Wednesday 24 July 2024

দ্যা লংগেস্ট উইক - জুলাই ব্যর্থ অভ্যুত্থান

২৪শে জুলাই ২০২৪
১৮ই জুলাই ২০২৪, ঢাকা। পুড়ছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর এবং এর পঞ্চাশেরও বেশি গাড়ি। গণ আন্দোলন বা গণ অভ্যুত্থান রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনার মেথড হতে পারে না। কারণ এই মেথডে এগুতে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। একদিকে যেমন রাষ্ট্র ধ্বংস করে রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করার চেষ্টাটা নিতান্তই শিশুসুলভ; অন্যদিকে রাষ্ট্র ধ্বংস করার দিকে এগুলে রাষ্ট্র বাধা দেবে এটাই স্বাভাবিক।


মঙ্গলবার (১৬ই জুলাই) থেকেই যখন পরিষ্কার হচ্ছিলো যে ছাত্রদের আন্দোলন ধীরে ধীরে ছাত্রদের হাত থেকে অন্য কারো হাতে চলে যাচ্ছে, তখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন এসেছিলো যে, সরকারের ইন্টেলিজেন্স কি এই ব্যাপারগুলি সম্পর্কে অবহিত কিনা। তবে কি সরকার জেনেও না জানার ভান করছে? ঘটনার শেষে অনেক প্রশ্ন যেমন সামনে আসে, তেমনি অনেক উত্তরও পাওয়া যায়; যা দু'দিন আগেও পরিষ্কার ছিল না।

প্রধানমন্ত্রীর চীন সফর একদিন আগেই শেষ হয়ে যাওয়াটা অনেকের চোখেই ছিল দৃষ্টিকটু। কেউ কেউ বলতে থাকে যে, দেশের পরিস্থিতি ভালো নেই বলেই তিনি দ্রুত ফিরে এসেছেন। তবে দেশের পরিস্থতি কেন চীন সফর ছোট করে ফেলার মতো খারাপ হবে, সেই ব্যাখ্যা কেউ তখনও দেবার চেষ্টা করেননি। প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে বাংলাদেশের মানুষের প্রত্যাশা পুরণ হয়নি বলে অনেকেই তর্ক জুড়েছেন। বিশেষ করে মাত্র ১,৬০০ কোটি টাকা সমমূল্যের ইউয়ানের আর্থিক সহায়তা অনেককেই হাসিয়েছে। ২০শে জুলাই পর্যন্ত সন্দেহ হতে পারে যে, প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সাথে কোটা আন্দোলনের কোন সম্পর্ক থাকলেও থাকতে পারে। তাহলে চীনের সাথে দহরম মহরম কি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারত পছন্দ করেনি? নাকি অন্য কিছু? তবে ২১শে জুলাই নাগাদ এটা মনে হতেই পারে যে, চীন সফরের সাথে এই আন্দোলনের অনেক বড় যোগসূত্র ছিল। চীনারাও হয়তো বুঝতে পারছিলো যে, ঢাকায় কিছু একটা ঘটতে চলেছে। তাই বেইজিংও ধরি মাছ না ছুই পানি নীতিতে এগিয়েছিল। হয়তো তারাও বুঝতে চাইছিলো যে, ঢাকায় আসন্ন ঘটনার ফলাফল আসলে কি ঘটতে যাচ্ছে। তারাও হয়তো অপেক্ষা করছিলো রাজনৈতিক খেলার ফলাফল নিশ্চিত হওয়া পর্যন্ত। একারণেই তাদের সহায়তার ঝুলিটা ছিল অনেকটাই 'ওপেন-এনডেড'’; অর্থাৎ এই মুহুর্তে খুব কমই প্রতিশ্রুতি দেয়া হচ্ছে; তবে ভবিষ্যতে এটা অনেক বড় হতে পারে।

পরিকল্পিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা
যাত্রাবাড়ী ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা পুড়ছে। ফ্লাইওভার এবং এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজাগুলিতে আগুন দেয়া হয়েছিল, কারণ অভ্যুত্থানকারীরা মনে করেছিলো যে, এগুলির র‍্যাম্পগুলি ব্যবহার করে পুলিশ তাদের বনানী-মহাখালী এবং যাত্রাবাড়ীর মূল অবস্থানগুলির পিছনে মোতায়েন হতে পারে। এগুলি বলে দেয় যে, এই পরিকল্পনা কতটা ডিটেলসে তৈরি করা হয়েছিল। এটা সাধারণ কারুর পরিকল্পনা নয়; এখানে নিঃসন্দেহে প্রফেশনাল লোকেরা জড়িত ছিল।

এটা ছিল একটা 'প্রি-প্ল্যানড ক্যু' বা পূর্বপরিকল্পিত অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা। অনেকদিন আগেই এর নীল নকশা আঁকা হয়েছিল। তবে খুব সম্ভবতঃ করোনার পরেই এর ডিটেলসগুলি তৈরি করা হয়। এই পরিকল্পনার কেন্দ্রে ছিল কিছু চিন্তা - ১) সেনাবাহিনী এখন আওয়ামী লীগ; তাই তাদেরকে নিজেদের পক্ষে আনা সম্ভব নয়; তবে ভয় দেখিয়ে তাদেরকে নিরপেক্ষ রাখার চেষ্টা করা সম্ভব; ২) পুলিশ, বিজিবি, আনসার এখন আওয়ামী লীগের অঙ্গ সংগঠন; যদি এদের মাঝে কোন প্রকারের ভয় ঢুকিয়ে দেয়া যায়, তাহলে তারা পিছু হটবে; ৩) যদি সেনাবাহিনীকে নিরপেক্ষ রাখা যায় এবং পুলিশ পিছু হটে, তাহলে সাধারণ জনগণকে একত্রিত করে গণভবনমুখী মার্চের মাধ্যমে সরকারের পতন সম্ভব।

এই কেন্দ্রীয় চিন্তাগুলিকে নিয়েই পরিকল্পনার ডিটেলসগুলি আঁকা হয়েছিলো। গত কয়েক বছরে বিরোধী দলকে দমাতে ঢাকাতে ঢোকার পথগুলি ক্ষমতাসীন দল বিভিন্ন সময়ে আটকে দিয়েছিল; যেকারণে বিরোধী দলের কয়েকটা আন্দোলন ভেস্তে গিয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা থেকে বিরোধী দল শিক্ষা নিয়েছে। প্রথমতঃ তারা ঠিক করেছিল যে, যেভাবেই হোক, ঢাকায় ঢোকার অন্ততঃ একটা পথ খোলা রাখতেই হবে। এক্ষেত্রে তারা নির্বাচিত করেছিল যাত্রাবাড়ীকে। গাবতলী প্রথমেই বাদ পড়ে যায়; কারণ ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে উঠতে হলে প্রথমে আরিচা এবং পাটুরিয়া ফেরি পার হতে হবে। ফেরির কারণে এই রুট বাস্তবসম্মত নয়। অপরদিকে পশ্চিমের রুট গিয়েছে যমুনা সেতুর উপর দিয়ে; যেখানে সেনাবাহিনীর ক্যানটনমেন্ট রয়েছে। সেনাবাহিনীর সাথে যেহেতু কোন সংঘর্ষে যাওয়া যাবে না, তাই যমুনা সেতু পার হবার চিন্তা রাখা যাবে না। পদ্মা সেতুর ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা একই – ক্যানটনমেন্ট। উত্তর দিক গাজীপুর হয়ে ঢাকায় ঢোকা যায়; তবে খুব সম্ভবতঃ সেক্ষেত্রে বিক্ষোভকারীদের জন্যে কিছু লজিস্টিক্যাল চ্যালেঞ্জ রয়েছে। কাজেই একমাত্র বাস্তবসম্মত রুট হলো যাত্রাবাড়ী; কারণ এই রুটে কোন সেতুর উপর কোন ক্যানটনমেন্ট নেই এবং লজিস্টিক্যাল সুবিধা রয়েছে যথেষ্ট। যদি যাত্রাবাড়ী ধরে রাখা যায়, তাহলে চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, সিলেট থেকে বহু মানুষকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব। আর বগুড়া, রংপুর, রাজশাহী, খুলনা, বরিশালসহ বিভিন্ন স্থানে গোলযোগ সৃষ্টি করলে সেখানকার নিরাপত্তা বাহিনী সেখানে অবস্থান করতে বাধ্য হবে; তাদেরকে বিক্ষোভ দমনে ঢাকায় নিয়ে আসা যাবে না।

দ্বিতীয়তঃ তারা ঢাকার কয়েকটা স্থান নির্ধারণ করেছিল; যেখান থেকে গণভবন খুব বেশি দূরে নয়। এই স্থানগুলিকে যদি নিয়ন্ত্রণে নেয়া যায়, এবং এসব স্থান থেকে যদি নিরাপত্তা বাহিনীকে পিছু হটানো যায়, তাহলে লাখো মানুষ বিক্ষোভকারীদের সাথে যোগ দেবে। এর মূল পুঁজি হবে একটাই – সরকারের জনপ্রিয়তার ঘাটতি।

তৃতীয়তঃ যদি সরকারি টেলিভিশন বিটিভির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়া যায়, তাহলে একদিকে যেমন দেশের বেশিরভাগ মানুষকে প্রভাবিত করা সম্ভব; তেমনি সামরিক বাহিনীকে বার্তা দেয়া যায় যে, তোমরা ব্যারাকের বাইরে বের হয়ো না; অথবা বিক্ষোভকারীদের বিরুদ্ধে যেয়ো না। একইসাথে পুলিশ বাহিনীকে প্রভাবিত করে তাদের মনোবল ভেঙ্গে দেয়া সম্ভব।

চতুর্থতঃ যদি মূল ইন্টারনেট সেবা দীর্ঘ সময়ের জন্যে বন্ধ করে দেয়া যায়, তাহলে সরকারি দফতরগুলির মাঝে নিরাপদ যোগাযোগ ব্যাহত হবে এবং রাষ্ট্রীয় বাহিনীগুলির উপর সরকারের নিয়ন্ত্রণ শিথিল হয়ে যাবে। একইসাথে বিরোধী দল এটা নিশ্চিত ছিল যে, তারা বিক্ষোভ করলে সরকার কোন একটা সময় থ্রি-জি, ফোর-জি এবং ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেবে। কাজেই যদি বিরোধী দল ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল থাকে, তাহলে তাদের যোগাযোগ পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে পড়বে। একারণে তারা সম্ভবতঃ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন যে, তারা টু-জি সেবার (কল এবং এসএমএস) উপরেই থাকবেন। ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যাহত হলে সরকার নিজেই টু-জি সেবার উপর নির্ভরশীল থাকবে; কাজেই তখন সরকার নিজের স্বার্থেই টু-জি সেবা চালু রাখতে বাধ্য হবে। তবে টু-জি সেবা তো সরকারি মনিটরিংএর মাঝে রয়েছে; এব্যাপারে কি করা যায়? সেটারও সমাধান রয়েছে। পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন বা পিবিআইএর স্থাপনাগুলিকে অকার্যকর করে দিতে পারলেই সরকারের টু-জি মনিটরিং সার্ভিস ধ্বসে পড়বে।

রাষ্ট্রীয় ইন্টেলিজেন্সের কাছে কতটুকু ডিটেলস পৌঁছেছিল সেটা বলা মুশকিল। তারা সম্ভবতঃ প্রথম দুই অংশ সম্পর্কে অনেক আগ থেকেই ওয়াকিবহাল ছিল; যদিও তারা হয়তো স্থানগুলি সম্পর্কে অবহিত ছিল না। তারপরেও এটা বলা যায় যে, এটা ইন্টেলিজেন্সের সাফল্য, যে তারা সময়মতো রাষ্ট্রকে সাবধান করতে পেরেছে। তবে তারা যে পরিকল্পনার তৃতীয় এবং চতুর্থ অংশ সম্পর্কে জানতো না, এটা পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে নিশ্চিত হওয়া যায়। এটা ইন্টেলিজেন্সের একটা বড় ব্যর্থতা। সাম্প্রতিক সময়ে ইন্টেলিজেন্স, পুলিশ, র‍্যাব সকলেই কমিউনিকেশন মনিটরিংএর জন্যে বহু প্রযুক্তি পেয়েছে। এই প্রযুক্তিগুলি তাদেরকে বহু তথ্য দিয়েছে; যার মাধ্যমে তাদের পক্ষে ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা করা কিছুটা হলেও সহজতর হয়েছে।

নিরাপত্তা বাহিনী কতটুকু জানতো?
বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ভবনের উপর থেকে কোণঠাসা হওয়া পুলিশ সদস্যদেরকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে তুলে নেয়া হচ্ছে। হয়তো ইন্টেলিজেন্সের কাছে তথ্য ছিল যে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের লাশ চাইছে অথবা জীবন্ত পুলিশ সদস্যকে ধরে এনে মিডিয়ার সামনে কথা বলাতে চাইছে তাদের সহকর্মীদেরকে বিক্ষোভে বাধা দেয়া থেকে নিবৃত করতে। সহিংসতার ব্যাপারে ইন্টেলিজেন্স আগেভাগেই সতর্ক করতে পেরেছিলো। কিন্তু কিছু ব্যাপারে তারা একেবারেই অজ্ঞ ছিল বলে প্রতীয়মান হয়েছে। 


ইন্টেলিজেন্সের সাবধানবাণীর উপর ভিত্তি করেই গত কয়েক বছর ধরেই সরকার অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ব্যাপক বিনিয়োগ করেছে। পুলিশ, বিজিবি এবং আনসারের জন্যে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র এবং গোলাবারুদ ক্রয় করেছে সরকার; যেগুলি মূলতঃ 'ক্রাউড কনট্রোল'এ ব্যবহৃত হয়।

গত তিন বছরে 'ক্রাউড কনট্রোল' কাজে পুলিশের জন্যে কেনা হয়েছে রীতিমতো একটা অস্ত্রাগার! আশ্চর্য্যজনক এই হিসেব থেকে দেখা যায় যে, ২০২১ থেকে ২০২৩এর মাঝে পুলিশ অস্ত্র এবং গোলাবারুদের পাহাড় গড়েছে! এই তিন বছরে পুলিশ কমপক্ষে ১০,০০০ শটগান (১২-বোর), ৭,০০০ সিঙ্গেল-শট টিয়ারশেল লঞ্চার (৩৮মিঃমিঃ), ১১০টা ভেহিকল-মাউন্টেড মাল্টিব্যারেল টিয়ারশেল লঞ্চার, ১০টা ড্রোন, ১৩,০০০ এন্টি-রায়ট হেলমেট, ৩৫,০০০ বুলেটপ্রুফ ভেস্ট, ১০,০০০ রায়ট শিল্ড, ৬৮,২০,০০০ শটগান কার্তুজ (রাবার এবং লেড), ২০,০০০ সফট কাইনেটিক প্রজেক্টাইল (৩৮মিঃমিঃ), ৬,৪৮,০০০ দূরপাল্লার টিয়ারশেল (৩৮মিঃমিঃ), ৪০,০০০ স্বল্পপাল্লার টিয়ারশেল, ২,৩২,০০০ থ্রি-মিউনিশন টিয়ারশেল, ১৬,৬০০ স্টান গ্রেনেড, ৭৪,০০০ সাউন্ড গ্রেনেড, ১৪,০০০ ফ্ল্যাশ-ব্যাং গ্রেনেড, ১৫,০০০ মাল্টি-ইমপ্যাক্ট টিয়ারগ্যাস গ্রেনেড, ৪০,০০০ টিয়ারগ্যাস হ্যান্ড গ্রেনেড। তবে এই অস্ত্রগুলি কেনা হয়েছে পুরো বাংলাদেশের পুলিশের জন্যে। ঢাকার নিরাপত্তার জন্যে রাষ্ট্রকে নির্ভর করতে হবে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপর। ডিএমপি চাপের মাঝে পড়লে রিজার্ভ ডাকতে বাধ্য হবে। শটগান, টিয়ারশেল এবং স্টান-সাউন্ড গ্রেনেডের বাইরে ডিএমপির ক্রাউড কনট্রোল অস্ত্রগুলির মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটা হলো এপিসি। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিকে বিক্ষোভকারীদের দখলমুক্ত করতে এই এপিসিগুলির ছত্রছায়ায় পুলিশ অগ্রগামী হতে পারে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্দলনের সময় এই এপিসির ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেছে। ২০২৩এর জুলাই মাসেই বিরোধী দলের সাথে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সংঘর্ষ হয়; যেখানে অনেকগুলি এপিসি মোতায়েন হয়েছিল। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।

ঢাকায় গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দেয়ার জন্যে ১টা মহিলা ব্যাটালিয়ন (১১তম) সহ ঢাকার উত্তরায় রয়েছে মোট ৬টা আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন বা এপিবিএন (১ম, ৫ম, ৮ম, ১২তম, ১৩তম)। এপিবিএনএর মোট ১৭টা ব্যাটালিয়নের মাঝে এই ৬টা রয়েছে উত্তরায় এবং গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের নিরাপত্তায় আরও দুইটা স্পেশাল প্রোটেকশন ব্যাটালিয়ন বা এসপিবিএন (১ম ও ২য়) রয়েছে মোহাম্মদপুরে। বাকি ৯টা ব্যাটালিয়ন রয়েছে ঢাকার বাইরে। এপিবিএন সংসদ ভবন, সুপ্রীম কোর্ট, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইবুনাল, ডিপ্লোম্যাটিক জোন, সচিবালয়, বিমান বন্দরের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার নিরাপত্তা দেয়। এই ইউনিটগুলি খুবই ভালো ট্রেনিংপ্রাপ্ত। তবে এরা প্রায় সকলেই বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত। রাস্তায় নিরাপত্তা দিতে এদের বেশিরভাগকেই পাওয়া যাবে না। অর্থাৎ ঢাকায় সহিংসতা প্রতিরোধে এরা মূল রিজার্ভের ভূমিকায় থাকতে পারবে না। এক্ষেত্রে ঢাকার বাইরের ইউনিটগুলি রিজার্ভের ভূমিকা নিতে পারে। একারণেই ঢাকার বাইরের ইউনিটগুলির সাথে নিরপদ কমিউনিকেশন বিঘ্ন করাটা বিক্ষোভকারীদের জন্যে ছিল অতি গুরুত্বপূর্ণ।

ডিএমপির জন্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভের ভূমিকা নিয়েছে বিজিবি। বিজিবি যাতে অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তায় ঢাকার রিজার্ভ ফোর্স হিসেবে কাজ করতে পারে, সেজন্য বিজিবিকে আলাদাভাকে কিছু অস্ত্র দেয়া হয়েছে; যেগুলি সীমান্ত প্রতিরক্ষার জন্যে প্রয়োজনীয় নয়। এর মাঝে রয়েছে ২০২০ সালে ইউক্রেন থেকে আনা ১২টা স্পারটান এপিসি এবং তুরস্ক থেকে আনা ১০টা রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল। এগুলির সবগুলি হয়তো ঢাকায় রাখা হয়নি। এগুলিকে ২০২১ সালে নারায়নগঞ্জে হেফাজতে ইসলামের আন্দোলনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়েছে; এবং এবারের ২০২৪এর ব্যার্থ অভ্যুত্থানেও ব্যবহার করা হয়েছে। তবে বিজিবির ঢাকা রক্ষায় সবচাইতে বড় প্রদক্ষেপ ছিল ঢাকার দুই প্রবেশ পথে গাজীপুর এবং নারায়নগঞ্জে দুইটা ব্যাটালিয়ন। এর ফলে ২০২২ সাল নাগাদ বিজিবির ঢাকা সেক্টর শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ায় ৪টা ব্যাটালিয়নে – ঢাকায় ৫ম এবং ২৬তম ব্যাটালিয়ন, নারায়নগঞ্জে ৬২তম ব্যাটালিয়ন এবং গাজীপুরে ৬৩তম ব্যাটালিয়ন। নারায়নগঞ্জ এবং গাজীপুরের ইউনিটগুলি হলো বিজিবির ৬৩টা ব্যাটালিয়নের সর্বশেষ সংযোজিত ব্যাটালিয়ন। এই ব্যাটালিয়নগুলি ২০২৪ সালে ঢাকাকে রক্ষায় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।

ডিএমপির আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভ হলো আনসার। আনসারের মোট ৬১ লক্ষ সদস্যের মাঝে মূল স্ট্রাইকিং ফোর্স হলো ব্যাটালিয়ন আনসার। ২০২৪এর ফেব্রুয়ারি নাগাদ আনসারের নিয়মিত ব্যাটালিয়ন ছিল ৪২টা (যার মাঝে ২টা মহিলা ব্যাটালিয়ন)। এই ৪২টা ব্যাটালিয়নের মাঝে ১৮টাই রয়েছে পার্বত্য চট্টগ্রামে। গত নির্বাচনে মোতায়েন করা মোট ৫ লক্ষ ১৭ হাজার আনসারের মাঝে এই ৪২টা ব্যাটালিয়নের সাড়ে ৮ হাজার সদস্য স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিল। তবে এদের সকলে কিন্তু ঢাকায় মোতায়েন নেই। এছাড়াও আনসারের ৭০ হাজার সদস্য বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তায় নিয়োজিত রয়েছে; যাদেরকে অবশ্য রাস্তায় ক্রাউড কনট্রোলের জন্যে পাওয়া যাবে না। তবে ক্রাউড কনট্রোলের জন্যে স্পেশালিস্ট না হলেও আনসার গার্ড ব্যাটালিয়নের স্পেশাল ফোর্সের সদস্যরা ঢাকার সহিংসতা মোকাবিলায় পুলিশের সাথে মোতায়েন ছিল। সাম্প্রতিক সময়ে আনসারকে আরও বেশি ক্রাউড কনট্রোল ভূমিকা দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। সেই হিসেবে ২০১৮ সালে ১০৯ কোটি টাকা ব্যয়ে ইতালি, তুরস্ক এবং ব্রিটেন থেকে আনসার সদস্যদের জন্যে ৩০ হাজার শটগান এবং প্রায় ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে ৩০ লক্ষ শটগান কার্তুজ কেনার সিদ্ধান্ত হয়। এর মাধ্যমে আনসার বাহিনী পুলিশের সহযোগী হিসেবে কাজ করে পুলিশের শক্তিকে বৃদ্ধি করেছে। যদিও এটা নিশ্চিত নয় যে, চলমান ঘটনাতে কতজন আনসার সদস্যকে ঢাকায় মোতায়েন করা সম্ভব হয়েছিল, তথাপি বলার অপেক্ষা রাখে না যে, এবারের অভ্যুত্থান প্রচেষ্টায় পুলিশের শক্তি বৃদ্ধিতে আনসারের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

তবে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার মিলেও ঢাকার সকল গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা যে রক্ষা করা সম্ভব নয়, তা এবারে প্রমাণিত হয়েছে। নিরাপত্তা বাহিনীকে শেষ পর্যন্ত সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ রিজার্ভের দিকেই তাকাতে হয়েছে - সেনাবাহিনী।

আন্দোলন থেকে সহিংতা
মিরপুর-১০। মেট্রেরোল চলছে আগুনের উপর দিয়ে। মিরপুর-১০ ছিল অভ্যুত্থানকারীদের গুরুত্বপূর্ণ টার্গেটের একটা। এখান থেকে রোকেয়া সরনী পার হলেই গণভবন। মেট্রোরেলের ফার্মগেট, মিরপুর-১০ এবং কাজিপাড়া স্টেশনে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। এই ভাংচুরের কারণ বোঝা না গেলেও এটা ধারণা করা যেতে পারে যে, হয়তো বিক্ষোভকারীরা মনে করেছিল যে, মেট্রোরেল ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনী সোয়াট, সিআরটি বা র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্সের মতো বাহিনীকে ঝটিকা মোতায়েন করতে পারে। 


প্রধানমন্ত্রী চীন সফরের উপর সংবাদ সন্মেলনে ছাত্রদের আন্দোলনের ব্যাপারে কটাক্ষ করে মন্তব্য করেন। তখন মনে হচ্ছিলো যে, হয় তিনি মারাত্মক ভুল করেছেন; অথবা তিনি জানেন ঠিক কি তিনি বলতে চাচ্ছেন। ঘটনার শেষে বোঝা যাচ্ছে যে, তার এই মন্তব্যের সাথে দুই ব্যাপারই সম্পর্কিত। কারণ তিনি চীন সফরের সময়েই জেনে গেছেন যে, অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ট্রিগার করা হয়ে গেছে। অর্থাৎ সংবাদ সন্মেলনের সময় তিনি তখন জানতেন যে, ছাত্রদের আন্দোলন হাইজ্যাক করার পরিকল্পনা করা হয়ে গিয়েছে। হয়তো তিনি তার আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। প্রধানমন্ত্রীর কথাগুলি ছাত্রদের আন্দোলনকে ব্যাপকভাবে বেগবান করেছিল। তবে পরবর্তীতে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণে তিনি যথেষ্ট নমনীয়ভাবে তার বক্তব্য পেশ করেছিলেন। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে যা বলেছিলেন, সেটা আন্দোলনকারীদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ হলেও, আন্দোলনের পিছনে যারা ছিলো, তাদের জন্যে গুরুত্বপূর্ণ ছিল মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের বিবৃতি। আন্দলোনকারীদের পক্ষে মার্কিন বিবৃতি আপারেশন চালিয়ে নেবার একটা গ্রীন লাইট বলা যেতে পারে।

১৬ই জুলাই মঙ্গলবার দেশজুড়ে বিক্ষোভ দেখা দিলো এবং স্বাভাবিক জীবনযাপন পুরোপুরিভাবে ব্যাহত হলো। সায়েন্স ল্যাবরেটরি রণক্ষেত্রে পরিণত হলো। মহাখালী মোড়ও মানুষ পার হয়েছে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে। এই দিনই বোঝা যাওয়া শুরু হলো যে, পেছনে কেউ রয়েছে এবং তাদের কোন একটা উদ্দেশ্য রয়েছে - যেটা তখনও পরিষ্কার নয়। তখনও ফোর-জি মোবাইল ফোন সার্ভিস এবং ইন্টারনেট চালু ছিল। তবে মোবাইল ফোনে ফেইসবুক ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রিত করা হয়েছিলো।

১৭ই জুলাই বুধবার ছিলো আশুরার ছুটি। এই দিনে অনেকেই বাসার বাইরে বেরিয়েছিল; অনেক সামাজিক অনুষ্ঠানও ছিল এই দিনে। শুধুমাত্র সরকারের ইন্টেলিজেন্সেরই জানার কথা যে পরের দিন কি হতে পারে। তবে সেদিনও পরিষ্কার হয়নি যে, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পেছনে যারা রয়েছে, তারা আসলে কি চায়। পরের দিন 'কমপ্লিট শাটডাউন' নামের একটা কর্মসূচীর ডাক এলো। তবে এর অর্থ কি হতে পারে, তা তখনও পরিষ্কার নয়। পূর্বে ক্ষমতাসীন দলের আনঅফিশিয়াল হরতালও দেখেছে বাংলাদেশের মানুষ; আবার বিএনপির 'ঈদের পরের আন্দলন'ও দেখেছে তারা। তখনও পর্যন্ত ফোর-জি সার্ভিস এবং ইন্টারনেট সার্ভিস চালু ছিল। তবে টেলিনরের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয় যে, সরকারের নির্দেশে ১৭ই জুলাই থ্রি-জি এবং ফোর-জি সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়েছিল; শুধুমাত্র টু-জি সেবা চালু ছিল।

অকল্পনীয় ঘটনা - বৃহঃস্পতিবার
সেতু ভবনের সাথে কয়লা হয়ে যাওয়া গাড়ির বহর। ভবনে কয়েক'শ ব্যক্তি হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং ৫৫টা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। রাস্তায় রোডব্লকের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারেনি। একারণে গাড়িগুলি নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত জ্বলেছিলো। পরিকল্পনাকারীরা আক্রমণে অংশ নেয়া জনতাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, এই সাহেবদের সুন্দর অফিস এবং দামী দামী গাড়িগুলিই তাদের নিজেরদের স্থবির জীবনের কারণ। এর ফলে জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে এই ভবনের উপর ঢেলে দেয়। 


১৮ই জুলাই বৃহঃস্পতিবার যা ঘটলো, তা সাধারণ জনগণের কল্পনার বাইরে ছিল। মিডিয়ার রিপোর্টে ২০ থেকে ২২ জন মানুষের নিহত হবার খবর এলো। হতাহত যতজনই হোক না কেন, এই দিনটা যে ভয়াবহ ছিল, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই দেশের জনগণ বহুকাল এইরূপ সহিংতা দেখেনি। এবং এই দিনই প্রথম পরিষ্কার হলো যে, আন্দোলন এখন ছাত্রদের হাতে নেই। তবে তখনও পরিষ্কার ছিল না যে, যারা সহিংসতা করছিলো, তাদের উদ্দেশ্য কি ছিল। দিনের শুরুটা হয়েছিলো যাত্রাবাড়িতে ঢাকা শহরের প্রবেশপথে। এখানকার সহিংসতা ছিল সবচাইতে ভয়ংকর। পরবর্তীতে নিশ্চিত হওয়া যায় যে, বিক্ষোভকারীদের অন্যতম টার্গেট ছিল যাত্রাবাড়ীর নিয়ন্ত্রণ নেয়া; যাতে করে এই গেইটওয়ে ব্যবহার করে ঢাকার বাইরে থেকে আরও জনগণকে ঢাকায় নিয়ে আসা সম্ভব হয়। এছাড়াও ভৈরবে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক কেটে ফেলা হয়; এবং ঢাকার অন্যান্য প্রবেশপথের উপর পুলিশ এবং বিক্ষোভকারীদের মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়। তবে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা এবং মোড়গুলির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে চলে মূল সহিংসতা।

রামপুরায় সরকারি টেলিভিশন চ্যানেল বিটিভি ভবনে কয়েক'শ মানুষ হামলা করে বসে। তারা ভবনের ভেতর ভাংচুর করে এবং আগুন দেয়। একইসাথে তারা প্রায় ১৬টার মতো গাড়ি ভাংচুর করে এবং আগুনে পোড়ায়। এর আগে ভবনের সামনে পুরো রাস্তার নিয়ন্ত্রণ নেয় বিক্ষোভকারীরা। তারা রাস্তায় ব্যারিকেড সৃষ্টি করে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি যেতে বাধা দেয়। এর ফলে বিটিভি ভবন এবং এর গাড়িগুলি নিঃশেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত জ্বলেছিলো। তবে যে ব্যাপারটা খেয়াল করার মতো তা হলো, হামলাকারীরা বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করেছিলো কিনা, সেব্যাপারে কোন খবর প্রচারিত হয়নি। বিটিভির সম্প্রচার বন্ধ হয়ে যায় সন্ধ্যার দিকে। বিকেলের দিকে এই হামলা হলেও রাত সাড়ে ৮টার আগে বিজিবি এই ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। তখন প্রচার করা হয় যে, বিজিবি এই ভবন থেকে আক্রমণকারীদের বের করে দিয়ে নিয়ন্ত্রণ নিয়েছিল। যদি তা-ই হয়, তাহলে বুঝে নিতে হবে যে, বিজিবি পৌঁছার আগ পর্যন্ত বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ ছিল হামলাকারীদের হাতে। ২২শে জুলাই বিটিভির মহাপরিচালক একাত্তর টিভিকে বলেন যে, দুপুর ১২টা থেকেই বিক্ষোভকারীরা ভবনের ভেতরের লোকদের বেরিয়ে আসার নির্দেশ দিতে থাকে; যদিও তারা বের হননি। তার লোকেরা 'হিউম্যান শিল্ড' তৈরি করে ভবনের সম্প্রচার কক্ষগুলিকে রক্ষা করার চেষ্টা করেছিলেন। তারা কলাপসিবল গেট আটকে দেন, সন্ধ্যা নাগাদ সকল পাওয়ার সিস্টেম শাটডাউন করে দেন এবং টেলিফোনে বিভিন্ন এজেন্সির সহায়তা কামনা করেন। পরে রাত ৮টার দিকে তারা ভবন ত্যাগ করেন। তবে তিনি ভবনের নিরাপত্তায় কোন বাহিনীর কেউ ছিল কিনা, সেই প্রশ্ন এড়িয়ে যান। সাংবাদিকদের মাঝে কেউ প্রশ্ন করেছেন যে, এরকম মুহুর্তে বিটিভি ভবনে কেন কমান্ডো টিম পাঠানো হয়নি? সরকার কি 'কেপিআই-১' ক্যাটাগরির এই স্থাপনার নিরাপত্তাকে তুচ্ছজ্ঞান করেছিল? যদি রাত ৮টার দিকে বিটিভির কর্মকর্তারা ভবন ছেড়ে দেন, তাহলে বিজিবি কি রাত সাড়ে ৮টায় খালি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে? যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, বিটিভি ভবন যে বিক্ষোভকারীদের একটা টার্গেট ছিল, সেটা ইন্টেলিজেন্স এবং নিরাপত্তা বাহিনী একেবারেই জানতো না।

সহিংসতার একটা কেন্দ্র ছিল মহাখালী-বনানী। বনানীর সেতু ভবনে কয়েক'শ ব্যক্তি হামলা করে ব্যাপক ভাংচুর করে এবং ৫৫টা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করে। রাস্তায় রোডব্লকের কারণে ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি আসতে পারেনি। একারণে গাড়িগুলি নিঃশেষ হওয়া পর্যন্ত জ্বলেছিলো। এখানে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, পরিকল্পনাকারীরা আক্রমণে অংশ নেয়া জনতাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলো যে, এই সাহেবদের সুন্দর অফিস এবং দামী দামী গাড়িগুলিই তাদের নিজেরদের স্থবির জীবনের কারণ। এর ফলে জনগণ তাদের পুঞ্জীভূত ক্ষোভকে এই ভবনের উপর ঢেলে দেয়। প্রায় চার তলা পর্যন্ত ভবনের কাঁচের জানালা ঢিল মেরে ভাঙ্গা হয়েছে। তবে এই ভবনে হামলার উদ্দেশ্য পরিষ্কার নয়।

বিক্ষোভকারীদের আরেকটা কেন্দ্র ছিল মিরপুর-১০। এখান থেকে রোকেয়া সরনী পার হলেই গণভবন। মেট্রোরেলের ফার্মগেট, মিরপুর-১০ এবং কাজিপাড়া স্টেশনে হামলা করে ভাংচুর করা হয়। এই ভাংচুরের কারণ বোঝা না গেলেও এটা ধারণা করা যেতে পারে যে, হয়তো বিক্ষোভকারীরা মনে করেছিল যে, মেট্রোরেল ব্যবহার করে নিরাপত্তা বাহিনী সোয়াট, সিআরটি বা র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্সের মতো বাহিনীকে ঝটিকা মোতায়েন করতে পারে। মিরপুর ইনডোর স্টেডিয়ামেও ধ্বংসযজ্ঞ চালানো হয়।

সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড় ছিল যুদ্ধক্ষেত্র। রাস্তার মাঝের লোহার ডিভাইডারের সবগুলি স্কায়ার পাইপ কেটে ফেলা হয়েছিলো; গাছগুলিও কেটে ফেলা হয়েছিলো। তবে লোহার ডিভাইডার কিভাবে কাটা সম্ভব হলো, সেটা সত্যিই চিন্তার উদ্রেক করে। হ্যাক-স' ব্লেড দিয়ে এগুলি কাটা সম্ভব হলেও যে সময় এতে খরচ হবে, তার মাঝে পুলিশের ধাওয়া খেতেই হবে। খুব সম্ভবতঃ গ্যাস কাটার দিয়ে এগুলি কাটা হয়েছিলো। রাস্তার মাঝে ধারালো জিনিস দিয়ে খোঁড়ার চেষ্টাও করা হয়েছিলো; যেকারণে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হবার পর এই স্থান দিয়ে যানবাহন চলাচল ছিল কষ্টকর। এছাড়াও বিভিন্ন স্থানে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার বাহিনী বেশ কোণঠাসা অবস্থানে চলে যায়। এক পর্যায়ে বাড্ডায় কানাডিয়ান ইউনিভার্সিটির ভবনের উপর থেকে হেলিকপ্টারের মাধ্যমে ঘিরে ফেলা ৬০ জনের বেশি পুলিশ সদস্যকে উদ্ধার করা হয়। হয়তো ইন্টেলিজেন্সের কাছে তথ্য ছিল যে, বিক্ষোভকারীরা পুলিশের লাশ চাইছে অথবা জীবন্ত পুলিশ সদস্যকে ধরে এনে মিডিয়ার সামনে কথা বলাতে চাইছে তাদের সহকর্মীদেরকে বিক্ষোভে বাধা দেয়া থেকে নিবৃত করতে।

দিনটা ছিল খুবই দীর্ঘ – প্রায় মধ্যরাত পর্যন্ত চলে সহিংসতা। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড মোড়ের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে সন্ধ্যা থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত চলে সহিংসতা। এখান থেকে আসাদ গেট পার হলেই গণভবন। পুলিশ এবং বিক্ষোভকারী - দুই গ্রুপই প্রচন্ড রকমের পরিশ্রান্ত থাকার কথা। দিনের শেষে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার ছিল তা হলো, পুলিশের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ রাস্তার মোড়গুলির নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটা খুবই কঠিন হয়ে গিয়েছে। আন্দোলনকারীরা হয়তো বিজয়ের গন্ধ পাচ্ছিলো - তারা হয়তো মনে করতে থাকে যে, আর একটু চাপ দিলেই সরকার মনে হয় ধ্বসে পড়বে! অনেকে মনে করতে থাকে যে, সরকারের পতন খুব সম্ভবতঃ অনিবার্য। তবে ছাত্র আন্দোলনের প্রথম থেকেই এটাই বিরোধী দলগুলির লক্ষ্য ছিলো কিনা, সেটা সাধারণ মানুষের জানা ছিলো না। এই দিনেও ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সেবা চালু ছিলো। তবে মোবাইলে ফোর-জি এবং থ্রি-জি সেবা বন্ধ করে দেয়া হয়; শুধুমাত্র টু-জি সেবা বা কল এবং এসএমএস করার সেবা চালু থাকে। ফেইসবুক তো আগে থেকেই বন্ধ ছিলো। কাজেই এই দিন থেকে যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম হয়ে দাঁড়ায় মোবাইলে কল। তবে বাড়িতে ফিক্সড ব্রডব্যান্ড চালু থাকায় অন্ততঃ বাড়িতে থেকে ব্রডব্যান্ড বা ওয়াই-ফাই-এর মাধ্যমে ইন্টারনেটে ঢোকা যাচ্ছিলো।

এত সহিংসতা মানুষ এর আগে দেখেনি
যাত্রাবাড়ীতে বিজিবি এবং তাদের রায়ট কন্ট্রোল ভেহিকল। বিজিবির ঢাকা রক্ষায় সবচাইতে বড় প্রদক্ষেপ ছিল ঢাকার দুই প্রবেশ পথে গাজীপুর এবং নারায়নগঞ্জে দুইটা ব্যাটালিয়ন। এর ফলে ২০২২ সাল নাগাদ বিজিবির ঢাকা সেক্টর শক্তিশালী হয়ে দাঁড়ায় ৪টা ব্যাটালিয়নে – ঢাকায় ৫ম এবং ২৬তম ব্যাটালিয়ন, নারায়নগঞ্জে ৬২তম ব্যাটালিয়ন এবং গাজীপুরে ৬৩তম ব্যাটালিয়ন। নারায়নগঞ্জ এবং গাজীপুরের ইউনিটগুলি হলো বিজিবির ৬৩টা ব্যাটালিয়নের সর্বশেষ সংযোজিত ব্যাটালিয়ন। এই ব্যাটালিয়নগুলি ২০২৪ সালে ঢাকাকে রক্ষায় অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে।

১৯শে জুলাই শুক্রবার ছিল সবচাইতে ভয়াবহতম দিন। বেশিরভাগ মিডিয়াই হতাহতের সংখ্যা প্রচার করতে দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। তবে যারা সংখ্যা দিচ্ছিলো, তার মাঝে সর্বোচ্চ মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ৪৯। পুলিশ এবং সরকারী দলের পান্ডাদের সাথে বিক্ষোভকারীদের মারাত্মক সংঘর্ষ হয় পুরো দেশজুড়ে। আগের দিনই বিরোধী দল বিএনপি ঘোষণা দিয়েছিল যে, তারা বিকেল ৩টায় ঢাকায় সমাবেশ করে সরকার পতনের ডাক দেবে। আওয়ামী লীগও পাল্টা সমাবেশের ডাক দেয়। স্বাভাবিক প্রক্রিয়াতেই পুলিশ ঢাকায় সমাবেশ নিষিদ্ধ ঘোষণা করে। সকাল ৯টার আগেই ঢাকাসহ সারা বাংলাদেশ জুড়ে শুরু হয় সহিংসতা। যাত্রাবাড়ী, মহাখালী-বনানী, রামপুরা, উত্তরা, মোহাম্মদপুর, মিরপুর-১০, ইত্যাদি সকল স্থান যুদ্ধক্ষেত্রে পরিণত হতে থাকে। জুম'আর নামাজের মাঝেই চলতে থাকে সহিংসতা। আর নামাজের পর এই সহিংসতা অন্য এক রূপ নেয়। বিকেল নাগাদ পরিষ্কার হতে থাকে যে, পুরো বাংলাদেশে অরাজকতা রাজত্ব করছে।

বনানীর সেতু ভবনে দ্বিতীয় বারের মতো হামলা করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এই ভবনটা কি কারণে দু'বার হামলা করা হয়েছে, তা পরিষ্কার নয়। পাশের বিআরটিএ ভবনেও হামলা করা হয়। মহাখালীতে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদপ্তর ভবনে এবং ভবনের ৫২টা গাড়ি ও ১৬টা মোটরসাইকেলে গানপাউডার ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে এর চাইতে আরও গুরুত্বপূর্ণ ছিল পাশের খাজা টাওয়ারেও অগ্নিসংযোগ এবং ভাংচুর। খাজা টাওয়ারে আইজিডব্লিউ কোম্পানিগুলির সার্ভার থাকার কারণে রাত ৯টার দিকে সারাদেশে ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ হয়ে যায়। সাধারণ মানুষের কাছে হয়তো অজানা যে, এই ভবনটা কতটা গুরুত্বপূর্ণ। এর আগে আরও একবার এই ভবনে আগুন লেগেছিল; তখনই প্রথম জানা গিয়েছিল যে, এই ভবনে একসাথে সবগুলি আইজিডব্লিউ কোম্পানির সার্ভার এবং ডাটা সেন্টার; এবং এখানে আগুন লাগলে সারা দেশে ইন্টারনেট থাকে না! তবে সেই অগ্নিকান্ডের পরেও এই ভবনের নিরাপত্তার ব্যাপারে রাষ্ট্রের কর্তাব্যক্তিদের টনক নড়েনি। হামলাকারীরা নিঃসন্দেহে এই ভবনের উপর যথেষ্ট গুরুত্ব দিয়েছিল। আর এটাও এখন নিশ্চিত যে, ইন্টেলিজেন্সের কাছে এই ভবনে হামলার ব্যাপারে কোন তথ্যই ছিল না। একাত্তর টিভির সাংবাদিকই একমাত্র ভবনের ভেতরের দৃশ্যের খবর দিয়েছিলেন – ফাইবার অপটিক লাইনগুলিকে কেটে টুকরা টুকরা করা হয়েছিলো; যাতে করে এটা মেরামতে অনেক বেশি সময় লাগে। ২১শে জুলাই সরকারিভাবে বলা হয় যে, ৪০টা জায়গায় ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন এবং আঞ্চলিক যোগাযোগের কেবল কেটে ফেলা হয়েছে। এটা নিশ্চিত যে, এর ফলে সরকারি দপ্তরগুলির মাঝে কমিউনিকেশন হার্ডলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। অর্থাৎ সরকারের প্রধানতম সিকিউর কমিউনিকেশন লাইন সেদিন অকার্যকর হয়ে গিয়েছিল। এর ফলে সরকারের পক্ষে ঢাকার বাইরে থেকে রিজার্ভ ফোর্স ডাকা কঠিন হয়ে যাবার কথা। আর বলাই বাহুল্য যে, এর ফলে সরকারের অনেকেই টু-জি মোবাইল সার্ভিসের উপর নির্ভরশীল হয়ে যায়। এতে করে যে ব্যাপারটা নিশ্চিত তা হলো, সরকার কোন অবস্থাতেই টু-জি সেবা বন্ধ করতে সক্ষম হবে না।

বিভিন্ন স্থানে বিজিবির ২৫০ প্লাটুন সদস্য মোতায়েন করা হয়; যার মাঝে ৭৫ প্লাটুন মোতায়েন করা হয় শুধু ঢাকায়। বিজিবির কমপক্ষে ৫২ সদস্য আহত হবার খবর জানা যায়। নারায়নগঞ্জে বিজিবির ৬২তম ব্যাটালিয়নের ব্যারাকে হামলা হয়। যেহেতু নারায়নগঞ্জের এই ব্যাটালিয়ন বিজিবির ঢাকায় রিজার্ভ ফোর্স, তাই অবশ্যই এই হামলার উদ্দেশ্য ছিল বিজিবিকে নারায়নগঞ্জে আটকে রেখে মূল এলাকাগুলি থেকে দূরে রাখা। মেরুল-বাড্ডায় আনসার ক্যাম্পে হামলা করে টাকা ও খাদ্যদ্রব্য লুটপাট করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। তবে এখানে কোন অস্ত্র ছিল না। নারায়নগঞ্জে শীতল পরিবহণের ডিপোতে হামলা করে ২৬টা গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। এটা নিশ্চিত করে বলা যাচ্ছে না যে, এই অগ্নিসংযোগের উদ্দেশ্য কি ছিল।

নরসিংদীতে জেলা প্রশাসন ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। একইসাথে নরসিংদী কারাগারে কয়েক হাজার মানুষ হামলা করে বহু কয়েদীকে বের করে নিয়ে আসে এবং অস্ত্র ও গোলাবারুদ লুট করে। পরে জানা যায় যে, মোট ৮২৬ জন সাজাপ্রাপ্ত কয়েদী সেখান থেকে পালায় এবং ৮৫টা অস্ত্রসহ প্রায় ৭ হাজার রাউন্ড গুলিও লুট হয়। ধানমন্ডিতে বেপজা অফিসে ভাংচুর চালানো হয়। পরবর্তীতে এক রিপোর্টে বলা হয় যে, সেখান থেকে নিরাপত্তার জন্যে রাখা ৩০টা বুলেটপ্রুফ ভেস্টও চুরি হয়। এছাড়াও মহাখালীর স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের এমআইএস ভবনে হামলা করে ভবনে এবং সেখানকার ২৩টা গাড়িতে গানপাউডার ব্যবহার করে অগ্নিসংযোগ করা হয়। মিরপুরে বিআরটিএর টেস্ট সেন্টারে হামলা করে সকল যন্ত্র ভাংচুর করা হয় এবং লুটপাট করা হয়। মিরপুরে সিটি কর্পোরেশনের গাড়ির ডিপোতে হামলা করে ৪০টা ময়লার গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়।

বিভিন্ন জায়গায় রেল লাইন উপড়ে ফেলা এবং কয়েকটা ট্রেন ভাংচুর করার পর রেল সার্ভিস অনির্দিষ্টকালের জন্যে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। সায়েন্স ল্যাবরেটরি মোড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি গবেষণাগার বিসিএসআইআর ভবনে অগ্নিসংযোগ করা হয়। বনানী এবং মহাখালীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা আগুনে ভস্মীভূত করে ফেলা হয়। যাত্রাবাড়ীতে মেয়ন হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজাও আগুনে পুড়িয়ে ফেলা হয়। এই অগ্নিসংযোগের ঘটনাগুলির সময় ফায়ার সার্ভিস ছিল প্রায় পুরোপুরিভাবে নিষ্ক্রিয়। কারণ, ফায়ার সার্ভিসের ৪টা গাড়িতে অগ্নিসংযোগসহ ১৩টা গাড়ি ভাংচুর করা হয় এবং ১৮জন ফায়ার ফাইটার আহত হয়। ফায়ার ফাইটিং অকার্যকর হয়ে পড়ার কারণে বিমান বাহিনীর 'এমআই-১৭১' হেলিকপ্টার থেকে বাকেটের মাধ্যমে বুড়িগঙ্গা নদী এবং হাতিরঝিল থেকে পানি তুলে আকাশ থেকে ফেলা হয়। বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে র‍্যাবের হেলিকপ্টার থেকে প্রথমবারের মতো বিক্ষোভকারীদের উপরে টিয়ার শেল নিক্ষেপ করতে দেখা যায়। ড্রোনের ব্যবহার কতটুকু হয়েছিল সেটা জানা না গেলেও এবারের ব্যর্থ অভ্যুত্থানে এয়ার সাপোর্ট যে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রেখেছিল, তা নিঃসন্দেহে বলা যায়। টোল প্লাজাগুলিতে কেন আগুন দেয়া হয়েছিল, সেটা সেসময় পরিষ্কার না হলেও এখন বোঝা যাচ্ছে যে, এগুলিকে ধ্বংস করা হয়েছে, যাতে করে ফ্লাইওভার এবং এক্সপ্রেসওয়েকে পুলিশ যেন ব্যবহার করতে না পারে। কারণ এই ফ্লাইওভারগুলির র‍্যাম্প মহাখালী-বনানী এবং যাত্রাবাড়ীতে বিক্ষোভকারীদের মূল অবস্থানের পিছনে ছিল। এগুলি বলে দেয় যে, এই পরিকল্পনা কতটা ডিটেলসে তৈরি করা হয়েছিল। এটা সাধারণ কারুর পরিকল্পনা নয়; এখানে নিঃসন্দেহে প্রফেশনাল লোকেরা জড়িত ছিল।

এই দিন শেষ হবার আগেই আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, তারা সকল সহিংসতার বিরুদ্ধে এবং যারা এই কাজগুলি করছে, তারা শিক্ষার্থীদের অংশ নয়। শিক্ষার্থীদের এই ঘোষণা সরকারের জন্যে একটা বিজয় ছিল। ভয়াবহ এই দিনটার শেষ হয় রাত সাড়ে ১১টার দিকে; যখন মিডিয়াতে প্রচার শুরু হয় যে, রাত ১২টা থেকে কারফিউ ঘোষণা করা হচ্ছে এবং সারা দেশে সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত হয়েছে। এই খবরেই বিক্ষোভকারীরা ধীরে ধীরে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলি ছাড়তে থাকে। শুক্রবার রাত ১২টা থেকে রোববার সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ ঘোষণা করা হয়। এর মাঝে ১২ ঘন্টা পর শনিবার দুপুর ১২টায় দুই ঘন্টার জন্যে কারফিউ শিথিলের ঘোষণা দেয়া হয়।

কারফিউ এবং সেনা মোতায়েন – ‘মোস্ট ডিসাইসিভ মোমেন্ট'
ঢাকার রাস্তায় সেনাবাহিনী। শুক্রবার রাতের পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি দলের পান্ডারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি; যদিও তারা পুরোপুরিভাবে হেরেও যায়নি। তবে এটা বলা যায় যে, শুক্রবারের মতো শনিবারও যদি একই দ্রুতি নিয়ে জ্বলতো, তাহলে পুলিশ, বিজিবি, আনসার নিঃসন্দেহে সামাল দিতে পারতো না। কাজেই সেই হিসেবে সেনা মোতায়েন ছিল পুরো ঘটনার 'মোস্ট ডিসাইসিভ মোমেন্ট'। অর্থাৎ এই এক সিদ্ধান্তেই পুরো ঘটনাপ্রবাহের মোড় ঘুরে গেছে; যদিওবা বিক্ষোভ ঠেকাবার মূল কাজটা পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং সরকারি পান্ডারাই করেছে!


২০শে জুলাই শনিবার কারফিউএর প্রথম দিনে সহিংসতা থামেনি। ইন্টারনেট বন্ধ থাকার পরেও মোবাইলে টু-জি সার্ভিস ব্যবহার করেই গুজব ছড়ানো হয় যে, খালেদা জিয়া মারা গেছেন। সহিংস আন্দোলন থেকে ছাত্রদের সড়ে যাবার পর আন্দোলন কতটা এগুবে তা নিয়ে যেমন প্রশ্নের উদ্রেক হয়, তেমনি কারফিউ ভেঙ্গে সহিংস আন্দোলন করার জন্যে যথেষ্ট জ্বালানি পাওয়া যাবে কিনা, সেব্যাপারেও ছিল সন্দেহ। হয়তো নিজেদের কর্মীদের উজ্জীবিত রাখতেই অভ্যুত্থানকারীদের নেতৃত্ব খালেদা জিয়ার মারা যাবার গুজবটা ছড়িয়েছিল। আর এই ব্যাপারটা এতটাই প্রভাব ফেলেছিল যে, ইন্ডেপেন্ডেন্ট টিভিতে খালেদা জিয়ার চিকিৎসকের বরাত দিয়ে নিশ্চিত করা হয় যে, খালেদা জিয়া মারা যাননি।

তবে এই দিনেই মিডিয়াতে প্রশ্ন উঠতে থাকে যে, সরকার যদি ছাত্রদের দাবিদাওয়া মেনে নেয়ার ঘোষণাটা দু'দিন আগে দিতো, তাহলে তো এতগুলি প্রাণহানি হতো না। আবার কেউ কেউ প্রশ্ন করতে থাকে যে, ছাত্রদের আন্দোলন আরেকটা পক্ষ যে হাইজ্যাক করছে, সেটা সরকারের ইন্টেলিজেন্সের অবশ্যই জানার কথা। তাহলে সরকার কেন আগেভাগে কোন ব্যবস্থা নিলো না? কেউ কেউ আবার বলতে থাকেন যে, সরকার এই সমস্যাটাকে 'মিসম্যানেজ' করেছে। ঘটনার শেষে সরকারের ইন্টেলিজেন্স ব্যবহার করার একটা সম্ভাব্য কৌশল সামনে দিয়ে ঘুরপাক খায়। হয়তো সরকার এই ঘটনাগুলি ঘটতে দিয়েছিল বিরোধী পক্ষগুলিকে খোলা ময়দানে আনার জন্যে। এতে করে কে কে এই পরিকল্পনার সাথে জড়িত, তা যথেষ্ট প্রমাণসহ সকলের সামনে হাজির হয়ে যাবে। তবে এই কৌশল অত্যন্ত বিপজ্জনক। কারণ একবার বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ পেয়ে গেলে এবং সরকারি টেলিভিশন ব্যবহার করে যদি বিরোধীরা কোন সম্প্রচার করে ফেলতে সক্ষম হয়, তাহলে আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় টিকে থাকা অত্যন্ত অনিশ্চিত হয়ে পড়বে। কাজেই খুব সম্ভবতঃ সরকার এটা হতে দেয়নি; বরং রাষ্ট্রের উপদেষ্টারা বলেছে যে, ১৯শে জুলাইএর ধ্বংসযজ্ঞের আগে যদি পুলিশ বেশি কঠোর হয়, বা কারফিউ বলবত করা হয় বা সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়, তাহলে ছাত্ররা বিএনপি-জামাতের বিক্ষোভের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে পারে। একারণেই পুলিশের কঠোর হওয়া বা কারফিউ দেয়া বা সেনা মোতায়েনসহ সকল কিছুই দু'দিন দেরিতে করা হয়েছে বলে মনে হয়েছে। ২২শে জুলাই গণভবনে প্রধানমন্ত্রী ব্যবসায়ীদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন যে, তিনি সেনাবাহিনীকে ছাত্রদের বিরুদ্ধে মোতায়েন করতে চাননি। এবং সেনাবাহিনী মোতায়েনের সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল নিতান্ত বাধ্য হয়েই।

কারফিউএর প্রথম দিনে নিঃসন্দেহেই পুরো মিডিয়াতে সেন্সরশিপ আরোপ করা হয়। একে তো বাসার বাইরে যেতে না পারা; তার উপর ইন্টারনেট না থাকা এবং টেলিভিশনে সকল চ্যানেলে জাবর কাটা সংবাদ প্রচারে জনজীবন দুর্বিসহ হয়ে পড়ে। ইন্টারনেটের উপরে নির্ভরশীল সকল সার্ভিস ব্যাহত হয় এবং জনজীবন বিপর্যস্ত হয়। মোবাইল ফোনে টু-জি সার্ভিস চালু থাকলেও মোবাইল রিচার্জ করা কঠিন হয়ে পড়ে। ইন্টারনেটের উপর নির্ভরশীল বিদ্যুৎ এবং গ্যাসের প্রি-পেইড মিটার সার্ভিসে ধ্বস নামে এবং লাখো মানুষের মাঝে হাহাকার পড়ে যায়।

কারফিউ ছিল অনেকটাই ঢিলেঢালা। কারণ পাড়া-মহল্লায় মানুষ বাইরে বের হচ্ছিলো এবং রিক্সা, গাড়ি এবং মোটরসাইকেলও চলেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ মোড় এবং প্রধান সড়কে যেকোন চলাচলে বাধা দেয়া হয়। এমনকি যারা হাসপাতালের কর্মী, তাদেরকেও যথেষ্ট প্রশ্নের সন্মুখীন হতে হয়েছে। সেনাসদস্যরা বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসার সদস্যদের সহায়তায় মোতায়েন হয়। একইসাথে আকাশে সেনাবাহিনীর 'বেল-২০৬/৪০৭' এবং 'এমআই-১৭১এসএইচ' হেলিকপ্টারের আনাগোণা দেখা যায়। দুপুর ১২টা থেকে ২টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল হলে হাজারো মানুষ রাস্তায় নেমে আসে এবং শুক্রবারের সহিংসতার চিহ্নগুলি অবলোকন করে। তবে দুপুর ২টায় কারফিউ পুনরায় বলবত করার সময় থেকে পুনরায় শুরু হয় সহিংসতা। এই সহিংসতার খবর মিডিয়াতে একেবারেই প্রচার করা হয়নি।

তবে বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দাদের থেকে জানা যায় যে, যথেষ্ট সহিংসতা হয়েছে এই দিনে। শনিবার মোহাম্মদপুর এবং যাত্রাবাড়ী মোড়ে হয়েছে সহিংসতা। দিনের বেলায় সেনাবাহিনীর হেলিকপ্টার আকাশে দেখা গেলেও রাতের বেলায় বিমান বাহিনীর 'বেল-২১২' হেলিকপ্টারের আনাগোণা ছিল উল্লেখযোগ্য। দুপুর ২টা থেকে শুরু সহিংসতা সন্ধ্যা পর্যন্ত লাগামহীনভাবে চলে। বিভিন্ন যানবাহনে আগুন দেয়া হয় এবং রোডব্লক তৈরি করা হয়। বিভিন্ন এলাকায় শতশত বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়; যেগুলি ছিলো শটগান, টিয়ার শেল, স্টান গ্রেনেড বা ককটেলের শব্দ। কারণ ক্রাউড কনট্রোল রোলে নিরাপত্তা বাহিনীর কাছে এগুলিই ছিল প্রধান অস্ত্র। তবে বিজিবি এবং সেনাবাহিনীর কাছে থাকা রাইফেল এবং মেশিন গানের কোন ব্যবহার হয়েছে কিনা, সেব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

কারফিউএর প্রথম দিনে সহিংসতা হলেও তা শুক্রবারের মতো ছিল না। রাস্তায় সেনাবাহিনী মোতায়েন এবং দেখামাত্র গুলির নির্দেশ বিক্ষোভকে যথেষ্টই দুর্বল করেছে। শুক্রবার রাতের পরিস্থিতি প্রমাণ করে যে, নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি দলের পান্ডারা পরিস্থিতি সামাল দিতে পারেনি; যদিও তারা পুরোপুরিভাবে হেরেও যায়নি। তবে এটা বলা যায় যে, শুক্রবারের মতো শনিবারও যদি একই দ্রুতি নিয়ে জ্বলতো, তাহলে পুলিশ, বিজিবি, আনসার নিঃসন্দেহে সামাল দিতে পারতো না। কাজেই সেই হিসেবে সেনা মোতায়েন ছিল পুরো ঘটনার 'মোস্ট ডিসাইসিভ মোমেন্ট'। অর্থাৎ এই এক সিদ্ধান্তেই পুরো ঘটনাপ্রবাহের মোড় ঘুরে গেছে; যদিওবা বিক্ষোভ ঠেকাবার মূল কাজটা পুলিশ, বিজিবি, আনসার এবং সরকারি পান্ডারাই করেছে!

ধীরে ধীরে নিয়ন্ত্রণ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় পুলিশের এপিসি থেকে ছোঁড়া হচ্ছে টিয়ার শেল। শটগান, টিয়ারশেল এবং স্টান-সাউন্ড গ্রেনেডের বাইরে ডিএমপির ক্রাউড কনট্রোল অস্ত্রগুলির মাঝে গুরুত্বপূর্ণ একটা হলো এপিসি। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিকে বিক্ষোভকারীদের দখলমুক্ত করতে এই এপিসিগুলির ছত্রছায়ায় পুলিশ অগ্রগামী হতে পারে। সাম্প্রতিক বিভিন্ন আন্দলনের সময় এই এপিসির ব্যাপক ব্যবহার দেখা গেছে। ২০২৩এর জুলাই মাসেই বিরোধী দলের সাথে যাত্রাবাড়ীতে পুলিশের সংঘর্ষ হয়; যেখানে অনেকগুলি এপিসি মোতায়েন হয়েছিল। ২০২৪ সালেও এর ব্যতিক্রম হয়নি।


২১শে জুলাই রোববার কারফিউএর দ্বিতীয় দিনে সকাল ১০টার পরিবর্তে বিকেল ৩টায় দুই ঘন্টার জন্যে কারফিউ শিথিল করা হয়। এতে ধারণা করা যায় যে, নিরাপত্তা বাহিনী আন্দোলনকারীদের নেতৃত্বকে পাকড়াও করতে যতটা সময় লাগবে বলে ধারণা করেছিল, তার চাইতে বেশি সময় লাগছে। এছাড়াও কারফিউএর মেয়াদ অনির্দিষ্টকালের জন্যে থাকবে বলে ঘোষণা দেয়া হয়। ইন্টারনেট সংযোগ ফিরিয়ে দেয়ার কথাগুলিও আগের মতোই ধোঁয়াশা রেখে ঘোষণা দেয়া হতে থাকে। বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভের সাথে সম্পৃক্ত সন্দেহে গ্রেপ্তার শুরু হয়েছে বলে মিডিয়াতে খবর আসতে থাকে।

কারফিউএর মাঝেই বিদ্যুৎ প্রি-পেইড মিটার এবং মোবাইল রিচার্জের জন্যে মানুষ হুমড়ি খেয়ে পড়ে। বাজারে যেকোন পণ্য তোলার সাথেসাথেই বিক্রি হয়ে যায়; যদিওবা মূল্য ছিল আকাশচুম্বী। ব্যাংকের এটিএমগুলি অকার্যকর হয়ে পড়ে; অনেকেই অর্থের কষ্টে পড়ে যান। যে মোড়গুলিতে শনিবার সেনা মোতায়েন করা হয়নি, সেই মোড়গুলিতে রোববার সেনাসদস্যদের দেখা যেতে লাগলো। মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডে সেনাবাহিনীর সদস্যদেরকে পুলিশ, বিজিবি এবং আনসারের সহযোগিতায় দেখা গেছে। মোহাম্মদপুর আসাদ গেটে রেজর ওয়্যার এবং বালুর বস্তা দিয়ে ব্যারিকেড দিয়েছিল নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা। মূলতঃ মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ড বা ধানমন্ডির দিক থেকে কেউ যাতে গণভবনের দিকে যেতে না পারে, সেজন্যেই এই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছিল। এই মোড়ে কোন সহিংসতার চিহ্ন না থাকলেও মোহাম্মদপুর আসাদ এভিনিউএ টাউন হল থেকে বাস স্ট্যান্ডের দিকে যাবার পথে ধ্বংসযজ্ঞ এবং পোড়ানো গাড়ি ছিল লক্ষ্যনীয়। যদিও মোহাম্মদপুর বাস স্ট্যান্ডের মূল সংঘর্ষ ছিল বসিলার দিক থেকে আক্রমণ করা বিক্ষোভকারীদের সাথে, তথাপি আসাদ এভিনিউ এবং আশেপাশের সকল ছোট ছোট রাস্তা এবং গলি থেকে নিরাপত্তা বাহিনীর উপর হামলা হয়; যা ঠেকাতে বাহিনীর সদস্যদের হিমসিম খেতে হয়েছে।

কারফিউএর দ্বিতীয় দিনে যে ব্যাপারটা সকলের সামনে পরিষ্কার হচ্ছিলো তা হলো, বিক্ষোভকারীরা টার্গেট নিয়েই কিছু অঞ্চলের নিয়ন্ত্রণ নেবার চেষ্টা করেছে। বাকি এলাকাগুলিতে কাউকে দেখাই যায়নি। একাত্তর টেলিভিশনের একজন সাংবাদিক ২০শে জুলাই রাতে এই ব্যাপারটাকে তুলে ধরে বলেছিলেন যে, তাদের অভিজ্ঞতা বলছে যে, বিক্ষোভকারীরা পরিকল্পনা করেই নেমেছে। তারা যে জায়গাগুলি নিয়ন্ত্রন নেবার চেষ্টা করেছিল, সেই জায়গাগুলি তারা কিছুতেই ছেড়ে যায়নি। তারা পিছু হঠলেও কাছেই অবস্থান করেছে। এমনকি রাতের বেলাতেও তারা সেই স্থান পুরোপুরি ছেড়ে যায়নি। পরের দিন শুরু হলেই মানুষের সংখ্যা বাড়িয়েছে এবং আক্রমণে গিয়েছে।

রোববার সন্ধ্যার পর মিডিয়াতে ধীরে ধীরে কারফিউএর মাঝে চলা সহিংসতার খবর প্রচার করা শুরু হয়। প্রথমে সরাসরি না বললেও এটা বোঝা যায় যে, মিডিয়া রিপোর্টগুলি ছিল শনিবার এবং রবিবারের; অর্থাৎ কারফিউ চলার সময়ের। যাত্রাবাড়ী, রামপুরা, মোহাম্মদপুরসহ বিভিন্ন এলাকার নাম উল্লেখ করা হতে থাকে। রোববার সন্ধ্যায় প্রথমবারের মতো যাত্রাবাড়ীতে ধারণকৃত সেই দিনের দুপুর ১টার রিপোর্ট প্রচার করা হয়। সেখানে দেখা যায় যে, ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের মাঝে কংক্রিটের ডিভাইডারের মতো ভারি বস্তু রাস্তার মাঝে এনে ব্যারিকেড দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে। এছাড়াও বাস এনে ৬০ ডিগ্রি আড়াআড়ি রেখে রাস্তায় ব্যারিকেড দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে সেই ব্যারিকেডের নিয়ন্ত্রণ হারাবার সময় বাসটাতে আগুন দিয়ে দেয় তারা। সরাসরি না বললেও বোঝা যায় যে, এই ঘটনাগুলি ঘটেছিল কারফিউএর মাঝে। এবং যেকোন হতাহতের খবর তখন পুরোপুরিভাবে সেন্সর করা হয়।

রোববার কারফিউ চলাকালীন সময়ে সারাদিনে বহু মানুষ রাস্তায় বেরিয়েছে তাদের জরুরি কর্মসম্পাদনের জন্যে। এই মানুষগুলিকে রাস্তায় বের হলেও পুলিশ এদের কাউকে বাধা দেয়নি - যতক্ষণ পর্যন্ত তারা গুরুত্বপূর্ণ মোড় থেকে দূরে থেকেছে। অর্থাৎ এই কারফিউ মূলতঃ ১৪৪ ধারার মতো কাজ করেছে। পাড়া-মহল্লায় কোন পুলিশের টহল দেখা যায়নি। পুলিশ-বিজিবি-সেনাবাহিনীকে শুধুমাত্র গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলিতেই দেখা গিয়েছে। মূলতঃ অভ্যুত্থানকারীরা যে জায়গাগুলিকে টার্গেট করেছিল, নিরাপত্তা বাহিনী ঠিক সেই জায়গাগুলিকেই নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্যে সর্বশক্তি নিয়োগ করেছে।

রোববার সন্ধ্যার পর থেকে রিপোর্ট আসতে থাকে বিএনপি, জামাতে ইসলামি এবং তাদের সমমনা দলগুলির নেতাকর্মীদের মাঝে কাকে কাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে এবং কতদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। এর আগে শনিবারেও বেশকিছু নেতাকর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। তবে কারফিউ তুলে না দেয়ায় বোঝা যাচ্ছিলো যে, মূল বা আঞ্চলিক সমন্বয়কদের অনেকেই তখনও পুলিশের চোখ ফাঁকি দিতে সক্ষম হয়েছে। তাছাড়া কেউ যাতে সহজে ঢাকা ত্যাগ করে সটকে পড়তে না পারে, অথবা সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে পালিয়ে যেতে না পারে, সেজন্যেই হয়তো কারফিউ বলবত রাখা হয়েছে। তথাপি রোববার রাতে ঘোষণা আসে যে, কারফিউ থাকবে কিনা, সেই সিদ্ধান্ত অনেকটাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হাত থেকে আঞ্চলিক জেলা প্রশাসকের হাতে তুলে দেয়া হয়েছে। শুধুমাত্র ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, গাজীপুর এবং নরসিংদীর কারফিউএর সিদ্ধান্ত দেয়া হবে কেন্দ্রীয়ভাবে। আর পরদিন কারফিউ শিথিল হচ্ছে দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত তিন ঘন্টার জন্যে। এই সিদ্ধান্তগুলি বলে দেয় যে, পরিস্থিতি নিরাপত্তা বাহিনীর নিয়ন্ত্রণের মাঝেই চলে এসেছে।

রোববার শেষেও ইন্টারনেট চালুর কোন ঘোষণা আসেনি। কারণ হিসেবে ফাইবার অপটিক কেবলের ক্ষতির কথা উল্লেখ করা হয়। আইসিটি মন্ত্রণালয় থেকে বলা হয় যে, দেশের বিভিন্ন স্থানে ৪০টা পয়েন্টে ফাইবার অপটিক কেবল কেটে ফেলা হয়েছে। এই খবরে প্রশ্ন করতেই হয় যে, যারা এই কাজটা করেছে, তারা ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক সম্পর্কে কতটুকু জ্ঞান রাখে এবং কোন উদ্দেশ্য হাসিলে তারা এই কাজটা সম্পাদনে অগ্রণী হয়েছিল? তবে এই ঘটনায় বাংলাদেশের ইন্টারনেট সার্ভিস এবং ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্কের মারাত্মক দুর্বলতা প্রকাশ পেয়েছে।

আনুগত্যের শপথ অনুষ্ঠান


২২শে জুলাই সোমবার দুপুর ২টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করার কথা বলা হলেও মানুষ সারাদিনভরই রাস্তায় ছিলো। নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কাউকেই বাধা দেয়নি। আসলে বিক্ষোভের মূল কেন্দ্রগুলি ব্যাতীত অন্য কোথাও নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের দেখাই যায়নি। ইন্টারনেট বন্ধে মানুষের ভোগান্তি বাড়তেই থাকে। সকল রাস্তায় রিক্সা চলেছে এবং সকল বাজার কারফিউএর মাঝেই চলমান ছিল। দিনের বেলায় এবং সন্ধ্যায় বিমান বাহিনী এবং সেনাবাহিনীর 'বেল-২১২' এবং 'বেল-২০৬/৪০৭' হেলিকপ্টারের টহল চলে। সন্ধ্যায় একনাগারে ৫০ মিনিট সেনাবাহিনীর 'বেল-২০৬/৪০৭' হেলিকপ্টারের নিচু দিয়ে টহল ছিল উল্লেখ করার মতো। রাত ৮টার পরেও অবশ্য বিমান বাহিনীর 'বেল-২১২' এবং 'আমআই-১৭১' হেলিকপ্টারের আনাগোণা চলতে থাকে। এতে প্রমাণ হয় যে, পরিস্থিতি এখনও শতভাগ নিয়ন্ত্রণে আসেনি। নরসিংদীর কারাগার থেকে লুট হওয়া ৮৫টা অস্ত্রের মাঝে ৭০টা তখনও পাওয়া যায়নি। এছাড়াও ৮২৬ জন কয়েদির বেশিরভাগেরই তখন পর্যন্ত হদিস পাওয়া যায়নি। বিশেষ করে পালিয়ে যাওয়া ৯জন এবিটি এবং জেএমবি সদস্য তখনও একটা হুমকি হিসেবে রয়ে গেছে। এই দিনের মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয় যে, ৬ শতাধিক রাজনৈতিক কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

এই দিনে বিকেলে প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে ব্যবসায়ীদের বিশাল এক গ্রুপকে ডেকে নিয়ে আসা হয়। প্রকৃতপক্ষে এটা ছিল সরকারের প্রতি ব্যবসায়ীদের আনুগত্যের শপথ অনুষ্ঠান। ব্যবসায়ীদের মাঝ থেকে কয়েকজনকে কথা বলতে দেয়া হয়; যারা মূলতঃ আনুগত্য প্রকাশের বক্তব্যগুলি দেন। আর সরকারের পক্ষ থেকে প্রথমবারের মতো 'আন্দোলন'এর সাথেসাথে 'ষড়যন্ত্র' শব্দটা ব্যবহার করা হয়। ব্যবসায়ীদের মাঝ থেকে শেষ বক্তা হিসেবে বসুন্ধরা গ্রুপের প্রধানকে আমন্ত্রণ জানানো হয় এই ঘটনায় জড়িতদেরকে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি প্রদানের প্রস্তাব দেয়ার জন্যে। প্রধানমন্ত্রী তার কথাগুলিকে প্রতিফলিত করে ঘোষণা দেন যে, এর আগে বারংবার জামাতে ইসলামী এবং তাদের সহযোগীদেরকে লঘু দন্ড দেয়া হলেও এবার সেটা করা হবে না। কাজেই এটা মোটামুটিভাবে ধরেই নেয়া যায় যে, আইনী পদক্ষেপগুলি এবারে রাষ্ট্রদ্রোহীতার দিকেই যাবে। সরকার এই অনুষ্ঠানকে ব্যবহার করেছে কঠোর পদক্ষেপে যাবার এপ্রুভাল হিসেবে। এই অনুষ্ঠানে তথ্য মন্ত্রণালয় ৭ মিনিটের একটা ডকুমেন্টারি দেখায় এবং একইসাথে তথ্য প্রতিমন্ত্রী এবং প্রধানমন্ত্রী সহিংসতার কিছু অজানা তথ্যও তুলে ধরেন। উভয়েই পুলিশের উপর অত্যাচার এবং পুলিশ হত্যার কথা উল্লেখ করেন। একই দিনে পুলিশ এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয় যে, সহিংসতায় ৩ জন পুলিশের প্রাণহানি ঘটেছে এবং বর্তমানে আরও ৩ জন পুলিশ হাসপাতালের আইসিইউতে আশংকাজনক অবস্থায় রয়েছেন। সর্বমোট ১,১১৭ জন পুলিশ এই ক'দিনে আহত হয়েছেন। যে ব্যাপারটা নিশ্চিত তা হলো, গত কয়েকদিনে কোন মিডিয়াতে পুলিশ হত্যার কথা প্রচার করা হয়নি। খুব সম্ভবতঃ পুলিশ সদস্যদের মনোবলে যাতে কোন আঘাত না লাগে, সেটা নিশ্চিত করতেই এই খবর সেন্সর করা হয়েছিল।

গ্রেপ্তার এবং গ্রেপ্তার


২৩শে জুলাই মঙ্গলবার ঢাকা, গাজীপুর, নারায়নগঞ্জ এবং নরসিংদীতে কারফিউ শিথিল করা হয় দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। বাকি অঞ্চলগুলিতে মোটামুটিভাবে সকাল বা দুপুর থেকে সন্ধ্যার আগ পর্যন্ত কারফিউ শিথিল করার সিদ্ধান্ত দেয়া হয়। এটা নিশ্চিত যে, মূলতঃ ধরপাকড়ের জন্যেই কারফিউ রাখা হয়েছে। বিভিন্ন আবাসিক অঞ্চলে, বিশেষ করে বস্তিগুলিতে চিরুনি অভিযান এবং ব্লক রেইড চলছে। চেহারা দেখে দেখে প্রতিটা মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে এবং সন্দেহজনক হলে বা চিনে ফেললে তাদেরকে ধরে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। যাদেরকে চেনা সম্ভব হচ্ছে, তারা নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে তৎক্ষণাৎ ভয়াবহ মারধরের শিকার হচ্ছে। গত কয়েক দিনের মাঝে এদের মধ্যেই অনেকে সুযোগ পেয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যদের এক হাত দেখে নিয়েছে। এখন নিরাপত্তা বাহিনী এদেরকেই খুঁজে বেড়াচ্ছে। বিশেষ করে এই মানুষগুলিকে যারা নির্দেশ দিয়েছে বা অর্থায়ন করেছে, তাদেরকে খোঁজা হচ্ছে। দুপুরে মিডিয়া রিপোর্টে বলা হয় যে, ঢাকায় ১,২০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে; বগুড়ায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৯০০ জনকে। সারা দেশে প্রায় ২,৫০০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মোবাইল কমিউনিকেশন খতিয়ে দেখা হচ্ছে যে, কারা তাদেরকে নির্দেশনা দিচ্ছিলো।

সকাল থেকে সেনাবাহিনীর 'বেল-২০৬/৪০৭' হেলিকপ্টার নিচু দিয়ে উড়ে টহল দিয়েছে। এই দিনে সারা দিন শেষে রাতের বেলাতেও আকাশে হেলিকপ্টার টহল দিতে দেখা গেছে। বিশেষ করে 'বেল-২০৬/৪০৭'এর রাতের বেলায় টহল ছিল অস্বাভাবিক। প্রথমবারের মতো ঘোষণা দেয়া হয় যে, ২২শে জুলাই রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সংযোগ দেয়া শুরু করা হবে। তবে সোশাল মিডিয়ার একসেস পেতে জনগণকে আরও অপেক্ষা করতে হবে। আপাততঃ গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিস, ব্যাংক, রপ্তানি পণ্য এবং সার্ভিস নিয়ে কাজ করে এমন সেক্টর, মিডিয়া, ইত্যাদি সেক্টর ইন্টারনেট লাইন পেতে প্রাধান্য পাবে। তবে ইতোমধ্যেই ইন্টারনেট না থাকায় সাধারণ জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে। ইন্টারনেট না দিতে পারার ব্যাপারটা জনগণ একেবারেই মেনে নিতে পারেনি; যা ব্যাপক জনরোষের কারণ হতে পারতো। শুধুমাত্র অভ্যুত্থানকারীদের বেশিরভাগ গ্রেপ্তার হবার কারণেই হয়তো পরিস্থিতি আবারও খারাপের দিকে যায়নি।

জুলাই ব্যর্থ অভ্যুত্থান – কার জন্যে কি শিক্ষা


এই পুরো ঘটনাপ্রবাহের মাধ্যমে যে ব্যাপারগুলি পুরো দেশের মানুষের কাছে পরিষ্কার হতে হবে তা হলো -

১) সরকার এবং রাষ্ট্র দু'টার দু'টা আলাদা 'সোউল' বা আত্মা রয়েছে। এর প্রথমটা অস্থায়ী; পরেরটা মোটামুটিভাবে স্থায়ী। একটা পরিবর্তন হলেও অপরটা থেকে যায়। উদাহরণ – ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতনের পরেও রাষ্ট্র আগেরটাই রয়েছে। মিশরের হোসনি মুবারক সরকার পতনের পরেও মিশর রাষ্ট্র রয়ে গেছে।

২) গণ আন্দোলন বা গণ অভ্যুত্থান রাষ্ট্রে পরিবর্তন আনার মেথড হতে পারে না। কারণ এই মেথডে এগুতে গেলে রাষ্ট্রের ক্ষতি হবার সম্ভাবনা থাকে। একদিকে যেমন রাষ্ট্র ধ্বংস করে রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করার চেষ্টাটা নিতান্তই শিশুসুলভ; অন্যদিকে রাষ্ট্র ধ্বংস করার দিকে এগুলে রাষ্ট্র বাধা দেবে এটাই স্বাভাবিক।

৩) রাষ্ট্রের 'মোস্ট ডিসাইসিভ' ফ্যাক্টর সবসময়ই সেনাবাহিনী।

৪) যেকোন ইস্যু-ভিত্তিক আন্দোলনের ব্যাপারে সাবধান; আন্দোলনকারীরা অন্য কারুর দ্বারা ব্যবহৃত হতে পারে; এবং জেনে বা না জেনেই অন্য কারুর এজেন্ডা বাস্তবায়ন করে ফেলবে। আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করলে আন্দোলনকারীরা রাষ্ট্র ধ্বংসের কারণও হতে পারে।



রাষ্ট্রের কাছে যে ব্যাপারগুলি পরিষ্কার হতে হবে তা হলো -

১) বুদ্ধিবৃত্তিক স্তম্ভের উপর স্থাপিত না হওয়ায় রাষ্ট্র দুর্বল। তাকে বারংবার ইমার্জেন্সি ফায়ার সার্ভিসের কাজ করতে হচ্ছে। কিছুদিন আগেই কুকি-চিন দমনে শক্তি প্রয়োগ করতে হয়েছে। আবার মিয়ানমার সীমান্তে বিজিবি, কোস্ট গার্ড ছাড়াও সেনাবাহিনী এবং নৌবাহিনী মোতায়েন করতে হয়েছে। আফ্রিকার উপকূলে জলদস্যুদের হাত থেকে নিজেদের জাহাজের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি।

২) ভূরাজনৈতিক এবং ভূকৌশলগত কারণে বাংলাদেশের উপর অনেকের ঈগল-দৃষ্টি রয়েছে; এবং তারা সুযোগ বুঝে এই দেশের নিয়ন্ত্রণ নেয়ার চেষ্টা করতেই থাকবে; বারবার আগুন লাগবে; বারবার রাষ্ট্র ফায়ার সার্ভিসের কাজ করতে থাকবে। কুকি-চিনের উত্থানের পর সরকার মাউন্টেন পুলিশ গঠন করেছে। এর আগে সন্ত্রাস দমনে সরকার র‍্যাব, সোয়াট, র‍্যাবের স্পেশাল ফোর্স, আনসার গার্ড ব্যাটালিয়ন, সিআরটি, কিউআরটি, পিবিআই, সেনাবাহিনীর প্যারাকমান্ডো ব্রিগেডের এন্টি-টেররিজম ইউনিট গঠন করেছে। অর্থনৈতিক চাপে পড়ে অর্থনীতিবিদরূপী পশ্চিমা দালালদের প্রভাবে আইএমএফ-এর মতো মাফিয়া সংস্থা থেকে ঋণ নিতে বাধ্য হয়েছে; কারণ তারা বলা শুরু করেছিল যে, বাংলাদেশ বুঝি শ্রীলংকা হয়ে গেল!

৩) ভূরাজনৈতিক অস্থিরতা যত বাড়তে থাকবে, বাংলাদেশের সামনে নতুন নতুন চ্যালেঞ্জ তত বেশি বেশি করে আসতে থাকবে। মিয়ানমারে গৃহযুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের উপর চাপ পড়েছে। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরু হওয়ায় বাংলাদেশের অর্থনীতির উপর চাপ পড়েছে। একই যুদ্ধের কারণে রাশিয়ার সাথে বাংলাদেশের জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য হুমকির মাঝে পড়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের উত্তেজনার কারণে বাংলাদেশ এবং চীনের সম্পর্ক চাপের মাঝে পড়ছে।

৪) রাষ্ট্র যেহেতু বুদ্ধিবৃত্তিক স্তম্ভ না তৈরি করে ফায়ার সার্ভিসের কাজ করে যাচ্ছে, তাই পরবর্তী আগুন কোথায় লাগতে পারে, সেটাই হয়ে যাবে আলোচনা। যেমন – এবারে বাংলাদেশের ইন্টারনেট এবং ফাইবার অপটিক নেটওয়ার্ক কতটা দুর্বল, তা পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে। কাজেই সামনে হ্যাকিংএর মতো কিছু আসতেই পারে। হয়তো কোন হ্যাকিং গ্রুপ দেশের বিদ্যুৎ বা ইন্টারনেট সংযোগ আটকে রেখে অর্থ দাবি করবে। এক সপ্তাহ ইন্টারনেট না থাকলে কি হতে পারে, সেটা বাংলাদেশের মানুষ দেখেছে। এটা যদি এক মাস হয়, তাহলে কি হতে পারে ভেবে দেখুন তো! এরকম একটা কাজ দেখে মনে হবে যে, এই হ্যাকিং গ্রুপ কোন প্রাইভেট গ্রুপ; প্রকৃতপক্ষে এরা কোন রাষ্ট্র দ্বারা পুষ্ট। আরও একটা ক্রাইসিস হতে পারে পার্বত্য চট্টগ্রাম নিয়ে। কুকি-চিনকে সবাই দেখেছে; এরা খুবই ক্ষুদ্র। কিন্তু যদি বড় কোন গ্রুপ আবারও সহিংস হয়ে ওঠে, তখন রাষ্ট্র কি করবে? আবার, কারুর উস্কানিতে যদি ধর্মীয় সহিংসতা শুরু হয় (যেমন, কুকি-চিন ছিল খ্রিস্টান গ্রুপ)? যদি পার্শ্ববর্তী ভারতে হিন্দুত্ববাদী নীতির কারণে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি হয়, তখন বাংলাদেশ কি করবে?

৫) ভারত এবং চীনের মাঝে যদি সামরিক উত্তেজনা সৃষ্টি হয় তখন বাংলাদেশ কি করবে? যদি ভারত বাংলাদেশের পদ্মা সেতু এবং মাতারবাড়ি বন্দর সামরিক রসদ পরিবহণে ব্যবহার করতে চায়, তখন বাংলাদেশ কি চীনের বিরুদ্ধে যাবে? যদি যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পক্ষ নিয়ে বাংলাদেশের উপর চাপ সৃষ্টি করে (যেমন বাংলাদেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে গার্মেন্টস রপ্তানি অস্থায়ীভাবে বন্ধ করে দেয়া), তাহলে বাংলাদেশ কি চীনের বিপক্ষে গিয়ে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে ভারতকে সামরিক ট্রানজিট দেবে? বাংলাদেশ যদি যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের চোখ রাঙ্গানি উপেক্ষা করে, তাহলে এর ফলাফল হজম করার সক্ষমতা কি বাংলাদেশের রয়েছে? প্রশ্নগুলির উত্তর কঠিন হবে যতক্ষণ পর্যন্ত বুদ্ধিবৃত্তিক স্তম্ভের উপর রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত না হবে।

54 comments:

  1. বুদ্ধিবৃত্তিক স্তম্ভ সব থেকে বেশী প্রয়োজন।

    ReplyDelete
    Replies
    1. জ্বি অবশ্যই! নাহলে ফায়ার ফাইটারের কাজ করতে হবে সারাজীবন!

      Delete
    2. আপনার বিস্তারিত তথ্যপূর্ণ বিশ্লেষণ পুরোটা পড়লাম। খুব ভাল লেগেছে। কিছু জিনিস এখনো পরিষ্কার না। প্রধানমন্ত্রী চীন সফর শেষে যে সাংবাদিক সম্মেলন করলেন সেটাই ছিল টার্নিং পয়েন্ট। প্রশ্ন হল তিনি কেন এমন অরাজনৈতিক এবং অবিবেচক বক্তব্য দিলেন? তাঁর রাজনৈতিক উপদেষ্টার কি পরিস্থিতি আঁচ করতে পারেন নি? অন্য বিষয়টি হল বৈষম্যবিরোধী ছাত্রদের শেষ লক্ষ্য কি ছিল বলে প্রতীয়মান হয়? অভ্যত্থান করে সরকার গঠন করার কোন পরিকল্পনা তাদের ছিল বলে মনে হয়? সরকার এখনো কেন ডিবি হেফাজতে তাদেরকে নিয়ে বালখিল্যতার পরিচয় দিচ্ছে?

      Delete
    3. আপনাকে ধন্যবাদ। একটু কষ্ট করে অন্য কমেন্টগুলির উত্তরও পড়ে নেবেন। আশা করি আপনার বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে।

      Delete
  2. 1/ আমেরিকার সাহায্য ছাড়া বিএনপি এতো বড় প্ল্যান করবে বলে মনে হয় না৷ যদি আমেরিকা ইনভলভ থাকে সে তো আর্মি দিয়ে ক্যু করতে পারে৷ এইটাই তার স্টাইল।?
    ২. এতো ছাত্র মারা গেলো, অন্ধত্ব বরণ করলো এই ব্যাপারে আপনার মন্তব্যনেই।
    ৩. বেশ কিছু যায়গাই আপনি নিজেকে কন্ট্রাডিক্ট করেছেন। যেইসব ইনফো ব্যাবহার করে উপসংহারটেনেছেন, সেইগুলো সরকারের দেয়া? এইগুলো কতোটা বিশ্বাসযোগ্য? ব্রডব্যান্ডের বিষয়ে সকলেই বলেছে যে সরকারের নর্দেশে বন্ধছিলো।
    ৪/ আমার ব্যাক্তিগত এসেসমেন্ট হলো ওই রাতে নেট বন্ধ না হলে সরকার পড়ে যেত।
    ৫. আগামীতে কি আন্দোলন বাড়তে পারে?? সরকার কি মেয়াদ শেষ করতে অয়ারবে??
    ৬/ আর্মি কোন পদক্ষেপ নিবে কিনা??
    ৭/ অন্য কোন আদর্শিক শক্তির ক্ষমতা নেওয়ার সম্ভাবনাকতোটুকু?? যেহেতু এখন বাংলাদেশেএকটা পলিটিকাল ভ্যাকুয়াম কাজ করছে।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ যে আপনি সময় নিয়ে পড়ে এই মন্তব্যগুলি করেছেন। আপনার প্রশ্নগুলি এই লেখাকে আরও সমৃদ্ধ করবে বলে আশা রাখি।

      ১। আপনি কি করে নিশ্চিত হলেন যে, তারা এই পরিকল্পনার কিছুই জানতো না? তারা সাধারণতঃ কোন প্রমাণ রেখে এই কাজগুলি করে না। তবে ধরণ দেখলে অনেক ক্ষেত্রেই বোঝা যায়। ১৯৫০এর দশক থেকে আমেরিকা সকল ধরণের অভ্যুত্থান করেছে বা করতে সহায়তা দিয়েছে। এর মাঝে অনেক ক্ষেত্রেই সেনাবাহিনী সরাসরি জড়িত ছিল না। কারণ সেসব ক্ষেত্রে সেনাবাহিনীতে কাজটা করার মতো ব্যক্তিগুলি তাদের হাতে ছিল না। যেমন - ১৯৬১ সালে কিউবায় 'বে অব পিগস ইনভেশন'; ২০০৪ সালে ইউক্রেনে অরেঞ্জ রেভোলিউশন।

      ২। মন্তব্য করলে কি এই মানুষগুলি জীবন ফিরে পাবে? নাকি অভ্যুত্থান সফল হবে? এই মন্তব্য করার লক্ষ্য কি হবে? প্রকৃতপক্ষে কোন লক্ষ্য ছাড়া আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করার কারণেই এই মানুষগুলিকে জীবন দিতে হয়েছে। তারা না পেরেছে সমাজ পরিবর্তন করতে, না পেরেছে সরকার পরিবর্তন করতে; উল্টো তারা বিরোধী দল দ্বারা ব্যবহৃত হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত তারা সরকারের হাতকে শক্তিশালী করেছে। এখানে দুই রাজনৈতিক দলই তাদেরকে ব্যবহার করে ছুঁড়ে ফেলে দিলো। এই জেনারেশনকে সমাজ পরিবর্তনের কাজে আপনি সহজে আনতে পারবেন না।

      ৩। তথ্যে ভুল থাকতেই পারে; কারণ কোন তথ্যই আমার নিজের তৈরি করা নয়। অন্য কারুর তথ্য ব্যবহার করলে এই সম্ভাবনা থেকেই যায়। দেশের পরিস্থিতি যা ছিল, তাতে নিজে নিজে তথ্য সংগ্রহ করাটা সুইসাইডের শামিল ছিল। এখানে বহু তথ্য ব্যবহার করিনি সত্যতার ঘাটতি থাকার কারণে, অথবা ইন্টারনেট না থাকার কারণে। তবে যেসব তথ্য এখানে ব্যবহার করা হয়েছে, তা নিঃসন্দেহে ফেইসবুকের মিথ্যা খবরের চাইতে ভালো মনে হয়েছে বলেই ব্যবহার করা হয়েছে। বেশকিছু তথ্য রয়েছে ফার্স্ট-হ্যান্ড; যেগুলি আবার জাতীয় নিরাপত্তার কারণে এখানে পোস্ট করা হয়নি। তবে সেগুলির অনেকগুলিই এখানে দেয়া তথ্যকে ভেরিফাই করে। তবে সেগুলি কোনগুলি, সেটা খোলাখুলিভাবে বলা যাচ্ছে না বলে দুঃখিত।

      ৪। আপনার নিজস্ব এসেসমেন্ট থাকতেই পারে। অনেকেরই রয়েছে। তবে ইন্টেলিজেন্স ছাড়া ২০শে জুলাইএর আগে এই পরিকল্পনা কতটা প্রি-প্ল্যানড ছিল, তা বের করাটা অত্যন্ত দুরূহ ছিল। বিশেষ করে ইন্টারনেট হার্ড লাইন কেটে ফেলার তথ্য জানার আগে অথবা বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ টার্গেট হয়েছিল কিনা সেব্যাপারে নিশ্চিত হবার আগে।

      ৫। আল্লাহই একমাত্র ভবিষ্যৎ জানেন। আমরা শুধু আমাদের বুদ্ধি ব্যবহার করে ধারণা করতে পারি। যেকোন সরকারের বিরুদ্ধে একটা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা ব্যর্থ হবার অর্থ হলো সেই সরকারের অভ্যন্তরীণ দিক থেকে অত্যন্ত শক্তিশালী অবস্থানে চলে যাওয়া। এবং সেই অভ্যন্তরীণ অবস্থান সাধারণতঃ দেশের বাইরেও প্রতিফলিত হয়; যেটা তুরস্কের ক্ষেত্রেও হয়েছে ২০১৬ সালের ব্যর্থ অভ্যুত্থানের পর। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সেটা কিছু ক্ষেত্রে হতে পারে। বাকি ক্ষেত্রে ভূরাজনৈতিক বাস্তবতা বাংলাদেশকে আরও চাপের মাঝে রাখবে। যেমন, সাম্প্রতিক সময়ে মিয়ানমারের সাথে সীমান্ত সমস্যা হয়েছে, আরাকান আর্মির ইস্যু তৈরি হয়েছে, কুকি চিন ইস্যু এখনও চলছে, আইএমএফএর কাছ থেকে ঋণ নেয়া হয়েছে, এখন এটা হলো। নতুন নতুন সমস্যা আসছেই একটার পর একটা। একারণেই বলেছি যে রাষ্ট্র ফায়ার ফাইটারের ভূমিকায় রয়েছে।

      ৬। আর্মির আনুগত্য কোথায় রয়েছে, সেটা এই বিশ্লেষণেই বলা হয়েছে। আর্মি ছিল 'মোস্ট ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর'। আর কেউ যদি রাষ্ট্র ভেঙ্গে ফেলতে শুরু করে, তখন এটা আশা করা বোকামি যে রাষ্ট্র চুপচাপ বসে থাকবে, অথবা যারা ভাঙছে, তাদের পক্ষ নেবে। এই চিন্তা শিশুসুলভ। কারণ যারা এটা ভাবছে, তারা রাষ্ট্র এবং সরকারের মাঝে পার্থক্য ধরতে পারে না। এটা পলিটিক্যাল সায়েন্সের একেবারেই শুরুর লেসন। ২০শে জুলাই আর্মি রাস্তায় না নামলে অথবা কারফিউ না দেয়া হলে অভ্যুত্থানকারীরা সাফল্য নিয়ে আশাবাদী থাকতেই পারতো। কারণ ১৯শে জুলাই রাতে নিরাপত্তা বাহিনী এবং সরকারি পান্ডারা খুবই কোণঠাসা অবস্থায় ছিল; যদিও তারা হেরে যায়নি। তবে বিটিভি ভবনের নিয়ন্ত্রণ নিতে না পারাটা অভ্যুত্থানকারীদের জন্যে আরেকটা বড় ব্যর্থতা ছিল। খুব সম্ভবতঃ ইনফরমেশন কম্পার্টমেন্টালাইজেশনের কারণে এক্সেকিউশনের ক্ষেত্রে সমন্বয়ের সমস্যা হয়েছিল তাদের। প্ল্যান হয়তো গোপন ছিল বটে, কিন্তু এক্সেকিউট করতে পারেনি।

      ৭। ভবিষ্যৎ আল্লাহই জানেন। আর সকল তথ্য তো ব্যক্তিবিশেষের হাতে থাকে না; যা কিনা রাষ্ট্রের হাতে থাকে। এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা সম্পর্কেই বা কে ধারণা করেছিল? "ঈদের পরের আন্দোলন" যে এমন হতে পারে, সেটা কি আপনি ভেবেছিলেন? এমনকি এই অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার পুরো তথ্যও যে রাষ্ট্রের কাছে ছিল না, তা এখন মোটামুটিভাবে পরিষ্কার।

      Delete
    2. ৩। এই প্রশ্নের কিছু অংশ আরও কিছু ব্যাখ্যা দেয়ার প্রয়োজন মনে করছি। এখানে ইন্টারনেটের তিনটা অংশ রয়েছে। প্রথমতঃ থ্রি-জি এবং ফোর-জি সেবা। এটা হলো মোবাইল ইন্টারনেট; যেটা ব্যবহারকারী প্রায় ১২ কোটির মতো। রাষ্ট্রের জন্যে এটা সবচাইতে বড় হুমকি ছিল। কারণ এটা ব্যবহার করে বড় জমায়েত আয়োজন করা যায় এবং গুজব বা মিথ্যা খবর কোটি কোটি মানুষের কাছে পৌঁছে দেয়া যায়। একারণেই সরকার এটা বন্ধ করে দিয়েছিল। টেলিনর বলছে যে, সরকারের নির্দেশে তারা ১৭ই জুলাই এই সেবা বন্ধ করে দিয়েছিল। এটা এই লেখায় ইতোমধ্যেই বলা হয়েছে।

      দ্বিতীয়তঃ ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট সার্ভিস। এটা চালু ছিল ১৯শে জুলাই শুক্রবার রাত ৯টা পর্যন্ত। সরকার বলছে যে, খাজা টাওয়ারে হামলা হয়েছে; মিডিয়াও সেটাই বলেছে। এখন আমরা যদি ধরে নিই যে, সরকার সত্য বলেনি, তাহলে এটা জাস্টিফাই করে যে, সরকার ইন্টারনেট নিয়ন্ত্রণের একটা অংশ হিসেবে হামলার খবর প্রচার করেছে। তবে এই ভবনটা জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ একটা ভবন; যা প্রচার করাটাই ভুল। অন্ততঃ এই ভবনে হামলা করলে সারা দেশে ইন্টারনেট থাকে না, সেটা তো এর আগের অগ্নিকান্ডে ইতোমধ্যেই প্রমাণিত। কাজেই এই ভবনের উপর রাষ্ট্রের নির্ভরশীলতা নতুন করে প্রমাণিত হওয়াটা কোন সুখকর খবর নয়। কেউ ইচ্ছা করে বলে না যে, আমার মাথার কোথায় আঘাত করলে আমার মৃত্যু অনিবার্য।

      তৃতীয়তঃ ফাইবার অপটিক হার্ডলাইন হলো পুরো দেশের সাইবার ব্যাকবোন। এতে শুধু ইন্টারনেট নয়; জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ এবং সামরিক সকল তথ্য আদান প্রদান হয়। এই হার্ডলাইন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া মানে রাষ্ট্র বিপদে পড়া। কোন শত্রু দেশ বাংলাদেশে আক্রমণ করলে এই হার্ডলাইন ক্ষতিগ্রস্ত করতে চাইবে। কারণ এটা হলো সিকিউর কমিউনকেশনএর লাস্ট রেজর্ট। কারণ স্যাটেলাইট, ভিএইচএফ এবং এইচএফ কমিউনিকেশন ইন্টারসেপ্ট করা যায়। কোড ব্রেকিং করতে পারলে সেই ডাটা রিডিং করাও সম্ভব। কিন্তু ফাইবার অপটিক হার্ডলাইন এদিক থেকে নিরাপদ। কিন্তু দেশের মানুষ যদি নিজেদের বুদ্ধি ব্যবহার না করে আবেগতাড়িত হয়ে কাজ করে, তাহলে তাদেরকে দিয়েই এই হার্ডলাইন কেটে ফেলা যায়। তখন তো আপনি দেশের উপর অন্য দেশের সামরিক হামলার খবরও সময়তো পাবেন না! অর্থাৎ এটা রাষ্ট্রের অস্তিত্বের সাথে সম্পর্কিত। আশা করি এর বিপদটা কতটা গভীর সেটা বুঝতে পারছেন।

      সামারি করলে বলা যায় যে, প্রথম দুইটা রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রণ করেছে নিজেকে রক্ষা করার জন্যে। আর তৃতীয়টা নিয়ে রাষ্ট্র মহাবিপদে পড়েছে। তৃতীয়টা ঠিক না করেই রাষ্ট্র প্রথম দুইটা খুলে দেবে নিউ ইয়র্ক, লন্ডন, প্যারিস থেকে মিথ্যা তথ্যের বন্যার জন্যে - এটা আশা করাটা ভুল।

      Delete
  3. May be this is the greatest analysis I have ever seen. You have analyzed the things regardless of biased elements. I was vehemently surprised to see the intensity and chronologies of the violence but couldn’t figure out the purports. Your analysis is top notch like your other previous writings.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thank you very much for the encouragement!

      Delete
  4. Very precise analysis

    ReplyDelete
  5. ধন্যবাদ আপনার এনালাইসিস এর জন্য। আমার প্রশ্নসমূহ নিম্নে দেওয়া হলঃ
    ১)সরকার স্টূডেণ্টদের মাস কিলিং কেন করল? অনেক ক্ষেত্রেই আমরা দেখতে পেয়েছি অহেতুক রক্তপাত। এই সব স্টূডেণ্টদের হত্যা/ বাড়ি বাড়ি রেইড দেওয়া এইসব ঘটনায় তো সরকার আরো বিপদে পড়বে। তাও কেন করছে সরকার এইগুলা?
    ২) আপনি কিভাবে নিশ্চিত হলেন যে এই আন্দোলন/ অভ্যুথান এর উদ্দেশ্য ছিল গনভবন দখল করা? আমি যদি বলি যে এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল সরকার এর বিরুদ্বে জনগনকে এক করা এবং আর্মি এবং প্রশাসনকে চ্যালেঞ্জে ফেলে দেওয়া তাহলে কি ভুল হবে? এই আন্দোলনের উদ্দেশ্য ছিল গন অভ্যুথান করা এবং হাসিনাকে বৈশ্বিক চাপে ফেলা। এটা স্বার্থক। আর সরকার এর পতন নির্ভর করছে পরাশক্তি তথা আমেরিকা কি চাচ্ছে সেটার উপর। যেহেতু ডঃ ইউনুস বলছে পুনারায় নির্বাচনের কথা, আপনার কি মনে হয় না এই আন্দোলনের নেক্সট ফেইস সামনে আসতে যাচ্ছে।যেহেতু কোন ইন্টিলিজেন্স এই আন্দোলন জোরদার করার পিছনে ছিল, তাই আপনার লেখা অনুসারে এত দ্রুত এই আন্দোলন কে ব্যার্থ অভ্যুথান বলা কতটুকু যুক্তিযুক্ত? আপনি কি এই আন্দোলনের বর্তমান After Effect দেখছেন না?
    ৩) কোটা আন্দোলনের এর লীডারশীপ এবং এই আন্দোলন এর ব্যাপারে আপনার অভিমত কি? এই আন্দোলন কি স্বতঃস্ফুর্ত ভাবে শুরু হয়েছিল?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকেও ধন্যবাদ আপনার কমেন্টের জন্যে। প্রথমতঃ এটা হলো আমার বিশ্লেষণ। আপনাকে এর সাথে একমত হতেই হবে, এমন কোন বাধ্যবাধকতা নেই। তবে আমি চেষ্টা করেছিল 'র‍্যাশনাল' চিন্তার মাঝে বিশ্লেষণকে সীমাবদ্ধ রাখতে। কারণ যদি আর্গুমেন্ট-কাউন্টারআর্গুমেন্টের উপর বিশ্লেষণকে সীমাবদ্ধ করে রাখি, তাহলে সেখানে কোন উপসংহারে আসা সম্ভব নয়।

      ১) সরকারের ব্যাপারে আপনি আমার কাছ থেকে কোন মন্তব্য পাবেন না। আপনি আমার ৪'শ বেশি লেখা পড়ে দেখতে পারেন। সেখানে কোথায় সরকার নেই; রয়েছে রাষ্ট্র। আমার চিন্তা রাষ্ট্রকে ঘিরে; ভূরাজনীতিকে ঘিরে। সরকার আসবে-যাবে; রাষ্ট্র থাকবে; ভূরাজনীতি থাকবে। কোন সরকারই ভূরাজনীতির বাস্তবতার উর্ধ্বে নয়; যুক্তরাষ্ট্র বা চীনের সরকারও নয়। রাষ্ট্রের চিন্তা সবসময়ই হয় ভূরাজনীতি নিয়ে দলীয় রাজনীতি নিয়ে নয়।

      ২) যখন শাহবাগ, সায়েন্স ল্যাব মোড় খালিয়ে হয়ে গিয়েছে এবং রামপুরা, মহাখালী, মোহাম্মদপুরে একটিভিটি বেড়েছে, তখনই এব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া গিয়েছে। এটা নিরাপত্তা বাহিনীর কাউন্টার-একশনেও পরিষ্কার হয়েছে। এর কিছুটা এই লেখাতেই রয়েছে। কিছুটা রয়েছে কমেন্ট সেকশনে। এর বাইরেও আরও রয়েছে, যেগুলি জাতীয় নিরাপত্তার কারণে এখানে লেখা যাবে না। আশা করি আপনার কাছেও জাতীয় নিরাপত্তা গুরুত্বপূর্ণ।

      এটা একটা অভ্যুত্থান প্রচেষ্টা - সেটা গন-জন-সামরিক-বা অন্য যেকোন কিছু দিয়েই হোক না কেন। বাংলাদেশেও ১৯৭৫ সালের ৭ই নভেম্বর একটা অভ্যুত্থান হয়েছিল; যেটার মাধ্যমে জাসদের সদস্যরা সামরিক পোষাক পড়ে জিয়াউর রহমানকে বের করে নিয়ে এসেছিল। সেটা ছিল সাকসেসফুল মিশন। যদিও মিশনের মেইন ম্যানকে জীবন দিতে হয়েছিল জিয়াউর রহমানের হাতে।

      ব্যর্থ অভ্যুত্থান ছিল এটা নিশ্চিত। কারণ এখন এটা আর অভ্যুত্থানের মাঝে নেই। এর বাইরে অন্য কিছু ঘটতে হলে সেটা এর বাইরে অন্য কোন লক্ষ্যের জন্যে হতে হবে। সেই লক্ষ্য অভ্যুত্থান প্রচেষ্টার সময়েও শুরু হতে পারে। যেমন, নরসিংদীর কারাগারে হামলা; ৪০ জায়গায় দেশের অতি গুরুত্বপূর্ণ ফাইবার অপটিক ব্যাকবোন কেটে ফেলা। এগুলি খুবই বাজে ঘটনা; যা রাষ্ট্রকে (সরকারকে নয়) দুর্বল করতে ব্যবহার হতে পারে। ইতিহাসের দিকে তাকালে দেখবেন, ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বরের অভ্যুত্থান সফল হয়েছিল। তবে এর ফলাফল হিসেবে ৭ই নভেম্বরের কাউন্টার অভ্যুত্থান হয়েছিল। একটার পর আরেকটা কিছু আসতেই পারে। তবে এটা নিশ্চিত করে বলা যায় না।

      ইস্যু-ভিত্তিক আন্দোলনে বড় কিছু আশা করা উচিৎ নয়। বরং এটা দেখতে হবে যে, ইস্যু-ভিত্তিক কোন আন্দলনকে পুঁজি করে বড় কোন লক্ষ্য নিয়ে কেউ এগুচ্ছে কিনা। এই মুহুর্তে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হবার পরে যে পরিমাণে ধরপাকড় হয়েছে, তাতে আমার মনে হয় না যে, এই ইস্যুকে কেন্দ্র করে কিছু অর্গানাইজ করার মতো লোক আর মাঠে রয়েছে। লীডারশিপ এবং অর্গানাইজার না থাকলে কোটি মানুষ দিয়েও কিছু সম্ভব নয়।

      ৩) হয়তো স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। এর মূল কারণ হলো কর্মসংস্থানের অভাব - যা একটা রাষ্ট্রীয় সমস্যা; সরকারের সমস্যা নয়। সেই সমস্যা নিয়ে কেউ কথা না বলে কোটি নিয়ে আন্দোলন করেছে। অর্থাৎ ক্যান্সার নিয়ে কথা না বলে ক্যান্সারের কারণে হওয়া জ্বর নিয়ে কথা বলেছে। এটা আবেগের দাবি। আবেগতাড়িত হয়ে যে কাজে ছাত্ররা জড়ালো, সেটা রাজনৈতিক কর্মকান্ড - এটা কি তারা জানতো? না জানলে মারাত্মক ভুল করেছে। রাজনীতি না বুঝে রাজপথে নামাটা বিশাল বড় ভুল। এতে অযথা বহু মানুষের প্রাণ গেছে; অনেক মানুষ পথের ভিখারি হয়েছে; রাষ্ট্রীয় সম্পদ ধ্বংস হয়েছে। এভাবে পরিবর্তন আসে না।

      Delete
  6. Excellent detailed analysis. Most of the information matches my information from various sources. Certainly, USa was involved in this failed coup attempt. There are certain things cannot be spelled out in the public. Hope to read some follow up on this and similar article in future. Joy Bangla.

    ReplyDelete
    Replies
    1. Thanks for your comment. Though its not easy to prove US involvement in political upheaval in various parts of the world, from our geopolitical understanding, we know that as the sole superpower and Liberal Capitalist ideological figurehead of the world, USA is aware of most incidents, if not themselves involved. And there is more than enough interest of USA, China, Britain and India in Bangladesh that makes it imperative for those countries to know whats happening here. Yet, only ideological powers are pro-active powers; because they are objective-oriented; others are usually reactive powers. This makes the US the usual suspect in most incidents around the globe. Though in recent times we have seen ideological decline in US and the Western World as a whole, it needs to be understood that Western institutions are still intact (thought their functionality can be questioned); and most of the countries of the globe are forced to abide by the rules set by those Western institutions, e.g. UN, WTO, IMO, ITU, ICAO, etc. That said, the current events of Bangladesh are not out of context - Western ideological decline, geopolitical upheaval, coupled with regional competition for control - all aid to the likelihood of such events in Bangladesh and in other countries. So, any country that is not based on a ideological foundation, is likely to struggle in the face of uncertainty and run here and there with a bucket-full of water to put down fires that they had been unable to predict.

      Delete
  7. আপনার বিশ্লেষণ মোতাবেক একটি পূর্ব পরিকল্পিত অভ্যুত্থান ঘটানো হয়েছে,,,,এখন প্রশ্ন হচ্ছে
    ১) একটা খবর শুনা যাচ্ছে যে, পরিবহ মালিকদের প্ররোচনায় মেট্রোস্টেশন ভাঙচুর করেছে কারণটা বলা হচ্ছে মিরপুরের সব যাএীরা মেট্রোকে বেছে নিচ্ছে এবং তাতে লসের হিসাব দিতে হচ্ছে বাস মালিকদের, এটা কতটুকু সত্য বলে মনে হয়??

    ২) এই ঘটনায় ওয়েস্টার্ন ইনটেলিজেন্সের কোনো হাত আছে যার সাথে আমেরিকাও ইনভলভ কারণ
    আমেরিকা ও ওয়েস্টার্নদের প্রধান শএু হচ্ছে চায়নাকে অর্থনৈতিকভাবে ডিটেইন করে রাখা,যার জন্য বাংলাদেশ জিওপলিটিকালি ব্যাটলগ্রাউন্ড হিসেবে কাজ করবে। যেহেতু সরকার চায়নার কাছ থেকে অনেকাংশে ফিনানশিয়ালি হেল্প ও মেগা প্রকল্পে বিনিয়োগের অংশীদার হিসেবে কাজ করছে তাই আমেরিকা এটা মোটেই পছন্দ করছে না,তাই এই ঘটনাগুলো ঘটানো হয়েছে বিরোধী দলের মাধ্যমে যাতে সরকারে উৎখাত করা যায় যদিও সেটা ব্যর্থ ??? বিরোধী দল ইনভলভ থাকলে এই দলটি কে হতে পারে??

    ৩) আর যেহেতু সরকার নিরপেক্ষ হিসেবে বহির্বিশ্বে কাজ করতে চায় এবং সবাইকে খুশি রাখতে গিয়ে রাষ্ট্রকে নিরাপদের হুমকি ও বিপদের সম্মুখীন করছে বলে আপনার কি মনে হয়??

    ৪) ভবিষ্যতে এই রাষ্ট্রকে নিয়ে পরিকল্পনা কি হতে পারে, বহির্বিশ্বে চাপ কেমন আসতে পারে সরকারের উপর এবং এই সরকার কি আদো সাসটেইনেবল হবে, যদি না হয় তাহলে কি হতে পারে সামনে পরিকল্পনা মাথায় নিয়ে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে ধন্যবাদ। একটু কষ্ট করে অন্য কমেন্টগুলির উত্তরও পড়ে নেবেন। আশা করি আপনার বেশিরভাগ প্রশ্নের উত্তর মিলে যাবে।

      ষড়যন্ত্র থিউরির ব্যাপারে আমার ব্যাপক অনীহা রয়েছে। তাই প্রথম প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছি না। দ্বিতীয় এবং চতুর্থ প্রশ্নের একাংশের উত্তর লেখায় এবং প্রশ্নোত্তরে পেয়ে যাবেন আশা রাখি। তৃতীয় এবং চতুর্থ প্রশ্নের বাকিটার উত্তর লেখার শেষ অংশে যথেষ্ট গভীরভাবে দেয়া হয়েছে।

      Delete
  8. যা ঘটলো এই কদিনে তাতে আমার ব্যক্তিগত প্রাপ্তি আপনার লেখালেখির খোঁজ পাওয়া। নির্মোহ ও চমৎকার বিশ্লেষণ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ। তবে আমার এই লেখার পরে কষ্ট হলো, জনগণের মাঝে এমন কিছু চিন্তা আবিষ্কার করা, যেগুলিতে তারা রাষ্ট্র ধ্বংস করে সরকারকে সরাবার চেষ্টা করার জাস্টিফিকেশন দিচ্ছে। অনেক কমেন্টই আসছে, যেগুলি এখানে পাবলিশ করা যাচ্ছে না। সরকার আর রাষ্ট্রের মাঝে আলাদা করতে না পারার ফলাফল যে কতটা ভয়াবহ হতে পারে, তার উদাহরণ এই আনপাবলিশড কমেন্টগুলি।

      Delete
    2. ব্যক্তিগতভাবে এই প্রবণতা আমাকেও নিদারুণ কষ্ট দিচ্ছে। এটা কি বাঙালি ‍মুসলমানের চিরকালীন অন্তর্গত সমস্যা? এমন প্রশ্ন মনে কয়েকদিন ধরে উঠছে। দেশভাগের আগ থেকেই এই প্রবণতা দেখি, যেকোনো “ক্যাওস” দেখলেই এর পূর্বাপর ও পরিণতি বিচার না করেই তা এই জনগোষ্ঠী “এনজয়” করতে চায়। তাতে রাষ্ট্র্রের সম্পদ ও নিজের জান গেলেও।

      Delete
    3. আসলে ব্যাপারটা ঠিক এমন নয়। ব্রিটিশ কলোনি হবার পর থেকে এই এলাকার মানুষের মাঝে চিন্তার গভীরতাকে কৌশলে সড়িয়ে ফেলা হয়েছে। এ নিয়ে অনেকবার লিখলেও আবারও কিছু বলার প্রয়োজন মনে করছি। ব্রিটিশরা এই দেশের মানুষের মাঝে কিছু কনসেপ্ট ঢুকিয়ে দিয়ে গেছে; যেমন - সরকার কা মাল দরিয়া মে ঢাল; নিজে বাঁচলে বাপের নাম; চাচা আপন পরান বাঁচা, ইত্যাদি। এগুলি সমাজে বহুল প্রচলিত হয়েছে এবং মানুষকে স্বার্থপর করেছে; সে সমাজ নিয়ে চিন্তা করতে পারে না; এবং সমাজের ক্ষতি করাটাকেও সে বিভিন্নভাবে জাস্টিফাই করে ফেলে। এইগুলি যে সমস্যা, সেটা চিন্তা করার ক্ষমতাও তার লোপ পেয়েছে। সমাজ একটা মানুষকে যা শেখায়, সে তা-ই শেখে; যা শেখায় না, সেটা সে শেখে না। কাজেই এখন এই সমাজে যেসব শিক্ষা প্রচলিত, সেগুলি সমাজের একটা সংস্কৃতির মতো।

      বর্তমানে পৃথিবীর কিছু আদর্শিক রাষ্ট্র ছাড়া (যুক্তরাষ্ট, ব্রিটেন, ফ্রান্স) বাকিগুলি জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র অন্য কোন আদর্শ থেকে চিন্তা ভাড়া করে চলে। ফলশ্রুতিতে সে চিন্তাগুলির গভীরে যেতে সক্ষম হয় না। যেমন, একই সেকুলার আইন ইউরোপে কাজ করলেও বাংলাদেশে কাজ করে না। ইউরোপীয়রা সেকুলার ব্যবস্থাকে গ্রহণ করেছে বহু ত্যাগের মাধ্যমে; আর বাংলাদেশে সেকুলার ব্যবস্থা এসেছে উপনিবেশের মাধ্যমে। একারণে বাংলাদেশে চিন্তার একটা মিক্সড-ব্যাগ প্রচলিত। সে না পেরেছে সেকুলার হতে; না পেরেছে ইসলামিক হতে। কোন আদর্শকেই সে আলিঙ্গন করতে পারেনি। সে রোজা রাখার সময় লুকিয়েও পানি খায় না; কারণ এটা তার বিশ্বাসের সাথে সাংঘর্ষিক। কিন্তু রাস্তায় জনগণের সম্পদ ধ্বংস করাকে সে অপরাধ মনে করে না; কারণ সেই কাজটাকে সে তার বিশ্বাসের সাথে কানেক্ট করতে পারে না।

      কাজেই সমস্যাটা আসলে পুরো রাষ্ট্রব্যবস্থাটাতেই; যেখানে কোন আদর্শ নেই; আছে শুধু কোনপতে বেঁচে থাকা (জনগণ) আর যেভাবেই হোক ক্ষমতায় থাকা (রাজনীতিবিদ)।

      Delete
  9. সরকার আর রাষ্ট্রের মাঝে আলাদা করতে না পারার ফলাফল নিয়ে আপনার একটা লেখা আশা করছি।

    ReplyDelete
  10. আপনার লেখাটি অত্যন্ত সুন্দর এবং তথ্যবহুল। অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বিষয়টি বিশ্লেষণ করেছেন। আপনার লেখাটি পড়ে নিজে অনেক সমৃদ্ধ হলাম, এটি পাঠকদের জন্য অত্যন্ত শিক্ষণীয় এবং চিন্তার খোরাক যোগাবে। ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
  11. Shariful Hassan31 July 2024 at 14:45

    এটার একটা ইংলিশ ভার্শন খুব দরকার ছিল, ফর ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ইন্টারন্যাশনাল কমিউনিটি বলতে কি আপনি পশ্চিমা দেশগুলিকে বোঝাচ্ছেন? এরা হলো সহিংসতার মূল কারণ। প্রথমতঃ এই দেশে কোটা পদ্ধতি এসেছে ব্রিটিশদের হাত ধরে। এটা একটা কলোনিয়াল প্রজেক্ট। দ্বিতীয়তঃ পশ্চিমারা যেসকল বিবৃতি দিচ্ছে বাংলাদেশের মানবাধিকার নিয়ে, তাতে আন্দোলনকারী ছাত্রদের খুশি হবার কোন কারণ নেই। কারণ বাংলাদেশের ছাত্রদের জীবন অথবা এই দেশের মানবাধিকার নিয়ে তাদের কোনরূপ মাথাব্যাথা নেই। এর প্রমাণ হলো গাজায় পশ্চিমাদের অবৈধ সন্তান ইস্রাইল পাশবিক বর্বরতায় ৪০ হাজার মানুষকে মেরে ফেললো গত ১০ মাস ধরে। পশ্চিমারা ইস্রাইলকে থামানো দূরে থাক, ইস্রাইলকে রক্ষা করতে যুদ্ধজাহাজ পাঠিয়েছে। এছাড়াও মধ্যপ্রাচ্যের জঘন্য সব সরকারগুলিকে তারা তাদের স্বার্থরক্ষায় টিকিয়ে রেখেছে। এই পশ্চিমাদের কাছে বিচার নিয়ে যাওয়ার অর্থ হলো তাদের স্বার্থকে বাস্তবায়ন করা। তারা শুধু মানবাধিকারের ধোঁয়া তুলে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করে নিজেদের পক্ষে চুক্তি-সমঝোতা করিয়ে নেয়। তৃতীয়তঃ পশ্চিমাদের উপর নির্ভরশীলতা এই দেশের দুর্বল থাকার অন্যতম কারণ। কারণ পশ্চিমারা কখনোই চায়না বাংলাদেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হোক। চতুর্থতঃ পশ্চিমারা কখনোই মুসলিমদেরকে বিশ্বাস করে না। এবং তারা সর্বদাই চেষ্টা করে মুসলিম দেশগুলিকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে। আর এই নিয়ন্ত্রণের প্রধান হাতিয়ার হলো তাদের মনোনীত জালিম শাসক।

      Delete
  12. আপনার পুরো লেখাটি পড়লাম। এখন পর্যন্ত পড়া সবচেয়ে নির্মোহ এবং বিশ্লেষণধর্মী। এজন্য আপনাকে ধন্যবাদ।

    নারায়ণগঞ্জের শীতল পরিবহনের ২৬টি বাস পোড়ানোর কারণ সম্পর্কে যে তথ্যটি লেখায় উঠে আসেনি, সে প্রসঙ্গে কিছু যুক্ত করতে চাই। পত্রিকায় পড়েছিলাম, এই পরিবহন কোম্পানিটি এমপি শামীম ওসমান পরিবারের। সহিংসতাকারীরা শত্রুতাবশত বাসগুলো পুড়িয়ে দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানের কয়েকজন কর্মকর্তা খবর পেয়ে আগুন না লাগা কিছু বাস সরিয়ে নিতে চাইলে তাদের বাধা দেওয়া হয়, যেন সবগুলো বাস পুড়ে ছাই হয়ে যায়। একজন কর্মকর্তা মোবাইল ফোনে আগুন লাগার ঘটনাটি ভিডিও করতে গেলে তাকে মারধর করে মোবাইল ফোন কেড়ে নিয়ে ভিডিও ডিলিট করতে বাধ্য করা হয়। এসব খবর পত্রিকাতেই এসেছে।

    ReplyDelete
  13. অনেক তথ্যে নির্মোহ উপস্থাপনা । সাবলীল লেখার গতি । ধন্যবাদ জানাই । আজ এই লেখা পড়া পর্যন্ত একটা গুমোট অবস্থায় ছিলাম কিছুরই পূর্ণ ব্যাখ্যা না পাওয়ায়! মনে হয়েছে বিশাল কিছু ঘটছে । কারফিউ দেবার পর এটা আরও দৃঢ হয়েছে । অল্প কিছু পোড়ার ছবি আর কিছু অনাকাংক্ষিত সাধারণ শিশু যুবার মৃত্যুর ছবি সব জায়গায় ভেসে বেড়ানো থেকে পাওয়া খবরই ছিল সব জানার ভান্ডার ।
    আপনার লেখার একজন পাঠক হলাম আজ থেকে । কিভাবে সহজে পাবো আপনার লেখা !
    শুভ কামনা অশেষ ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. অনেক ধন্যবাদ!

      এই ব্লগটা বুকমার্ক করে রাখতে পারেন। আর সময় পেলে আগের লেখাগুলি পড়তে পারেন - এতে এখানে উপস্থাপিত আলোচনাগুলি কেন এরূপভাবে এসেছে, সেটার একটা ধারণা পাবেন আশা রাখি।

      Delete
  14. ভাই, আপনার তথ্যবহুল আলোচনার জন্য ধন্যবাদ।
    তবে কিছু প্রশ্ন আছে -

    ১। আন্দোলনকারীদের মধ্যে সরকার পতনের বিষয়টি নিয়ে প্রচুর কথা হচ্ছে। অন্যদিকে, ডিবি থেকে ছাড়া পেয়ে আজকেই দুই-এক জন সমন্বয়কারী আন্দোলন চালিয়ে যাবার ঘোষণা দিয়েছেন । নানা দিক থেকে সরকারকে কোনঠাসা করার চেষ্টা হচ্ছে। এটার সর্বশেষ পরিণতি কি ?

    ২। গুলি করার বিষয়টি নিয়ে নানা কথা হচ্ছে। একটি তথ্য বলছে বিদেশী স্নাইপার দিয়ে এই মৃত্যুর কান্ডগুলো ঘটানো হয়েছে। এই বিষয়ে আপনার মত কি ?

    ৩। সরকার কি তার পূর্ণ মেয়াদ পূরণ করতে পারবে ?

    ৪। আন্দোলন কবে বন্ধ হবে তাহলে ?

    ধন্যবাদ।

    ReplyDelete
    Replies
    1. ১) প্রথম থেকেই আন্দোলনে সরকারের সমর্থন ছিল; শুধু কোন একসময় এই আন্দোলন হাইজ্যাক হয়ে গেলে সরকারী দল বিপদে পড়ে যায়। যারা হাইজ্যাক করেছিলো, তারা প্রায় সকলেই এখন আটক। কাজেই যে অর্গানাইজাররা রাস্তায় রয়েছে, তারা সরকার পরিবর্তনে কতটুকু মনোযোগ দেবে, সেটা বলা কঠিন। অর্গানাইজারদের মাঝে যারা রাস্তায় রয়েছে, তাদের মাঝে অনেক গ্রুপ রয়েছে - কিছু সরকার-পন্থী; আবার কিছু মার্কিন-পন্থী। কাজেই এখান থেকে এক সুরে বড় কোন সিদ্ধান্ত আসার সম্ভাবনা কম। যদিও এই আন্দোলনের পিছনে পশ্চিমা প্রচ্ছন্ন ইন্ধন যে রয়েছে, সেটা নিশ্চিতভাবেই বোঝা যায়। তবে তারা এই আন্দোলনকে কতটুকু সমর্থন দেবে, সেটা নির্ভর করবে তাদের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্যের উপর। এমনও হতে পারে যে, তাদের উদ্দেশ্য হাসিল হয়ে গেলে হঠাত করেই অজানা কারণে সকলে বাড়িতে চলে যেতে পারে। এরকম এর আগেও পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে।

      ২) কোন মতামত নেই। এগুলি এভিডেন্সের ব্যাপার।

      ৩) আল্লাহই ভবিষ্যৎ জানেন। তবে লেখায় খুবই পরিষ্কারভাবে বলা হয়েছে যে, মোস্ট ডিসাইসিভ ফ্যাক্টরটা কি।

      ৪) প্রথম পয়েন্টে উত্তর রয়েছে।

      ধন্যবাদ।

      Delete
    2. ব্যাপক তথ্য আর আলোচনা আছে এতে। সবাইকে পুরো পোস্টটি পড়ার জন্য অনুরোধ রইলো।
      অনেক ধন্যবাদ ভাই।
      আরো কিছু প্রশ্ন -

      ১। সামগ্ৰিক বিবেচনায় আপনার মন্তব্য কি আন্দোলনের শেষ আর সরকার পতনের বিষয়গুলো সম্পর্কে ?

      ২। আন্দোলনকারীদের মধ্যে একটি পক্ষ সাইবার এটাকও করছে শুরু থেকেই। এই বিষয়ে আপনার অভিমত কি ?

      ৩। আর্মির ভূমিকা আগামীর দিনগুলোতে কেমন হতে পারে কারন আর্মি নিয়ে প্রতিদিনই কিছু মানুষ গুজব ছড়াচ্ছে ?

      ৪। সোশ্যাল মিডিয়াতে যে নানা ধরণের গুজবে মানুষদের উত্তেজিত করার প্রয়াস সেটা কি সরকার পতন ঘটাতে পর্যাপ্ত ?

      ৫। যেহেতু এই চেষ্টা ব্যর্থ তাহলে তো আন্দোলন কিংবা তাদের সব চেষ্টা থেমে যাবার কথা। কিন্তু থামছে না কেন ?এটার কি প্রভাব হতে পারে ?

      ৬। বলা হচ্ছে, আন্তর্জার্তিক তদন্ত ও আন্তর্জার্তিক মামলা করা হবে কিংবা হচ্ছে। এটা দিয়ে কি সরকার পতনের চেষ্টা করা হচ্ছে ?এটা সফল হবার সম্ভাবনা কতটুকু ?

      Delete
    3. ১) এর বেশিরভাগ লেখার শেষাংশে এবং কমেন্ট সেকশনে পাবেন আশা রাখি। এখানে রাষ্ট্র নিয়েই কথা পাবেন বেশি; সরকার নিয়ে আলোচনা এই ব্লগে পাবেন না বললেই চলে।

      ২। এগুলি অনেক আগে থেকেই পূর্ব-পরিকল্পিত হতে হবে। কারণ একটা সিস্টেমের ভেতর ঢুকতে সময় লাগে। এরপর তারা সেখানে ঘাপটি মেরে বসে থাকে সুযোগের অপেক্ষায়। এমন কোন ইস্যুকে ব্যবহার করা হয়, যা মানুষকে প্রভাবিত করে এবং বুঝতে দেয় না যে, পিছনে কি হচ্ছে। এরপর গোপনে বিপুল পরিমাণ তথ্য এবং অর্থ (সরকারি এবং ব্যক্তিগত, বিশেষ করে ব্যাংকিং তথ্য) হাতিয়ে নিয়ে যায় সুযোগ মতো। এগুলি যেসব দেশ থেকে করা হয়, নিঃসন্দেহে সেইসব দেশের প্রচ্ছন্ন সাপোর্ট থাকে।

      ৩) লেখা এবং কমেন্ট সেকশন দেখুন।

      ৪) না। লীডারশিপ এবং অর্গানাইজার ছাড়া কিছুই সম্ভব নয়।

      ৫) মূল কারণগুলি তো চলে যায়নি। রাষ্ট্রের দুর্বলতা তো সেখানেই। এইগুলি লেখার শেষ অংশে রয়েছে।

      ৬) তদন্ত হলে যারা অভ্যুত্থান ঘটাবার চেষ্টা করেছে, তারাই বেশি বিপদে পড়বে। কারণ টেকনলজি ব্যবহার করলে সকলের বিরুদ্ধেই এভিডেন্স হাজির হয়ে যাবে।

      Delete
    4. আপনি বলেছেন যে লিডারশীপ এবং অর্গানাইজার ছাড়া পতন সম্ভব নয়, তাহলে শ্রীলংকার অভ্যুত্থান কিভাবে সফল হলো,এখানে কি পলিটিকাল লিডারশীপ বা অর্গানাইহজার সামথিং কিছু ছিলো যাতে করে জনগণ গণভবন দখলে নিয়েছিলো নাকি অন্যকিছু?
      এই উওরটা জানতে খুব ইচ্ছুক

      Delete
    5. খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।

      এই প্রশ্নের উত্তর দিতে হলে 'ফেইলড স্টেট' বা 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' কনসেপ্টের কিছু ইতিহাস তুলে ধরতে হবে। পশ্চিমারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের (বিশেষ করে মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ) উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার জন্যে 'ফেইল্ড স্টেট' বা 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' তকমাটা নিয়ে আসে। উদ্দেশ্য ছিল, এই তকমা দিয়ে চাপ সৃষ্টি করে তাদেরকে বিভিন্ন বিষয়ে এগ্রি করানো। যেমন, বাংলাদেশের উপর ২০০৪-০৫ সালের দিকে চাপ সৃষ্টি করে র‍্যাব তৈরি করায় যুক্তরাষ্ট্র। এই ফোর্স প্রতিষ্ঠার জন্যে চাপ সৃষ্টি করা হয় জেএমবি-বাংলা ভাইকে প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে এবং তাদের হাত দিয়ে সারা দেশের ৬৩টা জেলায় একই দিনে সাড়ে ৪'শ বোমা হামলা করার মাধ্যমে। এগুলি ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ওয়ার অন টেররের একটা অংশ। তারা সমস্ত মুসলিম দেশকেই এধরণের চাপের মাঝে ফেলে এবং অনেককেই ফেইল্ড স্টেট তকমা দেয়ার চেষ্টা করে।

      এই একই ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন দেশকে দেউলিয়া তকমা দিয়ে তাদেরকে আইএমএফ থেকে ঋণ নিতে বাধ্য করা হয়; যাতে করে তাদের উপর অর্থনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করা যায়। শ্রীলংকা এধরণের একটা উদাহরণ। শ্রীলংকার সিংহলী জাতীয়তাবাদী রাজাপক্ষে ফ্যামিলির সরকার ২০০৯ সালে মাত্র দেড় বছরের মাঝে তিন দশকের গৃহযুদ্ধ শেষ করে ফেলে। এই কাজে তারা চীন এবং কিছু বাহ্যিক শক্তির সহায়তা নেয়; যা পশ্চিমারা পছন্দ করেনি। কারণ পশ্চিমারা তামিল টাইগারদের ইন্ধন যুগিয়ে শ্রীলংকার মতো কৌশলগত গুরুত্বপূর্ণ স্থানের উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতো। যুদ্ধ শেষ করতে রাজাপক্ষে সরকার সেনাবাহিনীকে ব্ল্যাঙ্ক চেক দেয় এবং সেনাবাহিনীকে পরবর্তীতে রক্ষা করার প্রতিশ্রুতি দেয়। একারণেই যুদ্ধ শেষ হবার সাথেসাথেই পশ্চিমা দেশগুলি শ্রীলংকার সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওয়ার ক্রাইমের বিচারের জন্যে চাপ দিতে থাকে। রাজাপক্ষে সরকার এতে রাজি হচ্ছিলো না। একইসাথে রাজাপক্ষে সরকার চীনের অর্থায়নে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ করলে শ্রীলঙ্কাকে দেউলিয়ার রাষ্ট্র ঘোষণা করা হয়। আর কলম্বোর বন্দরে চীনা সাবমেরিন আসার পর দিল্লীতে ঝড় শুরু হয়। এই ঘটনাগুলি যুক্তরাষ্ট্র এবং ভারতকে রাজাপক্ষ সরকারকে সরিয়ে দিতে একমত করে। ফলস্বরূপ, শ্রীলংকায় সন্ত্রাসী হামলা হয় এবং মুসলিমদের সাথে সিংহলীদের দাঙ্গা লাগার উপক্রম হয়। এবং একইসাথে তাদের পর্যটন শিল্পে ধ্বস নেমে ছয় ভাগের এক ভাগ হয়ে যায়। এসময় রাজাপক্ষে সরকারের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারণে রেমিট্যান্স প্রবাহেও ধ্বস নামে।

      শ্রীলংকা সর্বদাই একটা দেউলিয়া রাষ্ট্র ছিল। তারা ১৬ বার আইএমএফএর দ্বারস্থ হয়েছে। কারণ তারা পুরোপুরিভাবে আমদানি-নির্ভর একটা দেশ। আমদানি ব্যয় পোষাতে তারা বারংবার এই ঋণগুলি নিয়েছে। আইএমএফ রাজাপক্ষে সরকারকে বাধ্য করতে চাইছিলো ট্যাক্স বৃদ্ধি করতে; যা রাজাপক্ষে ফ্যামিলি রাজি হয়নি। ফলশ্রুতিতে রানীল উইক্রামাসিংহেকে মনোনীত করে পশ্চিমারা। রানীলের নেতৃত্বেই শ্রীলঙ্কায় অভ্যুত্থান হয়। সেসময় সেনাবাহিনী এবং রাষ্ট্রের অন্য কেউই রাজাপক্ষেকে রক্ষা করেনি। কারণ সকলেই মনে করছিলো যে, রাজাপক্ষের কারণেই শ্রীলঙ্কার এই অবস্থা। অথচ সকলেই ভুলে গিয়েছে যে, রাজাপক্ষেই তাদের তিন দশকের গৃহযুদ্ধ শেষ করেছে এবং রাজাপক্ষের আগেই শ্রীলংকা ১৬ বার আইএমএফএর কাছে হাত পেতেছে। রানীলের সরকার ক্ষমতা নেবার পর আইএমএফএর শর্ত মানার সাথেসাথে ঋণ পায় এবং জনগণের উপর ট্যাক্স বৃদ্ধি করে। এসময় অনেকেই প্রতিবাদ করতে চেষ্টা করেছে; যাদেরকে ভীষণভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। পশ্চিমা মিডিয়া এগুলির কভারেজ দেয়নি। কারণ রানীলকে তো তারাই ক্ষমতায় বসিয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র, ভারত সকলেই খুশি। তাহলে কেন শ্রীলংকায় অস্থিরতা হবে?

      Delete
  15. তাহলে হোলি আর্টিজানে হামলার ব্যাপারটাও কি ব্যর্থ রাষ্ট্র তকমা দেওয়া একটা কৌশল ছিলো নাকি পশ্চিমাকে দেখানোর চেষ্টা করেছিলো আমরা জঙ্গি প্রতিরোধে তৎপর অর্থাৎ পশ্চিমকে দেখানো হয়েছিলো আমাদের সক্ষমতা রয়েছে কাউরোর হস্তক্ষেপ প্রয়োজনের বাধ্যবাধকতা নেই যেহেতু মুসলিম রাষ্ট্রগুলোতে জঙ্গি ও সন্ত্রাস দমনে নাম দিয়ে পশ্চিমারা প্রবেশ করেছিলো??

    ReplyDelete
    Replies
    1. ওইটা ছিল প্রমাণ করার জন্যে যে, বাংলাদেশে আইএস আছে; এবং এই দেশে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি হস্তক্ষেপ প্রয়োজন (যেমন - মার্কিন ড্রোন আক্রমণের সাপোর্ট) - এটা প্রমাণ করার জন্যে। সেই রেস্টুর‍্যান্টের ভিতরের ঘটনার খবর পাওয়া যাচ্ছিলো যুক্তরাষ্ট্রে বসে থাকা রিটা কাটজ-এর মাধ্যমে; যিনি ছিলেন ইস্রাইলী সেনাবাহিনীর প্রক্তন সদস্য এবং ইস্রাইলী ইন্টেলিজেন্সের তৎকালীন সদস্য।

      Delete
  16. ১) বাংলাদেশের সেনাবাহিনী জাতিসংঘের অন্যতম শান্তি মিশনের গুরুত্ব বহন করে আসছে কয়েক দশক ধরে। আবার পশ্চিমা এবং আমেরিকায় খোদ তাদের আর্মিদেরকে তথাকথিত শান্তি মিশনে পাঠাতে অনিচ্ছুক বা সরিয়ে নেওয়ার প্রবণতা দেখা যাচ্ছে , তাই এই জায়গায় ভ্যাকুয়াম পূরণ করছে বাংলাদেশ সহ কয়েকটি দেশের সেনাবাহিনী। অনেকে নিউজ পএিকায় শুনা যাচ্ছে জাতিসংঘ এই সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে পেটিশন দায়ের করার জন্য প্রবাসী সহ অনেক রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক ব্যক্তিবর্গরা প্রস্তাব করবেন তথাকথিত শান্তি মিশনে সৈন্য না পাঠানোর জন্য,তাহলে কি সামনে নিষেধাজ্ঞা আসতে যাচ্ছে বা এটাও বলা যাচ্ছে না যেহেতু জাতিসংঘের প্রথম সারিতে অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ নিরাপওা বাহিনীর সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর বিকল্প হিসেবে দেখছি না। তাহলে কি এটাও বলা যায় সেনাবাহিনীদের উপর নিষেধাজ্ঞা আসার সম্ভাবনা কম??

    ২) যেহেতু পশ্চিমা নিয়ন্ত্রিত সংস্থা জাতিসংঘ সেনাবাহিমীদেরকে পর্যাপ্ত ট্রেনিং দিয়েছে,তাহলে ত তারা এই বাহিনী দ্বারাই এই অভ্যুত্থান ঘটাইতে পারতো বাট আমরা উল্টোটা দেখলাম যে মোস্ট ডিসেসিভ মোমেন্ট ছিলো এই সেনাবাহিনী,,,,
    আবার এটাও জানার কথা সরকার পশ্চিমাদের স্বার্থের বাইরে কাজ করবে না, তাহলে প্রশ্ন আসতে পারে কারা এইটার ফাইদা লুটে নিয়ে এই অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছে???
    ৩) আর্মিরা কি চাইলেই এইটার কাউন্টার অভ্যুত্থান ঘটাতে পারবে বা এদের পরবর্তী পদক্ষেপ কি হতে পারে??
    ৪) পশ্চিমারা এই ঘটনাটাকে কি চোখে দেখছে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীকে আফ্রিকার দেশগুলির সেনাবাহিনীর সাথে তুলনা দিয়েছেন - অনেক বড় ভুল করেছেন। আফ্রিকার সেনাবাহিনীগুলি বেশভাগ ক্ষেত্রেই মিলিশিয়ার মতো। একারণেই আমেরিকাতে তাদের ইন্ডিভিজুয়াল ট্রেনিং এতটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের সেনাবাহিনীর মূল হলো ব্রিটিশ সময়ে; এরপর ২৫ বছর সেটা ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর ট্রেনিংএর অংশ। স্বাধীনতার পর পাকিস্তান সেনাবাহিনী থেকে শিখে আসা ইন্সটিটিউশনটাই এখানে কলেবর বড় করে রিবিল্ট করা হয়। এর মাঝে বিভিন্ন সময়ে বিদেশীরা ট্রেনিং দিয়েছে ঠিকই; কিন্তু এই সেনাবাহিনীর ইতিহাস যেহেতু অনেক লম্বা, তাই এসব ট্রেনিংএর ফলাফল অনেক ধীর গতির; বিদ্যমান সংস্কৃতিকে খুব দ্রত পরিবর্তন করতে পারেনি।

      আর ব্রিটিশরা চলে গেলেও বাংলাদেশের মানুশের মাঝে সাদা চামড়া-প্রীতি রয়ে গেছে। যারা বর্তমান ব্যবস্থার মাঝে রাজনীতি করে, তারা বিদেশী মামা-চাচা ধরেই ক্ষমতায় যেতে চায় এবং ক্ষমতায় টিকে থাকে। কথায় কথায় নালিশ দেয়ার সংস্কৃতি এখানে নতুন নয়। যারা পশ্চিমাদেরকে প্রভু হিসেবে দেখবে, তারা তো সর্বদাই তাদের দিকেই তাকিয়ে থাকবে - এটাই তো স্বাভাবিক। পশ্চিমারাও তো সেটাই চাইছে। আপনি যখনই তাদের উপর নির্ভরশীলতা কমাতে বলবেন, তখনই তারা নাখোশ হবে।

      Delete
  17. লিখাটা পুরাপুরি পড়লাম। প্রশ্ন উত্তর দেখলাম। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই কোটা আন্দোলন বা সরকার পতনের আন্দোলন কিন্তু এই মুহূর্তে আবার তুঙ্গে। এদিকে আওয়ামী লীগ বিরুধি যারা, তারা তো বিজয় এর মধ্যেই বিজয় উৎসব শুরু করে দিয়েছে। অর্থাৎ তারা ধরেই নিয়েছে শেখ হাসিনা সরকারের পতন সুনিশ্চিত। এদিকে কোটা সরকার পতনের আন্দোলন কারীরা আজকেও কর্মসূচী নিয়েছে। আবার আগামী কাল থেকে অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দিয়েছে। এই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশে কি ঘটতে যাচ্ছে, বলেই আপনি মনে করতেছেন? মানে টা হচ্ছে, এই আওয়ামী লীগ সরকারের শেষ পরিণতিটা কি হতে যাচ্ছে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনাকে আমি আবারও অনুরোধ করবো লেখাটার শেষ অংশ পড়ুন এবং গভীরভাবে বোঝার চেষ্টা করুন। কমেন্ট সেকশন পড়লেও বুঝতে পারবেন যে, কেন এখানে সরকার নিয়ে কথা বলা হচ্ছে না।

      একটু খেয়াল করে দেখুন তো, ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের পতন হয়েছে; জুলুম গিয়েছে? না তো। স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরেও এখনও বেকারত্ব দূর হয়নি। সেই আলোচনা না করে কোটা নিয়ে মারামারি কেন? কোটা তো ব্রিটিশদের রেখে যাওয়া একটা কলোনিয়াল প্রজেক্ট। সারা দুনিয়াতে তারা এটা করেছে ডিভাইড এন্ড রুল খেলার জন্যে।

      রাষ্ট্র কেন মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে পারে না? এটা নিয়ে কোন আন্দোলন হয়েছে? কেন বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তি হয় না? কেন মানুষকে দোষী প্রমাণিত হবার আগেই কারাগারে আটকে রাখা হয়? কেন বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধ করা যায় না? কেন সামাজিক অবক্ষয় এত চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে? বাংলাদেশ কেন আইএমএফএর মতো মাফিয়া সংস্থার রাহু থেকে বের হতে পারছে না? কেন আইএমএফএর শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে দেয়া হলো? কেন শর্ত মেনে ট্যাক্স বাড়ানো হলো? কেন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করে মানুষকে কষ্টের মাঝে ফেলা হলো? এই ব্যাপারগুলি নিয়ে কোন আন্দলন হয়েছে? পদ্মা সেতু প্রকল্প বিশ্বব্যাঙ্ক নিয়েছিল এশিয়ার হাইওয়ের নামে ভারতকে ট্রানজিট দিতে - কেউ প্রশ্ন করেছিল? জাইকা যখন বলছে যে, তারা মাতারবাড়ী বন্দর তৈরি করেছে ভারতকে ট্রানজিট দিতে - কেউ অখুশি হয়েছে? কোন রাজনৈতিক দল আইএমএফএর কাছ থেকে ঋণ নিতে মানা করেছে বা আইএমএফএর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছে? নাম বলতেন পারবেন কারো? আপনি সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করলে রাবার বুলেট খেতে পারেন; সরকারি দলের হেলমেট বাহিনীর আক্রমণের শিকারও হতে পারেন। কিন্তু আইএমএফএর বিরুদ্ধে রাস্তায় নামলে আপনার লাশটাও খুঁজে পাবেন না।

      বাংলাদেশে কোন সরকার কখন বসবে, সেটা বিদেশীদের ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতার উপর নির্ভর করে; বাংলাদেশের মানুষের ইচ্ছা-অনিচ্ছার উপরে নয়। জুলুম না সরিয়ে সরকার পরিবর্তনের চেষ্টাটা তাদের ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের অংশ। কারণ তারা এই জুলুমকে টিকিয়ে রাখে। আপনি জুলুম সরাতে গেলে তারা আপনাকে বাধা দেবে। যারা আন্দলনে লীডারশিপ দিচ্ছে, তাদেরকেও জিজ্ঞেস করে দেখতে পারেন যে, তারা জুলুম সরাতে ইচ্ছুক কিনা। তারা "পরে দেখা যাবে", "আমাদের দায়িত্ব না", "কঠিন কাজ", "অবাস্তব" ইত্যাদি কথা বলে আপনাকে ভিন্ন দিকে যেতে বলবে।

      Delete
  18. বর্তমান পরিস্থিতি কোন দিকে যাচ্ছে? আজকে কিন্তু পুরাটাই সরকার বিরোধে। সবাই কি এসেছেন? এখন কিভাবে এই সমাধান হবে করা যাবে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখুন, সেই কথাগুলিই বলতে হবে; যেগুলি উপরের কমেন্টগুলিতে লিখেছি। সরকার পরিবর্তন রাষ্ট্রের মূল সমস্যাগুলির সমাধান দেবে না; যেমন - বেকারত্ব, দুর্নীতি, অচল বিচার ব্যবস্থা, বাজারে সিন্ডিকেট, স্বল্প কিছু মানুষের হাতে সম্পদ কুক্ষিগত, মূল্যস্ফীতি, বিদেশীদের দাপট, ইত্যাদি। অর্থাৎ সরকার পরিবর্তন জুলুমের সমস্যার সমাধান করবে না।

      আমরা ভবিষ্যৎ জানি না; আল্লাহ জানেন। তবে যেহেতু বহু কমেন্টে এক-ই প্রশ্ন আসছে, তাই সামনের দিনগুলির একটা ধারণা দেয়ার চেষ্টা করা যাক। যদি সরকার পরিবর্তন হয়, তাহলে প্রথমতঃ যে ব্যাপারটা হবে তা হলো, অত্র এলাকায় যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য বৃদ্ধি পাবে এবং চীনের প্রভাব শূন্যের কোঠায় চলে আসবে। শুধু ভারতের কথা বললে চীন এখানে শক্ত অবস্থানেই থাকতো। কিন্তু যেহেতু ভারতের পক্ষে যুক্তরাষ্ট্র রয়েছে, তাই ব্যালান্স পুরোপুরিভাবে চীনের বিপক্ষে চলে যাবে। দ্বিতীয়তঃ মিয়ানমারের উপর চীনের নিয়ন্ত্রণ যতটুকু রয়েছে, সেটাও শূন্য হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ এটা চীনের পশ্চিম-দক্ষিণ সীমান্তকে নিরাপত্তাহীনতায় ফেলবে। তৃতীয়তঃ ভারত-চীনের সংঘাতের সম্ভাবনা যা ছিলো তা-ই থাকবে। তবে এরূপ সংঘাতে ভারতের অবস্থান আরও শক্ত হবে। কারণ ভারত বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক ট্রানজিট পাবে; যা যুক্তরাষ্ট্র সমর্থন করবে।

      Delete
  19. তৃতীয় পক্ষ কারা আসলে কারা যারা কি না কেপিআই স্থানগুলোতে মারাত্মকভাবে জখম করেছে যা কি না একটি রাষ্ট্রের ভয়াবহ ইনটেলিজেন্সের ব্যর্থতা,যেভাবে ফাইবার অপটিক লাইনগুলো কাটা হলো এতে করে রাষ্ট্র মারাত্মকভাবে সাইবার হামলার হুমকি সম্মুখীন হতে পারতো। যাই হক যেভাবে ধরপাকড় করা হয়েছিলো ভেবেছিলাম হয়তো অভ্যুত্থান করার মতো কেউ নেই বাট আজকে দেখলাম শিক্ষামন্ত্রীর বাসভবনে এটাক করা হলো আরও বিভিন্ন জায়গায় ভাঙচুর হচ্ছে,সামনে আরো করবে যতদিন এই আনদোলন চলবে, এতে করে ছাএ-জনতা আনদোলনকে সাই দিয়ে তৃতীয় পক্ষ সুবিধা নিচ্ছে যদিও সেনাবাহিনীকে নামানোটা ইফেক্টিভ মুভ বলা হয়েছিলো,এখন এটা দুর্বল হয়ে গেছে। তাহলে কি বলা যায় যেভাবে আনদোলন বেগবান হচ্ছে তাতে আরেকটা অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা সহজতর করে দিবে যাতে আরো জনগণ সহজে ওই আনদোলনটাকে আরোও দীর্ঘায়িত করবে এবং এতে ফাইদা লুটবে তৃতীয় পক্ষের লোক যাদের মিশন হচ্ছে কোনোভাবে কেপিআই গুলোকে হুমকির সম্মুখীনে ফেলে দিয়ে, রাষ্ট্রীয় সম্পদ ও বাহিনীকে সর্বদিক থেকে দুর্বল করে দিয়ে গণভবনে মার্চ করা যদিও গণভবনে মার্চ করা অত্যন্ত কঠিন??

    আরেকটা প্রশ্ন হচ্ছে যেহেতু আমেরিকা ও পশ্চিমারা এই আনদোলনে ইনভলভ হয়ে গেছে তাতে কি বলা যায় আসলেই তারাই বিরোধী গোষ্ঠীগুলোকে শক্তির উৎস বা মসলা দিয়ে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত যদিও বাংলাদেশের ছাএ-ছাএী দের জীবন নিয়ে এদের মানবাধিকার বুলি অত্যন্তই হাস্যকর, বুঝা যায় এদের জীবন নিয়ে তাদের কোনো মাথাব্যাথা নেই, বাট এও দেখছি আনদোলন শেষ হওয়ার কোনো সোর্সও খুঁজে পাচ্ছি না,যেভাবে ধীরে ধীরে সবাই ইনভলভ হচ্ছে??

    ReplyDelete
    Replies
    1. রাষ্ট্রকে দুর্বল করার একটা প্রসেস হিসেবে এসেছিল 'ফেইল্ড স্টেট' বা 'ব্যর্থ রাষ্ট্র' তকমা। এটা নিয়ে কমেন্ট সেকশনে লিখেছি; দয়া করে পড়ে নেবেন। আপনি তৃতীয় পক্ষ বলতে যাকে বোঝাচ্ছেন, তারা প্রকৃতপক্ষে কোন না কোন রাষ্ট্রীয় ব্যাকআপ পেয়েছে। বর্তমান বৈশ্বিক রাজনৈতিক ব্যবস্থাটাই এরূপ - কেউ না কেউ কাউকে না কাউকে সমর্থন দিচ্ছে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্যে। আর এক্ষেত্রে পিছনের রাষ্ট্রগুলি হলো মূলতঃ লীডিং স্টেট এবং গ্রেট পাওয়ার। এই বিষয়টা নিয়েও কমেন্ট সেকশনে লেখা রয়েছে।

      বর্তমান ব্যবস্থায় বাইরের সমর্থন ছাড়া কেউ ক্ষমতায় যেতেও পারে না; টিকতেও পারে না। এভাবেই চলছে বিশ্বটা। একারণেই মূল লেখার শেষে লিখেছিলাম যে রাষ্ট্রের ভিত্তি দুর্বল। বাইরের উস্কানিতে এখানে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন সমস্যা তৈরি হয়। কিন্তু কোন সমস্যারই সমাধান কখনোই হয় না। কোন সরকারই এগুলির সমাধান করতে পারে না। আমরা গত পাঁচ দশক ধরেই এই মিউজিক্যাল চেয়ার দেখে আসছি - একজনের পর আরেকজন; কিন্তু সমস্যা যায় না। সমস্যা যায় না বলেই মানুষের আবেগকে ব্যবহার করে বিভিন্ন সময়ে কর্ম হাসিল করা যায়। এটা বাংলাদেশের ইতিহাসে আমরা বারংবার দেখেছি। মানুষের দাবি-দাওয়ার যুক্তি রয়েছে। কিন্তু তারা তো জানে না যে কোন পদ্ধতিতে তাদের মুক্তি আসবে। একারণে তাদেরকে যেকোন কিছু বলে বোঝানো সহজ হয়। এখানে জনগণকে ভুল বোঝা ঠিক হবে না। জনগণকে সমাজ যেভাবে শিখিয়েছে, জনগণ সেটাই শিখেছে। জনগণ শর্ট-টার্ম সলিউশন খুঁজেছে; কারণ সমাজ তাদেরকে শিখিয়েছে সেটা। লং-টার্ম সলিউশন তো বড় রাষ্ট্রগুলির তৈরি করা হেজিমোনিক ব্যবস্থাকে চ্যালেঞ্জ করে বসবে। তাই আপনি সেই ব্যাপারে কথাই বলতে পারবেন না।

      Delete
  20. আপনার উত্তরের পরিপ্রেক্ষিতে যা বুঝতে পারলাম এই আন্দোলন সফল হলে বাংলাদেশের উপর চীনের প্রভাব শূন্যের কোঠায় যাবে? তা হলে এই রকম কঠিন পরিস্থিতিতে চীন কি চুপচাপ বসে থাকবে? আর এই সরকার পড়ে গেলে, বাংলাদেশে যারা ক্ষমতায় আসবে, তারা কি ভারতের চাহিদা, বা ভারতের টার্গেট ফুলফিল হওয়ার মতো অবস্থায় যাবে? তাতে মনে হচ্ছে না। আপনি যদি আপনার সুত্র মত একটু বিশ্লেষণ করতেন তা হলেই বুঝতে একটু সহজ হতও।

    ReplyDelete
    Replies
    1. 1) ভূরাজনীতির কিছু স্তম্ভের মাঝে একটা হলো, লীডিং স্টেট বিশ্বব্যাপী নিয়মগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এই মুহুর্তে লীডিং স্টেট হলো যুক্তরাষ্ট্র। সে সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দুর্বল হয়েছে তার আদর্শের দুর্বলতার কারণে; তবুও সে লীডিং স্টেট; সেটা কারুর পছন্দ হোক বা না হোক। লীডিং স্টেট নিয়মগুলিকে তৈরি করতে পারে বলেই সে বিশ্বের বাকি দেশগুলির উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারে; সেই নিয়ন্ত্রণ কারুর উপর বেশি; কারুর উপর কম। লীডিং স্টেটের কাছাকাছি অন্যান্য যেসব শক্তিশালী স্টেট রয়েছে, তারা লীডিং স্টেটের নীতিকে ঘিরে নিজেদের নীতিকে সাজায়; সেটা লীডিং স্টেটের পক্ষেই, বা বিপক্ষেই হোক। এই রাষ্ট্রগুলি হলো - ব্রিটেন, ফ্রান্স, চীন এবং রাশিয়া - এগুলি গ্রেট পাওয়ার।

      2) এর দুই গ্রুপের বাইরে যেসকল রাষ্ট্র রয়েছে, তারা লীডিং স্টেট এবং তার আশেপাশে ঘোরা চারটা গ্রেট পাওয়ারের নীতির সাথে নিজেদের সমন্বয় করে চলে। পাঁচটা স্টেট নিজেদের স্বার্থকে সমুন্নত রাখতে নিজেদের মাঝে প্রতিযোগিতা করে; দরকার বিশেষে বিশ্বের এক স্থানে তারা একত্রে কাজ করে; আবার অন্য স্থানে শত্রু বনে যায়। ভারত এই পাঁচটা রাষ্ট্রের বাইরের রাষ্ট্র; যদিও ভারত আকারে অনেক বড়। পাঁচটা টপ স্টেট ভারতকে বেশি গুরুত্ব দেয়; কারণ ভারতকে নিজেদের পক্ষে রাখতে পারলে তারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে। একারণে ভারতের নিয়ন্ত্রণে প্রতিযোগিতাও বেশি। বেশি প্রতিযোগিতার কারণে ভারতে কেউ একচ্ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করতে পারে না। যেমন, সাম্প্রতিক নির্বাচনে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধু বিজেপি সরকার ব্রিটিশদের বন্ধু কংগ্রেসের কাছে বেশ কিছু ভোট হারিয়েছে। ভারতের অভ্যন্তরে কারুর একচ্ছত্র আধিপত্য না থাকায় ভারত অনেক ক্ষেত্রেই নিজেদের সিদ্ধান্ত দ্রুত নিতে পারে না; উদাহরণ - কারগিল যুদ্ধ। আবার অনেক ক্ষেত্রে কোন সিদ্ধান্তই বাস্তবায়ন করতে পারে না; যেমন - আসামে এনআরসি নীতির বাস্তবায়ন বার বার হোঁচট খাচ্ছে; এর মাঝে মনিপুরে দাঙ্গা শুরু হয়ে গেছে। এই সকল কিছু মিলে ভারত অভ্যন্তরীণভাবে খুবই দুর্বল। বাইরের সকলেই ভারতের নীতিগুলিকে নিয়ন্ত্রণ করতে সচেষ্ট, তাদের নিজস্ব ভূরাজনৈতিক উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে।

      3) ভারত আকারে বড় হলেও তার চিন্তার পরিধি খুবই অগভীর এবং অদূরদর্শী। ব্রিটিশরা ভারতের যে বাস্তবতা রেখে গিয়েছে, ভারত সেই বাস্তবতা থেকে এক চুলও বের হতে পারে না। একারণেই ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের আঁকা সীমানার কারণে ভারতের উত্তর-পূর্ব সাতটা রাজ্য বাকি ভারত থেকে প্রায় আলাদা। মাত্র ১৫ মাইল চওড়া একটা 'চিকেন নেক'এর মাধ্যমে যুক্ত হওয়ায় ভারত সর্বদাই এই সাত রাজ্যকে হারিয়ে ফেলার দুঃস্বপ্নে থাকে। এগুলি ভারতের বাস্তবতা এবং ভারতের চিন্তাগুলি এই বাস্তবতা-কেন্দ্রিক।

      4) সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্র এবং চীনের মাঝে ভূরাজনৈতিক প্রতিযোগিতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্র চেয়েছে ভারতের আরও কাছাকাছি গিয়ে ভারতের সম্পদগুলিকে চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহার করতে। সেই লক্ষ্যে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে প্রচুর স্টেট-অব-দি-আর্ট অস্ত্র দিয়েছে শুধুমাত্র চীনের বিরুদ্ধে ব্যবহারের জন্যে। ভারত এই অস্ত্রগুলি পাবার জন্যে নিজেদের সার্বভৌমত্বকে বিসর্জন দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে অত্যন্ত গভীর কিছু সামরিক ইন্টেলিজেন্সের চুক্তি করেছে; যেগুলি স্বাক্ষরের আগে ভারতে যথেষ্ট তোলপাড় করেছিলো কংগ্রেস। মোটকথা, ভারত এবং যুক্তরাষ্ট্রের আঞ্চলিক ভূরাজনৈতিক স্বার্থ এখন এক। একারণে ভারতের সাথে যুক্তরাষ্ট্রের বহু ক্ষেত্রে বিরোধিতা থাকলেও যুক্তরাষ্ট্র সেগুলিকে এড়িয়ে গিয়েছে মূল লক্ষ্যের উপর স্থির থাকার জন্যে - চীনকে নিয়ন্ত্রণ। রাশিয়ার কাছ থেকে 'এস-৪০০' ক্ষেপণাস্ত্র কেনার জন্যে তুরস্ককে অবরোধের মাঝে পড়তে হয়েছে; কিন্তু ভারতকে তা ফেইস করতে হয়নি। কারণ ভারত এই ক্ষেপণাস্ত্রকে মোতায়েন করেছে 'চিকেন নেক'এর নিরাপত্তায়। আবার রাশিয়ার কাছ থেকে নেয়া প্রযুক্তিতে তৈরি 'ব্রাহমোস' সুপারসনিক এন্টি-শিপ মিসাইল ভারত রপ্তানি করেছে ভিয়েতনাম এবং ফিলিপাইনের কাছে; যাতে করে সেগুলি চীনের বিরুদ্ধে মোতায়েন হয় - যুক্তরাষ্ট্র বাধা দেয়নি।

      continued.....

      Delete
    2. continued....

      5) যদি তাইওয়ানকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রের সাথে চীনের সামরিক সংঘাত শুরু হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্র চাইবে ভারতও চীনের সাথে সীমান্তে সংঘর্ষে জড়াক। এতে চীন বাধ্য হবে তার সামরিক শক্তিকে দুই ভাগ করে ফেলতে। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে ভারতকে যেকোন মূল্যে 'চিকেন নেক'কে বাইপাস করতে হবে। কারণ যে কোন সংঘাতে চীন ১৫ মাইলের এই করিডোরকে কেটে ফেলতে পারবে। এই বাইপাসের মূল কাজটা হবে বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে রসদ সরবরাহের ব্যবস্থা করা। আর এক্ষেত্রে সবচাইতে বড় ভূমিকা রাখতে পদ্মা সেতু এবং মাতারবাড়ি পোর্ট। প্রথমটা বিশ্বব্যাংক পরিকল্পনা করেছিল এশিয়ান হাইওয়ের নামে; দ্বিতীয়টা জাপানের 'বিগ-বি' প্রকল্পের অংশ। উভয়েরই লক্ষ্য হলো ভারতকে বিপদের সময় ট্রানজিট সুবিধা দেয়া। এবং দু'টাই যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক প্রকল্পের অংশ। বাংলাদেশ এগুলি তৈরি করে ফেলেছে। কাজেই এখন এগুলিকে ব্যবহার করতে না দেয়া তার পক্ষে অত্যন্ত কঠিন হবে। তবে এগুলি যদি চীনের সাথে যুদ্ধের সময় ভারত ব্যবহার করে, তবে চীন নিজেকে রক্ষার স্বার্থেই এই স্থাপনাগুলির উপর ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করবে।

      আরও ডিটেলস জানতে আমার 'ভূরাজনৈতিক ভূমিকম্প ২০২০' বইএ ভারত-চীনের লাদাখ সীমান্ত সংঘর্ষ নিয়ে লেখাটা পড়তে পারেন। এই লেখাটা এই ব্লগেও রয়েছে -
      https://koushol.blogspot.com/2020/06/Future-india-china-border-tension.html

      আর বাংলাদেশের মাঝ দিয়ে সামরিক ট্রানজিটের ভারতীয় পরিকল্পনা নিয়ে ২০২২ সালের এই লেখাটা পড়তে পারেন।
      https://koushol.blogspot.com/2022/12/bangladeshs-neutral-policy-in-bay-of-bengal-under-pressure.html

      বাংলাদেশের ডিটারেন্ট নিয়েও পড়তে পারেন পুরো নিরাপত্তা ঝুঁকির একটা এসেসমেন্টের জন্যে; যা গত পঞ্চাশ বছর ধরে বাংলাদেশকে ভাবাচ্ছে।
      https://koushol.blogspot.com/2023/11/bangladesh-defence-deterrernt-five-decades-struggle-for-existence.html

      Delete
    3. যতদূর বুঝা যাচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এখন লিডারশীপ ক্রাইসিসে ভুগছে যেখানে মাথাওয়ালা কিসিনজার ও ব্রেজেনস্কির মতো চতুর লোক পেয়েছিলো।এখন আমরা এইরকম লোক দেখতে পারছি না যার কারণে তার লিডারশীপের দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে এবং তার আর্দশের দুর্বলতা দেখা দিচ্ছে। এর দুর্বলতা কিভাবে এবং কখন থেকে শুরু হলো?? যদিও এখন অবধি এই স্টেট হেজিমনি ধরে রেখেছে, এটা কিভাবে হচ্ছে??
      যেহেতু ডেমোক্রেসি তার দুর্বলতা দেখানো শুরু করেছে, এই লিডিং স্টেট কি কোনোভাবে father of the constitution এর বিপরীতে গিয়ে তার সর্বনাশ ডেকে এনেছে কি যেখানে freedom কে সর্বাধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে কিন্তু আমরা এখন দেখছি এই স্টেট তার Security কে প্রাধান্য দিয়েছে Patriotic law এর মাধ্যমে, ফ্রিডম অফ স্পিচ ও ফ্রিডম অফ বিলিফকে কে একপাশে রেখে। এর ফলে দেখা যাচ্ছে তার স্টেট সিকিউরিটি নিয়ে প্রচুর আইন তৈরি হচ্ছে যা কি না freedom কে ব্যহিত করছে তার জায়গা থেকে এটাও কি একটা কারণ হতে পারে ডেমোক্রেসি স্লিপ হয়ে যাওয়ার?? কোন কোন কারণে এই রাষ্ট্রটা লিডিং স্টেট হিসেবে টিকে আছে এবং কোন কোন কারণে এর দুর্বলতা প্রকাশ পাচ্ছে এর একটা বিস্তারিত বর্ণনা দিবেন??

      এই বিষয়ে আপনার কোনো লেখা থাকলে লিংকটা শেয়ার করতে পারবেন?

      Delete
    4. আসলে আমার গত দশ বছরের সকল লেখাই যুক্তরাষ্ট্র এবং সেকুলার আইডিওলজির দুর্বলতা নিয়ে। আমার ছয়টা বইয়ের মূল বিষয়বস্তুই এটা।

      যাই হোক, অল্প কথায় বলতে গেলে সেকুলার ডেমোক্র্যাসি হলো মানুষের তৈরি আইন। আর মানুষ হলো লিমিটেড চিন্তা ক্ষমতার প্রাণী। যেকারণ মানুষ যখন কোন আইন তৈরি করে, তখন সেগুলি একদিকে যেমন আইন প্রবর্তকের স্বার্থকে সংরক্ষণ করে। আবার একইসাথে অনেকের স্বার্থকে ক্ষুন্ন করে ফেলে। যেমন - ম্যাজরিটি আইন তৈরি করলে মাইনরিটিদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হয়। এছাড়াও আইন তৈরি করা যেহেতু একটা ক্ষমতা, সেই ক্ষমতা ব্যবহার করার জন্যে হয় বাজে প্রতিযোগিতা - শুরু হয় দলাদলি এবং ক্ষমতায় যাবার জন্যে হয় ব্যাপক অর্থের ছড়াছড়ি। যেমন - যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে যে বেশি অর্থ যোগাড় করতে পারবে, তার জেতার সম্ভাবনা বেড়ে যাবে। আর সেকারণেই যারা অর্থ দেবে, রাজনীতিবিদ পার্লামেন্টে গিয়ে তাদের সুবিধা অনুযায়ী আইন তৈরি করবে। এখানে জনগণের স্বার্থ কেউ দেখে না। এই ব্যাপারগুলি শুধু যুক্তরাষ্ট্রে নয়; সারা বিশ্বেই চলছে - হয় কম; নয়তো বেশি। এটা সেকুলার ডেমোক্র্যাসির নিয়ম।

      আজকে যেটা মানুষের কাছে ভালো মনে হচ্ছে, কালকে সেটা ভালো মনে না-ও হতে পারে। যেমন, একসময় যুক্তরাষ্ট্রে সমকামীদেরকে মানসিক রোগী হিসেবে দেখা হতো; আর এখন নিজেরা আইন তৈরি করে তাদেরকে বৈধতা তো দিচ্ছেই, বরং সারা বিশ্বে এটা প্রমোট করছে। আবার হিউম্যান রাইটসের কথা বলার পরেও পশ্চিমা দেশগুলিতেই মানুষ রাস্তায় ঘুমাচ্ছে; অনেকেই ঠিকমতো চিকিৎসা পাচ্ছে না। আবার জায়গামতো ফ্রিডম অব স্পিচের কথা বলা হলেও সকল ক্ষেত্রে সেটাকে প্র্যাকটিস করতে দিচ্ছে না। যেমন, ইস্রাইলের বিরুদ্ধে কথা বলার জন্যে যুক্তরাষ্ট্রে বহু মানুষকে পুলিশের নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। আবার ওয়ার অন টেররের নামে সকল মানুষের প্রাইভেট কমিউনিকেশনের উপর গোয়ান্দাগিরিকে লিগ্যাল করে নিয়েছে। সকল কিছুই সুবিধামতো আরকি।

      মোটকথা, যুক্তরাষ্ট্র শুধু নয়, পুরো পশ্চিমা বিশ্বেই আদর্শিক হাহাকার বিরাজ করছে। কারণ সেকুলার আদর্শ মানুষের সমস্যার সমাধান করতে পারছে না। যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার নিয়ন্ত্রণ ধরে রেখেছিল এই আদর্শের বলে। কারণ সারা দুনিয়াতে যুক্তরাষ্ট্র এই আদর্শকে প্রমোট করেছে এবং সকলকে বাধ্য করেছে এই আদর্শ গ্রহণ করতে। এখন যেহেতু নিজেরাই এই আদর্শের ক্রাইসিসের মাঝে পড়ে গেছে, তাই দুনিয়ার বিভিন্ন স্থানে তারা কাউকে জোর করে বলতে পারছে না যে, তোমার আদর্শ ঠিক নেই। এখন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে বাকি দুনিয়ার বেশিরভাগ দেশের সম্পর্কই স্বার্থের সম্পর্ক হয়ে গিয়েছে; আদর্শের সম্পর্ক নয়। যতক্ষণ এই স্বার্থ অটুট থাকে, ততক্ষণ সম্পর্ক চলে। তবে এরূপ সম্পর্ক সবসময় ক্রাইসিসের মাঝে থাকে।

      আর স্বার্থের সম্পর্কের মাঝে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ হলো নিরাপত্তা। যুক্তরাষ্ট্র দুনিয়ার বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিরাপত্তা দিয়ে তার প্রভাবকে ধরে রাখে। কিন্তু এখন নিরাপত্তার ক্ষেত্রেও ঘাটতি দেখা দিচ্ছে। কারণ প্রযুক্তিগত উতকর্ষতাকে অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সামরিক বাহিনীর যেকোন কিছুর সংখ্যাই কমে গিয়েছে। এতে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে যুক্তরাষ্ট্র নিরাপত্তা দিতে হিমসিম খাচ্ছে। তাকে ঠিক করতে হচ্ছে - কোথায় সে নিরাপত্তা দেবে; আর কোথা থেকে তার নিরাপত্তার চাদর কমিয়ে ফেলবে। যেমন - চীনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্য থেকে তার প্রায় সকল সামরিক উপস্থিতি সরিয়ে ফেলেছে। এর ফলে মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তার উপর নির্ভরশীল সরকারগুলি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে।

      এর বাইরেও আরও অনেক ফ্যাক্টর রয়েছে। আপাততঃ এতটুকুই থাকলো। বাকিটা এই ব্লগের লেখায় এবং আমার বইগুলিতে পাবেন আশা রাখি।

      Delete
  21. জুলাইয়ে অভ্যুত্থান ব্যর্থ হল - অগাস্টে কি সফল হবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই আগস্টে জুলুম দূর হবে? নাকি পরের আগস্টে?

      এই লেখাগুলি আবারও তুলে ধরলাম -
      রাষ্ট্র কেন মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে পারে না? এটা নিয়ে কোন আন্দোলন হয়েছে? কেন বাংলাদেশে লক্ষ লক্ষ মামলা নিষ্পত্তি হয় না? কেন মানুষকে দোষী প্রমাণিত হবার আগেই কারাগারে আটকে রাখা হয়? কেন বাজারে সিন্ডিকেট বন্ধ করা যায় না? কেন সামাজিক অবক্ষয় এত চরম খারাপ অবস্থায় পৌঁছেছে? বাংলাদেশ কেন আইএমএফএর মতো মাফিয়া সংস্থার রাহু থেকে বের হতে পারছে না? কেন আইএমএফএর শর্ত মেনে ভর্তুকি তুলে দেয়া হলো? কেন শর্ত মেনে ট্যাক্স বাড়ানো হলো? কেন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন করে মানুষকে কষ্টের মাঝে ফেলা হলো? এই ব্যাপারগুলি নিয়ে কোন আন্দলন হয়েছে? পদ্মা সেতু প্রকল্প বিশ্বব্যাঙ্ক নিয়েছিল এশিয়ার হাইওয়ের নামে ভারতকে ট্রানজিট দিতে - কেউ প্রশ্ন করেছিল? জাইকা যখন বলছে যে, তারা মাতারবাড়ী বন্দর তৈরি করেছে ভারতকে ট্রানজিট দিতে - কেউ অখুশি হয়েছে? কোন রাজনৈতিক দল আইএমএফএর কাছ থেকে ঋণ নিতে মানা করেছে বা আইএমএফএর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন করেছে?

      এইরকম হাজারো জুলুম থেকে মানুষ বাঁচবে কি?

      Delete
  22. আপনার চীন - ভারতের সম্পর্কের বিষয়ে অবহিত হলাম। বই সমূহ আমি দেখে নেব। কিন্তু শুনা যাচ্ছে, বা আন্দোলনকারীরা জানিয়ে দিচ্ছে যে, শেখ হাসিনাকে বা আওয়ামী লীগ সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে। আমার প্রশ্ন হচ্ছে, আপনার সব সুত্র মিলিয়েই বলুন শেখ হাসিনা কি এই রকম অনৈতিক দাবী মেনে নেবেন? বা আন্দোলনের মুখে কি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবে? মানে এই সপ্তাহের মধ্যেই কি বাংলাদেশের সরকার পরিবর্তন হয়ে যাবে?
    আর একটা বিষয় হচ্ছে, এই রকমভাবে দীর্ঘ ১৬ বছর একটানা ক্ষমতায় থাকার পরে বর্তমানে আওয়ামী লীগের জনপ্রিয়তার যে ভাটা নেমে গেল, তা কি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন বা দলীয় নেতৃত্ব (মানে কমিটি পুন বিন্যাস এর মাধ্যমে) জনপ্রিয়টা বা সাংগঠনিক ভিত্তি ফিরিয়ে আনতে পারবেন?
    ধন্যবাদ। আপনার বিশ্লেষণ পড়ে সুত্র সমূহ কিছুটা বুঝতে পারতেছি। অপেক্ষায় থাকলাম।

    ReplyDelete
    Replies
    1. আমি আসলে এই ব্লগে সরকার নিয়ে কথা বলি না। অনেকে বহু কমেন্ট করার কারণে কিছু ক্ষেত্রে উত্তর দিয়েছি। কিন্তু মূলতঃ সরকার আমার বিষয়বস্তু না; আমার বিষয়বস্তু হলো রাষ্ট্র। একটা সরকার রাষ্ট্রকে কতটুকু বোঝে, সেটার উপর অনেক কিছুই নির্ভর করে। তবে সমস্যা হলো, বাংলাদেশ কোন আদর্শিক রাষ্ট্র নয়। একারণে আদর্শিক রাষ্ট্রগুলি বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্রগুলিকে সমস্যায় ফেলে নিজেদের ভূরাজনৈতিক স্বার্থকে হাসিল করে নিতে পারে। একারণেই বলেছি যে, এই ব্যবস্থায় যে ক্ষমতায় থাকে এবং যে ক্ষমতায় যেতে চায়, তারা সকলেই বিদেশের উপরে নির্ভরশীল থাকে। সমস্যাটা সরকারের নয়; রাষ্ট্রের। রাষ্ট্র দুর্বল দুর্বল থাকে একারণেই। সে নিজের ইচ্ছামতো সিদ্ধান্ত নিতে পারে না; সর্বদা অন্য রাষ্ট্র ডিকটেট করে।

      আর যেহেতু মূল সমস্যাগুলি রাষ্ট্রের (যেমন - বেকারত্ব, মুদ্রাস্ফীতি, সিন্ডিকেট, দুর্নীতি, দুর্বল বিচারব্যবস্থা, স্বল্প কিছু মানুষের হাতে সকল সম্পদ, ইত্যাদি) এবং সমাজ-ব্যবস্থার। কোন সরকারের পক্ষে এই ব্যবস্থায় থেকে এই সমস্যাগুলিকে সমাধান করা সম্ভব নয়। সারা বিশ্বে অনেকেই চেষ্টা করেছে; সফল হয়নি। এই সমস্যাগুলি জনগণকে ক্ষেপিয়ে রাখে; আর সুযোগমতো বিভিন্ন শক্তি এই ইস্যুগুলিকে কাজে লাগিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিল করে নেয়।

      আপনি কেন, কেউই সরকারের মাঝে নিজেদের চিন্তাকে সীমাবদ্ধ রাখলে কোন সমস্যার সমাধানই করতে পারবে না। যারা আজকে পক্ষে বা বিপক্ষে কথা বলছে, তারা কেউই মূল সমস্যা নিয়ে কথা বলছে না। এই সমাজ-ব্যবস্থাটা একটা ক্যান্সার। আপনি ক্যান্সারের চিকিৎসা না করে জ্বরের ঔষধ দিলে রোগমুক্তি হবে কিভাবে?

      Delete
  23. আপনার পরিশ্রম এবং চমৎকার লেখার জন্য ধন্যবাদ। বেশ কয়েকটি কমেন্টের উত্তরে আপনি বলেছেন, আপনি মূলত রাষ্ট্রের বিষয়ে লেখেন, সরকারের বিষয়ে নয়। আমার প্রশ্ন হচ্ছেঃ

    সরকারই রাষ্ট্র পরিচালনা করে। রাষ্ট্র নিজের ইচ্ছামত চলতে পারে না। এক্ষেত্রে সরকার / শাসক গোষ্ঠী হয়তো অনেক সময় রাষ্ট্র স্বার্থের চেয়ে নিজেদের স্বার্থকে বেশি গুরুত্ব দিয়ে রাষ্ট্রকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মতো রাষ্ট্র অনেক সময় সরকারের আনুগত্য করতে গিয়ে বুঝে শুনেই নিজের স্বার্থবিরোধী কাজ করে। তাহলে সরকার আর রাষ্ট্র আলাদা করে ভাবার সুযোগ কোথায়?

    ReplyDelete
    Replies
    1. আপনি যে ব্যাপারটা হিসেবে নিতে ভুলে গেছেন তা হলো, আদর্শিক ভিত্তি না থাকার কারণে রাষ্ট্র দুর্বল। এই কথাগুলি লেখার মাঝেই ছিল। আপনি সেটা বাদ দিকে সরকার আর রাষ্ট্রের মাঝে বিভেদ করছেন। সমস্যা হলো, আদর্শিক ভিত্তি না থাকার কারণেই মানুষ সরকার আর রাষ্ট্র আলাদা করতে পারে না। আদর্শিক ভিত্তি না থাকার কারণেই রাষ্ট্র সরকারের সাথে পানিতে ভাসতে ভাসতে একবার ডানদিকে যায়; আরেকবার যার বামদিকে। রাষ্ট্র যদি শক্ত আদর্শিক পিলার বা স্তম্ভের উপর থাকতো, তাহলো কোন সরকারই রাষ্ট্রকে পরিবর্তন করতে পারতো না।

      আপনি যুক্তরাষ্ট্র এবং ব্রিটেনের উদাহরণ দেখতে পারেন। তাদের বহু সরকার এসেছে-গিয়েছে; কিন্তু রাষ্ট্রের নীতি কখনোই পরিবর্তিত হয়নি। সরকার এসেছে রাষ্ট্রের নীতিগুলিকে বাস্তবায়ন করতে; নিজে নিজে নীতি তৈরি করার জন্যে নয়। সরকারের ক্ষমতা নেই রাষ্ট্রের নীতি পরিবর্তন করার। কারণ রাষ্ট্র একটা আদর্শিক ভিতের উপরে প্রতিষ্ঠিত - সরকারের এখানে কিছুই বলার নেই। যেহেতু বাংলাদেশের এমন কোন আদর্শিক ভিত নেই, তাই বাংলাদেশ সর্বদাই ভাসতে থাকে এবং দিক পরিবর্তন করতে থাকে। এটা বিদেশীদের স্বার্থকে বাস্তবায়ন করে। কারণ একটা ভাসমান রাষ্ট্রকে যেভাবে ইচ্ছা ব্যবহার করা যায়। শক্ত আদর্শিক পিলারের উপর স্থাপিত হলে বিদেশীরা কখনোই প্রভাব বিস্তার করতে পারতো না।

      Delete