Monday 5 August 2024

০৫ই অগাস্ট রেভোলিউশন – ফলাফল যেন 'নতুন বোতলে পুরনো মদ' না হয়

০৫ই অগাস্ট ২০২৪

মাত্র ১৬ দিনের মাঝে দ্বিতীয়বার প্রমাণ হলো যে, সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের 'মোস্ট ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর'। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজকে রাস্তায়। এ এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য! বহু মানুষ সেনা সদস্যদেরকে আলিঙ্গন করছে। তারা বিজয় পেয়েছে - তারা একনায়ককে সরিয়েছে। কিন্তু এরপর কি হবে? তারা কি তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে, সেটা নির্ধারণ করতে পারবে? নাকি আবারও সেই বিদেশীরাই নির্ধারণ করে দেবে কি ধরণের সরকার হবে এবং কিভাবে দেশ চলবে? আবারও কি অনেক বছর পরে কেউ বলবে যে, ২০২৪ সালে কোন শর্ত মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমতায় যেতে হয়েছিল? 


২৫শে ফেব্রুয়ারি ২০০৯ সাল। বিডিআর সদর দপ্তর, পিলখানা, ঢাকা।

১) বিডিআরএর বিদ্রোহ শুরু হবার আগেই দরবার হলের রেস্টরুমে রাখা ছিল ত্রিকোণাকৃতির লাল কাপড়। এই কাপড়গুলি আনা হয়েছিল প্যারেডের সময় মাঠের আশেপাশে বাউন্ডারির নিশানা হিসেবে। এই লাল কাপড়গুলিই বিদ্রোহীদের মাঝে একটা অংশ ব্যবহার করেছিল তাদের নিজেদের মুখ ঢাকার জন্যে। তখন অনেকেই এই ব্যাপারটা বুঝতে পারেনি; কেন এই মানুষগুলি মুখের উপরে মুখোশ পড়বে। কারণ এটা একটা ডিসিপ্লিন্ড ফোর্স; এর মাঝে কারা কারা রয়েছে, সেই হিসেব তো ফাঁকি দেয়ার কোন পদ্ধতিই নেই। তাহলে বিদ্রোহীরা কি ভেবেছিল যে, তারা তাদের মুখ ঢেকে ফেললেই তাদেরকে চেনা যাবে না; এবং কোন এক সময় তারা পিলখানার দেয়াল টপকে বাইরে চলে গেলে তাদেরকে আর কেউ চিনতে পারবে না? এটা তো অসম্ভব! কারণ এরকম একটা ফোর্সের ব্যক্তিরা ট্রেনিংএর মাঝে একে অপরের উপর এতটাই নির্ভরশীল হয়ে যায় যে, তারা অন্ধকারের মাঝেও একে অপরকে চিনে ফেলতে পারে; মুখে মুখোশ পড়লেও! তাহলে তারা কেন মুখোশ পড়েছিল? আর মিডিয়া রিপোর্টে দেখা যায় যে, অনেকেই সেই বরাদ্দ রাখা লাল কাপড়ের মুখোশগুলি পায়নি। তারা এদের দেখাদেখি নিজেরাও মুখোশ খুঁজতে থাকে। না পেয়ে সাধারণ কাপড় দিয়েই নিজেদের মুখ ঢাকে। তারা প্রকৃতপক্ষে জানতোও না যে, তারা কেন মুখ ঢাকছিল! শুধুমাত্র অন্যদের দেখাদেখি তারা মুখোশ পড়েছে।

২) যাদের জন্যে লাল কাপড় রাখা ছিল, তারা নিশ্চিত ছিল যে, মুখোশ খুলে তারা যদি পিলখানা থেকে বের হয়ে যায়, তাহলে কেউ তাদেরকে চিনতে পারবে না। কিন্তু সেটা কেন? তাহলে তারা কি বিডিআরএর ফোর্সের অংশ নয়? কারণ বিডিআরএর অংশ কেউ তো নিজেদের পরিচয় গোপন রাখতে পারবে না; হাজার মুখোশ পড়লেও নয়! এটাই আসল আলোচ্য বিষয়। যারা আগে থেকে লাল কাপড় এনে নিজেদের পরিচয় গোপন করেছে, তারা প্রকৃতপক্ষে বিডিআরএর কেউ নয়; এরা বাইরের লোক!! কিন্তু বাইরে থেকে কেউ পিলখানায় ঢুকলে তো তাদের হিসেব থাকার কথা। সেই হিসেব থেকেই তো বের করে ফেলা যায় যে, ভেতরে বহিরাগত কারা কারা ছিল। একারণেই পিলখানার রেকর্ড অফিস আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলা হয়েছিল!

৩) ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, ৮ জন বিদ্রোহী এবং ১৭ জন বেসামরিক লোক এই দিন নিহত হয়। আহত হবার কোন খবর কোন মিডিয়াতে সেদিন আসেনি। কোন হাসপাতালে কোন আহত নেয়া না হলেও অনেক এম্বুল্যান্স সেই রাতে বিডিআর সদর দপ্তরে ঢুকেছে এবং বের হয়েছে। সাংবাদিকরা সকলেই সেই এম্বুল্যান্সগুলিকে দেখেছেন। কেউ কেউ সর্বোচ্চ ২৪টা পর্যন্ত এম্বুল্যান্স গুণেছিলেন সেই রাতে। কিন্তু এই এম্বুল্যান্সগুলি কাদেরকে ভেতর থেকে বের করে নিয়ে গেল এবং কোন হাসপাতালে গেল, সেটার হিসেব কেউ তখন নেয়নি। হয়তো কেউ কেউ জানতেন; কিন্তু প্রশ্ন করার সাহস তাদের হয়নি।

এটা নিশ্চিত যে, পিলখানা হত্যাকান্ড ছিল বাংলাদেশ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সবচাইতে ভয়াবহ ষড়যন্ত্রের একটা। এই ষড়যন্ত্র কেন হয়েছিল, তা প্রকৃত তদন্ত না হলে বলা সম্ভব নয়। তবে ধারণা করা যেতেই পারে যে, এই ঘটনা ছিল বিডিআরএর উপর ভারতের আক্রোশের ফলাফল। ২০০১ সালের এপ্রিল মাসে সিলেটের পাদুয়া সীমান্তে এবং রৌমারির বড়াইবাড়ি সীমান্তে ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী বিডিআরএর হাতে অপমানিত এবং নাস্তানাবুদ হয়েছিল। খুব সম্ভবতঃ সেই আক্রোশের ঝাল মেটাতেই ভারত বিডিআরকে সম্পূর্ণরূপে ভেঙ্গে দেয়ার ষড়যন্ত্র করেছিল। হয়তো এর চাইতেও ভয়বহ কিছু কেউ কেউ চেয়েছিল – সেনাবাহিনীতেও একই বিদ্রোহ ঘটানো। তবে আল্লাহর অশেষ রহমতে এবং খুব সম্ভবতঃ রাষ্ট্রের কিছু গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তির দৃঢ়তায় সেটা থামানো গিয়েছিলো।

শেখ হাসিনা প্রধানমন্ত্রী থাকার সময় বিভিন্ন সময়ে বলেছেন যে, তিনি ২০০১ সালে গ্যাস রপ্তানি করতে রাজি হননি বলে বিদেশীরা তাকে ক্ষমতায় আসতে দেয়নি। কিন্তু কেউ কি তাকে প্রশ্ন করেছিল যে, ২০০৯ সালে তিনি বিদেশীদেরকে কি প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় যেতে পেরেছিলেন? সেটা পরিষ্কারভাবে না বলতে পারলেও একটা ধারণা করা যায় যে, সেই প্রতিশ্রুতিগুলির একটা ছিল বিডিআরএর হত্যাকান্ড ঘটতে দেয়া! এখানে শুধু একটা বাহিনীকেই ধ্বংস করা হয়নি; যে ৫৭ জন সেনা অফিসারকে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তারা ছিলেন সেনাবাহিনীর সবচাইতে চৌকশ অফিসারদের মাঝের কয়েকজন। সবচাইতে উল্লেখযোগ্য ছিল কর্নেল গুলজার উদ্দিন আহমেদ; যিনি ২০০৪ থেকে ২০০৮ সালের মাঝে ভারতীয় গোয়েন্দা বিভাগের তৈরি জেএমবি-বাংলা ভাইকে নির্মূল করতে সবচাইতে অগ্রণী ভূমিকা রাখেন। শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার সাথেসাথেই কর্নেল গুলজারকে বিডিআরএ বদলি করা হয়; যেখানে এক মাসের মাঝে তাকে জীবন দিতে হয়।

পিলখানা ষড়যন্ত্রে সরকার এবং সরকারের বাইরে অনেকেই জড়িত ছিল। আর অনেকেই ঘটনা জেনেও না জানার ভান করে ছিল। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা হয় এর সাথে জড়িত ছিল, নয়তো দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তামাশা দেখেছে। কারণ ২০০৮ সালের শেষে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের এক্সিটের সময়ে এটাই ছিল এগ্রিমেন্ট – দেখলেও, বুঝলেও, মনের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হলেও – কিছু বলা যাবে না! রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্রের বিচার না করেই যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রার পথে পথে যে অবাধ হত্যাকান্ড থাকবে, তা যেন জানাই ছিল। সবচাইতে দুঃখজনক হলো, রাষ্ট্রযন্ত্র বিদেশীদের এতবড় এই ষড়যন্ত্রকে থামাতে তো পারেইনি, বরং দাঁত চেপে মেনে নিয়েছে। একটা অন্যায় যে আরও অন্যায়কে ডেকে নিয়ে আসবে, সেটা মানুষ কল্পনা করতে পারে না। কারণ মানুষের বর্তমান চিন্তা শর্ট-টার্মের; হ্রস্ব-দৃষ্টির – "পরেরটা পরে দেখা যাবে" ধরণের চিন্তা। এই চিন্তাটাই ১৫ বছর পর মানুষকে আবারও প্রশ্নবিদ্ধ করেছে - ১৫ বছর আগে বিচার করলে কি ২০২৪ সালের ৫ই অগাস্টের প্রয়োজন হতো?
 
পিলখানা ষড়যন্ত্রে সরকার এবং সরকারের বাইরে অনেকেই জড়িত ছিল। আর অনেকেই ঘটনা জেনেও না জানার ভান করে ছিল। রাজনৈতিক দলের সদস্যরা হয় এর সাথে জড়িত ছিল, নয়তো দূরে দাঁড়িয়ে থেকে তামাশা দেখেছে। কারণ ২০০৮ সালের শেষে ওয়ান-ইলেভেন সরকারের এক্সিটের সময়ে এটাই ছিল এগ্রিমেন্ট – দেখলেও, বুঝলেও, মনের মাঝে অস্থিরতা তৈরি হলেও – কিছু বলা যাবে না! রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে এতবড় ষড়যন্ত্রের বিচার না করেই যে যাত্রা শুরু হয়েছিল, সেই যাত্রার পথে পথে যে অবাধ হত্যাকান্ড থাকবে, তা যেন জানাই ছিল। 


০৫ই অগাস্ট। ঢাকা।

মাত্র ১৬ দিনের মাঝে দ্বিতীয়বার প্রমাণ হলো যে, সেনাবাহিনী রাষ্ট্রের 'মোস্ট ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর'। লক্ষ লক্ষ মানুষ আজকে রাস্তায়। এ এক অবিস্মরণীয় দৃশ্য! বহু মানুষ সেনা সদস্যদেরকে আলিঙ্গন করছে। তারা বিজয় পেয়েছে - তারা একনায়ককে সরিয়েছে। কিন্তু এরপর কি হবে? তারা কি তাদের ভবিষ্যৎ কি হবে, সেটা নির্ধারণ করতে পারবে? নাকি আবারও সেই বিদেশীরাই নির্ধারণ করে দেবে কি ধরণের সরকার হবে এবং কিভাবে দেশ চলবে? আবারও কি অনেক বছর পরে কেউ বলবে যে, ২০২৪ সালে কোন শর্ত মেনে নিয়ে তাকে ক্ষমতায় যেতে হয়েছিল? ১৯৯০ সালেও একনায়ক এরশাদের সরকারের পতন হয়েছিলো (সেখানেও বিদেশীদের সরাসরি ইন্ধন ছিলো)। কিন্তু বাংলাদেশ রাষ্ট্রের অবস্থার তো উন্নতি হয়নি। জনগণ এখনও গরীব; কারণ স্বল্প কিছু মানুষের হাতে বেশিরভাগ সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে গিয়েছে; ঠিক যেমনটা হয়েছে পশ্চিমা দেশগুলিতে। চরম বেকারত্বের কারণে সরকারি চাকুরিতে ঢোকার কোটা নিয়ে আন্দোলন হয়েছে। শ্রমিকরা বারংবার রাস্তায় নেমেছে তাদের বেতন বৃদ্ধির জন্যে; কারণ ব্যাপক মুদ্রাস্ফীতির কারণে তাদের আয় দিয়ে তাদের সংসার চলছে না। সামাজিক অবক্ষয় মারাত্মক আকার ধারণ করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং জাতিসংঘ এলজিবিটি-র মতো মারাত্মক ব্যাধিকে 'রংধনু' নামে ইনজেকশের মাধ্যমে জোর করে ঢুকিয়ে দিয়েছে এই সমাজে। আইএমএফ-এর মতো মাফিয়া সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে শর্ত হিসেবে জ্বালানির উপর থেকে ভর্তুকি তুলে দিয়ে, ব্যাপকভাবে ট্যাক্স বৃদ্ধি করে, ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্য কমিয়ে দিয়ে সাধারণ মানুষের জীবনকে দুর্বিসহ করে ফেলা হয়েছে। বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে সকল পণ্যের কারণ ছাড়া মূল্য-বৃদ্ধি যেন প্রতিদিনের ইস্যু। দুর্নীতির সাগরে সাঁতড়ে অনেকেই হয়েছেন হাজার কোটিপতি। এই মারাত্মক সমস্যাগুলি সরিয়ে ফেলা নিয়ে কেউ কথা বলে না। অনেকেই বলবে যে, “এগুলি সরানো অনেক কঠিন কাজ", অথবা "এগুলি ধীরে ধীরে সরাতে হবে", অথবা "এগুলি সরাবার কথা বলা অবাস্তব", অথবা অন্য কিছু।

সরকার আসবে; যাবে। কিন্তু রাষ্ট্র এখনও দুর্বলই রয়ে গেল। সকলেরই চিন্তা সরকারকে নিয়ে; রাষ্ট্র নিয়ে নয়। সমস্যায় পড়লে সকলেই সরকার পরিবর্তন চায়; এগুলি যে রাষ্ট্রের সমস্যা, সেটা নিয়ে কেউ চিন্তা করে না। একারণেই নতুন বোতলে পুরনো মদের চালান আসতেই থাকে। সমস্যা চিরকালই রয়ে যায়; আর বিদেশীরা এই সমস্যাগুলি জিইয়ে রেখে রাষ্ট্রের নীতিকে নিয়ন্ত্রণ করে। এটা একটা 'ভিশাস সার্কেল'; যার মাঝে বাংলাদেশ ঘুরপাক খাচ্ছে জন্মের পর থেকে। রোগ হলো ক্যান্সার; আর সকলে ক্যান্সারের জন্যে হওয়া জ্বরের চিকিৎসা নিয়ে ব্যস্ত। প্যারাসিটামল দিয়ে কি আর জ্বরের চিকিৎসা হয়?

30 comments:

  1. বিষয় ভোট দিয়েই ত জনগণ
    প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করেছিলো বাট বলেছেন বিদেশী অর্থাৎ পরাশক্তিদেরকেই বুঝাচ্ছেন ওরা কিভাবে নির্বাচিত করে?? আমরা মনে করি আমরাই ভোট দিয়েই প্রধানমন্ত্রীকে নির্বাচিত করি কিন্তু পরাশক্তিরাই যে ওদেরকে বসাই আমরা বুঝতে পারি না কেন বাট coincidentally পরাশক্তিরা যাকে নির্বাচিত করে আমরাই তাকে নির্বাচিত করি। এটা Trap টা আমরা ধরতে পারি না কেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. ধন্যবাদ! চমৎকার প্রশ্ন।

      বাংলাদেশের মানুষ এই ব্যাপারগুলি ধরতে পারে না; কারণ এই রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল। এই রাষ্ট্রের ভিত হলো জাতীয়তাবাদ। অপরদিকে শক্তিশালী রাষ্ট্রের উদাহরণ হলো যুক্তরাষ্ট্র; যে হচ্ছে আকটা আদর্শিক রাষ্ট্র। একটা আদর্শিক রাষ্ট্র তার আদর্শকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয় এবং সেটাকে প্রতিষ্ঠা করার জন্যে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা চালায়। যুক্তরাষ্ট্রের পর আরও দু'টা আদর্শিক শক্তি রয়েছে; যারা বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মতো ম্যাটেরিয়াল পাওয়ারের সমকক্ষ নয় - ব্রিটেন এবং ফ্রান্স। এরাও আদর্শিক শক্তি; তবে আদর্শকে ছড়িয়ে দেবার ক্ষেত্রে তাদের সক্ষমতার বেশ ঘাটতি রয়েছে। একসময় এরাই আবার অনেক শক্তিশালী ছিল। আরও দু'টা শক্তিশালী রাষ্ট্র; যারা যুক্তরাষ্ট্রের চ্যালেঞ্জার, তবে আদর্শিক রাষ্ট্র নয় - চীন এবং রাশিয়া। এরা নিজেদের আদর্শকে দুনিয়াতে ফেরি করে না।

      আদর্শিক রাষ্ট্রগুলি নিজেদের আদর্শিক লক্ষ্য নিয়ে আগায়। তারা অন্যরা কি করলো সেটা না দেখে, নিজেদের লক্ষ্যের উপর ভিত্তি করে কাজ করে। অন্যরা এই আদর্শিক রাষ্ট্রগুলির কাজের প্রতিক্রিয়া স্বরূপ নিজেদের লক্ষ্য তৈরি করে। এগুলি মূলতঃ জাতীয়তাবাদী রাষ্ট্র। এই রাষ্ট্রগুলি আদর্শিক রাষ্ট্রের লক্ষ্যের উপর নির্ভর করে; নিজেরা স্বাধীনভাবে নিজেদের লক্ষ্য তৈরি করতে পারে না।

      বাংলাদেশ জানে না আগামীকাল কি ঘটতে যাচ্ছে। কারণ আগামীকালের উপর তার কোনরূপ নিয়ন্ত্রণ নেই। অপরদিকে আদর্শিক রাষ্ট্র জানে যে আগামীকাল সে করবে। সেকারণে আগামীকালের ঘটনার উপর সর্বদাই তার প্রভাব থাকে। ব্যাপারটা এমন নয় যে, সে আগামীকাল কি ঘটবে সেটা জানে। তবে বিভিন্ন বাস্তবতার উপর নির্ভর করবে যে, সে আগামীকাল কতটা প্রভাব বিস্তার করতে পারবে।

      যে ট্র্যাপ-এর কথা আপনি উল্লেখ করেছেন, সেই ট্র্যাপ-এর মূল কারণ হলো, কোন আদর্শের উপর না থাকায় বাংলাদেশ রাষ্ট্রের ভিত দুর্বল। দুর্বল ভিতের রাষ্ট্রের উপর শক্তিশালী রাষ্ট্র প্রভাব বিস্তার করবে, এটা একটা স্বাভাবিক বিষয়। এখানে আবেগআপ্লুত হয়ে বলার উপায় নেই যে, বাংলাদেশের মানুষ বাংলাদেশের সকল নীতি নির্ধারণ করতে পারে।

      Delete
    2. ব্রিটেন এবং ফ্রান্স ত একই তরিকায় ঔপনিবেশিকতার মাধ্যমে শাসিত করেছে তাহলে ওদের আদর্শ ত একই হবার কথা।
      চীন ও রাশিয়ার আদর্শ নাই কেন,এরা ত গ্রেট পাওয়ার??

      এগুলা কেমন জানি মুভির মতো মনে হয় সবকিছু আগে থেকে জেনে যায়। বিশ্বাস করাটা অনেক কঠিন হয়ে যায়। আপনার কথা অনুযায়ী বলা যায়,এই অভ্যুত্থান সফল হওয়ার পিছনে আমেরিকা বা পশ্চিমা রয়েছে যারা ছাএ-আনদোলনকে ব্যবহার করে তৃতীয় পার্টি সুপরিকল্পিত নকশা একেছে এবং তা ফান্ডিং এসেছে ওই রাষ্ট্রগুলির থেকে অর্থাৎ পূর্ব পরিকল্পিত,ট্রেনিংপ্রাপ্ত।

      তাহলে এমন কি হতে পারে আগামীতে যাকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবে জনগণ তা আগে থেকেই যুক্তরাষ্ট্র, পশ্চিমা বা ইন্ডিয়া ঐ ব্যক্তিটাকে সিলেক্ট করে ফেলেছে??? যদি এভাবে ঘটে তাহলে ত অত্যাচার-নিপীড়ন আমাদের পিছু ছাড়বে না। তাহলে কি উপায়ে এবং কিভাবে বাংলাদেশ পশ্চিমা বলয় থেকে বের হতে পারবো এবং কোন আদর্শ গ্রহণ করলে তা সম্ভব হবে?

      Delete
    3. প্রথমতঃ চীন এবং রাশিয়া নিজেদের কোন আদর্শকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়ায় ব্রতী নয়। চীন একসময় এই কাজটা করতো, যখন মাও সে তুং এবং চৌ এন লাই চীনের নেতৃত্বে ছিলেন। কিন্তু ১৯৮০এর দশকে দেং জিয়াও পিং ক্ষমতা নেয়ার পর তিনি চীনকে পুরোপুরিভাবে পরিবর্তন করে বহির্মূখী করে তোলেন; যেটা করতে গিয়ে চীন তার কমিউনিস্ট চিন্তা এবং তার আদর্শকে দুনিয়াতে ছড়িতে দেয়ার চিন্তা থেকে সরে আসে। তখন থেকে চীন আর আদর্শিক শক্তি নয়। গত চার দশকে চীন মূলতঃ অর্থনৈতিক শক্তি হিসেবে নিজেকে পরিচিত করেছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে চীন অর্থনীতির সাথেসাথে রাজনৈতিকভাবেও নিজেকে বিশ্বের কাছে পরিচিত করতে শুরু করেছে। এর ফল সাম্প্রতিক সময়ে চীনকে বৈশ্বিক শক্তি হিসেবে বলা যায়।

      অপরদিকে রাশিয়া তারা আশেপাশের অঞ্চল নিয়েই মূলতঃ চিন্তিত। সে তার প্রভাব নিজ অঞ্চলের মাঝে সীমাবদ্ধ রাখে বলে তাকে আঞ্চলিক শক্তি বলা যায়। তবে কিছু ক্ষেত্রে তার বৈশ্বিক আকাংক্ষা রয়েছে - যেমন আফ্রিকা এবং দক্ষিণ আমেরিকাতে রাশিয়া সীমিতভাবে জড়িত। আর রাশিয়া একটা ক্যাপিটালিস্ট রাষ্ট্র; যে তার আদর্শকে দুনিয়াতে ফেরি করে না।

      দ্বিতীয়তঃ এগুলি নতুন কিছু নয়। বিশ্বের বহু দেশে বহুবার এসব কাহিনী হয়েছে; বাংলাদেশেও হয়েছে। বাংলাদেশের ১৯৯০ সালে এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্সের অপারেশন ফেয়ারওয়েল সম্পর্কে অনেকেই অবগত নন। ২০০৪-০৫ সালে যুক্তরাষ্ট্র ইউক্রেনে অরেঞ্জ রেভোলিউশন ঘটিয়ে রুশ-সমর্থিত সরকারের পতন ঘটায়; যা পরবর্তীতে রাশিয়াকে ইউক্রেনের ডনবাস এবং ক্রিমিয়া অঞ্চল দখলে প্ররোচিত করেছিল।

      তৃতীয়তঃ ভোট দেয়াটা জনগণকে ঠান্ডা করার একটা পদ্ধতি। আপনি কখনও আপনার ইচ্ছেমতো প্রার্থীকে নির্বাচনে আনতে পারবেন না। তারা ঠিক করে দেবে যে, কারা নির্বাচন করতে পারবে। এর ফলে আপনাকে তারা মাল্টিপল চয়েস অপশন তৈরি করে দেবে; আপনি সেখান থেকে কোন একজনকে সিলেক্ট করবেন। যারা এই মাল্টিপল চয়েসে নাম লেখাবে, তাদেরকে আগে থেকেই কিছু বিষয়ে এগ্রি করে আসতে হবে। যদি সেটা সে না করে, তাহলে তার নির্বাচনে অংশ নেয়াটাই অনিশ্চিত হয়ে যাবে। আর দুই পক্ষই যদি পরিকল্পনাকারীদেরকে খুশি করতে সমভাবে অগ্রগামী হয়, তাহলে নির্বাচনে যে যতটুকু শক্তি দেখাতে পারবে, সে-ই জিতবে। এক্ষেত্রে সহিংসতা খুবই সাধারণ একটা বিষয়। যদি নির্বাচনে অংশ নেয়া ব্যক্তিরা পরিকল্পনাকারীদেরকে খুশি করতে পারে, তাহলে তাদের সহিংসতাকে তারা 'নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে' বলে সার্টিফিকেট দিয়ে দেবে; আর খুশি করতে না পারলে সার্টিফিকেট জুটবে না। তখন হয়তো সরকার গঠনের পর সেই সরকারকে তারা চাপের মাঝে রাখবে; বলবে যে, তুমি তো সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসোনি। যতক্ষণ পর্যন্ত সেই সরকার তাদেরকে খুশি করতে না পারবে, ততক্ষণ তার নির্বাচনের সহিংসতার গান গাইতে থাকবে। তবে মজার ব্যাপার হলো, এতো কিছুর পরেও তারা কিন্তু সম্পর্ক নষ্ট করবে না; সর্বদা একটা টেনশন বজায় রাখবে নিজেদের স্বার্থগুলিকে আদায় করে নিতে।

      Delete
    4. আচ্ছা এই ব্যাপারটা বুঝতে পারলাম বাট এই পশ্চিমাদের ডিসিশন বা আমাদের সীমনাভিওিক যে টেনশন থাকে এই বলয় থেকে মুক্তি পাওয়ার উপায় কি, তৃতীয় দেশ হিসেবে আমরা গ্রেট পাওয়ার কিভাবে হতে পারবো অর্থাৎ চ্যালেঞ্জ করতে পারবো লিডিং স্টেট গুলাকে, ওদের বলয় থেকে সম্পূর্ণরূপে স্বাধীন হবো বরং নিজেদের ডিসিশন নিজেরাই নিতে পারবো অর্থাৎ একটা সমৃদ্ধশালী রাষ্ট্র হবে যেমনটা আপনি বলেছিলেন আদর্শ না থাকার কারণে??

      Delete
    5. গ্রেট পাওয়ার হবার স্বপ্ন ভারত হয়তো দেখতে পারে। কারণ ভারতের বিশাল সম্পদ রয়েছে। সম্পদের উপর ভর করে সে সেটা চাইতে পারে; যদিও সে এখনও অপরের উপর ভর করে এগুচ্ছে। বাংলাদেশের এই স্বপ্ন দেখাটা বৃথা। আকৃতির দিক থেকে বাংলাদেশ ভারতের সমকক্ষ হতে পারবে না।

      তবে বাংলাদেশ পারে আদর্শিক শক্তি হতে। কারণ আদর্শিক শক্তি হওয়াটা আকৃতির উপরে নির্ভরশীল নয়। সেটা নির্ভর করে আদর্শিক লক্ষ্যের উপর। এই লক্ষ্য আদর্শিক রাষ্ট্রকে বাকি রাষ্ট্রগুলির উপর স্থান দেয় এবং অন্যান্য রাষ্ট্র আদর্শিক রাষ্ট্রের আশেপাশে ঘোরাফিরা করে; তার কাছ থেকে নিরাপত্তা সহযোগিতা চায়; অথবা তার সহায়তা নিয়ে এগুতে চায়। আদর্শিক রাষ্ট্র তার আদর্শকে সারা দুনিয়াতে ছড়িয়ে দেয় এবং বাস্তবায়ন করে। এর ফলে সে তার শক্তিকে প্রদর্শন করে এবং সকলের শ্রদ্ধা আদায় করে।

      Delete
    6. কোন আদর্শের কথা বলতেছেন আপনি সেটাই ধরতে পারতেছি না,একটু বিস্তারিত বলবেন?

      Delete
    7. এটা অনেক বড় আলোচনা। আপনি আগের পোস্টের কমেন্ট সেকশন দেখতে পারেন। আর আরও ডিটেলস জানতে হলে এই ব্লগের অন্য লেখাগুলি পড়তে পারেন। বেশিরভাগ লেখাতেই আদর্শের কথা এসেছে। আপনি আমার পাবলিশ হওয়া বইগুলিও পড়তে পারেন সময় নিয়ে।

      Delete
    8. আপনার বইয়ের লিংকগুলা দিবেন যে শুধু আদর্শ নিয়েই ডেডিকেটেড লেখা হয়েছে??

      Delete
    9. আসলে আমার সবগুলি বইয়ের প্রধান স্তম্ভ আদর্শ। কারণ আদর্শকে বাদ দিয়ে ভূরাজনীতির কথা বলা অর্থহীন। বইগুলির মাঝে শুধু 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?" বইটা বাংলাদেশকে কেন্দ্র করে লেখা। বাকিগুলি পুরো বিশ্বের ভূরাজনীতি নিয়ে। এই ব্লগের যেকোন পেইজের ডান পাশে এই বইগুলির লিঙ্ক দেখাবার কথা। তবে খুব সম্ভবতঃ মোবাইল ভার্সনে এটা দেখায় না।

      Delete
  2. একটা ডামি নির্বাচনে মানুষের ক্ষোভ, মুদ্রাস্ফীতি, ডলারের রিজার্ভ সংকট এবং ভারত-চীন-আমেরিকা ব্যালেন্স করার মত বহুমুখী সমস্যা যেখানে শেখ হাসিনা সামলাতে পারছিলো না সেখানে কোটা পূর্নবহাল করে তিনি কেন নিজের পায়ে কুড়োল মারার মত একটা ডিসিশন নিল? তিনি কি জানতেন না এরকম একটা সিদ্বান্ত নিলে একটা ছাত্র আন্দোলন অবশ্যই হবে এবং চলমান পরিস্থিতিতে আমেরিকা এটার সুযোগ নিতে চাইবে? তিনি কেন এই সংকট শুরু করলেন এবং আগুনে ঘি ঢালতে ঢালতে একদম নিজের পতন ডেকে আনলেন? তিনি কেন আমেরিকা কে এই সুযোগ টা করে দিলেন?

    ReplyDelete
    Replies
    1. এই ব্যাপারটা নিয়ে জুলাই ব্যর্থ অভ্যুত্থান নিয়ে আগের লেখাটার নিচে কমেন্ট সেকশনে আলোচনা পাবেন। এরপরেও বলি যে, কোটা আন্দোলনে প্রথম থেকে সরকারের সমর্থন ছিল। এটা আপনি বুঝতে পারবেন, যখন দেখবেন যে, সরকার প্রথমদিকে ছাত্রদের আন্দোলনে কোন বাধা দেয়নি। সমস্যা হলো যে, কোন একটা সময় বিরোধী দল এটাকে হাইজ্যাক করে ফেলে। এর ফলে আমরা জুলাই মাসে সহিংস আন্দোলন এবং কারফিউ দেখি। বিরোধী দলের এই পরিকল্পনা হয়তো সরকার বেশ খানিকটা দেরিতে ধরতে পেরেছিল (আগের লেখা দ্রষ্টব্য)। তবে কারফিউএর পর দ্বিতীয় ফেইজে নতুন করে যে অহিংস আন্দোলনের সূচনা হয়েছিল, সেটা সরকার একেবারেই ধরতে পারেনি। তখনও অবশ্য প্রথম ফেইজে ব্যর্থরা চাইছিল আন্দলনকে তাদের পথে রাখতে।

      শহীদ মিনারে কয়েক লক্ষ মানুষের সমাগম ছিল সরকারের মৃত্যুর ঘন্টা। কারণ এই জমায়েতের বেশিরভাগ মানুষ ছিল সরকারি দলের সমর্থক। এরাই একসময় শাহবাগে আন্দোলন করেছিল; যখন খুশি হয়েছিলেন যে, তার স্বপক্ষের লোকেরাই রাস্তায় রয়েছে। কিন্তু তিনি কল্পনাই করতে পারেন নাই যে, তার সমর্থকেরা তার বিরুদ্ধে দাঁড়াবে। এটা প্রমাণ করে যে, শেখ হাসিনার সরকার মানুষের অস্থা কতটা হারিয়েছিল। এই জমায়েতের পর এটা নিশ্চিত হওয়া গিয়েছিল এই সরকারের দিন দেশ; কারণ সেনাবাহিনী এমন একটা সরকারকে রক্ষা করার মত সিদ্ধান্ত নেবে না; এবং সেটা তারা নেয় নি।

      তবে যে ব্যাপারটা পরিষ্কার তা হলো, কখন কে কি করবে, সেই ব্যাপারগুলি একটা ছকের মাঝে বাঁধা ছিলো। এই ব্যাপারটা পরিষ্কার হয়ে যাবে যখন দেখবেন যে, গণভবনকে লুটের ব্যবস্থা করে দেয়া হলো। অর্থাৎ আন্দোলনের শেষটা হতে হবে গণভবন লুটের মাধ্যমে - এটা স্ক্রিপ্টে লেখাই ছিল; তাই সেটাই হয়েছে। শেখ হাসিনাকে সেইফ এক্সিট দেয়ার ব্যাপারটাও সম্ভবতঃ স্ক্রিপ্টে ছিল; তাই তার বিচার না করেই সেইফ এক্সিট দেয়া হয়েছে।

      তবে শুধুমাত্র সরকার পতনই কি এই পুরো খেলার লক্ষ্য ছিল কিনা, সেটা এখনও পরিষ্কার নয়। অন্ততঃ রাষ্ট্রযন্ত্রকে এইভাবে ধ্বংস করাটা কোন অবস্থাতেই শুধুমাত্র সরকারের পতনের অংশ বলা যাবে না। গুজব ছড়িয়ে পুরো নিরাপত্তা বাহিনীকে হত্যার দিকে ধাবিত করা এবং সারা দেশ থেকে নিরাপত্তা বাহিনীকে সরিয়ে দিয়ে লুটতরাজের রাজত্ব তৈরি করা; বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় অবকাঠামো এবং সরকারি অফিস জ্বালিয়ে দেয়া; নরসিংদি, শেরপুর ও সাতক্ষীরা কারাগার আক্রমণ করে কয়েদিদের বের করে নিয়ে আসা; পুলিশের থানায় হামলা করে অস্ত্র লুট; ফায়ার সার্ভিসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সার্ভিসের গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া; ফাইবার অপটিক কেবল কেটে ফেলা; বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানে হ্যাকিং করে তথ্য লোপাট; এবং সর্বোপরি হত্যাকান্ডের রাজত্ব - এগুলি একটা রাষ্ট্রকে ধ্বংস বা লম্বা সময়ের জন্যে পঙ্গু করে দিতে পারে।

      Delete
  3. স্যার আসসালামু আলাইকুম। অনেক ধন্যবাদ আপনার এই সমসাময়িক লেখাটির জন্য। আচ্ছা স্যার, এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে ভারতীয় ইন্টেলিজেন্সের অপারেশন ফেয়ারওয়েল সম্পর্কে একটু বিশদ বলা যাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. Please read "RAW: A History of India's Covert Operations" by Yatish Yadav, 2020

      Delete
  4. এই ব্লগের বাইরে একটা প্রশ্ন করতে ইচ্ছে হচ্ছে সেটা হল আফগানিস্তান কি এখন আদর্শিক রাষ্ট্র হতে পেরেছে আমেরিকা, পশ্চিমা ও রাশিয়াকে ডিফিট করার পর?

    ReplyDelete
    Replies
    1. তারা যোদ্ধা জাতি; তারা তিনবার সুপারপাওয়ার রাষ্ট্রকে যুদ্ধে হারিয়েছে। কিন্তু তারা রাজনীতি বোঝে না। যেকারণে তারা বিভিন্ন সময়ে বুদ্ধিবৃত্তিকভাবে শত্রুদের দ্বারা পরাজিত হয়েছে - অর্থাৎ না বুঝেই ঐসব রাষ্ট্রের লক্ষ্যকে বাস্তবায়িত করে ফেলেছে। ইসলামকে আদর্শ হিসেবে নিলে আফগানিস্তান প্রথমেই ব্রিটিশ এবং রুশদের তৈরি করা জাতিরাষ্ট্রের সীমানাকে পরিহার করতো; যা তারা করেনি। আফগানিস্তান কখনোই ঘোষণা করেনি যে, তারা আদর্শিক রাষ্ট্র তৈরি করেছে। তারা নিজেরাই বলেছে যে তারা একটা ইসলামিক ইমারাহ বা আমিরাত গঠন করেছে। অন্য কথায় বলতে গেলে, সীমিত পরিসরে একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে তারা শরীয়াহর কিছু আইনকে বাস্তবায়িত করেছে। বাকি অঞ্চলের মুসলিমদের দায়িত্ব তারা নেয়নি; অথবা দুনিয়াতে ইসলাম প্রচার করার দায়িত্বও তারা নেয়নি। এখানেই আদর্শিক রাষ্ট্রের সাথে আফগানিস্তানের পার্থক্য। আদর্শিক রাষ্ট্র তার আদর্শকে সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয় এবং সেটাকে সর্বশক্তি দিয়ে রক্ষা করে।

      Delete
  5. ইউনুস সরকারের ভিত্তি কি হবে?না কি
    সরকার তিন থেকে ছয় মাস থাকলে পরবর্তী বাস্তবতা কী হবে ,আবার তিন বছরের অধিক থাকলে এর মাঝে দেশের সার্বিক পরিস্থিতির উপর কি প্রভাব পরতে পারে ?
    কোন গনতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় থেকে যদি আগের সরকার গুলোর মতো দমন পীড়ন লুটতরাজ চালায় তাহলে ছাত্র সমাজ ও জনগণের ভূমিকা প্রতিবাদী রূপে দেখা যাবে কিনা? না কি দেশপ্রেমের চেতনা সাময়িক পরে এটা নিস্ক্রিয় হয়ে যাবে?

    ReplyDelete
    Replies
    1. দেখুন, এর আগেও লিখেছি যে এই ব্লগের মূল আলোচ্য বিষয় রাষ্ট্র; সরকার নয়। সরকার আসবে যাবে, কিন্তু রাষ্ট্র থাকবে। রাষ্ট্রের সমস্যা থাকলে কোন সরকারই সেই সমস্যা দূর করতে পারবে না। কাজেই বুঝতে হবে যে, সমস্যার মূল আসলে কোথায়। উদাহরণস্বরূপ, কোটা থাকা না থাকাটা তো সমস্যা নয়। মূল সমস্যা হলো কর্মসংস্থানের অভাব। আবার গার্মেন্টস কর্মীরা বেতন বৃদ্ধির জন্যে আন্দোলন করেছে। সমস্যা তো সেটা নয় যে বেতন কম; বরং মূল সমস্যা হলো দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি; যেটার কারণে বেতন বৃদ্ধি করেও লাভ হচ্ছে না। এই সমস্যাগুলি হলো রাষ্ট্রের সমস্যা। তাহলে প্রশ্ন করতে হবে যে, রাষ্ট্র কেন এই সমস্যাগুলি থেকে বের হতে পারে না।

      অনেক বেশি গভীরে যেতে হলে আলোচনা অনেক লম্বা করতে হবে। তবে ছোট পরিসরে বলতে গেলে, এটা আদর্শিক সমস্যা। বাংলাদেশ পরিচালিত হচ্ছে পশ্চিমা পুঁজিবাদী আদর্শ দিয়ে। পুঁজিবাদে ফ্রিডম অব পজেশন বা মালিকানার স্বাধীনতা থাকার কারণে ব্যক্তি যেকোন কিছুর মালিক হতে পারে; যেকারণে কিছু মানুষের হাতে সকল সম্পদ কুক্ষিগত হয়ে যায়। রাষ্ট্র এই পুঁজিপতিদেরকে সহায়তা করে যাতে করে তারা আরও বেশি সম্পদ তৈরি করতে পারে। একারণে দেখা যায় যে, শিল্পপতিরা কোটি টাকার গাড়িতে ঘোরে, কিন্তু শ্রমিকরা বেতন বৃদ্ধির জন্যে রাস্তায় নামে। কর্মসংস্থানের সমস্যাটাও পুঁজিবাদী ব্যবস্থার কারণে। রাষ্ট্র মানুষের কর্মসংস্থানের দায়িত্ব নেয় না; বরং সেটা সে ছেড়ে দেয় ব্যক্তির উপর। ব্যক্তি ইন্ডাস্ট্রি করবে এবং ব্যক্তি নিজের যোগ্যতা থাকলে চাকরি পাবে। এগুলি পুঁজিবাদের সমস্যা; রাষ্ট্র যদি পুঁজিবাদ দ্বারা শাসিত হয়, তাহলে পুঁজিবাদের সমস্যাগুলি অটোম্যাটিকালি তার ঘাড়ে এসে পড়বে। অর্থাৎ বাংলাদেশের মূল সমস্যাগুলি হলো আদর্শিক। আদর্শিক সমস্যার সমাধান আদর্শিকভাবেই হতে হবে। অন্য কোনভাবে সমাধান করতে গেলে থুথু লেপে রিপেয়ার করার মতো অবস্থা হবে।

      আর বর্তমানে বাংলাদেশে একটা ১০০% রাষ্ট্র নেই। ৫-৭ই অগাস্টের মাঝে এই রাষ্ট্রের কমপক্ষে ৫০% ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই রাষ্ট্র রিপেয়ার করতে অসম্ভব কষ্ট হবে। দেশের সবচাইতে বড় ডিসিপ্লিন্ড ফোর্স ছিল পুলিশ; প্রায় ২ লক্ষের মতো। এই ফোর্সটা পুরোপুরিভাবে ধ্বংস করে ফেলা হয়েছে। এই ফোর্সের ডিসিপ্লিন এবং চেইন অব কমান্ড পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে গেছে। ২০০৯ সালে বিডিআরকে ধ্বংস করা হয়েছিল চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে ফেলার মাধ্যমে; ২০২৪ সালে পুলিশ বাহিনী ধ্বংস করা হলো। এই রাষ্ট্রের এখন কোন ইন্টেলিজেন্স নাই। এই ধ্বংসপ্রাপ্ত ইন্সটিটিউট পুনর্নিমাণ করাটা খুব কম করে বলতে গেলে দুঃসাধ্য; অথবা অসম্ভব বা তার কাছাছি কিছু একটা! কাজেই সরকার নিয়ে কথা বলা এই সময়ে সময় নষ্ট করা। রাষ্ট্র নিয়ে চিন্তা করা উচিৎ। রাষ্ট্রের মূল সমস্যা নিয়ে কথা বলা উচিৎ। আদর্শ নিয়ে কথা বলা উচিৎ; যাতে রাষ্ট্রের সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়। বর্তমানের মতো একটা পঙ্গু পুঁজিবাদী রাষ্ট্র না আর না থাকা সমান।

      Delete
    2. পুলিশ বাহিনী ধ্বংস - প্লিজ ব্যাখ্যা করে বলবেন কিভাবে ধ্বংস হইল?

      অনেক পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করতে যেয়ে নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন। উনাদের ইমেজ প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। উনারা এখন কর্মবিরতি দিচ্ছেন নিজেদের জানের ভয়ে। কিন্তু এত বড় বাহিনী। এত অফিসার। এত নিয়ম কানুন।তাই বলে হুট করে ধ্বসে পড়বে একটা অভ্যুত্থানে মেনে নিতে পারছিনা।

      Delete
    3. আমি এটাই ভেবেছিলাম। কারণ বেশিরভাগ মানুষই এই ব্যাপারটা ধরতে পারছেন না। একটা ডিসিপ্লিন্ড ফোর্সের ডিসিপ্লিন এবং চেইন অব কমান্ড ভেঙ্গে গেলে সেটা আর ফোর্স থাকে না। একারণেই বিডিআর বিদ্রোহের পর সেটা পুরোপুরিভাবে ভেঙ্গে দিয়ে বিজিবি তৈরি করতে হয়েছিলো। পুলিশের ক্ষেত্রেও সেটাই হবে। বিজিবি তৈরি করতে কয়েক বছর লেগেছিল। সেটাও ছিল মাত্র ৫০ হাজার সদস্যের। আর পুলিশের সংখ্যা এর চার গুণ! শুধু তা-ই নয়, বিজিবির রেডিমেড অফিসার আসে সেনাবাহিনী থেকে। পুলিশের তো অফিসারও তৈরি করতে হবে। আর আরও বড় সমস্যা হলো, বিজিবি তৈরি করা হয়েছিল এমন সময়, যখন একটা কার্যক্ষম রাষ্ট্র ছিল। পুলিশের ক্ষেত্রে বাস্তবতা পাল্টে গিয়েছে। প্রকৃতপক্ষে রাষ্ট্রের কতটুকু ক্ষতি হয়েছে, তা মানুষ বুঝতে পারছে না। এটা কোন দুর্যোগের পর্যায়ে নেই; এটা হলো রাষ্ট্রের মহাদুর্যোগ! এটা সরকারের সমস্যা নয়, রাষ্ট্রের সমস্যা; মহা-সমস্যা!

      Delete
  6. এই আন্দোলন শেষে ভারত কি পেলো

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারতের বিরাট ক্ষতি ক্ষয়েছে; কারণ এখন ভারতের উত্তর-পূর্ব রাজ্যগুলি যেমন আলাদা হবার হুমকির মাঝে পড়ে গেলো, তেমনি কোলকাতা এবং ভারতের অন্যান্য স্থানে বাংলাদেশের মিরর ইমেজ হিসেবে জাতিগত দাঙ্গা হবার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ বাংলাদেশ বেশ কয়েক বছরের জন্যে একটা অস্থিতিশীল রাষ্ট্র হয়ে যাবার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। পাশের বাড়িতে আগুন লাগাটা যেকোন প্রতিবেশীর জন্যে মহাবিপদ। যাদের পাশের বাড়ি নয়, তারা মজা নেবে।

      আর অপরদিকে চীনের প্রভাবও মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এখানে। চীনের সকল বিনিয়োগ হুমকির মাঝে পড়ে গিয়েছে এবং চীনের সাথে বাংলাদেশের সামরিক সম্পর্কও সমস্যার মাঝে পড়ে যেতে পারে। কারণ চীন তার সামরিক প্রযুক্তির নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত হয়ে যাবে। অন্ততঃপক্ষে গুরুত্বপূর্ণ কোন প্রযুক্তি - যেমন, ক্ষেপণাস্ত্র, যুদ্ধবিমান, সাবমেরিন - এগুলির ব্যাপারে চীন যথেষ্টই সন্দিহান থাকবে।

      Delete
  7. ভারতকে ভেঙে আমেরিকার কি লাভ

    ReplyDelete
    Replies
    1. ভারতকে কেউই ভাংবে না। কিন্তু অখন্ডতার চাপের মাঝে পড়ে গেলে ভারতের ইচ্ছেমতো নীতিতে (যেমন রাশিয়ার সাথে সম্পর্ক) চলার ব্যাপারটা অনেকটা নিয়ন্ত্রিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র এই কাজটা নিজে হয়তোবা করবে না; অন্যকে দিয়ে করাবে। সঙ্গত কারণে এই স্থানে এই প্রশ্ন নিয়ে আর কথা বলতে চাচ্ছি না।

      Delete
  8. Your write up are so out of touch with reality ....
    India's foremost liberal intellectual Pratap Bhanu Mehta written following piece which is most fair assessment of the situation & also gave " what needs to be done "

    https://indianexpress.com/article/opinion/columns/bangladesh-protests-students-message-fighting-chance-9498611/

    ReplyDelete
    Replies
    1. We have seen "foreign prescriptions" for more than five decades!! And we have also seen what Western Liberal Order is able to achieve other than promoting LGBT rights in school textbooks, irresponsible behaviour aided by promotion of individualism, adultery accompanied by widespread abortion, massive moral degradation in the name of individual rights, hurting religious harmony in the name of freedom of speech, crimes accompanying live-together culture, etc. No more "prescriptions" please!! The state needs to be free of foreign influence.

      Delete
  9. একটা প্রশ্ন ছিলো পাকিস্তানের এই পরিস্থিতির জন্য কারা মূলত দায়ী? শরীফ বা ভূটো পরিবারের সীমাহীন দুর্নীতি, লুটপাট দেখেও এদের আর্মিরা কেন একশন নেয় না বা ইমরান খান কেন তার পদ থেকে বিতাড়িত হয়েছিলো কারণ ইমরান খান ত তথাকথিত ঐ সব পরিবারের মতো দেশকে পরিচালনা করেছিলো,তাহলে কি ডিসিশন নেওয়ার কারণে তার এই দুর্গতি ঘটলো?

    আর বাংলা স্প্রিংটা পাকিস্তানেও ছোয়া পাইছে আসলে বলতে চাচ্ছি সামনে বাংলাদেশ,ভারত,পাকিস্তান,মায়ানমার, শ্রীলংকা ও চীন কে সঙ্গে নিয়ে কি ভূ-রাজনীতি ঘটনাগুলো ঘটে যেতে পারে তার এফেক্ট সামনে বাংলাদেশ কি হজম করার ক্যাপাবিলিটি রাখে বা দক্ষিণ এশিয়াতে কি রূপ পরিবর্তন ঘটতে যাচ্ছে তা ব্যাখা করবেন??

    ReplyDelete
    Replies
    1. ব্যাপারটা দুর্নীতি বা লুটপাটের নয়; বরং কে কোন ঘরানার, সেটার উপরেই নির্ভর করবে কার পক্ষে কে থাকবে বা কার বিরুদ্ধে কে যাবে। কোনকিছুই দৈবভাবে হয় না। দুর্নীতি এবং লুটপাটের কথা বললে মধ্যপ্রাচ্যের সরকারগুলির উপরে কারুর পক্ষে যাওয়া কঠিন। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র এই সরকারগুলির খুব কাছের বন্ধু এবং ওয়াশিংটন তাদেরকে নিরাপত্তা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে সর্বদা। বিনিময়ে তারা ওয়াশিংটনের স্বার্থকে সমুন্নত রাখে। পাকিস্তানও এর ব্যাতিক্রম নয়।

      পাকিস্তান রাষ্ট্রে সামরিক বাহিনী শুধু 'মোস্ট ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর'ই নয়, তারা 'ওনলি ডিসাইসিভ ফ্যাক্টর'। একারণেই ইমরান খান এতো জনপ্রিয়তা সত্ত্বেও ক্ষমতা হারিয়েছেন এবং এরপর থেকে বারংবার সরকারের হীনমন্য নীতির শিকার হচ্ছেন। তারপরেও পাকিস্তানের পক্ষে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ যতটা শক্ত, তাতে পাকিস্তানে অন্য কোন উপায়ে কেউ ক্ষমতা নিতে পারবে না। ইমরান খান সরাসরি সামরিক বাহিনীর বিপক্ষে গিয়েছেন; যা তার রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের বারোটা বাজিয়েছে। অপরদিকে শরীফ ফ্যামিলি যুক্তরাষ্ট্রকে তোয়াজ করে বলেই ক্ষমতায় গিয়েছে এবং এখনও ক্ষমতায় রয়েছে; যদিও তাদের দুর্নীতির রেকর্ড অতুলনীয়। মোটকথা পাকিস্তানের বাস্তবতায় সেনাবাহিনীই সব; এবং যখন যুক্তরাষ্ট্র চাইছে শরীফ ফ্যামিলি ক্ষমতায় থাকুক, তখন সেটাই হচ্ছে।

      আর বাংলাদেশের উদাহরণকে পুঁজি করে যদি ইমরানের সমর্থকরা পাকিস্তানে কিছু করতে চায়, তাহলে তাদের শক্ত (বাইরের) ব্যাকআপ লাগবে। সেটা ছাড়া তারা অনেকেই রাস্তায় মারা পড়বে ঠিকই, কিন্তু সরকারে কোন পরিবর্তন আসবে না। আমেরিকানকে মডেলটাকে কাজে লাগাতে হলে আমেরিকান মডেলের শক্তিশালী পিলারগুলিতো লাগবে; যেটা ইমরানের দলের নেই। ইমরানের রাজনীতি ব্রিটিশ ঘরানার। আর এই মুহুর্তে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে সামরিক বাহিনীতে ব্রিটিশ ঘরানার প্রভাব খুবই কম; আশেপাশের দেশগুলিও এক্ষেত্রে কোন ব্যাকআপ ইমরানকে দিতে সক্ষম হবে না। বড়জোর বালুচিস্তান এবং সিন্ধ প্রদেশে ভারতীয় প্রভাবে কিছু অস্থিরতা হতে পারে; যা ইমরানকে পরোক্ষভাবে সহায়তা করতে আদতে এর প্রভাব কমই থাকবে।

      দক্ষিণ এশিয়ায় পরপর চারটা সরকার পরিবর্তনের ঘটনা দেখিয়ে দেয় যে, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে তাদের নীতিকে অনেকটাই পরিবর্তন করেছে। গত প্রায় এক দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্র ভারতকে এক টেবিলে এনে এই অঞ্চলে কাজ করেছে। এখন তারা একলা চলো নীতিতে এগুচ্ছে। ভারতের আঞ্চলিক স্বার্থের প্রাইয়রিটির সাথে যুক্তরাষ্ট্রের গ্লোবাল প্রাইয়রিটির দ্বন্দ্ব দৃশ্যমান। সরকার পরিবর্তনের এই কাজ যুক্তরাষ্ট্র ঠান্ডা যুদ্ধের সময় বহুবার করেছে। কিন্তু সেসময় যুক্তরাষ্ট্রের ভূরাজনৈতিক সক্ষমতা ছিল সর্বোচ্চ শিখরে; যা এখন নেই। কাজেই প্রশ্ন হলো একটা অঞ্চলে সকল সরকারকে পরিবর্তন করিয়ে যুক্তরাষ্ট্র যে অস্থির পরিস্থিতির অবতারণা করলো, সেটা সামাল দেয়ার সক্ষমতা যুক্তরাষ্ট্রের রয়েছে কি? নাকি পুরো অঞ্চলটাকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে অনিশ্চিত অস্থিরতাকেই যুক্তরাষ্ট্র তাদের স্বার্থের সাথে যায় বলে ধরে নিয়েছে?

      এই ব্লগের বহু লেখায় এবং আমার প্রকাশিত বইগুলিতে বারংবার উল্লেখিত হয়েছে যে, যুক্তরাষ্ট্র তথা পশ্চিমা বিশ্বের আদর্শিক দুর্বলতার ফলাফল সারা বিশ্বের উপর পড়ছে। দক্ষিণ এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের এহেন 'স্ট্রং-হ্যান্ড পলিসি' সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়।

      Delete
  10. ১) ইমরান খান কিভাবে ব্রিটিশপন্থী এটা বুঝিয়ে বলবেন? তা কি হতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু নীতির বিরুদ্ধে গিয়ে ওনার কাল হয়েছে যার জন্য সেনাবাহিনী উৎখাত করেছে যদিও দেশের সব আভ্যন্তরীণ বিষয়ে সেনাবাহিনীর সবসময় হস্তক্ষেপের বিষয়টা মোটেও ইমরান খানের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পাই নি। তাহলে কি বলা যায় ইমরান খানের পতন যুক্তরাষ্ট্রের মদদে সেনাবাহিনীর মাধ্যমে ঘটিয়েছে.আর সেনাবাহিনীরা দেশের সব বিষয়ে হস্তক্ষেপ করার এই দুঃসাহসিক ক্ষমতা কিভাবে পেলো এইটা একটু আলোকপাত করবেন??

    ২)আরেকটা বিষয় খুব গুরুত্বপূর্ণের সাথে বলা হচ্ছে যে বাংলাদেশ আগাম ভবিষ্যৎ ভারতের সাথে আমোদপ্রমোদ সম্পর্কের অবনতি ঘটার কথা বলা হচ্ছে যেমন সীমান্তে, তিস্তা, আমদানি-রপ্তানি সহ আরো কিছু সংক্রান্ত নিয়ে কঠোর জবাব দিবে।এগুলা কতটুকুই বা বাসতবায়নের পথ সহজ করিয়ে দিবে বলে আপনার কাছে মনে হচ্ছে?
    আবার দেখতে পাচ্ছি পদ্মাসেতু ও মাতাবাড়ি সমুদ্রবন্দর করা হয়েছে ভারতকে ট্রানজিট দেওয়া জন্য, মংলা বন্দর দিয়ে দেওয়া হলো, বিদুৎ এর পাওয়ার প্লান্ট আদানি ইন্ডাস্ট্রিকে দেওয়া হলো বা রেলের টানজিট বা করিডোর ওপেন করে দেওয়া ইত্যাদি এই চুক্তিগুলা নাকোচ করার সক্ষমতা কি বাংলাদেশ ক্যাপাবিলিটি রাখে ?? নাকি ধরে নেব জাস্ট ঠান্ডা যুদ্ধ চলবে যেই সরকার আসুক না কেন,এই বিষয়ে বিন্দুমাএ আগাবে না??

    ৩)আবার চীন যেহেতু বাংলাদেশের সব প্রকল্পে বিনিয়োগ করেছে,এখন এদের সাথে বাণিজ্যিক ও আর্থিক সম্পর্ক কি এই সরকার বা ভবিষ্যৎ যে সরকারেই আসুক না কেন অবনতির দিকে যাবে আর যদি যায় তাহলে বাংলাদেশের জন্য একটা বিরাট বড় ধাক্কা,এই ধাক্কা কি হজম করতে পারবে?? আবার আমেরিকাও চাচ্ছে চীনের সাথে আগের মতো দহরম মহরম সম্পর্ক যেন না থাকে তাহলে কি বলা যায় আমেরিকাই এখন সবচেয়ে বড় তাবেদার, এখন সে সবকিছুতে নাক গলিয়ে তাদের স্বার্থ হাসিল করবে, আবার যেহেতু IMF থেকে লোনও নেওয়া হয়েছে, এখন ত অর্থনীতি তাদের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী চলবে??

    ৪) আকসা ও জিসোমিয়া চুক্তি অনুযায়ী বাংলাদেশের সার্বভৌমতকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলে দিলো,ইন্দো প্যাসিফিক আউটলোক ঘোষণা করে চীনের বিরুদ্ধে গিয়ে কোয়াডে যোগ দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের দিকে হেলে পড়ে যাওয়ার ব্যাপারটা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশ কি চোখে দেখবে?

    ৫) রাশিয়ার বিনিয়োগে রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎ প্রকল্পের কাজটা কি সম্পূর্ণ হবে যেহেতু বাংলাদেশ রাশিয়ার কাছ থেকে সাহায্য চাওয়াটা আমেরিকা মোটেও পছন্দ করে নি?

    ৬) মায়ানমার নিয়ে বাংলাদেশের আগাম পরিকল্পনা কি হতে পারে যেহেতু আমেরিকান পন্থী আরাকান আর্মি লজিস্টিকাল সাপোর্ট পেতে চাইলে বাংলাদেশের দিকেই তাকিয়ে থাকবে,তারা যে সময় চায় ওই সময় সীমান্ত দিয়ে ঢুকে পড়ে,বাংলাদেশ এটাকে কিভাবে চ্যালেঞ্জ করবে যেভাবে বিজিবি কে লুঙ্গি পড়িয়ে দিয়ে রেখেছিলো মায়ানমার, এর থেকে লজ্জাজনক আর কি হতে পারে, এই সরকার বা আগাম সরকার এই বিষয়টাকে কিভাবে ট্যাকেল দিবে যেহেতু মায়ানমারের সক্ষমতা বাংলাদেশ থেকে অনেকদূর এগিয়ে গেছে??

    ৭) পার্বত্য চট্টগ্রামকে নিয়েও কিছু বিদ্রোহী গোষ্ঠী জেগে উঠেছে এবং এদেরকে লজিস্টিকাল হেল্প আসতেছে বাহিরের থেকে,যদি ওই এলাকার গোষ্ঠীরা স্বাধীনতা চায় তাহলে বাংলাদেশ কিভাবে চ্যালেঞ্জ করবে??

    দয়া করে এই ৭ টি প্রশ্নের
    উওর দিয়ে যাবেন

    ReplyDelete
    Replies
    1. This requires a long discussion, which surpasses the limits of this blog post. Please remove this comment from this post and save it for the upcoming post, where we can delve into more detail IA.

      Delete