার সম্পর্কোন্নয়ন। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে এর মাধ্যমে চীনের উপর চাপ সৃষ্টি করে চীনের কর্মকান্ডে পরিবর্তন নিয়ে আসা। অর্থাৎ অভ্যন্তরীণভাবে চীনকে পরিবর্তন করা; বিশেষ করে চীনা সরকারের ক্ষমতাকে বিকেন্দ্রীকরণ করে বেসরকারি সেক্টরকে শক্তিশালী হতে সহায়তা করা; যাতে করে চীন পশ্চিমা পুঁজিবাদী চিন্তাকে আরও শক্তভাবে ধারণ করে।
মার্কিন ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদ রবার্ট ক্যাপলান ব্রিটিশ কনজারভেটিভ ঘরানার মিডিয়া 'স্পেকট্যাটর'এর সাথে কথা বলতে গিয়ে বলছেন যে, ট্রাম্প যে স্বর্ণযুগের কথা বলছেন, তা প্রকৃতপক্ষে যুক্তরাষ্ট্রের নিম্নগামীতারই একটা অংশ। অপরদিকে চীনের দিকে তাকালে দেখা যায় যে, চীনের অভ্যন্তরীণ অনেক সমস্যা রয়েছে। বিশ্বের সকল গ্রেট পাওয়ার রাষ্ট্রই ধীরে ধীরে দুর্বল হচ্ছে। আর ইউক্রেন যুদ্ধ ছিল রাশিয়ার সাম্রাজ্যবাদী চিন্তার কবর। এই যুদ্ধের কারণে রাশিয়া মধ্য এশিয়া, ককেশাস, সাইবেরিয়া এবং পূর্ব এশিয়াতে প্রভাব বিস্তারের সক্ষমতা হারিয়েছে। তিনি বলছেন যে, কেউই চায় না কোন গ্রেট পাওয়ার রাষ্ট্র তাদেরকে নিয়ন্ত্রণ করুক। কিন্তু এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, গ্রেট পাওয়ার বিশ্বকে একটা ব্যবস্থার মাঝে রাখে। গ্রেট পাওয়ার ব্যতীত বিশ্ব হলো অব্যবস্থার মাঝে থাকা একটা বিশ্ব। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গঠিত হওয়া বিশ্বব্যবস্থা প্রায় ৮০ বছর টিকেছে; যা আসলে অনেক বেশি। তবে খুব সম্ভবতঃ সেই বিশ্বব্যবস্থা এখন শেষ হয়ে যাচ্ছে। ক্যাপলান বলছেন যে, গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে সংখ্যাগরিষ্ঠের একচ্ছত্র অধিকার প্রতিষ্ঠা হয়ে যেতে পারে। ব্রিটিশ সাংবাদিক এবং প্রাক্তন কনজারভেটিভ রাজনীতিবিদ মাইকেল গোভ 'স্পেকট্যাটর'কে বলছেন যে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর তৈরি বিশ্বব্যবস্থায় অনেকগুলি বহুপাক্ষিক সংস্থা তৈরি করা হয়েছিল; যেগুলি ঠান্ডা যুদ্ধের সময় সোভিয়েত ইউনিয়নকে নিয়ন্ত্রণ করেছে, অথবা তথাকথিত সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধের সময় ব্যবহৃত হয়েছে। বর্তমানে এই হুমকিগুলি নেই এবং এই সংস্থাগুলি নিজেদের অস্তিত্ব ধরে রাখার জন্যে যুক্তি হারাচ্ছে। ট্রাম্প প্রশাসন মনে করছে যে, এই সংস্থাগুলি যুক্তরাষ্ট্রের সম্পদকে ব্যবহার করে যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছে।
যে ব্যাপারটা নিয়ে পশ্চিমা চিন্তাবিদেরা পুরোপুরিভাবে একমত তা হলো, পশ্চিমা লিবারাল বিশ্বব্যবস্থার মৃত্যু হয়েছে! দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে গত ৮০ বছর ধরে চলা এই বিশ্বব্যবস্থার কেন্দ্রে ছিল পশ্চিমা দেশগুলির জোট এবং তাদের তৈরি করা বিভিন্ন সংস্থা; যেগুলি গত কয়েক বছর ধরে দুর্বল হতে থাকলেও ডোনাল্ড ট্রাম্পের দ্বিতীয়বার হোয়াইট হাউজে আসার সাথে সাথে এগুলি অকার্যকর হয়ে গিয়েছে। পশ্চিমা জোটের কেন্দ্রে থাকা ন্যাটো নিরাপত্তা জোট আজ নামমাত্র দাঁড়িয়ে আছে। কারণ যেই রাশিয়াকে আটকানোর জন্যে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই রাশিয়া আজকে দুর্বল। আর যেই জার্মানিকে নিয়ন্ত্রণের জন্যে ন্যাটো তৈরি করা হয়েছিল, সেই জার্মানি আজকে এতটাই দুর্বল যে, জর্জ ফ্রীডম্যান বলছেন যে, জার্মান নির্বাচন নিয়ে কেউ চিন্তিতই নয়। আর যুক্তরাষ্ট্র যদি ইউরোপ থেকে তার সৈন্য সরিয়ে নেয়, তাহলে ন্যাটো অর্থহীন হয়ে যাবে। যুক্তরাষ্ট্র চাইছে রাশিয়ার সাথে সম্পর্কোন্নয়ন করে চীনকে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসতে; যাতে করে নতুন একটা বিশ্বব্যবস্থা তৈরি করা সম্ভব হয়। যদিও সবচাইতে শক্তিশালী দেশ হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র শক্তি প্রদর্শন করতেই পারে, তথাপি পশ্চিমা ভূরাজনৈতিক চিন্তাবিদেরা বেশিরভাগই একমত যে, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি এখন নিম্নগামী; তাই যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষে অনেক কিছু করা সম্ভব না-ও হতে পারে। মোটকথা, পুরো বিশ্ব আজ চরম উৎকণ্ঠার মাঝে দাঁড়িয়ে আছে বড় ধরণের একটা পরিবর্তনের দাঁড়প্রান্তে।
No comments:
Post a Comment