Friday 31 May 2024

পদ্মা সেতু এবং উত্তরবঙ্গের নিরাপত্তার প্রতি হুমকি

৩১শে মে ২০২৪

বিআইডব্লিউটিসি-র ফেরি দিয়ে নদী পার হচ্ছে সামরিক যানবাহন। শান্তিকালীন সময়েই যদি এই ফেরিগুলির ব্যবহার ফুরিয়ে যায়, তাহলে আপদকালীন সময়ে এগুলিকে কি আর পাওয়া যাবে? বেশিরভাগ ফেরির বয়সই ৪০ বছরের বেশি। পুরোনো ফেরিগুলি যদি কেটে ফেলা হয়; তাহলে তাদের স্থলে নতুন ফেরি কি আদৌ তৈরি হবে? অনেকেই তখন যুক্তি তুলে ধরবেন – এতগুলি সেতু তৈরি করা হয়েছে; ফেরি তৈরির প্রয়োজন কি রয়েছে?


পদ্মা সেতু বনাম যাত্রীবাহী নৌযান

পদ্মা সেতু তৈরি করতে পারাটা বাংলাদেশের রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার একটা গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় ছিল বটে। তবে সেতু চালু করার সাথেসাথে নৌপরিবহণ (প্রকৃতপক্ষে নৌপথে যাত্রী ও যানবাহণ পরিবহণ) ব্যাপকহারে কমে যাওয়াটা রাষ্ট্রীয় সক্ষমতার উপর একটা বড় আঘাত হিসেবে এসেছে। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌপথের মাঝে সবচাইতে বড় জাহাজগুলি চলে ঢাকা-বরিশাল রুটে। পদ্মা সেতু চালুর ভার মাথায় নিয়েই ২০২২ সালের নভেম্বরে সার্ভিসে আসে 'এমভি সুন্দরবন-১৬'। ১১০মিঃ লম্বা এবং ১৮মিঃ প্রস্থের এই জাহাজটাকে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রুটে চলাচলরত সবচাইতে বড় জাহাজ বলে আখ্যা দেয়া হয়। অফিশিয়ালি জাহাজটা ১,৩৫০ জন যাত্রী বহণ করতে পারে বলে বলা হয়েছে। এর আগে ২০১৬ সালে সার্ভিসে আসে 'এমভি সুন্দরবন-১০' জাহাজ। ১০১মিঃ লম্বা ও ১৬মিঃ প্রস্থের এই জাহাজের যাত্রী ধারণক্ষমতা প্রায় ১,৪০০। ২০১৮ সালে সার্ভিসে আসে 'এমভি কীর্তনখোলা-১০'। ৯৬মিঃ লম্বা এবং ১৮মিঃ প্রস্থের এই জাহাজের ধারণক্ষমতা প্রায় ২,০০০। ২০১৭ সালে সার্ভিসে আসে 'এমভি সুন্দরবন-১১'। 'এমভি সুন্দরবন-৭' জাহাজকে রূপান্তরিত করে তৈরি করা এই জাহাজ ৯০মিঃ লম্বা এবং ১৩মিঃ প্রস্থের। প্রায় ১,২০০ যাত্রী পরিবহণে সক্ষম এই জাহাজ। ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী রুটে চলাচল শুরু করে 'এমভি সুন্দরবন-১৪'। ৭৩মিঃ লম্বা ও ১১মিঃ প্রস্থের এই জাহাজের অনুমোদিত যাত্রী ধারণক্ষমতা ৭৬০জন।

এই জাহাজগুলির সমসাময়িক আরেকটা জাহাজ ছিল 'এমভি কীর্তনখোলা-২'; ২০১২ সালে যা সার্ভিসে আসে। ৯৩মিঃ লম্বা এবং ১৭মিঃ প্রস্থের এই জাহাজের যাত্রী ধারণক্ষমতা ছিল প্রায় ২,০০০। এই জাহাজটা ২০২৪ সালের শুরুতে কেটে ফেলা (স্ক্র্যাপ) হয়। ২০২২ থেকে ২০২৪এর মাঝে বেশকিছু জাহাজ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত হয়। যদিও জাহাজের মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাবার কারণে প্রতি বছরই অনেক জাহাজ কেটে ফেলা হয়, লঞ্চ মালিক সমিতির হিসেবে, মেয়াদ থাকার পরেও বেশকিছু জাহাজ কেটে ফেলার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। পদ্মা সেতু চালুর পর থেকে প্রায় ৩ ঘন্টায় যেখানে বরিশাল পৌঁছানো যাচ্ছে, সেখানে নৌপথে বরিশাল যেতে লাগে প্রায় ৫ থেকে ৭ ঘন্টা। সময় বাঁচাতে অনেক মানুষই সড়কপথে রওয়ানা হয়েছে। এমনকি ঈদের ছুটিতে অনেকেই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে মোটরসাইকেলে করে দেশের বাড়ি রওয়ানা হয়েছে। এর পিছনে জাহাজ মালিকদের স্বেচ্ছাচারিতাও কম ছিলনা। ঈদের ছুটিতে নৌপথে যাতায়াত খুবই কঠিন হয়ে যেতো অতিরিক্ত এবং অযাচিত ভাড়া আদায়ের কারণে। অবশ্য এই মালিকদেরকেই বা কিভাবে দোষ দেয়া যায়? পুঁজিবাদী সমাজে জীবনের লক্ষ্যই যেখানে অর্থ উপার্জন করা, সেখানে জাহাজ মালিকদেরকে কেন আলাদা করে দোষারোপ করা হবে?

নদীকেন্দ্রিক সামরিক পরিবহণ – কিছু উদাহরণ

আপদকালীন সময়ে এই জাহাজগুলির জরুরি ব্যবহার রয়েছে বিধায় এগুলির শান্তিকালীন সময়ে সার্ভিসে থাকাটা গুরুত্বপূর্ণ। পৃথিবীর অনেক রাষ্ট্রই আলাদাভাবে সামরিক পরিবহণ জাহাজ সার্ভিসে রাখে। তারা বেসামরিক সার্ভিস থেকে জাহাজগুলি কিনে নিয়ে সামরিক সার্ভিসে নিয়োজিত করে। এর মাঝে কিছু জাহাজ মালামাল বহণ করে; আর কিছু বহণ করে সৈন্য। মিয়ানমারের নৌবাহিনীর কমপক্ষে ৮টা সৈন্য পরিবহণ জাহাজ রয়েছে। এছাড়াও তাদের রয়েছে ৩০টারও বেশি ল্যান্ডিং ক্রাফট এবং আরও ৩টা কার্গো জাহাজ এবং ২টা তেল পরিবহণ করার ট্যাঙ্কার জাহাজ। এই জাহাজগুলির মাঝে রাজা হলো ল্যান্ডিং প্ল্যাটফর্ড ডক বা এলপিডি 'মোয়াত্তামা'; যা ১২৫মিঃ লম্বা, ১২,৫০০টন ওজনের এবং ৫২০জন সেনার সাথে আরও ২৫টা ট্যাংক বহণে সক্ষম। মিয়ানমার নৌবাহিনীর ২টা হাসপাতাল জাহাজও রয়েছে। মিয়ানমারে প্রচুর নদী এবং বিশাল সমুদ্রতটের নিরাপত্তায় তারা এই জাহাজগুলিকে সামরিক সার্ভিসে রেখেছে। মিয়ানমারের মতো ব্রাজিলেও অনেক বড় বড় নদী রয়েছে। ব্রাজিলের নৌবাহিনীতে নদীতে সার্ভিস দেয়ার জন্যে কমপক্ষে ১১টা প্যাট্রোল বোট, ৩টা সৈন্য বহণকারী জাহাজ, ১টা তেলবাহী জাহাজ, ৩টা হাসতাপাল জাহাজ এবং এছাড়াও আরও বেশকিছু টাগবোট ও অন্যান্য জাহাজ রয়েছে। তবে সবচাইতে অদ্ভুত জাহাজ হলো ৮৬ বছরের পুরোনো মনিটর জাহাজ 'পারনাইবা'। ৫৫মিঃ লম্বা এবং ৭২০টনের এই জাহাজটা বিশ্বের যেকোন দেশে নদীতে অপারেশনে থাকা সবচাইতে শক্তিশালী জাহাজ। এতে রয়েছে একটা ৭৬মিঃমিঃ কামান, ২টা ৪০মিঃমিঃ কামান, ৬টা ২০মিঃমিঃ কামান, ২টা ৮১মিঃমিঃ মর্টার এবং হেলিকপ্টার ল্যান্ডিংএর সুবিধা। একসময় ব্রাজিলের নৌবাহিনীতে নদীর জাহাজ অনেক বেশি ছিল; সাম্প্রতিক সময়ে দক্ষিণ আমেরিকার ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের ফলে নদীতে অপারেশনের জাহাজ কমিয়ে ফেলা হয়েছে। ব্রাজিলের প্রতিবেশী কলম্বিয়ার নৌবাহিনীতে রয়েছে নদীতে সার্ভিসের জন্যে বেশকিছু জাহাজ। একসময় গৃহযুদ্ধ সামাল দিতে তাদের নৌবাহিনীতে রাখা হয়েছে ১৮টা নদীতে যুদ্ধ করা কম্ব্যাট জাহাজ (যেগুলি সেনাও বহণ করে), ৩০টার মতো ছোট প্যাট্রোল বোট, এবং বহু ধরণের সাপোর্ট ভেসেল। এগুলির মাঝে ৮টা জাহাজ সত্যিই আলাদা ছিল। ৩৭মিঃ থেকে ৪০মিঃ লম্বা এই বর্মাবৃত জাহাজগুলির প্রথম ৩টা ৮টা করে ১২ দশমিক ৭মিঃমিঃএর মেশিন গান এবং ৮২ জন করে সেনা বহণ করতে পারে; আর পরের ৫টা জাহাজ ৭টা করে মেশিন গান, ১টা করে গ্রেনেড লঞ্চার এবং সাথে ৩৯ জন সেনা বহণে সক্ষম।

ব্রাজিলের নৌবাহিনীর নদীর হাসপাতাল জাহাজ 'ডক্টর মনটেনেগ্রো'। ব্রাজিলের নদীগুলি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি থেকে বহুদূরে। একারণে তাদের জন্যে বাণিজ্যিকভাবে চালু থাকা জাহাজগুলিকে সেই এলাকাগুলিতে নিয়ে কাজে লাগানোটা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তাই জাহাজগুলিকে সামরিক বাহিনীর অধীনেই সার্ভিসে রাখতে হয়েছে; যা কিনা শান্তিকালীন সময়ের জন্যে বেশ ব্যয়বহুল। ব্রাজিলের নদীভিত্তিক বাহিনী তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে করে তা কেন্দ্রের সরাসরি সমর্থন ছাড়াই লম্বা সময় যুদ্ধ করতে পারে।

 
একেকটা দেশকে একেক ধরণের সামরিক হুমকি মোকাবিলা করতে হয়েছে। তাই এই দেশগুলি নিজেদের অভ্যন্তরীণ নদীপথের নিরাপত্তাকে নিয়ে সেভাবেই চিন্তা করেছে। ব্রাজিলের নদীগুলি মূল রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক কেন্দ্রগুলি থেকে অনেক দূরে এবং আশেপাশের দেশগুলির (ভেনিজুয়েলা, কলম্বিয়া, পেরু, বলিভিয়া, প্যারাগুয়ে, আর্জেন্টিনা) সাথে সীমান্ত নির্ধারক। কিছু ক্ষেত্রে এই নদীগুলিতে জাহাজ পাঠাতে গেলে পাশের দেশের অনুমতি নিতে হয়। আমাজন, পারানা, প্যারাগুয়ে, রিও নেগ্রো এবং অন্যান্য নদীগুলির দূরবর্তী অঞ্চলগুলিতে নিজেদের সার্বভৌমত্ব ধরে রাখতে ব্রাজিল নদীকেন্দ্রিক বিশাল বাহিনী ধরে রেখেছে। একারণে ব্রাজিলের নদীভিত্তিক বাহিনী তৈরি করা হয়েছে এমনভাবে, যাতে করে তা কেন্দ্রের সরাসরি সমর্থন ছাড়াই লম্বা সময় যুদ্ধ করতে পারে। কলম্বিয়ার ব্যাপারটা আবার আলাদা। তারা তাদের দেশের অভ্যন্তরে গৃহযুদ্ধে নদীকেন্দ্রিক অঞ্চলগুলির নিয়ন্ত্রণ নিতে বর্মাবৃত প্যাট্রোল বোট এবং সৈন্য পরিবহণ জাহাজ তৈরি করেছে। মিয়ানমারের ব্যাপারটা আবার এদের দুইজন থেকে আলাদা। মিয়ানমারের দূরবর্তী উপকূলের অঞ্চলগুলিতে (মূলতঃ রাখাইন প্রদেশ) বিচ্ছিন্নতাবাদীদের হাত থেকে রাষ্ট্রকে বাঁচাতে তারা কার্গো এবং সেনা পরিবহণের জাহাজগুলিকে ব্যবহার করেছে। এক্ষেত্রে এই জাহাজগুলিকে উপকূলীয় অঞ্চল এবং নদী - উভয়ই পার হতে হয়েছে; ব্রাজিল এবং কলম্বিয়া থেকে যা ভিন্ন প্রকারের চ্যালেঞ্জ। তবে মিয়ানমার এবং ব্রাজিল, উভয়কেই আবার একটা চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হয়েছে - তাদের নদী বা উপকূলের অঞ্চলগুলি দেশের গুরুত্বপূর্ণ এলাকাগুলি থেকে বহুদূরে। একারণে তাদের জন্যে বাণিজ্যিকভাবে চালু থাকা জাহাজগুলিকে সেই এলাকাগুলিতে নিয়ে কাজে লাগানোটা ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। তাই জাহাজগুলিকে সামরিক বাহিনীর অধীনেই সার্ভিসে রাখতে হয়েছে; যা কিনা শান্তিকালীন সময়ের জন্যে বেশ ব্যয়বহুল।

বাংলাদেশের উত্তরবঙ্গ – নাব্যতার বাস্তবতা

বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে সেনা পরিবহণের জন্যে আলাদা কোন জাহাজ নেই। তবে সরকারি এবং বেসরকারি পরিবহণ জাহাজগুলিকে দরকারে কাজে লাগানো হবে। এই দরকারটা হবে মূলতঃ যমুনা এবং পদ্মা নদী দ্বারা বিভাজিত স্থলভাগগুলিকে জোড়া দেয়ার কাজে। শুধুমাত্র বৃষ্টির সময় ছাড়া এই নদীগুলিতে নাব্যতা জঘন্য খারাপ হলেও এটাই বাংলাদেশের বাস্তবতা। আর জাতীয় নিরাপত্তার জন্যে এই নাব্যতাহীন নৌপথগুলির উপরেই নির্ভর করতে হবে। কেউ প্রশ্ন করতে পারেন যে, যমুনা সেতু, পদ্মা সেতু, লালন শাহ সেতু - এগুলির ভীড়ে এখনও জাহাজে ভ্রমণ নিয়ে কথা বলাটা প্রস্তর যুগের চিন্তা হয়ে গেলো কিনা। এর উত্তরে বলা যায় যে, ব্যালিস্টিক মিসাইল, ক্রুজ মিসাইল, গাইডেড বম্বএর যুগে দুই-তিনটা সেতুর উপর নির্ভর করে থাকাটা কি বোকার স্বর্গে বাস করা নয়? একটু চিন্তা করে দেখুন তো, যদি যমুনা নদীর উপর সেতু ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে যায়, তাহলে শীতকালে, যখন যমুনা নদীতে একটা নৌকাও চালানো যায় না এবং উত্তরবঙ্গের মাটিতে সামরিক অপারেশনের জন্য সারা বছরের মাঝে সবচাইতে ভালো সময় উপস্থিত হয়, তখন দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার্থে উত্তরবঙ্গে থাকা সেনারা দেশের বাকি অঞ্চল থেকে রসদ পাবেন কিভাবে? শুধুমাত্র বাংলাদেশ বিমান বাহিনীর 'সি-১৩০' বিমান এবং 'এমআই-১৭১' হেলিকপ্টারের মাধ্যমে? এই বিমানগুলি কত হাজার সেনার রসদের সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারবে?
 

পাবনার নগরবাড়িতে সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ বড়সড় একটা নদীবন্দর তৈরি করছে। রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং যমুনা রেলসেতুর সকল ভারি যন্ত্রপাতি মংলা বন্দর থেকে নদীপথে পরিবহণ করা হয়েছে। এটা সম্ভব করতে জায়গামতো ড্রেজিংও করা হয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের নৌরুটগুলিকে সারাবছর চালু রাখার কোন সত্যিকারের প্রচেষ্টা আজও চোখে পড়েনি; যা উত্তরবঙ্গের, তথা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। কাজেই চিলমারি থেকে শুরু করে পাবনার খয়েরচর পর্যন্ত সারা বছরব্যাপী নাব্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌরুটের জাহাজগুলিকে রক্ষা করাটা এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ।


রাষ্ট্র চেষ্টা করছে উত্তরবঙ্গকে দেশের বাকি অংশের সাথে নৌপথে যুক্ত করতে। বর্তমানে মালামাল সরবরাহের জন্যে সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বন্দর হলো সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি। এখানে চট্টগ্রাম, মংলা এবং পায়রা বন্দর থেকে আমদানি করা জ্বালানি তেল, রাসায়নিক সার, কয়লা এবং কিছু কন্সট্রাকশন ম্যাটেরিয়াল নামানো হয়। শীতকালে এই পণ্যগুলির চাহিদা বহুগুণে বেড়ে গেলেও এই সেসময় নাব্যতা ইস্যুতে মারাত্মক সমস্যা তৈরি হয়। তখন আরিচার কাছাকাছি স্থানে পদ্মা-যমুনা নদীর মিলনস্থলে অনেক জাহাজ থেকেই মালামাল নামিয়ে দেয়া হয় ছোট বোটে। এই বোটগুলি হয় বাঘাবাড়ি অথবা পাবনা জেলার নগরবাড়ি অথবা কাজিরহাটে মালামাল নামিয়ে দেয়। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহণ দেখাশোনা করার সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ নগরবাড়িতে একটা বড় নদীবন্দরের কাজে হাত দিয়েছে। আবার কাজিরহাটকেও ফেরির মাধ্যমে আরিচার সাথে সংযুক্ত করেছে। নাব্যতার ইস্যুতে এই ফেরি পরিচালনা পথও মারাত্মক সমস্যায় পতিত হচ্ছে নিয়মিত। ড্রেজিং কাজ শেষ হচ্ছে না। একারণে কাজিরহাটের আরেকটা বিকল্প ঘাট করার পরিকল্পনা করছে রাষ্ট্র। তারা পাবনার একেবারে দক্ষিণ-পূর্ব কোণে রাখালগাছি পর্যন্ত একটা রাস্তা তৈরি করছে; যাতে করে এই রাস্তাকে একেবারে যমুনার পাড়ে খয়েরচরে নিয়ে গিয়ে সেখানে একটা ফেরিঘাট করা যায়। এতে করে আরিচা থেকে মাত্র আধা ঘন্টায় ফেরিতে যমুনা নদী পার হওয়া যাবে। এছাড়াও পাবনার দক্ষিণে নাজিরগঞ্জে আরেকটা ফেরিঘাট তৈরি করা হয়েছে রাজবাড়ী জেলার ধাওয়াপাড়া-জৌকুড়া-এর সাথে সংযুক্ত করার জন্যে। এখানেও নাব্যতা মারাত্মক একটা ইস্যু। বাঘাবাড়ি, নগরবাড়ি, কাজিরহাট, খয়েরচর, এবং নাজিরগঞ্জ – এই সবগুলিই উত্তরবঙ্গকে নৌপথে যুক্ত করার রাষ্ট্রীয় প্রচেষ্টার অংশ; আর এগুলি সবগুলিই যমুনা সেতুর দক্ষিণে।

যমুনা সেতুর উত্তরে নাব্যতা আরও ভয়াবহ। ১) ২০২১ সালের অগাস্টে বগুড়ার সারিয়াকান্দি থেকে জামালপুরের মাদারগঞ্জের জামথল পর্যন্ত লঞ্চ সার্ভিস চালু করে সরকারি কোম্পানি বিআইডব্লিউটিসি। এই রুট চালু করতে সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ ড্রেজিং চালালেও তারা শেষ পর্যন্ত এই সার্ভিসটাকে বছরের কয়েক মাসের জন্যে ছেড়ে দেয়। অর্থাৎ যখন যথেষ্ট নাব্যতা থাকবে, তখন নৌযান চলবে; বাকি সময় চলবে না। ২) এরও উত্তরে গাইবান্ধার বালাসি ঘাটের সাথে যুক্ত করা হয়েছে জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জের বাহাদুরাবাদ ঘাটকে। নাব্যতার মারাত্মক ইস্যুর মাঝেও ব্রিটিশ আমল থেকে এখানে রেল ফেরি চালু ছিল ২০০১ সাল পর্যন্ত। ২০০৫ সালে যমুনা সেতুতে রেললাইন বসানো শেষ হলে এই রেল ফেরি নতুন করে চালু হবার সম্ভাবনাটুকুও শেষ হয়ে যায়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে সরকারি সংস্থা বিআইডব্লিউটিএ বিশাল অংকের অর্থ ব্যয় করে বালাসি এবং বাহাদুরাবাদে নৌ-টার্মিনাল তৈরি করে। ২০২২ সালের এপ্রিল মাসে এই রুটে নতুন করে নৌযান চলাচল শুরু করা হয়। কিন্তু কিছুদিনের মাঝেই বোঝা যায় যে, এই রুটটাও নাব্যতা থাকলে সরকার তা ব্যবহার করবে; অন্য সময় ব্যবহার করবে না। তবে আশার কথা হলো, পানি কমলেও এই রুট ব্যবহৃত হচ্ছে। মানুষ পারাপারে ছোট মোটর নৌকা এবং স্পীডবোট ব্যবহৃত হচ্ছে; আর মালামাল বহণে বড় কার্গো বোট ব্যবহৃত হচ্ছে। বিআইডব্লিউটিএ-এর ড্রেজারগুলি এখানে ঘাঁটি গেড়েছে; যদিও তাদের সাফল্য নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। ৩) বালাসিরও উত্তরে রয়েছে কুড়িগ্রামের পুরোনো বিখ্যাত নদীবন্দর চিলমারি। বর্ষাকালে এখানে পানি থাকে; কিন্তু শুষ্ক মৌসুমে যেকোন নৌযানের জন্যেই এই বন্দর ব্যবহার খুবই কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে প্রায় পাঁচ দশক পর এই নদীবন্দরের সীমিত কর্মকান্ড শুরু হয়। আর ২০২৩এর অক্টোবরে এই বন্দরের রমনায় একটা ফেরিঘাট চালু করা হয়; যা যমুনার পূর্ব তীরে রৌমারির সাথে সংযুক্ত হয়। কিছুদিন সেখানে সরকারি কোম্পানি বিআইডব্লিউটিসি-এর ফেরিও চলেছে। তবে সকলেই বুঝে গেছে যে, সেটাও নাব্যতাকে জয় করে নয়। ২০১৬ সালে নেওয়া চিলমারী নৌবন্দর প্রকল্প ২০২৪ সালেও জমি অধিগ্রহণের মাঝে আটকে রয়েছে।

সরকারি নৌযানের দৈন্যতা

সরকারি কোম্পানি বিআইডব্লিউটিসি-র অধীনে অভ্যন্তরীণ রুটের বেশকিছু যাত্রীবাহী জাহাজ রয়েছে, যেগুলি প্রয়োজনের সময়ে সামরিক কাজে ব্যবহার করা যাবে। এর মাঝে রয়েছে ২০১৪-১৫এর দিকে তৈরি করা অত্যাধুনিক জাহাজ 'মধুমতি' এবং 'বাঙ্গালী'। এই জাহাজগুলি প্রায় ৭৬মিঃ লম্বা, সাড়ে ১২মিঃ প্রস্থের এবং ১,৭৩৪টন ওজনের। এই জাহাজগুলিতে ৭৫০ জনের মতো যাত্রী বহণ করা যায়। নতুন এই দু'টা জাহাজ ছাড়াও বিআইডব্লিউটিসি-র অধীনে রয়েছে অতি পুরাতন (তবে এখনও কর্মক্ষম) কয়েকটা প্যাডেল স্টিমার। এই জাহাজগুলি বহুকাল ধরে ঢাকা থেকে বরিশাল হয়ে মোরেলগঞ্জ পর্যন্ত রকেট-স্টীমার হিসেবে সার্ভিস দিয়েছে। এছাড়াও ১৯৮২ সালে রেলওয়ের জন্যে তৈরি 'এমভি সোনারগাঁও'কে খুলনা শিপইয়ার্ডে ব্যাপকভাবে পরিবর্তন করে ২০০৯ সালে রকেট-স্টীমার সার্ভিসে যুক্ত করা হয়। ৭০মিঃ লম্বা এই জাহাজটার ধারণক্ষমতা ৮০০। ২০১২ সাল পর্যন্ত কাগজে-কলমে হলেও ৬টা জাহাজ মিলে ৪,১২২ জন যাত্রী বহণ করতে পারতো। 'এমভি শ্যালা' বহণ করতে পারতো ৩৯৫ জন। ১৯২৮ সালে কোলকাতায় নির্মিত 'এমভি অসট্রিচ' এবং 'এমভি মাসউদ' এই জাহাজগুলির মাঝে সবচাইতে বড়; একেকটার ধারণক্ষমতা ৯৬০ জন। 'এমভি অসট্রিচ', ‘এমভি মাসউদ', ‘এমভি লেপচা' এবং 'এমভি টার্ন' একত্রে বহণ করতে পারতো ২,৮১০ জন যাত্রী। এই জাহাজগুলিকে ১৯৭৮, ১৯৮২, ১৯৯৫ এবং ২০০২ সালে ডিজেল ইঞ্জিন সংযোজনসহ ব্যাপকভাবে আধুনিকায়ন করা হয়। আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো বহু পুরোনো হলেও এই জাহাজগুলির জ্বালানি খরচ ঘন্টায় মাত্র ৮৫ থেকে ৯৫ লিটার; যেখানে নতুন তৈরি করা অত্যাধুনিক 'মধুমতি' এবং 'বাঙ্গালী' ঘন্টায় প্রায় ২০০ লিটার জ্বালানি খরচ করে। এই জাহাজদু'টার মতোই আরও দু'টা জাহাজ তৈরি হচ্ছিলো ওয়েস্টার্ন মেরিন শিপইয়ার্ডে। কোম্পানিটা দেউলিয়া হয়ে যাওয়ায় দু'টা জাহাজই অর্ধ-সমাপ্ত হয়ে পড়ে আছে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর জন্যে নির্মীয়মান দু'টা ৬৪মিঃ লম্বা ট্যাংক ল্যান্ডিং ক্রাফটও (একেকটা ৮টা ট্যাংক এবং ২৪০ জন সেনা বহণে সক্ষম) সেখানে অর্ধ-সমাপ্ত আকারে আটকে গেছে। অর্থাৎ এক শিপইয়ার্ডেই রাষ্ট্রের চারটা গুরুত্বপূর্ণ পরিবহণ জাহাজ অসমাপ্ত আকারে আটকে গেছে।

পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাত্রী একেবারেই কমে যায়। লোকসান সামলাতে না পেরে ২০২২এর ১৭ই সেপ্টেম্বর বিআইডব্লিউটিসি তাদের ১৫০ বছরের রকেট-স্টীমার সার্ভিসের ইতি টানে। শেষ ট্রিপে ঢাকা থেকে বরিশাল গিয়েছিল ১০৪ জন; আর বরিশাল থেকে ঢাকা এসেছিল মাত্র ২৮ জন। বিআইডব্লিউটিসি এই জাহাজগুলিকে নিয়ে কি করবে, সেটা বুঝতে পারছে না। বেসরকারি মালিকরা তাদের জাহাজ কেটে ফেললেও সরকারি কোম্পানি হিসেবে বিআইডব্লিউটিসি এটা করতে পারবে না। বিআইডব্লিউটিসি-র বেশিরভাগ জাহাজই এখন নামমাত্র মূল্যে বেসরকারি খাতে লীজ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এগুলি এখন হয় বিভিন্ন রুটে (যেমন সেন্ট মার্টিনস) পর্যটক বহণ করছে; নতুবা ভাসমান রেস্তোঁরা হিসেবে নাম নিয়েছে।

আবার, পদ্মা সেতু চালু হবার পরই মিডিয়াতে আসা শুরু করে যে, বিআইডব্লিউটিসি সড়কপথে চলা গাড়ি পদ্মা নদী পার করেই তাদের বেশিরভাগ আয় করতো। পদ্মা সেতু চালুর সাথেসাথেই কোম্পানির ফেরিগুলির ব্যবহার ব্যাপকভাবে কমে যায় এবং আয়ও একেবারেই পড়ে যায়। আশ্চর্য্য ব্যাপার হলো বাংলাদেশের ম্যারিটাইম সেক্টরের সরকারি কোম্পানি সড়কপথের উপরে নির্ভরশীল! সড়কপথে গাড়ি বাড়লে তাদের আয় বাড়ে; আবার নদীর উপরে সেতু তৈরি হয়ে গেলে তাদের আয় পড়ে যায়! ৪০ থেকে ৫০টার মতো ফেরি রয়েছে এই কোম্পানির; যেগুলি তাদের আয়ের মূল উৎস। তবে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হলো, এই ফেরিগুলি সামরিক গাড়ি পরিবহণের একটা বড় মাধ্যম। বিভিন্ন সামরিক মহড়ার সময় এই ফেরিগুলি সামরিক গাড়ি পারাপার করে তাদের গুরুত্ব দেখিয়ে দেয়। কিন্তু প্রশ্ন হলো, শান্তিকালীন সময়েই যদি এই ফেরিগুলির ব্যবহার ফুরিয়ে যায়, তাহলে আপদকালীন সময়ে এগুলিকে কি আর পাওয়া যাবে? বেশিরভাগ ফেরির বয়সই ৪০ বছরের বেশি। পুরোনো ফেরিগুলি যদি কেটে ফেলা হয়; তাহলে তাদের স্থলে নতুন ফেরি কি আদৌ তৈরি হবে? অনেকেই তখন যুক্তি তুলে ধরবেন – এতগুলি সেতু তৈরি করা হয়েছে; ফেরি তৈরির প্রয়োজন কি রয়েছে?

সরকারি কোম্পানি বিআইডব্লিউটিসি-র যাত্রীবাহী জাহাজ 'এমভি বাঙ্গালী' সেন্ট মার্টিনস দ্বীপে যাচ্ছে পর্যটক নিয়ে। পদ্মা সেতু চালুর পর ঢাকা থেকে বরিশাল রুটে যাত্রী একেবারেই কমে যায়। বেসরকারি মালিকরা তাদের জাহাজ কেটে ফেললেও সরকারি কোম্পানি হিসেবে বিআইডব্লিউটিসি এটা করতে পারবে না। বিআইডব্লিউটিসি-র বেশিরভাগ জাহাজই এখন নামমাত্র মূল্যে বেসরকারি খাতে লীজ দিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের সামরিক বাহিনীতে সেনা পরিবহণের জন্যে আলাদা কোন জাহাজ নেই। তবে সরকারি এবং বেসরকারি পরিবহণ জাহাজগুলিকে দরকারে কাজে লাগানো হবে। এই দরকারটা হবে মূলতঃ যমুনা এবং পদ্মা নদী দ্বারা বিভাজিত স্থলভাগগুলিকে জোড়া দেয়ার কাজে।


বাংলাদেশ প্রকৃতপক্ষে পাকিস্তানের পথেই হাঁটছে। এই পথটা হলো, সড়কপথের উপর অতি-নির্ভরশীলতা। বাংলাদেশের মানুষের মাঝে একটা চিন্তা বহুদিন ধরেই ঢোকানো হয়েছে – একটা এলাকা খুবই দুর্গম বলে ধরে নেয়া হয়, যদি সেখানে গাড়ি যাবার রাস্তা না থাকে। মানুষকে বলতে শোনা গিয়েছে, “এলাকাটা এতই ব্যাকওয়ার্ড যে নৌকা দিয়ে যেতে হয়"। অথচ তারা একবার চিন্তাও করে দেখেনি যে নৌপথে যাতায়ত হলো সবচাইতে সাশ্রয়ী; আর সড়কপথ হলো সবচাইতে ব্যয়বহুল। একারণেই বাংলাদেশের সকল ভারি শিল্প গড়ে উঠেছে এমন সকল নদীর পাড়ে, যেখানে সারাবছর ড্রেজিং ছাড়াই যথেষ্ট নাব্যতা থাকে। পদ্মা এবং যমুনা নদীতে যথেষ্ট নাব্যতা না থাকার কারণেই উত্তরবঙ্গে গড়ে ওঠেনি ভারি শিল্প। এবং আজও ভারি জিনিসপত্র উত্তরবঙ্গে নিয়ে যাওয়া একটা চ্যালেঞ্জ। তবে রাষ্ট্রের সদিচ্ছা একটা বড় ব্যাপার; কারণ সেটা নির্ধারণ করে দেয় যে, কোন ব্যাপারটা বেশি গুরুত্ব পাবে। একারণেই রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প এবং যমুনা রেলসেতুর সকল ভারি যন্ত্রপাতি মংলা বন্দর থেকে নদীপথে পরিবহণ করা হয়েছে। এটা সম্ভব করতে জায়গামতো ড্রেজিংও করা হয়েছে। কিন্তু উত্তরবঙ্গের নৌরুটগুলিকে সারাবছর চালু রাখার কোন সত্যিকারের প্রচেষ্টা আজও চোখে পড়েনি; যা উত্তরবঙ্গের, তথা বাংলাদেশের জাতীয় নিরাপত্তার প্রতি মারাত্মক হুমকি সৃষ্টি করছে। কাজেই চিলমারি থেকে শুরু করে পাবনার খয়েরচর পর্যন্ত সারা বছরব্যাপী নাব্যতা নিশ্চিত করার পাশাপাশি অভ্যন্তরীণ নৌরুটের জাহাজগুলিকে রক্ষা করাটা এখন অতি গুরুত্বপূর্ণ। একবার স্ক্র্যাপ হয়ে গেলে এই জাহাজগুলিকে নতুন করে তৈরি করতে কয়েক বছর লেগে যাবে। ভূরাজনীতি বাংলাদেশের জন্যে থেমে থাকবে না! বৈশ্বিক ভূরাজনৈতিক অস্থিরতার মাঝে বাংলাদেশের ঘুমিয়ে থাকার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সর্বদাই নিরাপদে থাকবে - এই চিন্তাখানা যে ভিত্তিহীন, তা আজকে প্রমাণিত। যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মাঝে 'গ্রেট পাওয়ার' প্রতিযোগিতায় এটা পরিষ্কার যে, যুক্তরাষ্ট্রের প্ররোচনাতেই চীন-ভারত সংঘাতের সম্ভাবনা বাড়বে। আর সেক্ষেত্রে ভারতের 'চিকেন নেক'এর উপর যেমন হুমকি তৈরি হবে, তেমনি দিল্লী এবং ওয়াশিংটনের দিকে থেকে হুমকি সৃষ্টি হবে বাংলাদেশের উপর; যদি বাংলাদেশ ভারতের সামরিক বাহিনীকে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতু এবং মাতারবাড়ি বন্দর ব্যবহার করার অনুমতি না দেয়।




সূত্রঃ

‘২৫ কোটি টাকা দামের লঞ্চ বিক্রি হচ্ছে কেজি দরে!’, ইত্তেফাক, ০২ অক্টোবর ২০২২

‘বরিশাল-ঢাকা নৌপথে যুক্ত হলো বড় লঞ্চ সুন্দরবন-১৬' প্রথম আলো, ১৮ নভেম্বর ২০২২

‘মিস করব সবসময় বরিশালের জনপ্রিয় কীর্তনখোলা ২ লঞ্চকে' ২৫ এপ্রিল ২০২৪ (https://www.youtube.com/watch?v=fJnrOibH1lk)

‘লিফট-সিসিইউ সুবিধাসহ সুন্দরবন-১১ এর যাত্রা', ঢাকা টাইমস, ১৯ অগাস্ট ২০১৭

‘পটুয়াখালী-ঢাকা নৌরুটে চারতলা নতুন লঞ্চ ‘সুন্দরবন-১৪’, BanglaNews24, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

‘লিফট ও সিসিইউ সুবিধা নিয়ে আসছে সুন্দরবন-১০', BanglaNews24, ২০ জুন ২০১৬

‘কীর্তনখোলা-১০ লঞ্চের উদ্বোধন', BanglaNews24, ২১ মার্চ ২০১৮

‘ঢাকা-পটুয়াখালী নৌপথে চালু হচ্ছে বিলাসবহুল চার তলা লঞ্চ', JagoNews24, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২০

‘New vessels now albatross around BIWTC's neck’ in The Financial Express, 19 May 2018

‘BIWTC MV Bangali and Modhumoti’ in Western Marine (https://www.wms.com.bd/biwtc-mv-bangali-and-modhumoti/)

‘Rocket-steamer service: 150-year-old tradition abandoned due to loss’ in Dhaka Tribune, 14 January 2023

‘State-run steamer service in bad shape’ in The Daily Star, 16 August 2012

‘২৫ বছর পর নাজিরগঞ্জ-ধাওয়াপাড়া রুটে বড় ফেরি', ডেইলি স্টার বাংলা, ০২ জানুয়ারি ২০২৩

‘যমুনা সেতুর বিকল্প হবে আরিচা-কাজিরহাট ফেরি রুট: নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী', বাংলা ট্রিবিউন, ২৭ ফেব্রুয়ারি ২০২১

‘বগুড়া-জামালপুর নৌ পথে বৃহস্পতিবার থেকে ফেরি চলাচল শুরু', বাংলা ট্রিবিউন, ১১ অগাস্ট ২০২১

‘বাহাদুরাবাদ ঘাটে ফেরিতে ট্রেন পারাপার', BanglaVision, 08 September 2022

‘২২ বছর পর বালাসী-বাহাদুরাবাদ নৌপথে লঞ্চ চলাচল শুরু', BDNews24, ০৯ এপ্রিল ২০২২

‘নতুন সরকারি জাহাজ 'এমভি সোনারগাঁর' যাত্রা শুরু', BDNews24, ১৭ নভেম্বর ২০০৯

‘অস্ট্রিচও সোনারগাঁওয়ের পথে', দৈনিক ইনকিলাব, ১৯ জুলাই ২০১৮

‘৬৪ কোটি টাকা খরচেও মেলেনি নৌযান', যুগান্তর, ১০ মার্চ ২০২২

‘সেনাবাহিনীর জন্য দুটি ট্যাংক ক্যারিয়ার বানাচ্ছে ওয়েস্টার্ন মেরিন', কালের কন্ঠ, ০৫ জুলাই ২০১৭

‘পদ্মা সেতু চালুর পর বিআইডব্লিউটিসি’র আয় ২৭ শতাংশ কমেছে', সমকাল, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

‘আশঙ্কাজনক হারে কমেছে বিআইডব্লিউটিসির আয়', সাম্প্রতিক দেশকাল, ২০ ডিসেম্বর ২০২২

‘আয়ের উৎস ধরে রাখতে মরিয়া বিআইডব্লিউটিসি', প্রতিদিনের সংবাদ, ২৫ এপ্রিল ২০২৪

2 comments:

  1. অনেক দিন পরে আপনার লেখা পড়লাম। খুটিনাটি বিষয় তুলে আনেন যেটা নিয়ে একাডেমিক আলোচনাও করা যেতে পারত। আফসোস ! এসব দেখার সময়য় কারোর নাই।

    ReplyDelete
    Replies
    1. প্রকৃতপক্ষে কোনকিছুই ছোট নয়। আপাতদৃষ্টে যা ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে, একসময় সেটাই অনেক বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন আপনার খাদ্যাভ্যাস যুদ্ধের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আপনার সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে কি খায় এবং কিভাবে খায়, সেটাও অনেক বড় গুরুত্ব বহণ করতে পারে। কারণ সেই খাদ্য কোথায় তৈরি হয়, বা তৈরি করতে কি কি উপকরণ লাগে, বা তৈরি করতে জ্বালানি অথবা পানি কতটুকু লাগে, বা কোন ধরণের পাত্র লাগে রান্না করতে - ইত্যাদি অনেক কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছু বিবেচনা করতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রের এই লজিস্টিক্যাল সমস্যাগুলির সমাধান করতে। এই ব্যাপারগুলি শুধুমাত্র সামরিক বিষয় নয়। কারণ এগুলি রাষ্ট্রের সাধারণ বিষয়গুলির সাথে ওঁতোপ্রোঁতভাবে জড়িত। কাজেই রাষ্ট্রের চিন্তা করতে গেলে, সকলকিছুকে নিয়েই চিন্তা করতে হবে।

      বাংলাদেশে এই মুহুর্তে যাদেরকে টিভি টক-শোতে দেখা যায়, অথবা যারা পত্রপত্রিকায় লিখে পেইজ ভরিয়ে ফেলছেন, তাদের বেশিরভাগই সকল বিষয় একত্রে চিন্তা করতে পারেন না। তারা কিছু ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করেন; বাকিগুলি এড়িয়ে যান। এদের অনেককেই হ্যান্ড-পিক করা হয় জনগণের সামনে কথা বলা জন্যে। আবার সেটা যদি না-ও করা হয়, সেখানেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। কারণ তারা তো এভাবে চিন্তা করতে শেখেননি কখনও। একটা অটোরিক্সা তৈরির সাথে কি কি ব্যাপার জড়িত, সেটা তারা কখনও চিন্তা করতে শেখেননি; নদী ড্রেজিং করার পর সেই বালি দিয়ে কি করা যায়, সেটাও তাদের চিন্তার বাইরে। কাজেই যমুনা নদীতে নৌযান চলাচলের সাথে যে জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তাদের না জানারই কথা।

      আপনি 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' - এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। ছোট পরিসরে হলেও, আশা করি হোলিস্টিক চিন্তা করার একটা ধারণ পাবেন। প্রকৃতপক্ষে কোনকিছুই ছোট নয়। আপাতদৃষ্টে যা ক্ষুদ্র মনে হচ্ছে, সেকসময় সেটাই অনেক বড় হয়ে দেখা দিতে পারে। যেমন আপনার খাদ্যাভ্যাস যুদ্ধের সময় অনেক গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। আপনারা সৈন্যরা যুদ্ধক্ষেত্রে কি খায় এবং কিভাবে খায়, সেটাও অনেক বড় গুরুত্ব বহণ করতে পারে। কারণ সেই খাদ্য কোথায় তৈরি হয়, বা তৈরি করতে কি কি উপকরণ লাগে, বা তৈরি করতে জ্বালানি অথবা পানি কতটুকু লাগে, বা কোন ধরণের পাত্র লাগে রান্না করতে - ইত্যাদি অনেক কিছুই গুরুত্বপূর্ণ। অনেক কিছু বিবেচনা করতে হবে যুদ্ধক্ষেত্রের এই লজিস্টিক্যাল সমস্যাগুলির সমাধান করতে। এই ব্যাপারগুলি শুধুমাত্র সামরিক বিষয় নয়। কারণ এগুলি রাষ্ট্রের সাধারণ বিষয়গুলির সাথে ওঁতোপ্রোঁতভাবে জড়িত। কাজেই রাষ্ট্রের চিন্তা করতে গেলে, সকলকিছুকে নিয়েই চিন্তা করতে হবে।

      বাংলাদেশে এই মুহুর্তে যাদেরকে টিভি টক-শোতে দেখা যায়, অথবা যারা পত্রপত্রিকায় লিখে পেইজ ভরিয়ে ফেলছেন, তাদের বেশিরভাগই সকল বিষয় একত্রে চিন্তা করতে পারেন না। তারা কিছু ব্যাপার নিয়ে চিন্তা করেন; বাকিগুলি এড়িয়ে যান। এদের অনেককেই হ্যান্ড-পিক করা হয় জনগণের সামনে কথা বলা জন্যে। আবার সেটা যদি না-ও করা হয়, সেখানেও তাদের সক্ষমতা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাবে। কারণ তারা তো এভাবে চিন্তা করতে শেখেননি কখনও। একটা অটোরিক্সা তৈরির সাথে কি কি ব্যাপার জড়িত, সেটা তারা কখনও চিন্তা করতে শেখেননি; নদী ড্রেজিং করার পর সেই বালি দিয়ে কি করা যায়, সেটাও তাদের চিন্তার বাইরে। কাজেই যমুনা নদীতে নৌযান চলাচলের সাথে যে জাতীয় নিরাপত্তার সম্পর্ক রয়েছে, সেটা তাদের না জানারই কথা।

      আপনি 'বঙ্গোপসাগর আসলে কার?' - এই বইটা পড়ে দেখতে পারেন। ছোট পরিসরে হলেও, আশা করি হোলিস্টিক চিন্তা করার একটা ধারণ পাবেন। https://koushol.blogspot.com/2019/12/bongoposagor-asole-kaar.html

      Delete