ত্রিপুরা থেকে আসা পানিতে যখন বাংলাদেশের অর্ধলক্ষ মানুষ বন্যার পানিতে ভাসছে, তখন আলোচনাটা এটা নয় যে, বৃষ্টির পানিতে বন্যা হয়েছে, নাকি ত্রিপুরার জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের বাঁধ ভেঙ্গে বন্য হয়েছে। যে ব্যাপারটা বেশি গুরুত্বপূর্ণ তা হলো, ১৯৮০এর দশকে ভারত যখন অভিন্ন নদীর উপর এই বাঁধ দিয়েছিল, তখনই খরা বা বন্যার দায়ভার ভারতের উপর চলে গেছে। তিন দশকে প্রথমবারের মতো যখন এই বাঁধ খুলে দেয়া হয়েছে, তখন প্রশ্নটা দাঁড়াচ্ছে যে, ভারত কি না বুঝে এই কাজ করেছে, নাকি ইচ্ছাকৃতভাবে বাংলাদেশের দুর্বল সময়ে রাষ্ট্রকে চাপের মাঝে ফেলতে এই ছলচাতুরির আশ্রয় নিয়েছে? প্রথমতঃ ভারত এতটা অবুঝ নয় যে, তারা বুঝবে না যে, উজানের বাঁধ খুলে দিলে বাংলাদেশে কি হবে। আর গত পাঁচ দশকে পঞ্চাশের অধিক অভিন্ন নদীতে বাঁধ দিয়ে শুষ্ক মৌসুমে পানি প্রত্যাহার এবং বর্ষায় বাঁধ খুলে দিয়ে ভারত চরম অমানবিকতার উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। বৃষ্টির সময়ে বাঁধের দরজা খুলে দেয়াটা ভারতের জন্যে নিতান্তই স্বাভাবিক ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে। দ্বিতীয়তঃ সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারতের হস্তক্ষেপ নিয়ে আলোচনা তুঙ্গে। বাংলাদেশে পনেরো বছর ধরে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ সরকারকে ভারত সরাসরি সমর্থন দিয়ে গিয়েছে নিজেদের স্বার্থেই; এমনকি যখন আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তায় মারাত্মক ভাটা পড়েছিল এবং ক্ষমতায় টিকে থাকতে তারা চরম সহিংসতার আশ্রয় নিচ্ছিলো, তখনও ভারত বাংলাদেশের জনগণের ইচ্ছের বিরুদ্ধেই তাদেরকে সমর্থন দিয়ে গিয়েছে। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আশ্রয় দিয়ে এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করে ভারত নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির নতুন এক নজিরও স্থাপন করেছে। এমতাবস্থায় ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দেয়াটা এমনি-এমনিই ঘটেছিল – এটা কোন সুস্থ্য মস্তিষ্কের মানুষ বিশ্বাস করবে না।
ভারত একটা দুর্বল রাষ্ট্র। ১৯৪৭ সালে জন্মের পর থেকে ব্রিটিশদের ডিজাইন অনুযায়ী ভারত বিভিন্ন প্রকারের নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। তার মাঝে একটা হলো, না জানি ভারতের আশেপাশের দেশগুলি (বিশেষ করে পাকিস্তান এবং বাংলাদেশ) ভারতকে কয়েক খন্ডে ভাগ করে ফেলতে চেষ্টা করে। এই ভীতির উপর স্থাপিত বলেই ভারত সর্বদাই তার আশেপাশের দেশগুলির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে হস্তক্ষেপ করতে চেষ্টা করে; বাংলাদেশও এর ব্যতিক্রম নয়। ভারতের সবচাইতে বড় ভয় হলো, বাংলাদেশে এমন কোন সরকার ক্ষমতায় আসা, যে কিনা ভারতের ভৌগোলিক অখন্ডতাকে চ্যালেঞ্জ করবে। তবে গত পাঁচ দশকের অভিজ্ঞতা ভারতকে শিখিয়েছে যে, বাংলাদেশের সরকারগুলি বেশিরভাগ সময়েই হয় ভারতের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রেখে চলে, অথবা ভারত-বিরোধী কিছু বুলির মাঝেই নিজেদের কর্মসম্পাদনকে সীমাবদ্ধ করে রাখে। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সাত রাজ্যের বিচ্ছিন্নতাবাদীদের অস্ত্র দেয়ার চেষ্টাটাও একবার করা হয়েছিল; যার ফলাফল বাংলাদেশের রাজনীতিবিদদের জন্যে নেগেটিভ উদাহরণ হয়ে রয়েছে। এই ইতিহাসই দুর্বল ভারতকে বাংলাদেশের ব্যাপারে কঠোর সিদ্ধান্তে যেতে শক্তি যুগিয়েছে। তারা বাংলাদেশে কে ক্ষমতায় থাকবে সেব্যাপারে যেমন সরব, তেমনি বাংলাদেশ সরকারের ভারত নীতিকে প্রভাবিত করতেও তারা যথেষ্টই সচেষ্ট। বিশেষ করে চীনকে নিয়ন্ত্রণে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে জোট বাঁধার পর থেকে ভারত আরও সাহসী হয়েছে। যদিও বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তনে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে সাথে রাখেনি, তথাপি যুক্তরাষ্ট্র সর্বদাই চেষ্টা করে চলেছে দক্ষিণ এশিয়াকে নিয়ন্ত্রণে ভারতকে পাশে রাখতে।
দুর্বল ভারত যখন সাহসী হয়ে উঠেছে, তখন তাকে মোকাবিলা করার মতো যথেষ্ট সক্ষমতা বাংলাদেশের রয়েছে কি? অন্ততঃ সাম্প্রতিক সময়ে সরকার পতনের আন্দোলনের সময় রাষ্ট্রের যে ভয়াবহ ক্ষতি হয়েছে, সেটা পুষিয়ে উঠে ভারতকে ঠেকিয়ে দেয়ার অবস্থানে কি যেতে পেরেছে বাংলাদেশ? উত্তরটা দেয়া বাংলাদেশের যে কারুর জন্যেই কঠিন। তবে এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ভারতের সাবভার্সন মোকাবিলায় বাংলাদেশ এখনও যথেষ্ট শক্তিশালী নয়। বিশেষ করে ত্রিপুরার বাঁধ খুলে দেয়ার ঘটনাই বলে দেয় যে, বাংলাদেশের তৈরি করা ডিটারেন্টগুলি এই মুহুর্তে ভারতকে তার সাবভার্সন চালাতে বাধা দিতে পারছে না। তাহলে ভারতকে সাবভার্সন থেকে দূরে রাখতে বাংলাদেশ কি করতে পারে? প্রথমতঃ বাংলাদেশ যদি ভারতকে সাবভার্সন থেকে সরিয়ে সামরিক ক্ষেত্রে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়, তাহলে এটা হবে প্রথম বিজয়। এটা করতে হলে বাংলাদেশকে তার ইন্টেলিজেন্স এবং অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তাকে শক্তিশালী করতে হবে। আর এই প্রচেষ্টায় যে পদক্ষেপটা সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ (সম্ভব কিংবা অসম্ভব, তা পরে আলোচিত হয়েছে) তা হলো, বাংলাদেশ থেকে ভারতের দূতাবাস এবং কনসুলেট উঠিয়ে দেয়া। এই পদক্ষেপগুলি ঠিকমতো নিতে পারলে ভারত সাবভার্সনের লাইন থেকে সরে আসতে বাধ্য হবে। দ্বিতীয়তঃ সাবভার্সন কাজ না করলে ভারত বাংলাদেশের উপর সামরিক পদক্ষেপের হুমকিতে যেতে বাধ্য হবে। সামরিক পদক্ষেপের দিকে যেতে বাধ্য করতে পারলে বাংলাদেশ তার সামরিক ডিটারেন্স তৈরিতে মনোযোগী হতে পারবে। বর্তমানে বাংলাদেশের যে ডিটারেন্স রয়েছে, তা ভারতের আগ্রাসন ঠেকানোতে মোটেই যথেষ্ট নয়। কাজেই বাংলাদেশকে নতুন করে মনোযোগী হতে হবে ডিটারেন্স তৈরিতে। কি করতে হবে সেটা প্রথমে আলোচিত হয়ে; আর এটা কিভাবে সম্ভব হবে, তা শেষে আলোচিত হয়েছে।
নতুন করে ডিটারেন্স তৈরি করা অতি জরুরি
বাংলাদেশের ডিটারেন্স হতে হবে এমন, যাতে করে দিল্লীতে ভীতির সঞ্চার হয়। যদি এটা না হয়, তাহলে অযথা অর্থ নষ্ট করার মানে হয় না। এই ডিটারেন্সের প্রথম কাজ হতে হবে শক্তিশালী বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা; যাতে করে কোন প্রকারের বিমান হামলার চিন্তাও যেন দিল্লীর কারুর মাথায় না আসে। দ্বিতীয় কাজ হতে হবে সমুদ্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা; যাতে করে বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশের সমুদ্রবন্দরগুলির উপর ভারত কোন প্রকারের অবরোধ দিতে সাহস না পায়। তৃতীয় কাজ হতে হবে স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের বহর গড়ে তোলা; যাতে করে ভারত জেনে যায় যে, ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে। চতুর্থ কাজ হতে হবে সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি করা; যাতে করে ভারত বুঝে যায় যে, বাংলাদেশের সাথে সামরিক সংঘাতে যাওয়া মানে ভারতের নিজের অস্তিত্বকে হুমকির মাঝে ফেলে দেয়া।
প্রথম ডিটারেন্ট - আকাশ প্রতিরক্ষা
প্রথম ডিটারেন্ট বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এই মুহুর্তে ৮টা 'মিগ-২৯' এবং দুই স্কোয়াড্রন 'এফ-৭'এর মাঝেই সীমাবদ্ধ। এই বিমান বাহিনী মিয়ানমারকেও ভয় দেখাতে সক্ষম নয়। বাংলাদেশের স্থল-কেন্দ্রিক বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাও শুধুমাত্র স্বল্পপাল্লার 'এফএম-৯০', অতি-স্বল্পপাল্লার কাঁধে বহণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং বিমান-ধ্বংসী কামান ব্যবস্থার মাঝে সীমাবদ্ধ। এই অবস্থার পরিবর্তন জরুরি। তবে পশ্চিমা সামরিক সরঞ্জামের উপর নির্ভর করা যাবে না; কারণ তারা একদিকে যেমন সেগুলির সাপ্লাই নিয়ন্ত্রণ করবে, তেমনি সেগুলির জন্যে রসদ সরবরাহ বাধাগ্রস্ত করবে। বিশেষ করে তাদের অস্ত্র তারা ভারতের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হতে দেবে না। এক্ষেত্রে কমপক্ষে দুই স্কোয়াড্রন এয়ার সুপেরিয়রিটি ফাইটার যোগাড় করতে হবে চীন থেকে। 'জে-১০সি' একটা ভালো অপশন হতে পারে। তবে এর সাথে 'পিএল-১২' এবং 'পিএল-১৫' ক্ষেপণাস্ত্র থাকতে হবে; না হলে এই বিমানগুলি যোগাড় করা হবে অর্থহীন।
এয়ার সুপেরিয়রিটি ফাইটারের সাথে তিন থেকে চার স্কোয়াড্রন মাল্টিরোল ফাইটার প্রয়োজন। এই ফাইটারের সক্ষমতা থাকতে হবে নিজেদের বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করার। এজন্যে মধ্যম পাল্লার আকাশ থেকে আকাশে নিক্ষেপণযোগ্য (এয়ার টু এয়ার) ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করার সক্ষমতা থাকতে হবে; এবং প্রয়োজনমতো লেজার গাইডেড বোমা, স্যাটেলাইট গাইডেড বোমা, জাহাজ-ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র, ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করতে পারবে আক্রমণে যাবার জন্যে। পাকিস্তান এবং চীনের যৌথভাবে তৈরি 'জেএফ-১৭' যুদ্ধবিমান এক্ষেত্রে একটা ভালো অপশন হতে পারে। কারণ এতে পশ্চিমা বিমানের মতো সক্ষমতা থাকলেও পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত কোন কম্পোনেন্ট নেই।
এছাড়াও প্রয়োজন কমপক্ষে তিন থেকে চার স্কোয়াড্রন ইন্টারসেপ্টর ফাইটার। এগুলি স্বল্প পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বহণ করবে; এবং শত্রুর বোমারু বিমানগুলিকে টার্গেট করবে। এগুলির ভালো ম্যানিউভার করার সক্ষমতা শত্রুর বোমারু বিমানের মিশনকে প্রভাবিত করবে। প্যাক হান্টিংএর মাধ্যমে হয় এই বিমানগুলি আক্রমণকারীদেরকে তাদের ফ্লাইট রুট পরিবর্তন করতে বাধ্য করবে, অথবা তাদেরকে দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্রের (যা সংখ্যায় স্বল্প এবং বেশি দামী) উপরে নির্ভর করতে বাধ্য করবে। এই মুহুর্তে চীনা 'এফ-৭' বিমান অনেক বড় সংখ্যায় পাওয়া সম্ভব। আর এই বিমানগুলি পরিচালনায় এবং মেইন্টেন্যান্সে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী বেশ দক্ষ। কাজেই উপরের দুই প্রকারের বিমানের মতো এগুলির সংখ্যা বৃদ্ধিতে খুব বেশি কষ্ট করতে হবে না।
এই মুহুর্তে বাংলাদেশের আকাশ-সীমানায় রাডার কভারেজ মোটামুটি রয়েছে; যদিও আরও কিছু মোবাইল গ্যাপ ফিলার রাডার প্রয়োজন। গ্রাউন্ড-বেজড বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাকে আরও শক্তিশালী করতে মধ্য উচ্চতার (১০-১৫কিঃমিঃ উচ্চতা) বিমান প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্র প্রয়োজন। এক্ষেত্রে তুরস্কের 'হিসার-ও'এর নাম আসতে পারে। দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র (১০০কিঃমিঃএর বেশি পাল্লা) হিসেবে তুরস্কের 'সিপার'এর নাম আসতে পারে। গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তার জন্যে চীনা 'এফএম-৯০' এবং সুইস 'উরলিকন জিডিএফ' ৩৫মিঃমিঃ গান সিস্টেম বা এর চাইনিজ কপি 'সিএস এএ-৩' আরও অনেক বেশি পরিমাণে প্রয়োজন। কাঁধে বহণযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র এবং ড্রোনের বিরুদ্ধে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থাও বাড়াতে হবে।
ফাইটার বিমানের পরিধি বৃদ্ধি করতে গেলে ট্রেনিং স্কোয়াড্রনগুলিকেও বড় করতে হবে। এক'শ থেকে দেড়'শ ট্রেনিং বিমান এক্ষেত্রে প্রয়োজন হতে পারে। এর মাঝে থাকবে বেসিক ফ্লাইং ট্রেনিং বিমান (পিটি-৬, গ্রোব জি-১২০পি, বিবিটি-২), বেসিক জেট ট্রেইনার (কে-৮ডব্লিউ), এডভান্সড ট্রেইনার (বর্তমানে শুধু 'ইয়াক-১৩০'; এর সাথে যুক্ত হতে পারে চীনা 'এল-১৫')।
দ্বিতীয় ডিটারেন্ট – সমুদ্র প্রতিরক্ষা
সাবভার্সন কাজ না করলে ভারত বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশকে অবরোধ দেয়ার পাঁয়তারা করবে। ভারতীয় নৌবহরকে বঙ্গোপসাগর থেকে তাড়াতে না পারলে তারা বিভিন্নভাবে তাদের অপচেষ্টা চালিয়ে যেতেই থাকবে। বিশেষ করে আন্দামান এবং নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ ব্রিটিশরা ভারতকে দিয়ে যাবার কারণে ভারত অনেকটা ধরেই নিয়েছে যে, বঙ্গোপসাগর তাদের পৈতৃক (অর্থাৎ ব্রিটিশদের কাছ থেকে প্রাপ্ত) সম্পত্তি। ভারতকে বুঝিয়ে দিতে হবে যে, বঙ্গোপসাগরে বাংলাদেশকে বাধা দেয়ার অর্থ হলো ভারতের নিজস্ব সমুদ্র যোগাযোগ ব্যবস্থা ঝুঁকির মাঝে পড়ে যাবে। এটা করতে হলে বাংলাদেশের প্রথমেই প্রয়োজন কমপক্ষে ১৬টা সাবমেরিন। এক্ষেত্রে চীনের তৈরি সাবমেরিন সর্বপ্রথমে সামনে আসবে। এই সাবমেরিনগুলির ৪টা অবশ্যই দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র বহণে উপযোগী হতে হবে; যা শত্রুর ভূমিতে অবস্থিত গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনায় আঘাত হানতে সক্ষম হবে (এটা অবশ্য তৃতীয় ডিটারেন্টের অংশ হবে)।
সাবমেরিনগুলিকে সাপোর্ট দেয়ার জন্যে প্রয়োজন হবে ১০টা এন্টি-সাবমেরিন ফ্রিগেট এবং ৪টা এয়ার ডিফেন্স ডেস্ট্রয়ার। এই ফ্লিটে থাকতে হবে দূরপাল্লার আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং শক্তিশালী সাবমেরিন প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। প্রতিটা জাহাজে শক্তিশালী সোনারের সাথেসাথে এন্টি-সাবমেরিন হেলিকপ্টারসহ সার্ভেইল্যান্স ড্রোন থাকতে হবে। এছাড়াও এর বাইরেও কমপক্ষে ১২টা জাহাজে দূরপাল্লার (২৫০-৫০০কিঃমিঃ পাল্লা) জাহাজ-ধ্বংসী ক্ষেপণাস্ত্র থাকতে হবে। তুরস্কের 'কারা আতমাজা' ক্ষেপণাস্ত্র ২৮০কিঃমিঃ পাল্লা পর্যন্ত টেস্ট করা হয়েছে। এই ক্ষেপণাস্ত্র বহণের জন্যে জাহাজগুলি ছোট বা বড়, অথবা বাণিজ্যিক জাহাজ কনভার্ট করেও হতে পারে। এসব ক্ষেপণাস্ত্রের টার্গেটিং হবে অন্যান্য যুদ্ধজাহাজ এবং সার্ভেইল্যান্স বিমানের মাধ্যমে।
তৃতীয় ডিটারেন্ট - স্বল্প ও মাঝারি পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র
কমপক্ষে ৪টা সাবমেরিনে দূরপাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র যুক্ত করতে হবে। ৫০০ থেকে ১,৫০০কিঃমিঃ বা তারও বেশি পাল্লার এসব অস্ত্র একটা গুরুত্বপূর্ণ ডিটারেন্ট হিসেবে থাকবে। আপাততঃ পাকিস্তানের 'বাবুর' ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্রের নাম উল্লেখ করা যায়; যার ওয়ারহেড ৫০০কেজি এবং পাল্লা ৯০০কিঃমিঃএর মতো। ভারত অন্ততঃ এটা বুঝবে যে, ইট মারলে পাটকেল খেতে হবে। ভূমি থেকে নিক্ষেপণ করা ক্ষেপণাস্ত্র হিসেবে তুরস্কের 'বরা' বা 'খান' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্রের উল্লেখ করা যায়; যার পাল্লা ২৮০কিঃমিঃএর মতো। এছাড়াও তুরস্ক 'তায়ফুন' ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি করেছে; যা এখনও পর্যন্ত ৫৬০কিঃমিঃ পাল্লা অতিক্রম করেছে বলে খবর পাওয়া যায়।
চতুর্থ ডিটারেন্ট – সেনাবাহিনীর শক্তি বৃদ্ধি
সেনাবাহিনীকে এমনভাবে গোছাতে হবে, যাতে করে এই বাহিনীকে ভারত এড়িয়ে চলতে বাধ্য হয় এবং কোন অবস্থাতেই এই বাহিনীর সাথে যুদ্ধে জড়াতে সাহস না পায়। সেনাবাহিনীর উত্তরবঙ্গের ইউনিটগুলিকে আরও বড় করে দু'টা কোর সম্বলিত একটা আর্মি ফর্মেশন (উত্তরবঙ্গ আর্মি) গঠন করতে হবে। বগুড়াতে গঠন করতে হবে আরমার্ড কোর; যেখানে থাকবে একটা আরমার্ড ডিভিশন এবং দু'টা মেকানাইজড ডিভিশন। বর্তমানের বগুড়া এবং রংপুরএর দু'টা ডিভিশনের সাথে আরও একটা ডিভিশন এখানে যুক্ত করতে হবে পুরো কোর গঠন করতে গেলে। এছাড়াও কোর লেভেলে স্পেশাল ফোর্স, মধ্যম পাল্লার বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, ২১০মিঃমিঃ হেভি আর্টিলারি, ১২০মিঃমিঃ মর্টার, এবং ১০০-১২০কিঃমিঃ পাল্লার রকেট আর্টিলারি, ১৫০-২০০কিঃমিঃ পাল্লার সার্ভেইল্যান্স ড্রোন থাকতে হবে। চীনা 'এমবিটি-২০০০' ট্যাংক বাংলাদেশের নরম মাটির জন্যে কতটুকু প্রযোজ্য, সেটা আরও একবার দেখা যেতে পারে। প্রয়োজনে চীনা 'ভিটি-৫' বা ইন্দোনেশিয়া ও তুরস্কের যৌথভাবে তৈরি 'কাপলান এমটি' বা 'হারিমাউ'এর মতো লাইট ট্যাংক টেস্ট করে দেখা যেতে পারে।
দ্বিতীয় কোরটা গঠন করতে হবে চলন বিলের পশ্চিম পাশে - নাটোর, নওগাঁ এবং রাজশাহীতে। এই কোরের (বরেন্দ্র কোর) অধীনে তিনটা বা চারটা ডিভিশন থাকতে হবে। দু'টা মেকানাইজড ডিভিশনের সাথে আরও দু'টা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন এখানে থাকতে পারে। এদের মূল শক্তি হবে এম্ফিবিয়াস এপিসি এবং রিভার ক্রসিং ইকুইপমেন্ট। কোরএর অধীনে এক বা দুই রেজিমেন্ট ট্যাংক থাকতে পারে। তবে ট্যাংক কম থাকলেও এই ইউনিটে সর্বোচ্চ সংখ্যক আর্টিলারি রাখা বাঞ্ছনীয়। পুরো ইউনিট যাতে বড় আকারের ওয়াটার বডি পার হতে পারে, সেই হিসেব করেই সরঞ্জামগুলিকে সাজাতে হবে। আর পুরো 'উত্তরবঙ্গ আর্মি' ফর্মেশনের অধীনে আরও একটা বা দু'টা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন থাকতে পারে; যা আর্মি ফর্মেশনের কমান্ডার প্রয়োজনমতো যেকোন কোরএর সাথে যুক্ত করতে পারবেন। এছাড়াও স্বল্প পাল্লার (৩০০কিঃমিঃএর কম) ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র এই আর্মির অধীনে দেয়া যেতে পারে।
তৃতীয় কোরটা গঠন করতে হবে কুষ্টিয়া-রাজবাড়ী অঞ্চলে; পদ্মা নদীর ঠিক দক্ষিণে (পদ্মা কোর)। এখানে ৩টা ইনফ্যান্ট্রি ডিভিশন থাকতে পারে। আর কোর ফর্মেশনের সাথে দু'টা ট্যাংক রেজিমেন্ট থাকতে পারে। এই মুহুর্তে এই অঞ্চলে যশোর এবং বরিশালে দু'টা ডিভিশন করেছে; যা পদ্মা নদীর দক্ষিণে বিশাল অঞ্চলের নিরাপত্তা প্রদানের জন্যে অপ্রতুল। একারণেই এই দুই ডিভিশের পাশাপাশি 'পদ্মা কোর' গঠন করতে হবে। মোটামুটিভাবে অতিরিক্ত আরও ১০টার মতো ডিভিশন সেনাবাহিনীতে যুক্ত করতে হবে।
লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক সম্প্রসারণ এবং সামরিক প্রযুক্তির ভিত্তি
বিমান প্রতিরক্ষা সরঞ্জামগুলির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করতে বিমান ওঠানামার রানওয়ের সংখ্যা বৃদ্ধি করতে হবে। বিশেষ করে হাইওয়েগুলির বিভিন্ন স্থানে বিমান ওঠানামা, রিফুয়েলিং এবং বিমানের ইমের্জেন্সি মেইনটেন্যান্সের ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে। এক্ষেত্রে পুরোনো বিমানবন্দরগুলি আবারও চালু করার দিকে দৃষ্টি দিতে হবে। একইসাথে বিমানের ফুয়েল এবং অন্যান্য লজিস্টিকসও শুধুমাত্র ঢাকা-কেন্দ্রিক রাখলে চলবে না।
উত্তরবঙ্গে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র একটা বা দু'টা সেতুর উপর নির্ভর করে লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা ছেলেখেলার সামিল। মূল লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক হতে হবে নদী-কেন্দ্রিক। বর্তমানে কাজ চলা নগরবাড়ি নৌবন্দরেরের মতো আরও কয়েকটা নদীবন্দর তৈরি করতে হবে ঈশ্বরদী, পাবনার কাজিপুর, ঢালারচর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়ার কাজিপুর ও সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রামের চিলমারিতে। এছাড়াও যমুনা নদীতে ব্যাপক ড্রেজিংএর মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে যমুনার পূর্বতীরে দেওয়ানগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জেও নদীবন্দর তৈর করতে হবে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী কমে গেছে - এই ছুতোয় কেউ যাতে কোন জাহাজ কেটে ফেলতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিটারেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে উপরের সকল সিদ্ধান্তই হতে হবে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করার মাধ্যমে। অর্থাৎ শুধু অস্ত্র ক্রয় নয়; অস্ত্রের সাথে কারখানাও স্থাপন করতে হবে। সামরিক সরঞ্জামের সকল কম্পোনেন্ট এবং রসদ (মিউনিশন) বাংলাদেশে তৈরি করার কারখানা স্থাপন করতে হবে। কেউ যদি বলে যে, তারা কম্পোনেন্ট নিজেরা তৈরি করে দেবে; বাংলাদেশ কম্পোনেন্ট তৈরি করতে পারবে না, তাহলে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা হবে না। যুদ্ধাবস্থার মাঝে কে কার পক্ষে থাকবে এবং কিভাবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রাখবে, সেটা কখনোই নিশ্চিত নয়। তাই কারুর মুখের কথার উপর ভিত্তি করে কাউকে অতি প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের সাপ্লাইয়ার বানানো যাবে না। সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতা থাকতেই হবে; নয়তো যুদ্ধে জড়ানোটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সামরিক ইন্ডাস্ট্রিগুলি স্থাপন করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। কয়েক হাজার প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানকে এসকল ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগ দিতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটগুলিকে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে যেসকল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে, বিশেষ করে কয়েক'শ প্রিসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা, টেকনিশিয়ান এবং সিএনসি মেশিনকে এই প্রসেসে যুক্ত করতে হবে।
উত্তরবঙ্গে সামরিক শক্তি বৃদ্ধির সাথে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক গড়ে তুলতে হবে। শুধুমাত্র একটা বা দু'টা সেতুর উপর নির্ভর করে লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক তৈরি করা ছেলেখেলার সামিল। মূল লজিস্টিক্যাল নেটওয়ার্ক হতে হবে নদী-কেন্দ্রিক। বর্তমানে কাজ চলা নগরবাড়ি নৌবন্দরেরের মতো আরও কয়েকটা নদীবন্দর তৈরি করতে হবে ঈশ্বরদী, পাবনার কাজিপুর, ঢালারচর, সিরাজগঞ্জ, বগুড়ার কাজিপুর ও সারিয়াকান্দি, গাইবান্ধা এবং কুড়িগ্রামের চিলমারিতে। এছাড়াও যমুনা নদীতে ব্যাপক ড্রেজিংএর মাধ্যমে নাব্যতা ফিরিয়ে এনে যমুনার পূর্বতীরে দেওয়ানগঞ্জ, টাঙ্গাইল এবং মানিকগঞ্জেও নদীবন্দর তৈর করতে হবে। পদ্মা সেতুর কারণে যাত্রী কমে গেছে - এই ছুতোয় কেউ যাতে কোন জাহাজ কেটে ফেলতে না পারে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।
ডিটারেন্ট তৈরির ক্ষেত্রে উপরের সকল সিদ্ধান্তই হতে হবে বাংলাদেশকে প্রযুক্তি হস্তান্তর করার মাধ্যমে। অর্থাৎ শুধু অস্ত্র ক্রয় নয়; অস্ত্রের সাথে কারখানাও স্থাপন করতে হবে। সামরিক সরঞ্জামের সকল কম্পোনেন্ট এবং রসদ (মিউনিশন) বাংলাদেশে তৈরি করার কারখানা স্থাপন করতে হবে। কেউ যদি বলে যে, তারা কম্পোনেন্ট নিজেরা তৈরি করে দেবে; বাংলাদেশ কম্পোনেন্ট তৈরি করতে পারবে না, তাহলে বাংলাদেশের স্বার্থরক্ষা হবে না। যুদ্ধাবস্থার মাঝে কে কার পক্ষে থাকবে এবং কিভাবে বাংলাদেশের সাথে সম্পর্ক রাখবে, সেটা কখনোই নিশ্চিত নয়। তাই কারুর মুখের কথার উপর ভিত্তি করে কাউকে অতি প্রয়োজনীয় সামরিক সরঞ্জামের সাপ্লাইয়ার বানানো যাবে না। সামরিক সরঞ্জামের ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেবার সক্ষমতা থাকতেই হবে; নয়তো যুদ্ধে জড়ানোটা বোকামি ছাড়া আর কিছুই নয়।
রাষ্ট্রীয়ভাবে এই সামরিক ইন্ডাস্ট্রিগুলি স্থাপন করতে যথেষ্ট পরিশ্রম করতে হবে। কয়েক হাজার প্রকৌশলী এবং টেকনিশিয়ানকে এসকল ইন্ডাস্ট্রিতে নিয়োগ দিতে হবে। ইঞ্জিনিয়ারিং বিশ্ববিদ্যালয়গুলি এবং টেকনিক্যাল ইন্সটিটিউটগুলিকে সরাসরি যুক্ত থাকতে হবে। একইসাথে বাংলাদেশে বর্তমানে বেসরকারি খাতে যেসকল ইঞ্জিনিয়ারিং শিল্প রয়েছে, বিশেষ করে কয়েক'শ প্রিসিশন ইঞ্জিনিয়ারিং কারখানা, টেকনিশিয়ান এবং সিএনসি মেশিনকে এই প্রসেসে যুক্ত করতে হবে।
ডিটারেন্ট কিভাবে বাস্তবায়ন করা সম্ভব?
এই প্রশ্নটা স্বাভাবিক। বিশেষ করে অনেকেই প্রশ্ন তুলবেন যে, সরকার যেখানে ঋণ শোধ করতে পারছে না, সেখানে এতবড় সামরিক ব্যয় কিভাবে হ্যান্ডেল করবে? প্রথম সমাধানটা সকলের কাছেই রয়েছে - চুরির অর্থ উদ্ধার করে। প্রত্যেকেই এখন জানেন এবং সেটা বিশ্বাস করাতে কাউকে মারধর করতে হবে না যে, কি পরিমাণ চুরি গত ১৫ বছরে হয়েছে। আর এর সাথে যদি আরও প্রশ্ন করা হয় যে, কি পরিমাণ চুরি গত ৫৩ বছরে করা হয়েছে? প্রকৃতপক্ষে এখানেই অর্থায়নের পুরোটাই যোগাড় হয়ে যাবে। সরকার যদি চোরদেরকে হাল্কা-পাতলা শাস্তি না দিয়ে অবৈধপথে অর্জিত সম্পদ বাজেয়াপ্ত করে ফেলে, তাহলেই সকল বাজেট সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। দ্বিতীয় সমাধানটা অনেকের কাছেই কঠিন মনে হতে পারে - রাষ্ট্রদ্রোহী যত চুক্তি আছে, সকল চুক্তি বাতিল করে চুক্তির সাথে সম্পর্কিত সকল সম্পদ বাজেয়াপ্ত করতে হবে। এর ফলে সরকারকে যেসকল প্রকল্পে অযাচিতভাবে মার্কিন ডলারে পেমেন্ট দিতে হতো, সেটা আর দিতে হবে না। অর্থাৎ মার্কিন ডলারের রিজার্ভ তৈরি এবং ধরে রাখার যে চাপ সর্বদা বাংলাদেশের মাথার উপরে ঝুলে রয়েছে, সেটা আর থাকবে না। এছাড়াও অনেকেই প্রশ্ন করতে পারেন যে, চীন, পাকিস্তান, তুরস্ক – এই দেশগুলি বাংলাদেশকে অস্ত্র এবং প্রযুক্তি দেবে কিনা।
বর্তমান সরকার বা এর পরবর্তী সরকারও যে এই কঠিন সিদ্ধান্তগুলি বাস্তবায়ন করতে পারবে না, সেটা নিশ্চিত। কারণ পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত বিশ্বব্যবস্থায় কোন রাষ্ট্রই স্বাধীনভাবে কোন সিদ্ধান্ত নিতে পারে না। বিশেষ করে কোন মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশের অর্থনৈতিক এবং কৌশলগত ক্ষেত্রে স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নেয়াকে পশ্চিমারা 'রেড লাইন' হিসেবে দেখে। একারণেই পশ্চিমা ব্যবস্থাকে অমান্য করে বাংলাদেশের পক্ষে এসকল সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। ভারতকে ভয় দেখানো, ভারতের দূতাবাসকে বের করে দেয়া, বড় বড় চোরদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করা, রাষ্ট্রদ্রোহী চুক্তি বাতিল করে ডলারে পেমেন্ট বন্ধ করা, প্রযুক্তিসহ যুদ্ধাস্ত্র যোগাড় করা, ইত্যাদি কাজগুলি বর্তমান ব্যবস্থায় কোন সরকারই করতে সক্ষম হবে না। একমাত্র একটা আদর্শিক রাষ্ট্রের পক্ষেই পশ্চিমা আদর্শ ও ব্যবস্থাকে তুচ্ছজ্ঞান করে স্বাধীনভাবে নিজস্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন সম্ভব।
যদি ভারত-বিরোধিতা করতেই হয়, তাহলে সেটা সঠিকভাবে করা উচিৎ। ভারতকে উদ্দেশ্য করে এমন কিছু বলা উচিৎ নয়, যেটা ভারতকে কোনপ্রকার ভীতির মাঝে ফেলে না। ভারতকে তোয়াজ করে ভারত-বিরোধিতা জনগণের বিরুদ্ধে প্রতারণা ছাড়া আর কিছুই নয়। ভারতকে মোকাবিলা করতে হলে সাবভার্সনের সকল পথ বন্ধ করতে হবে এবং অত্যন্ত শক্তিশালী সামরিক ডিটারেন্ট তৈরি করতে হবে, যা কিনা বাইরের কারুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হবে না। এই কাজগুলি বাস্তবায়নের জন্যে কঠিন, কিন্তু অত্যাবশ্যকীয় অর্থনৈতিক সিদ্ধান্তগুলি বর্তমান পুঁজিবাদী ব্যবস্থায় বাস্তবায়ন অসম্ভব। একমাত্র আদর্শিক ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠিত একটা রাষ্ট্রই পারে এহেন স্বাধীন সিদ্ধান্ত নিতে; যা বঙ্গোপসাগরে শক্তিশালী একটা রাষ্ট্রের সূত্রপাত ঘটাবে।